আল-কুরআন/আত-তাফসীর

“বিসমিল্লাহর তাফসীর: কুরআন ও হাদীসের আলোকে পূর্ণ ব্যাখ্যা”

প্রথম পর্ব: বিসমিল্লাহ বিষয়ে হাদীস ও রেওয়ায়াত”

ইমাম সুয়ূতী (রহ) রচিত তাফসীর আদ দুররে মানসূর থেকে অনূদিত

আমাদের অনুবাদ ও প্রকাশনা – দারুস সাআদাত

بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ (1)

‎১. আল্লাহর নামে যিনি দয়াময় পরম দয়ালু

সূরা আল ফাতিহার প্রতিটি আয়াত পৃথকভাবে পাঠ করা

ইমাম আবু উবায়দ, ইবনে সাদ- তাবাকাতে, ইবনে আবী শায়বাহ, আহমদ, আবু ‎দাউদ, ইবনে খুযায়মাহ, ইবনুল আম্বারী তার মাসাহেফে, দারাকুতনী, হাকীম, বায়হাকী, খতীব ‎এবং আব্দুল বার তারা উভয়ে তাদের কিতাবুল মাসআলাতে- হযরত উম্মু সালামা (রা) থেকে বর্ণনা ‎করেন। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) সূরা আল ফাতিহা বিসমিল্লাহ থেকে শেষ পর্যন্ত প্রতিটি ‎আয়াত পৃথকভাবে পাঠ করতেন এবং আরবদের গণনা করার মত গণনা করতেন। ‎বিসমিল্লাহও গণনা করেন এবং লোকদের মত (তাদের ধারণা মত) গণনা করেন নি।

যে দুজন নবীর প্রতি বিসমিল্লাহ নাযিল হয়েছে

ইমাম ইবনে আবী হাতিম, তাবরানী, দারাকুতনী এবং বায়হাকী যয়ীফ সনদে- হযরত ‎বুরায়দাহ (রা) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, রাসূলু্ল্লাহ (সা) বললেন, আমি মসজিদ ‎থেকে বের হতে হতেই তোমাকে একটি আয়াত বা সূরার ব্যাপারে বলব যা সুলায়মান (আ) ‎এর পর আমি ব্যতীত আর কোন নবীর প্রতি নাযিল হয়নি। বুরায়দাহ (রা) বলেন, নবী (সা) ‎চললেন আর আমিও তার পিছনে চললাম। এমনকি তিনি মসজিদের দরজায় পৌঁছে গেলেন। ‎রাসূলু্ল্লাহ (সা) মসজিদের চৌকাঠ থেকে এক পা বাহিরে দিয়েছেন আর এক পা ভিতরে ‎রয়েছে। আমি মনে মনে ভাবলাম তিনি (সা) আমাকে সূরার কথা বলা (হয়তো) ভুলে ‎গিয়েছেন। অতঃপর তিনি আমার দিকে মনোযোগী হয়ে বললেন, তুমি যখন সালাত শুরু কর ‎তখন কুরআনের কি দ্বারা শুরু কর? আমি বললাম বিসমিল্লাহ দ্বারা। তিনি (সা) বললেন, ‎এটাই, এটাই। অতঃপর তিনি মসজিদ থেকে বের হয়ে গেলেন। ‎

বিসমিল্লাহ স্বতন্ত্র আয়াত

ইমাম ইবনুস যুরাইস- হযরত ইবনে আব্বাস (রা) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, বিসমিল্লাহ একটি আয়াত।

মানুষ কেন বিসমিল্লাহ বলতে ভুলে যায়

ইমাম সাঈদ ইবনে মানসূর তার সুনানে, ইবনে খুযায়মাহ তার কিতাবুল বাসমালাতে ‎এবং বায়হাকী- হযরত ইবনে আব্বাস (রা) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, শয়তান লোকদের থেকে বিসমিল্লাহ চুরি করে নিয়েছে (যার ফলে তারা বিসমিল্লাহ ‎বলতে ভুলে যায়)। ‎

ইমাম আবু উবায়দ, ইবনে মারদুবিয়াহ এবং বায়হাকী শুআবুল ইমানে- হযরত ইবনে ‎আব্বাস (রা) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, লোকেরা আল্লাহর কিতাবের একটি আয়াত ‎থেকে গাফিল হয়ে গেছে, যা অমাদের নবী (সা) ব্যতীত আর কোন নবীর উপর নাযিল হয়নি, ‎তবে শুধুমাত্র সুলায়মান (আ) ব্যতীত। তা হল- বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম।

জিবরাইল (আ) বিসমিল্লাহসহ ওহী শোনাতেন

ইমাম দারাকুতনী যয়ীফ সনদে- হযরত ইবনে উমর (রা) থেকে বর্ণনা করেন। রাসূলুল্লাহ ‎‎(সা) ইরশাদ করেন, জিবরাঈল (আ) যখন আমার নিকট ওহী নিয়ে আসতেন তখন প্রথমে বিসমিল্লাহ ‎পাঠ করতেন। ‎

প্রত্যেক সূরার সাথে বিসমিল্লাহ নাযিল হয়েছে

ইমাম ওয়াহিদী ইবনে উমর (রা) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, প্রত্যেক সূরার সাথে বিসমিল্লাহ নাযিল হয়েছে।

বিসমিল্লাহ দুই সূরা পৃথককারী

ইমাম আবু দাউদ, বাযযার, তাবরানী, হাকীম আর তিনি এটাকে সহিহ বলেছেন ‎এবং বায়হাকী আল মারিফায়- হযরত ইবনে আব্বাস (রা) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ কোন সূরার শেষ অথবা দুই সূরার ব্যবধান জানতে পারতেন না, যে ‎পর্যন্ত না বিসমিল্লাহ নাযিল হত। ‎

ইমাম বাযযার ও তাবরানী আরো বৃদ্ধি করে বর্ণনা করেন যে, যখন বিসমিল্লাহ নাযিল হত তখন রাসূলুল্লাহ (সা) বুঝতে পারতেন যে, প্রথম সূরা ‎শেষ হয়েছে আর দ্বিতীয় সূরা শুরু হয়েছে। ‎

ইমাম হাকীম আর তিনি এটাকে সহিহ বলেছে এবং বায়হাকী- হযরত ইবনে আব্বাস (রা) থেকে বর্ণনা করেন যে, মুসলমানরা (সাহাবীরা) যে পর্যন্ত ‎বিসমিল্লাহ নাযিল না হত, সে পর্যন্ত বর্তমান সূরা নাযিল শেষ হয়েছে বলে জানতে পারত না। ‎যখন বিসমিল্লাহ নাযিল হত তখন জানতে পারতেন যে, প্রথম সূরা শেষ হয়েছে। ‎

ইমাম আবু উবায়দ- হযরত সাঈদ ইবনে জুবায়র থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, ‎নবী (সা) এর যুগে লোকেরা সূরার শেষ জানতে পারত না, যে পর্যন্ত না বিসমিল্লাহ নাযিল ‎হত। যখন বিসমিল্লাহ নাযিল হত তখন তারা বুঝতে পারতেন যে, প্রথম সূরা শেষ হয়েছে ‎আর পরবর্তী সূরা শুরু হয়েছে।

ইমাম তাবরানী, হাকীম এবং বায়হাকী শুআবুল ইমানে- হযরত ইবনে আব্বাস (রা) থেকে ‎বর্ণনা করেন যে, জিবরাঈল (আ) নবী (সা) এর নিকট যখন আগমন করতেন, তখন ‎বিসমিল্লাহ পাঠ করতেন। তখন নবী (সা) বুঝতেন যে, নতুন সূরা নাযিল হয়েছে। ‎

ইমাম বায়হাকী শুআবুল ইমানে এবং ওয়াহিদী- ইবনে মাসউদ (রা) থেকে বর্ণনা ‎করেন। তিনি বলেন, আমরা দুই সূরার মাঝে ব্যবধান জানতে পারতাম না, যে পর্যন্ত না ‎বিসমিল্লাহ নাযিল হত।

নামাযে বিসমিল্লাহ পাঠ করা

ইমাম বায়হাকী শুআবুল ইমানে- হযরত ইবনে উমর (রা) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি ‎নামাযে বিসমিল্লাহ পড়তেন এবং যখন সূরা শেষ করতেন তখনও বিসমিল্লাহ পাঠ করতেন ‎এবং বলতেন, বিসমিল্লাহ পাঠ করার জন্যই তো মাসহাফে (কুরআনে) লিখা হয়েছে। ‎

ইমাম দারাকুতনী- হযরত আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণনা করেন। রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ ‎করেন- জিবরাঈল (আ) আমাকে নামাযের নিয়ম শিখান। তিনি দাড়ালেন, তাকবীর বললেন ‎এবং প্রত্যেক রাকাতে বিসমিল্লাহ পাঠ করলেন। ‎

ইমাম সালাবী- আলী ইবনে যায়দ ইবনে জুদআন থেকে বর্ণনা করেন যে, ইবাদালাহ ‎‎(আব্দুল্লাহত্রয়- আব্দুল্লাহ ইবনে উমর, আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস এবং আব্দুল্লাহ ইবনে যুবায়র [রা]) ‎বিসমিল্লাহ দ্বারা কিরাআত শুরু করতেন এবং তা উচ্চস্বরে পাঠ করতেন। ‎

বিসমিল্লাহ সূরা ফাতিহার অংশ

ইমাম সালাবী- হযরত আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, মসজিদে নবী কারীম (সা) এর সাথে এক ব্যক্তি আসল এবং সে নামায শুরু করল। সে সানা পড়ল, তাআউউয পড়ল অতঃপর আলহামদুলিল্লাহি রাব্বিল আলামীন পড়ল। নবী কারীম (সা) তার এমন পড়া শুনে বললেন- হে অমুক! তুমি তোমার নামায ভেঙ্গে দিয়েছ। তুমি কি জান না যে, বিসমিল্লাহ আলহামদু থেকে। যে বিসমিল্লাহ ছেড়ে দিল সে একটি আয়াত ছেড়ে দিল। আর যে (মাঝের) একটি আয়াত ছেড়ে দিল তার নামায নষ্ট হয়ে গেল।

ইমাম সালাবী- হযরত আলী (রা) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি যখন নামাযে সূরা পাঠ করা শুরু করতেন তখন বিসমিল্লাহ পাঠ করতেন এবং বলতেন, যে বিসমিল্লাহ ছেড়ে দিল সে কম করল, এটা সাবআ মাসানীর পরিপূরক।

ইমাম সালাবী- হযরত তালহা বিন উবাইদুল্লাহ থেকে বর্ণনা করেন। রাসূলুল্লাহ (সা) ‎ইরশাদ করেন- ‎

مَنْ تَرَكَ {بِسم الله الرَّحْمَن الرَّحِيم} فقد تَرَكَ آية من كِتاب الله

যে বিসমিল্লাহ ছেড়ে দিল সে আল্লাহর কিতাবের একটি আয়াত ছেড়ে দিল।

ইমাম শাফিয়ী আল উম্ম এ, দারাকুতনী, হাকীম আর তিনি এটাকে সহিহ বলেছেন এবং বায়হাকী- হযরত মুআবিয়া (রা) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি যখন মদীনায় আগমন করেন তখন লোকদেরকে নামায পড়ান তবে বিসমিল্লাহ পড়লেন না। আর যখন নীচের দিকে গেলেন এবং উপর দিকে উঠলেন তখন তাকবীরও বললেন না। মুহাজিরীন ও আনসাররা সালাম ফিরানোর পর বলল যে, হে মুআবিয়া! তুমি নামাযে চুরি করেছ। বিসমিল্লাহ কোথায় গেল আর তাকবীর কোথায় গেল? অতঃপর যখন পরে সে আবার নামায পড়াল তখন তিনি সূরা ফাতিহার সাথে বিসমিল্লাহ পড়লেন এবং অন্য সূরার সাথেও বিসমিল্লাহ পড়লেন এবং সাজদার দিকে যাওয়ার সময় তাকবীরও বললেন।

বিসমিল্লাহ দ্বারা সালাত শুরু করা

ইমাম আবু দাউদ, তিরমিযী, দারাকুতনী এবং বায়হাকী- হযরত ইবনে আব্বাস (রা) ‎থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন- ‎

كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَفْتَتِحُ صَلَاتَهُ بِ {بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ}

নবী (সা) তার সালাত বিসমিল্লাহ দ্বারা শুরু করতেন।

ইমাম বাযযার, দারাকুতনী এবং বায়হাকী শুআবুল ইমানে- আবু তুফায়ল (রহ) সূত্রে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আমি আলী (রা) এবং আম্মার (রা)-কে এটা বলতে শুনেছি যে, রাসূলূল্লাহ (সা) ফরয নামায সমূহে সূরা আল ফাতিহার সাথে বিসমিল্লাহ পড়তেন।

সব সূরার সাথে বিসমিল্লাহ পাঠ করা

ইমাম তাবরানী আউসাতে, দারাকুতনী এবং বায়হাকী- নাফে (রহ) থেকে বর্ণনা করেন যে, হযরত ইবনে উমর (রা) যখন নামায শুরু করতেন, তখন আলহামদুর সাথে বিসমিল্লাহ পড়তেন এবং অন্য সূরার সাথেও বিসমিল্লাহ পড়তেন। আর এটাও আলোচনা করা হয় যে, তিনি এটা রাসূলূল্লাহ (সা) থেকে শুনেছেন।

নামাযে বিসমিল্লাহ জোড়ে পড়বে না আস্তে

ইমাম দারাকুতনী, হাকীম এবং বায়হাকী- হযরত আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) নামাযে বিসমিল্লাহ জোড়ে পড়তেন।

ইমাম তাবরানী, দারাকুতনী এবং বায়হাকী শুআবুল ইমানে- হযরত আবু তুফায়ল (রহ) থেকে এবং দারাকুতনী ও হাকীম- হযরত আনাস (রা) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা)-কে (নামাযে) জোড়ে বিসমিল্লাহ পাঠ করতে শুনেছি।

নবী (সা) এর সালাত কেমন ছিল?

ইমাম দারাকুতনী, হাকীম এবং বায়হাকী- নুআইমিল মুজমির থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আমি হযরত আবু হুরায়রা (রা) এর পিছনে ছিলাম। তিনি প্রথমে বিসমিল্লাহ অতঃপর আলহামদুলিল্লাহ পাঠ করলেন এবং ওয়ালাদদাল্লীন পর্যন্ত পাঠ করে শেষ করলেন। অতঃপর বললেন, আমীন। লোকেরাও বলল আমীন। আর তিনি যখন সাজদা করতেন তখন তাকবীর বলতেন এবং সাজদা থেকে উঠার সময়ও তাকবীর বলতেন। যখন সালাম ফিরালেন তখন বললেন, আমি তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশী রাসূল্লাল্লাহ (সা) এর মত নামায পড়াই।

ইমাম দারাকুতনী- হযরত আলী ইবনে আবী তালিব (রা) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আমি এবং নবী (সা) (নামাযের) উভয় সূরাতে বিসমিল্লাহ পাঠ করতাম।

নামাযে বিসমিল্লাহ পাঠ করার নির্দেশ

ইমাম দারাকুতনী- হযরত আলী ইবনে আবী তালিব (রা) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, নবী কারীম (সা) বললেন- যখন তুমি নামাযের জন্য দাঁড়াও তখন কিভাবে কিরাআত পাঠ কর? আমি বললাম, আলহামদুলিল্লাহি রাব্বিল আলামীন (দ্বারা শুরু করি)। তিনি বললেন, বিসমিল্লাহও পাঠ কর।

ইমাম দারাকুতনী ও বায়হাকী- হযরত জাবির (রা) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আমাকে নবী কারীম (সা) বললেন- যখন তুমি নামায পড় তখন কিভাবে কিরাআত ‎পড়? আমি বললাম, আমি ‘আলহামদুলিল্লাহি রাব্বিল আলামীন’ পাঠ করি। তিনি বললেন, ‎‎(আগে) ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’ পাঠ কর। ‎

যারা বিসমিল্লাহ জোরে পড়তেন

ইমাম দারাকুতনী- হযরত ইবনে উমর (রা) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আমি নবী কারীম (সা), আবু বকর এবং উমর (রা) এর পিছনে নামায পড়েছি। তারা সবাই বিসমিল্লাহ সশব্দে পাঠ করতেন।

ইমাম দারাকুতনী- হযরত নুমান ইবনে বাশীর (রা) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন- জিবরাঈল (আ) কাবার পাশে আমার ইমামতী করেছেন আর তিনি বিসমিল্লাহ সশব্দে পাঠ করেছেন।

ইমাম দারাকুতনী- হযরত হাকাম বিন উমায়র (রা) থেকে বর্ণনা করেন আর তিনি ছিলেন বদরী সাহাবী। তিনি বলেন, আমি নবী কারীম (সা) এর পিছনে নামায পড়েছি। তিনি রাতের নামায, ভোরের নামায এবং জুমআর নামাযে বিসমিল্লাহ জোরে পাঠ করেছেন।

ইমাম দারাকুতনী- হযরত আয়শা (রা) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) বিসমিল্লাহ জোরে পাঠ করতেন।

সূরা ফাতিহা বিসমিল্লাহসহ সাত আয়াত

ইমাম আবু উবায়দ- মুহাম্মদ ইবনে কা’ব আল কুরুযী থেকে বর্ণনা করেন। তিনি ‎বলেন- ‎সূরা ফাতিহা বিসমিল্লাহসহ সাত আয়াত।

বিসমিল্লাহ আল্লাহর নামসমূহের মধ্য হতে

ইমাম ইবনে আবী হাতিম তার তাফসীরে, হাকীম আল মুস্তাদরাকে আর তিনি এটাকে সহিহ বলেছেন, বায়হাকী শুআবুল ইমানে, আবু যার আল হারাভী তার ফাযায়েলে, খতীব বাগদাদী তার তারীখে- হযরত ইবনে আব্বাস (রা) থেকে বর্ণনা করেন। উসমান (রা) নবী কারীম (সা-)-কে বিসমিল্লাহর ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করেন। নবী কারীম (সা) বললেন, এটা আল্লাহর নামসমূহের মধ্যে একটি নাম আর এর মাঝে ও আল্লাহর ইসমে আকবরের মাঝে চোখের সাদা ও কালোর মত নিকটবর্তীতা রয়েছে।

ঈসা (আ) যেভাবে বিসমিল্লাহর ব্যাখয়া দিলেন

ইমাম ইবনে জারীর, ইবনে আদী আল কামিলে, ইবনে মারদুবিয়াহ, আবু নুআইম হিলইয়াতে, ইবনে আসাকির তারীখে দিমাশকে এবং সালাবী খুবই দুর্বল সনদে- হযরত আবু সাঈদ আল খুদরী (রা) থেকে বর্ণনা করেন। রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন, ঈসা (আ) এর মাতা ঈসা (আ)-কে শিক্ষকের নিকট নিয়ে যান যাতে তিনি তাকে শিক্ষা দান করেন। শিক্ষক ইসা (আ)-কে বলল, বিসমিল্লাহ লিখ। ঈসা (আ) বললেন বিসমিল্লাহর অর্থ কি? শিক্ষক বলল, তা তো আমি জানি না। ঈসা (আ) বললেন, বা দ্বারা উদ্দেশ্য بهاء الله বাহাউল্লাহ- আল্লাহর দীপ্তি। আর সীন দ্বারা উদ্দেশ্য سناؤه আল্লাহর উচ্চ মর্যাদা আর মীম দ্বারা উদ্দেশ্য مَمْلَكَته আল্লাহর রাজত্ব। আর الرَّحْمَنِ দ্বারা উদ্দেশ্য দুনিয়া ও আখিরাতের রহমান-দয়াময়। আর الرَّحِيمِ দ্বারা উদ্দেশ্য আখিরাতের রহীম-পরম দয়ালু।

জিবরাইল (আ) এর ব্যাখ্যা

ইমাম ইবনে আবী হাতিম- যাহহাক (রহ) থেকে অনুরুপ বর্ণনা করেছেন।

ইমাম ইবনে জুরায়য এবং ইবনে আবী হাতিম- হযরত ইবনে আব্বাস (রা) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, যখন জিবরাঈল (আ) মুহাম্মদ (সা) এর নিকট সর্বপ্রথম আসেন, তখন বলেন, হে মুহাম্মদ! বিসমিল্লাহ পাঠ করুন। আর বললেন, আল্লাহর স্মরণের সাথে পড়ুন। الله সমস্ত মাখলুকের ইবাদতের উপযুক্ত। الرحمن শব্দটি রহমত শব্দ থেকে নির্গত الفعلان এর ওজনে ব্যবহৃত একটি আরবী শব্দ। الرَّحِيم শব্দের অর্থ হল, এমন করুণাময় সত্তা তিনি, যার প্রতি দয়া করতে চান, তার জন্য অতীব দয়ালু এবং যার প্রতি কঠোরতা প্রদর্শন করতে চান তার জন্য অতীব কঠোর।

আল্লাহ নামটি ইসমে আযম

ইমাম ইবনে মারদুবিয়াহ- হযরত ইবনে আব্বাস (রা) থেকে বর্ণনা করেন যে-‎

اسْم الله الْأَعْظَم هُوَ الله

‎‘আল্লাহ’ নামটি ইসমে আযম।

ইমাম ইবনে আবী শায়বাহ, বুখারী তার ইতিহাসে, ইবনুয যুরায়স তার ফাযায়েলে, ইবনে আবী হাতিম- হযরত জাবির বিন ইয়াযিদ থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আল্লাহর ইসমে আযম হল ‘আল্লাহ’। তুমি কি দেখ না যে, কুরআনে প্রত্যেক ইসমের পূর্বে তার উল্লেখ আছে।

ইমাম ইবনে আবী শায়বাহ এবং ইবনে আবিদ দুনইয়া কিতাবুদ দুআয়- শাবী (রহ) ‎থেকে বর্ণনা করেন যে-‎

اسْم الله الْأَعْظَم يَا الله

ইসমে আযম হল- ‎يَا الله‎ হে আল্লাহ।

সংরক্ষিত নাম

ইমাম ইবনে জারীর- হযরত হাসান বসরী (রহ) থেকে বর্ণনা করেন যে- الرَّحْمَن হল اسْم مَمْنُوع অর্থাৎ সংরক্ষিত নাম।

ইমাম ইবনে হাতিম- হযরত হাসান বসরী (রহ) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাহীম হল এমন নাম যা মানুষ তার নিজের জন্য রাখতে পারে না।

রাহমান ও রাহীম

ইমাম ইবনে আবী হাতিম- হযরত যাহহাক (রহ) থেকে বর্ণনা করেন যে, রহমান হল সমস্ত মাখলুকের জন্য আর রাহীম হল সমস্ত মুমিনদের জন্য খাস।

ইমাম বায়হাকী আল আসমা ওয়াস সিফাতে- হযরত ইবনে আব্বাস (রা) থেকে বর্ণনা করেন যে, আর-রহমান অর্থ (বন্ধু) আর-রাহীম অর্থ মাখলুকের প্রতি রিযিকের মাধ্যমে দয়া প্রদর্শনকারী। এই দুটি নাম নম্রতা ও স্নেহ প্রদর্শনকারীর প্রতি প্রমাণ প্রদর্শন করে। তবে একটি থেকে অপরটি বেশী নম্রতার প্রমাণ প্রদর্শন করে।

ইমাম ইবনে জারীর- আতা আল খুরাসানী (রহ) থেকে বর্ণনা করেন। আল্লাহ তাআলার নাম ছিল আর-রহমান। কিন্তু এ নাম যখন পরিবর্তন হল তখন হল আর-রহমানুর রাহীম।

একটি বিশেষ দুআ

ইমাম বাযযার, হাকীম এবং বায়হাকী দালায়িলে যয়ীফ সনদে- হযত আয়শা (রা) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আমার পিতা আমাকে বললেন, আমি কি তোমাকে ঐ দুআ শিখাব না, যা আমাকে রাসূলুল্লাহ (সা) শিখিয়েছিলেন? হযরত ঈসা (আ) তার হাওয়ারীদেরকে এই দুআ শিখাতেন। যদি তোমার উপর উহুদ পাহাড় বরাবর ঋণও থাকে, তথাপি আল্লাহ তাআলা এই দুআর বরকতে সেই ঋণ পরিশোধ করে দিবেন। আমি বললাম, অবশ্যই বলুন। তিনি বললেন, এই দুআ পড়-

اللَّهُمَّ فَارِجَ الْهَمِّ كَاشِفَ الْغَمِّ

হে আল্লাহ! দুশ্চিন্তা দূরকারী, দুঃখ মোচনকারী।

আর বাযযার এর রিওয়ায়াতে আরো আছে-

وَ كَاشِفَ الكرب – مُجِيبَ دَعْوَةِ الْمُضْطَرِّينَ رَحْمَانَ الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ وَرِحِيمَهُمَا أَنْتَ تَرْحَمُنِي رَحْمَةً تُغْنِينِي بِهَا عَمَّن سواك

বিপদ দূরকারী, অসহায়ের ফরিয়াদ শ্রবণকারী, দুনিয়া ও আখিরাতে রহমান ও রহিমও বটে। একমাত্র তুমিই আমাকে দয়া করতে পার। এমন দয়া যা আমাকে অপর সকলের অনুগ্রহ থেকে অমুখাপেক্ষী করে দেবে।

ইমাম ইবনে আবী শায়বাহ- আব্দুর রহমান বিন সাবিত থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) এই কালিমা দ্বারা দুআ করতেন এবং এই দুআ অন্যদেরকে শিখাতেন

اللَّهُمَّ فَارِجَ الْهَمِّ كَاشِفَ الْغَمِّ وَ كَاشِفَ الكرب – ومُجِيبَ الْمُضْطَرِّينَ ورَحْمَانَ الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ وَرِحِيمَهُمَا، أَنْتَ تَرْحَمُنِي فَارْحَمْنِي رَحْمَةً تُغْنِينِي بِهَا عَمَّن سواك

হে আল্লাহ! দুশ্চিন্তা লাঘবকারী, বিপদ দূরকারী, অসহায়ের ফরিয়াদ শ্রবণকারী, দুনিয়া ও আখিরাতে রহমান ও রহিমও বটে। একমাত্র তুমিই আমার প্রতি দয়া করতে পার। এমন দয়া যা আমাকে অপর সকলের অনুগ্রহ থেকে অমুখাপেক্ষী করে দেবে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to top button
error: Content is protected !!