ফিতরাত বা স্বভাবধর্ম 

ইমাম সুয়ুতী (রহ) প্রণিত, দারুস সাআদাত কর্তৃক অনূদিত প্রকাশিত প্রসিদ্ধ হাদীস রিওয়ায়াতভিত্তিক তাফসীরগ্রন্থ তাফসীর আদ দুররে মানসূর সূরা আল বাকারা ১২৪ আয়াত এর তাফসীর থেকে। 

আত তাহুর- পবিত্রতা ও পরিচ্ছন্নতা  শিরোনামে  ২৫ পৃষ্ঠার এই pdf টি সবার জন্য বিনামূল্যে। whatsapp করুন 01961810343 নং এ। 

ফিতরাত বা স্বভাবধর্ম 

ইমাম ইবনে আবী হাতিম- হযরত আতা থেকে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন-

من فطْرَة إِبْرَاهِيم السِّوَاك

মিসওয়াক হযরত ইবরাহীম (আ) এর ফিতরাত বা আদর্শ থেকে।

ইমাম ইবনে আবী হাতিম- হযরত মুজাহিদ (রহ) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, যিকির এবং হাত ও পায়ের জোড়াসমূহ ধৌত করা ইবরাহীম (আ) এর ফিতরাত বা আদর্শ থেকে।

ইমাম ইবনে আবী শায়বাহ আল মুসান্নাফে- মুজাহিদ (রহ) থেকে বর্ণনা করেন। ছয়টি বিষয় হযরত ইবরাহীম (আ) এর ফিতরত থেকে। মোচ কাটা, মিসওয়াক করা, চুল আঁচড়ানো, নখ কাটা, ইস্তিঞ্জা করা, নাভীর নিচের পশম কাটা। তিনি বলেন, তিনটির সম্পর্ক মাথার সাথে আর তিনটির সম্পর্ক শরীরে সাথে।

ইমাম ইবনে আবী শায়বাহ, আহমদ, বুখারী, মুসলিম, আবু দাউদ, তিরমিযী, নামাঈ, ইবনে মাজাহ- হযরত আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা)-কে বলতে শুনেছি-

الفِطْرَةُ خَمْسٌ، أَوْ خَمْسٌ مِنَ الفِطْرَةِ: الخِتَانُ، وَالِاسْتِحْدَادُ، وَقَصُّ الشَّارِبِ وَتَقْلِيمُ الأَظْفَارِ،وَنَتْفُ الآباط،

পাঁচটি বিষয় ফিতরাত এর অন্তর্ভুক্ত। খাতনা করা, নাভীর নিচের লোম পরিষ্কার করা, মোচ কাটা, নখ কাটা এবং বগলের লোম নিষ্কাশন করা।

ইমাম বুখারী ও নাসাঈ- হযরত ইবনে উমর (রা) থেকে বর্ণনা করেন। রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন- নাভীর নিচের পশম পরিষ্কার করা, নখ কাটা এবং মোচ কাটা ফিতরাত এর অন্তর্ভুক্ত।

ইমাম ইবনে আবী শায়বাহ, মুসলিম, আবু দাউদ, তিরমিযী, নাসাঈ এবং ইবনে মাজাহ- হযরত আয়শা (রা) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেছেন, রাসুলূল্লাহ্ (সা) ইরশাদ করেছেন, দশটি কাজ স্বভাবজাত- ১.গোঁফ ছোট করা ২.দাড়ি লম্বা করা ৩.মিসওয়াক করা ৪.পানি দ্বারা নাক পরিষ্কার করা ৫.নখ কাটা ৬.আংগুলের গিরা ও জোড়াসমূহ ধৌত করা ৭.বগলের পশম পরিষ্কার করা ৮.নাভির নীচের লোম পরিস্কার করা ৯.পানির দ্বারা ইস্তিঞ্জা করা। রাবী যাকারিয়া বলেন, মূসআব বলেছেন, আমি দশমটি ভুলে গিয়েছি, তবে সম্ভবত তা হল কুলি করা।

ইমাম ইবনে আবী শায়বাহ, আহমদ, আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ- হযরত আম্মার ইবনে ইয়াসির (রা) থেকে বর্ণনা করেন। রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন- কুলি করা, পানি দিয়ে নাক পরিষ্কার করা, মিসওয়াক করা, মোচ কাটা, নখ কাটা, বগলের লোম পরিষ্কার করা, নাভির নিচের লোম পরিষ্কার করা, আঙ্গুলের সংযোগস্থলগুলো ধৌত করা, শৌচ করা, খাতনা করা ইত্যাদি ফিতরাত বা মানব স্বভাবের অন্তর্ভুক্ত।

ইমাম বাযযার এবং তাবরানী- হযরত আবু দারদা (রা) থেকে বর্ণনা করেন। রাসূলুল্লাহ (সা) ইশাদ করেন-

الطهارات أَربع قصّ الشَّارِب وَحلق الْعَانَة وتقليم الْأَظْفَار والسواك

চারটি বিষয় পবিত্রতার অন্তুর্ভুক্ত। মোচ কাটা, নাভির নিচের লোম পরিষ্কার করা নখ কাটা এবং মিসওয়াক করা।

ইমাম মুসলিম, আবু দাউদ, তিরমিযী, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ- হযরত আনাস (রা) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) আমাদের জন্য সময় নির্ধারণ করে দিয়েছেন অন্তত চল্লিশ দিনে একবার মোচ ছাঁটতে, নখ কাটতে, নাভির নীচের লোম পরিষ্কার করতে এবং বগলের লোম পরিষ্কার করতে।

ইমাম আহমদ এবং বায়হাকী শুআবুল ইমানে- হযরত ইবনে আব্বাস (রা) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি নবী কারীম (সা)-কে আরয করেন। জিবরাঈল (আ) আপনার নিকট আসতে দেরি করলেন কেন? রাসূলুল্লাহ (সা) বললেন, সে আমার নিকট আসতে কেন দেরী করবে না? যেখানে তোমরা আমার আশপাশে অবস্থান কর আর না (সময়মত) মিসওয়াক কর, না নখ কাট, না মোচ কাট আর না আঙ্গুলের জোড়াসমূহ ধৌত কর।

ইমাম তিরমিযী- হযরত ইবনে আব্বাস (রা) থেকে বর্ণনা করেন। আর তিনি এটাকে হাসান বলেছেন। তিনি বলেন, নবী (সা) তার মোচ কাটতেন আর বলতেন রহমানের খলীল ইবরাহীম (আ) এমন করতেন।

ইমাম ইবনে আবী শায়বাহ, আহমদ, তিরমিযী আর তিনি এটাকে সহিহ বলেছেন এবং নাসাঈ- হযরত যায়দ ইবনে আরকাম (রা) থেকে বর্ণনা করেন। রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন-

مَنْ لَمْ يَأْخُذْ مِنْ شَارِبِهِ فَلَيْسَ مِنَّا

যে মোচ কাটে না সে আমাদের মধ্য হতে নয়।

ইমাম মালিক, বুখারী, মুসলিম, আবু দাউদ এবং তিরমিযী- হযরত ইবনে উমর (রা) থেকে বর্ণনা  করেন। তিনি নবী কারীম (সা) থেকে রিওয়ায়াত করেন। তিনি বলেছেন, তোমরা মুশরিকদের বিরোধীতা কর- দাড়ি লম্বা কর এবং মোচ খাটো কর।

ইমাম বাযযার- হযরত আনাস (রা) থেকে বর্ণনা করেন। নবী কারীম (সা) ইরশাদ করেন- তোমরা মাজুসীদের (অগ্নিপূজারীদের) বিরোধিতা কর। মোচ কাট আর দাড়ি লম্বা কর।

ইমাম ইবনে আবী শায়বাহ- হযরত উবাযদুল্লাহ বিন আব্দুল্লাহ বিন উবায়দুল্লাহ থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, এক মাজুসী ব্যক্তি নবী কারীম (সা) এর নিকট আসলেন। যার দাড়ি মুণ্ডানো ছিল আর মোচ লম্বা ছিল। নবী কারীম (সা) তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, এটা কি? সে বললো এটা আমাদের দীন বা রীতি। নবী (সা) বললেন, কিন্তু আমাদের দীন হল মোচ খাটো করা এবং দাড়ি লম্বা করা।

ইমাম বাযযার- হযরত আয়শা (রা) থেকে বর্ণনা করেন। রাসূলুল্লাহ (সা) এক ব্যক্তিকে দেখলেন যে, তার মোচ লম্বা। তিনি (সা) বললেন, আমাকে কাঁচি আর মিসওয়াক দাও। নবী (সা) মিসওয়াক তার ঠোটের উপর ধরলেন আর মোচের বাকী অংশ কেটে ফেললেন।

ইমাম বাযযার, তাবরানী আল আউসাতে, বায়হাকী শুআবুল ইমানে- হাসান সনদে হযরত আ্ববু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণনা করনে। রাসূলুল্লাহ (সা) জুমআর দিন নামাযে যাওয়ার পূর্বে নখ আর মোচ কাটতেন।

ইমাম ইবনে আদী- যয়ীফ সনদে হযরত আনাস (রা) থেকে বর্ণনা করেন। রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন- পুরুষ প্রত্যেক চল্লিশ দিনের মধ্যে নাভির নিচের পশম পরিষ্কার করবে এবং বগলের লোম পরিষ্কার করবে যখন তা প্রকাশ পায়। আর নিজের মোচ লম্বা করবে না। আর এক জুমআ থেকে অপর জুমআর মধ্যে নখ কাটবে।

ইমাম ইবনে আসাকির- যয়ীফ সনদের সাথে জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ (রা) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন- নিজের নখ কাট। কারণ শয়তান নখ ও মাংসের মাঝে চলাফেরা করে।

ইমাম তাবরানী- যয়ীফ সনদে ওয়াবিসা বিন মাবাদ থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা)-কে প্রত্যেক বিষয়ের  ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করেছি। এমনকি নখের মধ্যে যে ময়লা থাকে তার বিষয়েও। তিনি (আমাকে একটি মূলনীতি) বলেন-

دَعْ مَا يَرِيبُكَ إِلَى مَا لَا يَرِيبُكَ

ঐ বিষয় পরিত্যাগ কর যা তোমাকে সন্দেহ-সংশয়ে পতিত করে  আর তা অবলম্বন কর যা তোমাকে সন্দেহ সংশয়ে নিপতিত করে না।

ইমাম বাযযার- হযরত ইবনে মাসউদ (রা) থেকে বর্ণানা করেন। রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন- আমার কেন (নামাযে) সন্দেহ হবে না। যখন তোমাদের কেউ (নামাযের মধ্যে) আঙ্গুল ও নখের ময়লা খুটতে থাক।

ইমাম বায়হাকী শুআবুল ইমানে- কায়স বিন হাযেম থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, নবী কারীম (সা) নামায পড়েন আর তার মনে সন্দেহ উদ্রেক হয়। তাকে জিজ্ঞাসা করা হলে বলেন, আমার মনে কেন সন্দেহ উদ্রেক হবে না, যেখানে তোমাদের কেউ কেউ (নামাযের মধ্যে) আঙ্গুল ও নখের ময়লা খুটতে থাক।

——————————————-

৫৩৩ পৃষ্ঠার তাফসীর আদ দুররে মানসূর প্রথম খণ্ডের জন্য whatspp/telegram করুন এই নং এ – 01961810343 অথবা ইমেইল করুন darussaadat@yahoo.com এ।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to top button
error: Content is protected !!