রাগ নিয়ন্ত্রণ

রাগ নিয়ন্ত্রণ

courtesy: hope

রাগ নিয়ন্ত্রণ ঈমানের পরিপক্বতার লক্ষণ, আল্লাহ তাআলা মুমিনদেরকে রাগ কমাতে ও ক্ষমা করতে উৎসাহিত করেছেন: কুরআনে আছে-

الَّذِينَ يُنْفِقُونَ فِي السَّرَّاءِ وَالضَّرَّاءِ وَالْكَاظِمِينَ الْغَيْظَ وَالْعَافِينَ عَنِ النَّاسِ وَاللَّهُ يُحِبُّ الْمُحْسِنِينَ

যারা সচ্ছল ও অসচ্ছল উভয় অবস্থায় ব্যয় করে এবং রাগ দমন করে ও মানুষকে ক্ষমা করে- আর আল্লাহ সদাচারীদের ভালবাসেন।” সূরা আলে ইমরান-১৩৪।

আরবীতে প্রসিদ্ধ প্রবাদ রয়েছে, ‘রাগের শুরু উন্মাদনা ও শেষ অনুশোচনা।’ তাই রাগের সময় নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারাই বীরত্ব ও প্রকৃত বুদ্ধিমানের কাজ। সহীহ বুখারী ৬১১৪।

রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-

إِنَّ الْغَضَبَ مِنَ الشَّيْطَانِ

রাগ শয়তানের পক্ষ থেকে আসে। সুনানু আবি দাউদ-৪৭৮৪।

عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرٍو، أَنَّهُ سَأَلَ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَاذَا يُبَاعِدُنِي مِنْ غَضَبِ اللهِ عَزَّ وَجَلَّ؟ قَالَ: ” لَا تَغْضَبْ “

আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা) হতে বর্ণিত, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলেন, কোন জিনিস আমাকে আল্লাহর গযব থেকে রক্ষা করবে? তিনি বললেন, তুমি রাগ করো না।- মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ৬৬৩৫; সহীহ ইবনে হিববান, হাদীস : ২৯৬।

এক ব্যক্তি বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমাকে কিছু উপদেশ দিন। তিনি বললেন, তুমি রাগ করো না। লোকটি বলল, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা বলেছেন তা বলার পর আমি চিন্তা করে দেখলাম, রাগই হল সকল অনিষ্টর মূল।-মুসনাদে আহমদ, হাদীস: ২৩০৭০; মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, হাদীস : ২০২৮৬।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন—

لَيْسَ الشَّدِيدُ بِالصُّرَعَةِ، إِنَّمَا الشَّدِيدُ الَّذِي يَمْلِكُ نَفْسَهُ عِنْدَ الغَضَبِ

‘সে ব্যক্তি শক্তিশালী নয়, যে ব্যক্তি কুস্তি লড়ে অপরকে ধরাশায়ী করে, বরং প্রকৃতপক্ষে সে ব্যক্তিই শক্তিশালী, যে রাগের সময় নিজেকে সংবরণ করতে পারে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৬৮০৯)

সুপ্রসিদ্ধ ইমাম ইবনুল কায়্যিম (রহ) রাগকে এক ধরণের আত্মিক রোগ বলে আখ্যায়িত করেছেন। হযরত থানভী (রহ) বলেন, রাগান্বিত অবস্থায় কখনও শিশুকে প্রহার করবে না (পিতা ও উস্তাদ) উভয়ের জন্যই এই কথা। রাগ প্রশমিত হওয়ার পর চিন্তা-ভাবনা করে শাস্তি দিবে। উত্তম শাস্তি হল ছুটি মওকুফ করে দেওয়া। শিশুর উপর এর খুব প্রতিক্রিয়া হয়ে থাকে। মিয়াজী (উস্তাদবিা শিক্ষক) ছাত্র প্রহারে এজন্য স্বাধীন হয়ে যান যে, তাকে প্রশ্ন করার কেউ থাকে না। শিশুর তো প্রশ্ন করার যোগ্যতাই নেই আর অভিভাবক মিয়াজীকে পূর্ণ স্বাধীন করে দিয়েছেন এই বলে যে, ‘হাড্ডি আমাদের, আর চামড়া মিয়াজীর’! মনে রাখবে, যার অধিকার সম্পর্কে প্রশ্ন করার কেউ থাকে না তার সম্পর্কে প্রশ্নকারী স্বয়ং আল্লাহ। এমনকি কোনো যিম্মী (মুসলিম দেশের অমুসলিম নাগরিক, যার নিরাপত্তা মুসলিম শাসকের যিম্মায়) কাফিরের উপর যদি কোনো শাসক জুলুম করে তাহলে হাদীস শরীফে এসেছে যে, আল্লাহ ও তার রাসূলের কাছে এর জন্য জবাবদিহি করতে হবে।-আনফাসে ঈসা পৃ. ১৭৩

 

কিছু পদ্ধতি যার দ্বারা রাগ কমানো যেতে পারে-

১. যখনই রাগ উঠবে উঠবে ভাব হবে সাথে সাথে অবস্থান পরিবর্তন করতে হবে। বসা থাকলে দাঁড়িয়ে যেতে হবে। দাঁড়ানো থাকলে বসতে হবে। শুয়ে থাকলে উঠে পড়তে হবে।

রাসুলুল্লাহ (সা) বলেন,

إِذَا غَضِبَ أَحَدُكُمْ وَهُوَ قَائِمٌ فَلْيَجْلِسْ، فَإِنْ ذَهَبَ عَنْهُ الْغَضَبُ وَإِلَّا فَلْيَضْطَجِعْ

যদি তোমাদের কেউ দাঁড়ানো অবস্থায় রাগান্বিত হয়ে পড়ে, তবে তার উচিত বসে পড়া। যদি তার রাগ কমে যায়, তবে ভালো; নয়তো তার উচিত শুয়ে পড়া।-সুনানু আবি দাঊদ- ৪৭৮২, মুসনাদে আহমাদ-২১৩৪৮

২. রাগ উঠবে উঠবে ভাব হলে তৎক্ষণাৎ নতুন ওযূ করে নিতে হবে। নবীজি (সা) বলেন,

إِنَّ الْغَضَبَ مِنَ الشَّيْطَانِ، وَإِنَّ الشَّيْطَانَ خُلِقَ مِنَ النَّارِ، وَإِنَّمَا تُطْفَأُ النَّارُ بِالْمَاءِ، فَإِذَا غَضِبَ أَحَدُكُمْ فَلْيَتَوَضَّأْ

রাগ আসে শয়তানের পক্ষ থেকে; শয়তানকে তৈরি করা হয়েছে আগুন থেকে, আর একমাত্র পানির মাধ্যমেই আগুন নেভানো সম্ভব। তাই তোমাদের মধ্যে কেউ যখন রাগান্বিত হয়ে পড়ে, তার উচিত অজু করা।- সুনানু আবি দাঊদ- ৪৭৮৪, মুসনাদে আহমাদ- ১৭৯৮৫

৩. বারবার ‘আউযু বিল্লাহি মিনাশ শাইত্বনির রজীম’ পড়তে হবে। নবী করিম (সা) বলেন,

إِنِّي لَأَعْلَمُ كَلِمَةً لَوْ قَالَهَا لَذَهَبَ عَنْهُ مَا يَجِدُهُ مِنَ الْغَضَبِ

আমি এমন একটি কালিমা জানি, যা পাঠ করলে রাগ দূর হয়ে যাবে।

(আর তা হলো) “আঊযু বিল্লাহি মিনাশ শাইত্বনির রজীম”।

অর্থাৎ, আমি বিতাড়িত শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে আল্লাহর কাছে পানাহ চাই।- সহীহ বুখারী- ৬০৪৮, ৬১১৫, সহীহ মুসলিম- ২৬১০, সুনানু আবি দাঊদ- ৪৭৮০

৪. চুপ করে থাকতে হবে। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আববাস (রা) হতে বর্ণিত, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন,

عَلِّمُوا، وَيَسِّرُوا، وَلا تُعَسِّرُوا، وَإِذَا غَضِبْتَ فَاسْكُتْ، وَإِذَا غَضِبْتَ فَاسْكُتْ، وَإِذَا غَضِبْتَ فَاسْكُتْ

তোমরা শিক্ষাদান কর, সহজ ও কোমল আচরণ কর; কঠোর আচরণ করো না। যখন তুমি রাগান্বিত হবে তখন চুপ থাক। যখন তুমি রাগান্বিত হবে তখন চুপ থাক। যখন তুমি রাগান্বিত হবে তখন চুপ থাক (এ কথা তিনবার বললেন)।- মুসনাদে আহমদ, হাদীস ২৫৫৬, ২১৩৬; মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ২৫৮৮৮; মুসনাদে বাযযার, হাদীস: ১৫২, ১৫৩; মুসনাদে আবু দাউদ ত্বয়ালিসী, হাদীস: ২৬০৮; আল-আদাবুল মুফরাদ, হাদীস: ২৪৫।

আশা করি আপনারা এগুলোর চর্চা করবেন ইনশাআল্লাহ। আমরা সবসময় মাথায় রাখব, রাগ এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি করে (যেমন বিবাহ বিচ্ছেদ, কলহ বিবাদ, জান মালের ক্ষতি ইত্যাদি) যার জন্য শুধু আফসোসই ব্যাতিত কিছু করার থাকে না।

 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to top button
error: Content is protected !!