অহংকার ও গর্ব পরিহার ও বিনয় নম্রতা অবলম্বন করা

আল মুস্তাদরাক হাকীম-কিতাবুল ইমান হাদীস ২০১-২০৮

দারুস সাআদাত গ্রন্থ

গ্রন্থঃ আল মুস্তাদরাক হাকীম

গ্রন্থকারঃ ইমাম হাকীম নিশাপুরী (রহ)

স্বত্বঃ দারুস সাআদাত কর্তৃক সংরক্ষিত

আল্লাহ যার প্রতি রাগান্বিত থাকবেন

201 – أَنَّ عِكْرِمَةَ بْنَ خَالِدِ بْنِ سَعِيدِ بْنِ الْعَاصِ الْمَخْزُومِيَّ، حَدَّثَهُ أَنَّهُ لَقِيَ عَبْدَ اللَّهِ بْنَ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ، فَقَالَ لَهُ: يَا أَبَا عَبْدِ الرَّحْمَنِ إِنَّا بَنُو الْمُغِيرَةِ قَوْمٌ فِينَا نَخْوَةٌ فَهَلْ سَمِعْتَ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ فِي ذَلِكَ شَيْئًا؟ فَقَالَ عَبْدُ اللَّهِ بْنُ عُمَرَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، يَقُولُ: «مَا مِنْ رَجُلٍ يَتَعَاظَمُ فِي نَفْسِهِ وَيَخْتَالُ فِي مِشْيَتِهِ إِلَّا لَقِيَ اللَّهَ وَهُوَ عَلَيْهِ غَضْبَانُ»

২০১. হযরত আমর বিন ইউনুস বলেন, হযরত ইকরিমা বিন খালিদ বিন সাঈদ বিন আল আস মাখযুমী (রা) আমার পিতাকে বলেছেন যে, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রা) এর সাথে তার সাক্ষাৎ হলে বলেন, হে আবু আব্দুর রহমান, আমি মুগীরার ছেলে আর ঐ কওমের সাথে সম্পর্ক আছে যাদের মাঝে অহংকার পাওয়া যায়। আপনি কি এ ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ (সা) থেকে কিছু শুনেছেন? ইবনে উমর (রা) বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা)-কে বলতে শুনেছি-  যে ব্যক্তিই নিজেকে বড় মনে করবে এবং চাল চলনে গর্ব প্রকাশ করবে তাহলে যখন সে আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ করবে তখন আল্লাহ তার প্রতি অসন্তুষ্ট থাকবেন।

জান্নাতী ও জাহান্নামী কারা?

202 – عَنْ سُرَاقَةَ بْنِ مَالِكٍ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَلَا أُنَبِّئُكُمْ بِأَهْلِ الْجَنَّةِ؟ الْمَغْلُوبُونَ الضُّعَفَاءُ، وَأَهْلُ النَّارِ كُلُّ جَعْظَرِيٍّ جَوَّاظٍ مُسْتَكْبِرٍ»

২০২. হযরত সুরাকা বিন মালিক (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন, আমি কি তোমাদেরকে জান্নাতীদের পরিচয় বলব না? তারা হল পর্যুদস্ত ও দুর্বল আর জাহান্নামীরা হল গর্বিত, দাম্ভিক ও অহংকারী। 

যে বড়ত্বের অধিকারী হতে চায় আল্লাহ তাকে ধ্বংস করেন

203 – عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِيمَا يَحْكِي عَنْ رَبِّهِ عَزَّ وَجَلَّ، قَالَ: «الْكِبْرِيَاءُ رِدَائِي، فَمَنْ نَازَعَنِي رِدَائِي قَصَمْتُهُ»

২০৩. হযরত আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন, আল্লাহ তাআলা বলেন, বড়ত্ব আমার চাদর আর যে তা আমার থেকে ছিনিয়ে নিতে চাইবে আমি তাকে ধ্বংস করব।

এটি ই্মাম মুসলিমের শর্ত অনুযায়ী সহিহ তবে তারা তা বর্ণনা করেন নি।

রাসূলুল্লাহ (সা) এর বিনয় ও সাদাসিধা জীবন যাপন

204 – عَنْ أَبِي مُوسَى، قَالَ: «كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَرْكَبُ الْحِمَارَ، وَيَلْبَسُ الصُّوفَ، وَيَعْتَقِلُ الشَّاةَ، وَيَأْتِي مُرَاعَاةَ الضَّيْفِ»

২০৪, হযরত আবু মূসা (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) গাধার উপর সওয়ার হতেন, পশমের কাপড় পরিধান করতেন, বকরী দোহাতেন এবং মেহমানের জন্য খাবার আনতেন।

205 – عَنْ أَبِي مُوسَى، قَالَ: «كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَرْكَبُ الْحِمَارَ، وَيَلْبَسُ الصُّوفَ، وَيَعْتَقِلُ الشَّاةَ، وَيَأْتِي مُرَاعَاةَ الضَّيْفِ»

২০৫, হযরত আবু মূসা (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) গাধার উপর সওয়ার হতেন, পশমের কাপড় পরিধান করতেন, বকরী দোহাতেন এবং মেহমানের জন্য খাবার আনতেন।

যে সামর্থ্য থাকা সত্বেও আল্লাহর জন্য প্রাচূর্যের পোষাক ছেড়ে দেয়

206 – عَنْ سَهْلِ بْنِ مُعَاذِ بْنِ أَنَسٍ الْجُهَنِيِّ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: «مَنْ تَرَكَ اللِّبَاسَ وَهُوَقَادِرٌ عَلَيْهِ تَوَاضُعًا لِلَّهِ دَعَاهُ اللَّهُ عَلَى رُءُوسِ الْخَلَائِقِ، حَتَّى يُخَيَّرَ فِي حُلَلِ الْإِيمَانِ يَلْبَسُ أَيَّهَا شَاءَ»

২০৬, হযরত মুআয বিন আনাস আল জুহনী (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি সামর্থ্য থাকা সত্বেও আল্লাহর সামনে বিনয় প্রকাশের জন্য দামী পোষাক পরিধান করা ছেড়ে দেয় তবে আল্লাহ তাআলা তাকে সকল মাখলুকের সামনে ডেকে তাকে ইখতিয়ার দিবেন ইমানের যেই পোষাকটি ইচ্ছা পরিধান করার।

উমর (রা) এর সাদাসিধা জীবন যাপন – ইসলামেই প্রকৃত সম্মান নিহিত

207 – عَنْ طَارِقِ بْنِ شِهَابٍ، قَالَ: خَرَجَ عُمَرُ بْنُ الْخَطَّابِ إِلَى الشَّامِ وَمَعَنَا أَبُو عُبَيْدَةَ بْنُ الْجَرَّاحِ فَأَتَوْا عَلَى مَخَاضَةٍ وَعُمَرُ عَلَى نَاقَةٍ لَهُ فَنَزَلَ عَنْهَا وَخَلَعَ خُفَّيْهِ فَوَضَعَهُمَا عَلَى عَاتِقِهِ، وَأَخَذَ بِزِمَامِ نَاقَتِهِ فَخَاضَ بِهَا الْمَخَاضَةَ، فَقَالَ أَبُو عُبَيْدَةَ: يَا أَمِيرَ الْمُؤْمِنِينَ أَنْتَ تَفْعَلُ هَذَا، تَخْلَعُ خُفَّيْكَ وَتَضَعُهُمَا عَلَى عَاتِقِكَ، وَتَأْخُذُ بِزِمَامِ نَاقَتِكَ، وَتَخُوضُ بِهَا الْمَخَاضَةَ؟ مَا يَسُرُّنِي أَنَّ أَهْلَ الْبَلَدِ اسْتَشْرَفُوكَ، فَقَالَ عُمَرُ: «أَوَّهْ لَمْ يَقُلْ ذَا غَيْرُكَ أَبَا عُبَيْدَةَ جَعَلْتُهُ نَكَالًا لَأُمَّةِ مُحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِنَّا كُنَّا أَذَلَّ قَوْمٍ فَأَعَزَّنَا اللَّهُ بِالْإِسْلَامِ فَمَهْمَا نَطْلُبُ الْعِزَّةَ بِغَيْرِ مَا أَعَزَّنَا اللَّهُ بِهِ أَذَلَّنَا اللَّهُ» .

২০৭. হযরত তারিক বিন শিহাব বলেন, হযরত উমর বিন খাত্তাব (রা) শামের দিকে চলেন। হযরত আবু উবায়দা বিন জাররাহ আমাদের সাথে ছিলেন। সবাই একটি নালার দিকে পৌঁছেন। তখন উমর (রা) উটের উপর সওয়ার ছিলেন। তিনি নামেন, মোজা খুলেন এবং তা কাঁধের উপর রাখেন এবং নিজের উটের লগাম ধরে তাকে নালায় নামিয়ে দেন।

এর উপর হযরত আবু উবায়দাহ (রা) বললেন, হে আমীরুল মুমিনীন! আপনিও এমন করছেন যে মোজা খুলে তা কাঁধের উপর রাখছেন, নিজের উটনীর লাগাম ধরে নালায় নাময়ে দিয়েছেন? আমার এটা ভাল লাগছে না, কারণ শহরের লোকেরা আপনার সম্মান (অভ্যর্থনা) করবে। উমর (রা) বললেন, আফসোস! যদি কথাটি তুমি ছাড়া অপর কেউ বলত, তবে আমি তাকে উম্মতে মুহাম্মদীর জন্য শিক্ষনীয় শাস্তি দিতাম। আমরা ছিলাম লাঞ্ছিত জাতি। আল্লাহ তাআলা অমাদেরকে ইসলামের দ্বারা সম্মান প্রদান করেছেন। অতএব আমরা যদি সেখানে ইযযত তালাশ করি যেখানে আমাদেরকে আল্লাহ ইযযত দেননি, তবে আল্লাহ আমাদেরকে অপদস্থ করবেন।

208 – عَنْ طَارِقِ بْنِ شِهَابٍ، قَالَ: لَمَّا قَدِمَ عُمَرُ الشَّامَ لَقِيَهُ الْجُنُودُ وَعَلَيْهِ إِزَارٌ وَخُفَّانِ وَعِمَامَةٌ وَهُوَ آخِذٌ بِرَأْسِ بَعِيرِهِ يَخُوضُ الْمَاءَ، فَقَالَ لَهُ – يَعْنِي قَائِلٌ – يَا أَمِيرَ الْمُؤْمِنِينَ تَلْقَاكَ الْجُنُودُ وَبَطَارِقَةُ الشَّامِ وَأَنْتَ عَلَى حَالِكَ هَذَا؟ فَقَالَ عُمَرُ: «إِنَّا قَوْمٌ أَعَزَّنَا اللَّهُ بِالْإِسْلَامِ، فَلَنْ نَبْتَغِيَ الْعِزَّةَ بِغَيْرِهِ»

২০৮, হযরত তারিক বিন শিহাব বলেন, যখন হযরত উমর (রা) শামে আসছিলেন তখন পথে তার সৈন্যদের সাথে দেখা হল। তিনি চাদর জড়ানো, মোজা পরিহিত ও পাগড়ী বাধা ছিলেন আর নিজের উটের মাথা ধরে পানিতে নিয়ে যাচ্ছিলেন। এ কারণে কেউ একজন বলল, হে অমীরুল মুমিনীন! আপনার সৈন্যবাহিনী আপনার সাথে সাক্ষাতরত আর শামের পাদ্রীও আপনার সাথে সাক্ষাতের অপেক্ষায়, কিন্তু আপনার এ কি অবস্থা? তিনি বললেন, আমরা ঐ সম্প্রদায় যাদেরকে আল্লাহ ইসলাম দ্বারা সম্মানিত করেছেন। অতএব আমরা এটা ব্যতীত আর কোন কিছুর দ্বারা সম্মান লাভ করতে চাই না।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to top button
error: Content is protected !!