শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করা থেকে বিরত থাকা
তাফসীর আদ দুররে মানসূর সূরা বাকারা ১৬৮ ও ১৬৯ আয়াতের তাফসীর
দারুস সাআদাত গ্রন্থ
গ্রন্থঃ তাফসীর আদ দুররে মানসূর
গ্রন্থকারঃ ইমাম সুয়ূতী (রহ)
অনুবাদঃ মারূফ আর রুসাফী
স্বত্বঃ দারুস সাআদাত কর্তৃক সংরক্ষিত
এই তাফসীর গ্রন্থের প্রথম খণ্ডটি যা ৬০০ পৃষ্ঠারও অধিক- সম্পূর্ণ হয়েছে আলহাদুলিল্লাহ। পরিমার্জন এর কাজ চলছে। কিছুদিনের মধ্যেই নির্ধারিত মূল্যে এর pdf টি পাওয়া যাবে আমাদের কাছ থেকে ইনশাআল্লাহ।
يَاأَيُّهَا النَّاسُ كُلُوا مِمَّا فِي الْأَرْضِ حَلَالًا طَيِّبًا وَلَا تَتَّبِعُوا خُطُوَاتِ الشَّيْطَانِ إِنَّهُ لَكُمْ عَدُوٌّ مُبِينٌ (168)
إِنَّمَا يَأْمُرُكُمْ بِالسُّوءِ وَالْفَحْشَاءِ وَأَنْ تَقُولُوا عَلَى اللَّهِ مَا لَا تَعْلَمُونَ (169)
১৬৮.হে লোকসকল! আহার কর, ধরণীতে যা কিছু হালাল ও পবিত্র। আর শয়তানের কদমের সাথে কদম মিলিও না। নিশ্চয়ই সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু।
১৬৯.সে তো তোমাদেরকে শুধু নির্দেশ প্রদান করে মন্দ ও অশ্লিল কাজের আর আল্লাহর ব্যাপারে এমন সবকিছু বলার যা তোমরা জান না।
ইমাম ইবনে মারদুবিয়াহ- হযরত ইবনে আব্বাস (রা) থেকে বর্ণনা করেন। নবী (সা) এর নিকট এই আয়াত- يَاأَيُّهَا النَّاسُ كُلُوا مِمَّا فِي الْأَرْضِ حَلَالًا طَيِّبًا তিলাওয়াত করা হয়েছিল। তখন সাদ ইবনে আবু ওয়াক্কাস (রা) দাড়ালেন এবং আরয করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আল্লাহর নিকট দুআ করুন, তিনি যেন আমার দুআ কবুল করেন। রাসূলুল্লাহ (সা) বললেন, হে সাদ! তুমি হালাল খাবার খাও, তাহলে তোমার দুআ কবুল হবে। কসম ঐ সত্তার, যার হাতে মুহাম্মদের প্রাণ! মানুষ তার পেটে এক লোকমা হারাম খাবার দেয়, তখন চল্লিশ দিন তার দুআ কবুল হয় না। আর যে গোশত সুদ ও হারাম দ্বারা সৃষ্টি হয়েছে, তা জাহান্নামে যাওয়ার বেশী উপযুক্ত।
ইমাম ইবনে জারীর এবং ইবনে আবী হাতিম- হযরত ইবনে আব্বাস (রা) থেকে وَلَا تَتَّبِعُوا خُطُوَاتِ الشَّيْطَانِ প্রসঙ্গে বর্ণনা করেন যে, এর অর্থ হল শয়তানের কাজের পিছনে চলো না।
ইমাম ইবনে আবী হাতিম- হযরত ইবনে আব্বাস (রা) থেকে বর্ণনা করেন যে, যে কাজ কুরআনের বিপরীত তা-ই خُطُوَاتِ الشَّيْطَانِ শয়তানের কর্ম থেকে।
ইমাম আব্দ ইবনে হুমায়দ, ইবনে আবী হাতিম- মুজাহিদ (রহ) থেকে وَلَا تَتَّبِعُوا خُطُوَاتِ الشَّيْطَانِ প্রসঙ্গে বর্ণনা করেন যে, এর অর্থ হল শয়তানে পদাঙ্ক অনুসরণ করো না।
ইমাম আব্দ ইবনে হুমায়দ, ইবনে আবী হাতিম- হযরত ইকরিমাহ (রহ) থেকে وَلَا تَتَّبِعُوا خُطُوَاتِ الشَّيْطَانِ প্রসঙ্গে বর্ণনা করেন যে, এর অর্থ হল, শয়তানের ওয়াসওয়াসার অনুসরণ করো না।
ইমাম আবুশ শায়খ- সাঈদ ইবনে জুবায়র থেকে خُطُوَاتِ الشَّيْطَانِ প্রসঙ্গে বর্ণনা করেন যে, এর অর্থ হল শয়তানের সাজ সজ্জার পিছনে চলো না।
ইমাম ইবনে আবী হাতিম এবং আবুশ শায়খ- কাতাদাহ (রহ) থেকে বর্ণনা করেন যে, আল্লাহর প্রত্যেক নাফরমানী خُطُوَاتِ الشَّيْطَانِ من শয়তানের কর্ম থেকে।
ইমাম আব্দ ইবনে হুমায়দ- হযরত ইবনে আব্বাস (রা) থেকে বর্ণনা করেন যে, যেই কসম অথবা মানত রাগের বশে হয়, তা হয় خُطُوَاتِ الشَّيْطَانِ শয়তানের কর্ম থেকে, আর তার কাফফারা হল কসমের কাফফারা।
ইমাম আব্দুর রাযযাক, সাঈদ ইবনে মানসূর, আব্দ ইবনে হুমায়দ, ইবনে আবী হাতিম, তাবরানী এবং হাকীম- হযরত ইবনে মাসউদ (রা) থেকে বর্ণনা করেন যে, তার নিকট (রান্না করা) থানের (স্তনের) মাংস ও লবন আনা হল। তিনি তা থেকে (সকলকে নিয়ে) আহার করছিলেন। এক ব্যক্তি পৃথক বসে ছিল। ইবনে মাসউদ (রা) বললেন, নিজের সাথিকেও পেশ কর। সে বলল, আমি খাই না। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কি রোযা? সে বলল, না। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, তবে কি কারণ? সে বলল, আমি থানের গোশত নিজের জন্য চিরজীবনের জন্য হারাম করে নিয়েছি। ইবনে মাসউদ (রা) বললেন, এটা হলخُطُوَاتِ الشَّيْطَانِ শয়তানের কর্ম থেকে। আহার কর আর নিজের কসমের কাফফারা প্রদান কর।
ইমাম আব্দ ইবনে হুমায়দ, আবুশ শায়খ আবু মাজলায থেকেوَلَا تَتَّبِعُوا خُطُوَاتِ الشَّيْطَانِ প্রসঙ্গে বর্ণনা করেন যে, এর দ্বারা উদ্দেশ্য গুনাহর কাজে মানত করা।
ইমাম আব্দ ইবনে হুমায়দ- ঈসা ইবনে আব্দুর রহমান আস সুলামী থেকে বর্ণনা করেন। এক ব্যক্তি হাসান (রহ) এর নিকট আসল। তখন ঐ ব্যক্তি তাকে জিজ্ঞাসা করল, আর তখন আমি তার পিছনে বসা ছিলাম। সে বলল, আমি কসম করেছি, যদি আমি এমন এমন না করি, তবে হাঁটুর উপর ভর করে হজ করা আমার জন্য লাযিম- অত্যাবশ্যক। হাসান (রহ) বললেন, এটা خُطُوَاتِ الشَّيْطَانِ শয়তানের কর্ম থেকে। তুমি হজ কর, সওয়ারী নাও আর কসমের কাফফারা প্রদান কর।
ইমাম আব্দ ইবনে হুমায়দ- উসমান বিন গিয়াস থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আমি জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ (রা)-কে এমন এক ব্যক্তির ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলাম। যে, এই মানত করেছিল যে, সে তার নাকে সোনার দুল দিবে। জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ (রা) বললেন, এটা خُطُوَاتِ الشَّيْطَانِ শয়তানের কর্ম থেকে। (শয়তান চায় যে,) সে ব্যক্তি সর্বদা গুনাহ করতে থাকবে। অতএব তার উচিৎ, তার কসমের কাফফারা প্রদান করা।
ইমাম ইবনে আবী হাতিম- ইকরিমা (রহ) থেকে বর্ণনা করেন যে, শয়তানকে শয়তান এজন্য বলা হয় যে, কেননা সে শয়তানী কাজকর্ম করে।
ইমাম ইবনে জারীর- সুদ্দী (রহ) থেকে বর্ণনা করেন যে, إِنَّمَا يَأْمُرُكُمْ بِالسُّوءِ এর দ্বারা উদ্দেশ্য গুনাহ আর وَالْفَحْشَاءِ এর দ্বারা উদ্দেশ্য যিনা-ব্যভিচার। আর وَأَنْ تَقُولُوا عَلَى اللَّهِ مَا لَا تَعْلَمُونَ এর অর্থ হল, সে নিজের পক্ষ থেকে البحائر والسوائب والوصائل والحوامي (এগুলো বিভিন্ন বয়সের উট যা আরবরা মূ্র্তির উদ্দেশ্যে মানত করে ছেড়ে দিত, না তার গোশত আহার করত আর না তার উপর সওয়ার হত।) হারাম সাব্যস্ত করে আর বলে যে, আল্লাহ তাআলা তাকে হারাম করেছেন।