কুদৃষ্টি ও এর কুফল
মারূফ আর রুসাফী
চোখের সাথে সম্পর্কিত একটি বিশেষ গুনাহ হল কুদৃষ্টি বা অবৈধ দৃষ্টিপাত। মাওলানা থানভী (রহ) বলেন, অনেক মানুষ এটাকে গুনাহই মনে করে না। আশ্চর্যের ব্যাপার হলো অন্তরে এ রোগ থাকা সত্বেও অনেক ব্যক্তি নিজেকে পরহেজগার ও মুত্তাকী ভাবে।– আল ইলমু ওয়াল উলামা
চোখের খিয়ানত
আল্লাহ তাআলা কুরাানুল কারীমে ইরশাদ করেন-
يَعْلَمُ خَائِنَةَ الْأَعْيُنِ وَمَا تُخْفِي الصُّدُورُ
চোখের খিয়ানত ও অন্তরে যা গোপন আছে সে সম্পর্কে তিনি (আল্লাহ) অবহিত। সূরা মুমিন ১৯
ছোখের খিয়ানত বা অপব্যবহারের অর্থ হল গোপন দৃষ্টি। যেমন কেউ কোন মহীলা বা নারীর প্রতি তার অগোচরে অথবা মানুষের অজান্তে দৃষ্টিপাত করতে থাকে। যখন সে নারী অথবা কোন মানুষ টের পায়, তখন সে দৃষ্টি ফিরিয়ে নেয়। আবার যখন সুযোগ পায়, তখন দেখতে থাকে।- ইবনে কাসীর
হযরত সুফিয়ান সাওরী (রহ) বলেন, একজন লোক যখন কোন মজলিসে বসে আর রাস্তা দিয়ে কোন নারীকে অতিক্রম করতে দেখলে সে গোপনে তার দিকে তাকায়। যখন লোকেরা দেখে যে, লোকটি মহীলার দিকে তাকাচ্ছে, তখন সে চোখ সরিয়ে ফেলে। আর যখন লোকেরা গাফেল হয় তখন সে আবার তাকায়। একেই বলা হয় চোখের খিয়ানত।– আসক্তি, শায়খ সালিহ মুনজিদ
চোখে প্রভাব
কাশফের অধিকারী বুযুর্গগণ লিখেছেন যে, কুদৃষ্টির ফলে চোখে এমন অন্ধকার সৃষ্টি হয়, যা সামান্য অন্তর্দৃষ্টিসম্পন্ন বুযুর্গরাও দেখে বুঝে ফেলেন যে, লোকটির চোখ পবিত্র নয়।-আল ইলমু ওয়াল উলামা
একবার হযরত উসমান (রা) এর দরবারে এক ব্যক্তি আগমন করলেন, যে পথিমধ্যে এক নারীর সৌন্দর্যে অভিূত হয়ে পড়েছিল। উসমান (রা) তাকে দেখে বললেন, মানুষের কি হলো যে, তাদের চোখ থেকে ব্যভিচারের আসর টপকে পড়ছে।- আর রূহ
কুদৃষ্টিকারীরা দাজ্জালের সঙ্গী
হযরত মাওলানা আশরাফ আলী থানভী (রহ) বলেন, আমি একবার স্বপ্নে দাজ্জালকে দেখতে পেলাম। তার সাথে অনেক মহীলা, গায়ক-গায়িকা ও বাদ্যযন্ত্র রয়েছে। এজন্য আমি তাকে খুব ভয় পাচ্ছিলাম। যাদের মাঝে সৌন্দর্যপূজা ও কুদৃষ্টির রোগ রয়েছে তারা দাজ্জালের সঙ্গী হবে।-আল ইলমু ওয়াল উলামা
কুদৃষ্টির ক্ষতি- ইবাদতের স্বাদ বিনষ্ট হওয়া
হযরত শায়খ যাকারিয়া (রহ) বলেন, কুদৃষ্টি একটি মারাত্মক রোগ। আমার নিজেরই এ ব্যাপারে অনেক অভিজ্ঞতা হয়েছে যে, মুরিদরা প্রথম প্রথম যিকির শোগলে অত্যন্ত মজা অনুভব করে, ইবাদতে স্বাদ পায়। কিন্তু কুদৃষ্টির কারণে ধীরে ধীরে সেই মজা বিদায় নিতে থাকে, ইবাদত ছুটে যাওয়ার উপক্রম হয়।– আপবীতি
অদৃশ্য শাস্তি
একজন বুযুর্গ সম্পর্কে বর্ণিত আছে যে, তিনি খানায়ে কাবার তাওয়াফ করছিলেন। আর তার এক চোখ ছিল কানা। তিনি তাওয়াফের মধ্যে বারবার বলছিলেন, হে আল্লাহ! আমি আপনার ক্রোধ থেকে পানাহ চাই। কেউ জিজ্ঞেস করলো এত ভয় পাওয়ার কারণ কি? তিনি বললেন, একবার আমি একটি বালককে খারাপ নজরে দেখেছিলাম। তখন অদৃশ্য থেকে আমার চোখে একটা থাপ্পর লাগল আর চোখটি অন্ধ হয়ে গেল। এজন্য আমি সবসময় ভয়ে তটস্থ থাকি যে, না জানি কখন আবার এরকম হয়ে যায়।–আপবীতি
মৃত্যুর সময় কালিমা পাঠে বাধা
এক ব্যক্তির মৃত্যুর সময় লোকেরা তাকে কালিমার তালকীন করলে সে বলতে লাগলো, আমার মুখে কালিমা আসে না। লোকেরা জিজ্ঞাসা করলো, কারণ কি? সে বলল, এক মহীলা আমার নিকট তোয়ালে খরীদ করার জন্য এসেছিল। তার চেহার ছিল অসম্ভব সুন্দর। তাই তাকে বারবার দেখছিলাম। এজন্যই আমার মুখে কালিমা আসে না।-আপবীতি
দৃষ্টিপাত সকল ফিতনার উৎস
আল্লামা ইবনুল কাইয়িম (রহ) বলেন, মানুষ যত ধরণের অন্য্যয়, যিনা, ব্যভিচার ও অপরাধ করে থাকে, সবকিছু মূল কারণ হলো মানুষের দৃষ্টি।
ইমাম গাযালী (রহ) বলেন, দৃষ্টিপাতই সকল ফিতনা ও দুর্দশার উৎস।- ইহয়াউল উলুম
হযরত ঈসা (আ) বলেছেন, তোমরা নারীদের দিকে দৃষ্টিপাত করা থেকে বেঁচে থাক। কেননা তা অন্তরে কামনা বাসনা জাগিয়ে দেয়। আর এটা অনেক বড় ফিতনা। – ইহয়াউল উলুম
কুদৃষ্টিকারীর কুদৃষ্টি তার নিজেকেই আহত করে
আল্লামা ইবনুল কাইয়িম (রহ) বলেন, দৃষ্টি একটি তীর- তা যার দিকে নিক্ষেপ করা হয় তাকে হত্যা করার আগে নিক্ষেপকারীকেই হত্যা করে দেয়। কেননা একবার দেখলে অবার দেখতে মন চায়। এতে তৃপ্তি তো হয়ই না বরং অশান্তি আরো বেড়ে যায়। বস্তুত এটি একটি বড় আযাব। তুমি একটি বিষয় হাসিল করতে চাইলে, তা না পাওয়ার কষ্টের উপর ধৈর্য ধারণ করতে পারলে না। আবার তা লাভ করার ক্ষমতাও তুমি রাখ না। এর চেয়ে বড় আযাব আর কি হতে পারে?- আসক্তি, শায়খ সালিহ মুনজিদ
এ কারণেই কোন কবী বলেন, সব ধরণের অপকর্মের মূল কারণ হল দৃষ্টি। বড় বড় আগুনের মূল হচ্ছে কোন অগ্নিস্ফুলিঙ্গকে ছোট মনে করা। এমন বহু দৃষ্টি রয়েছে যা দৃষ্টি প্রদানকারীর অন্তরে এমনেভাবে নাড়া দেয়, যেমন কোন তীর বাঁকা ধনুক ও সুতার মাঝে নাড়া দেয়।-আসক্তি, শায়খ সালিহ মুনজিদ
আল্লামা ইবনুল জাওযী (রহ) উপদেশ
আল্লামা ইবনুল জওযী (রহ) বলেন, হে বন্ধু! আল্লাহ তোামকে তাওফীক দান করুন। তুমি দৃষ্টির অনিষ্টতা থেকে নিজেকে বাঁচাও। এ দৃষ্টি বহু ইবাদতকারীকেই ধ্বংস করেছে। কত পরহেযগার মুত্তাকীকে দীন থেকে দূরে সরিয়ে দিয়েছে। তুমি দৃষ্টির হিফাযত কর, কারণ দষ্টিই হল সব বিপদের মুল কারণ। তবে শুরুতে তার চিকিৎসা সহজ। কিন্তু যদি তা বারবার হয়ে থাকে, তখন তা শক্তিশালী ব্যাধিতে পরিণত হয়। তার চিকিৎসা আর সহজ হয় না। তখন তার চিকিৎসা খুবই কষ্টকর।- যাম্মুল হাওয়া
আল্লাহ আমাদের সকলকে কুদৃষ্টির অনিষ্ট থেকে হিফাযত করুন