আয় অনুযায়ী ব্যয় এবং অবস্থানুযায়ী জীবন যাপন

সামর্থ্য অনুযায়ী ব্যয় এবং অবস্থানুযায়ী জীবনযাপন করা উত্তম

মারুফ আর রুসাফী

আল্লাহ তাআলা কুরআনুল কারীমে ইরশাদ করেন-

لِيُنفِقْ ذُو سَعَةٍ مِّن سَعَتِهِۦۖ وَمَن قُدِرَ عَلَيْهِ رِزْقُهُۥ فَلْيُنفِقْ مِمَّآ ءَاتَىٰهُ ٱللَّهُۚ لَا يُكَلِّفُ ٱللَّهُ نَفْسًا إِلَّا مَآ ءَاتَىٰهَاۚ سَيَجْعَلُ ٱللَّهُ بَعْدَ عُسْرٍ يُسْرًا

সামর্থ্যবান ব্যক্তি তার সামর্থ্য অনুযায়ী ব্যয় করবে আর যার রিযিক সংকীর্ণ, সে আল্লাহ তাকে যা (যতটুক) দিয়েছেন তা হতে ব্যয় করবে। আল্লাহ কারো উপর (তার সাধ্যের বাইরে) কোন কষ্টদায়ক বোঝা আরোপ করেন না। আল্লাহ কষ্টের পর দেবেন সুখ।- সূরা তালাক ৭

মুফতী মুহাম্মদ শফি (রহ) বলেন, এই আয়াত থেকে প্রমাণিত হয় যে, মানুষের সামর্থ্য অনুযায়ী ব্যয় এবং অবস্থানুযায়ী জীবন যাপন করা উত্তম।-মাআরেফুল কুরআন

যেমন বাংলায় প্রবাদ আছে- যেখানে যেমন সেখানে তেমন।

আবু উবায়দা রাদিয়াল্লাহু আনহু এর ঘটনা
একবার হযরত উমর (রা) হযরত আবু উবাইদা (রা) এর ব্যাপারে জানতে পারেন যে, তিনি মোটা কাপড় পরিধান করে থাকেন এবং হালকা খাবার খেয়ে থাকেন। অতঃপর তিনি তার কাছে ১০০০ স্বর্ণমুদ্রা পাঠিয়ে দেন আর প্রেরককে তার প্রতি লক্ষ্য করতে বলেন।

যখন তিনি ১০০০ স্বর্ণ মুদ্রা পান তখন তিনি মিহি কাপড় পড়তে শুরু করেন এবং উত্তম খাদ্য খেতে শুরু করেন। দূত ফিরে এসে উমর (রা) এর নিকট ঘটনা ব্যক্ত করলে উমর (রা) বললেন, আল্লাহ তাআলা আবু উবায়দার প্রতি দয়া করুন। তিনি উক্ত আয়াতের উপর আমল করেছেন।- ইবনে কাসীর

ইব্রাহিম ইবনে আদহাম (রহ) এর ঘটনা
একবার হযরত ইব্রাহিম ইবন আদহাম (রহ) তার এক ভাইয়ের হাতে কিছু টাকা দিয়ে বললেন, যাও আমাদের জন্য মাখন, মধু এবং রুটি নিয়ে আসো। তিনি বললেন, হে আবু ইসহাক (হে ইসহাকের পিতা)! যা বললেন সবগুলো কি ক্রয় করে নিয়ে আসবো?

তিনি বললেন, তোমার অমঙ্গল হোক! যখন পাওয়া যাবে তখন সুস্থ সবল মানুষের মতো খাবে। আর যখন পাওয়া যাবে না, তখন মৃত ব্যক্তির ন্যায় ধৈর্য ধারণ করবে।

উত্তম আদব
হযরত হাসান থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নিঃসন্দেহে মুমিন আল্লাহর থেকে উত্তম আদব শিখেছেন যে, যখন তার ওপর প্রশস্ততা আসবে, তখন সে প্রশস্ততার সাথে ব্যয় করবে আর যখন সংকীর্ণতা আসবে, তখন সে সংকীর্ণতার সাথে সাথে ব্যয় করবে।- শুআবুল ইমান

সর্বাবস্থায় মধ্যমপন্থা অবলম্বন করা উত্তম
শায়েখ হালিমী রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, প্রত্যেক ব্যাপারে মধ্যমপন্থা ও ভারসাম্য অবলম্বন করা উত্তম ও সুন্দর তাতে বাড়াবাড়ি করার চেয়ে। এমনকি মহব্বত ও শত্রুতার ক্ষেত্রেও। হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন

তুমি তোমার বন্ধুর সাথে কম বন্ধুত্ব করো, হতে পারে কোনদিন সে তোমার শত্রু হয়ে যাবে। আর তোমার শত্রুর সাথেও কম শত্রুতা করো, হতে পারে কোনদিন সে তোমার বন্ধু হয়ে যাবে।- শুআবুল ঈমান

প্রতিদান প্রাপ্তিতে যারা সমান
হযরত আলী (রা) থেকে বর্ণিত আছে যে, এক ব্যক্তি নবী (সা) নিকট হাজির হয়ে এক শত উকিয়া থেকে ১০ উকিয়া (আল্লাহর পথে) দান করলেন। এরপর আরেক ব্যক্তি এসে দশ দীনারের (স্বর্ণ মুদ্রা) মধ্যে থেকে ১ দিনার দিলেন। এরপর আরেক ব্যক্তি এসে ১০ দিনারের মধ্য থেকে ১ দিনার দিলেন। তখন নবী (সা) তাদেরকে বললেন, প্রতিদান প্রাপ্তিতে তোমরা সবাই সমান। অতঃপর তিনি তিলাওয়াত করেন –

لِيُنفِقْ ذُو سَعَةٍ مِّن سَعَتِهِۦۖ وَمَن قُدِرَ عَلَيْهِ رِزْقُهُۥ فَلْيُنفِقْ مِمَّآ ءَاتَىٰهُ ٱللَّهُۚ لَا يُكَلِّفُ ٱللَّهُ نَفْسًا إِلَّا مَآ ءَاتَىٰهَاۚ سَيَجْعَلُ ٱللَّهُ بَعْدَ عُسْرٍ يُسْرًا

সামর্থ্যবান ব্যক্তি তার সামর্থ্য অনুযায়ী ব্যয় করবে আর যার রিযিক সংকীর্ণ, সে আল্লাহ তাকে যা (যতটুকু) দিয়েছেন তা হতে ব্যয় করবে। আল্লাহ কারো উপর (তার সাধ্যের বাইরে) কোন কষ্টদায়ক বোঝা আরোপ করেন না। আল্লাহ কষ্টের পর দেবেন সুখ।- সূরা তালাক ৭

স্ত্রী সন্তানের  ভরণ পোষণ স্বামীর সামর্থ্য অনুযায়ী হবে
উক্ত আয়াত থেকে জানা গেল যে ভরণপোষণের ব্যাপারে স্ত্রীর অবস্থা ধর্তব্য হবে না বরং স্বামীর আর্থিক সংগতি অনুযায়ী ভরণপোষণ দেওয়া ওয়াজিব হবে। স্বামী বিত্তবান হলে বিত্তবানসুলভ ভরণপোষণ দেওয়া ওয়াজিব হবে, যদিও স্ত্রী বিত্ত শালীনি না হয় বরং দরিদ্র ও গরিব হয়। স্বামী  দরিদ্র হলে দরিদ্র সুলভ ভরণপোষণ ওয়াজিব হবে, যদিও স্ত্রী বিত্তশালীনি ও ধনী হয়।- মারেফুল কোরআন

স্ত্রীর সন্তানের হক আদায়ের চেষ্টা করলে আল্লাহ স্বাচ্ছন্দ্য দান করেন

سَيَجْعَلُ ٱللَّهُ بَعْدَ عُسْرٍ يُسْرًا
আল্লাহ কষ্টের পর দেবেন সুখ।
এই আয়াতে ইঙ্গিত রয়েছে যে, যারা যথাসাধ্য স্ত্রীদের ওয়াজিব ভরণ-পোষণ আদায় করতে সচেষ্ট থাকে এবং স্ত্রীকে কষ্টে রাখার মনোবৃত্তি পোষণ না করে, সেই স্বামীরা আল্লাহর পক্ষ থেকে স্বাচ্ছন্দ্য লাভ করবে। দ্বিতীয়ত কারো এরকম মনে করা উচিত নয়, বর্তমান দারিদ্র চিরকাল বজায় থাকবে। বরং দারিদ্র ও স্বাচ্ছন্দ আল্লাহর হাতে। তিনি দারিদ্র্যের পর স্বাচ্ছন্দ দান করতে পারেন।-মাআরেফুল কুরআন

মাসআলা

যুহরী (রহ)-কে ঐ ব্যক্তির ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হলো, যে তার স্ত্রীর ভরণ পোষণ দিতপ পারে না, এখন কি তাদের বিবাহ বিচ্ছেদ করে দেওয়া যাবে? তিনি বললেন, তাদের বিচ্ছেদ করানো যাবে না বরং তাকে সময় দেওয়া হবে। এরপর তিনি তিলাওয়াত করেন-

لَا يُكَلِّفُ ٱللَّهُ نَفْسًا إِلَّا مَآ ءَاتَىٰهَاۚ سَيَجْعَلُ ٱللَّهُ بَعْدَ عُسْرٍ يُسْرًا

আল্লাহ কারো উপর (তার সাধ্যের বাইরে) কোন কষ্টদায়ক বোঝা আরোপ করেন না। আল্লাহ কষ্টের পর দেবেন সুখ।- সূরা তালাক ৭

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to top button
error: Content is protected !!