নিরাপদে থাকার দুআ- সকাল সন্ধ্যার দুআ

দারুস সাআদাত গ্রন্থ

গ্রন্থঃ আমালুল ইয়াওমি ওয়াল লাইলি – দিবা রাতের আমলসমূহ

লেখকঃ ইবনুস সুন্নী (রহ)

অনুবাদঃ দারুস সাআদাত কর্তৃক অনূদিত

ভোরে কি দুআ পাঠ করবে

৫১.হযরত ইবনে আব্বাস (রা) বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (সা) এর নিকট অভিযোগ করল যে, সে বিপগ্রস্ত। নবী (সা) তাকে বললেন, তুমি ভোরে এই দুআ পাঠ কর,

بِسْمِ اللَّهِ عَلَى نَفْسِي وَأَهْلِي وَمَالِي

আমি আল্লাহর নাম নিচ্ছি আমার নিজের উপর, আমার পরিবার ও মাল-সম্পদের উপর।

এটা তোমার জন্য কোন কিছু (কোন বিপদ না হটিয়ে) ছাড়বে না।

ঐ ব্যক্তি এই দুআ পাঠ করা শুরু করল আর তার বিপদ কেটে গেল।

৫২.হযরত আয়িশা (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) ভোরে এই দুআ পড়তেন-

أَصْبَحْتُ يَا رَبِّ أُشْهِدُكَ، وَأُشْهِدُ مَلَائِكَتَكَ، وَأَنْبِيَاءَكَ وَرُسُلَكَ، وَجَمِيعَ خَلْقِكَ عَلَى شَهَادَتِي عَلَى نَفْسِي أَنِّي أَشْهَدُ أَنَّكَ لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ، وَحْدَكَ لَا شَرِيكَ لَكَ، وَأَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُكَ وَرَسُولُكَ، وَأُؤْمِنُ بِكَ، وَأَتَوَكَّلُ عَلَيْكَ

ইয়া রব! আমি ভোর করেছি। আমি সাক্ষী বানাচ্ছি আপনাকে, আপনার ফেশেতাদেরকে, আপনার নবীদেরকে, আপনার রাসূলদেরকে, আর আপনার সমস্ত মাখলুককে। আমি আমার আমি আমার নিজের উপর সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি আপনি ব্যতীত কোন মাবুদ নাই। আপনি একক আপনার কোন শরীক নেই। আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মদ (সা) আপনার বান্দা এবং রাসূল। আর এই সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আমি আপনার প্রতি ইমান এনেছি এবং আপনার প্রতি ভরসা করেছি।

তিনি এটা তিনবার পড়তেন।

৫৩. হযরত আবু হুরায়রা (রা) বর্ণনা করেন। রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি সকালে এই দুআ পড়বে-

مَا شَاءَ اللَّهُ، لَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللَّهِ، أَشْهَدُ أَنَّ اللَّهَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ

 আল্লাহ যা চান তা-ই হয়। আল্লাহর সাহায্য ব্যতীত কোন শক্তি নেই। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআরা সবকিছুর উপর ক্ষমতাবান।

তাহলে তাকে ঐ দিনের সব কল্যাণ দান করা হবে, আর তার থেকে ঐ দিনের সকল অকল্যাণ দূর করে দেয়া হবে। আর যে এটা রাতে পড়বে, তাকে ঐ রাতের সব কল্যাণ দান করা হবে। আর তার থেকে ঐ রাতের সকল অকল্যাণ দূর করে দেয়া হবে।

৫৪. হযরত উম্মু সালামা (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) ভোরে এই দুআ পড়তেন-

اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ عِلْمًا نَافِعًا، وَرِزْقًا طَيِّبًا، وَعَمَلًا مُتَقَبَّلًا

হে আল্লাহ! অমি আপনার নিকট চাই উপকারী ইলম, পবিত্র রিযিক এবং কবুল হওয়ার মত আমল।

৫৫. হযরত ইবনে আব্বাস (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি ভোরে এই দুআ পাঠ করবে-

اللَّهُمَّ إِنِّي أَصْبَحْتُ مِنْكَ فِي نِعْمَةٍ وَعَافِيَةٍ وَسِتْرٍ، فَأَتِمَّ عَلَيَّ نِعْمَتَكَ وَعَافِيَتَكَ وَسِتْرَكَ فِي الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ

হে আল্লাহ! অমি আপনার পক্ষ থেকে নিআমত, আফিয়াত, (আমার দোষ-ত্রুটির উপর) পর্দা-পুশিদাহ সহ ভোর করেছি। আপনি দুনিয়া ও আখিরাতে আমার প্রতি আপনার নিআমত, আফিয়াত এবং পর্দা-পুশিদাহ পরিপূর্ণ করে দিন।

তাহলে আল্লাহর উপর ওয়াজিব যে, তার উপর তার নিআমত পূর্ণ করে দিবেন।

৫৬. হযরত ইবনে আব্বাস (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি ভোরে এই আয়াত পাঠ করবে-

فَسُبْحَانَ اللَّهِ حِينَ تُمْسُونَ وَحِينَ تُصْبِحُونَ، وَلَهُ الْحَمْدُ فِي السَّمَوَاتِ وَالْأَرْضِ وَعَشِيًّا وَحِينَ تُظْهِرُونَ

সুতরাং তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের পবিত্রতা বর্ণনা কর সন্ধ্যায় ও ভোরে এবং বিকাল ও দুপুরে, আর আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীতে সকল প্রশংসা তো তারই।– সূরা রূম ১৭-১৮

তাহলে ঐ দিন তার যেসব আমল ছুটে গেছে তার ক্ষতিপূরণ হয়ে যাবে। আর যে সন্ধ্যায় পড়বে তাহলে তার রাতের ছুটে যাওয়া আমলের ক্ষতিপূরণ হয়ে যাবে।

৫৭. হযরত তালাক বিন হাবীব (রা) বলেন, এক ব্যক্তি হযরত আবু দারদা (রা) এর নিকট আসলো এবং বলল, হে আবু দারদা! আপনার ঘর পুরে গেছে। আবু দারদা (রা) বললেন, আমার ঘর পুরে নি। আল্লাহ তাআলা এমন করবেন না, ঐ দুই কালিমার জন্য যা আমি রাসূলুল্লাহ (সা) থেকে শুনেছি। (তিনি ইরশাদ করেছেন) যে ব্যক্তি ঐ দুই কালিমা দিনের শুরুতে পড়বে, তাহলে সন্ধ্যা পর্যন্ত তার কোন বিপদ হবে না। আর যে ব্যক্তি তা দিনের শেষে পাঠ করবে, তবে ভোর পর্যন্ত তার কোন বিপদ হবে না। 

اللَّهُمَّ أَنْتَ رَبِّي، لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ، عَلَيْكَ تَوَكَّلْتُ، وَأَنْتَ رَبُّ الْعَرْشِ الْعَظِيمِ، مَا شَاءَ اللهُ كَانَ، وَمَا لَمْ يَشَأْ لَمْ يَكُنْ، لَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللَّهِ الْعَلِيِّ الْعَظِيمِ، أَعْلَمُ أَنَّ اللَّهَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ، وَأَنَّ اللَّهَ قَدْ أَحَاطَ بِكُلِّ شَيْءٍ عِلْمًا، اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ نَفْسِي، وَمِنْ شَرِّ كُلِّ دَابَّةٍ أَنْتَ آخِذٌ بِنَاصِيَتِهَا، إِنَّ رَبِّي عَلَى صِرَاطٍ مُسْتَقِيمٍ

হে আল্লাহ! আপনিই আমার প্রভু। আপনি ব্যতীত কোন মাবুদ নাই। আপনার উপরই আমার ভরসা। আপনিই মহান আরশের প্রতিপালক। আল্লাহ যা চান তা-ই হয়, আর যা তিনি চান না তা হয় না। আল্লাহর সাহায্য ব্যতীত কেন শক্তি নেই। আমি বিশ্বাস করি যে, আল্লাহ তাআলা সবকিছুর উপর ক্ষমতাবান এবং আল্লাহর জ্ঞান সবকিছুকে পরিবেষ্টন করে আছে। আমি আল্লাহর আশ্রয় চাই নিজের নফসের অনিষ্ট এবং যমীনে বিচরণকারী সবকিছুর অনিষ্ট হতে যার নিয়ন্ত্রণ আপনার হাতে। নিশ্চয়ই আমার প্রতিপালক সঠিক পথ প্রদর্শনকারী।

৫৮. হযরত হাসান বসরী (রহ) বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ (সা) এর একজন সাহাবীর সাথে বসা ছিলাম। এমন সময় তাকে বলা হল যে, আপনি আপনার ঘরের খবর নিন, কেননা তা পুরে গেছে। তিনি বললেন, না আল্লাহর কসম, পুরে নাই। তাকে আবার বলা হল, আপনার ঘর পুরে গেছে। আর তিনি আল্লাহর কসম খেয়ে বলছিলেন, না, পুরেনি। তিনি বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা)-কে ইরশাদ করতে শুনেছি, যে ব্যক্তি ভোরে এই দুআ পড়ে- 

رَبِّيَ اللَّهُ الَّذِي لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ، عَلَيْهِ تَوَكَّلْتُ، وَهُوَ رَبُّ الْعَرْشِ الْعَظِيمِ، مَا شَاءَ اللَّهُ كَانَ وَمَا لَمْ يَشَأْ لَمْ يَكُنْ وَلَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللَّهِ الْعَلِيِّ الْعَظِيمِ أَشْهَدُ أَنَّ اللَّهَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ، وَأَنَّ اللَّهَ قَدْ أَحَاطَ بِكُلِّ شَيْءٍ عِلْمًا، أَعُوذُ بِاللَّهِ الَّذِي يُمْسِكُ السَّمَاءَ أَنْ تَقَعَ عَلَى الْأَرْضِ إِلَّا بِإِذْنِهِ مِنْ شَرِّ كُلِّ دَابَّةٍ رَبِّي آخِذٌ بِنَاصِيَتِهَا، إِنَّ رَبِّي عَلَى صِرَاطٍ مُسْتَقِيمٍ

আল্লাহ আমার প্রভু। আল্লাহ ব্যতীত কোন মাবুদ নাই। আমার ভরসা তার উপরই। তিনি মহান আরশের প্রতিপালক। আল্লাহ যা চান তা-ই হয়, আর যা তিনি চান না তা হয় না। আল্লাহর সাহায্য ব্যতীত কেন শক্তি নেই যিনি মহান ও সমুচ্চ। আমি বিশ্বাস করি যে, আল্লাহ তাআলা সবকিছুর উপর ক্ষমতাবান এবং আল্লাহর জ্ঞান সবকিছুকে পরিবেষ্টন করে আছে। আমি আল্লাহর আশ্রয় চাই- যিনি আসমানকে স্থির রাখেন যাতে তা পতিত না হয় যমীনের উপর তার অনুমতি ব্যতীত- নিজের নফসের অনিষ্ট এবং যমীনে বিচরণকারী সবকিছুর অনিষ্ট হতে যার নিয়ন্ত্রণ আপনার হাতে। নিশ্চয়ই আমার প্রতিপালক সঠিক পথ প্রদর্শনকারী।

তাহলে তার, তার পরিবারে ও তার মাল-সম্পদের উপর কোন বিপদ পৌঁছবে না। অতঃপর তিনি বললেন, উঠ, আমার সাথে চল। তিনি দাড়ালেন আর তার সাথের লোকেরাও দাড়ালো। যখন তিনি তার ঘরের সামনে পৌঁছলেন তখন দেখা গেল যে, তার ঘরের আশপাশে সবকিছু পুরে গেছে। আর তার ঘরটি অক্ষত রয়ে গেছে।

৫৯. আবান আল মুহারিবী (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি ভোরে এই দুআ পাঠ করবে,

الْحَمْدُ لِلَّهِ، رَبِّيَ اللهُ لَا أُشْرِكُ بِهِ شَيْئًا، أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ

সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য যিনি আমার প্রতিপালক। আমি তার সাথে কোন কিছু শরীক করি না। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ব্যতীত কোন মাবুদ নেই।

তাহলে সন্ধ্যা পর্যন্ত তার সব গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে। আর যদি সে তা সন্ধ্যার সময় পড়ে তবে রাত পর্যন্ত তার সব গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে।

৬০. আমর ইবন মাদীকারব (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা)-কে বলতে শুনেছি, রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি সকাল সন্ধ্যায় এই দুআ পাঠ করবে-

الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّي لَا أُشْرِكُ بِهِ شَيْئًا، أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ

সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য যিনি আমার প্রতিপালক। আমি তার সাথে কোন কিছু শরীক করি না। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ব্যতীত কোন মাবুদ নেই।

তাহলে তাকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মাগফিরাত (ক্ষমা) করে দেয়া হবে। আর যদি সে সন্ধ্যায় পড়ে তবে সকাল পর্যন্ত তাকে মাগফিরাত করে দেয়া হবে।

 

 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to top button
error: Content is protected !!