আল্লাহর যিকিরের ফযীলত

দারুস সাআদাত গ্রন্থ

গ্রন্থঃ কানযুল উম্মাল

লেখকঃ শায়খ আলী মুত্তাকী (রহ)

দারুস সাআদাত কর্তৃক অনুদিত

স্বত্বঃ দারুস সাআদাত কর্তৃক সংরক্ষিত, বিনানুমতিতে কপি করা, মূদ্রণ করা বা এপে ব্যবহার করা আইনত দণ্ডনীয়। 

যিকিরের ফযীলত

1747 – إن لله ملائكة سياحين في الأرض فضلا عن كتاب الناس يطوفون في الطرق يلتمسون أهل الذكر فإذا وجدوا قوما يذكرون الله تنادوا هلموا إلى حاجتكم فيحفونهم بأجنحتهم إلى السماء الدنيا فيسألهم ربهم وهو أعلم منهم ما يقول عبادي ؟ فيقولون يسبحونك ويكبرونك ويحمدونك ويمجدونك فيقول : هل رأوني ؟ فيقولون لا والله ما رأوك فيقول : كيف لو رأوني ؟ فيقولون لو رأوك كانوا أشد لك عبادة وأشد تمجيدا وأكثر لك تسبيحا فيقول : فما يسألوني فيقولون : يسألونك الجنة فيقول هل رأوها فيقولون لا والله يا رب ما رأوها فيقول : فكيف لو أنهم رأوها فيقولون لو أنهم رأوها كانوا أشد عليها حرصا وأشد لها طلبا وأعظم فيها رغبة قال : فمم يتعوذون ؟ فيقولون : من النار فيقول : عز و جل هل رأوها ؟ فيقولون لا والله يا رب فيقول : فكيف لو رأوها ؟ فيقولون : لو رأوها كانوا أشد منها فرارا وأشد لها مخافة فيقول : فأشهدكم أني قد غفرت لهم فيقول : ملك من الملائكة فيهم فلان ليس منهم إنما جاء لحاجة فيقول : هم القوم لا يشقى بهم جليسهم
( حم ق عن أبي هريرة )

আল্লাহ তাআলার এমকিছু ফেরেশতা আছে যারা আমলনামা লিখা ছাড়া (শুধু) যমীনে ঘোরাঘুরি করেন। তারা যিকিরকারীদেরকে অনুসন্ধান করতে থাকেন। যখন তারা এমন লোকসকল পেয়ে যায় যারা আল্লাহর যিকিরে মশগুল আছেন, তখন তারা পরস্পর বলে, এসো তোমাদের লক্ষ্য অর্জিত হয়েছে। এরপর তারা তাদের জন্য নিজেদের ডানা বিছিয়ে দেন এবং একজন আরেকজনের উপর কাতারবন্দী হয়ে আসমান পর্যন্ত পৌঁছে যান। এরপর যখন মজলিস সমাপ্ত হয় তখন তারা আল্লাহর দরবারে হাজির হয়। তখন আল্লাহ তাআলা তাদেরকে জিজ্ঞাসা করেন, যদিও তিনি তাদের ব্যাপারে খুব ভালভাবেই অবগত আছেন- বল আমার বান্দারা কি বলছিল? ফেরেশতারা বলে তারা আপনার তাসবীহ-তাহলীল ও তাকবীর-তাহমীদ করছিল। আল্লাহ তাআলা বলেন- তারা কি আমাকে দেখেছে? তারা বলে, না আল্লাহর কসম! তারা আপনাকে দেখে নাই। আল্লাহ বলেন, যদি দেখত তবে তাদের অবস্থা কেমন হত? ফেরশেতারা বলে, তারা আপনার ইবাদতে আরো কায়মনোবাক্যে নিয়োজিত হত এবং আপনার বড়ত্ব এবং পূত-পবিত্রতা আরো বেশী করে বর্ণনা করত।

এরপর আল্লাহ তাআলা বলেন- তারা আমার কাছে কি প্রার্থনা করছিল? ফেরশেতরা বলল, তারা আপনার নিকট জান্নাত প্রার্থনা করছিল। আল্লাহ তাআলা বলেন- তারা কি জান্নাত দেখেছে? ফেরেশতারা বলে. না আল্লাহর কসম! তারা জান্নাত দেখে নাই। আল্লাহ বলেন, যদি দেখত তবে তাদের অবস্থা কেমন হত? ফেরশেতারা বলল, তারা তার জন্য আরো বেশী লোভ করত এবং আরো কঠিনভাবে তা পাওয়ার অন্বেষণে লেগে যেত।

এরপর আল্লাহ তাআলা বলেন, তারা কোন জিনিস থেকে আশ্রয় প্রর্থনা করছে। ফেরেশতরা বলে, তারা জাহান্নাম থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছে। আল্লাহ তাআলা বলেন, তারা কি জাহান্নাম দেখেছে। ফেরশেতারা বলে, না আল্লাহর কসম! তরা দেখেনি। আল্লাহ বলেন, যদি দেখত তবে তাদের অবস্থা কেমন হত? ফেরশেতারা বলে, যদি দেখত তবে তারা তার থেকে আরো দূরে থাকত আর আরো বেশী তার ভয় করত।

আল্লাহ তাআলা বলেন, তোমরা সাক্ষ্যি থাকো। আমি তাদের সবাইকে ক্ষমা করে দিলাম। তখন একজন ফেরেশতা বলল, এক ব্যক্তি তাদের মধ্যে শামিল ছিল না। শুধু সে তার কোন প্রয়োজনের জন্য এখানে এসেছিল। আল্লাহ তাআলা বলেন, তারা এমন সম্পদায় যে, তাদের পাশে বসা ব্যক্তিও বঞ্চিত হয় না।

1748 – ” أفضل الذكر لا إله إلا الله، وأفضل الدعاء الحمد لله”. (ت ن هـ حب ك عن جابر) .

উত্তম যিকির হলো লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ আর উত্তম দুআ হলো আলহামদুলিল্লাহ।

1749 – “الذكر نعمة من الله فأدوا شكرها”. (فر عن نبيط ابن شريط) .

যিকির আল্লাহর পক্ষ থেকে নিয়ামত। সুতরাং এর জন্য আল্লাহর শোকর আদায় কর।

1750 – ” الذكر الذي لا يسمعه الحفظة يزيد على الذكر الذي يسمعه الحفظة سبعين ضعفا”. (هب عن عائشة) .

যেই যিকির হিফাযতকারী ফেরশেতরা শুনতে পায় না (নীরব যিকির), তা সেই যিকির যা হিফাযতকারী ফেরেশেতা শুনতে পায় তার থেকে সত্তর গুণ বেশী ফযীলত রাখে।

1751 – “ذكر الله شفاء القلوب”. (فر عن أنس) .

আল্লাহর যিকির অন্তরের (রোগের) শিফা ।

1752 – ” أحب الأعمال إلى الله أن تموت ولسانك رطب من ذكر الله”. (حب وابن السني في عمل اليوم والليلة طب حب عن معاذ) .

আল্লাহর নিকট উত্তম আমল হলো এই যে, তোমার মৃত্যু এমন অবস্থায় হওয়া যে, তোমার যবান আল্লাহর যিকির দ্বারা সিক্ত থাকবে।

1753 – “أكثروا ذكر الله تعالى حتى يقولوا مجنون”. (حم ع حب ك هب عن أبي سعيد)

বেশী করে আল্লাহর যিকির কর। এমনকি লোকেরা যেন বলে পাগল।

1754 – “أكثروا ذكر الله تعالى حتى يقول المنافقون إنكم مراؤون”. (ص حم في الزهد هب عن أبي الجوزاء مرسلا) .

বেশী করে আল্লাহর যিকির কর। যেন মুনাফিকরা তোমাকে বলে- এই লোক রিয়াকার।

1755 – “اذكر الله فإنه عون لك على ما تطلب”. (ابن عساكر عن عطاء بن أبي مسلم) مرسلا.

আল্লাহর যিকির। এটা তোমার কাঙ্ক্ষিত বিষয়ের জন্য সাহায্যকারী।

1756 – “اذكروا الله ذكرا يقول: “المنافقون إنكم تراؤون”. (طب عن ابن عباس) .

আল্লাহর যিকির এমনভাবে কর, যেন মুনাফিকরা তোমাকে বলে এই লোক রিয়াকার।

1757 – “اذكروا الله ذكرا خاملا قيل وما الذكر الخامل قال: الذكر الخفي”. (ابن المبارك في الزهد عن ضمرة بن حبيب مرسلا) .

যিকিরে খামিল বা মন্থরভাবে আল্লাহর যিকির কর। জিজ্ঞাসা করা হলো যিকিরে খামিল কি? তিনি বললেন, নীরবে ও অনুচ্চ স্বরে যিকির করা।

1758 – “أسعد الناس بشفاعتي يوم القيامة من قال: لا إله إلا الله خالصا مخلصا من قلبه”. (خ عن أبي هريرة) .

কিয়ামতের দিন আমার সুপারিশের ভাগ্যবান ব্যক্তি হবে সে, যে ইখলাস ও আন্তরিকতার সাথে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলেছে।

1759 – “أفضل العباد درجة يوم القيامة الذاكرون الله كثيرا”. (حم ت عن أبي سعيد) .

কিয়ামতের দিন সর্বোত্তম মর্যাদা সম্পন্ন বান্দা হবে আল্লাহর অধিক যিকিরকারীগণ।

1760 – ” أفضل العلم لا إله إلا الله، وأفضل الدعاء الاستغفار”. (فر عن ابن عمر) .

উত্তম ইলম হলো লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ আর উত্তম দুআ হলো ইস্তিগফার।

1761 – ” أكثروا من شهادة أن لا إله إلا الله قبل أن يحال بينكم وبينها ولقنوها موتاكم”. (ع عد عن أبي هريرة) .

লা ইলাহা ইল্লাল্লাহর সাক্ষ্য বেশী করে প্রদান করতে থাক সেই সময় আসার আগে যে, তোমার ও তার মাঝে মৃত্যুর পর্দা আড়াল হয়ে যাবে। আর তোমাদের মৃতদেরকে এর তালকীন কর।

1762 – “إن الله حرم على النار من قال: لا إله إلا الله يبتغي بذلك وجه الله”. (ق عن عتبان بن مالك) .

আল্লাহ তাআলা জাহান্নামের জন্য প্রত্যেক ঐ ব্যক্তিকে হারাম করে দিয়েছেন, যে আল্লাহর সন্তিুষ্টির জন্য লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলেছে।

1763 – “إن الله تعالى يقول: أنا مع عبدي ما ذكرني وتحركت بي شفتاه”. (حم هـ ك عن أبي هريرة) .

আল্লাহ তাআলা বলেন- আমি আমার বান্দার সাথে থাকি যখন সে আমাকে স্মরণ করে এবং আমার যিকিরের জন্য তার দুই ঠোঁট নড়াচরা করে।

1764 – “إن الله تعالى يقول: إن عبدي كل عبدي يذكرني وهو ملاق قرنه “. (ت عن عمارة بن زعكرة) .

আল্লাহ তাআলা বলেন- আমার যে বান্দাই আমার যিকির করে, তখন সে তার নিকটতম বন্ধুর (আল্লাহ) সাথে সাক্ষাত করে থাকে।

1765 – ” إن لكل ساع غاية، وغاية ابن آدم الموت فعليكم بذكر الله فإنه يسهلكم ويرغبكم في الآخرة”. (البغوي عن جلاس بن عمرو) .

প্রত্যেক বস্তুর শেষ বা চূড়ান্তসীমা নির্ধারিত আছে। আর (এই দুনিয়াতে) মানুষের শেষ হলো তার মৃত্যু। অতএব তোমাদের উপর আল্লাহর যিকির করা আবশ্যক। কেননা এটা তোমাদের (দীন-দুনিয়ার সবকিছু) সহজ করবে এবং আখিরাতের প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি করবে।

1766 – ” أقرب ما يكون الرب من العبد في جوف الليل الآخر فإن استطعت أن تكون ممن يذكر الله في تلك الساعة فكن”. (ن ت ك عق عمرو بن عبسة) .

বান্দা রাতের শেষ প্রহরে আল্লাহর অধিক নিকটবর্তী হয়। অতএব যদি তুমি পার, তবে সেই সময় আল্লাহকে স্মরণ করো।

1767 – ” ألا أنبئكم بخير أعمالكم، وأزكاها عند مليككم وأرفعها في درجاتكم وخير لكم من إنفاق الذهب والورق وخير لكم من أن تلقوا عدوكم، فتضربوا أعناقهم ويضربوا أعناقكم ذكر الله”. (ك ق هـ ن عن أبي الدرداء) .

আমি কি তোমাদের আমলসমূহের সর্বোত্তমটি সম্পর্কে তোমাদেরকে অবহিত করবো না, যা তোমাদের প্রভুর নিকট সর্বাধিক প্রিয়, তোমাদের মর্যাদাকে অধিক উন্নীতকারী, আল্লাহর পথে তোমাদের সোনা-রূপা দান করার চেয়ে উত্তম  এবং যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়ে তোমাদের শক্রুদের হত্যা করা এবং তোমাদের নিহত হওয়ার চেয়ে উত্তম? তা হলো আল্লাহর যিকির।

1768 – “جددوا إيمانكم أكثروا من قول لا إله إلا الله”. (حم ك عن أبي هريرة) .

তোমাদের ইমানকে তাজা কর বেশী করে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলে।

1769 – “حدثني جبريل قال: يقول الله تعالى: لا إله إلا الله حصني فمن دخله أمن من عذابي. (ابن عساكر عن علي) .

আমাকে জিবরাঈল (আ) বলেন, আল্লাহ তাআলা বলেছেন- লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ আমার দূর্গ। যে এর মধ্যে প্রবেশ করল, সে আমার শাস্তি থেকে নিরাপদ হয়ে গেল।

1770 – “حضر ملك الموت رجلا يموت فشق أعضاءه فلم يجد عملا خيرا ثم شق قلبه فلم يجد فيه خيرا ففك لحييه فوجد طرف لسانه لاصقا بحنكه يقول لا إله إلا الله فغفر له بكلمة الإخلاص”. (ابن أبي الدنيا في كتاب المحتضرين هب عن أبي هريرة) .

মালাকুল মউত এক মৃত্যু-নিকটবর্তী লোকের নিকট হাজির হলেন। তিনি তার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ অনুসন্ধান করে দেখলেন যে, কোথাউ কোন নেক আমল নেই। এরপর অন্তরকে দেখলেন সেখানেও ভাল কিছু পেলেন না। এরপর তার চোয়ালের দিকে দেখলেন যে, তার যবানের এক পাশ তালুর সাথে লেগে আছে আর সে বলছে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ। আল্লাহ তাআলা এই কালিমায়ে ইখলাসের কারণে তাকে ক্ষমা করে দিলেন।

1771 – “خير الذكر الخفي وخير الرزق ما كفى” (حم هب عن سعد) .

উত্তম যিকির হলো নীরব যিকির। আর উত্তম রিযিক হলো যা যথেষ্ট হয়ে যায়।

1772 – “خير العمل أن تفارق الدنيا ولسانك رطب من ذكر الله”. (حل عن عبد الله بن بشر) .

উত্তম আমল হলো এই যে, তুমি দুনিয়া থেকে এমনভাবে প্রস্থান করবে যে, তোমার যবান আল্লাহর যিকির দ্বারা সিক্ত থাকবে।

1773 – “سبق المفردون المستهترون في ذكر الله يضع الذكر عنهم أثقالهم فيأتون يوم القيامة خفافا”. (ق ك عن أبي هريرة طب عن أبي الدرداء) .

মুফাররিদগণ অর্থাৎ আল্লাহর যিকিরে আত্ম-বিভোর ব্যক্তিগণ অগ্রগামী হয়ে গেছে। যিকির তাদের গুনাহর বোঝা নামিয়ে দেবে। সুতরাং কিয়ামতের দিন তারা হালকা-পাতলা হয়ে উপস্থিত হবে।

1774 – “سيروا هذا جمدان سبق المفردون الذاكرون الله كثيرا والذاكرات”. (حم عن أبي هريرة) .

তোমরা এই জুমদান পর্বতে (মদীনার একটি বসতী পাহাড়) পরিভ্রমণ কর। এখানে মূফাররিদগণ- অধিক যিকরকারী ও অধিক যিকরকারিণীরা অগ্রগামী হয়ে গেছে।

1775 – “إن الشيطان ملتقم قلب ابن آدم فإذا ذكر الله عز وجل خنس عنده وإذا نسي التقم قلبه”. (الحكيم عن أنس) .

শয়তান মানুষের অন্তরে নিজের মুখ লাগিয়ে ওয়াসওয়াসা প্রদান করতে থাকে। অতএব বান্দা যখন আল্লাহর যিকির করে তখন দ্রুত পৃথক হয়ে যায়। আর যখন গাফিল হয়ে যায় তখন পূণরায় তার শূর প্রদান করে।

1776 – “علامة حب الله تعالى حب ذكر الله وعلامة بغض الله تعالى بغض ذكر الله عز وجل”. (هب عن أنس) .   

আল্লাহর প্রতি মহব্বতের নিদর্শন হলো আল্লাহর যিকিরের প্রতি মহব্বত পোষণ করা। আল আল্লাহর প্রতি বিদ্বেষের নিদর্শন হলো আল্লাহর যিকিরের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করা।

1777 – “إن لكل شيء صقالة وصقاله القلب ذكر الله تعالى وما من شيء أنجى من عذاب الله من ذكر الله ولو أن تضرب حتى ينقطع”. (هب عن ابن عمر) .

প্রত্যেক বস্তু পরিষ্কারে উপায় আছে। আর অন্তর পরিষ্কারের উপায় হলো আল্লাহর যিকির। আল্লাহর আযাব থেকে নাজাত দানকারী আল্লাহর যিকির থেকে উত্তম কিছু নাই। চাই তুমি (জিহাদে) তলোয়ার এতটা চালাও যে, (জিহাদ করতে করতে) তা ভেঙ্গে যায়।

1778 – “من قال لا إله إلا الله نفعته يوما من دهره يصيبه قبل ذلك ما أصابه”. (البزار هب عن أبي هريرة) .

যে ব্যক্তি লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলবে, এটা তার জীবনকালে মৃত্যুর পূর্বে কোন না কোন দিন তাকে দৈব-দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা করতে উপকার প্রদান করবে।

1779 – “من قال لا إله إلا الله مخلصا دخل الجنة”. (البزار عن أبي سعيد) .

যে ব্যক্তি ইখলাস ও আন্তরিকতার সাথে বলবে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।

1780 – “من كان آخر كلامه لا إله إلا الله دخل الجنة”. (حم د ك عن معاذ) .

যার শেষ কথা হবে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।

1781 – ” لا إله إلا الله لا يسبقها عمل، ولا تترك ذنبا”. (هـ عن أم هانيء) .

কোন আমল লা ইলাহা ইল্লাল্লাহর থেকে অগ্রবর্তী হতে পারে না। আর না তা কোন গুনাহকে বাকী রাখে।

1782 – “إن الشيطان واضع خطمه على قلب ابن آدم فإن ذكر الله خنس وإن نسي التقم قلبه”. (ابن أبي الدنيا ع هب عن أنس)

শয়তান মানুষের অন্তরে তার শূর দিয়ে ওয়াসওয়াসা প্রদান করতে থাকে। অতএব বান্দা যখন আল্লাহর যিকির করে তখন দ্রুত পৃথক হয়ে যায়। আর যখন গাফিল হয়ে যায় তখন পূণরায় তার শূর প্রদান করে।

1783 – ” أولياء الله الذين إذا رؤوا ذكر الله”. (الحكيم عن ابن عباس) .

আল্লাহর ওলী বা প্রিয় ব্যক্তি তারা যাদেরকে দেখলে আল্লাহকে স্মরণ হয়।

1784 – “أفضلكم الذين إذا رؤوا ذكر الله تعالى لرؤيتهم،” (الحكيم عن أنس) .

তোমাদের মধ্যে উত্তম ব্যক্তি তারা যাদেরকে দেখলে কেবল আল্লাহর কথা স্মরণ হয়।

1785 – “خيار أمتي إذا رؤوا ذكر الله وشرار أمتي المشاؤون بالنميمة المفرقون بين الأحبة الباغون للبرآء العنت”. (حم عن عبد الرحمن ابن عاصم –  (طب عن عبادة بن الصامت) .

আমার উম্মতের উত্তম ব্যক্তি তারা যাদেরকে দেখলে আল্লাহকে স্মরণ হয়। আর আমার উম্মতের নিকৃষ্ট লোক তারা যারা চোগলখুরী করে, বন্ধুদের মাঝে বিভেদ সৃষ্টি করে এবং পূত-পবিত্র নিষ্কলুষ ব্যক্তিদেরকে অপবাদ প্রদান করার সুযোগ সন্ধান করে।

1786 – ” خياركم الذين إذا رؤوا ذكر الله وشراركم المشاؤون بالنميمة المفرقون بين الأحبة الباغون للبرآء العنت”. (هب عن ابن عمر  .

তোমাদের মধ্যে উত্তম ব্যক্তি তারা যাদেরকে দেখলে আল্লাহকে স্মরণ হয়। আর তোমাদের মধ্যে নিকৃষ্ট লোক তারা যারা চোগলখুরী করে, বন্ধুদের মাঝে বিভেদ সৃষ্টি করে এবং পূত-পবিত্র নিষ্কলুষ ব্যক্তিদেরকে অপবাদ প্রদান করার সুযোগ সন্ধান করে।

1787 – “خياركم من ذكركم بالله رؤيته وزاد علمكم منطقه ورغبكم في الآخرة عمله”. (الحكيم عن ابن عمرو) .

তোমাদের মধ্যে উত্তম ব্যক্তি সে যাকে দেখলে আল্লাহর স্মরণ তাজা হয়। তার কথার দ্বারা তোমার ইলম ও জ্ঞান বৃদ্ধি পায়। আর তার আমল (দেখে) তোমার আখিরাতের আগ্রহ বৃদ্ধি পায়।

1788 – “ألا أنبئكم بخياركم، خياركم الذين إذا رؤوا ذكر الله”. (حم هـ عن أسماء بنت يزيد)

আমি কি তোমাদেরকে তোমাদের উত্তম লোকদের কথা বলব না? তোমাদের মধ্যে উত্তম লোক তারা যাদেরকে দেখলে আল্লাহর কথা স্মরণ হয়।

1789 – ” إن من الناس مفاتيح، لذكر الله إذا رؤوا ذكر الله “. (طب عن ابن مسعود) .

কিছু মানুষ আছে যারা আল্লাহর স্মরণের চাবি হয়ে থাকে। যখন তাদেরকে দেখ তো, তখন আল্লাহকে স্মরণ হয়।

1790 – ” ثمن الجنة لا إله إلا الله”. (عد وابن مردويه عن أنس) (عبد بن حميد في تفسيره عن الحسن مرسلا) .

জান্নাতের মূল্য হলো লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ।

1791 – “عليكم بذكر ربكم وصلواتكم في أول وقتكم فإن الله عز وجل يضاعف لكم”. (طب عن عرباض) .

(যিকির শুর করার) প্রাথমিক সময়ে তোমাদের উপর আল্লাহর যিকির এবং দরূদ পাঠ করা আবশ্যক। এতে আল্লাহ তাআলা তোমাদের আমলকে বাড়িয়ে নিয়ে যাবেন।

1792 – ” عليكم بلا إله إلا الله والاستغفار، فأكثروا منهم فإن إبليس قال: أهلكت الناس بالذنوب، وأهلكوني بلا إله إلا الله والاستغفار، فلما رأيت ذلك أهلكتهم بالأهواء، وهم يحسبون أنهم مهتدون”. (ع عن أبي بكر) .

তোমাদের উপর লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ এবং  ইস্তিগফার (ক্ষমা প্রার্থনা) করা আবশ্যক। খুব বেশী করে তা পাঠ কর। কেননা ইবলিস বলে, আমি মানুষকে গুনাহে নিমজ্জিত করে ধ্বংস করে দেই। আর তারা আমাকে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ এবং  ইস্তিগফার দ্বারা ব্যর্থ করে দেয়। অতএব যখন আমি এই অবস্থা দেখি তখন আমি (ভিন্ন কৌশলে) তাদেরকে এমন খাহিশাতের মধ্যে লাগিয়ে ধ্বংস করে দেই যে (তারা বুঝতেও পারে না, অথচ) মনে করে যে তারা হিদায়াতর পথেই আছে।

1793 – “غنيمة مجالس الذكر الجنة”. (حم طب عن ابن عمر) .

যিকিরের মজলিসের গনীমত বা প্রতিদান হলো জান্নাত।

1794 – “الغفلة في ثلاث، عن ذكر الله، وحين يصلى الصبح إلى طلوع الشمس وغفلة الرجل عن نفسه في الدين حتى يركبه”. (طب هب عن ابن عمر) .

(সাধারনত) তিনটি বিষয়ের মধ্যে (মানুষের) গাফলত ও উদাসীনতা হয়। আল্লাহর যিকিরে, ভোরের নামাযের পর থেকে নিয়ে সূর্য উঠা পর্যন্ত এবং মানুষের তার দীনের ব্যাপারে। যে পর্যন্ত না (মৃতের খাটিয়ায়) আরোহণ না করে।

1795 – “قال الله تعالى: يا ابن آدم اذكرني بعد الفجر وبعد العصر ساعة أكفك ما بينهما”. (حل عن أبي هريرة) .

আল্লাহ তাআলা বলেন- হে ইবনে আদম! ফজর ও আসরের পর কিছু সময় আমাকে স্মরণ কর। তাহলে এই উভয় সময়ের মাঝে আমি তোমার জন্য যথেষ্ট হব।

1796 – “قال الله تعالى: لا يذكرني عبد في نفسه إلا ذكرته في من ملأ من ملائكتي ولا يذكرني في ملأ إلا ذكرته في الرفيق الأعلى”. (طب عن معاذ بن أنس) .

কোন বান্দা এমন নাই, যে আমাকে মনে মনে স্মরণ করে, আর আমি ফেরেশতাদের মজলিসে তার আলোচনা না করি। আর কোন বন্দা এমন নাই, যে আমাকে মজীলসে স্মরণ করে আর আমি তার আলোচনা উচ্চপরিষদে না করি।

1797 – ” قال الله تعالى: “عبدي إذا ذكرتني خاليا ذكرتك خاليا، وإن ذكرتني في ملأ ذكرتك في ملأ خير منهم وأكثر”. (هب عن ابن عباس) .

আল্লাহ তাআলা বলেন- হে আমার বান্দা! যদি তুমি আমাকে নির্জনে স্মরণ কর তাহলে আমিও তোমাকে নির্জনে স্বরণ করি। আর যদি তুমি আমাকে কোন মজলিসে স্মরন কর তাহলে আমি তারচেয়েও উত্তম মজলিসে তোমার আলোচনা  করি এবং আরো বেশী করে করি।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to top button
error: Content is protected !!