আল উকূবাত-শাস্তি ও বিপর্যয়- ইমাম ইবনে আবিদ দুনইয়া (রহ)
পূর্ব প্রকাশিতর পর
عَادٌ قَوْمُ هُودٍ
আদ হুদ (আ) এর সম্প্রদায়
১২৭.হযরত ইবনে আব্বাস (রা) আল্লাহ তাআলার বাণী
فَلَمَّا رَأَوْهُ عَارِضًا مُسْتَقْبِلَ أَوْدِيَتِهِمْ
অতঃপর যখন তারা তাদের উপত্যকার দিকে মেঘ আসতে দেখল। (তখন তারা বলল, এই তো মেঘ আমাদেরকে বৃষ্টি দিবে।)– সূরা আহকাফ ২৪
প্রসঙ্গে বলেন যে, মেঘ মানে হল ঝড়-বাদল।
হযরত হুদ (আ) বললেন (আল্লাহর বাণী)
بَلْ هُوَ مَا اسْتَعْجَلْتُمْ بِهِ رِيحٌ فِيهَا عَذَابٌ أَلِيمٌ
এটাই তো ওটা যা তোমরা ত্বরান্বিত করতে চেয়েছ। এতে রয়েছে এক ঝড় মর্মন্তুদ শাস্তি বহনকারী।– আল আহকাফ ২৪
তারা যখন নিজেদের মাল সামানা আসমান ও যমীনের মাঝে পাখির ডানার মত উড়তে দেখল তখন তারা ঘরের ভিতরে প্রবেশ করে দরজা বন্ধ করে দিল। হাওয়া এসে দরজা উড়িয়ে দিল এবং ঘর-বাড়ি বালুর স্তুপের মত পড়ে রইল। তারা এর নিচে দেবে গেল।
سَبْعَ لَيَالٍ وَثَمَانِيَةَ أَيَّامٍ حُسُومًا
সাত রাত ও আট দিন বিরামহীনভাবে (তাদের উপর ঝড় প্রবাহিত হয়)।– সূরা আল হাক্কাহ ৭
অষ্টম দিন পর বায়ুর উপর আদেশ আসলো যে, বালু তাদের উপর থেকে সরিয়ে দেয়া হোক এবং তাদেরকে নদীতে নিক্ষেপ করা হোক।
আল্লাহ তাআলার বাণী
فَأَصْبَحُوا لَا يُرَى إِلَّا مَسَاكِنُهُمْ
অতঃপর তাদের এই পরিণতী হল যে, তাদের বসতগিুলো ব্যতীত আর কিছু্ই রইলো না।– সূরা আল আহকাফ ২৫
১২৮.মুহাম্মদ ইবনে ইসহাক বর্ণনা করেন যে, বলা হয়ে থাকে যে, এই কঠিন আযাবের আগমন সর্বপ্রথম কওমে আদের একজন মহীলা অবলোকন করে। তার নাম ছিল মুহুদ। সে ঐ দৃশ্য দেখে চিৎকার করে এবং অজ্ঞান হয়ে যায়। যখন তার জ্ঞান ফিরে তখন জিজ্ঞাসা করা হয় তুমি কি দেখেছ? সে বলল আগুনের গোলার মত বায়ু দেখেছি। তার সামনে কতক পুরুষ ছিল যা তারা টানছিল। আল্লাহ তাআলা সাত রাত ও আটদিন অবিরত বায়ূ প্রবল করে রেখেছিলেন। সবাই ধ্বংস হয়ে যায়। হযরত হুদ (আ) ও তার অনুসারীগণ একটি ঘরে আলাদা বসে ছিলেন। এই বায়ূ তাদের কোন ক্ষতি করেনি বরং তাদেরকে আনন্দিত করেছে এবং কওমে আদকে পাথর বর্ষন করতে লাগল।
وَإِنَّهَا لَمَرٌّ مِنْ عَادٍ بِالظُّعُنِ بَيْنَ السَّمَاءِ وَالْأَرْضِ وَتَدْمَغُهُمْ بِالْحِجَارَةِ “
১২৯.সুদ্দী থেকে বর্ণিত আছে, কওমে আদ ইয়ামানের লোক ছিলেন। বালুকাময় যমীনে বসবাস করত। হুদ (আ) তাদরে প্রতি প্রেরিত হন। দীনের প্রতি উপদেশ নসীহত প্রদান করতে থাকেন। কিন্তু কওমের লোকেরা তাকে মিথ্যা সাব্যস্ত করতে থাকেন এবং অস্বীকার করেন এবং বলে আযাব এনে দেখাও। হুদ (আ) বললেন, তোমাদের অবস্থার ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা খুব ভালভাবে জানেন।
যখন তারা হুদ (আ) এর কথা মানতে অস্বীকার করল, তখন আল্লাহ তাআলা রহমতের বৃষ্টি বর্ষণ করে দুর্ভিক্ষে নিপতিত করে দিলেন যার দ্বারা তারা খুব কষ্ট কাঠিন্যের মধ্যে পতিত হন। তার উপর আরো অতিরিক্ত যে, হুদ (আ) তাদের জন্য বদ দুআ করেন। আল্লাহ তাআলা তাদের প্রতি ক্ষতিকারক গরম বায়ূ চাপিয়ে দেন। তারা দূর থেকে বাতাস দেখে বলতে থাকে
قَالُوا هَذَا عَارِضٌ مُمْطِرُنَا
এই তো মেঘ আমাদেরকে বৃষ্টি দেবে।– আহকাফ ২৪
যখন সেটা নিকটে এসে গেল তখন তাদরে মাল সম্পদ, হওদাসমূ উড়িয়ে দিল। তারা ঘাবড়িয়ে গেল। তারা দ্রুততার সাথে নিজেদের ঘরে গিয়ে আশ্রয় নিল। এদিকে বায়ূ তাদের পিছু নয়ে তাদরে ঘরে পৌঁছে গেল। ঘরের ভিতর তাদরেকে ধ্বংস করে দিল অতঃপর তাদেরকে বাহিরে নিক্ষেপ করে দিল।
আল্লাহ তাআলার ইরশাদ
فِي يَوْمِ نَحْسٍ مُسْتَمِرٍّ
যাদের উপর আমি প্রেরণ করেছিলাম ঝঞ্ঝাবায়ূ নিরবচ্ছিন্ন) দুর্ভাগ্যের দিনে।– সূরা আল কামার ১৯
অপর স্থানে ইরশাদ করেন
فَتَرَى الْقَوْمَ فِيهَا صَرْعَى
তখন তুমি উক্ত সম্প্রদায়কে দেখতে যে, তারা সেথায় লুটিয়ে পড়ে আছে।-সূরা আল হাক্কাহ ৭
كَأَنَّهُمْ أَعْجَازُ نَخْلٍ مُنْقَعِرٍ
মানুষকে উহা উৎখাত করেছিল উন্মূলিত খেজুর কাণ্ডের ন্যয়।– সূরা আল কামার ২০
যখন তারা ধ্বংস হয়ে গেল তখন বায়ূ তাদেরকে বাহিরে ছুঁড়ে মারল। আল্লাহ তাআলা কালো রঙের পাখি প্রেরণ করলেন। পাখি তাদেরকে উঠিয়ে সমুদ্রে ফেলে দিল। আল্লাহ তাআলা এই আয়াতে তা বর্ণনা করেন
لَا يُرَى إِلَّا مَسَاكِنُهُمْ
তাদের বসতগিুলো ব্যতীত আর কিছু্ই রইলো না।– সূরা আল আহকাফ ২৫
১৩০.হযরত ইবনে আব্বাস (রা) বলেন, কওমে আদ গরম হাওয়া দ্রুত ধাবমান দেখে তারা ঘরে দিকে পলায়নপর হলে রাস্তায় তারা বড় বড় সাপও দেখতে পায়।
১৩১, শাবী (রহ) বলেন, বায়ূর কাঠিন্য এত বেশী ছিল যে, পাল্কি থেকে নারীকেও উঠিয়ে ফেলল। উট মহিষ, গাভী ও অন্যান প্রাণীদেরকে পাখার মত হাওয়ায় উড়িয়ে দিল। লোকদেরকে উড়িয়ে দিল এবং বায়ু তাদের পরস্পরকে মিলিয়ে টক্কর দিল।
কওমে আদের কোন লোক যেখানেই থাকত সেখানেই হাওয়া তাকে উঠিয়ে ফেলত। অন্যন্য লোকদের মধ্যে যদি কওমে আদের কোন লোক থাকত তবে বায়ূ শুধু কওমে আদের লোকদেরেকে উড়িয়ে ফেলত। আল্লাহ তাআলা বলেন-
وَأَمَّا عَادٌ فَأُهْلِكُوا بِرِيحٍ صَرْصَرٍ عَاتِيَةٍ
আর আদ সম্প্রদায়- উহাদেরকে ধ্বংস রা হয়েছিল এক প্রচণ্ড ঝঞ্ঝাবায়ূ দ্বারা।– সূরা আল হাক্কাহ ৬
فِي يَوْمِ نَحْسٍ مُسْتَمِرٍّ
দুর্ভাগ্যের দিনে।– সূরা আল কামার ১৯
১৩২.মালিক ইবনে আনাস বলেন, কওমে আ’দ এর শাস্তি থেকে এক মহীলা বেঁচে যা্য়। তাকে প্রশ্ন করা হল, কোন আযাবটি কঠিন ছিল? সে বলল, আল্লাহর সব আযাবই কঠিন হয়ে থাকে। তবে আরামের রাত তো ওটাই, যেই রাতে ঝড়ো হাওয়া না চলে (আবহাওয়া স্বাভাবিক থাকে)। আল্লাহর শপথ! অমি দেখেছি যে, বায়ূ উটের কাফেলাকে যমীন ও আসমানের মধ্যবর্তী স্থানে উঠিয়ে ফেলেছে।
চলবে