প্রতিবেশীর সাথে আচার-ব্যবহার
আল আদাবুল মুফরাদ - ইমাম বুখারী (রহ)
দারুস সাআদাত গ্রন্থ
গ্রন্থঃ আল আদাবুল মুফরাদ
লেখকঃ ইমাম বুখারী (রহ)
অনুবাদঃ দারুস সাআদাত কর্তৃক অনূদিত
স্বত্বঃ দারুস সাআদাত কর্তৃক সংরক্ষিত
আল আদাবুল মুফরাদ
প্রতিবেশীর সাথে আচার-ব্যবহার
হাদীস-১০১-১২৫
55-بَابُ الْوَصَاةِ بِالْجَارِ
অনুচ্ছেদঃ৫৫ প্রতিবেশীর ব্যাপারে উপদেশ
101 – عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: (مَا زَالَ جِبْرِيلُ – صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ – يُوصِينِي بِالْجَارِ حتى ظننت أنه سَيورِّثُهُ) .
১০১.হযরত আয়িশা (রা) রাসূলুল্লাহ (সা) থেকে বর্ণনা করেন। রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন- জিবরাইল (আ) আমাকে প্রতিবেশীর ব্যাপারে বারংবার অসিয়ত করতে থাকেন। এমনকি আমার ধারণা হয় যে, শীঘ্রই তিনি প্রতিবেশীকে ওয়ারিস করে দিবেন।
102 – عن أبى شريح الخزاعي – رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ – عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: (مَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ فَلْيُحْسِنْ إِلَى جَارِهِ وَمَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ فَلْيُكْرِمْ ضَيْفَهُ وَمَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ فَلْيَقُلْ خَيْرًا أو ليصمت)
১০২. হযরত আবূ শুরায়হ আল-খুযাঈ (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি আল্লাহ ও কিয়ামতের দিনের প্রতি ঈমান রাখে, সে যেন তার প্রতিবেশীর সাথে সদাচরণ করে। যে ব্যক্তি আল্লাহ ও কিয়ামতের দিনের প্রতি ঈমান রাখে, সে যেন তার মেহমানকে সমাদর করে। আর যে ব্যক্তি আল্লাহ ও কিয়ামতের দিনের প্রতি ঈমান রাখে, সে যেন ভাল কথা বলে, অন্যথায় নীরব থাকে।
56-بَابُ حَقِّ الْجَارِ
অনুচ্ছেদঃ৫৬ প্রতিবেশীর অধিকার
103 – عن المقداد بن الأسود – رضي الله عنه – قال: سَأَلَ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَصْحَابَهُ عَنِ الزِّنَا قَالُوا حَرَامٌ حَرَّمَهُ اللَّهُ وَرَسُولُهُ فَقَالَ: (لِأَنْ يَزْنِيَ الرَّجُلُ بِعَشْرِ نِسْوَةٍ أيسرُ عَلَيْهِ مِنْ أَنْ يَزْنِيَ بِامْرَأَةِ جَارِهِ) وَسَأَلَهُمْ عَنِ السَّرِقَةِ قَالُوا حَرَامٌ حَرَّمَهَا اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ وَرَسُولُهُ فَقَالَ: (لِأَنْ يَسْرِقَ مِنْ عَشرَةِ أَهْلِ أَبْيَاتٍ أَيْسَرُ عَلَيْهِ مِنْ أَنْ يسرق من بيت جاره) .
১০৩. হযরত মিকদাদ ইবনুল আসওয়াদ (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) তার সাহাবীগণকে ব্যভিচার এর ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করেন। তারা বললেন, হারাম। আল্লাহ ও তার রাসূল তা হারাম করেছেন। রাসূলুল্লাহ (সা) বললেন, কোন ব্যক্তির দশজন নারীর সাথে ব্যভিচার করা তার প্রতিবেশী স্ত্রীর সাথে ব্যভিচার করার চেয়েও ছোট অপরাধ। এরপর রাসূলুল্লাহ (সা) তার সাহাবীগণকে চুরির ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করেন। তারা বললেন, হারাম। আল্লাহ ও তার রাসূল তা হারাম করেছেন। রাসূলুল্লাহ (সা) বললেন, কোন ব্যক্তির দশ ঘরে চুরি করা করা তার প্রতিবেশীর ঘরে চুরি করার চয়েও ছোট অপরাধ।
57- بَابُ يَبْدَأُ بِالْجَارِ
অনুচ্ছেদঃ ৫৭ (হাদিয়া-উপহার) প্রতিবেশী থেকে শুরু করা
104 – عن ابن عمر رضي الله عنهما قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: (مَا زَالَ جِبْرِيلُ يُوصِينِي بِالْجَارِ حَتَّى ظننت أنه سيورثه)
১০৪.হযরত ইবনে উমর (রা) বর্ণনা করেন। রাসূলুল্লাহ (ষা) ইরশাদ করেন- জিবরাইল (আ) আমাকে প্রতিবেশীর ব্যাপারে বারংবার অসিয়ত করতে থাকেন। এমনকি আমার ধারণা হয় যে, শীঘ্রই তিনি প্রতিবেশীকে ওয়ারিস করে দিবেন।
105 – عن عبد الله بن عمرو رضي الله عنهما، أَنَّهُ ذُبِحَت لَهُ شاةٌ فَجَعَلَ يَقُولُ لِغُلَامِهِ أَهْدَيْتَ لِجَارِنَا الْيَهُودِيِّ؟ أَهْدَيْتَ لِجَارِنَا الْيَهُودِيِّ؟ سَمِعْتُ رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول: (مَا زَالَ جِبْرِيلُ يُوصينى بِالْجَارِ حَتى ظَنَنتُ أنه سَيَورِثُه)
১০৫. হযরত আব্দুল্লাহ ইবন আমর (রা) থেকে বর্ণিত। তার জন্য একটি বকরী যবাহ করা হল। তখন তিনি তার গুলামকে বললেন, তুমি কি আমার ইহুদী প্রতিবেশীকে হাদিয়া দিয়েছ? (কেননা) আমি রাসূলুল্লাহ (সা)-কে বলতে শুনেছি, জিবরাইল (আ) আমাকে প্রতিবেশীর ব্যাপারে বারংবার অসীয়ত করতে থাকেন। এমনকি আমার ধারণা হয় যে, শীঘ্রই তিনি প্রতিবেশীকে ওয়ারিস করে দিবেন।
106 – عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا قَالَتْ: سَمِعْتُ رسول الله صلى الله عليه وسلم يَقُولُ: (مَا زَالَ جِبْرِيلُ يُوصِينِي بِالْجَارِ حَتَّى ظننت أنه ليورثه)
১০৬.হযরত আয়িশা (রা) রাসূলুল্লাহ (সা) থেকে বর্ণনা করেন। রাসূলুল্লাহ (ষা) ইরশাদ করেন- জিবরাইল (আ) আমাকে প্রতিবেশীর ব্যাপারে বারংবার অসিয়ত করতে থাকেন। এমনকি আমার ধারণা হয় যে, শীঘ্রই তিনি প্রতিবেশীকে ওয়ারিস করে দিবেন।
58- بَابُ يَهْدِي إِلَى أَقْرَبِهِمْ بَابًا
অনুচ্ছেদঃ৫৮ যেই প্রতিবেশী দরজার অধিক নিকটবর্তী তাকে হাদিয়া দেয়া
107 – عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا قَالَتْ: قُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنَّ لِي جَارَيْنِ فَإِلَى أَيِّهِمَا أُهْدِي؟ ، قَالَ: (إِلَى أقربِهِما مِنْكِ بَابًا)
১০৭.হযরত আয়িশা (রা) বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমার দুজন প্রতিবেশী আছে। তাদের মধ্যে কাকে হাদিয়া দিব? তিনি (সা)) বললেন, তাদের মধ্যে যার দরজা তোমার দরজার নিকটে।
108 – عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا قَالَتْ: قُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنَّ لِي جَارَيْنِ فَإِلَى أَيِّهِمَا أُهْدِي؟
قَالَ: (إِلَى أَقْرَبِهِمَا مِنْكِ بَابًا)
১০৮.হযরত আয়িশা (রা) বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহ রাসূল! আমার দুজন প্রতিবেশী আছে। তাদের মধ্যে কাকে হাদিয়া দিব? তিনি (সা) বললেন, তাদের মধ্যে যার দরজা তোমার দরজার অতি নিকটে।
59- بَابُ الْأَدْنَى فَالْأَدْنَى مِنَ الْجِيرَانِ
অনুচ্ছেদঃ৫৯ প্রতিবেশীদের মধ্যে নিকট থেকে নিকটবর্তী যারা
109 – عَنِ الْحَسَنِ أَنَّهُ سُئل عَنِ الْجَارِ؟ فَقَالَ: أَرْبَعِينَ دَارًا أَمَامَهُ وَأَرْبَعِينَ خَلْفَهُ وَأَرْبَعِينَ عَنْ يمينه وأربعين عن يساره
১০৯.হযরত হাসান (রা)-কে প্রতিবেশী সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলো। তিনি বললেন, সামনের ৪০ ঘর, পিছনের ৪০ ঘর, ডানের ৪০ ঘর এবং বামের ৪০ ঘর প্রতিবেশীর অন্তর্ভুক্ত।
110 – عن أبي هريرة – رضي الله عنه – قَالَ: وَلَا يَبْدَأُ بِجَارِهِ الْأَقْصَى قَبْلَ الْأَدْنَى ولكن يبدأ بالأدنى قبل الأقصى
১১০.হযরত আবু হুরায়রা (রা) বলেন, নিকট প্রতিবেশীকে বাদ দিয়ে দূরবর্তী প্রতিবেশীকে হাদিয় দিবে না বরং নিকটবর্তী প্রতিবেশীকে দিয়ে শুরু করবে।
60- بَابُ مَنْ أَغْلَقَ الْبَابَ عَلَى الْجَارِ
যে ব্যক্তি তার প্রতিবেশীর জন্য দরজা বন্ধ করে দেয়
111 – عن ابن عمر رضي الله عنهما قَالَ: لَقَدْ أَتى عَلَيْنَا زَمَانٌ أَوْ قَالَ حِينٌ وَمَا أَحَدٌ أَحَقُّ بِدِينَارِهِ وَدِرْهَمِهِ مِنْ أَخِيهِ الْمُسْلِمِ ثُمَّ الْآنَ الدِّينَارُ وَالدِّرْهَمُ أَحَبُّ إِلَى أَحَدِنَا مِنْ أَخِيهِ الْمُسْلِمِ سَمِعْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: (كَمْ مِن جارٍ مُتعلق بِجَارِهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ يَقُولُ يَا رَبِّ هَذَا أَغْلَقَ بابهُ دُوني فَمَنع مَعْرُوفَهُ)
১১.হযরত নাফে হযরত ইবনে উমর (রা) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আমাদের উপর এমন একটা সময় অতিবাহিত হয়েছে যে, যখন কোন ব্যক্তিই তার মুসলমান ভাইয়েরে চেয়ে নিজেকে দীনার ও দিরহামের (টাকা-পয়সার) বেশী হকদার মনে করেনি। আর এখন এমন সময় এসেছে যে, আমাদের মধ্যে সবার নিকটই তার মুসলমান ভাইয়ের চেয়ে দীনার ও দিরহাম বেশী প্রিয়। আমি রাসূলুল্লাহ (সা)-কে বলতে শুনেছি- কত লোক কাল কিয়ামতের দিন তার প্রতিবেশীকে আঁকড়ে ধরবে এবং বলবে, হে আমার রব! সে আমার জন্য তার দরজা বন্ধ করে রেখেছিল আর তার সদ্ব্যবহার থেকে আমাকে বঞ্চিত করেছিল।
61- بَابُ لَا يَشْبَعُ دُونَ جَارِهِ
যে ব্যক্তি নিজের প্রতিবেশীকে বাদ দিয়ে নিজে পেট ভরে খায়
112 – عن ابن عباس رضي الله عنهما قَالَ: سَمِعْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: (لَيْسَ الْمُؤْمِنُ الَّذِي يَشْبَعُ وجارهُ جَائِع)
১১২. ইবনে আব্বাস (রা) বলেন, আমি নবী কারীম (সা)-কে বলতে শুনেছি- ঐ ব্যক্তি মুমীন নয়, যে নিজে পেট ভরে খায় অথচ তার প্রতিবেশী অভুক্ত থাকে।
62- بَابُ يُكْثِرُ مَاءَ الْمَرَقِ فَيَقْسِمُ فِي الْجِيرَانِ
ঝোলের মধ্যে পানি বেশী করে দেয়া যাতে প্রতিবেশীদের মধ্যে বন্টন করতে পারে
113 – عن أبى ذر – رضي الله عنه – قَالَ: أَوْصَانِي خَلِيلِي صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِثَلَاثٍ: (أسمَعُ وأُطِيع وَلَوْ لِعَبْدٍ مجدَّع الْأَطْرَافِ، وَإِذَا صنعتَ مَرقةً فَأَكْثِرْ ماءَهَا ثُمَّ انْظُرْ أَهْلَ بَيْتٍ مِنْ جِيرَانِكَ فأصِبْهم مِنْهُ بِمَعْرُوفٍ وصلِّ الصَّلَاةَ لِوَقْتِهَا فَإِنْ وَجَدْتَ الْإِمَامَ قَدْ صَلَّى فَقَدْ أَحْرَزْتَ صَلَاتَكَ وَإِلَّا فَهِيَ نَافِلَةٌ)
১১৩.আবু যার (রা) বলেন, আমাকে আমার খলীল (নবী [সা]) তিনটি অসিয়ত করেছেন।
১.আমি যেন (আমীরের কথা) শুনি ও মান্য করি, যদিও সে নাক কাটা গুলাম হয়।
১.যখন তুমি তরকারী রান্না করবে তার মধ্যে ঝোল পানি বেশী করে দাও এবং তোমার প্রতিবেশীর দিকে দেখ এবং তাদরেকে এর মধ্য থেকে সহৃদয়তার সাথে কিছু দাও।
৩.নামাযকে তার যথাসমযে আদায় কর। যদি তুমি দেখ যে, ইমাম নামায পড়ে নিয়েছে তাহলে তোমার (ঘরে আদায় করা) নামায হয়ে গেছে। আর না হয় (ইমামরে সাথে পূণরায় নামায পড়লে) তোমার নামায নফর হিসাবে গণ্য হবে।
114 – عن أبى ذر – رضي الله عنه – قَالَ: قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: (يَا أَبَا ذَرٍّ إِذَا طَبَخْتَ مَرَقَةً فَأَكْثِرْ مَاءَ الْمَرَقَةِ وَتَعَاهَدْ جِيرَانَكَ أَوِ اقْسِم فِي جيرانك) .
১১৪.আবু যার (রা) বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, নবী কারীম (সা) ইরশাদ করেন, হে আবু যার! যখন তুমি তরকারী রান্না করবে তখন তরকারীতে ঝোলের জন্য পানি বেশী করে দিবে। আর নিজের প্রতিবেশীর প্রতি লক্ষ রাখবে, আর তাদের মধ্যে বন্টন করবে।
63-بَابُ خَيْرِ الْجِيرَانِ
উত্তম প্রতিবেশী
115 – عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بن عمرو بن العاص رضي الله عنهما عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنَّهُ قَالَ: (خَيْرُ الأصْحَاب عِنْدَ اللَّهِ تَعَالَى خيرُهم لصاحبه وخير الجيران عند الله خيرهم لجاره)
১১৫.হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস (রা) বর্ণনা করেন। রাসূলূল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন, আল্লাহর নিকট ঐ সাথী উত্তম, যে তার সঙ্গীর নিকট উত্তম। আর আল্লাহর নিকট ঐ প্রতিবেশী উত্তম, যে তার প্রতিবেশীর নিকট উত্তম।
64- بَابُ الْجَارِ الصَّالِحِ
নেক প্রতিবেশী
116 – عن نافع بن عبد الحارث – رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ – عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: (مِنْ سَعَادَةِ المَرْءِ الْمُسْلِمِ المسكنُ الواسع والجارُ الصالح والمركبُ الهنيء)
১১৬.হযরত নাফে বিন আব্দুল হারিস (রা) বর্ণনা করেন। রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন- মুসলিম ব্যক্তির সৌভাগ্যের নিদর্শন হলো তার ঘর প্রশস্ত হওয়া, তার প্রতিবেশী ভাল হওয়া এবং তার বাহন উৎকৃষ্ট হওয়া।
65-بَابُ الْجَارِ السُّوءِ
মন্দ প্রতিবেশী
117 – عن أبى هريرة – رضي الله عنه – قَالَ: كَانَ مِنْ دُعَاءِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: (اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ جَارِ السُّوءِ فِي دَارِ المُقام فَإِنَّ جَارَ الدنيا يَتحوَّل)
১১৭.হযরত আবু হুরায়রা (রা) বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) এর দুআসমূহের মধ্যে আছে- হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট (পরকালের) স্থায়ী বাসস্থানের মন্দ প্রতিবেশী থেকে পানাহ চাই। কেননা দুনিয়া্র প্রতিবেশী তো পরিবর্তন হয়ে থাক।
118 – عن أبي موسى – رضي الله عنه – قَالَ: رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: (لَا تَقُومُ السَّاعَةُ حَتَّى يقتُلَ الرَّجُلُ جَارَهُ وأخاه وأباه)
১১৮.হযরত আবু মূসা (রা) বর্ণনা করেন। রাসুলূল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন- ঐ সময় পর্যন্ত কিয়ামত কায়েম হবে না, যে পর্যন্ত কোন ব্যক্তি তার প্রতিবেশী, তার ভাই এবং তার পিতাকে হত্যা না করবে।
66-بَابُ لَا يُؤْذِي جَارَهُ
119 – عن أبي هريرة – رضي الله عنه – قال: قِيلَ لِلنَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنَّ فُلَانَةً تَقُومُ اللَّيْلَ وَتَصُومُ النَّهَارَ وَتَفْعَلُ وَتَصَّدَّقُ وَتُؤْذِي جِيرَانَهَا بِلِسَانِهَا؟ فَقَالَ: رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: (لَا خير فيها هى من أهل النار) وَفُلَانَةٌ تُصَلِّي الْمَكْتُوبَةَ وَتَصَّدَّقُ بِأَثْوَارٍ (1) وَلَا تُؤْذِي أَحَدًا؟
১১৯.আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা)-কে বলা হলো ইয়া রাসূলাল্লাহ! অমুক নারী রাতে নামায পড়ে আর দিনে রোযা রাখে, ভাল কাজ করে, দান-খয়রাত করে, তবে নিজ প্রতিবেশীদেরকে যবান দ্বারা কষ্ট দেয়। রাসূলুল্লাহ (সা) বললেন, তার মধ্যে কোন কল্যাণ নেই, সে জাহান্নামী। সাহাবীগণ বলেন, আর অমুক নারী শুধু ফরয নামায পড়ে, পনিরের টুকরা দান করে এবং কাউকে কষ্ট দেয় না। রাসূলুল্লাহ (সা) বললেন, সে জান্নাতী।
120 – عن عُمَارَةُ بْنُ غُرَابٍ أَنَّ عَمَّةً لَهُ حَدَّثَتْهُ: أَنَّهَا سَأَلَتْ عَائِشَةَ أُمَّ الْمُؤْمِنِينَ رَضِيَ اللَّهُ عنه فَقَالَتْ: إِنَّ زَوْجَ إِحْدَانَا يُريدها فَتَمْنَعُهُ نَفْسَهَا إِمَّا أَنْ تَكُونَ غَضَبَى أَوْ لَمْ تَكُنْ نَشِيطَةً فَهَلْ عَلَيْنَا فِي ذَلِكَ مِنْ حَرَجٍ؟ قَالَتْ: نَعَمْ إِنَّ مِنْ حَقِّهِ عَلَيْكِ أَنْ لَوْ أَرَادَكِ وَأَنْتِ عَلَى قَتَبٍ (1) لَمْ تَمْنَعِيهِ، قَالَتْ: قُلْتُ لَهَا إِحْدَانَا تَحِيضُ وَلَيْسَ لَهَا وَلِزَوْجِهَا إِلَّا فِرَاشٌ وَاحِدٌ أَوْ لِحَافٌ وَاحِدٌ فَكَيْفَ تَصْنَعُ؟
قَالَتْ: لِتَشُدَّ عَلَيْهَا إِزَارَهَا ثُمَّ تَنَامُ مَعَهُ فَلَهُ مَا فَوْقَ ذَلِكَ مَعَ أَنِّي سَوْفَ أُخْبِرُكِ مَا صَنَعَ النَّبِيُّ صَلَّى الله عليه وسلم إنه كانت لَيْلَتِي مِنْهُ فَطَحَنْتُ شَيْئًا مِنْ شَعِيرٍ فَجَعَلْتُ لَهُ قُرْصًا فَدَخَلَ فَرَدَّ الْبَابَ وَدَخَلَ إِلَى الْمَسْجِدِ وَكَانَ إِذَا أَرَادَ أَنْ يَنَامَ أَغْلَقَ البابَ وَأَوْكَأَ الْقِرْبَةَ وَأَكْفَأَ الْقَدَحَ وَأطْفَأَ الْمِصْبَاحَ فَانْتَظَرْتُهُ أَنْ يَنْصَرِفَ فَأُطْعِمُهُ الْقُرْصَ فَلَمْ يَنْصَرِفْ حَتَّى غَلَبَنِي النَّوْمُ وَأَوْجَعَهُ الْبَرْدُ فَأَتَانِي فَأَقَامَنِي ثُمَّ قَالَ: (أَدْفِئِينِي أَدْفِئِينِي) فَقُلْتُ لَهُ: إِنِّي حائض، فقال: (وإِن اكشِفي عن فخذيك) فَكَشَفْتُ لَهُ عَنْ فَخِذَي فَوَضَعَ خَدَّهُ وَرَأْسَهُ على فخذى حتى دَفيء فَأَقْبَلَتْ شَاةٌ لِجَارِنَا دَاجِنَةٌ فَدَخَلَتْ ثُمَّ عَمَدَتْ إِلَى الْقُرْصِ فَأَخَذَتْهُ ثُمَّ أَدْبَرَتْ بِهِ قَالَتْ: وقلقتُ عَنْهُ وَاسْتَيْقَظَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَبَادَرْتُهَا إِلَى الْبَابِ فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: (خُذِي مَا أَدْرَكْتِ مِنْ قرصك ولا تؤذى جارك في شاته)
১২০.উমারা ইবনে গুরাব (রহ) বর্ণনা করেন যে, তাকে তার ফুফু বলেছেন যে, তিনি উম্মুল মুমিনীন আয়িশা (রা)-কে জিজ্ঞাসা করলেন। তিনি বলেন, আমাদের মধ্যে আমাদের কাউকে তার স্বামী চাইলে, সে তাকে না করে দেয় হয়তো রাগের কারণে অথবা মন না চাওয়ার কারণে। এর জন্য কি আমাদের কোন দোষ হবে? তিনি বলেন, হ্যাঁ। তার উপর তোমার অধিকার এই যে, সে তোমাকে কামনা করলে তুমি তার কামনা পূরণ করবে যদিও তুমি উটের পিঠে থাক, তথাপি তুমি তাকে না করতে পারবে না।
অতঃপর জিজ্ঞাসা করলেন যে, আমাদের মধ্যে যদি কেউ হায়েযগস্থ হয়, আর তার ও তার স্বামীর জন্য একটা বিছানা ব্যতীত অপর বিছানা বা লেপ না থাকে তবে কি করবে? আয়িশা (রা) বললেন, সে তার উপর কাপড় বাঁধবে এবং তার সাথে শয়ন করবে। স্বামী তার উপর থেকে আনন্দ উপভোগ করতে পারবে।
তার সাথে তিনি এ কথাও বললেন যে, আমি তোমাকে বলছি যে, নবী (সা) কি আমল করতেন। এক রাতে আমার সাথে তার পালা ছিল। আমি সামন্য যব পিষলাম এবং রুটি বানালাম। তিনি আমার ঘরে প্রবেশ করনে এবং দরজা বন্ধ করে দিলেন এবং মসজিদে তাশরীফ নিয়ে গেলেন। নবী (সা) যখন শোওয়ার ইচ্ছা করতেন তখন দরজা বন্ধ করে দিতেন, মশকের মুথ বেঁধে দিতেন. পেয়ালা উল্টিয়ে রাখতেন এবং বাতি নিভিয়ে দিতেন। আমি তার ফিরে আসার অপেক্ষা করতে লাগলাম যে, আমি তাকে রুটি খাওয়াব। কিন্তু তিনি আসতে দেরি করলেন, বিধায় আমার ঘুম প্রবল হলো।
(অতঃপর) ঠান্ডার কারণে তার কষ্ট বাড়লে তিনি আমার নিকট আসলেন এবং আমাকে নিদ্রা থেকে উঠালেন এবং আমাকে বললেন, আমাকে উষ্ণতা দাও আমাকে উষ্ণতা দাও। আমি বললাম, আমি হায়েযগ্রস্থ। তিনি (সা) বললেন, তোমার উরু উন্মুক্ত কর। আমি আমার উরুদ্বয় উন্মুক্ত করলাম। তিনি তার গাল ও মাথা আমার উরুদ্বয়ের উপর রাখলেন। শেষ পর্যন্ত তিনি উত্তপ্ত হলেন।
এমন সময় আমাদের প্রতিবেশীর একটি বকরী ভিতরে এসে পড়ল এবং রুটির দিকে আগে বাড়ল এবং তা খেয়ে যেতে উদ্যত হল। আয়িশা (রা) বলেন, আমি উদ্বিগ্ন হলাম এবং আমার নড়াচড়ার কারণে নবী (সা) ঘুম থেক জেগে উঠলেন। আমি দৌড়ে দরজার নিকট আসলাম তো নবী কারীম (সা) বললেন, (বকরীর থেকে) যে কয়টি রুটি নিতে পার, তার থেকে রুটি নিয়ে নাও আর নিজের প্রতিবেশীকে এ ব্যাপারে কিছু বলো না।
121 – عن أبى هريرة – رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ – أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى الله عليه وسلم قَالَ: «لَا يَدْخُلُ الْجَنَّةَ مَنْ لَا يَأْمَنُ جَارُهُ بَوَائِقَهُ»
১২১. আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন- ঐ ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে না, যার অনিষ্ট থেকে তার প্রতিবেশী নিরাপদ নয়।
67- بَابُ لَا تَحْقِرَنَّ جَارَةٌ لِجَارَتِهَا وَلَوْ فِرْسِنُ شاة
কোন প্রতিবেশী যেন তার কোন প্রতিবেশীকে বকরীর পায়ের সামান্য ক্ষুর দিতেও দ্বিধা না করে
122 – عَنْ عَمْرِو بْنِ مُعَاذٍ الْأَشْهَلِيِّ عَنْ جَدَّتِهِ- حواء بنت يزيد بن اسكن – أَنَّهَا قَالَتْ: قَالَ لِي رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: (يَا نِسَاءَ الْمُؤْمِنَاتِ لَا تَحْقِرَنَّ امْرَأَةٌ مِنْكُنَّ لجارتها ولو كراع شاة محرق)
১২২.হযরত আমর বিন মুয়ায আশহালী তার দাদী থেকে বর্ণনা করেন। রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন- হে ইমানদার স্ত্রীগণ! তোমাদের মধ্যে কোন নারী তার প্রতিবেশী কোন নারীকে যেন সামান্য কিছু দিতেও কুণ্ঠাবোধ না করে, যদিও তা বকরীর সামান্য ক্ষুরও (যার দ্বারা নেহারী-পায়া রান্না করা হয়) হয়।
123 – عن أبى هريرة – رضي الله عنه – قَالَ: النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: (يَا نِسَاءَ الْمُسْلِمَاتِ يَا نِسَاءَ الْمُسْلِمَاتِ لَا تحقرنَّ جارةٌ لجارتها ولو فِرْسنَ شاة) .
১২৩.হযরত আবু হুরায়রা (রা) বর্ণনা করেন। রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন- হে মুসলিম নারীগণ! (তোমাদের) কোন প্রতিবেশী যেন অপর কোন প্রতিবেশীকে বকরীর সামান্য ক্ষুর দিতেও কুণ্ঠিত না হয়।
68- بَابُ شِكَايَةِ الْجَارِ
প্রতিবেশীর অভিযোগ
124 – عن أبى هريرة – رضي الله عنه – قَالَ: قَالَ رَجُلٌ يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنَّ لِي جَارًا يُؤْذِينِي، فَقَالَ: «انْطَلِقْ فَأَخْرِجْ مَتَاعَكَ إِلَى الطَّرِيقِ» فانطلقَ فأخرجَ مَتَاعَهُ فَاجْتَمَعَ النَّاسُ عَلَيْهِ فَقَالُوا مَا شَأْنُكَ؟ قَالَ: لِي جَارٌ يُؤْذِينِي فَذَكَرْتُ لِلنَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فقال: (انْطَلِقْ فأخرِج مَتَاعَكَ إِلَى الطَّرِيقِ) فَجَعَلُوا يَقُولُونَ: اللَّهُمَّ العَنْه اللَّهُمَّ اخْزِه فَبَلَغَهُ فَأَتَاهُ فَقَالَ: ارجع الى منزلك فوالله لا أؤذيك.
১২৪.হযরত আবু হুরায়রা (রা) বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি আরয করল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমার এক প্রতিবেশী আছে, যে আমাকে কষ্ট প্রদান করে। নবী (সা) তাকে বললেন, যাও গিয়ে নিজের মাল-সামান বাহিরে ফেলে রাখ। লোকটি গিয়ে নিজের মাল-সামান বাহির রেখে দিল।
লোকেরা তাকে ঘিরে ধরে জিজ্ঞাসা করল, কি হয়েছে? সে বলল, আমার প্রতিবেশী আমাকে কষ্ট দেয়। আমি নবী (সা)-কে তা বললে তিনি আমাকে বললেন, যাও নিজের মাল-সামান বাহিরে ফেলে রাখ। তখন লোকেরা তার প্রতিবেশীকে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগল, হে আল্লাহ! তাকে অভিশপ্ত করুন। তাকে লাঞ্ছিত করুন। প্রতিবেশী ব্যক্তিটি এটা জেনে তাকে বলল, তুমি ঘরে যাও আল্লাহর শপথ! আমি তোমাকে কষ্ট দিব না।
১২৫. আবু জুহায়ফাহ (রা) বর্ণনা করেন। এক ব্যক্তি নবী (সা) এর নিকট তার প্রতিবেশীর ব্যাপারে অভিযোগ করল। নবী (সা) তাকে বললেন, যাও গিয়ে নিজের মাল-সামান বাহিরে ফেলে রাখ। অতএব যে-ই সেখান দিয়ে যাবে তাকে অভিসম্পাত করবে। তখন যে-ই সেখান দিয়ে গেল সে-ই তাকে অভিসম্পাত করল। তখন ঐ লোকটি নবী (সা)-কে গিয়ে বলল, যে-ই এখান দিয়ে যায় সেই আমাকে লা’নত করে। নবী (সা) বললেন, আল্লাহর লা’নত ঐ সব লোকদের লা’নত থেকেও বড়। অতঃপর নবী (সা) অভিযোগকারীকে বললেন, তার জন্য যথেষ্ট হয়েছে।