তাফসীর আদ দুররে মানসূর-সূরা আল ফাতিহার ভূমিকা- বর্ধিত

প্রথম যখন আমাদের ওয়েবসাইট থেকে তাফসীর আদ দুররে মানসূরের অনুবাদ শুরু করা হয় তখন শুধু এর একটি নির্বাচিত সংকলন পেশ করার পরিকল্পনা নিয়ে এর অনুবাদের কাজ শুরু হয়। কিন্তু পরবর্তীতে প্রায় সম্পূর্ণ তাফসীরই অনুবাদ করা হতে থাকে এবং চলতে থাকে। অতএব প্রথমদিকে সূরা আল ফাতিহা ও সূরা আল বাকারার যে আয়াতগুলোর তাফসীর সংক্ষেপ ছিল, সেগুলো পূণরায় অনুবাদের কাজ শুর করা করা হয়েছে। কাজ সমাপ্ত হলে পূণরায় নতুন pdf প্রকাশ করা হবে ইনশাআল্লাহ। এ পর্যায়ে সূরা আল ফাতিহার ভূমিকা অংশটি সম্পূর্ণ পেশ করা হলো। আর আল্লাহ চাহে তো অচীরেই সূরা আল বাকারা ১০২ থেকে প্রথম পারার শেষ পর্যন্ত তাফসীরের pdf প্রকাশ করা হবে। আল্লাহ তাওফীক প্রদানকারী। সাহায্য ও শক্তি তার পক্ষ থেকেই।

بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ
مُقَدّمَة سُورَة الْفَاتِحَة
সূরা আল ফাতিহার ভূমিকা

ইমাম আব্দ ইবনে হুমায়দ তার তাফসীরে ইবরাহিম (রহ) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আমি আসওয়াদকে সূরা ফাতিহার ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলাম যে, এটা কি আল কুরআনের অংশ? তিনি বললেন, হ্যাঁ।

ইমাম আব্দ ইবনে হুমায়দ ইবরাহীম (রহ) থেকে বর্ণণা করেন। তিনি বলেন, আব্দুল্লাহ (রা) কুরআনে সূরা ফাতিহা লিখতেন না। আর তিনি বলেন, যদি আমি তা লিখতাম তবে তা সবার আগে লিখতাম।

ইমাম ওয়াহিদী আসবাবুন নুযূলে এবং সালাবী তার তাফসীরে আলী (রা) থেকে বর্ণনা করেন-
نزلت فَاتِحَة الْكتاب بِمَكَّة من كنز تَحت الْعَرْش
ফাতিহাতুল কিতাব মক্কায় আরশের নিম্নস্থ খাযানাহ হতে নাযিল করা হয়েছে।

ইমাম ইবনে আবি শায়বাহ আল মুসান্নাফ-এ, আবু নুআইম দালায়িলুন নুবুওয়াতে, ওয়াহিদী এবং সালাবী- আবু মায়সারাহ আমর বিন শুরাহবিল থেকে বর্ণনা করেন। রাসূলুল্লাহ (সা) খাদিজা (রা)-কে বলেন- যখনই আমি একাকী হই তখন কোন আওয়ায শুনি। আল্লাহর শপথ! আমার আশঙ্কা! কোন কিছু হতে যাচ্ছে। খাদিজা (রা) বললেন-
معَاذ الله ماكان الله ليفعل بك فوَاللَّه إِنَّك لتؤدي الْأَمَانَة وَتصل الرَّحِم وَتصدق الحَدِيث
আল্লাহ হিফাযত করেন, আল্লাহ আপনাকে কোন পেরশোনী ও মুসিবতে ফেলবেন না। আল্লাহর শপথ! আপনি আমানতদার, আত্মীয়তা সম্পর্ক রক্ষাকারী এবং সত্যবাদী।
পরে যখন আবু বকর (রা) আসেন এবং সেই সময় রাসূলুল্লাহ (সা) ঘরে অনুপস্থিত ছিলেন। তখন তিনি আবু বকর (রা)-কে রাসূলুল্লাহ (সা) এর অবস্থার কথা বললেন। আর বললেন, তুমি মুহাম্মদ (সা)-কে নিয়ে ওয়ারাকার নিকট যাও। যখন রাসূলুল্লাহ (সা) ঘরে আসলেন, তখন আবু বকর (রা) তার হাত ধরে বললেন, আমার সাথে ওয়ারাকার কাছে চলুন। রাসূলুল্লাহ (সা) আবু বকর (রা)- কে বললেন, তোমাকে এসব কথা কে বলেছে? আবু বকর (রা) বললেন, খাদিজা (রা) বলেছেন।
রাসূলু্ল্লাহ (সা) আবু বকরের সাথে ওয়ারাকার কাছে গেলেন এবং সমস্ত বৃত্তান্ত বর্ণনা করলেন। বললেন, যখন আমি একাকী হই তখন পিছন থেকে হে মুহাম্মদ, হে মুহাম্মদ! আওয়ায শুনতে পাই। এটা শুনে আমি সেখান থেকে দ্রুত ফিরে আসি। ওয়ারাকা বললো, আবার যখন তুমি এই আওয়ায শুনবে তখন পালাবে না, বরং কি বলে এটা শুনবে, তারপর আমার কাছে আসবে। অতএব যখন রাসূলুল্লাহ (সা) পরে একাকী হলেন, তখন তাকে কেউ আহবান করে বলল, হে মুহাম্মদ! পাঠ কর- বিসমল্লিাহির রাহমানরি রাহীম। আলহামদু লিল্লাহি রাব্বিল আলামীন। এমনকি ‘ওয়ালাদ দাল্লীন’ পর্যন্ত পাঠ করলেন। আর বললেন, বলো- লা ইলাহা ইল্লাহ বল। এটা শুনে রাসূলুল্লাহ (সা) ওয়ারাকার নিকট আসলেন এবং সব বললেন। ওয়ারাকা রাসূলুল্লাহ (সা)-কে বললেন, সুসংবাদ নাও, সুংবাদ নাও, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আপনিই ঐ সত্তা যার সুসংবাদ ঈসা (আ) প্রদান করেছিলেন। আর আপনার নিকট এ ফেরেশতা (জিবরাইল) এসেছিল যে মূসা (আ) এর কাছে আসত। (জেনে নিন যে) আপনি প্রেরিত নবী।

ইমাম আবু নুআইম দালায়িলুন নুবুওয়াতে বনী সালামার এক ব্যক্তি হতে বর্ণনা করেন যে, যখন বনী সালামার যুবকরা ইসলাম গ্রহণ করলেন এবং আমর ইবনুল জামুহ এর ছেলেও ইসলাম গ্রহণ করলেন। তখন ইবনুল জামুহ এর স্ত্রী তাকে বললো, তুমি শুনেছো, তোমার ছেলে ঐ ব্যক্তি থেকে বর্ণনা করে। আমর বললো, বৎস! তুমি ঐ লোক থেকে কি শুনেছো? ছেলে {الْحَمد لله رب الْعَالمين} إِلَى قَوْله {الصِّرَاط الْمُسْتَقيم} পর্যন্ত পাঠ করলো। আমর বললো কত সুন্দর হৃদয়গ্রাহী কালাম। এর সব কথাই কি এমন সুমধুর? ছেলে বললো ‘বাবা! এর চেয়েও আরো সুন্দর কথা বলা হয়েছে।’ এটা হিজরতের পূর্বের ঘটনা।

ইমাম ইবনে আবি শাইবাহ মুসান্নাফে, আবু সাঈদ ইবনুল আরাবী তার মু’জামে এবং তাবরানী আউসাতে মুজাহিদের মাধ্যমে আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণনা করেন-
أَن إِبْلِيس رن حِين أنزلن فَاتِحَة الْكتاب وأنزلت بِالْمَدِينَةِ
ইবলিস চিৎকার করে উঠে যখন সূরা ফাতিহা নাযিল হয়। আর এটা পবিত্র মদীনায় নাযিল হয়েছিল।

ইমাম ওকী, ফিরইয়াবী তার তাফসীরে, আবু আব্দুল্লাহ ফাযায়িলুল কুরআনে, ইবনে আবি শায়বাহ মুসান্নাফে, আব্দ ইবনে হুমায়দ, ইবনুল মুনযির তার তাফসীরে, আবু বকর ইবনুল আম্বারী কিতাবুল মাসাহেফ এ, আবুশ শায়খ আল আযমায়, আবু নুআইম হিলইয়াতে- মুজাহিদ (রহ) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন- ফাতিহাতুল কিতাব মদীনায় নাযিল হয়েছে।

ইমাম ওকী তার তাফসীরে মুজাহিদ (রহ) থেকে বর্ণনা করেন যে, সূরা আল ফাতিহা মদীনায় নাযিল হয়েছে।
ইমাম আবু বকর ইবনুল আম্বারী আল মাসাহিফ-এ কাতাদাহ (রহ) থেকে বর্ণনা করেন যে, ফাতিহাতুল কিতাব মক্কায় নাযিল হয়েছে।

ইমাম ইবনুয যুরায়স ফাযায়িলুল কুরআনে আইয়ুব (রহ) থেকে বর্ণনা করেন। ইবনে সিরীন (রহ) বলেন, উম্মুল কিতাব বলা মাকরুহ। আল্লাহ তাআলা বলেন
وَعِنْده أم الْكتاب
আর আল্লাহরই নিকট রয়েছে উম্মুল কিতাব (মূল গ্রন্থ)।
অতএব ফাতিহাতুল কিতাব বলা উচিত।

ইমাম দারাকুতনী আর তিনি এটাকে সহিহ বলেছেন এবং বায়হাকী তার সুনানে আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন-
إِذا قَرَأْتُمْ {الْحَمد} فاقرؤا {بِسم الله الرَّحْمَن الرَّحِيم} إِنَّهَا أم الْقُرْآن وَأم الْكتاب والسبع المثاني {بِسم الله الرَّحْمَن الرَّحِيم} إِحْدَى آياتها
যখন তোমরা আলহামদু (সূরা) পাঠ করবে তখন বিসিমিল্লাহির রাহমানির রাহীমও পাঠ করবে। এটা উম্মুল কুরআন, উম্মুল কিতাব এবং সাবআ মাসানী- বারংবার পঠিত সাতটি আয়াত। আর বিসিমিল্লাহির রাহমানির রাহীম তার আয়াতের মধ্যে একটি আয়াত।

ইমাম বুখারী, দারিমী তার মুসনাদে, আবু দাউদ, তিরমিযী, ইবনুল মুনযির, ইবনে আবী হাতিম এবং ইবনে মারদুবিয়াহ তাদের নিজ নিজ তাফসীরে আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণনা করে। রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন-
{الْحَمد لله رب الْعَالمين} أم الْقُرْآن وَأم الْكتاب والسبع المثاني
(সূরা) আলহামদু লিল্লাহি রাব্বিল আলামীন, উম্মুল কুরআন, উম্মুল কিতাব ও সাবআ মাসানী।

ইমাম আহমদ তার মুসনাদে, ইবনে জারীর, ইবনুল মুনযির, ইবনে আবী হাতিম ও ইবনে মারদুবিয়াহ তাদের নিজ নিজ তাফসীরে- আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণনা করেন। রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন-
لأم الْقُرْآن: هِيَ أم الْقُرْآن وَهِي فَاتِحَة الْكتاب وَهِي السَّبع المثاني وَهِي الْقُرْآن الْعَظِيم
উম্মুল কুরআনই হলো উম্মুল কুরআন। এটা ফাতিহাতুল কিতাব, সাবআ মাসানী এবং এটা মহান কুরআন।

ইমাম সালাবী আব্দুল জাব্বার বিন আলা থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, সুফিয়ান বিন উয়াইনাহ ফাতিহাতুল কিতাবকে দাফিয়াহ (অনিষ্ট নির্মুলকারী) বলতেন।

ইমাম সালাবী আফীফ বিন সালিম থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আমি আব্দুল্লাহ বিন ইয়াহইয়া ইবনে আবী কাসীরকে ইমামের পিছনে সূরা ফাতিহা পাঠ করার ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন, তুমি কি আল কিফায়াহ এর ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করছ? আমি বললাম, আল কিফায়াহ কি? তিনি বললেন, সূরা অল ফাতিহা। তুমি কি জান না যে এটা নিজেকে ব্যতীত সবকিছুর জন্য যথেষ্ট। কিন্তু নিজেকে ব্যতীত তার নিজের জন্য যথেষ্ট নয়।

ইমাম সালাবী আশ শাময়ী- শাবী (রহ) থেকে বর্ণনা করেন। এক ব্যক্তি তার নিকট কোমর ব্যথার অভিযোগ করলো। তখন তিনি বললেন, তুমি আসাসুল কুরআন (আরোগ্যদানকারী কুরআন) পাঠ কর। সে বললো আসাসুল করআন কি? তিনি বললেন, ফাতিহাতুল কিতাব।

ইমাম দারাকুতনী, বায়হাকী তার সুনানে সহিহ সনদে আব্দ খায়র থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি আলী (রা)- কে সাবয়া মাসানী বা বারবার পঠিত সপ্ত আয়াতের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলেন। তিনি বললেন, তা হলো আলহামদু লিল্লাহি রাব্বিল আলামীন (সূরা আল ফাতিহা)। তাকে বলা হলো যে, তার মধ্যে তো ছয় আয়াত। তিনি বললেন, বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম এক আয়াত।

ইমাম তাবরানী আল আউসাতে, ইবনে মারদুবিয়া তার তাফসীরে এবং বায়হাকী- আলী (রা) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন- (সূরা) আলহামদু লিল্লাহি রাব্বিল আলামীন সাত আয়াত। তার মধ্যে বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম এক আয়াত। এটা সাবয়ে মাসানী, মহান কুরআন, উম্মুল কুরআন ও ফাতিহাতুল কিতাব।

ইমাম দারাকুতনী এবং বায়হাকী আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণনা করেন। নবী কারীম (সা) ইমামতী করার সময় যখন কিরাআত শুরু করতেন তখন প্রথমে বিসমিল্লাহ দিয়ে শুরু করতেন। আবু হুরায়রা (রা) বলেন, বিসমিল্লাহ আল্লাহর কিতাবের একটি আয়াত। যদি চাও তো সূরা আল ফাতিহা পড়ে নাও, তা সাত আয়াতবিশিষ্ট।
ইমাম আম্বারী তার আল মাসাহিফ-এ উম্মু সালামা (রা) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) সূরা আল ফাতিহা পাঠ করলেন। তারপর বললেন, হে উম্মু সালামা! তা সপ্ত আয়াত।

ইমাম আহমদ, বুখারী, দারিমী, আবু দাউদ, নাসাঈ, হাসান ইবনে সুফিয়ান, ইবনে জারীর, ইবনে হিব্বান, হাকীম তার কূনাতে, ইবনে মারদুবিয়া, আবু নুআইম তার মারিফায় এবং বায়হাকী- আবূ সাঈদ ইবনে মুআল্লা থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আমি একদা মসজিদে নববীতে নামায আদায় করছিলাম, এমন সময় রাসূলুল্লাহ (সা) আমাকে ডাকেন। কিন্তু সে ডাকে আমি সাড়া দেইনি। পরে আমি বললাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমি নামাযে রত ছিলাম। (এ কারণে জবাব দিতে পারিনি)। তখন তিনি বললেন, আল্লাহ কি বলেন নি যে,
‏اسْتَجِيبُوا لِلَّهِ وَلِلرَّسُولِ إِذَا دَعَاكُمْ‏
হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহর ডাকে সাড়া দিবে এবং রাসূলের ডাকেও যখন তিনি তোমাদেরকে আহবান করেন।-সূরা আল আনফাল ২৪
তারপর তিনি আমাকে বললেন, তুমি মসজিদ থেকে বের হওয়ার পূর্বেই তোমাকে আমি কুরআনের এক মহান সূরা শিক্ষা দিব। তারপর তিনি আমার হাত ধরেন। এরপর যখন তিনি মসজিদ থেকে বের হওয়ার ইচ্ছা করেন তখন আমি তাকে বললাম, আপনি না আমাকে কুরআনের শ্রেষ্ঠতম সূরা শিক্ষা দিবেন বলে বলেছিলেন? তিনি বললেন, اَلْحَمْدُ لِله رَبِّ الْعَالَمِيْنَ এটা বারবার পঠিত সাতটি আয়াত এবং মহান কুরআন যা আমাকেই প্রদান করা হয়েছে।

ইমাম আবু উবায়দ, আহমদ, তিরমিযী, দারিমী, নাসাঈ, ইবনে খুযায়মাহ, ইবনুল মুনযির, হাকীম আর তিনি এটাকে সহিহ বলেছেন, ইবনে মারদুবিয়া এবং আবু যার আল হারুয়ী ফাযায়িলুল কুরআন-এ এবং বায়হাকী তার সুনান-এ আবূ হুরাইরাহ (রা) হতে বর্ণনা করেন। রাসূলুল্লাহ (সা) উবাই ইবনু কাব (রা)-এর নিকট গেলেন এবং তাকে ডাকলেন, হে উবাই। উবাই (রা) তখন নামাযরত ছিলেন। তিনি তার প্রতি দৃষ্টিপাত করলেন কিন্তু জবাব দিলেন না। তবে তিনি সংক্ষেপে নামায শেষ করে রাসূলুল্লাহ (সা) -এর নিকট গেলেন এবং বললেন, আসসালামু আলাইকা ইয়া রাসূলুল্লাহ! রাসূলুল্লাহ (সা) বললেন, ওয়া আলাইকাস সালাম। হে উবাই! আমি তোমাকে ডাকলে কিসে তোমাকে জবাব দিতে বাধা দিল?
তিনি বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমি তো নামাযরত ছিলাম। তিনি বললেন? আমার নিকট আল্লাহ তাআলা যে ওহী প্রেরণ করেছেন, তার মধ্যে তুমি কি এ হুকুম পাওনি-
‏اسْتَجِيبُوا لِلَّهِ وَلِلرَّسُولِ إِذَا دَعَاكُمْ‏
হে মু’মিনগণ! তোমরা আল্লাহর ডাকে সাড়া দিবে এবং রাসূলের ডাকেও যখন তিনি তোমাদেরকে আহবান করেন।-সূরা আল আনফাল ২৪
তিনি বললেন, হ্যাঁ। আর কখনো এরুপ করব না ইনশাআল্লাহ। তিনি বললেন, তুমি কি চাও যে, আমি এমন একটি সূরা তোমাকে শিখিয়ে দেই যার মত কোন সূরা- তাওরাত, ইনজীল, যাবুর এমনকি কুরআনেও নাযিল হয়নি? তিনি বললেন, হ্যাঁ ইয়া রাসূলুল্লাহ!
রাসূলুল্লাহ (সা) প্রশ্ন করলেন, তুমি নামাযে কি পাঠ কর? বর্ণনাকারী বলেন, তিনি (উবাই) উম্মুল কুরআন (ফাতিহা) পাঠ করলেন। রাসূলুল্লাহ (সা) বললেন, যার হাতে আমার প্রাণ, সেই সত্তার শপথ! এ সূরার মত (মর্যাদা সম্পন্ন) কোন সূরা- তাওরাত, ইনজীল, যাবুর, এমনকি কুরআনেও নাযিল করা হয়নি। আর এটি বারবার পঠিত সাতটি আয়াত সম্বলিত সূরা এবং মহাসম্মানিত কুরআন যা আমাকে দেয়া হয়েছে।

ইমাম দারিমী, তিরমিযী আর তিনি এটাকে হাসান বলেছেন, নাসাঈ, আব্দুল্লাহ ইবনে হাম্বল তার যাওয়ায়েদুল মুসনাদ এ, ইবনুয যুরায়স ফাযায়িলুল কুরআনে, ইবন জারীর, ইবনে খুযায়মাহ, হাকীম আর তিনি এটাকে সহিহ বলেছেন, আবু হরায়রা, উবাই ইবনে কাব (রা) থেকে বর্ণনা করেন।, তিনি বলেন, নবী (সা) বলেছেন, তাওরাত ও ইনজীলে আল্লাহ তাআলা উম্মুল কুরআনের সমতুল্য কিছু নাযিল করেননি। আর তা হচ্ছে সাবউল মাসানী। (আল্লাহ – তাআলা বলেন) তা আমার ও আমার বান্দার মধ্যে বণ্টিত। আমার বান্দার জন্য তা-ই রয়েছে যা সে চায়।

ইমাম মুসলিম, নাসাঈ, ইবনে হিব্বান, তাবরানী এবং হাকীম আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, একদিন জিবরাইল (আ) নবী (সা)-এর কাছে বসেছিলেন। সে সময় তিনি উপর দিক থেকে দরজা খোলার একটা প্রচণ্ড আওয়াজ শুনতে পেয়ে মাথা উঠিয়ে বললেন, এটি আসমানের একটি দরজা। আজকেই এটি খোলা হলো- ইতোপূর্বে আর কখনো খোলা হয়নি। আর এ দরজা দিয়ে একজন ফেরশেতা পৃথিবীতে নেমে আসলেন। আজকের এ দিনের আগে আর কখনো তিনি পৃথিবীতে আসেননি। তারপর তিনি সালাম দিয়ে বললেন, আপনি আপনাকে দেয়া দুটি নূর বা আলোর সুসংবাদ গ্রহণ করুন। আপনার পূর্বে আর কোন নবীকে তা দেয়া হয়নি। আর ঐ দুটি নূর হলো ফাতিহাতুল কিতাব বা সূরা আল ফাতিহা এবং সূরা আল বাকারার শেষাংশ। এর যে কোন হরফ আপনি পড়বেন তার মধ্যস্থিত প্রার্থিত বিষয় আপনাকে দেয়া হবে।

ইমাম তাবরানী আল আউসাতে যয়ীফ সনদে আবু যায়দ (রা) থেকে বর্ণনা করেন। আর তিনি বলেন, আমি মদীনার এক রাস্তায় নবী কারীম (সা) এর সাথে ছিলাম। নবী (সা) এক ব্যক্তিকে নামাযে উম্মুল কিতাব পাঠ করতে শুনেন। নবী কারীম (সা) দাড়িয়ে গেলেন। মনোযোগ দিয়ে তার তিলাওয়াত শুনতে থাকলেন। এমনকি সে তিলায়াত শেষ করলো। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সা) বললেন, যমীনে এই সূরার মত কোন কিছু নাই।

ইমাম আবু উবায়দ, আহমদ, বুখারী, মুসলিম, আবু দাউদ, তিরমিযী, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ এবং বায়হাকী আবূ সাঈদ (রা) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আমাদেরকে রাসূলুল্লাহ (সা) একটি সামরিক অভিযানে প্রেরণ করেন। আমরা একটি জনপদে আসার পর তাদের কাছে মেহমানদারী প্রার্থনা করলাম। কিন্তু তারা আমাদেরকে আপ্যায়ন করালো না। এরকম পরিস্থিতিতে তাদের বংশের প্রধানকে বিচ্ছু দংশন করে। তারা আমাদের নিকট এসে বলে, তোমাদের মধ্যে এমন কেউ আছে কি, যে বিচ্ছু দংশনকারীকে ঝাড়ফুক করতে পারে? আমি বললাম, হ্যাঁ আমি নিজেই। কিন্তু তোমরা যদি আমাদেরকে এক পাল বকরী প্রদান না কর তাহলে আমি ঝাড়ফুক করতে সম্মত নই। তারা বলল, আমরা তোমাদেরকে ত্রিশটি বকরী প্রদান করব। আমরা এ প্রস্তাবে রাজি হলাম।
আমি সাতবার সূরা ফাতিহা পাঠ করে তাকে ঝাড়ফুক করলাম। ফলে সে রোগমুক্ত হলো এবং আমরা বকরীগুলো হস্তগত করলাম। বর্ণনাকারী বলেন, এই বিষয়ে আমাদের মনে সন্দেহের উদ্রেক হলো। আমরা বললাম, তোমরা রাসূলুল্লাহ (সা) এর সামনে হাযির হওয়ার আগ পর্যন্ত (সিদ্ধান্তে পৌছতে) তাড়াহুড়া করবে না। বর্ণনাকারী বলেন, আমরা তার নিকট উপস্থিত হওয়ার পর আমি যা করেছি তা তাকে অবহিত করলাম। তিনি বললেন, কিভাবে তুমি জানতে পারলে, এটা দিয়ে ঝাড়ফুক করা যায়? বকরীগুলো হস্তগত কর এবং তোমাদের সাথে আমার জন্যও একটি অংশ রেখ।

ইমাম আহমদ, বুখারী এবং বায়হাকী তার সুনানে ইবনে আব্বাস (রা) থেকে বর্ণনা করেন। রাসূলুল্লাহ (সা) এর সাহাবীগণের একটি দল একটি কূয়ার পার্শ্ববর্তী বাসিন্দাদের নিকট দিয়ে যাচ্ছিলেন। কূপের পাশে অবস্থানকারীদের মধ্যে ছিল সাপে কাটা এক ব্যক্তি কিংবা তিনি বলেছেন, দংশিত এক ব্যক্তি। তখন কূপের কাছে বসবাসকারীদের একজন এসে তাদের বলল, আপনাদের মধ্যে কি কোন ঝাড়-ফুঁককারী আছেন? কূপ এলাকায় একজন সাপ বা বিচ্ছু দংশিত লোক আছে। তখন সাহাবীদের মধ্যে একজন সেখানে গেলেন। এরপর কিছু বকরী দানের বিনিময়ে তিনি সূরা ফাতিহা পড়লেন। ফলে লোকটির রোগ সেরে গেল।
এরপর তিনি ছাগলগুলো নিয়ে তার সাথীদের নিকট আসলেন, কিন্তু তারা কাজটি পছন্দ করলেন না। তারা বললেন, আপনি আল্লাহর কিতাবের উপর পারিশ্রমিক নিয়েছেন। অবশেষে তারা মদীনায় পৌঁছে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! তিনি আল্লাহর কিতাবের উপর পারিশ্রমিক গ্রহণ করেছেন। তখন রাসূলুল্লাহ (সা) বললেন, যে সকল জিনিসের উপর তোমরা বিনিময় গ্রহণ করে থাক, তন্মধ্যে সবচেয়ে বেশি হক রয়েছে আল্লাহর কিতাবের।

ইমাম আহমদ, বায়হাকী শুআবুল ইমানে উত্তম সনদে জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ (রা) থেকে বর্ণনা করেন। রাসূলুল্লাহ (সা) তাকে বললেন, আমি কি তোমাকে এমন সূরার কথা বলব না, যা কুরআনের সর্বশেষ নাযিল হয়েছে। আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! বলুন। তিনি বললেন, ফাতিহাতুল কিতাব। আমার ধারণা নবী (সা) বলেছেন
فِيهَا شِفَاء من كل دَاء
এই সূরাতে সব রোগের আরোগ্যে রয়েছে।

ইমাম তাবরানী আল আউসাতে, দারাকুতনী আল আফরাদে এবং ইবনে আসাকীর যয়ীফ সনদে সায়েব বিন ইয়াযিদ (রা) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন,
عوذني رَسُول الله صلى الله عَلَيْهِ وَسلم بِفَاتِحَة الْكتاب تفلا
রাসূলু্ল্লাহ (সা) সূরা আল ফাতিহা পাঠ করে আমার উপর দম করেন।

ইমাম সাঈদ ইবনে মানসূর তার সুনানে এবং বায়হাকী শুআবুল ইমানে আবু সাঈদ আল খুদরী (রা) থেকে বর্ণনা করেন। রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন-
فَاتِحَة الْكتاب شِفَاء من السم
ফাতিহাতুল কিতাব বিষের প্রতিষেধক।

ইমাম দারিমী ও বায়হাকী শুআবুল ইমানে সিকাহ রাবীর সনদে আব্দুল মালিক বিন উমায়র থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন-
فَاتِحَة الْكتاب شِفَاء من كل دَاء
সূরা ফাতিহা প্রত্যেক রোগের শিফা।

ইমাম সালাবী মুয়াবিয়া বিন সালিহ থেকে বর্ণনা করেন। রাসূলুল্লাহ (সা) এর সাহাবীগণ কোন এক গাযওয়ায় এব ব্যক্তির পাশ দিয়ে অতিক্রম করেন যার মাথায় ব্যথা ছিল। কোন একজন সাহাবী তার কানে উম্মুল কুরআন পাঠ করে দম করেন। ফলে সে সুস্থ হয়ে যায়। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সা) বলেন, এটা উম্মুল কুরআন, প্রত্যেক রোগের শিফা।

ইমাম আহমদ, আবু দাউদ, নাসাঈ এবং ইবনুস সুন্নি আমালুল ইয়াওম ওয়াল লাইল-এ এবং হাকীম আর তিনি এটাকে সহিহ বলেছেন, বায়হাকী দালায়িলে- খারিজাহ বিন আস সালত তামীমী থেকে আর তিনি তার চাচা থেকে বর্ণনা করেন। তিনি নবী (সা)-এর নিকট গিয়ে সাক্ষাত করার পর অতঃপর তার কাছ থেকে ফেরার পথে তিনি এক গোত্রের পাশ দিয়ে অতিক্রম করছিলেন। সেই গোত্রের এক পাগল লোহার শিকলে বাধা ছিলো। গোত্রের লোকেরা তাকে বললো, তোমার নিকট এই রোগীর চিকিৎসা আছে কি? নিশ্চয়ই তোমার সাথী [নবী (সা)] কল্যাণ নিয়ে এসেছেন।
খারিজার চাচা বলেন, আমি তার উপর তিনবার সূরা ফাতিহা পাঠ করি। প্রত্যেক দিন দুইবার সকাল বিকাল (সূরা পাঠ করে) তার উপর থুতু দিতাম। অতএব (এক সময়) সে সুস্থ হয়ে গেলো। তারা আমাকে একশটি বকরী দিলো। আমি রাসূলুল্লাহ (সা)-এর নিকট এসে ঘটনাটি জানালে তিনি বললেন, তুমি খাও আর যে ব্যক্তি বাতিল মন্ত্র পড়ে (তার জন্য বৈধ নয়)। বাতিল মন্ত্র পড়ে রোজগার করে! আর তুমি তো সত্য ঝাড়ফুঁক দ্বারা উপার্জন করেছো।

ইমাম বাযযার তার মুসনাদে যয়ীফ সনদে আনাস (রা) থেকে বর্ণনা করেন। রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন-
إِذا وضعت جَنْبك على الْفراش وقرأت (فَاتِحَة الْكتاب وَقل هُوَ الله أحد) فقد أمنت من كل شَيْء إِلَّا الْمَوْت
যখন তুমি বিছানায় শায়িত হও তখন সূরা ফাতিহা এবং কুলহুআল্লাহ পাঠ কর। তাহলে তুমি মৃত্যু ব্যতীত সব বিপদ থেকে নিরাপদ থাকবে।

ইমাম তাবরানী আল আউসাতে যয়ীফ সনদে ইবনে আব্বাস (রা) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেন-
من قَرَأَ (أم الْقُرْآن) و (قل هُوَ الله أحد) فَكَأَنَّمَا قَرَأَ ثلث الْقُرْآن
যে ব্যক্তি উম্মুল কুরআন এবং কুল হুআল্লাহ পাঠ করলো সে যেন কুরআনের এক তৃতীয়াংশ পাঠ করল।
ইমাম আব্দ ইবন হুমায়দ তার মুসনাদে, ইমাম ফিরইয়াবী তার তাফসীরে ইবনে আব্বাস (রা) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন- ফাতিহাতুল কিতাব কুরআনের এক তৃতীয়াংশ।

ইমাম আব্দ ইবনে হুমায়দ তার মুসনাদে যয়ীফ সনদে ইবনে আব্বাস (রা) থেকে মারফু হাদীস বর্ণনা করেন। রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন- ফাতিহাতুল কিতাব কুরআনের দুই অথবা এক তৃতীয়াংশ।

ইমাম হাকীম আর তিনি এটাকে সহীহ বলেছেন, ইমাম আবু যার আল হারুয়ী ফাযায়েলে, বায়হাকী শুআবুল ইমানে আনাস (রা) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) এক সফরে ছিলেন। এক স্থানে অবতরণ করেন। নবী কারীম (সা) এর সাথে একজন সাহাবী চলছিলেন। নবী (সা) তার দিকে মনোযোগ দিলেন এবং বললেন, তোমাকে কি কুরআনের উত্তম অংশের কথা বলবো না? রাসূলুল্লাহ (সা) তাকে সূরা ‘আলহামদুলিল্লাহি রাব্বিল আলামীন’ তিলাওয়াত করে শুনিয়ে দিলেন।
ইমাম ইবনুয যুরায়স ফাযায়িলুল কুরআনে এবং বায়হাকী শুআবুল ইমানে আনাস (রা) থেকে বর্ণনা করেন। রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন- আল্লাহ তাআলা আমার উপর অনেক অনুগ্রহ করেছেন। তার মধ্যে এটাও যে (আল্লাহ বলেন) আমি আপনাকে ফাতিহাতুল কিতাব দান করেছি। এটা আমার আরশের খাযানা হতে। অতঃপর আমি এটা আমার ও তোমার মাঝে অর্ধেক অর্ধেক বন্টন করেছি।

ইমাম ইসহাক ইবনে রাওয়াইহ তার মুসনাদে আলী (রা) থেকে বর্ণনা করেন। তাকে ফাতিহাতুল কিতাব এর ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হলো। তিনি বললেন, আমাকে আল্লাহর রাসুল (সা) বলেছেন- এই সূরা আরশের নিম্নস্থ খাযানাহ হতে নাযিল করা হয়েছে।

ইমাম দাইলামী মুসনাদুল ফিরদাউসে ইমরান ইবনে হুসাইন (রা) থেকে বর্ণনা করেন-
فَاتِحَة الْكتاب وَآيَة الْكُرْسِيّ لايقرؤهما عبد فِي دَار فتصيبهم فِي ذَلِك الْيَوْم عين إنس أَو جن
যে ব্যক্তি নিজের ঘরে সূরা ফাতিহা ও আয়াতুল কুরসী পাঠ করে, ঐ দিন তার পরিবার-পরজিন জিন ও ইনসানের বদ-নযর থেকে নিরাপদ থাকে।

ইমাম আবুশ শায়খ কিতাবুস সাওয়াবে, তাবরানী, ইবনে মারদুবিয়াহ, দায়লামী, যিয়া আল মুকাদ্দাসী আল মুখতারায় আবু উমামা (রা) থেকে বর্ণনা করেন। রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন- চারটি বিষয় আরশের নিম্নস্থ খাযানাহ হতে নাযিল হয়েছে। এই চারটি ব্যতীত আর কোন কিছুই আরশের নিম্নস্থ হতে নাযিল হয়নি। ১.উম্মুল কিতাব, ২.আয়াতুল কুরসী ৩.সূরা বাকারার শেষ আয়াত এবং ৪.সূরা আল কাউসার।

ইমাম আবু নুআইম এবং দায়লামী- আবু দারদা (রা) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন- সূরা ফাতিহা এমন ওজন সম্পন্ন যে, কুরআনের অন্যান্য আয়াত এত ওজনসম্পন্ন নয়। যদি সূরা আল ফাতিহা এক পাল্লায় রাখা হয় আর কুরআনের বাকী অংশ এক পাল্লায় রাখা হয় তবে সূরা আল ফাতিহাই কুরআন থেকে সাতগুণ বেশী ভারী হবে।

ইমাম আবু উবায়দ ফাযায়েলে হাসান থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন-
من قَرَأَ فَاتِحَة الْكتاب فَكَأَنَّمَا قَرَأَ التَّوْرَاة والانجيل والزبُور والْفرْقَان
যে ব্যক্তি সূরা ফাতিহা পাঠ করলো সে যেন তাওরাত, ইঞ্জিল ,যাবুর ও কুরআন পাঠ করলো।

ইমাম বায়হাকী শুআবুল ইমানে হাসান থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আল্লাহ তাআলা একশত চারটি কিতাব নাযিল করেছেন। অতঃপর তার সব বিদ্যা চারটি কিতাবে রেখেছেন- তাওরাত, ইঞ্জিল, যাবুর ও কুরআন। অতঃপর তাওরাত, ইঞ্জিল ও যাবুর এর জ্ঞান কুরআনে রেখেছেন। অতঃপর কুরআনের জ্ঞান মুফাসসাল সূরাগুলোতে রেখেছেন। আর মুফাসসাল সূরাগুলোর জ্ঞান সূরা আল ফাতিহাতে রেখেছেন। অতব যে ব্যক্তি সূরা আল ফাতিহার তাফসীর জেনে নিল, সে ঐ ব্যক্তির মত, যে সমস্ত নাযিলকৃত কিতাবের জ্ঞান লাভ করলো।
ইমাম ওকী তার তাফসীরে, ইবনুল আম্বারী মাসাহেফ-এ, আবুশ শায়খ আল আযমায়, আবু নুআইম হিলইয়াতে- মুজাহিদ (রহ) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, ইবলিস চারবার চিৎকার করে-
১.যখন সূরা আল ফাতিহা নাযিল হয়
২.যখন তার প্রতি লানত করা হয়
৩.যখন তাকে পৃথিবীতে নামিয়ে দেয়া হয় এবং
৪.যখন মুহাম্মদ (সা)-কে প্রেরণ করা হয়।

ইমাম ইবনুয যুরায়স মুজাহিদ (রহ) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, যখন সূরা অলহামদু লিল্লাহি রাব্বিল আলামীন নাযিল হয়, তখন ইবলিসের খুব কষ্ট হয় আর সে খুব জোড়ে চিৎকার করে এবং নিজেকে নিজে লোহা দ্বারা আঘাত করে। মুজাহিদ (রহ) বলেন, যে চিৎকার করে আর নিজেকে নিজে লোহা দ্বারা আঘাত করে সে অভিশপ্ত।

ইমাম ইবনুয যুরায়স আব্দুল আযীয বিন আর রাবী (রহ) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, যখন ফাতিহাতুল কিতাব নাযিল হয় তখন ইবলিস এমনভাবে চিৎকার মারে যেভাবে সে চিৎকার মেরেছিল তাকে লানত করার দিন।
ইমাম আবু উবায়দ- মাকহুল (রহ) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন-
أم الْقُرْآن قِرَاءَة وَمَسْأَلَة وَدُعَاء
উম্মুল কুরআন হলো কিরাআত, মাসআলাহ (সমাধান) এবং দুআ।

ইমাম আবুশ শায়খ কিতাবুস সাওয়াবে আতা (রহ) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন-
إِذا أردْت حَاجَة فاقرأ بِفَاتِحَة الْكتاب حَتَّى تختمها تقضى إِن شَاءَ الله
যখন তুমি কোন কাজের ইচ্ছা কর, তখন সূরা আল ফাতিহা শেষ পর্যন্ত পাঠ কর। এতে তোমার ঐ কাজ পূর্ণ হবে ইনশাআল্লাহ।

ইমাম ইবনে কা’নে মুজামুস সাহাবায় رَجَاء الغنوي থেকে বর্ণনা করেন। রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন-
استشفوا بِمَا حمد الله بِهِ نَفسه قبل أَن يحمده خلقه وَبِمَا مدح الله بِهِ نَفسه قُلْنَا: وماذاك يَا نَبِي الله قَالَ (الْحَمد لله) و (قل هُوَ الله أحد) فَمن لم يشفه الْقُرْآن فَلَا شفَاه الله
আরোগ্য লাভের চেষ্টা কর তার মাধ্যমে, যার মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা মাখলুকের প্রশংসা করার পূর্বেই নিজের প্রশংসা করেছেন। আরোগ্য লাভের চেষ্টা কর তার মাধ্যমে, যার দ্বারা আল্লাহ তাআলা নিজের মহত্ব বর্ণনা করেছেন। আমি আরয করলাম, হে আল্লাহর রাসূল! তা কি? তিনি (সা) বললেন, আলহামদুলিল্লাহ ও কুলহুআল্লাহ! বস্তুত কুরআন যাকে আরোগ্য প্রদান করে না আল্লাহও তাকে আরোগ্য দান করেন না।

ইমাম আবু উবায়দ- আবুল মানহাল সিয়ার বিন সালামাহ থেকে বর্ণনা করেন। একজন মুহাজির ব্যক্তি উমর (রা)-কে দেখলেন যখন তিনি তাহাজ্জুদ পড়ছিলেন। আর তিনি শুধু সূরা আল ফাতিহা পাঠ করছিলেন আর তার সাথে আর কিছু বৃদ্ধি না করে তাকবীর বলতেন, তাসবীহ পাঠ করতেন, রুকু করতেন, সিজদা করতেন। ভোরবেলা ঐ ব্যক্তি উমর (রা)-কে সবকিছু বললেন। উমর (রা) (তাকে তিরষ্কার স্বরুপ) বললেন, তোমার মায়ের জন্য দুর্ভোগ। এটা কি ফেরেশতাদের নামায নয়?
আমি বলি যে, নিশ্চয়ই ফেরেশতাদেরকে শুধু সূরা আল ফাতিহা পাঠ করার অনুমতি প্রদান করা হয়েছে। ইবনুস সালাহ আলোচনা করেছেন যে, কিরাআতুল কুরআন অর্থাৎ কুরআন তিলাওয়াত এক বিশেষ বেশিষ্ট্যপূর্ণ যা শুধু মানুষকেই প্রদান করা হয়েছে ফেরেশতাদের এই সৌভাগ্য লাভ হয়নি। তারা মানুষের মুখ থেকে কুরআন তিলাওয়াত শুনতে খুব আগ্রহী থাকে।

ইমাম ইবনে আসাকীর তারীখে দিমাশকে শাদ্দাদ ইবনে আউস (রা) থেকে বর্ণনা করেন। রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন-
إِذا أَخذ أحدكُم مضجعه ليرقد فليقرأ بِأم الْقُرْآن وَسورَة فَإِن الله يُوكل بِهِ ملكا يهب مَعَه إِذا هَب
তোমাদের কেউ যখন বিছানায় শায়িত হয় তখন তার উচিত উম্মুল কুরআন (সূরা ফাতিহা) ও অন্য একটি সূরা পাঠ করা। কেননা এমন ব্যক্তির জন্য আল্লাহ তাআলা একজন ফেরেশতা নিযুক্ত করেন, যে তার সাথে থাকে (তার হিফাযত করে)- যে পর্যন্ত না সে ঘুম থেকে জাগ্রত হয়।

ইমাম শাফিয়ী আল উম্ম-এ, ইবনে আবী শায়বাহ আল মুসান্নিফে, আহমদ তার মুসনাদে, বুখারী, মুসলিম, আবু দাউদ, তিরমিযী, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ, বায়হাকী সুনানে- উবাদাহ ইবনুস সামিত (রা) থেকে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন-
لَا صَلَاة لمن لم يقْرَأ بِفَاتِحَة الْكتاب
যে ফাতিহাতুল কিতাব পাঠ করে না, তার নামায হয় না।

ইমাম দারাকুতনী এবং হাকীম- উবাদাহ ইবনুস সামিত (রা) থেকে বর্ণনা করেন। রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন- উম্মুল কুরআন হলো অপর সবকছিুর (সব আয়াতের) প্রতিদান কিন্তু অপর সবকিছুর প্রতিদান উম্মুল কুরআন নয়।

ইমাম আহমদ, বায়হকী তার সুনানে- আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আমাকে রাসূলুল্লাহ (সা) আদেশ করেছেন (সূরা ফাতিহা পাঠ করতে এবং বলেছেন)- প্রত্যেক ঐ নামায যার মধ্যে সূরা ফাতিহা পাঠ করা হয়নি তা অসম্পূর্ণ।

ইমাম মালিক মুয়াত্তায়, সুফিয়ান ইবনে উয়াইনাহ তার তাফসীরে, আবু উবায়দাহ ফাযায়িলে, ইবনে আবী শায়বাহ, আহমদ তার মুসনাদে, বুখারী জুযউল কিরাআত-এ, মুসলিম সহিহ-এ, আবু দাউদ, তিরমিযী, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ, ইবনে জারীর, ইবনুল আম্বারী তার মাসাহেফে, ইবনে হিব্বান, দারাকুতনী, বায়হাকী সুনানে- আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন- যে ব্যক্তি কোন সালাত আদায় করলো আর তাতে উম্মুল কুরআন (সূরা ফাতিহা) পাঠ করলো না, তবে তার নামায অসম্পূর্ণ, অসম্পূর্ণ, অসম্পূর্ণ, তিনবার বললেন।
আবুস সায়েব বলেন, আমি আরয করলাম, হে আবু হুরায়রা! যদি আমি ইমামের পিছনে নামায পড়ি? তিনি আমার হাত ঝাঁকুনী দিয়ে বললেন, হে পারসী! তুমি তখন তা মনে মনে পড়বে। আমি রাসূলুল্লাহ (সা)-কে বলতে শুনেছি, মহান আল্লাহ বলেন, আমি সালাতকে (অর্থাৎ সূরাহ ফাতিহাকে) আমার ও আমার বান্দার মধ্যে দুই ভাগ করে নিয়েছি। যার এক ভাগ আমার জন্য, আরেক ভাগ আমার বান্দার জন্য এবং আমার বান্দা আমার কাছে যা চায়, তাকে তা-ই দেয়া হয়।
রাসূলুল্লাহ (সা) বললেন, পাঠ করো। বান্দা যখন বলে- الْحَمد لله رب الْعَالمين তখন আল্লাহ তাআলা বলেন, আমার বান্দা আমার প্রশংসা করেছে।
অতঃপর বান্দা যখন বলে- الرَّحْمَن الرَّحِيم তখন আল্লাহ তাআলা বলেন, আমার বান্দা আমার গুণগান করেছে।
বান্দা যখন বলে- مَالك يَوْم الدّين তখন আল্লাহ তাআলা বলেন, আমার বান্দা আমাকে সম্মান প্রদর্শন করেছে।
অতঃপর বান্দা যখন বলে- إياك نعْبد وَإِيَّاك نستعين তখন আল্লাহ তাআলা বলেন, এটা আমার ও আমার বান্দার মধ্যে সীমিত এবং আমার বান্দা যা প্রার্থনা করেছে- তাই তাকে দেয়া হবে।
অতঃপর বান্দা যখন বলে- اهدنا الصِّرَاط الْمُسْتَقيم صِرَاط الَّذين أَنْعَمت عَلَيْهِم غير المغضوب عَلَيْهِم وَلَا الضَّالّين তখন আল্লাহ তাআলা বলেন, এর সবই আমার বান্দার জন্য। আমার বান্দা আমার কাছে যা চেয়েছে, তাকে তাই দেয়া হবে।

ইমাম দারাকুতনী এবং বায়হাকী যয়ীফ সনদে আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন- মহান আল্লাহ বলেন, আমি সালাতকে (অর্থাৎ সূরাহ ফাতিহাকে) আমার ও আমার বান্দার মধ্যে দুই ভাগ করে নিয়েছি। যখন বান্দা বলে بِسم الله الرَّحْمَن الرَّحِيم তখন আল্লাহ তাআলা বলেন, আমার বান্দা আমাকে স্মরণ করেছে।
বান্দা যখন বলে- الْحَمد لله رب الْعَالمين তখন আল্লাহ তাআলা বলেন, আমার বান্দা আমার প্রশংসা করেছে।
অতঃপর বান্দা যখন বলে- الرَّحْمَن الرَّحِيم তখন আল্লাহ তাআলা বলেন, আমার বান্দা আমার গুণগান করেছে।
বান্দা যখন বলে- مَالك يَوْم الدّين তখন আল্লাহ তাআলা বলেন, আমার বান্দা আমাকে সম্মান প্রদর্শন করেছে।
অতঃপর বান্দা যখন বলে- إياك نعْبد وَإِيَّاك نستعين তখন আল্লাহ বলেন, এটা আমার ও আমার বান্দার মধ্যে অর্ধেক অর্ধেক। এই সূরার বাকী অংশ বান্দার জন্য। আমার বান্দা যা প্রার্থনা করেছে- তাই তাকে দেয়া হবে। আর তার জন্য তা-ই যা সে প্রার্থনা করেছে।

ইমাম ইবনে জারীর ইবন আবী হাতিম তাদের নিজ নিজ তাফসীরে জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ (রা) থেকে বর্ণনা করেন। রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন- মহান আল্লাহ বলেন, আমি সালাতকে (অর্থাৎ সূরাহ ফাতিহাকে) আমার ও আমার বান্দার মধ্যে ভাগ করে নিয়েছি। অতএব বান্দা যা প্রর্থনা করে তা তার জন্যই।
বান্দা যখন বলে- الْحَمد لله رب الْعَالمين তখন আল্লাহ তাআলা বলেন, আমার বান্দা আমার প্রশংসা করেছে।
অতঃপর বান্দা যখন বলে- الرَّحْمَن الرَّحِيم তখন আল্লাহ তাআলা বলেন, আমার বান্দা আমার গুণগান করেছে।
অতঃপর বলেন, এটা আমার জন্য আর বাকীগুলো তার জন্য।

ইমাম তাবরানী আল অউসাতে উবাই ইবনে কা’ব (রা) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) ফাতিহাতুল কিতাব তিলাওয়াত করেন। অতঃপর বলেন, তোমাদের প্রতিপালক বলেন, হে ইবনে আদম! আমি তোমার প্রতি সাত আয়াত নাযিল করেছি। তিনটি তোমার জন্য, তিনটি আমার জন্য, আর একটি আমাদের উভয়ের জন্য। যা আমার জন্য তা হলো-
الْحَمد لله رب الْعَالمين الرَّحْمَن الرَّحِيم مَالك يَوْم الدّين
আর যা আমাদের উভয়ের জন্য তা হলো-
إياك نعْبد وَإِيَّاك نستعين
এটা তোমার পক্ষ থেকে ইবাদত আর আমার পক্ষ থেকে সাহায্য।
আর যা তোমার জ্য তা হলো-
اهدنا الصِّرَاط الْمُسْتَقيم صِرَاط الَّذين أَنْعَمت عَلَيْهِم غير المغضوب عَلَيْهِم وَلَا الضَّالّين

 

⏺️⏺️⏺️

 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to top button
error: Content is protected !!