তাফসীর আদ দুররে মানসূর- সূরা আল বাকারাহ ১২৪
وَإِذِ ابْتَلَى إِبْرَاهِيمَ رَبُّهُ بِكَلِمَاتٍ فَأَتَمَّهُنَّ قَالَ إِنِّي جَاعِلُكَ لِلنَّاسِ إِمَامًا قَالَ وَمِنْ ذُرِّيَّتِي قَالَ لَا يَنَالُ عَهْدِي الظَّالِمِينَ (124)
১২৪.এবং যখন তোমার প্রতিপালক ইবরাহীমকে কতিপয় বাক্য দ্বারা পরীক্ষা করেছিলেন আর সেগুলো তিনি পূর্ণ করেছিলেন। আল্লাহ বললেন, আমি তোমাকে মানব জাতির নেতা করব। তিনি আরয করলেন, আমার বংশধরের মধ্য হতেও (নেতা করুন)। আল্লাহ বললেন, আমার প্রতিশ্রুতি যালিমদের জন্য প্রজোয্য নয়।
ইমাম আব্দুর রাযযাক, আব্দ ইবন হুমায়দ, ইবনে জারীর, ইবনুল মুনযির, ইবনে আবী হাতিম, বায়হাকী তার সুনান এ হযরত ইবনে আব্বাস (রা) থেকে وَإِذ ابتلى إِبْرَاهِيم ربه بِكَلِمَات প্রসঙ্গে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আল্লাহ তাআলা ইবরাহীম (আ)-কে তাহারাত বা পবিত্রতার দ্বারা পরীক্ষা করেছেন। পাঁচটি বিষয়ের সম্পর্ক মাথার সাথে। আর পাঁচটি বিষয়ের সম্পর্ক পুরো শরীরের সাথে। মাথার সাথে সম্পর্কিত পাঁচটি বিষয় হলো- মোচ খাটো করা, কুলি করা, নাকে পানি দিয়ে পরিষ্কার করা, মিসওয়াক করা এবং চুল আচড়ানো। আর শরীরের সাথে সম্পর্কিত বিষয় হলো- নখ কাটা, নাভীর নিচের লোম পরিষ্কার করা, খাতনা করা, বগলের লোম পরিষ্কার করা এবং পায়খানা ও পেশাবের স্থান পানি দ্বারা ধৌত করা।
ইমাম ইবনে ইসহাক, ইবন আবী হাতিম হযরত ইবনে আব্বাস (রা) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, ঐ বাক্যাবলী যার দ্বারা আল্লাহ তাআলা হযরত ইবরাহীম (আ)-কে পরীক্ষা করেছেন এবং পূর্ণতায় পৌছিয়েছেন তা এই- আল্লাহ তাআলা যখন তাকে তার সম্প্রদায়কে ছাড়ার নির্দেশ দেন তখন তিনি তার সন্তুষ্টির জন্য তার কওমকে ছেড়ে দেন। আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য নমরুদের উপর দলীল পেশ করা এমন অবস্থায় যে তার সাথে লোকেদের মতবিরোধ ছিল। আগুনে নিক্ষেপ হওয়ার ব্যাপারে সবর করা যাতে তিনি তার সন্তুষ্টির জন্য নিজেকে জালিয়ে দিবেন। তার নিজ দেশ থেকে হিজরত করা যখন আল্লাহ তাকে দেশ ছাড়ার নির্দেশ প্রদান করেন। আল্লাহ তাআলা তাকে মেহমানদারী করানোর নির্দেশ প্রদান করেন অতঃপর এর উপর তার দৃঢ় থাকা। আর তাকে নিজ সন্তানের যবেহ করা ব্যাপারে পরীক্ষা করা হয়েছে। যখন তিনি এই সমস্ত বিষয় থেকে উত্তীর্ণ হয়েছেন তখন আল্লাহ তাআলা তাকে সমস্ত মুসীবত থেকে নাজাত প্রদান করেছেন। আল্লাহ তাআলা বললেন, আমার সামনে মাথা ঝুঁকিয়ে দাও। তখন তিনি বললেন,
أسلمت لرب الْعَالمين
আমি সমস্ত জগতের প্রতিপালকের সামনে নিজের মাথা ঝুঁকিয় দিলাম।– সূরা আল বাকারা ১৩১
ইমাম ইবনে জারীর, ইবনুল মুনযির এবং ইবনে আবী হাতিম হযরত ইবনে আব্বাস (রা) থেকে বর্ণনা করেন। ঐ কালিমা যার দ্বারা হযরত ইবরাহীম (আ)-কে পরীক্ষা করা হয়েছে তা ১০টি। ছয়টি মানুষের ভিতরের সাথে সম্পর্কিত। আর চারটি বাহিরের সাথে। ভিতরের সাথে সম্পর্কিত ছয়টি হলো- নাভীর নিচের লোম পরিষ্কার করা, বগলের লোম পরিষ্কার করা, নখ কাটা, মোচ কাটা, মিসওয়াক করা এবং জুমুআর দিন গোসল করা। আর চারটি যার সম্পর্ক বাহিরের সাথে, তা হলো বায়তুল্লাহ শরীফের হজ করা, সাফা ও মারওয়ার মাঝে দৌড়ানো, রমী জিমার করা এবং তাওয়াফে যিয়ারত করা
ইমাম ইবনে আবী শায়বাহ, ইবনে জারীর, ইবন আবী হাতিম, হাকীম, ইবনে মারদুবিয়া এবং ইবনে আসাকির হযরত ইবনে আব্বাস (রা) থেকে বর্ণনা করেন। এই দীনের মধ্যে যাকেই পরীক্ষা করা হয়েছে ইবরাহীম (আ) ব্যতীত কেউ উত্তীর্ণ হতে পারেন নি। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-
وَإِذ ابتلى إِبْرَاهِيم ربه بِكَلِمَات فأتمهن
জিজ্ঞাসা করা হলো কালিমাত বা বাক্যাবলী দ্বারা কি উদ্দেশ্য? তিনি বললেন, ইসলামের তিনটি অংশ। দশটি সূরা বারাআতে – التائبون العابدون থেকে আয়াতের শেষ পর্যন্ত। দশটি সূরা قد أَفْلح এবং سَأَلَ سَائل এ وَالَّذين يصدقون بِيَوْم الدّين পর্যন্ত। আর দশটি সূরা আহযাব এ إِن الْمُسلمين وَالْمُسلمَات আয়াতের শেষ পর্যন্ত। । ইবরাহীম (আ) এই সবকিছু পূর্ণ করেন। অতএব আল্লাহ তাআলা তার জন্য দায়মুক্তি লিখে দেন। তিনি ইরশাদ করেন-
وَإِبْرَاهِيم الَّذِي وفى
আর ইবরাহীম যে পুরোপুরিভাবে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে গেছে।– সূরা নাজম ৩৭
ইমাম আব্দুর রাযযাক, আব্দ ইবনে হুমায়দ, ইবনে জারীর, ইবনুল মুনযির এবং হাকীম হযরত ইবনে আব্বাস (রা) থেকে وَإِذ ابتلى إِبْرَاهِيم ربه بِكَلِمَات فأتمهن বর্ণনা করেন।তিনি বলেন, এর মধ্যে হজও ছিল।
ইমাম ইবনে আবী শায়বাহ এবং ইবনে জারীর মুজাহিদ (রহ) থেকে এই আয়াত প্রসঙ্গে বর্ণনা করেন যে, কালিমা দ্বারা উদ্দেশ্য এর পরের আয়াত।
ইমাম ইবনে আবী শায়বাহ, ইবনে জারীর হযরত হাসান থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আল্লাহ তাআলা তাকে তারকা দ্বারা পরীক্ষা করেন আর তিনি এর উপর সন্তুষ্ট থাকেন। চন্দ্র দ্বারা পরীক্ষা করেন আর তিনি এর উপর সন্তুষ্ট থাকেন। সূর্য দ্বারা পরীক্ষা করেন আর তিনি এর উপর সন্তুষ্ট থাকেন। খাতনা দ্বারা পরীক্ষা করেন আর তিনি এর উপর সন্তুষ্ট থাকেন। নিজের সন্তান দ্বারা পরীক্ষা করেন আর তিনি এর উপর সন্তুষ্ট থাকেন।
ইমাম ইবনে জারীর হযরত ইবনে আব্বাস (রা) থেকে فأتمهن এর অর্থ বর্ণনা করেন فأدّاهن অর্থাৎ তিনি এই বাক্যগুলি পূর্ণ করেন।
ইমাম ইবনে আবী হাতিম হযরত আতা থেকে বর্ননা করেন, রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন-
من فطْرَة إِبْرَاهِيم السِّوَاك
মিসওয়াক হযরত ইবরাহীম (আ) এর ফিতরাত বা আদর্শ থেকে।
ইমাম ইবনে আবী হাতিম হযরত মুজাহিদ (রহ) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন-
من فطْرَة إِبْرَاهِيم غسل الذّكر والبراجم
যিকির এবং হাত ও পায়ের জোড়াসমূহ ধৌত করা ইবরাহীম (আ) এর ফিতরাত বা আদর্শ থেকে।
ইমাম ইবন আবী শায়বাহ আল মুসান্নিফ-এ মুজাহিদ (রহ) থেকে বর্ণনা করেন। ছয়টি বিষয় হযরত ইবরাহীম (আ) এর ফিতরত থেকে। মোচ কাটা, মিসওয়াক করা, চুল আঁচড়ান, নখ কাটা, ইস্তিঞ্জা করা, নাভীর নিচের পশম কাটা। তিনি বলেন, তিনটির সম্পর্ক মাথার সাথে আর তিনটির সম্পর্ক শরীরে সাথে।
ইমাম ইবনে আবী শায়বাহ, বুখারী, মুসলিম, আবু দাউদ, তিরমিযী, নামাঈ, ইবনে মাজাহ হযরত আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা)-কে বলতে শুনেছি
الْفطْرَة خمس أَو خمس من الْفطْرَة الْخِتَان والاستحداد وقص الشَّارِب وتقليم الْأَظْفَار ونتف الآباط
পাঁচটি বিষয় ফিতরাত এর অন্তর্ভুক্ত। খাতনা করা, নাভীর নিচের লোম পরিষ্কার করা, মোচ কাটা, নখ কাটা এবং বগলের লোম নিষ্কাশন করা।
ইমাম বুখারী ও নসাঈ হযরত ইবনে উমর (রা) থেকে বর্ণনা করেন। রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন-
من الْفطْرَة حلق الْعَانَة وتقليم الْأَظْفَار وقص الشَّارِب
নাভীর নিচের পশম পরিষ্কার করা, নখ কাটা এবং মোচ কাটা ফিতরাত এর অন্তর্ভুক্ত।
ইমাম ইবনে আবী শায়বাহ, মুসলিম, আবু দাউদ, তিরমিযী, নাসাঈ এবং ইবনে মাজাহ হযরত আয়িশা (রা) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেছেন, রাসুলূল্লাহ্ (সা) ইরশাদ করেছেন, দশটি কাজ স্বভাবজাত- ১.গোঁফ ছোট করা ২.দাড়ি লম্বা করা ৩.মিসওয়াক করা ৪.পানি দ্বারা নাক পরিষ্কার করা ৫.নখ কাটা ৬.আংগুলের গিরা ও জোড়াসমূহ ধৌত করা ৭.বগলের পশম পরিষ্কার করা ৮.নাভির নীচের লোম পরিস্কার করা ৯.পানির দ্বারা ইস্তিঞ্জা করা। রাবী যাকারিয়া বলেন, মূসআব বলেছেন, আমি দশমটি ভুলে গিয়েছি, তবে সম্ভবত তা হল কুলি করা।
ইমাম ইবনে আবী শায়বাহ, আহমদ, আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ হযরত আম্মার ইবনে ইয়াসির (রা) থেকে বর্ণনা করেন। রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন- কুলি করা, পানি দিয়ে নাক পরিষ্কার করা, মিসওয়াক করা, মোচ কাটা, নখ কাটা, বগলের লোম পরিষ্কার করা, নাভির নিচের লোম পরিষ্কার করা, আঙ্গুলের সংযোগস্থলগুলো ধৌত করা, শৌচ করা, খাতনা করা ইত্যাদি ফিতরাত বা মানব স্বভাবের অন্তর্ভুক্ত।
ইমাম বাযযার এবং তাবরানী হযরত আবু দারদা (রা) থেকে বর্ণনা করেন। রাসূলুল্লাহ (সা) ইশাদ করেন-
الطهارات أَربع قصّ الشَّارِب وَحلق الْعَانَة وتقليم الْأَظْفَار والسواك
চারটি বিষয়ের পবিত্রতার অন্তুর্ভুক্ত। মোচ কাটা, নাভির নিচের লোম পরিষ্কার করা নখ কাটা এবং মিসওয়াক করা।
ইমাম মুসলিম, আবু দাউদ, তিরমিযী, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ হযরত আনাস (রা) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) আমাদের জন্য সময় নির্ধারণ করে দিয়েছেন অন্তত চল্লিশ দিনে একবার মোঁচ ছাঁটতে, নখ কাটতে, নাভির নীচের লোম পরিষ্কার করতে এবং বগলের লোম পরিষ্কার করতে।
ইমাম আহমদ এবং বায়হাকী শুআবুল ইমানে হযরত ইবনে আব্বাস (রা) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি নবী কারীম (সা)-কে আরয করেন। জিবরাইল (আ) আপনার নিকট আসতে দেরি করলেন কেন? রাসূলুল্লাহ (সা) বললেন, সে আমার নিকট আসতে কেন দেরী করবে না? যেখানে তোমরা আমার আশ-পাশে অবস্থান কর আর না (সময়মত) মিসওয়াক কর, না নখ কাট, না মোঁচ কাট আর না আঙ্গুলের জোড়াসমূহ ধৌত কর।
ইমাম তিরিমিযী হযরত ইবনে আব্বাস (রা) থেকে বর্ণনা করেন। আর তিনি এটাকে হাসান বলেছেন। তিনি বলেন,
كَانَ النَّبِي صلى الله عَلَيْهِ وَسلم يقص أَو يَأْخُذ من شَاربه قَالَ: لِأَن خَلِيل الرَّحْمَن إِبْرَاهِيم يَفْعَله
নবী (সা) তার মোচ কাটতেন আর বলতেন রহমানের খলীল ইবরাহীম (আ) এমন করতেন।
ইমাম ইবনে আবী শায়বাহ, আহমদ, তিরমিযী আর তিনি এটাকে সহিহ বলেছেন এবং নাসাঈ হযরত যায়দ ইবনে আরকাম (রা) থেকে বর্ণনা করেন। রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন-
من لم يَأْخُذ من شَاربه فَلَيْسَ منا
যে মোচ কাটে না সে আমাদের মধ্য হতে নয়।
ইমাম মালিক, বুখারী, মুসলিম, আবু দাউদ এবং তিরমিযী হযরত ইবনে উমর (রা) থেকে বর্ণনা করেন্। তিনি নবী কারীম (সা) থেকে রিওয়ায়াত করেন। তিনি বলেছেন,
خالفوا الْمُشْركين وفروا اللحى وأحفوا الشَّوَارِب
তোমরা মুশরিকদের বিরোধীতা কর- দাড়ি লম্বা কর এবং মোচ খাটো কর।
ইমাম বাযযার হযরত আনাস (রা) থেকে বর্ণনা করেন। নবী কারীম (সা) ইরশাদ করেন-
خالفوا الْمَجُوس جزوا الشَّوَارِب وَاعْفُوا اللحى
তোমরা মাজুসীদের (অগ্নিপূজারীদের) বিরোধিতা কর। মোচ কাট আর দাড়ি লম্বা কর।
ইমাম ইবনে আবী শায়বাহ হযরত উবাযদুল্লাহ বিন আব্দুল্লাহ বিন উবায়দুল্লাহ (রহ) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, এক মাজুসী ব্যক্তি নবী কারীম (সা) এর নিকট আসলেন। যার দাড়ি মুণ্ডানো ছিল আর মোচ লম্বা ছিল। নবী কারীম (সা) তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, এটা কি? সে বললো এটা আমাদের দীন বা রীতি। নবী (সা) বললেন, কিন্তু আমাদের দীন হলো মোচ খাটো করা এবং দাড়ি লম্বা করা।
ইমাম বাযযার হযরত আয়িশা (রা) থেকে বর্ণনা করেন। রাসূলুল্লাহ (সা) এক ব্যক্তিকে দেখলেন যে, তার মোচ লম্বা। তিনি (সা) বললেন, আমাকে কাঁচি আর মিসওয়াক দাও। নবী (সা) মিসওয়াক তার ঠোটের উপর ধরলেন আর মোচের বাকী অংশ কেটে ফেললেন।
ইমাম বাযযার, তাবরানী আল আউসাতে, বায়হাকী শুআবুল ইমানে হাসান সনদে হযরত আ্ববু হুরায়রা (রা) থেকে বর্নণা করনে। রাসূলুল্লাহ (সা) জুমুআর দিন নমাযে যাওয়ার পূর্বে নখ আর মোচ কাটতেন।
ইমাম ইবনে আদী যয়ীফ সনদে হযরত আনাস (রা) থেকে বর্ণনা করেন। রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন- পুরুষ প্রত্যেক চল্লিশ দিনের মধ্যে নাভির নিচের পশম পরিষ্কার করবে এবং বগলের লোম পরিষ্কার করবে যখন তা প্রকাশ পায়। আর নিজের মোচ লম্বা করবে না। আর এক জুমুআ থেকে অপর জুমুআর মধ্যে নখ কাটবে।
ইমাম ইবনে আসাকির যয়ীফ সনদের সাথে জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ (রা) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন-
قصوا أظافيركم فَإِن الشَّيْطَان يجْرِي مَا بَين اللَّحْم وَالظفر
নিজের নখ কাট। কারণ শয়তান নখ ও মাংসের মাঝে চলাফেরা করে।
ইমাম তাবরানী যয়ীফ সনদে ওয়াবিসা বিন মাবাদ থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা)-কে প্রত্যেক বিষয়ের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করেছি। এমনকি নখের মধ্যে যে ময়লা থাকে তার বিষয়েও। তিনি (আমাকে একটি মূলনীতি) বলেন-
دع مَا يريبك إِلَى مَا لَا يريبك
ঐ বিষয় পরিত্যাগ কর যা তোমাকে সন্দেহ-সংশয়ে পতিত করে আর তা অবলম্বন কর যা তোমাকে সন্দেহ সংশয়ে নিপতিত করে না।
ইমাম বাযযার হযরত ইবনে মাসউদ (রা) থেকে বর্ণানা করেন। রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন- আমার কেন (নামাযে) সন্দে হবে না। যখন তোমাদের কেউ (নামাযের মধ্যে) আঙ্গুল ও নখের ময়লা খুটতে থাক।
ইমাম বায়হাকী শুআবুল ইমানে কায়স বিন হাযেম থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন নবী কারীম (সা) নামায পড়েন আর তার মনে সন্দেহ উদ্রেক হয়। তাকে জিজ্ঞাসা করা হলে বলেন, আমার মনে কেন সন্দেহ উদ্রেক হবে না, যেখানে তোমাদের কেউ কেউ (নামাযের মধ্যে) আঙ্গুল ও নখের ময়লা খুটতে থাক।
[মিসওয়াক প্রসঙ্গ]
ইমাম ইবনে মাজাহ এবং বায়হাকী আবূ উমামাহ (রা) থেকে বর্ণনা করেন। রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন- তোমরা মিসওয়াক করো। কেননা মিসওয়াক মুখ পবিত্র ও পরিষ্কার করার উপায় এবং মহান প্রভুর সন্তুষ্টি লাভের উপায়। আমার কাছে যখনই জিবরাইল (আ) এসেছেন তখনই আমাকে মিসওয়াক করার উপদেশ দিয়েছেন। এমনকি আমার আশঙ্কা হয় যে, তা আমার ও আমার উম্মাতের জন্য ফরয করা হবে। আমি যদি আমার উম্মাতের জন্য কষ্টকর হওয়ার আশঙ্কা না করতাম, তাহলে তাদের জন্য তা ফরয করে দিতাম। আমি এত বেশি মিসওয়াক করি যে, আমার মাড়িতে ঘা হওয়ার আশঙ্কা হয়।
ইমাম তাবরানী যয়ীফ সনদে হযরত ইবনে আব্বাস (রা) থেকে বর্ননা করেন। রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন-
السِّوَاك مطهرة للفم مرضاة للرب ومجلاة لِلْبَصَرِ
মিসওয়াক করা মুখ পবিত্র ও পরিষ্কারের উপায়, এবং প্রতিপালকের সন্তুষ্টি লাভের উপায় এবং দৃষ্টিশক্তি প্রখর করার উপায়।
ইমাম ইবনে আদী এবং বায়হাকী শুআবুল ইমানে হযরত ইবনে আব্বাস (রা) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন- তোমাদের জন্য মিসওয়াক করা আবশ্যক। কেননা এটা মুখ পরিষ্কার করে। প্রতিপালকের সন্তুষ্টি লাভের কারণ। ফেরেশতাদের আনন্দের কারণ। নেকী বৃদ্ধি করে এবং এটা সুন্নাত। চোখের দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করে। দাতের হলদেটেভাব দূর করে। মাড়ি মজবুত করে। কফ দূর করে এবং মুখের সুগন্ধ বৃদ্ধি করে।
ইমাম বুখারী, মুসলিম, আবু দাউদ, নাসাঈ এবং ইবনে মাজাহ হযরত আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণনা করেন। রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন-
لَوْلَا أَن أشق على أمتِي لأمرتهم بِالسِّوَاكِ عِنْد كل صَلَاة
যদি আমি আমার উম্মতের জন্য কষ্টদায়ক হওয়ার আশঙ্কা না করতাম তাহলে প্রত্যেক নামাযের সময় তাদেরকে মিসওয়াক করার নির্দেশ দিতাম।
ইমাম আহমদ হাসান সনদে হযরত আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণনা করেন। রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন-
لَوْلَا أَن أشق على أمتِي لأمرتهم عِنْد كل صَلَاة بِوضُوء وَعند كل وضوء بسواك
যদি আমি আমার উম্মতের জন্য কঠিন হওয়ার আশঙ্কা না করতাম তাহলে প্রত্যেক নামাযের সময় তাদেরকে ওযু করার নির্দেশ দিতাম। আর ওযুর সময় মিসওয়াক করার নির্দেশ দিতাম।
ইমাম বাযযার, আবু ইয়ালা এবং তাবরানী যয়ীফ সনদে হযরত আয়িশা (রা) থেকে বর্ণনা করেন। রাসূলু্লাহ (সা) ইরশাদ করেন-
مَا زَالَ النَّبِي صلى الله عَلَيْهِ وَسلم يذكر بِالسِّوَاكِ حَتَّى خشينا أَن ينزل فِيهِ قُرْآن
নবী কারীম (সা) সব সময় মিসওয়াকের কথা বলতেন। এমনকি আমরা এ ব্যাপারে কুরআন নাযিল হওয়ার আশঙ্কা করলাম (যদি তা ফরয হয়ে যায়)।
ইমাম আহমদ, আল হার্স ইবনে উসামাহ, বাযযার, আবু ইয়ালা, ইবনে খুযায়মাহ, দারাকুতনী, হাকীম আর তিনি এটাকে সহিহ বলেছেন, আবু নুআইম কিতাবুস সিওয়াক–এ, বায়হাকী শুআাবুল ইমানে হযরত আয়িশা (রা) থেকে বর্ণনা করেন। রাসূলু্লাহ (সা) ইরশাদ করেন-
فضل الصَّلَاة بسواك على الصَّلَاة بِغَيْر سواك سَبْعُونَ ضعفا
মিসওয়াক করে নামায পড়া, মিসওয়াক না করে নামায পড়ার চাইতে সত্তর গুণ বেশী ফযীলত রাখে।
ইমাম বাযযার, বায়হাকী উত্তম সনদে হযরত আয়িশা (রা) থেকে বর্ণনা করেন। রাসূলু্লাহ (সা) ইরশাদ করেন-
رَكْعَتَانِ بسواك أفضل من سبعين رَكْعَة بِغَيْر سواك
মিসওয়াক করে দুই রাকাত নামায মিসওয়াক ব্যতীত সত্তর রাকাতের চাইতে উত্তম।
ইমাম আহমদ এবং আবু ইয়ালা উত্তম সনদে হযরত ইবনে আব্বাস (রা) থেকে বর্ণনা করেন। রাসূলু্লাহ (সা) ইরশাদ করেন-
لقد أمرت بِالسِّوَاكِ حَتَّى ظَنَنْت أَنه ينزل عليّ بِهِ قُرْآن أَو وَحي
আমাকে মিসওযাক করার নির্দেশ দেয়া হযেছে। এমনকি আমি ধারণা করতে লাগলাম যে, এ ব্যাপারে কুরআন বা ওহী নাযিল হয়ে যাবে।
ইমাম আহমদ আবু ইয়ালা এবং তাবরানী যয়ীফ সনদে হযরত ইবনে আব্বাস (রা) থেকে বর্ণনা করেন- রাসূলু্লাহ (সা) মিসওয়াক করা ব্যতীত শয়ন করতেন না এবং ঘুম থেকে উঠে সর্ব-প্রথম মিসওয়াক করতেন।
ইমাম তাবরানী হাসান সনদে হযরত উম্মে সালামা (রা) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন,রাসূলু্লাহ (সা) ইরশাদ করেন-
مازال جِبْرِيل يوصيني بِالسِّوَاكِ حَتَّى خفت على أضراسي
জিবরাইল (আ) আমাকে সর্বদা মিসওয়াক করার নির্দেশ দিতেন। এমনকি আমি আমার দাঁতের মাড়ির ক্ষয়ের আশঙ্কা করতাম
ইমাম বাযযার, তিরমিযী, হাকীম নাওয়াদিরুল উসূলে কালীহ বিন আব্দুল্লাহ খাতামী থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, রাসূলু্লাহ (সা) ইরশাদ করেন-
خمس من سنَن الْمُرْسلين الْحيَاء والحلم والحجامة والسواك والتعطر
পাঁচটি বিষয় রাসূলদের সুন্নাত। লজ্জা, সহনশীলতা, শিঙ্গা লাগানো, মিসওয়াক করা এবং সুগন্ধি ব্যবহার করা।
ইমাম তাবরানী আল আউসাতে হযরত আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন,
كَانَ رَسُول الله صلى الله عَلَيْهِ وَسلم لَا ينَام لَيْلَة وَلَا ينتبه إِلَّا اسْتنَّ
রাসূলুল্লাহ (সা) মিসওয়াক করা ব্যতীত ঘুমাতেন না আর যখন জাগ্রত হতেন তখন প্রথমে মিসওয়াক করতেন।
ইমাম তাবরানী হাসন সনদে হযরত যায়দ বিন খালিদ আল জুহানী থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন,
مَا كَانَ رَسُول الله صلى الله عَلَيْهِ وَسلم يخرج من بَيته لشَيْء من الصَّلَوَات حَتَّى يستاك
নবী কারীম (সা) যখন ঘর থেকে নামায পড়তে বের হতেন তখন মিসওয়াক করে নিতেন।
ইমাম ইবনে আবী শায়বাহ এবং আবু দাউদ যয়ীফ সনদে হযরত আয়িশা (রা) থেকে বর্ণনা করেন। রাসূলুল্লাহ (সা) দিনে বা রাতে ঘুম থেকে উঠার পর ওযুর করার আগে মিসওয়াক করতেন।
ইমাম ইবনে আবী শায়বাহ, মুসলিম, আবু দাউদ, নাসাঈ এবং ইবন মাজাহ হযরত আয়িশাহ (রা) থেকে বর্ণনা করেন্। তাকে জিজ্ঞাসা করা হলো যে, রাসূলু্লোহ (সা) ঘরে প্রবেশ করে সর্বপ্রথম কি করতেন? তিনি বললেন,
كَانَ إِذا دخل يبْدَأ بِالسِّوَاكِ
নবী (সা) যখন ঘরে প্রবেশ করতেন তথন প্রথমে মিসওয়াক করতেন।
ইমাম ইবনে মাজাহ হযরত আলী (রা) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন-
إِن أَفْوَاهكُم طرق لِلْقُرْآنِ فطيبوها بِالسِّوَاكِ
তোমাদের মুখ হলো কুরআনের প্রবেশ পথ অতএব এটা মিসওয়াক দ্বারা পবিত্র কর।
ইমাম ইবনুস সুন্নি এবং আবু নুআইম তিব্বুন নবীতে হযরত আলী (রা) থেকে বর্ণনা করেন। রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন-
إِن السِّوَاك ليزِيد الرجل فصاحة
মিসওয়াক ব্যক্তির বাকপটুতা বৃদ্ধি করে।
ইমাম ইবনুস সুন্নি হযরত আলী (রা) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, কুরআন পাঠ করা এবং মিসওয়াক করা কফ (এবং কফের প্রভাবজনিত রোগ-ব্যাধি) উপশম করে।
ইমাম আবু নুআইম মারিফাতুস সাহাবায় হযরত সামুভিয়া (রা) থেকে বর্ণনা করেন। রাসূলুল্লাহ কোন রাতে শয়ন করতেন না যে পর্যন্ত না মিসওয়াক করে নিতেন।
ইমাম ইবনে আবী শায়বাহ মুসান্নিফ এ, আবু নুআইম কিতাবুস সিওয়াক-এ যয়ীফ সনদে আবু আতিক থেকে আর তিনি হযরত জাবির (রা) থেকে বর্ণনা করেন। জাবির (রা) বিছানায় যাওযার পূর্বে, ঘুম থেকে উঠার পর এবং নামায পড়তে যাওয়ার সময় মিসওয়াক করতেন। আমি বললাম, আপনি নিজেকে কষ্ট দিচ্ছেন। তিনি বললেন, আমাকে উসামা (রা) বলেছেন যে, নবী কারীম (সা) এই সময়গুলোতে মিসওয়াক করতেন।
ইমাম আবু নুআইম হাসান সনদে আব্দুল্লাহ ইবনে আমর থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন-
لَوْلَا أَن أشق على أمتِي لأمرتهم أَن يستاكوا بالأسحار
আমি আমার উম্মতের জন্য কষ্টদায়ক হওয়ার আশঙ্কা না করলে আমি তাদেরকে সাহরির সময় মিসওয়াক করার নির্দেশ দিতাম।
ইমাম তাবরানী আল আউসাতে হাসান সনদে হযরত আলী (রা) থেকে বর্ণনা করেন। রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন-
لَوْلَا أَن أشق على أمتِي لأمرتهم بِالسِّوَاكِ مَعَ كل وضوء
যদি আমার উম্মতের জন্য কষ্টের আশঙ্কা না হত তবে ওযুর সাথে মিসওয়াক করার নির্দেশ দিতাম।
ইমাম শাফিয়ী, ইবনে আবী শায়বাহ, আহমদ, নাসাঈ, আবু ইয়ালা, ইবনে খুযায়মাহ, ইবনে হিব্বান, হাকীম এবং বায়হাকী হযরত আয়িশা (রা) থেকে বর্ণনা করেন। রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন-
السِّوَاك مطهرة للفم مرضاة للرب
মিসওয়াক মুখের জন্য পবিত্রতা এবং প্রতিপালকের সন্তুষ্টি লাভের উপায়।
ইমাম আহমদ, তাবরানী আল আউসাত-এ হযরত ইবনে উমর (রা) থেকে বর্ণনা করেন। রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন- অবশ্যই মিসওয়ক করো। এটা মুখ পবিত্র করে এবং প্রতিপালকের সন্তুষ্টি লাভের কারণ।
ইমাম আহমদ যয়ীফ সনদে কুসুম অথবা তাম্মাম ইবনে আব্বাস থেকে বর্ণনা করেন। নবী কারীম (সা) আমাদের নিকট আগমন করেন এবং বলেন, তোমরা আমার নিকট হলুদ দাঁত নিয়ে আস কেন, মিসওয়াক কর না? যদি আমি আমার উম্মতের উপর কষ্টের আশঙ্কা না করতাম তাহলে তাদের জন্য এমনভাবে মিসওয়াক ফরয করে দিতাম যেভাবে ওযু তাদের জন্য ফরয করা হয়েছে।
ইমাম তাবরানী হযরত জাবির (রা) থেকে বর্ণনা করেন। নবী কারীম (সা) মিসওয়াক কানের উপর ঐ জায়গায় রাখতেন যেখানে কাতিব (লেখক) তার কলম রাখেন।
ইমাম উকাইলী আয যুয়াফায়, আবু নুআইম আস-সিওয়াক-এ যয়ীফ সনতে হযরত আয়িশাহ (রা) থেকে বর্ণনা করেন। নবী কারীম (সা) যখন সফর করতেন তখন মিসওয়াক, চিরুনী, সুরমাদানী, বোতল এবং আয়না সাথে নিয়ে যেতেন।
ইমাম আবু নুআইম একটি দুর্বল সনদে হযরত রাফে বিন খুদাইজ (রা) থেকে মারফুভাবে বর্ণনা করেন যে,
السِّوَاك وَاجِب
মিসওয়াক করা ওয়াজিব।
ইমাম ইবনে আবী শায়বাহ হযরত ইবনে আব্বাস (রা) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আমাদেরকে এভাবে মিসওয়াক করার নির্দেশ দেয়া হত যে, আমরা ভাবতে লাগলাম- এ ব্যাপারে ওহী নাযিল হয়ে যাবে।
ইমাম ইবনে আবী শায়বাহ হযরত হাসান বিন আতিয়্যা (রহ) থেকে মারফু রিওয়ায়াত বর্ণনা করেন যে, (রাসূলুল্লাহ [সা] ইরশাদ করেন-) ওযু ইমানের অর্ধেক আর মিসওয়াক ওযুর অর্ধেক। যদি আমার উম্মতের জন্য কষ্টের আশঙ্কা না হত তাহলে প্রত্যেক নামাযের সময় তাদেরকে মিসওয়াক করার নির্দেশ দিতাম। মিসওয়াকের সাথে বান্দা যে দুই রাকাত নামায পড়ে তা সত্তর রাকাত হতে উত্তম যা মিসওযাক ব্যতীত পড়া হয়।
ইমাম ইবনে আবী শায়বাহ হযরত সালমান বিন সাদ (রা) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন-
استاكوا وتنظفوا وأوتروا فَإِن الله وتر يحب الْوتر
মিসওয়াক কর এবং পরিচ্ছন্ন কর আর তা বেজোড় সংখ্যায় কর। কেননা আল্লাহ বেজোড় আর তিনি বেজোড়কে পছন্দ করেন।
[পরিচ্ছন্নতা প্রসঙ্গ]
ইমাম ইবনে আদী হযরত আনাস (রা) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, রাসূল্লাহ (সা) ওযুর সময় আঙ্গুলের জোড়াগুলোর প্রতি বিশেষভাবে খেয়াল করতে বলেছেন কেননা এর মধ্যে বেশী ময়লা জমে থাকে।
ইমাম হাকীম তিরমিযী নাওয়াদিরুল উসূলে এমন সনদের সাথে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে বুসর থেকে বর্ণনা করেন যার মধ্যে মাজহুল রাবী আছে। তিনি বলেন, নখ কাট এবং কাটা নখগুলো দাফন করে দাও। আর আঙ্গুলের জোড়াসমুহ পরিষ্কার কর।
ইমাম বুখারী, মুসলিম, আবু দাউদ, তিরমিযী শামায়েলে, নাসাঈ এবং ইবনে মাজাহ হযরত ইবন আব্বাস (রা) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আহলে কিতাব তাদের মাথার চুল লম্বাভাবে ঝুলিয়ে দিত আর মুশরিকরা মাথায় সিঁথি করত। রাসূলুল্লাহ (সা) এর কাছে যে বিষয়ে আল্লাহর পক্ষ থেকে কোনো হুকুম ছিলো না, সেক্ষেত্রে তিনি আহলে কিতাবের নিয়ম পালন করতে ভালবাসতেন। তাই রাসূলুল্লাহ (সা)-ও তার কপালের চুল লম্বাভাবে ঝুলিয়ে দেন। অতঃপর আবার সিঁথি করেন।
ইমাম ইবনে মাজাহ এবং বায়হাকী উত্তম সনদে হযরত উম্মে সালামা (রা) থেকে বর্ণনা করেন। রাসূলুল্লাহ (সা) যখন তার (নাভীর নিচের) চুল নিষ্কাশনের জন্য কোন প্রলেপ ব্যবহার করতেন তখন তিনি নিজ হাতে (প্রলেপ লাগিয়ে) নাভীর নিচের চুল পৃথক করতেন।
ইমাম বায়হাকী অনেক দুর্বল সনদে হযরত আনাস (রা) থেকে বর্ণনা করেন। রাসূলুল্লাহ (সা) চুল যখন বেশী বড় হয়ে যেত তখন তিনি চুনা (প্রলেপ) ব্যবহার করতেন না, তখন চুল মুণ্ডিয়ে দিতেন।
[খাতনা প্রসঙ্গ]
ইমাম আহমদ, বায়হাকী শাদ্দাদ বিন আউস (রা) থেকে মারফুভাবে বর্ণনা করেন যে,
الْخِتَان سنة للرِّجَال مكرمَة للنِّسَاء
খাতনা করা পুরুষের জন্য সুন্নত এবং মহীলাদের জন্য ভাল।
ইমাম আবু দাউদ উসাইম ইবনু কুলাইব থেকে, তিনি তার পিতা হতে তার দাদার সূত্রে বর্ণনা করেন। তিনি নবী (সা)-এর কাছে গিয়ে বললেন, আমি ইসলাম কবুল করেছি। নবী কারীম (সা) তাকে বললেন, তুমি কুফর অবস্থার চুল ফেলে দাও (মুণ্ডন করো)। ‘উসাইমের দাদা বলেন, আমাকে অন্য একজন বলেছেন, তার সাথে আরেকজন ছিল, তাকে নবী কারীম (সা) বললেন, তুমি কুফর অবস্থার চুল ফেলে দাও এবং খাতনা করে নাও।
ইমাম বায়হাকী যুহরী (রহ) থেকে বর্ণনা করেন আর তিনি নবী কারীম (সা) থেকে বর্ণনা করেন। রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেছেন-
من أسلم فليختتن
যে ব্যক্তি ইসলাম গ্রহণ করে তার উচিত খাতনা করা।
ইমাম আহমদ, তাবরানী হযরত উসমান ইবনে আবুল আস (রা) থেকে বর্ণনা করেন যে, তাকে খাতনার অনুষ্টানে আমন্ত্রণ জানানো হয়। তিনি বলেন, আমরা রাসূলের যুগে খাতনার অনুষ্ঠানে আসতাম আর এর জন্য আমন্ত্রণ জানানো হত না।
ইমাম তাবরানী আল আউসাত-এ হযরত ইবনে আব্বাস (রা) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন বাচ্চা জন্মের সপ্তম দিনে সাতটি বিষয় তার জন্য সুন্নত। তার নাম রাখা, তার খাতনা করা, তার থেকে কষ্টদায়ক বস্তু অপসারণ করা, আকীকা করা, চুল মুণ্ডণ করা, আকীকার দ্বারা তাকে (মাথা যাফরান দ্বারা) রঞ্জিত করা, আর তার মাথার চুল স্বর্ণ অখবা রোপ্যের দ্বারা ওযন করা (সাদাকার জন্য)।
ইমাম আবুশ শায়খ কিতাবুল আকীকায় এবং বায়হাকী হযরত জাবির (রা) থেকে বর্ণনা করেন। রাসূল্লাহ (সা) হযরত হাসান ও হুসায়ন (রা)-এর খাতনা করেন এবং তা (জন্মের) সপ্তম দিনে করেন।
ইমাম বায়হাকী মূসা বিন আলী ইবনে রাবাহ থেকে বর্ণনা করেন। ইবরাহীম (আ) ইসহাক (আ) এর খাতনা করেন জন্মের সপ্তম দিনে। আর ইসমাইল (আ) এর খাতনা করেন প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার সময়।
ইমাম ইবনে সাদ হযরত হাই বিন আব্দুল্লাহ থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আমার নিকট সংবাদ পৌঁছেছে যে, যখন ইসমাইল (আ) এর খাতনা হয়েছে তখন তার বয়স ছিল ১৩ বছর।
ইমাম আবুশ শায়খ কিতাবুল আকীকায় হযরত মূসা বিন আলী ইবনে রাবাহ থেকে বর্ণনা করেন যে, যখন ইবরাহীম (আ) এর বয়স আশি বৎসর তখন তার খাতনা করার আদেশ আসে। তিনি দ্রুত কুড়াল নিয়ে তার দ্বার খাতনা করেন আর এতে তার অনেক কষ্ট হতে লাগল। তিনি আল্লাহকে ডাকলেন। আল্লাহ তাআলা বললেন, তুমি আমার পরবর্তী নির্দেশ শুনার পূর্বেই তাড়াহুড়ো করেছ। তিনি বললেন, ইয়া রব! আমি আপনার নির্দেশ এর ব্যাপারে দেরী করা অপছন্দ করি।
ইমাম বুখারী, মুসলিম হযরত আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণনা করেন। রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন-
اختتن إِبْرَاهِيم عَلَيْهِ السَّلَام وَهُوَ ابْن ثَلَاثِينَ سنة بالقدوم
ইববরাহিম (আ) কুড়াল দ্বারা খাতনা করেন তখন তার বয়স ছিল ত্রিশ বৎসর।
ইমাম ইবনে আদী এবং বায়হাকী শুআবুল ইমানে হযরত আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণনা করেন। রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন- সর্বপ্রথম হযরত ইবরাহীম (আ) খাতনা করেন তখন তার বয়স ছিল একশত বিশ বৎসর। তিনি কুড়াল দ্বার খাতনা করেন। এরপর তিনি ঐ বছরই জীবিত থাকেন।
ইমাম ইবনে সাদ, ইবনে আবী শায়বাহ, হাকীম এবং বায়হাকী হযরত হযরত আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণনা করেন। রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন- হযরত ইবরাহীম (আ) কুড়াল দ্বারা খাতনা করেন যখন তার বয়স ছিল একশত বিশ বৎসর। এরপর তিনি ঐ বছরই জীবিক থাকেন। হযরত সাঈদ বলেন, সর্বপ্রথম হযরত ইবরাহীম (আ) খাতনা করেন। সর্বপ্রথম তিনি সাদা চুল দেখেন। তিনি আরয করেন, ইয়া রব! এটা কি? আল্লাহ বললেন এটা সম্মান। তিনি বললেন, হে আমার রব! আমার সম্মান বাড়িয়ে দিন। সর্বপ্রথম তিনি মেহমানদারী করেন। সর্বপ্রথম তিনি তার মোচ কাটেন। সর্বপ্রথম তিনি নখ কাটেন। আর তিনিই সর্বপ্রথম নাভির নিচের লোম পরিষ্কার করেন।
ইমাম ইবনে আদী এবং বায়হাকী হযরত আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, সর্বপ্রথম হযরত ইবরাহীম (আ) মেহমানদারী করেন। সর্বপ্রথম তিনি তার মোচ কাটেন। সর্বপ্রথম তিনি বার্ধক্যের চিহ্ন দেখতে পান। সর্বপ্রথম তিনি নখ কাটেন। আর সর্বপ্রথম তিনি কুড়াল দ্বারা খাতনা করেন।
ইমাম বায়হাকী হযরত আলী (রা) থেকে বর্ণনা করেন। (ইবরাহীম [আ] এর) বিবি হাজেরা বিবি সারার সেবিকা ছিলেন। তিনি তাকে ইবরাহীম (আ)-কে দিয়ে দেন। হযরত ইসমাইল ও ইসহাক (আ) দৌড় প্রতিযোগিতা করেন (খেলাচ্ছলে)। হযরত ইসমাইল (আ) অগ্রগামী হয়ে যান এবং ইবরাহীম (আ) এর কোলে গিয়ে বসেন। সারাহ (ঈর্ষাবশত) বললেন, আল্লাহর শপথ আমি তার (হাজেরার) তিনটি অঙ্গহানী না করে ছাড়ব না [যেহতেু ইসমাইল (আ) ছিলেন তার সন্তান]। ইবরাহীম (আ) শঙ্কিত হলেন যে, সে আবার তার নাক কান কেটে না দেয়। ইবরাহীম (আ) বললেন সারাহকে বললেন, তুমি অন্যভাবে তোমার কসম পুরা করতে পার। তুমি তার কান ফুঁড়ে দাও। আর তখন থেকেই কান ফুঁড়ানোর রেওয়ায চালু হয়েছে।
ইমাম বায়হাকী সুফিয়ান ইবনে উয়াইনা থেকে বর্ণনা করেন। ইবরাহীম (আ) সারার উগ্র ব্যবহারের জন্য কষ্ট অনুভব করেন অতএব আল্লাহর নিকট আরজ পেশ করেন (সমাধানের জন্য)। আল্লাহ তাআলা বললেন, হে ইবরাহীম [তার মধ্যে যেসব দোষ-ত্রুটি আছে তার উপর পর্দা ফেলে দাও অর্থাৎ উপেক্ষা কর- যে পর্যন্ত দীনের ব্যাপারে কোন হারাম বিষয় না দেখ।– মূল গ্রন্থে এই বাক্যটুকু নেই, শুআবুল ইমান থেকে তা উল্লেখ করা হলো- অনুবাদক]। তিনি [ইবরাহীম (আ)] ছিলেন সর্বপ্রথম পায়জামা পরিধানকারী। সর্বপ্রথম চুল আঁচড়ানো ব্যক্তি। সর্বপ্রথম নাভির নিচের লোম মুণ্ডণকারী। সর্বপ্রথম খাতনাকারী। সর্বপ্রথম মেহমানদারী করানো ব্যক্তি এবং সর্বপ্রথম বার্ধক্য অবলোকনকারী ব্যক্তি।
ইমাম ওকী- ইবনে উয়াইনার গুলাম ওয়াসিল থেকে বর্ণনা করেন। আল্লাহ তাআলা ইবরাহীম (আ) এর নিকট ওহী পাঠান। হে ইবরাহীম! তুমি আমার নিকট সমস্ত যমীনবাসীর থেকেও বেশী সম্মানিত। অতএব যখন তুমি সাজদা করবে তখন যেন তোমার লজ্জাস্থান অনাবৃত না হয়। অতএব ইবরাহীম (আ) তখন পায়জামা তৈরী করেন।
ইমাম হাকীম হযরত আবু উমামা (রা) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আকাশের হাতলের আঙ্গুলের মধ্য হতে দুই আঙ্গুলের মাঝে সাদা চুল প্রকাশিত হয়। অতঃপর তা ইবরাহীম (আ) এর নিকটবর্তী হতে থাকে এমনকি পুরোপুরি নিকটবর্তী হয়ে যায়। অতঃপর আসমান তা ইবরাহীম (আ) এর মাথায় ঢেলে দিলেন এবং বললেন, সম্মান বৃদ্ধি কর। অতঃপর আল্লাহ তাআলা সেই চুলের নিকট ওহী করলেন যে, প্রবল হয়ে যাও। (আর তা সাদা হয়ে গেল)। সর্বপ্রথম তার চুলই সাদা হয় এবং তিনিই সর্বপ্রথম খাতনা করেন। আর মুহাম্মদ (সা) এর উপর আল্লাহ যা নাযিল করেছেন তার প্রতিও তা নাযিল করেছিলেন।
সূরা তওবার التائبون العابدون الحامدون থেকে وَبشر الْمُؤمنِينَ পর্যন্ত।–আয়াত ১১২
সূরা মুমিনূন এর قد أَفْلح الْمُؤْمِنُونَ থেকে هم فِيهَا خَالدُونَ পর্যন্ত।- আয়াত ১-১১
সূরা আল আহযাব এর এই আয়াত إِن الْمُسلمين وَالْمُسلمَات –আয়াত ৩৫
এবং সূরা মাআরিজ এর الَّذين هم على صلَاتهم دائمون থেকে قائمون পর্যন্ত।–আয়াত ২৩-৩৩
এই অংশগুলো ইবরাহীম (আ) এবং মুহাম্মদ (সা) ব্যতীত আর কেউ পূরণ করেনি।
ইমাম ইবনে সাদ তাবাকাত-এ হযরত সালমান (রা) থেকে বর্ণনা করেন। ইবরাহীম (আ) আল্লাহর নিকট কল্যাণ প্রার্থনা করেন। তখন তার চুলের ২/৩ ভাগ অংশ সাদা হয়ে যায়। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, (ইয়া রব!) এটা কি? আল্লাহ তাআলা বললেন,
عِبْرَة فِي الدُّنْيَا وَنور فِي الْآخِرَة
এটা দুনিয়াতে সতর্ককারী আর আখিরাতে নূর।
ইমাম আহমদ আয যুহুদ-এ হযরত সালমান (রা) থেকে বর্ণনা করেন। ইবরাহীম (আ) বিছানায় গিয়ে দুআ করেন হে আল্লাহ! কল্যাণ দান করুন। ভোরে উঠে দেখেন যে, তার চুলের ২/৩ ভাগ অংশ সাদা হয়ে গেছে। তার এই অবস্থা ভাল লাগল না। অতএব তাকে বলা হলো তুমি পেরশোন হয়ো না। এটা দুনিয়াতে সতর্ককারী আর আখিরাতে নূর। সর্বপ্রথম তার চুলই সাদা হয়েছিল।
ইমাম দায়লামী হযরত আনাস (রা) থেকে বর্ণনা করেন। রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন-
أول من خضب بِالْحِنَّاءِ والكتم إِبْرَاهِيم عَلَيْهِ السَّلَام
সর্বপ্রথম যিনি মেহেদি ও কাতামের খিযাব লাগিয়েছেন তিনি হলেন ইবরাহীম (আ)।
ইমাম বুখারী, মুসলিম, আবু দাউদ, নাসাঈ এবং ইবনে মাজাহ হযরত ইবরাহীম (রহ) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন-
إِن الْيَهُود وَالنَّصَارَى لَا يصبغون فخالفوهم
ইহুদী ও খৃষ্টানরা চুলে রং লাগায় না। অতএব তোমরা তাদের বিপরীত কাজ কর।
ইমাম আবু দাউদ, তিরমিযী আর তিনি এটাকে সহিহ বলেছেন, নাসাঈ এবং ইবনে মাজাহ হযরত আবু যার (রা) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন-
إِن أحسن مَا غيرتم بِهِ الشيب الْحِنَّاء والكتم
সবচেয়ে উত্তম বস্তু যার দ্বারা তোমরা চুলের শুভ্রতা পরিবর্তন করে থাক তা হলো মেহেদী ও কাতাম।
ইমাম তিরমিযী হযরত আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন-
غيروا الشيب وَلَا تشبهوا باليهود
চুলের শুভ্রতা পরিবর্তন করো। ইহুদীদের সাথে মিল রেখো না।
ইমাম বাযযার হযরত ইবনে আব্বাস (রা) থেকে বর্ণনা করেন। রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন- আজমীদের সাথে সামঞ্জস্য রেখো না। আর দাড়ির রং পরিবর্তন কর।
চলবে
ইমাম ইবনে আবী শায়বাহ আল মুসান্নিফ-এ এবং বাযযার সাদ ইবন ইবরাহিম থেকে বর্ননা করেন। সর্বপ্রথম হযরত ইবরাহিম (আ) মিম্বরের উপর খুতবা (ভাষণ) দিয়েছিলেন। যখন রোমানরা হযরত লূত (আ)-কে কয়েদ করেছিলেন। অতঃপর তিনি যুদ্ধ করেন এমনকি লূত (আ)-কে ছাড়িয়ে আনেন।
ইমাম ইবনে আসাকির হযরত হাসান বিন আতিয়া থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, যখন হযরত ইবরাহিম (আ) তাদের সাথে যুদ্ধ করতে চলেন, যারা হযরত লূত (আ)-কে কয়েদ করেন তখন তিনি সর্ব প্রথম সৈন্যদরকে যুদ্ধের ময়দানে ডান ব্যুহ ও বাম ব্যুহ অনুযায়ী প্রস্তুত করেন।
ইমাম ইবনে আবী শায়বাহ ইয়াযিদ বিন আবু যায়দ থেকে বর্ণনা করেন। সর্বপ্রথম হযরত ইবরাহিম (আ) পতাকা উত্তোলন করেন। তার নিকট সংবাদ পৌঁছে যে, হযরত লূত (আ) এর উপর এক সম্প্রদায় হামলা করেছে আর তাকে কয়েদ করে নিয়ে গেছে। তখন তিনি পতাকা বাঁধেন এবং নিজের গুলাম ও মাওয়ালীদের (মিত্র ও সমর্থক) নিয়ে সামনে তাদের দিকে অগ্রসর হন, যে পর্যন্ত না দুশমনদের নাগাল পান। অতঃপর তাদের থেকে লূত (আ) ও তার পরিবারবর্গকে উদ্ধার করেন।
ইমাম ইবনে আবিদ দুনইয়া (রহ) কিতাবুর রমীতে হযরত ইবনে আবব্বাস (রা) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন-
أول من عمل القسي إِبْرَاهِيم عَلَيْهِ السَّلَام
সর্বপ্রথম হযরত ইবরাহিম (আ) রেশমী পোষাক ব্যবহার করেন।
ইমাম ইবনে আবিদ দুনইয়া এবং বায়হাকী শুআবুল ইমানে হযরত আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণনা করেন। রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন-
كَانَ أوّل من ضيف الضَّيْف إِبْرَاهِيم عَلَيْهِ السَّلَام
সর্বপ্রথম যিনি মেহমানদারী করেছেন তিনি হলেন হযরত ইবরাহিম (আ)।
ইমাম ইবনে সাদ, ইবনে আবিদ দুনইয়া (রহ), আবু নুআইম হিলইয়াতে, বায়হাকী শুআবুল ইমানে ইকরিমা (রহ) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন,
كَانَ إِبْرَاهِيم خَلِيل الرَّحْمَن يكنى أَبَا الضيفان وَكَانَ لقصره أَرْبَعَة أَبْوَاب لكَي لَا يفوتهُ أحد
ইবরাহিম খলীলুর রহমান এর উপনাম ছিল আবু যায়ফান (মেহমানদের পিতা)। তার বাড়ীর চারটি দরজা ছিল যাতে কোন ব্যক্তি বঞ্চিত হয়ে ফিরে না যায়।
ইমাম বায়হাকী আতা (রহ) থেকে বর্ণনা করেন,
كَانَ إِبْرَاهِيم خَلِيل الله عَلَيْهِ السَّلَام إِذا أَرَادَ أَن يتغدى طلب من يتغدى مَعَه إِلَى ميل
ইবরাহিম (আ) যখন খাবার খেতেন তখন এক মাইল পর্যন্ত কোন লোকের তালাশ করতেন, যে তার সাথে খাবার খাবে।
ইমাম ইবনে আবিদ দুনইয়া কিতাবুল ইখওয়ানে, খতীব তার ইতিহাসে, দায়লামী মুসনাদ আল ফিরদাউস এ, আল গাসূলী তার জুয-এ তামীম দারী (রা) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ (সা) এর সাথে সাক্ষাতের সময় এক ব্যক্তির সাথে অপর ব্যক্তির মুআনাকার বিষয়টি জিজ্ঞাসা করা হলো। তিনি বললেনে, এটা কওমের সালাম ছিল। সর্বপ্রথম যিনি মুআনাকা করেন তিনি হলেন ইবরাহীম (আ)।
ইমাম ইবনে আবী শায়বাহ, আহমদ আয যুহুদ-এ, আবু নুআইম হিলইয়াতে কাব (রা) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, ইবরাহিম (আ) আরয করলেন, (ইয়া রব!) আমাকে এই বিষয়টি কষ্ট দেয় যে, আমি নিজেকে ব্যতীত আর কাউকে আপনার ইবাদত করতে দেখব না। অতএব আল্লাহ তাআলা ফেরেশতাদেরকে পাঠান যারা তার সাথে ইবাদত করত এবং তার সাখে অবস্থান করত।
ইমাম আহমদ ও আবু নুআইম নাওফাল বুকালী থেকে বর্ণনা করেন। ইবরাহিম (আ) বললেন, ইয়া রব! যমীনে আমি ব্যতীত আর কেউ অপনার ইবাদতকারী নেই। আল্লাহ তাআলা তিন হাজার ফেরশেতা পাঠালেন। তিনি তিন দিন তাদের ইমামতি করেন।
ইমাম ইবনে সাদ কালবী (রহ) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন-
إِبْرَاهِيم عَلَيْهِ السَّلَام أول من أضَاف الضَّيْف وَأول من ثرد الثَّرِيد وَأول من رأى الشيب وَكَانَ قد وسع عَلَيْهِ فِي المَال والخدم
ইবরাহিম (আ) প্রথম ব্যক্তি যিনি মেহমানদারী করেন। যিনি সর্বপ্রথম সারিদ বানান। সর্বপ্রথম সাদা চুল দেখেন। তার কাছে অনেক সম্পদ ও খাদিম ছিল।
ইমাম ইবনে আবী শায়বাহ সুদ্দী (রহ) থেকে বর্ণনা করেন।
أول من ثرد الثَّرِيد إِبْرَاهِيم عَلَيْهِ السَّلَام
সর্বপ্রথম ইবরাহিম (আ) সারিদ বানান।
ইমাম দায়লামী- নাবীত বিন শারীত থেকে বর্ণনা করেন। রাসুলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন-
أول من اتخذ الْخبز المبلقس إِبْرَاهِيم عَلَيْهِ السَّلَام
সর্বপ্রথম যিনি রুটি তৈরী করেন তিনি হলেন ইবরাহিম (আ)
ইমাম আহমদ আয-যুহুদ-এ মুতাররাফ ইবনে আব্দুল্লাহ থেকে বর্ণনা করেন-
أول من راغم إِبْرَاهِيم عَلَيْهِ السَّلَام حِين راغم قومه إِلَى الله بِالدُّعَاءِ
সর্বপ্রথম যিনি নির্জনতা অবলম্বন করেছেন তিনি হলেন ইবরাহীম (আ)। তিনি আল্লাহর স্মরণের জন্য নিজের সম্প্রদায় থেকে নির্জনতা অবলম্বন করেছেন।
ইমাম ইবনে আবী শায়বাহ আল মুসান্নিফ এ, বুখারী, মুসলিম, তিরিমিযী, নাসাঈ হযরত ইবনে আব্বাস (রা) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন,
أول الْخَلَائق يلقى بِثَوْب – يَعْنِي يَوْم الْقِيَامَة – إِبْرَاهِيم عَلَيْهِ السَّلَام
রাসূলুল্লাহ (সা) আমাদের মাঝে দন্ডায়মান হলেন এবং বললেন, কিয়ামতের দিন সর্বপ্রথম যাকে কাপড় পড়ানো হবে তিনি হলেন ইবরাহীম (আ)।
ইমাম ইবনে আবী শায়বাহ সাঈদ ইবনে জুবাযর (রহ) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন,
يحْشر النَّاس عُرَاة حُفَاة فَأول من يلقى بِثَوْب إِبْرَاهِيم
কিয়ামতের দিন সবাই নগ্ন পা ও নগ্ন দেহে উত্থিত হবে। সেদিন সর্বপ্রথম যাকে কাপড় পড়ানো হবে তিনি হলেন ইবরাহীম (আ) ।
ইমাম আবু নুআইম হিলইয়াতে উবায়দ বিন উমাযর থেকে বর্ণনা করেন। কিয়ামতের দিন সবাই নগ্ন পা ও নগ্ন দেহে উত্থিত হবে। আল্লাহ তাআলা বলবেন, আমি কি আমার খলীলকে বিবস্ত্র দেখেতে পাচ্ছি না? অতএব ইবরাহীম (আ)-কে সাদা কাপড় পড়ানো হবে আর তিনিই হবেন প্রথম ব্যক্তি যাকে কাপড় পড়ানো হবে।
ইমাম ইবনে আবী শায়বাহ এবং আহমদ আয যুহুদ-এ আব্দুল্লাহ বিন হিরস (রা) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, কিয়ামতের দিন ইবরাহীম (আ)-কে দুটি কিবতী কাপড় পড়ানো হবে। অতঃপর নবী (সা)-কে হীরার (হীরা অঞ্চলের নির্মিত কাপড়সদৃশ) কাপড় পড়ানো হবে যখন তিনি আরশের ডান পাশে অবস্থান করবেন।
ইমাম ইবনে আবী শায়বাহ আবু দাউদ, তিরিমিযী, নাসাঈ হযরত আনাস (রা) থেকে বর্ণনা করেন। এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (সা) এর মজলিসের উপস্থিত হয়ে বলল,
يَا خير الْبَريَّة
হে সকল সৃষ্টি থেকে উত্তম।
নবী (সা) বললেন, (আমাকে এভাবে বলো না) এটা ইবরাহীম (আ) এর উপাধী।
ইমাম ইবনে আবী শায়বাহ আবু সালিহ থেকে বর্ণনা করেন। একবার ইবরাহীম (আ) খাদ্যের অন্বেষণে খুব চেষ্টা করলেন কিন্তু কিছু ব্যবস্থা করতে পারলেন না। অতঃপর একবার তিনি লাল নরম মাটির উপর দিয়ে যাওয়ার সময় কিছু মাটি নিলেন অতঃপর ঘরে গেলেন। ঘরের লোকেরা জিজ্ঞাসা করলো এটা কি? তিনি বললেন লাল গম। অতঃপর যখন তারা তা বের করলেন তখন গমই দেখতে পেলেন। অতএব যখন তিনি এর মধ্য হতে কিছু কর্ষণ করতেন তখন এর মূল থেকে নিয়ে শাখা প্রশাখা পর্যন্ত দানা আর দানা-ই বের হত।
ইমাম ইবনে আবী শায়বাহ এবং আহমদ আয যুহুদ-এ আবু নুআইম হিলইয়াতে সালমান (রা) থেকে বর্ণনা করেন। ইবরাহীম (আা) এর উপর দুটি ক্ষুধার্ত বাঘ ছেড়ে দেয়া হয়, তারা তাকে মহব্বতের সাথে লেহন করতে থাকে এবং সিজদা করে (কোন ক্ষতি করে নি)।
ইমাম আহমদ, মুসলিম আবু দাউদ, নাসাঈ হযরত উবাই ইবনে কাব (রা) থেকে বর্ণনা করেন। নবী কারীম (সা) ইরশাদ করেন, আমার নিকট সংবাদ পাঠানো হয়েছে যে, আমি আল কুরআন এক কিরাআতে পাঠ করব। তো অমি আরয করলাম ইয়া রব! আমার উম্মতের জন্য সহজ করুন। দ্বীতিয়বার ওহী করলেন যে, দুই কিরাআতে পাঠ করব। আমি আবার আরয করলাম, ইয়া রব! আমার উম্মতের জন্য সহজ করুন। তৃতীয়বার ওহী করলেন যে, সাত কিরাআতে পাঠ করব। আর প্রত্যেকবার যে তুমি তোমার প্রার্থনা ফিরিয়েছ এর সমপরিমাণ আমার থেকে চেয়ে নাও। আমি বললাম
اللَّهُمَّ اغْفِر لأمتي اللَّهُمَّ اغْفِر لأمتي
হে আল্লাহ! আমার উম্মতকে ক্ষমা করে দিন। হে আল্লাহ! আমার উম্মতকে ক্ষমা করে দিন।
আর তৃতীয় দুআ আমি ঐ দিনের জন্য স্খগিত রেখেছি যেদিন সবাই এমনকি ইবরাহীম (আ)-ও আমার দিকে চেয়ে থাকবেন।
ইমাম হাকীম- ওয়াকিদী (রহ) থেকে বর্ণনা করেন। ইবরাহীম (আ) দামিশকের এক গ্রামে এক পাহাড়ের নিকটবর্তী স্থানে যেটাকে কাসিউঁ বলা হয় সেখানে জন্মগ্রহণ করেন।
ইমাম বায়হাকী শুআবুল ইমানে আবুস সাকান আল হাজারী থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন,
مَاتَ خَلِيل الله فَجْأَة وَمَات دَاوُد فَجْأَة وَمَات سُلَيْمَان بن دَاوُد فَجْأَة والصالحون وَهُوَ تَخْفيف على الْمُؤمن وَتَشْديد على الْكَافِر
হযরত খলীল (আ) হঠাৎ মৃত্যুবরণ করেন। দাউদ (আ) হঠাৎ মৃত্যুবরণ করেন। সুলায়মান (আ) হঠাৎ মৃত্যুবরণ করেন। আর নেক লোকেরোও হঠাৎ মৃত্যুবরণ করবে। এটা মুমিনের জন্য সহজতা ও কাফিরের জন্য কঠোরতা।
বর্ণিত আছে যে, মালাকুল মউত যখন ইবরাহীম (আ) এর জান কবয করতে আসেন তখন ইবরাহিম (আ) বললেন, হে মালাকুল মউত তুমি কি দেখেছ কখনো যে, বন্ধু বন্ধুর জান কবয করে? মালাকুল মউত আল্লাহর দরবারে হাজির হয়ে তার কথা জানালেন। আল্লাহ তাআলা বললেন, হে মালাকুল মউত! ইবরাহীমকে বল, তুমি কি কখনো এমন বন্ধু দেখছে? যে বন্ধু বন্ধুর সাক্ষাত পছন্দ করে না। মালাকুল মউত ফিরে এসে আল্লাহর কথা তাকে জানালেন। ইবরাহীম (আ) বললেন, আমার জান কবয করে নিন।
ইমাম আবু নুআইম হিলইয়াতে সাঈদ বিন জুবায়র থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আল্লাহ তাআলা নবীদের নিকট মালাকুল মউতকে প্রেরণ করতেন। অতএব আল্লাহ তাআলা ইবরাহীম (আ) এর নিকট মালাকুল মউতক প্রেরণ করেন তার রূহ কবয করার জন্য। মালাকুল মউত ইবরাহীম (আ) এর ঘরে এক সুন্দর যুবকের বেশে প্রবেশ করেন। ইবরাহীম (আ) একজন আত্ম-মর্যাদাবোধসম্পন্ন ব্যক্তি ছিলেন। যখন তিনি মালাকুল মউতক দেখলেন তখন তার মর্যাদাবোধ জেগে উঠলো এবং তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, তোমাকে এই ঘরে কে প্রবেশ করিয়েছে? তিনি বলললেন, এই ঘরের মালিক আমাকে প্রবেশ করিয়েছেন। ইবরাহীম (আ) প্রকৃত অবস্থা বুঝে ফেললেন। মালাকুল মউত বললো হে ইবরাহীম! আমাকে আপনার রূহ কবয করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ইবরাহীম (আ) বললেন, মালাকুল মউত! আমাকে সময় দাও যাতে ইসহাক এসে যায়। যখন ইসহাক (আ) আগমন করলেন তখন তিনি দাড়িয়ে গেলেন এবং তার সাথে কোলাকুলি করলেন। মালাকুল মউত আল্লাহর দরবারে ফিরে গিয়ে বললেন, হে রব! আপনার বন্ধু মৃত্যুর কারণে পেরেশানবোধ করছেন। আল্লাহ তাআলা বললেন, হে মালাকুল মউত! তুমি তার ঘুমের সময় তার রূহ কবয কর। অতএব মালাকুল মউত ঐ সময় আগমন করেন যখন তিনি ঘুমাচ্ছিলেন। আর তখন তিন তার রূহ কবয করেন।
ইমাম আহমদ আয যুহুদ-এ, আল মারুযী আল জানায়েয-এ ইবনে আবী মুলায়কা (রহ) থেকে বর্ণনা করেন। যখন ইবরাহিম (আ) এর মৃত্যু হয় তখন তাকে জিজ্ঞাসা করা হয় মৃত্যুকে কেমন পেলে ? তিনি বললেন, আমি অনুভব করলাম যে, পেটের ভিতর থেকে রূহ টেনে বের করা হচ্ছে । ইবরাহীম (আ)-কে বলা হলো
قد يسرنَا عَلَيْك الْمَوْت
আমি তোমার জন্য মৃত্যুকে সহজ করেছি।
ইমাম আহমদ, ইবনে আাবিদ দুনইয়া আল আযায়, ইবনে আবু দাউদ আল বাস-এ, ইবনে হিব্বান, হাকীম আর তিনি এটাকে সহিহ বলেছেন, বায়হাকী আল বাস-এ আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণনা করেন। রাসূলুলল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন- মুমিনদের সন্তান জান্নাতে এক পাহাড়ের উপর আছে। ইবরাহীম ও সারা (আ) তাদের দেখাশোনা করেন এমনকি কিয়ামতের দিন তাদের পিতা মাতার নিকট তাদেরকে ফিরিয়ে দিবেন।
ইমাম সাঈদ ইবন মানসূর মাকহুল (রহ) থেকে বর্ণনা করেন। রাসূলূল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন- মুসলমানদের সন্তান জান্নাতে সবুজ পাখির মত গাছের উপর অবস্থান করছে। ইবরাহীম (আ) তাদের দেখাশোনা করেন।
أما قَوْله تَعَالَى: {قَالَ إِنِّي جاعلك للنَّاس إِمَامًا} الْآيَة
আল্লাহ তআলার বানী: আল্লাহ তাআলা বললেন, আমি তোমাকে মানবজাতির নেতা করব…
ইমাম আব্দ ইবনে হুমায়দ ইবনে আব্বাস (রা) থেকে قَالَ إِنِّي جاعلك للنَّاس إِمَامًا এ্রর এই অর্থ বর্ণনা করেন যে, তার দীন ও সুন্নাতের অনুসরণ করা হবে। আরয করেন, আমার সন্তানদের মধ্য হতে অপর লোকদের জন্য ইমাম করুন। আল্লাহ তাআলা বললেন, যালিমদের দীন, হিদায়াত ও সুন্নতের অনুসরণ করা হবে না।
ইমাম আব্দুর রাযযাক, আব্দ ইবনে হুমায়দ এবং ইবনে জারীর হযরত কাতাদাহ (রহ) থেকে বর্ণনা করেন। এই অঙ্গীকার কিয়ামতের দিনের সাথে সম্পর্কিত যে, কিয়ামতের দিন যালিমদের জন্য আল্লাহর অঙ্গীকার প্রযোজ্য হবে না। তবে দুনিয়াতে তারা এটা পেয়েছে এবং মুসলমানদের ওয়ারিশ হয়েছে, তাদের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছে প্রভৃতি। কিন্তু কিয়ামতের দিন আল্লাহর অঙ্গীকার, তার সম্মান ও মর্যাদা তার প্রিয়জনদের জন্যই নির্ধারিত হবে।
ইমাম ইবনে জারীর রবী (রহ) থেকে إِنِّي جاعلك للنَّاس إِمَامًا প্রসঙ্গে বর্ননা করেন। এর অর্থ হলো আপনার অনুসরণ করা হবে। ইবরহীম (আ) বললেন وَمن ذريتي , অমার সন্তানরে মধ্য হতেও এমন বানান যাদের অনুসরণ করা হবে।
ইমাম ফিরইয়াবী এবং ইবনে আবী হাতীম হযরত ইবনে আব্বাস (রা) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আল্লাহ তাআলা ইবরাহীম (আ)-কে বললেন, আমি তোমাকে মানুষের জন্য ইমাম বানাব। ইবরাহীম (আ) আরয করলেন, আমার সন্তানদের মধ্য হতেও ইমাম বানান। তখন আল্লাহ তাআলা এটা করতে অস্বীকার করলেন এবং ইরশাদ করলেন, আমার অঙ্গীকার যালিমদের জন্য প্রযোজ্য নয়।
ইমাম ওকী, আব্দ ইবনে হুমায়দ এবং ইবনে জারীর মুজাহিদ (রহ) থেকে এ প্রসঙ্গে বর্ণনা করেন যে, এর অর্থ হলো
لَا اجْعَل اماماً ظَالِما يقْتَدى بِهِ
আমি যালিম ইমাম বানাব না যার অনুসরণ করা হবে।
ইমাম ইবনে ইসহাক, ইবনে জারীর, ইবনে আবী হাতীম হযরত ইবনে আব্বাস (রা) থেকে বর্ণনা করেন। আল্লাহ তাআলা সংবাদ দিচ্ছেন যে, ইবরাহীম (আ) এর বংশে যালিমও হবে যার উপর আল্লাহর অঙ্গীকার পৌঁছবে না। অতএব এটা তার শান এর জন্য উপযুক্ত নয় যে, সে যালিমকে ওয়ালী করবে।
ইমাম আব্দ ইবনে হুমায়দ, ইবনে জারীর, ইবনুল মুনযির, ইবনে আবী হাতীম হযরত ইবনে আব্বাস (রা) থেকে বর্ণনা করেন। এর অর্থ হলো তার উপর গুনাহ ও পাপ কাজের উপর কোন অঙ্গীকার নেই যে, তিনি তার অনুসরণ করবেন।
ইমাম ওকী এবং ইবনে মারদুবিয়া হযরত আলী (রা) থেকে বর্ণনা করেন যে, নবী কারীম (সা) لَا ينَال عهدي الظَّالِمين এর তাফসীর করেছেন যে,
لَا طَاعَة إِلَّا فِي الْمَعْرُوف
আনুগত্য শুধু নেককাজে।
ইমাম আব্দ ইবনে হুমায়দ- ইমরান ইবনে হুসাযন (রা) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আমি নবী কারীম (সা)-কে বলতে শুনেছি যে,
لَا طَاعَة لمخلوق فِي مَعْصِيّة الله
পাপ কাজে কারো আনুগত্য নেই।
ইমাম আব্দ ইবন হুমায়দ ইবরাহীম (রহ) থেকে বর্ণনা করেন যে,
لَا طَاعَة مفترضة إِلَّا لنَبِيّ
নবীদের আনুগত্য ব্যতীত আর কারো আনুগত্য ফরয নয়।