মিসওয়াক এর ফযীলত – benefits of miswak

দারুস সাআদাত গ্রন্থ

গ্রন্থঃ তাফসীর আদ দুররে মানসূর

লেখকঃ ইমাম সুয়ূতী (রহ)

অনুবাদঃ মারূফ আর রুসাফী

স্বত্বঃ দারুস সাআদাত কর্তৃক সংরক্ষিত, বিনানুমতিতে কপি করা, মূদ্রণ করা বা এপে ব্যবহার করা আইনত দণ্ডনীয়। কেউ করলে আইনগত পদক্ষেপ নেয়া হবে।

তাফসীর আদ দুররে মানসূরের সূরা আল বাকারা থেকে

ইমাম ইবনে মাজাহ এবং বায়হাকী আবূ উমামাহ (রা) থেকে বর্ণনা করেন। রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন- তোমরা মিসওয়াক করো। কেননা মিসওয়াক মুখ পবিত্র ও পরিষ্কার করার উপায় এবং মহান প্রভুর সন্তুষ্টি লাভের উপায়। আমার কাছে যখনই জিবরাইল (আ) এসেছেন তখনই আমাকে মিসওয়াক করার উপদেশ দিয়েছেন। এমনকি আমার আশঙ্কা হয় যে, তা আমার ও আমার উম্মাতের জন্য ফরয করা হবে। আমি যদি আমার উম্মাতের জন্য কষ্টকর হওয়ার আশঙ্কা না করতাম, তাহলে তাদের জন্য তা ফরয করে দিতাম। আমি এত বেশি মিসওয়াক করি যে, আমার মাড়িতে ঘা হওয়ার আশঙ্কা হয়।

ইমাম তাবরানী যয়ীফ সনদে হযরত ইবনে আব্বাস (রা) থেকে বর্ননা করেন। রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন-

السِّوَاك مطهرة للفم مرضاة للرب ومجلاة لِلْبَصَرِ

মিসওয়াক করা মুখ পবিত্র ও পরিষ্কারের উপায়, এবং প্রতিপালকের সন্তুষ্টি লাভের উপায় এবং দৃষ্টিশক্তি প্রখর করার উপায়।

ইমাম ইবনে আদী এবং বায়হাকী শুআবুল ইমানে হযরত ইবনে আব্বাস (রা) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন- তোমাদের জন্য মিসওয়াক করা আবশ্যক। কেননা এটা মুখ পরিষ্কার করে। প্রতিপালকের সন্তুষ্টি লাভের কারণ। ফেরেশতাদের আনন্দের কারণ। নেকী বৃদ্ধি করে এবং এটা সুন্নাত। চোখের দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করে। দাতের হলদেটেভাব দূর করে। মাড়ি মজবুত করে। কফ দূর করে এবং মুখের সুগন্ধ বৃদ্ধি করে।

ইমাম বুখারী, মুসলিম, আবু দাউদ, নাসাঈ এবং ইবনে মাজাহ হযরত আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণনা করেন। রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন-

لَوْلَا أَن أشق على أمتِي لأمرتهم بِالسِّوَاكِ عِنْد كل صَلَاة

যদি আমি আমার উম্মতের জন্য কষ্টদায়ক হওয়ার আশঙ্কা না করতাম তাহলে প্রত্যেক নামাযের সময় তাদেরকে মিসওয়াক করার নির্দেশ দিতাম।

ইমাম আহমদ হাসান সনদে হযরত আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণনা করেন। রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন-

لَوْلَا أَن أشق على أمتِي لأمرتهم عِنْد كل صَلَاة بِوضُوء وَعند كل وضوء بسواك

যদি আমি আমার উম্মতের জন্য কঠিন হওয়ার আশঙ্কা না করতাম তাহলে প্রত্যেক নামাযের সময় তাদেরকে ওযু করার নির্দেশ দিতাম। আর ওযুর সময়  মিসওয়াক করার নির্দেশ দিতাম।

ইমাম বাযযার, আবু ইয়ালা এবং তাবরানী যয়ীফ সনদে হযরত আয়িশা (রা) থেকে বর্ণনা করেন। রাসূলু্লাহ (সা) ইরশাদ করেন-

مَا زَالَ النَّبِي صلى الله عَلَيْهِ وَسلم يذكر بِالسِّوَاكِ حَتَّى خشينا أَن ينزل فِيهِ قُرْآن

নবী কারীম (সা) সব সময় মিসওয়াকের কথা বলতেন। এমনকি আমরা এ ব্যাপারে কুরআন নাযিল হওয়ার আশঙ্কা করলাম (যদি তা ফরয হয়ে যায়)।

ইমাম আহমদ, আল হার্‌স ইবনে উসামাহ, বাযযার, আবু ইয়ালা, ইবনে খুযায়মাহ, দারাকুতনী, হাকীম আর তিনি এটাকে সহিহ বলেছেন, আবু নুআইম কিতাবুস সিওয়াক–এ, বায়হাকী শুআাবুল ইমানে হযরত আয়িশা (রা) থেকে বর্ণনা করেন। রাসূলু্লাহ (সা) ইরশাদ করেন-

فضل الصَّلَاة بسواك على الصَّلَاة بِغَيْر سواك سَبْعُونَ ضعفا

মিসওয়াক করে নামায পড়া, মিসওয়াক না করে নামায পড়ার চাইতে সত্তর গুণ বেশী ফযীলত রাখে।

ইমাম বাযযার, বায়হাকী উত্তম সনদে হযরত আয়িশা (রা) থেকে বর্ণনা করেন। রাসূলু্লাহ (সা) ইরশাদ করেন-

رَكْعَتَانِ بسواك أفضل من سبعين رَكْعَة بِغَيْر سواك

মিসওয়াক করে দুই রাকাত নামায মিসওয়াক ব্যতীত সত্তর রাকাতের চাইতে উত্তম।

ইমাম আহমদ এবং আবু ইয়ালা উত্তম সনদে হযরত ইবনে আব্বাস  (রা) থেকে বর্ণনা করেন। রাসূলু্লাহ (সা) ইরশাদ করেন-

لقد أمرت بِالسِّوَاكِ حَتَّى ظَنَنْت أَنه ينزل عليّ بِهِ قُرْآن أَو وَحي

আমাকে মিসওযাক করার নির্দেশ দেয়া হযেছে। এমনকি আমি ধারণা করতে লাগলাম যে, এ ব্যাপারে কুরআন বা ওহী নাযিল হয়ে যাবে।

ইমাম আহমদ আবু ইয়ালা এবং তাবরানী যয়ীফ সনদে হযরত ইবনে আব্বাস  (রা) থেকে বর্ণনা করেন- রাসূলু্লাহ (সা) মিসওয়াক করা ব্যতীত শয়ন করতেন না এবং ঘুম থেকে উঠে সর্ব-প্রথম মিসওয়াক করতেন।

ইমাম তাবরানী হাসান সনদে হযরত উম্মে সালামা  (রা) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন,রাসূলু্লাহ (সা) ইরশাদ করেন-

مازال جِبْرِيل يوصيني بِالسِّوَاكِ حَتَّى خفت على أضراسي

জিবরাইল (আ) আমাকে সর্বদা মিসওয়াক করার নির্দেশ দিতেন। এমনকি আমি আমার দাঁতের মাড়ির ক্ষয়ের আশঙ্কা করতাম

ইমাম বাযযার, তিরমিযী, হাকীম নাওয়াদিরুল উসূলে  কালীহ বিন আব্দুল্লাহ খাতামী থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, রাসূলু্লাহ (সা) ইরশাদ করেন-

خمس من سنَن الْمُرْسلين الْحيَاء والحلم والحجامة والسواك والتعطر

পাঁচটি বিষয় রাসূলদের সুন্নাত। লজ্জা, সহনশীলতা, শিঙ্গা লাগানো, মিসওয়াক করা এবং সুগন্ধি ব্যবহার করা।

ইমাম তাবরানী আল আউসাতে হযরত আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন,

كَانَ رَسُول الله صلى الله عَلَيْهِ وَسلم لَا ينَام لَيْلَة وَلَا ينتبه إِلَّا اسْتنَّ

রাসূলুল্লাহ (সা) মিসওয়াক করা ব্যতীত ঘুমাতেন না আর যখন জাগ্রত হতেন তখন প্রথমে মিসওয়াক করতেন।

ইমাম তাবরানী হাসন সনদে হযরত যায়দ বিন খালিদ আল জুহানী থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন,

مَا كَانَ رَسُول الله صلى الله عَلَيْهِ وَسلم يخرج من بَيته لشَيْء من الصَّلَوَات حَتَّى يستاك

নবী কারীম (সা) যখন ঘর থেকে নামায পড়তে বের হতেন তখন মিসওয়াক করে নিতেন।

ইমাম ইবনে আবী শায়বাহ এবং আবু দাউদ যয়ীফ সনদে হযরত আয়িশা (রা) থেকে বর্ণনা করেন। রাসূলুল্লাহ (সা) দিনে বা রাতে ঘুম থেকে উঠার পর ওযুর করার আগে মিসওয়াক করতেন।

ইমাম ইবনে আবী শায়বাহ, মুসলিম, আবু দাউদ, নাসাঈ এবং ইবন মাজাহ হযরত আয়িশাহ (রা) থেকে বর্ণনা করেন্। তাকে জিজ্ঞাসা করা হলো যে, রাসূলু্লোহ (সা) ঘরে প্রবেশ করে সর্বপ্রথম কি করতেন? তিনি বললেন,

كَانَ إِذا دخل يبْدَأ بِالسِّوَاكِ

নবী (সা) যখন ঘরে প্রবেশ করতেন তথন প্রথমে মিসওয়াক করতেন।

ইমাম ইবনে মাজাহ হযরত আলী (রা) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন-

إِن أَفْوَاهكُم طرق لِلْقُرْآنِ فطيبوها بِالسِّوَاكِ

তোমাদের মুখ হলো কুরআনের প্রবেশ পথ অতএব এটা মিসওয়াক দ্বারা পবিত্র কর।

ইমাম ইবনুস সুন্নি এবং আবু নুআইম তিব্বুন নবীতে হযরত আলী (রা) থেকে বর্ণনা করেন। রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন-

إِن السِّوَاك ليزِيد الرجل فصاحة

মিসওয়াক ব্যক্তির বাকপটুতা বৃদ্ধি করে।

ইমাম ইবনুস সুন্নি হযরত আলী (রা) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, কুরআন পাঠ করা এবং মিসওয়াক করা কফ (এবং কফের প্রভাবজনিত রোগ-ব্যাধি) উপশম করে।

ইমাম আবু নুআইম মারিফাতুস সাহাবায় হযরত সামুভিয়া (রা) থেকে বর্ণনা করেন। রাসূলুল্লাহ কোন রাতে শয়ন করতেন না যে পর্যন্ত না মিসওয়াক করে নিতেন।

ইমাম ইবনে আবী শায়বাহ মুসান্নিফ এ, আবু নুআইম কিতাবুস সিওয়াক-এ যয়ীফ সনদে আবু আতিক থেকে আর তিনি হযরত জাবির (রা) থেকে বর্ণনা করেন। জাবির (রা) বিছানায় যাওযার পূর্বে, ঘুম থেকে উঠার পর এবং নামায পড়তে যাওয়ার সময় মিসওয়াক করতেন। আমি বললাম, আপনি নিজেকে কষ্ট দিচ্ছেন। তিনি বললেন, আমাকে উসামা (রা) বলেছেন যে, নবী কারীম (সা) এই সময়গুলোতে মিসওয়াক করতেন।

ইমাম আবু নুআইম হাসান সনদে আব্দুল্লাহ ইবনে আমর থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন-

لَوْلَا أَن أشق على أمتِي لأمرتهم أَن يستاكوا بالأسحار

আমি আমার উম্মতের জন্য কষ্টদায়ক হওয়ার আশঙ্কা না করলে আমি তাদেরকে সাহরির সময় মিসওয়াক করার নির্দেশ দিতাম।

ইমাম তাবরানী আল আউসাতে হাসান সনদে হযরত আলী (রা) থেকে বর্ণনা করেন। রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন-

لَوْلَا أَن أشق على أمتِي لأمرتهم بِالسِّوَاكِ مَعَ كل وضوء

যদি আমার উম্মতের জন্য কষ্টের আশঙ্কা না হত তবে ওযুর সাথে মিসওয়াক করার নির্দেশ দিতাম।

ইমাম শাফিয়ী, ইবনে আবী শায়বাহ, আহমদ, নাসাঈ, আবু ইয়ালা, ইবনে খুযায়মাহ, ইবনে হিব্বান, হাকীম এবং বায়হাকী হযরত আয়িশা (রা) থেকে বর্ণনা করেন। রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন-

السِّوَاك مطهرة للفم مرضاة للرب

মিসওয়াক মুখের জন্য পবিত্রতা এবং প্রতিপালকের সন্তুষ্টি লাভের উপায়।

ইমাম আহমদ, তাবরানী আল আউসাত-এ হযরত ইবনে উমর (রা) থেকে বর্ণনা করেন। রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন- অবশ্যই মিসওয়ক করো। এটা মুখ পবিত্র করে এবং প্রতিপালকের সন্তুষ্টি লাভের কারণ।

ইমাম আহমদ যয়ীফ সনদে কুসুম অথবা তাম্মাম ইবনে আব্বাস থেকে বর্ণনা করেন। নবী কারীম (সা) আমাদের নিকট আগমন করেন এবং বলেন, তোমরা আমার নিকট হলুদ দাঁত নিয়ে আস কেন, মিসওয়াক কর না? যদি আমি আমার উম্মতের উপর কষ্টের  আশঙ্কা না করতাম তাহলে তাদের জন্য এমনভাবে মিসওয়াক ফরয করে দিতাম যেভাবে ওযু তাদের জন্য ফরয করা হয়েছে।

ইমাম তাবরানী হযরত জাবির (রা) থেকে বর্ণনা করেন। নবী কারীম (সা) মিসওয়াক কানের উপর ঐ জায়গায় রাখতেন যেখানে কাতিব (লেখক) তার কলম রাখেন।

ইমাম উকাইলী আয যুয়াফায়, আবু নুআইম আস-সিওয়াক-এ যয়ীফ সনতে হযরত আয়িশাহ (রা) থেকে বর্ণনা করেন। নবী কারীম (সা) যখন সফর করতেন তখন মিসওয়াক, চিরুনী, সুরমাদানী, বোতল এবং আয়না সাথে নিয়ে যেতেন।

ইমাম আবু নুআইম একটি দুর্বল সনদে হযরত রাফে বিন খুদাইজ (রা) থেকে মারফুভাবে বর্ণনা করেন যে,

السِّوَاك وَاجِب

মিসওয়াক করা ওয়াজিব।

ইমাম ইবনে আবী শায়বাহ হযরত ইবনে আব্বাস (রা) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আমাদেরকে এভাবে মিসওয়াক করার নির্দেশ দেয়া হত যে, আমরা ভাবতে লাগলাম- এ ব্যাপারে ওহী নাযিল হয়ে যাবে।

ইমাম ইবনে আবী শায়বাহ হযরত হাসান বিন আতিয়্যা (রহ) থেকে মারফু রিওয়ায়াত বর্ণনা করেন যে, (রাসূলুল্লাহ [সা] ইরশাদ করেন-) ওযু ইমানের অর্ধেক আর মিসওয়াক ওযুর অর্ধেক। যদি আমার উম্মতের জন্য কষ্টের আশঙ্কা না হত তাহলে প্রত্যেক নামাযের সময় তাদেরকে মিসওয়াক করার নির্দেশ দিতাম। মিসওয়াকের সাথে বান্দা যে দুই রাকাত নামায পড়ে তা সত্তর রাকাত হতে উত্তম যা মিসওযাক ব্যতীত পড়া হয়।

ইমাম ইবনে আবী শায়বাহ হযরত সালমান বিন সাদ (রা) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন-

استاكوا وتنظفوا وأوتروا فَإِن الله وتر يحب الْوتر

মিসওয়াক কর এবং পরিচ্ছন্ন কর আর তা বেজোড় সংখ্যায় কর। কেননা  আল্লাহ বেজোড় আর তিনি বেজোড়কে পছন্দ করেন।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to top button
error: Content is protected !!