sahih hakim সহিহ হাকীম-কিতাবুল ইমান হাদীস

দারুস সাআদাত গ্রন্থ

গ্রন্থঃ আল মুস্তাদরাক হাকীম

লেখকঃ ইমাম হাকীম নিশাপুরী (রহ)

অনুবাদঃ দারুস সাআদাত কর্তৃক অনূদিত

স্বত্বঃ দারুস সাআদাত কর্তৃক সংরক্ষিত, বিনানুমতিতে কপি করা, মূদ্রণ করা বা এপে ব্যবহার করা আইনত দণ্ডনীয়। কেউ করলে আইনগত পদক্ষেপ নেয়া হবে।

بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ

আল মুস্তাদরাক হাকীম

কিতাবুল ইমান 

101 – عَنْ زَيْدِ بْنِ أَبِي أُنَيْسَةَ، عَنِ الْقَاسِمِ بْنِ عَوْفٍ الشَّيْبَانِيِّ، قَالَ: سَمِعْتُ ابْنَ عُمَرَ، يَقُولُ: «لَقَدْ عِشْنَا بُرْهَةً مِنْ دَهْرِنَا وَإِنَّ أَحْدَثَنَا يُؤْتَى الْإِيمَانَ قَبْلَ الْقُرْآنِ، وَتَنْزِلُ السُّورَةُ عَلَى مُحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَيَتَعَلَّمُ حَلَالَهَا وَحَرَامَهَا، وَمَا يَنْبَغِي أَنْ يُوقَفَ عِنْدَهُ فِيهَا كَمَا تَعْلَمُونَ أَنْتُمُ الْقُرْآنَ» ، ثُمَّ قَالَ: «لَقَدْ رَأَيْتُ رِجَالًا يُؤْتَى أَحَدُهُمُ الْقُرْآنَ فَيَقْرَأُ مَا بَيْنَ فَاتِحَتِهِ إِلَى خَاتِمَتِهِ مَا يَدْرِي مَا أَمْرُهُ وَلَا زَاجِرُهُ، وَلَا مَا يَنْبَغِي أَنْ يُوقَفَ عِنْدَهُ مِنْهُ يَنْثُرُهُ نَثْرَ الدَّقَلِ»

১০১.হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রা) বলেন, কুরআন নাযিল হওয়ার পূর্বে আমাদের কিছু সময় এমন ছিল যে, আমাদের মধ্যে কারো ইমান লাভ হত অতঃপর যখন মুহাম্মদ (সা) এর উপর কোন সূরা নাযিল হত তখন সে তার মধ্যে বর্ণিত হালাল হারাম এবং কোথায় ওয়াকফ করতে হবে, তা এমনভাবে শিখত যেভাবে তোমরা কুরআন শিখে থাক। বর্ণনাকারী বলেন, আমি কুরআন শিক্ষাকারী এমন অনেক লোক দেখেছি, যে সুরা ফাতিহা থেকে কুরআনের শেষ পর্যন্ত পড়ে যেত অথচ তার এই জ্ঞান হত না যে, কুরআন তাকে কিসের নির্দেশ দেয় আর কি থেকে নিষেধ করে। আর সে এটাও জানত না যে, কোথায় কোথায় থামতে হবে বরং বেকার ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা খেজুড়ের মত বেপরোয়া ভাব দেখাত।

هَذَا حَدِيثٌ صَحِيحٌ عَلَى شَرْطِ الشَّيْخَيْنِ

এই হাদিসটি বুখারী মুসলিমের শর্ত অনুযায়ী সহিহ

102 – عَنْ عَائِشَةَ، قَالَتْ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ” سِتَّةٌ لَعَنْتُهُمْ لَعَنَهُمُ اللَّهُ وَكُلُّ نَبِيٍّ مُجَابٍ: الْمُكَذِّبُ بِقَدْرِ اللَّهِ، وَالزَّائِدُ فِي كِتَابِ اللَّهِ، وَالْمُتَسَلِّطُ بِالْجَبَرُوتِ يُذِلُّ مَنْ أَعَزَّ اللَّهُ وَيُعِزُّ مَنْ أَذَلَّ اللَّهُ، وَالْمُسْتَحِلُّ لِحُرَمِ اللَّهِ، وَالْمُسْتَحِلُّ مِنْ عِتْرَتِي مَا حَرَّمَ اللَّهُ، وَالتَّارِكُ لِسُنَّتِي

১০২.হযরত আয়িশাহ (রা) বর্ণনা করেন। রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন- ছয়টি বিষয় এমন যার প্রতি আমি লানত করি এবং আল্লাহও লানত করেন আর যেখানে নবীদের দুআ কবুল হয়ে থাকে। ১.আল্লাহর নির্ধারিত তাকদীরকে অস্বীকারকারী। ২.আল্লাহর কিতাব (কুরআন) নিয়ে বাড়াবাড়িকারী। ৩.আল্লাহর বিধানকে নিজের কর্তৃত্বে আনয়নকারী (স্বৈরশাসক), ফলে সে তাকে অপদস্থ করে যাকে আল্লাহ সম্মানিত করেছেন আর তাকে সম্মানিত করে যাকে আল্লাহ অপদস্থ করেছেন। ৪.আল্লাহর হারামকৃত বিষয়কে যে হালাল করে। ৫.আমার আহলে বায়তের রক্তপাতকে যে হালাল জ্ঞান করে– যা আল্লাহ হারাম করেছেন এবং ৬.সুন্নাহ বর্জনকারী।

هَذَا حَدِيثٌ صَحِيحُ الْإِسْنَادِ

 হাদিসটির সনদ সহিহ

103 –عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: جَاءَ رَجُلٌ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَ: يَا مُحَمَّدُ أَرَأَيْتَ جَنَّةً عَرْضُهَا السَّمَاوَاتُ وَالْأَرْضُ فَأَيْنَ النَّارُ؟ قَالَ: «أَرَأَيْتَ اللَّيْلَ الَّذِي قَدْ أَلْبَسَ كُلَّ شَيْءٍ فَأَيْنَ جَعَلَ النَّهَارَ؟» قَالَ: اللَّهُ أَعْلَمُ، قَالَ: «كَذَلِكَ يَفْعَلُ اللَّهُ مَا يَشَاءُ»

১০৩.হযরত আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি নবী (সা) এর নিকট উপস্থিত হয়ে আরয করল, হে মুহাম্মদ! জান্নাতের প্রশস্ততা তো আসমান ও যমীনের বরাবর, তবে জাহান্নাম কোথায়? তিনি (সা) বললেন, তুমি কি রাত্রিকে দেখ না, যা সব জায়গায় আসে ও ছড়িয়ে যায়। এখন বল, তখন দিন কোথায় পড়ে ছিল? সে বলল, এটা আল্লাহই ভাল জানেন। রাসূলুল্লাহ (সা) বললেন, অতএব মনে কর ব্যাপারটা এমনই, আল্লাহ যা চান তা করতে পারেন।  

هَذَا حَدِيثٌ صَحِيحٌ عَلَى شَرْطِ الشَّيْخَيْنِ

এই হাদিসটি বুখারী মুসলিমের শর্ত অনুযায়ী সহিহ

104 – عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَا أَدْرِي تُبَّعٌ أَنَبِيًّا كَانَ أَمْ لَا؟ وَمَا أَدْرِي ذَا الْقَرْنَيْنِ أَنَبِيًّا كَانَ أَمْ لَا؟ وَمَا أَدْرِي الْحُدُودُ كَفَّارَاتٌ لِأَهْلِهَا أَمْ لَا؟»

১০৪.হযরত আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন- আমি জানি না তুব্বা (বাদশাহ) নবী ছিলেন কি না? আমি জানি না (বাদশাহ) যুলকারনায়ন নবী ছিলেন কি না? আমি জানি না হদ বা শরীঅতের শাস্তি দ্বারা দণ্ডপ্রাপ্তের গুনাহ মাফ হয়ে যায় কি না?

هَذَا حَدِيثٌ صَحِيحٌ عَلَى شَرْطِ الشَّيْخَيْنِ

এই হাদিসটি বুখারী মুসলিমের শর্ত অনুযায়ী সহিহ

105 – عَنْ أَنَسٍ، عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: «لَمَّا خَلَقَ اللَّهُ آدَمَ صَوَّرَهُ وَتَرَكَهُ فِي الْجَنَّةِ مَا شَاءَ اللَّهُ أَنْ يَتْرُكَهُ، فَجَعَلَ إِبْلِيسُ يُطِيفُ بِهِ، فَلَمَّا رَآهُ أَجْوَفَ عَرَفَ أَنَّهُ خَلْقٌ لَا يَتَمَالَكُ»

১০৫.হযরত আনাস (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন- আল্লাহ তাআলা যখন হযরত আদম (আ)-কে সৃষ্টি করার ইচ্ছা করলেন, তখন তার অবয়ব তৈরী করে যে পর্যন্ত চাইলেন, জান্নাতে রেখে দিলেন। ইবলিস তার আশপাশে ঘুরাফিরা করতে লাগল। যখন সে দেখল যে, এর ভেতর দিক খালি, তখন সে বুঝল যে, এটা এমন মাখলুক যে তার নিজর উপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারবে না।

هَذَا حَدِيثٌ صَحِيحٌ عَلَى شَرْطِ مُسْلِمٍ

এই হাদিসটি মুসলিমের শর্ত অনুযায়ী সহিহ

106 – عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَتَتَّبِعُنَّ سَنَنَ مَنْ قَبْلَكُمْ بَاعًا فَبَاعًا، وَذِرَاعًا فَذِرَاعًا، وَشِبْرًا فَشِبْرًا، حَتَّى لَوْ دَخَلُوا جُحْرَ ضَبٍّ لَدَخَلْتُمُوهُ مَعَهُمْ» قَالَ: قِيلَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ الْيَهُودُ وَالنَّصَارَى، قَالَ: «فَمَنْ إِذًا؟»

১০৬.হযরত আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন- তোমরা অবশ্যই তোমাদের পূর্ববর্তীদের মত ও পথ অনুসরণ করবে প্রতি হাতে হাতে, প্রতি গজে গজে এবং প্রতি বিঘতে বিঘতে । এমনকি তারা যদি গুঁই সাপের গর্তেও প্রবেশ করে থাকে তবে তোমরাও তাতে প্রবেশ করবে। সাহাবীগণ বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ্! আপনি কি ইহুদী ও খৃষ্টানদের কথা বলছেন? নবী (সা) বললেন, তবে এরা ছাড়া আর কারা?

هَذَا حَدِيثٌ صَحِيحٌ عَلَى شَرْطِ مُسْلِمٍ

এই হাদীসটি ইমাম মুসলিমের শর্ত অনুযায়ী সহিহ

107 – عَنْ زَاذَانَ أَبِي عُمَرَ، قَالَ: سَمِعْتُ الْبَرَاءَ بْنَ عَازِبٍ، يَقُولُ: خَرَجْنَا مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي جَنَازَةِ رَجُلٍ مِنَ الْأَنْصَارِ فَانْتَهَيْنَا إِلَى الْقَبْرِ وَلَمَّا يُلْحَدْ بَعْدُ، قَالَ: فَقَعَدْنَا حَوْلَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَجَعَلَ يَنْظُرُ إِلَى السَّمَاءِ وَيَنْظُرُ إِلَى الْأَرْضِ، وَجَعَلَ يَرْفَعُ بَصَرَهُ وَيَخْفِضُهُ ثَلَاثًا ثُمَّ قَالَ: «اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ» ثُمَّ قَالَ: «إِنَّ الرَّجُلَ الْمُسْلِمَ إِذَا كَانَ فِي قُبُلٍ مِنَ الْآخِرَةِ وَانْقِطَاعٍ مِنَ الدُّنْيَا جَاءَ مَلَكُ الْمَوْتِ فَقَعَدَ عِنْدَ رَأْسِهِ، وَيَنْزِلُ مَلَائِكَةٌ مِنَ السَّمَاءِ كَأَنَّ وُجُوهَهُمُ الشَّمْسُ مَعَهُمْ أَكْفَانٌ مِنْ أَكْفَانِ الْجَنَّةِ وَحَنُوطٌ مِنْ حَنُوطِ الْجَنَّةِ، فَيَقْعُدُونَ مِنْهُ مَدَّ الْبَصَرِ» قَالَ: ” فَيَقُولُ مَلَكُ الْمَوْتِ: أَيَّتُهَا النَّفْسُ الْمُطْمَئِنَّةُ اخْرُجِي إِلَى مَغْفِرَةٍ مِنَ اللَّهِ وَرِضْوَانٍ ” قَالَ: ” فَتَخْرُجُ تَسِيلُ كَمَا تَسِيلُ الْقَطْرَةُ مِنَ السِّقَاءِ، فَلَا يَتْرُكُونَهَا فِي يَدِهِ طَرْفَةَ عَيْنٍ، فَيَصْعَدُونَ بِهَا إِلَى السَّمَاءِ، فَلَا يَمُرُّونَ بِهَا عَلَى جُنْدٍ مِنْ مَلَائِكَةٍ إِلَّا قَالُوا: مَا هَذِهِ الرُّوحُ الطَّيِّبَةُ؟ فَيَقُولُونَ: فُلَانُ بْنُ فُلَانٍ بِأَحْسَنِ أَسْمَائِهِ، فَإِذَا انْتَهَى إِلَى السَّمَاءِ فُتِحَتْ لَهُ أَبْوَابُ السَّمَاءِ، ثُمَّ يُشَيِّعُهُ مِنْ كُلِّ سَمَاءٍ مُقَرَّبُوهَا إِلَى السَّمَاءِ الَّتِي تَلِيهَا، حَتَّى يُنْتَهَى إِلَى السَّمَاءِ السَّابِعَةِ، ثُمَّ يُقَالُ: اكْتُبُوا كِتَابَهُ فِي عِلِّيِّينَ، ثُمَّ يُقَالُ: أَرْجِعُوا عَبْدِي إِلَى الْأَرْضِ، فَإِنِّي وَعَدْتُهُمْ أَنِّي مِنْهَا خَلَقْتُهُمْ وَفِيهَا أُعِيدُهُمْ وَمِنْهَا أُخْرِجُهُمْ تَارَةً أُخْرَى، فَتُرَدُّ رُوحُهُ إِلَى جَسَدِهِ، فَتَأْتِيهِ الْمَلَائِكَةُ فَيَقُولُونَ: مَنْ رَبُّكَ؟ قَالَ: فَيَقُولُ: اللَّهُ، فَيَقُولُونَ: مَا دِينُكَ؟ فَيَقُولُ: الْإِسْلَامُ، فَيَقُولُونَ: مَا هَذَا الرَّجُلُ الَّذِي خَرَجَ فِيكُمْ؟ قَالَ: فَيَقُولُ: رَسُولُ اللَّهِ، قَالَ: فَيَقُولُونَ: وَمَا يُدْرِيكَ؟ قَالَ: فَيَقُولُ: قَرَأْتُ كِتَابَ اللَّهِ فَآمَنْتُ بِهِ وَصَدَّقْتُ، قَالَ: فَيُنَادِي مُنَادٍ مِنَ السَّمَاءِ أَنْ صَدَقَ فَأَفْرِشُوهُ مِنَ الْجَنَّةِ وَأَلْبِسُوهُ مِنَ الْجَنَّةِ وَأَرُوهُ مَنْزِلَهُ مِنَ الْجَنَّةِ، قَالَ: وَيُمَدُّ لَهُ فِي قَبْرِهِ وَيَأْتِيهِ رَوْحُ الْجَنَّةِ وَرِيحُهَا، قَالَ: فَيُفْعَلُ ذَلِكَ بِهِمْ، وَيَمْثُلُ لَهُ رَجُلٌ حَسَنُ الْوَجْهِ حَسَنُ الثِّيَابِ طَيِّبُ الرِّيحِ فَيَقُولُ: أَبْشِرْ بِالَّذِي يَسُرُّكَ هَذَا يَوْمُكَ الَّذِي كُنْتَ تُوعَدُ، فَيَقُولُ: مَنْ أَنْتَ فَوَجْهُكَ وَجْهٌ يُبَشِّرُ بِالْخَيْرِ؟ قَالَ: فَيَقُولُ أَنَا عَمَلُكَ الصَّالِحُ، قَالَ: فَهُوَ يَقُولُ: رَبِّ أَقِمِ السَّاعَةَ كَيْ أَرْجِعَ إِلَى أَهْلِي وَمَالِي، ثُمَّ قَرَأَ {يُثَبِّتُ اللَّهُ الَّذِينَ آمَنُوا بِالْقَوْلِ الثَّابِتِ فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَفِي الْآخِرَةِ} براهيم: 27] . وَأَمَّا الْفَاجِرُ فَإِذَا كَانَ فِي قُبُلٍ مِنَ الْآخِرَةِ وَانْقِطَاعٍ مِنَ الدُّنْيَا أَتَاهُ مَلَكُ الْمَوْتِ فَيَقْعُدُ عِنْدَ رَأْسِهِ وَيَنْزِلُ الْمَلَائِكَةُ سُودُ الْوُجُوهِ مَعَهُمُ الْمُسُوحُ فَيَقْعُدُونَ مِنْهُ مَدَّ الْبَصَرِ، فَيَقُولُ مَلَكُ الْمَوْتِ: اخْرُجِي أَيَّتُهَا النَّفْسُ الْخَبِيثَةُ إِلَى سَخَطٍ مِنَ اللَّهِ وَغَضِبٍ، قَالَ: فَتُفَرَّقُ فِي جَسَدِهِ فَيَنْقَطِعُ مَعَهَا الْعُرُوقُ وَالْعَصَبُ كَمَا يُسْتَخْرَجُ الصُّوفُ الْمَبْلُولُ بِالسَّفُودِ ذِي الشُّعَبِ، قَالَ: فَيَقُومُونَ إِلَيْهِ فَلَا يَدَعُونَهُ فِي يَدِهِ طَرْفَةَ عَيْنٍ فَيَصْعَدُونَ بِهَا إِلَى السَّمَاءِ فَلَا يَمُرُّونَ عَلَى جُنْدٍ مِنَ الْمَلَائِكَةِ إِلَّا، قَالُوا: مَا هَذِهِ الرُّوحُ الْخَبِيثَةُ؟ قَالَ: فَيَقُولُونَ: فُلَانٌ بِأَقْبَحِ أَسْمَائِهِ، قَالَ: فَإِذَا انْتُهِيَ بِهِ إِلَى السَّمَاءِ غُلِّقَتْ دُونَهُ أَبْوَابُ السَّمَاوَاتِ، قَالَ: وَيُقَالُ اكْتُبُوا كِتَابَهُ فِي سِجِّينٍ، قَالَ: ثُمَّ يُقَالُ: أَعِيدُوا عَبْدِي إِلَى الْأَرْضِ فَإِنِّي وَعَدْتُهُمْ أَنِّي مِنْهَا خَلَقْتُهُمْ وَفِيهَا أُعِيدُهُمْ وَمِنْهَا أُخْرِجُهُمْ تَارَةً أُخْرَى، قَالَ: فَيَرْمَى بِرُوحِهِ حَتَّى تَقَعَ فِي جَسَدِهِ، قَالَ: ثُمَّ قَرَأَ {وَمَنْ يُشْرِكْ بِاللَّهِ فَكَأَنَّمَا خَرَّ مِنَ السَّمَاءِ فَتَخْطَفُهُ الطَّيْرُ أَوْ تَهْوِي بِهِ الرِّيحُ فِي مَكَانٍ سَحِيقٍ} [الحج: 31] قَالَ: فَتَأْتِيهِ الْمَلَائِكَةُ فَيَقُولُونَ: مَنْ رَبُّكَ؟ قَالَ: فَيَقُولُ: لَا أَدْرِي، فَيُنَادِي مُنَادٍ مِنَ السَّمَاءِ أَنْ قَدْ كَذَبَ فَأَفْرِشُوهُ مِنَ النَّارِ وَأَلْبِسُوهُ مِنَ النَّارِ وَأَرُوهُ مَنْزِلَهُ مِنَ النَّارِ، قَالَ: فَيَضِيقُ عَلَيْهِ قَبْرُهُ حَتَّى تَخْتَلِفَ فِيهِ أَضْلَاعُهُ، قَالَ: وَيَأْتِيهِ رِيحُهَا وَحَرُّهَا، قَالَ: فَيُفْعَلُ بِهِ ذَلِكَ، وَيَمْثُلُ لَهُ رَجُلٌ قَبِيحُ الْوَجْهِ قَبِيحُ الثِّيَابِ مُنْتِنُ الرِّيحِ فَيَقُولُ: أَبْشِرْ بِالَّذِي يَسُؤْكَ هَذَا يَوْمُكَ الَّذِي كُنْتَ تُوعَدُ، قَالَ: فَيَقُولُ: مَنْ أَنْتَ؟ فَوَجْهُكَ الْوَجْهُ يُبَشِّرُ بِالشَّرِّ، قَالَ: فَيَقُولُ: أَنَا عَمَلُكَ الْخَبِيثُ، قَالَ: وَهُوَ يَقُولُ: رَبِّ لَا تُقِمِ السَّاعَةَ “.

১০৭.হযরত বারা ইবনে আজিব (রা) বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ (সা) এর সাথে আমাদের একজন সঙ্গী সাহাবীর জানাযায় গেলাম এবং কবর পর্যন্ত পৌঁছলাম। তাকে তখনও দাফন করা হয়নি। আমরা নবী (সা) এর পাশে বসে গেলাম। তিনি (সা) কখনও আসমানের দিকে দেখছিলেন আবার কখনও যমীনের দিকে দেখছিলেন। এভাবে তিনবার উপরে নিচে দেখলেন এবং বললেন- হে আল্লাহ! আমি কবরের আযাব থেকে তোমার আশ্রয় চাই।

অতঃপর বললেন, যখন কোন মুসলমান শেষ সময়ে দুনিয়া ছেড়ে যায় তখন মৃত্যুর ফেশেতা এসে তার মাথার কাছে বসে। অতঃপর আসমান থেকে এমন ফেরেশতারা নেমে আসেন যাদের চেহারা সূর্যের মত চমকাতে থাকে এবং তাদের হাতে থাকে জান্নাতী কাফন ও সুগন্ধী। তার দৃষ্টির শেষ সীমা পর্যন্ত পরিব্যপ্ত হয়।

অতঃপর মৃত্যুর ফেরেশতা বলে, হে প্রশান্ত আত্মা! বের হয়ে আস আল্লাহর ক্ষমা ও সন্তুষ্টির দিকে। অতএব তার রূহ এমন সহজভাবে বের হয় যেমনভাবে পাত্র থেকে পানির ফোটা বের হয়। (এরপর) আসমানের ফেরেশতারা সেই রূহকে মুহুর্তের জন্যও মৃত্যুর ফেরেশতার হাতে থাকতে দেন না বরং তাকে সাথে সাথেই আসমানের দিকে নিয়ে যেতে থাকেন। অতঃপর ফেরেশতাদের যেই দলের সামনে দিয়েই তা নিয়ে যাওয়া হয় তখন তারা জিজ্ঞাসা করে- এই পবিত্র রূহ কার? ফেরেশতারা তার উত্তম উপাধি দিয়ে বলে, সে অমুকের পুত্র অমুক। যখন তাকে আসমানের নিকট নিয়ে যাওয়া হয় তখন তার জন্য আসমানের দরজা খুলে দেয়া হয়। অতঃপর পরবর্তী আসমানে যাওয়ার সময়ে সেখানের ফেরেশতারাও তার সঙ্গী হয়। আর সপ্ত আসমান পৌঁছানো পর্যন্ত এমন চলতে থাকে।

অতঃপর (আল্লাহর পক্ষ থেকে) বলা হয় তার নাম ইল্লিয়্যিনে (জান্নাতের উচ্চ স্থানে) লিখে রাখ। অতঃপর  বলা হয় তাকে মাটিতে নিয়ে যাও কেননা আমি তাদের সাথে ওয়াদা করেছিলাম যে, আমি তোমাদেরকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছি, মাটিতেই ফিরিয়ে দেব অতঃপর পূণরায় মাটি থেকে উত্থিত করব। অতএব (কবরে) তার রূহ তার শরীরে ফিরিয়ে দেয়া হয় যেখানে ফেরেশতা এসে জিজ্ঞাসা করে – তোমার রব কে? সে বলে, আল্লাহ। অতঃপর জিজ্ঞাসা করে, তোমার দীন কি? সে বলে, ইসলাম। অতঃপর জিজ্ঞাসা করে এই ব্যক্তি কে, যে তোমার কাছে এসেছিল। সে বলবে, ইনি আল্লাহর রাসূল।

অতঃপর জিজ্ঞাসা করা হবে, তোমাকে তার ব্যাপারে কে অবগত করিয়েছে? সে বলবে, আমি আল্লাহর কিতাব পড়েছি, তার উপর ইমান এনেছি এবং এটাকে সত্য জেনেছি। তখন আসমান থেকে আওয়ায আসবে যে, সে সত্য বলেছে। অতএব তার জন্য জান্নাতের বিছানা বিছিয়ে দাও, জান্নাতের পোষাক পরিয়ে দাও এবং তাকে জান্নাতের ঠিকানা দেখিয়ে দাও। অতএব তার কবরকে প্রশস্ত করে দেয়া হয় এবং কবরে জান্নাতের সুগন্ধী পৌঁছানো শুরু হয়।

বর্ণনাকারী বলেন, তার সাথে এমন ব্যবহার করা হয়। অতঃপর মানুষের সুরতে সুন্দর চেহারা বিশিষ্ট ও সুন্দর কাপড় পরিধানকারী এবং সুভাসিত সুগন্ধে পরিপূর্ণ এক ব্যক্তি তার সামনে আসে এবং বলে, এই প্রাপ্ত সুখ ও আনন্দের জন্য আনন্দিত হও, কেননা এটাই সেই দিন তোমাকে যার ওয়াদা  করা হয়েছিল। সে জিজ্ঞাসা করবে, তুমি কে? কেননা তোমার চেহারা আনন্দে উদ্বেলিত দেখা যাচ্ছে। তখন সেই ব্যক্তি বলবে, আমি তোমার নেক আমল। তখন সে বলবে, হে আল্লাহ! কিয়ামতকে নিকটবর্তী করে দাও, যেন আমি আমার পরিবার-পরিজন ও মাল-দৌলতের নিকট যেতে পারি।

এখানে রাসূলুল্লাহ (সা) এই আয়াত তিলাওয়াত করেন-

يُثَبِّتُ اللَّهُ الَّذِينَ آَمَنُوا بِالْقَوْلِ الثَّابِتِ فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَفِي الْآَخِرَةِ

আল্লাহ তাআলা ইমানদারগণকে দৃঢ় রাখেন দৃঢ় কালিমা দ্বারা দুনিয়া ও আখিরাতে।– সূরা ইবরাহিম ২৭

আর কাফির ব্যক্তি যখন দুনিয়ার ছেড়ে যায়, তখন মৃত্যুর ফেশেতা এসে তার মাথার কাছে বসে। অতঃপর আসমান থেকে কালো চেহারা বিশিষ্ট ফেরেশতারা নেমে আসেন। তাদের সাথে কাঁটাযুক্ত কাফনের কাপড় থাকে। দৃষ্টির শেষ সীমা পর্যন্ত তারা পরিব্যপ্ত হয়। তারপর মালাকুল মউত বলেন, হে নিকৃষ্ট আত্মা আল্লাহর অসন্তুষ্টি ও আযাবের দিকে বেরিয়ে আস! একথা শুনে রূহ তার সারা দেহে ছড়িয়ে পড়ে। যার ফলে তার রগ ও শিরা উপশিরা ভেদ করে রূহ এভাবে বের হয়, যেভাবে লোহার গরম শলাকা ভিজা তুলা হতে টেনে বের করা হয়।

রূহ বের করার পর ফেরেশতরা এক মুহুর্তের জন্যও মালাকুল মউত এর হাতে রূহ থাকতে দেন না বরং তাকে নিয়ে আসমানের দিকে চলে যান। অতঃপর ফেরেশতাদের যেই দলের সামনে দিয়েই তারা অতিক্রম করেন তারা বলেন, এই অপবিত্র রূহ কার? ফেরেশতরা তার নিকৃষ্ট উপাধি দিয়ে বলে এ অমুকের পুত্র অমুক। যখন তারা তাকে আসমানের দিকে নিয়ে পৌঁছান তখন তার জন্য আসমানের দরজা খোলা হয় না। বলা হয় তার নাম সিজ্জীনে (জাহান্নামের নিম্ন গহরে) লিখে দাও। আমার এই বান্দাকে মাটিতে নিয়ে যাও। কেননা আমি তোদের সাথে অঙ্গীকার করেছি যে, তোমাদেরকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছি, মাটিতে ফিরিয়ে দিব অতঃপর মাটি থেকেই উত্থিত করব। অতঃপর তার রূহকে ছুঁড়ে ফেলা হয়, যা তার শরীরে পৌছে। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সা) এই আয়াত তিলাওয়াত করেন-

وَمَنْ يُشْرِكْ بِاللَّهِ فَكَأَنَّمَا خَرَّ مِنَ السَّمَاءِ فَتَخْطَفُهُ الطَّيْرُ أَوْ تَهْوِي بِهِ الرِّيحُ فِي مَكَانٍ سَحِيقٍ

যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে শিরক করে, সে যেন আকাশ থেকে পড়ে গেল। এখন উহাকে পাখি ছোঁ মেরে নিয়ে যাক অথবা বাতাস কোন দূরপ্রান্তে উড়িয়ে নিক।– সূরা হাজ ৩১

বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর তার নিকট ফেরেশতা এসে বলে, তোমার রব কে? সে বলবে আমি জানি  না। তখন আসমান থেকে আওয়ায আসবে, সে মিথ্যাবাদি। তার জন্য জাহান্নামের শয্যা বিছিয়ে দাও, জাহান্নামী পোষাক পরিয়ে দাও এবং তাকে জাহান্নামের ঠিকানা দেখিয়ে দাও। অতএব তার কবর তখন এভাবে সংকীর্ণ করে দেয়া হয় যে, তার এক পাশের হাড় অপর পার্শ্বে ঢুকে যায়। আর জাহান্নামের দুর্গন্ধ আর তাপ তার কবরে পৌঁছতে শুরু করে।

অতঃপর মানুষের অবয়বে ‍নিকৃষ্ট চেহারা বিশিষ্ট, দুর্গন্ধযুক্ত কাপড় পরিহিত এবং দুর্গন্ধযুক্ত এক ব্যক্তি তার কবরে আসে এবং বলে ঐ সব নিকৃষ্ট কার্যাবলীর জন্য খুশি হও (দুনিয়াতে যা তুমি করতে)। এটা্ সেই দিন যেদিনের ওয়াদা তোমার সাথে করা হয়েছিল। সে বলবে তুমি কে? তোমার চেহার খুব নিকৃষ্ট বোধ হচ্ছে। সে বলবে আমিই তোমার নিকৃষ্ট আমল। তখন সে বলবে, হে আল্লাহ! কিয়ামত কায়েম করো না।

108 – عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ نَحْوًا مِنَ هَذَا الْحَدِيثِ يُرِيدُ حَدِيثَ الْبَرَاءِ إِلَّا أَنَّهُ قَالَ: ” ارْقُدْ رَقْدَةَ الْمُتَّقِينَ، لِلْمُؤْمِنِ الْأَوَّلِ، وَيُقَالُ لِلْفَاجِرِ: ارْقُدْ مَنْهُوشًا، فَمَا مِنْ دَابَّةٍ فِي الْأَرْضِ إِلَّا وَلَهَا فِي جَسَدِهِ نَصِيبٌ.

১০৮.হযরত আবু হুরায়রা (রা) বর্ণিত হাদীসে বারা (রা) এর বর্ণিত হাদীসের থেকে এতটুকু বেশী আছে যে, তিনি বলেন, মুমিন ব্যক্তিকে বলা হয়, এভাবে শয়ন কর যেভাবে মুত্তাকীরা শয়ন করে। আর কাফিরকে বলা হবে, এভাবে শয়ন কর যেভাবে সাপে দংশিত ব্যক্তি শয়ন করে। অতএব যমীনের কীট-প্রতঙ্গ তার দেহে অংশ নেয় (ভক্ষণ করে)।

109 – عَنِ الْبَرَاءِ، قَالَ: «خَرَجْنَا مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي جَنَازَةٍ فَأَتَيْنَا الْقَبْرَ وَلَمَّا يُلْحَدْ» . وَذَكَرَ الْحَدِيثَ. وَأَمَّا حَدِيثُ شُعْبَةَ

১০৯.হযরত বারা ইবনে আজিব (রা) বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ (সা) এর সাথে আমাদের একজন সঙ্গী সাহাবীর জানাযায় গেলাম এবং কবর পর্যন্ত পৌছলাম। তাকে তখনও দাফন করা হয়নি। অতঃপর তিনি বাকী হাদীস বর্ণনা করেন।

110 –  عَنِ الْبَرَاءِ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي حَدِيثِ الْقَبْرِ.

১১০.হযরত বারা ইবনে আযিব (রা) এর মাধ্যমে নবী কারীম (সা) এর কবর প্রসঙ্গের হাদীস বর্ণিত হয়েছে।

111 – عَنِ الْبَرَاءِ، قَالَ: «صَلَّيْنَا مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى جَنَازَةِ رَجُلٍ مِنَ الْأَنْصَارِ» – فَذَكَرَ حَدِيثَ الْقَبْرِ بِطُولِهِ

হযরত বারা ইবনে আজিব (রা) বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ (সা) এর সাথে আমাদের একজন আনসারীর জানাযা পড়লাম। অতঃপর তিনি বাকী দীর্ঘ হাদীস বর্ণনা করেন।

هَذَا حَدِيثٌ صَحِيحٌ عَلَى شَرْطِ الشَّيْخَيْنِ

এই হাদীসটি বুখারী ও মুসলিমের শর্ত অনুযায়ী সহিহ

وَفِي هَذَا الْحَدِيثِ فَوَائِدُ كَثِيرَةٌ لِأَهْلِ السُّنَّةِ وَقَمْعٌ لِلْمُبْتَدِعَةِ

এই হাদীসে আহলে সুন্নতের জন্য অনেক উপকারী বিষয়সমূহ রয়েছে যা বিদআতের মূল কর্তন করে।

112 – عَنِ الْبَرَاءِ بْنِ عَازِبٍ، قَالَ: «ذَكَرَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْمُؤْمِنَ وَالْكَافِرَ، ثُمَّ ذَكَرَ طَرَفًا مِنْ حَدِيثِ الْقَبْرِ»

হযরত বারা ইবনে আযিব (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) (মৃত্যুর সময়ের) মুমিন ও কাফিরের (অবস্থার) আলোচনা করেছেন। অতঃপর কবর বিষয়ক হাদীসের কিছু অংশ বর্ণনা করেন।

113 – عَنْ أَبِي الْبَخْتَرِيِّ الطَّائِيِّ، سَمِعْتُ الْبَرَاءَ بْنَ عَازِبٍ، أَنَّهُ قَالَ: «خَرَجْنَا مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي جَنَازَةِ رَجُلٍ مِنَ الْأَنْصَارِ فَأَتَيْنَا الْقَبْرَ، وَلَمَّا يُلْحَدْ فَجَلَسَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَاسْتَقْبَلَ الْقِبْلَةَ وَجَلَسْنَا حَوْلَهُ» – ثُمَّ ذَكَرَ الْحَدِيثَ

১১৩.হযরত আবুল বুখতারী আত তায়ী বলেন, আমি শুনেছি হযরত বারা ইবনে আযিব (রা) থেকে তিনি বলেন- আমরা একজন আনসারীর জানাযায় শরীক হওয়ার জন্য রাসূলুল্লাহ (সা) এর সাথে গেলাম। আমরা কবরের নিকট পৌঁছলাম কিন্তু তখনও তাকে দাফন করা হয়নি। রাসূলুল্লাহ (সা) কিবলার দিকে মুখ করে বসে গেলন আর আমরা তার আশ-পাশে বসে গেলাম। অতঃপর হাদীস বর্ণনা করলেন।

 114 –عَنِ الْبَرَاءِ بْنِ عَازِبٍ، وَفِي حَدِيثِ عَبَّادِ بْنِ عَبَّادٍ، أَنَّهُ سَمِعَ الْبَرَاءَ بْنَ عَازِبٍ، قَالَ: «خَرَجْنَا مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي جَنَازَةٍ، فَجَلَسَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى الْقَبْرِ وَجَلَسْنَا حَوْلَهُ» – وَذَكَرَ الْحَدِيثَ بِطُولِهِ –

হযরত বারা ইবনে আযিব (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন- আমরা কোন এক জানাযায় অংশ নেয়ার জন্য রাসূলুল্লাহ (সা) এর সাথে গেলাম। রাসূলুল্লাহ (সা) একটি কবরের পাশে বসে গেলেন আর আমরাও তার আশ-পাশে বসে গেলাম। অতঃপর তিনি দীর্ঘ হাদীস বর্ণনা করেন।

115 – فَحدثنا أَبُو الْعَبَّاسِ مُحَمَّدُ بْنُ يَعْقُوبَ، ثنا السَّرِيُّ بْنُ يَحْيَى التَّمِيمِيُّ، ثنا أَبُو غَسَّانَ، ثنا عَبْدُ السَّلَامِ بْنُ حَرْبٍ، ثنا أَبُو خَالِدٍ الدَّالَانِيُّ، عَنِ الْمِنْهَالِ بْنِ عَمْرٍو. «وَأَمَّا حَدِيثُ عَمْرِو بْنِ قَيْسٍ الْمُلَائِيُّ»

১১৫. উক্ত হাদীসের সনদ বিষয়ক।

116 – فَحَدَّثَنَاهُ أَبُو بَكْرٍ مُحَمَّدُ بْنُ أَحْمَدَ بْنِ بَالَوَيْهِ، ثنا أَحْمَدُ بْنُ بِشْرٍ الْمَرْثَدِيُّ، ثنا الْقَاسِمُ بْنُ مُحَمَّدِ بْنِ أَبِي شَيْبَةَ، ثنا أَبُو خَالِدٍ الْأَحْمَرُ، عَنْ عَمْرِو بْنِ قَيْسٍ الْمُلَائِيِّ، عَنِ الْمِنْهَالِ بْنِ عَمْرٍو. «وَأَمَّا حَدِيثُ الْحَسَنِ بْنِ عُبَيْدِ اللَّهِ»

১১৬.উক্ত হাদীসের সনদ বিষয়ক।

117 – فَحَدَّثَنَاهُ أَبُو مُحَمَّدٍ أَحْمَدُ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ الْمُزَنِيُّ، ثنا مُحَمَّدُ بْنُ عُثْمَانَ بْنِ أَبِي شَيْبَةَ، ثنا أَحْمَدُ بْنُ يُونُسَ، ثنا أَبُو بَكْرِ بْنُ عَيَّاشٍ، ثنا الْحَسَنُ بْنُ عُبَيْدِ اللَّهِ، عَنِ الْمِنْهَالِ، كُلُّهُمْ قَالُوا: عَنْ زَاذَانَ، عَنِ الْبَرَاءِ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَحْوَهُ. ”

১১৭.উক্ত হাদীসের সনদ বিষয়ক।

هَذِهِ الْأَسَانِيدُ الَّتِي ذَكَرْتُهَا كُلُّهَا صَحِيحَةٌ عَلَى شَرْطِ الشَّيْخَيْنِ

এখানে যতগুলো সনদ আমি বর্ণনা করেছি তা সব বুখারী ও মুসলিমের শর্ত অনুযায়ী সহিহ।

            118 – عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، قَالَ: بَيْنَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَبِلَالٌ يَمْشِيَانِ بِالْبَقِيعِ، فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «يَا بِلَالُ هَلْ تَسْمَعُ مَا أَسْمَعُ؟» قَالَ: لَا وَاللَّهِ يَا رَسُولَ اللَّهِ مَا أَسْمَعُهُ، قَالَ: «أَلَا تَسْمَعُ أَهْلَ الْقُبُورِ يُعَذَّبُونَ»

১১৮.হযরত আনাস (রা) বর্ণনা করেন। ঐ সময়ে যখন রাসূলুল্লাহ (সা) এবং বিলাল (রা) বাকী (গোরস্থানে) ঘুরছিলেন। রাসূলুল্লাহ (সা) বললেন, হে বিলাল! তুমি কি সেসব শুনতে পাচ্ছ যা আমি শুনতে পাচ্ছি? সে বলল, আল্লাহর শপথ! ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি কিছুই শুনতে পাচ্ছি না। তিনি বললেন, তুমি কি কবরবাসীদের আযাব হওয়ার আওয়ায শুনতে পাচ্ছ না?

هَذَا حَدِيثٌ صَحِيحٌ عَلَى شَرْطِ الشَّيْخَيْنِ

এই হাদীস ইমাম বুখারী ও মুসলিমের শর্ত অনুযায়ী সহিহ

عَنْ أَنَسٍ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنَّهُ قَالَ: «لَوْلَا أَنْ تَدَافَنُوا لَسَأَلْتُ اللَّهَ عَنْهُ أَنْ يُسْمِعَكُمْ عَذَابَ الْقَبْرِ»

হযরত আনাস (রা) বর্ণনা করেন। তিনি রাসূলুল্লাহ (সা) থেকে শুনেছেন, তিনি বলেছেন, যদি তোমাদের মৃতদেরকে দাফন না করা হত তবে আমি আল্লাহর নিকট আরয করতাম যেন কবরের আযাব তোমরা শুনতে পাও।

119 – عَنْ عَطَاءِ بْنِ يَسَارٍ، أَنَّ أَبَا سَعِيدٍ الْخُدْرِيَّ، دَخَلَ عَلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَهُوَ مَوْعُوكٌ، عَلَيْهِ قَطِيفَةٌ، وَوَضَعَ يَدَهُ عَلَيْهَا فَوَجَدَ حَرَارَتَهَا فَوْقَ الْقَطِيفَةِ، فَقَالَ أَبُو سَعِيدٍ: مَا أَشَدَّ حَرَّ حُمَّاكَ يَا رَسُولَ اللَّهِ؟، فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّا كَذَلِكَ يُشَدَّدُ عَلَيْنَا الْبَلَاءُ وَيُضَاعَفُ لَنَا الْأَجْرُ» ثُمَّ قَالَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، مَنْ أَشَدُّ النَّاسِ بَلَاءً؟ قَالَ: «الْأَنْبِيَاءُ» قَالَ: ثُمَّ مَنْ؟ قَالَ: «الْعُلَمَاءُ» قَالَ: ثُمَّ مَنْ؟ قَالَ: «ثُمَّ الصَّالِحُونَ» كَانَ أَحَدُهُمْ يُبْتَلَى بِالْفَقْرِ حَتَّى مَا يَجِدُ إِلَّا الْعَبَاءَةَ يَلْبَسُهَا، وَيُبْتَلَى بِالْقُمَّلِ حَتَّى تَقْتُلَهُ، وَلَأَحَدُهُمْ كَانَ أَشَدَّ فَرَحًا بِالْبَلَاءِ مِنْ أَحَدِكُمْ بِالْعَطَاءِ

১১৯.হযরত আতা ইবনে ইয়াসার (রা) বর্ণনা করেন। হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রা) রাসূলুল্লাহ (সা) এর নিকট উপস্থিত হলেন। রাসূলুল্লাহ (সা) জ্বরাক্রান্ত ছিলেন এবং চাদর গায়ে দিয়ে শুয়ে ছিলেন। তিনি হাত চাদরের উপর রাখলে গরম অনুভূত হলেো। তখন আবু সাঈদ খুদরী (রা) বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনার তো খুব জ্বর! রাসূলুল্লাহ (সা) বললেন, আমাদের (নবীদের) বিপদ ও পরীক্ষা খুব কঠিন হয় এবং প্রতিদানও দ্বিগুণ হয়। 

অতঃপর জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! কঠিন পরীক্ষা কাদের হয়? তিনি বললেন, নবীদের। তারপর জিজ্ঞাসা করলেন, তারপর কাদের? তিনি বললেন, আলিমদের। জিজ্ঞাসা করলেন, তারপর কাদের? তিনি বললেন, নেক লোকদের। তাদের কাউকে দারিদ্রতার দ্বারা বিপদগ্রস্ত করা হয় এমনকি (কখনো) শরীর ঢাকার জন্য  কাপড়ও পায় না তারা। কখনো (শরীরে) উকুন (বা কোন রোগ ব্যাধি দ্বারা) দ্বারা বিপদগ্রস্ত করা হয় এমনকি তাদেরকে তা হত্যা করে ফেলে। তথাপি তারা এই সব বিপদাপদ দ্বারা এতটা খুশি হয়, যতটা না তোমরা কিছু পেলে খুশি হও।

120 – عَنْ مُصْعَبِ بْنِ سَعْدٍ، عَنْ أَبِيهِ، قَالَ: سُئِلَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: أَيُّ النَّاسِ أَشَدُّ بَلَاءً؟ قَالَ: «الْأَنْبِيَاءُ، ثُمَّ الْأَمْثَلُ فَالْأَمْثَلُ، فَإِذَا كَانَ الرَّجُلُ صُلْبَ الدِّينِ يُبْتَلَى الرَّجُلُ عَلَى قَدْرِ دِينِهِ، فَمَنْ ثَخُنَ دِينُهُ ثَخُنَ بَلَاؤُهُ، وَمَنْ ضَعُفَ دِينُهُ ضَعُفَ بَلَاؤُهُ»

১২০.হযরত মুসআব (রা) এর পিতা হযরত সাদ (রা) বলেন- রাসূলুল্লাহ (সা) কে জিজ্ঞাসা করা হলো সবচেয়ে কঠিন বিপদ বা পরীক্ষা কাদের হয়? তিনি (সা) বললেন, নবীদের। অতঃপর যার যার মর্যাদা অনুযায়ী অন্যদের। যে ব্যক্তি তার দীনের ব্যাপারে দৃঢ় হয় সে তার দীনের দৃঢ়তা অনুযায়ী পরীক্ষা বা বিপদে নিপতিত হয়। যার দীন যত দৃঢ় ও মজবুত হবে তার পরীক্ষা ও বিপদাপদও তত কঠিন হবে। আর যার দীন দুর্বল তার বিপদ বা পরীক্ষাও দুর্বল বা কম হবে।

وَهَذَا حَدِيثٌ صَحِيحٌ عَلَى شَرْطِ الشَّيْخَيْنِ

এই হাদীসটি শায়খাইনের শর্ত অনুযায়ী সহিহ

 

 

 

 

 

 

 

 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to top button
error: Content is protected !!