sahih hakim সহিহ হাকীম – কিতাবুল ইমান
দারুস সাআদাত গ্রন্থ
গ্রন্থঃ আল মুস্তাদরাক হাকীম
লেখকঃ ইমাম হাকীম নিশাপুরী (রহ)
অনুবাদঃ দারুস সাআদাত কর্তৃক অনূদিত
স্বত্বঃ দারুস সাআদাত কর্তৃক সংরক্ষিত, বিনানুমতিতে কপি করা, মূদ্রণ করা বা এপে ব্যবহার করা আইনত দণ্ডনীয়। কেউ করলে আইনগত পদক্ষেপ নেয়া হবে।
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ
আল মুস্তাদরাক হাকীম
কিতাবুল ইমান
1 – عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَكْمَلُ الْمُؤْمِنِينَ إِيمَانًا أَحْسَنُهُمْ خُلُقًا»
১. হযরত আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন- মুমিনদের মধ্যে পরিপূর্ণ ইমানদার ঐ ব্যক্তি যার চরিত্র সবচাইতে উত্তম।
2 – عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ نَبِيَّ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: «أَكْمَلُ الْمُؤْمِنِينَ إِيمَانًا أَحْسَنُهُمْ خُلُقًا»
২. [ভিন্ন সূত্রে] হযরত আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন- মুমিনদের মধ্যে পরিপূর্ণ ইমানদার ঐ ব্যক্তি যার চরিত্র সবচাইতে উত্তম।
هَذَا حَدِيثٌ صَحِيحٌ এই হাদীসটি সহিহ
3 – عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: «مَنْ سَرَّهُ أَنْ يَجِدْ حَلَاوَةَ الْإِيمَانِ، فَلْيُحِبِ الْمَرْءَ لَا يُحِبُّهُ إِلَّا لِلَّهِ»
৩. হযরত আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন- যে ব্যক্তি ইমানের স্বাদ লাভ করে আনন্দিত হতে চায়, তবে সে যেন আল্লাহর জন্যই কাউকে ভালবাসে আর আল্লাহর জন্যই কাউকে ঘৃণা করে।
4 – عَنْ زَيْدِ بْنِ أَسْلَمَ، عَنْ أَبِيهِ، أَنَّ عُمَرَ، خَرَجَ إِلَى الْمَسْجِدِ يَوْمًا فَوَجَدَ مُعَاذَ بْنَ جَبَلٍ عِنْدَ قَبْرِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَبْكِي، فَقَالَ: مَا يُبْكِيكَ يَا مُعَاذُ؟ قَالَ: يُبْكِينِي حَدِيثٌ سَمِعْتُهُ مِنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، يَقُولُ: «الْيَسِيرُ مِنَ الرِّيَاءِ شِرْكٌ، وَمَنْ عَادَى أَوْلِيَاءَ اللَّهِ فَقَدْ بَارَزَ اللَّهَ بِالْمُحَارَبَةِ، إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ الْأَبْرَارَ الْأَتْقِيَاءَ الْأَخْفِيَاءَ، الَّذِينَ إِنْ غَابُوا لَمْ يُفْتَقَدُوا، وَإِنْ حَضَرُوا لَمْ يُعْرَفُوا، قُلُوبُهُمْ مَصَابِيحُ الْهُدَى، يَخْرُجُونَ مِنْ كُلِّ غَبْرَاءَ مُظْلِمَةٍ»
৪. হযরত যায়দ ইবনে আসলাম (রা) তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন। একবার হযরত উমর (রা) মসজিদের দিকে যাচ্ছিলেন, তখন দেখলেন, হযরত মুয়ায (রা) রাসূলূল্লাহ (সা) এর কবরের পাশে বসে কাঁদছেন। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, হে মুয়ায! তুমি কেন কাঁদছ? তিনি বললেন, আমাকে ঐ হাদীসটি কাঁদাচ্ছে যা আমি রাসূলুল্লাহ (সা) থেকে শুনেছি।
তিনি ইরশাদ করেছেন- সামান্য রিয়াও শির্ক। আর যে আল্লাহর কোন ওলীর সাথে শত্রুতা করে তবে সে যেন আল্লাহর সাথে যুদ্ধে নামে। আল্লাহ তাআলা এমন লোকদেরকে ভালবাসেন যারা নেক, মুত্তাকী ও নিজেকে গোপনকারী হয়। তারা এমন যে, তারা যদি অনুপস্থিত থাকে তবে তাদেরকে পাওয়া যায়না আর উপস্থিত থাকলে চেনা যায় না। তাদের অন্তর হিদায়াতের মশাল আর তারা প্রত্যেক অপরিচ্ছন্নতা ও অন্ধকার থেকে বের হয়ে আসেন।
هَذَا حَدِيثٌ صَحِيحٌ এই হাদীসটি সহিহ
5 – عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرِو بْنِ الْعَاصِ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّ الْإِيمَانَ لَيَخْلَقُ فِي جَوْفِ أَحَدِكُمْ كَمَا يَخْلَقُ الثَّوْبُ الْخَلِقُ، فَاسْأَلُوا اللَّهَ أَنْ يُجَدِّدَ الْإِيمَانَ فِي قُلُوبِكُمْ»
৫. হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন- তোমাদের মধ্যে ইমানের দুর্বলতা এমনভাবে এসে যায়, যেমনিভাবে কাপড় পুরনো হয়ে যায়। অতএব তোমরা আল্লাহর নিকট দুআ কর, যেন তিনি তোমাদের অন্তরের ইমানকে সজিব ও তরতাজা করে দেন।
6 – عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ” إِذَا أَذْنَبَ الْعَبْدُ نُكِتَ فِي قَلْبِهِ نُكْتَةٌ سَوْدَاءُ، فَإِنْ تَابَ صُقِلَ مِنْهَا، فَإِنْ عَادَ زَادَتْ حَتَّى تَعْظُمَ فِي قَلْبِهِ، فَذَلِكَ الرَّانُ الَّذِي ذَكَرَهُ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ {كَلَّا بَلْ رَانَ عَلَى قُلُوبِهِمْ} [المطففين: 14]
৬. হযরত আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন- যখন বান্দা গুনাহ করে তখন তার হৃদয়ে একটি কাল দাগ লাগিয়ে দেয়া হয়। যদি সে তওবা করে তবে তা মিটিয়ে দেয়া হয়। আর যদি সে আরো গুনাহ করে তবে তা আরো সম্প্রসারিত হয়, এমনকি শেষ পর্যন্ত পুরো অন্তরকে আচ্ছন্ন করে নেয়। এটাই সেই رَانُ – মরীচা, যার ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন- كَلَّا بَلْ رَانَ عَلَى قُلُوبِهِمْ কখনো নয়, বরং তাদের অন্তরে মরীচা পড়ে গেছে। – সূরা তাতফীফ:১৪
هَذَا حَدِيثٌ صَحِيحٌ এই হাদীসটি সহিহ
7 – عَنْ عَائِشَةَ، قَالَتْ: ” لَمْ يَزَلْ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُسْأَلُ عَنِ السَّاعَةِ حَتَّى نَزَلَتْ: {فِيمَ أَنْتَ مِنْ ذِكْرَاهَا إِلَى رَبِّكَ مُنْتَهَاهَا} [النازعات: 44]
৭. হযরত আয়িশা (রা) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) আল্লাহর নিকট কিয়ামত সংঘটিত হওয়ার ব্যাপারে দীর্ঘ সময় পর্যন্ত জিজ্ঞাসা করতে থাকেন। অতএব এর প্রেক্ষীতে এই আয়াত নাযিল হয়-
فِيمَ أَنْتَ مِنْ ذِكْرَاهَا إِلَى رَبِّكَ مُنْتَهَاهَا
এর আলোচনার সাথে আপনার কি সম্পর্ক? এর চূড়ান্ত জ্ঞান তো আল্লাহর নিকট রয়েছে।– সূরা নাযিআত:৪৩-৪৪
8 – عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، وَأَبِي سَعِيدٍ أَنَّهُمَا شَهِدَا عَلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: ” إِذَا قَالَ الْعَبْدُ: لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَاللَّهُ أَكْبَرُ صَدَّقَهُ رَبُّهُ، قَالَ: صَدَقَ عَبْدِي، لَا إِلَهَ إِلَّا أَنَا وَأَنَا وَحْدِي، وَإِذَا قَالَ: لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ صَدَّقَهُ رَبُّهُ قَالَ: صَدَقَ عَبْدِي لَا إِلَهَ إِلَّا أَنَا وَلَا شَرِيكَ لِي، وَإِذَا قَالَ: لَا إِلَهَ أَلَا اللَّهُ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ، قَالَ: صَدَقَ عَبْدِي، لَا إِلَهَ إِلَّا أَنَا لِيَ الْمُلْكُ وَلِيَ الْحَمْدُ، وَإِذَا قَالَ: لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَلَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللَّهِ، قَالَ: صَدَقَ عَبْدِي، لَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِي
৮. হযরত আবু হুরায়রা (রা) এবং হযরত আবু সাঈদ আল খুদরী (রা) থেকে বর্ণিত। তারা উভয়েই রাসূলুল্লাহ (সা) এর খিদমতে উপস্থিত ছিলেন। রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন- যখন বান্দা বলে- لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَاللَّهُ أَكْبَرُ আল্লাহ ব্যতীত কোন মাবুদ নাই, তিনি মহান। তখন আল্লাহ তাআলা তার সত্যায়নে বলেন- আমার এই বান্দা সত্য বলেছে, সত্যিই আমি ব্যতীত কোন মাবুদ নাই, আমি একক ও অদ্বিতীয়।
আর যখন বান্দা বলে, لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ আল্লাহ ব্যতীত কোন মাবুদ নাই, তিনি একক, তার কোন শরীক নাই। তখন আল্লাহ তাআলা তার সত্যায়নে বলেন- আমার এই বান্দা সত্য বলেছে, সত্যিই আমি ব্যতীত কোন মাবুদ নাই আর আমার কোন শরীক নাই।
আবার যখন কোন বান্দা বলে, لَا إِلَهَ أَلَا اللَّهُ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ আল্লাহ ব্যতীত কোন মাবুদ নাই, রাজত্ব আল্লাহরই, প্রশংসা একমাত্র তারই জন্য। তখন আল্লাহ তাআলা বলেন- আমার এই বান্দা সত্য বলেছে, সত্যিই আমি ব্যতীত কোন মাবুদ নাই, রাজত্ব আমারই এবং প্রশংসা আমারই জন্য।
আর যখন কোন বান্দা বলে, لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَلَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللَّهِ আল্লাহ ব্যতীত কোন মাবুদ নাই এবং তার সাহায্য ব্যতীত কোন শক্তি নাই। তখন আল্লাহ তাআলা বলেন- আমার এই বান্দা সত্য বলেছে, সত্যিই আমি ব্যতীত কোন মাবুদ নাই, আর আমি ব্যতীত না কারো শক্তি আছে না কারো সামর্থ্য।
هَذَا حَدِيثٌ صَحِيحٌ এই হাদীসটি সহিহ
9 – عَنْ أَبِي عَبْدِ الرَّحْمَنِ الْمَعَافِرِيِّ الْحُبُلِيِّ، قَالَ: سَمِعْتُ عَبْدَ اللَّهِ بْنَ عَمْرِو بْنِ الْعَاصِ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ” إِنَّ اللَّهَ يَسْتَخْلِصُ رَجُلًا مِنْ أُمَّتِي عَلَى رُءُوسِ الْخَلَائِقِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فَيَنْشُرُ عَلَيْهِ تِسْعَةً وَتِسْعِينَ سِجِلًّا، كُلُّ سِجِلٍّ مِثْلُ هَذَا، ثُمَّ يَقُولُ: أَتُنْكِرُ مِنْ هَذَا شَيْئًا؟ أَظَلَمَكَ كَتَبَتِي الْحَافِظُونَ؟ فَيَقُولُ: لَا يَا رَبِّ، فَيَقُولُ: أَفَلَكَ عُذْرٌ؟ فَيَقُولُ: لَا يَا رَبِّ، فَيَقُولُ: بَلَى، إِنَّ لَكَ عِنْدَنَا حَسَنَةً، وَإِنَّهُ لَا ظُلْمَ عَلَيْكَ الْيَوْمَ، فَيُخْرِجُ بِطَاقَةً فِيهَا أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ، وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ، فَيَقُولُ: يَا رَبِّ، مَا هَذِهِ الْبِطَاقَةُ مَعَ هَذِهِ السِّجِلَّاتِ؟ فَقَالَ: إِنَّكَ لَا تُظْلَمُ، قَالَ: فَتُوضَعُ السِّجِلَّاتُ فِي كِفَّةٍ، وَالْبِطَاقَةُ فِي كِفَّةٍ فَطَاشَتِ السِّجِلَّاتُ وَثَقُلَتِ الْبِطَاقَةُ، وَلَا يَثْقُلُ مَعَ اسْمِ اللَّهِ شَيْءٌ «.»
৯. হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মুয়াফিরী থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন- আমি আবদুল্লাহ ইবন আমর ইবনুল আস (রা) কে বলতে শুনেছি, রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন- আল্লাহ তা’আলা কিয়ামতের দিন আমার উম্মতের এক ব্যক্তিকে সমস্ত সৃষ্টির সমক্ষে আলাদা করে এনে হাযির করবেন। তার সামনে নিরানববইটি (আমলের) নিবন্ধন খাতা খুলে দিবেন, যার সব একই রকম হবে। এরপর তিনি তাকে বলবেন, এর একটি কিছুও কি অস্বীকার করতে পার? আমার সংরক্ষণকারী লিপিকারগণ (কিরামান কাতিবীন) কি তোমার উপর কোন যুলুম করেছে? লোকটি বলবে- না, হে আমার পরওয়ারদিগার। আল্লাহ তা’আলা বলবেন, তোমার কিছু বলার আছে কি? লোকটি বলবে- না, হে পরওয়ারদিগার। তিনি বলবেন- হ্যাঁ, আমার কাছে তোমার একটি নেকী আছে। আজ তোমার উপর কোন যুলুম করা হবে না। তখন একটি ছোট কাগজের টুকরা বের করা হবে। এতে আছে-
أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ، وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ
আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নেই। আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ (সা) তাঁর বান্দা ও রাসূল।
তখন লোকটি বলবে, হে আমার রব! এই একটি ছোট টুকরা এত বড় দফতরের সামনে কি ভূমিকা রাখে? অর্থাৎ তা তো কিছুই নয়। তখন তাকে বলা হবে, আজ তোমার উপর কোন যুলুম করা হবে না। রাসূলুল্লাহ (সা) বলেন- অনন্তর সবগুলো নিবন্ধন খাতা এক পাল্লায় রাখা হবে আর কাগজের ছোট সেই টুকরাটিকে আরেক পাল্লায় রাখা হবে। তখন সবগুলো দপ্তর হালকা হয়ে যাবে আর কাগজের ছোট টুকরাটিই ভারি হয়ে যাবে। আল্লাহর নামের মুকাবেলায় কোন জিনিসই ভারি হতে পারে না।
هَذَا حَدِيثٌ صَحِيحٌ এই হাদীসটি সহিহ
10 – عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: «افْتَرَقَتِ الْيَهُودُ عَلَى إِحْدَى وَسَبْعِينَ فِرْقَةً أَوِ اثْنَتَيْنِ وَسَبْعِينَ فِرْقَةً، وَالنَّصَارَى مِثْلُ ذَلِكَ، وَتَفْتَرِقُ أُمَّتِي عَلَى ثَلَاثٍ وَسَبْعِينَ فِرْقَةً
১০. হযরত আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন- ইহুদীরা একাত্তর অথবা বাহাত্তর দলে বিভক্ত হয়েছিল। অনুরুপ নাসারা বা খ্রিষ্টানরাও বিভক্ত হয়েছে। আর আমার উম্মত তিহাত্তর দলে বিভক্ত হবে।
11 – عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ بُرَيْدَةَ، عَنْ أَبِيهِ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «الْعَهْدُ الَّذِي بَيْنَنَا وَبَيْنَهُمُ الصَّلَاةُ، فَمَنْ تَرَكَهَا فَقَدْ كَفَرَ»
১১. হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে বুরায়দা (রা) তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন- রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন- আমাদের মধ্যে ও তাদের (কাফিরদের) মধ্যে নামাযই পার্থক্যকারী। অতএব যে তা ছেড়ে দিবে, সে কাফির।
هَذَا حَدِيثٌ صَحِيحُ الْإِسْنَادِ এই হাদীসটির সনদ সহিহ
12 – عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: «كَانَ أَصْحَابُ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَا يَرَوْنَ شَيْئًا مِنَ الْأَعْمَالِ تَرْكُهُ كُفْرًا غَيْرَ الصَّلَاةِ»
১২. হযরত আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন- সাহাবায়ে কিরাম (রা) নামায পরিত্যাগ করা ব্যতীত আর কোন আমল পরিত্যাগ করাকে কুফর মনে করতেন না।
13 – عَنْ عَلِيِّ بْنِ أَبِي طَالِبٍ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ أَصَابَ حَدًّا فَعَجَّلَ اللَّهً لَهُ عُقُوبَتَهُ فِي الدُّنْيَا فَاللَّهُ أَعْدَلُ مِنْ أَنْ يُثَنِّي عَلَى عَبْدِهِ الْعُقُوبَةَ فِي الْآخِرَةِ، وَمَنْ أَصَابَ حَدًّا فَسَتَرَهُ اللَّهُ عَلَيْهِ وَعَفَا عَنْهُ فَاللَّهُ أَكْرَمُ مِنْ أَنْ يَعُودَ فِي شَيْءٍ قَدْ عَفَا عَنْهُ»
১৩. হযরত আলী ইবন আবূ তালিব (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন- কেউ যদি গুনাহে লিপ্ত হয় এবং দুনিয়াতেই তার শাস্তি হয়ে যায় তবে আখিরাতে দ্বিতীয়বার তাঁর এই বান্দাকে শাস্তি প্রদানের বিষয়ে আল্লাহ তা’আলা তো বেশী ন্যায়নিষ্ঠ অর্থাৎ তিনি তাকে পুনরায় শাস্তি দিবেন না। আর কেউ যদি হদযোগ্য কোন গুনাহ করে ফেলে আর আল্লাহ তা’আলা তার বিষয়টি গোপন করে রাখেন এবং মাফ করে দেন। তবে মাফ করে দেওয়ার পর পুনরায় সেই বিষয়ে শাস্তি প্রদানের ব্যপারে আল্লাহ তা’আলা তো আরো অধিক দয়াবান। অর্থাৎ তার ক্ষমাপরায়ণতার জন্য তিনি তাকে শাস্তি দিবেন না।
هَذَا حَدِيثٌ صَحِيحُ الْإِسْنَاد এই হাদীসটির সনদ সহিহ
14 حَدَّثَنَا إِيَاسُ بْنُ سَلَمَةَ، حَدَّثَنِي أَبِي، أَنَّهُ كَانَ مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذْ جَاءَهُ رَجُلٌ بِفَرَسٍ لَهُ يَقُودُهَا عَقُوقٍ وَمَعَهَا مُهْرَةٌ لَهَا يَتْبَعُهَا، فَقَالَ: مَنْ أَنْتَ؟ فَقَالَ: «أَنَا نَبِيٌّ» ، قَالَ: مَا نَبِيٌّ؟ قَالَ: «رَسُولُ اللَّهِ» ، قَالَ: مَتَى تَقُومُ السَّاعَةُ؟ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «غَيْبٌ وَلَا يَعْلَمُ الْغَيْبَ إِلَّا اللَّهُ» قَالَ: أَرِنِي سَيْفَكَ، فَأَعْطَاهُ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ سَيْفَهُ، فَهَزَّهُ الرَّجُلُ ثُمَّ رَدَّهُ عَلَيْهِ، فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَمَا إِنَّكَ لَمْ تَكُنْ تَسْتَطِيعُ الَّذِي أَرَدْتَ» قَالَ: وَقَدْ كَانَ. . . قَالَ: اذْهَبْ إِلَيْهِ فَسَلْهُ عَنْ هَذِهِ الْخِصَالِ
১৪. হযরত ইয়াস বিন সালামাহ (রা) বলেন। আমাকে আমার পিতা বলেছেন যে, তিনি রাসূলুল্লাহ (সা) এর সাথে ছিলেন। এমন সময় এক ব্যক্তি তার গর্ভবতী ঘোড়ীসহ আগমন করে, যার সাথে তার (অন্য) বাছুরও ছিল। সে জিজ্ঞাসা করল, আপনি কে? তিনি (সা) বললেন, আমি আল্লাহর নবী। সে বলল, নবী কে হয়? তিনি (সা) বললেন, যিনি আল্লাহর প্রেরিত হন। সে আবার জিজ্ঞাসা করল, কিয়ামত কবে হবে? তিনি (সা) বললেন, এটা অজানা বিষয় যা আল্লাহ ব্যতীত কেউ জানে না। সে বলল, আমাকে আপনার তলোয়ার দেখান। নবী (সা) তার তলোয়ার তাকে দিলেন। লোকটি তা ঝাঁকিয়ে ফিরিয়ে দিল। রাসূলুল্লাহ (সা) বললেন, যা তোমার ইচ্ছা ছিল তা তুমি পুরা করতে পারবে না। সে বলল, এটা হয়েছে….[মূল কিতাবে এই স্থানে ইবারত নেই] তিনি বললেন, তার নিকট গিয়ে এই নিদর্শন সম্পর্কে জিজ্ঞাসা কর।
هَذَا حَدِيثٌ صَحِيحٌ এই হাদীসটি সহিহ
15 – عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ أَتَى عَرَّافًا أَوْ كَاهِنًا فَصَدَّقَهُ فِيمَا يَقُولُ، فَقَدْ كَفَرَ بِمَا أُنْزِلَ عَلَى مُحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ»
১৫. হযরত আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন- যে ব্যক্তি কোন জ্যোতিষী অথবা কোন ভবিষ্যদ্বক্তার কাছে গেল, আর সে যা বলে তা সত্য মনে করল, তবে সে মুহাম্মমদ (সা) এর উপর নাযিলকৃত দীনকে অস্বীকার করল।
هَذَا حَدِيثٌ صَحِيحٌ এই হাদীসটি সহিহ
16 – حَدَّثَنَا مُعَاذُ بْنُ جَبَلٍ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَآلِهِ وَسَلَّمَ: «مَا عَلَى الْأَرْضِ نَفْسٌ تَمُوتُ لَا تُشْرِكُ بِاللَّهِ شَيْئًا تَشْهَدُ أَنِّي رَسُولُ اللَّهِ، يَرْجِعُ ذَلِكَ إِلَى قَلْبٍ مُوقِنٍ إِلَّا غَفَرَ اللَّهُ لَهَا»
১৬. হযরত মুয়ায ইবন জাবাল (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন- যে ব্যক্তি এই যমীনে শিরক না করে মৃত্যুবরণ করে, আমার ব্যাপারে এই সাক্ষ্য দেয় যে আমি [মুহাম্মদ (সা)] আল্লাহর রাসূল, আর অন্তর থেকে এর প্রতি ইয়াকীন রাখে, তবে আল্লাহ তাআলা তাকে ক্ষমা করে দিবেন।
هَذَا حَدِيثٌ صَحِيحٌ এই হাদীসটি সহিহ
17 – عَنْ أَبِي أُمَامَةَ الْبَاهِلِيِّ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «الْحَيَاءُ وَالْعِيُّ شُعْبَتَانِ مِنَ الْإِيمَانِ، وَالْبَذَاءُ وَالْبَيَانُ شُعْبَتَانِ مِنَ النِّفَاقِ»
১৭. হযরত আবু উমামা বাহিলী (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন- লজ্জাশীলতা এবং স্বল্পভাষী হওয়া ইমানের দুটি শাখা। আর অশ্লিলতা ও বাচালতা নিফাকের দুটি শাখা।
هَذَا حَدِيثٌ صَحِيحٌ এই হাদীসটি সহিহ
18 – عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ أَبِي أُمَامَةَ، عَنْ أَبِيهِ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «الْبَذَاذَةُ مِنَ الْإِيمَانِ، الْبَذَاذَةُ مِنَ الْإِيمَانِ»
১৮. হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আবু উমামা (রা) তার পিতা থেকে থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন- রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেছেন- অনাড়ম্বর (সরল) জীবন যাপন ইমানের প্রতিক। অনাড়ম্বর জীবন যাপন ইমানের প্রতিক।
19 – عَنْ أَبَا أُمَامَةَ الْبَاهِلِيَّ، يَقُولُ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ يَوْمَ حَجَّةِ الْوَدَاعِ: «اعْبُدُوا رَبُّكُمْ، وَصَلُّوا خَمْسَكُمْ، وَصُومُوا شَهْرِكُمْ، وَأَدُّوا زَكَاةَ أَمْوَالِكُمْ، وَأَطِيعُوا ذَا أَمْرِكُمْ تَدْخُلُوا جَنَّةَ رَبِّكُمْ»
১৯. হযরত আবু উমামা বাহিলী (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা) কে বিদায় হজে বলতে শুনেছি- তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের ইবাদত কর। পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় কর। রমাযান মাসের রোযা রাখ। তোমাদের সম্পদের যাকাত আদায় কর। আমীরের নির্দেশ মান্য কর। তাহলে তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে।
هَذَا حَدِيثٌ صَحِيحٌ এই হাদীসটি সহিহ
20 – عَنْ صَفْوَانَ بْنِ عَسَّالٍ الْمُرَادِيُّ، قَالَ: قَالَ يَهُودِيٌّ لِصَاحِبِهِ: اذْهَبْ بِنَا إِلَى هَذَا النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَسْأَلَهُ عَنْ هَذِهِ الْآيَةِ {وَلَقَدْ آتَيْنَا مُوسَى تِسْعَ آيَاتٍ بَيِّنَاتٍ} [الإسراء: 101] فَقَالَ: لَا تَقُولُوا لَهُ نَبِيٌّ، فَإِنَّهُ لَوْ سَمِعَكَ لَصَارَتْ لَهُ أَرْبَعَةُ أَعْيُنٍ، قَالَ: فَسَأَلَاهُ، فَقَالَ: «لَا تُشْرِكُوا بِاللَّهِ شَيْئًا، وَلَا تَسْرِقُوا، وَلَا تَزْنُوا، وَلَا تَقْتُلُوا النَّفْسَ الَّتِي حَرَّمَ اللَّهُ إِلَّا بِالْحَقِّ، وَلَا تَسْحَرُوا، وَلَا تَأْكُلُوا الرِّبَا، وَلَا تَمْشُوا بِبَرِيءٍ إِلَى ذِي سُلْطَانٍ لِيَقْتُلَهُ، وَلَا تَقْذِفُوا مُحْصَنَةً، وَأَنْتُمْ يَا يَهُودُ عَلَيْكُمْ خَاصَّةً أَلَا تَعْدُوا فِي السَّبْتِ» فَقَبَّلَا يَدَهُ وَرِجْلَهُ، وَقَالَا: نَشْهَدُ أَنَّكَ نَبِيٌّ، فَقَالَ: «مَا مَنَعَكُمَا أَنْ تُسْلِمَا؟» قَالَا: إِنَّ دَاوُدَ عَلَيْهِ السَّلَامُ دَعَا أَنْ لَا يَزَالَ مِنْ ذُرِّيَّتِهِ نَبِيٌّ، وَإِنَّا نَخْشَى أَنْ يَقْتُلَنَا يَهُودُ
২০. হযরত সাফওয়ান ইবন আসসাল (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ইহুদী তার অপর আর এক সাথি ইহুদীকে বললো- আমার সাথে চল, আমরা এই নবীকে এই আয়াতের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করব-
وَلَقَدْ آتَيْنَا مُوسَى تِسْعَ آيَاتٍ بَيِّنَاتٍ
নিশ্চয়ই আমি মূসাকে নয়টি স্পষ্ট নির্দশন প্রদান করেছিলাম।- ইসরা:১০১
সে বললো- তাকে নবী বলো না, যদি সে তোমার কথা শুনতে পায়, তবে খুশীতে আত্মহারা হয়ে যাবে।
এরপর তারা রাসুলুল্লাহ (সা) এর নিকট এসে জিজ্ঞাসা করলে রাসুলুলল্লাহ (সা) বললেন (সেগুলো হলো)- ১.আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করো না। ২.চুরি করো না। ৩.ব্যভিচার করো না। ৪.আল্লাহ যার হত্যা হারাম করেছেন অন্যায়ভাবে তাকে হত্যা করো না। ৫.যাদু করো না। ৬.সুদ খেয়ো না। ৭.কাউকে হত্যা করার (বা শাস্তির) জন্য হাকিমের কাছে নিও না। ৮.পবিত্র নারীদেরকে ব্যভিচারের অপবাদ দিও না। ৯.আর হে ইহুদীরা! একটি আদেশ তো বিশেষভাবে তোমাদের জন্য যে, তোমরা শনিবারের ব্যাপারে সীমালংঘন করো না।
একথা শুনে উভয় ইহুদী তার হাত পায়ে চুমু খেয়ে আরয করল- আমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আপনি নবী। তিনি (সা) বললেন, তাহলে মুসলমান হওয়াতে তোমাদের বাঁধা কোথায়? তারা বললো, হযরত দাউদ (আ) দুআ করেছিলেন যে, তার বংশে যেন নবী হতে থাকে। তাই আমরা ভয় করছি (এর জন্য) ইহুদীরা আমাদেরকে হত্যা করবে।
هَذَا حَدِيثٌ صَحِيحٌ এই হাদীসটি সহিহ