রাতের সালাত- তাহাজজ্জুদ ও কিয়ামুল লাইল
islamhiuse.com এর সৌজন্যে
কুরআন ও সুন্নাহ’র আলোকে রাতের সালাত
ড. সাঈদ ইবন আলী ইবন ওয়াহফ আল-কাহতানী
অনুবাদ: সানাউল্লাহ নজির আহমদ
সম্পাদনা: ড. মোহাম্মদ মানজুরে ইলাহী
সূচীপত্র
ক্র | শিরোনাম | পৃষ্ঠা |
১ | ভূমিকা | |
২ | প্রথম অধ্যায়: তাহাজ্জুদ ও কিয়ামুল লাইল | |
৩ | প্রথম: তাহাজ্জুদের আভিধানিক অর্থ | |
৪ | দ্বিতীয়: তাহাজ্জুদের হুকুম | |
৫ | তৃতীয়: রাতের সালাতের ফযীলত ও তার কারণ | |
৬ | চতুর্থ: কিয়ামুল লাইলের সর্বোত্তম সময় রাতের শেষ তৃতীয়াংশ | |
৭ | পঞ্চম: কিয়ামুল লাইলের রাকাত সংখ্যা | |
৮ | ষষ্ঠ: কিয়ামুল লাইলের আদব | |
৯ | কিয়ামুল লাইলে কিরাত জোরে ও আস্তে পড়ার দলীল | |
১০ | সপ্তম: কিয়ামুল লাইলের জন্য সহায়ক উপকরণ | |
অষ্টম: রাত ও দিনের স্বাভাবিক সালাত | ||
নবম: নফল সালাত বসে আদায় করা বৈধ | ||
দ্বিতীয় অধ্যায়: তারাবীর সালাত | ||
তৃতীয় অধ্যায়: বিতর সালাত |
ভূমিকা
সকল প্রশংসা আল্লাহ তা‘আলার জন্য, আমরা তাঁর প্রশংসা করি, তাঁর নিকট সাহায্য চাই এবং তাঁর নিকট ইস্তেগফার করি। আমরা আমাদের কু-প্রবৃত্তি ও বদ আমলের অনিষ্ট থেকে আল্লাহর নিকট পানাহ চাই। তিনি যাকে হিদায়াত দান করেন তাকে কেউ গোমরাহ করতে পারে না, আর তিনি যাকে গোমরাহ করেন তাকে কেউ হিদায়াত দিতে পারে না। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ব্যতীত কোনো ইলাহ নেই, তিনি এক তার কোনো শরীক নেই। আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ আল্লাহর বান্দা ও রাসূল। আল্লাহ তার ওপর, তাঁর পরিবার ও সাহাবীদের ওপর এবং যারা ইহসানের সাথে তাদের অনুসরণ করবে, তাদের সবার ওপর কিয়ামত পর্যন্ত দুরূদ ও সালাম বর্ষণ করুন।
অতঃপর, বক্ষ্যমাণ রচনা রাতের সালাত সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত এক প্রয়াস, যেখানে আমি তাহাজ্জুদের অর্থ, কিয়ামুল লাইল বা রাতের সালাতের ফযীলত, উত্তম সময়, রাকাত সংখ্যা, কিয়ামুল লাইলের আদব ও কিয়ামুল লাইল আদায়ে সাহায্যকারী কতক উপায় নিয়ে আলোচনা করেছি। এতে আরো বর্ণনা করেছি তারাবীর অর্থ, হুকুম, ফযীলত, সময়, রাকাত সংখ্যা ও তাতে জামা‘আতের বিধান। অতঃপর স্পষ্ট করেছি বিতর সালাতের অর্থ, হুকুম, ফযীলত, সময়, বিতর আদায়ের বিভিন্ন পদ্ধতি, রাকাত সংখ্যা, তাতে কিরাত ও কুনুতের বর্ণনা, বিতর শেষে সালামের পর দো‘আ এবং বিতর রাতের সালাতের অন্তর্ভুক্ত, বরং বিতর রাতের সর্বশেষ সালাত ইত্যাদি বিষয় যে বিতর না পড়ে ঘুমিয়ে গেল অথবা ভুলে গেল তার কাযা করার বিধানও বর্ণনা করেছি এখানে প্রত্যেকটি মাসআলা আমি দলীলসহ বর্ণনা করেছি। এ গ্রন্থ লেখার সময় আমি আমাদের শাইখ আল্লামা ইবন বায রহ. এর বয়ান-বক্তৃতা থেকে অধিক উপকৃত হয়েছি। আল্লাহ তাকে জান্নাতুল ফিরদাউস নসীব করুন।
আল্লাহর নিকট বিনীত প্রার্থনা যে, তিনি আমার এ ক্ষুদ্র আমলকে গ্রহণযোগ্য, বরকতময় ও একমাত্র তার সন্তুষ্টির জন্য কবুল করুন। এর দ্বারা তিনি আমাকে ইহকাল ও পরকালে উপকৃত করুন, যারা এ গ্রন্থ পাঠ করবে তাদের সবাইকে তিনি উপকৃত করুন। তিনি প্রার্থনা কবুলকারী, আশা পূর্ণকারী, তিনি আমাদের জন্য যথেষ্ট ও আমাদের উত্তম অভিভাবক। তার সাহায্য ব্যতীত পাপ থেকে বিরত থাকা ও নেক আমল করার কোনো শক্তি নেই আল্লাহ তার বান্দা ও রাসূল মুহাম্মদের ওপর দুরূদ, সালাম ও বরকত নাযিল করুন, যিনি সর্বশ্রেষ্ঠ মখলুক, আমাদের নবী, ইমাম ও আদর্শ মুহাম্মাদ ইবন আব্দুল্লাহ, আর তার বংশধর ও সাথীদের ওপর এবং যারা কিয়ামত পর্যন্ত সুন্দরভাবে তাদের অনুসরণ করবে তাদের সবার ওপর রহমত ও সালাম বর্ষণ করুন
লেখক
শুক্রবার, সকাল বেলা
৯/১/১৪২১ হিজরী
প্রথম অধ্যায়: তাহাজ্জুদ ও কিয়ামুল লাইল
প্রথম: তাহাজ্জুদের আভিধানিক অর্থ:
আরবীতে বলা হয়: هجد الرجل লোকটি রাতে ঘুমিয়েছে। هجد রাতে সালাত আদায় করেছে আর المتهجِّد হচ্ছে ঘুম থেকে উঠে সালাতে দণ্ডায়মান ব্যক্তি।[1]
দ্বিতীয়: তাহাজ্জুদের হুকুম:
তাহাজ্জুদের সালাত সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ।[2] কুরআন, সুন্নাহ ও উম্মতের ইজমা দ্বারা তা প্রমাণিত। আল্লাহ তা‘আলা রহমানের বান্দাদের গুণাগুণ সম্পর্কে বলেন,
﴿وَٱلَّذِينَ يَبِيتُونَ لِرَبِّهِمۡ سُجَّدٗا وَقِيَٰمٗا ٦٤﴾ [الفرقان: ٦٤]
“আর যারা তাদের রবের জন্য সাজদারত ও দণ্ডায়মান হয়ে রাত্রি যাপন করে”। [সূরা আল-ফুরকান, আয়াত: ৬৪)] অন্যত্র তিনি মুত্তাকীদের গুণাগুণ আলোচনায় বলেন,
﴿كَانُواْ قَلِيلٗا مِّنَ ٱلَّيۡلِ مَا يَهۡجَعُونَ ١٧ وَبِٱلۡأَسۡحَارِ هُمۡ يَسۡتَغۡفِرُونَ ١٨ ﴾ [الذاريات: ١٧، ١٨]
“রাতের সামান্য অংশই এরা ঘুমিয়ে কাটাত আর রাতের শেষ প্রহরে এরা ক্ষমা চাওয়ায় রত থাকত” [সূরা আয-যারিয়াত, আয়াত: ১৭-১৮] আল্লাহ তা‘আলা পূর্ণ ইমানদার বান্দাদের সম্পর্কে বলেন,
﴿تَتَجَافَىٰ جُنُوبُهُمۡ عَنِ ٱلۡمَضَاجِعِ يَدۡعُونَ رَبَّهُمۡ خَوۡفٗا وَطَمَعٗا وَمِمَّا رَزَقۡنَٰهُمۡ يُنفِقُونَ ١٦ فَلَا تَعۡلَمُ نَفۡسٞ مَّآ أُخۡفِيَ لَهُم مِّن قُرَّةِ أَعۡيُنٖ جَزَآءَۢ بِمَا كَانُواْ يَعۡمَلُونَ ١٧﴾ [السجدة : ١٦، ١٧]
“তাদের পার্শ্বদেশ বিছানা থেকে আলাদা হয়। তারা ভয় ও আশা নিয়ে তাদের রবকে ডাকে। আর আমরা তাদেরকে যে রিযিক দান করেছি, তা থেকে তারা ব্যয় করে। অতঃপর কোনো ব্যক্তি জানে না তাদের জন্য চোখ জুড়ানো কী জিনিস লুকিয়ে রাখা হয়েছে, তারা যা করত, তার বিনিময়স্বরূপ”। [সূরা আস-সাজদাহ, আয়াত: ১৬-১৭]
তিনি অন্যত্র বলেন,
﴿يَتۡلُونَ ءَايَٰتِ ٱللَّهِ ءَانَآءَ ٱلَّيۡلِ وَهُمۡ يَسۡجُدُونَ ١١٣﴾ [ال عمران: ١١٣]
“তারা রাতের বেলায় আল্লাহর আয়াতসমূহ তিলাওয়াত করে এবং তারা সাজদাহ করে”। [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১১৩]
তিনি আরো বলেন,
﴿وَٱلۡمُسۡتَغۡفِرِينَ بِٱلۡأَسۡحَارِ ١٧﴾ [ال عمران: ١٧]
“এবং শেষ রাতে ক্ষমাপ্রার্থনাকারী”। [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৭]
আল্লাহ তা‘আলা সেসব পরিপূর্ণ মুমিনদের ইলম ও মর্যাদার উচ্চ শিখরে ভূষিত করেছেন, যারা রাতে সালাত আদায় করে। তিনি বলেন,
﴿أَمَّنۡ هُوَ قَٰنِتٌ ءَانَآءَ ٱلَّيۡلِ سَاجِدٗا وَقَآئِمٗا يَحۡذَرُ ٱلۡأٓخِرَةَ وَيَرۡجُواْ رَحۡمَةَ رَبِّهِۦۗ قُلۡ هَلۡ يَسۡتَوِي ٱلَّذِينَ يَعۡلَمُونَ وَٱلَّذِينَ لَا يَعۡلَمُونَۗ إِنَّمَا يَتَذَكَّرُ أُوْلُواْ ٱلۡأَلۡبَٰبِ ٩﴾ [الزمر: ٩]
“যে ব্যক্তি রাতের প্রহরে সাজদাবনত হয়ে ও দাঁড়িয়ে আনুগত্য প্রকাশ করে, আখিরাতকে ভয় করে এবং তার রবের রহমত প্রত্যাশা করে (সে কি তার সমান যে এরূপ করে না) বল, ‘যারা জানে আর যারা জানে না তারা কি সমান?’ বিবেকবান লোকেরাই কেবল উপদেশ গ্রহণ করে”। [সূরা আয-যুমার, আয়াত: ৯] আল্লাহ তা‘আলার নিকট রাতের সালাতের গুরুত্ব অধিক, তাই তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলেন,
﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلۡمُزَّمِّلُ ١ قُمِ ٱلَّيۡلَ إِلَّا قَلِيلٗا ٢ نِّصۡفَهُۥٓ أَوِ ٱنقُصۡ مِنۡهُ قَلِيلًا ٣ أَوۡ زِدۡ عَلَيۡهِ وَرَتِّلِ ٱلۡقُرۡءَانَ تَرۡتِيلًا ٤﴾ [المزمل: ١، ٤]
“হে চাদর আবৃত! রাতের সালাতে দাঁড়াও কিছু অংশ ছাড়া। রাতের অর্ধেক কিংবা তার চেয়ে কিছুটা কম। অথবা তার চেয়ে একটু বাড়াও। আর স্পষ্টভাবে ধীরে ধীরে কুরআন আবৃত্তি কর”। [সূরা আল-মুয্যাম্মিল, আয়াত: ১-৪]
তিনি আরো বলেন,
﴿وَمِنَ ٱلَّيۡلِ فَتَهَجَّدۡ بِهِۦ نَافِلَةٗ لَّكَ عَسَىٰٓ أَن يَبۡعَثَكَ رَبُّكَ مَقَامٗا مَّحۡمُودٗا ٧٩﴾ [الاسراء: ٧٩]
“আর রাতের কিছু অংশে তাহাজ্জুদ আদায় কর তোমার অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে। আশা করা যায়, তোমার রব তোমাকে প্রশংসিত অবস্থানে প্রতিষ্ঠিত করবেন”। [সূরা আল-ইসরা, আয়াত: ৭৯]
তিনি আরো বলেন,
﴿إِنَّا نَحۡنُ نَزَّلۡنَا عَلَيۡكَ ٱلۡقُرۡءَانَ تَنزِيلٗا ٢٣ فَٱصۡبِرۡ لِحُكۡمِ رَبِّكَ وَلَا تُطِعۡ مِنۡهُمۡ ءَاثِمًا أَوۡ كَفُورٗا ٢٤ وَٱذۡكُرِ ٱسۡمَ رَبِّكَ بُكۡرَةٗ وَأَصِيلٗا ٢٥ وَمِنَ ٱلَّيۡلِ فَٱسۡجُدۡ لَهُۥ وَسَبِّحۡهُ لَيۡلٗا طَوِيلًا ٢٦﴾ [الانسان: ٢٣، ٢٦]
“নিশ্চয় আমরা তোমার প্রতি পর্যায়ক্রমে আল-কুরআন নাযিল করেছি। অতএব তোমার রবের হুকুমের জন্য ধৈর্য ধারণ কর এবং তাদের মধ্য থেকে কোনো পাপিষ্ঠ বা অস্বীকারকারীর আনুগত্য করো না। আর সকাল-সন্ধ্যায় তোমার রবের নাম স্মরণ কর, আর রাতের একাংশে তার উদ্দেশ্যে সাজদাবনত হও এবং দীর্ঘ রাত ধরে তাঁর তাসবীহ পাঠ কর”। [সূরা ইনসান, আয়াত: ২৩-২৬]
তিনি আরো বলেন,
﴿وَمِنَ ٱلَّيۡلِ فَسَبِّحۡهُ وَأَدۡبَٰرَ ٱلسُّجُودِ ٤٠﴾ [ق: ٤٠]
“এবং রাতের একাংশেও তুমি তাঁর তাসবীহ পাঠ কর এবং সালাতের পশ্চাতেও”। [সূরা কাফ, আয়াত: ৪০]
তিনি আরো বলেন,
﴿وَمِنَ ٱلَّيۡلِ فَسَبِّحۡهُ وَإِدۡبَٰرَ ٱلنُّجُومِ ٤٩﴾ [الطور: ٤٨]
“আর রাতের কিছু অংশে এবং নক্ষত্র অস্ত যাবার পর তার তাসবীহ পাঠ কর”। [সূরা আত- তুর, আয়াত: ৪৯] নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেও রাতের সালাতের প্রতি উদ্বুদ্ধ করে বলেন,
«أفضل الصيام بعد رمضان شهر الله المحرم، وأفضل الصلاة بعد الفريضة صلاة الليل».
“রমযানের পর সর্বোত্তম সিয়াম হচ্ছে মুহররমের সিয়াম, আর ফরয সালাতের পর সর্বোত্তম সালাত হচ্ছে রাতের সালাত”।[3]
তৃতীয়: রাতের সালাতের ফযীলত ও তার কারণ:
১. নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতের সালাতের জন্য খুব পরিশ্রম করতেন, এমনকি তার কদম মুবারক ফেটে যেত। তিনি রাতের কিয়ামে প্রচুর কষ্ট করতেন। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতে এত কিয়াম করতেন যে, তার দু’পা ফেটে যেত। আয়েশা তাকে বললেন: হে আল্লাহর রাসূল আপনি কেন এরূপ করেন, অথচ আল্লাহ আপনার পূর্বাপর সব গুনাহ মাফ করে দিয়েছেন? তিনি বললেন:
«أفلا أحبُّ أن أكون عبداً شكُوراً»
“আমি কি আল্লাহর শোকর গুজার বান্দা হতে পছন্দ করব না!”[4]
মুগিরা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«قام النبي صلى الله عليه وسلم حتى تورَّمت قدماه، فقيل له: غفر الله لك ما تقدم من ذنبك وما تأخر؟ قال: «أفلا أكون عبداً شكوراً».
“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিয়াম করলেন, ফলে তার দু’পা ফুলে গিয়েছিল, তাকে বলা হলো: আপনার পূর্বাপর সব গুনাহ আল্লাহ মাফ করে দিয়েছেন? তিনি বললেন:
«أفلا أكون عبداً شكوراً».
“আমি কি শোকর গুজার বান্দা হবো না”।[5] নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জনৈক সাহাবী খুব সুন্দর বলেছেন:
وفينا رسول الله يتلو كتابه = إذا انشق معروف من الفجر ساطع
يبيت يجافي جنبه عن فراشه = إذا استثقلت بالكافرين المضاجع
“আমাদের মাঝে আল্লাহর রাসূল রয়েছেন, যিনি তার কিতাব তিলাওয়াত করনে যখন উজ্জ্বল ফজর উদিত হয়। তিনি বিছানা থেকে পার্শ্বদেশ পৃথক রেখে রাত যাপন করেন, যখন কাফিররা গভীর ঘুমে নিমজ্জিত থাকে”।[6]
২. জান্নাতে যাওয়ার অন্যতম উপায় রাতের সালাত আব্দুল্লাহ ইবন সালাম রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনায় আগমন করেন, তখন লোকেরা তার দিকে ছুটে গেল। আর চারদিকে ধ্বনিত হল: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আগমন করেছেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আগমন করেছেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আগমন করেছেন তিনবার। আমি মানুষের সাথে তাকে দেখতে আসলাম। আমি যখন তার চেহারা ভালোভাবে দেখলাম, পরিষ্কার বুঝলাম তার চেহারা কোনো মিথ্যাবাদীর চেহারা নয়। আমি সর্বপ্রথম তাকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন:
«يا أيها الناس، أفشوا السلام، وأطعموا الطعام، وصِلوا الأرحام، وصلُّوا بالليل والناسُ نيام، تدخلوا الجنة بسلام».
“হে লোকেরা, তোমরা সালামের প্রসার কর, খাদ্য দান কর, আত্মীয়তার সম্পর্ক অটুট রাখ ও রাতে সালাত আদায় কর যখন মানুষের ঘুমিয়ে থাকে, তাহলে নিরাপদে জান্নাতে প্রবেশ করবে”।[7] জনৈক কবি খুব সুন্দর বলেছেন:
ألهتك لذةُ نومةٍ عن خير عيش = مع الخيرات في غرف الجنان
تعيش مُخلدا لا موت فيها = وتنعم في الجنان مع الحسان
تيقظ من منامك إنَّ خيرا = من النوم التهجدُ بالقران
“ঘুমের স্বাদ তোমাকে উত্তম চরিত্রবতী হুরদের সাথে জান্নাতের বালাখানার উত্তম জীবন থেকে বঞ্চিত করছে জান্নাতে তুমি সর্বদা থাকবে, সেখানে কোনো মৃত্যু নেই, অনিন্দ্য সুন্দরীদের নিয়ে মত্ত থাকবে। অতএব, ঘুম থেকে জাগ্রত হও, নিশ্চয় কুরআন তিলাওয়াত করে তাহাজ্জুত আদায় করা ঘুম থেকে অধিক উত্তম”।[8]
৩. রাতে সালাত আদায়কারীদের জন্য জান্নাতের উঁচু প্রাসাদসমূহ তৈরি করা হয়েছে। আবু মালেক আশা‘আরী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«إن في الجنة غُرفاً يُرى ظاهرُها من باطنها، وباطنها من ظاهرها، أعدَّها الله تعالى لمن أطعم الطعام، وألانَ الكلام، وتابع الصيام، وأفشى السلام، وصلى بالليل والناس نيام».
“নিশ্চয় জান্নাতে কতক বালাখানা রয়েছে, যার বাহির ভেতর থেকে ও ভেতর বাহির থেকে দেখা যাবে। যা আল্লাহ তৈরি করেছেন তাদের জন্য যারা খাদ্যদান করে, বিনয়াবনত কথা বলে, সিয়ামের পর সিয়াম পালন করে[9], সালামের প্রসার করে এবং রাতে সালাত আদায় করে যখন লোকেরা ঘুমিয়ে থাকে”।[10]
৪. রাতে নিয়মিত সালাত আদায়কারীগণ আল্লাহর মুহসিন বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত, যারা আল্লাহর রহমত ও জান্নাতের হকদার। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿كَانُواْ قَلِيلٗا مِّنَ ٱلَّيۡلِ مَا يَهۡجَعُونَ ١٧ وَبِٱلۡأَسۡحَارِ هُمۡ يَسۡتَغۡفِرُونَ ١٨ ﴾ [الذاريات: ١٧، ١٨]
“রাতের সামান্য অংশই এরা ঘুমিয়ে কাটাত আর রাতের শেষ প্রহরে এরা ক্ষমা চাওয়ায় রত থাকত” [সূরা আয-যারিয়াত, আয়াত: ১৭-১৮]
৫. আল্লাহ তা‘আলা নেককার ও রহমানের বান্দাদের প্রশংসার মধ্যে রাতে সালাত আদায়কারীদেরও প্রশংসা করেছেন। তিনি বলেছেন:
﴿وَٱلَّذِينَ يَبِيتُونَ لِرَبِّهِمۡ سُجَّدٗا وَقِيَٰمٗا ٦٤ ﴾ [الفرقان: ٦٤]
“আর যারা তাদের রবের জন্য সাজদারত ও দণ্ডায়মান হয়ে রাত্রি যাপন করে” [সূরা আল-ফুরকান, আয়াত: ৬৪]
৬. আল্লাহ তা‘আলা সাক্ষ্য দিয়েছেন রাতে সালাত আদায়কারীগণ পূর্ণ ইমানদার। তিনি বলেছেন:
﴿إِنَّمَا يُؤۡمِنُ بَِٔايَٰتِنَا ٱلَّذِينَ إِذَا ذُكِّرُواْ بِهَا خَرُّواْۤ سُجَّدٗاۤ وَسَبَّحُواْ بِحَمۡدِ رَبِّهِمۡ وَهُمۡ لَا يَسۡتَكۡبِرُونَ۩ ١٥ تَتَجَافَىٰ جُنُوبُهُمۡ عَنِ ٱلۡمَضَاجِعِ يَدۡعُونَ رَبَّهُمۡ خَوۡفٗا وَطَمَعٗا وَمِمَّا رَزَقۡنَٰهُمۡ يُنفِقُونَ ١٦﴾ [السجدة : ١٥، ١٦]
“আমার আয়াতসমূহ কেবল তারাই বিশ্বাস করে, যারা এর দ্বারা তাদেরকে উপদেশ দেওয়া হলে সাজদায় লুটিয়ে পড়ে এবং তাদের রবের প্রশংসাসহ তাসবীহ করে। আর তারা অহঙ্কার করে না। তাদের পার্শ্বদেশ বিছানা থেকে আলাদা হয়। তারা ভয় ও আশা নিয়ে তাদের রবকে ডাকে। আর আমরা তাদেরকে যে রিযিক দান করেছি, তা থেকে তারা ব্যয় করে”। [সূরা আস-সাজদাহ, আয়াত: ১৫-১৬]
৭. যারা রাতে সালাত আদায় করে ও যারা করে না তারা উভয় সমান নয়। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন:
﴿أَمَّنۡ هُوَ قَٰنِتٌ ءَانَآءَ ٱلَّيۡلِ سَاجِدٗا وَقَآئِمٗا يَحۡذَرُ ٱلۡأٓخِرَةَ وَيَرۡجُواْ رَحۡمَةَ رَبِّهِۦۗ قُلۡ هَلۡ يَسۡتَوِي ٱلَّذِينَ يَعۡلَمُونَ وَٱلَّذِينَ لَا يَعۡلَمُونَۗ إِنَّمَا يَتَذَكَّرُ أُوْلُواْ ٱلۡأَلۡبَٰبِ ٩ ﴾ [الزمر: ٩]
“যে ব্যক্তি রাতের প্রহরে সাজদাবনত হয়ে ও দাঁড়িয়ে আনুগত্য প্রকাশ করে, আখিরাতকে ভয় করে এবং তার রব-এর রহমত প্রত্যাশা করে (সে কি তার সমান যে এরূপ করে না) বল, ‘যারা জানে আর যারা জানে না তারা কি সমান?’ বিবেকবান লোকেরাই কেবল উপদেশ গ্রহণ করে” [সূরা আয-যুমার, আয়াত: ৯]
৮. রাতের সালাত গুনাহের কাফ্ফারা ও পাপ মোচনকারী। আবু উমামা থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«عليكم بقيام الليل فإنه دأب الصالحين قبلكم، وهو قُربة إلى ربكم، ومكفِّر للسيئات، ومنهاة للآثام».
“তোমরা রাতের সালাত আঁকড়ে ধর, কারণ এটা তোমাদের পূর্বের নেককার লোকদের অভ্যাস এবং তোমাদের রবের নৈকট্য দানকারী, গুনাহের কাফ্ফারা ও পাপ মোচনকারী”।[11]
৯. ফরয সালাতের পর রাতের সালাত সর্বোত্তম সালাত। আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে ‘মারফূ’ হাদীসে এসেছে:
«أفضل الصيام بعد رمضان شهر الله المحرم، وأفضل الصلاة بعد المكتوبة صلاة الليل».
“রমযানের পর সর্বোত্তম সিয়াম মুহররম মাসের সিয়াম এবং ফরয সালাতের পর সর্বোত্তম সালাত রাতের সালাত”।[12]
১০. কিয়ামুল লাইল মুমিনদের সম্মান। সাহাল ইবন সাদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, জিবরীল আলাইহিস সালাম নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট আগমন করলেন, অতঃপর বললেন:
«يا محمد عش ما شئت فإنك ميت، وأحببْ من شئت فإنك مفارقه، واعمل ما شئت فإنك مجزيٌّ به» ثم قال: «يا محمد شرف المؤمن قيام الليل، وعزُّه استغناؤه عن الناس».
“হে মুহাম্মাদ যত দিন পার বেঁচে নেও, অতঃপর অবশ্যই তুমি মারা যাবে। যাকে ইচ্ছা মহব্বত কর, অবশ্যই তার থেকে তুমি বিচ্ছেদ হবে। যা ইচ্ছা আমল কর, তার প্রতিদান অবশ্যই তোমাকে দেওয়া হবে। অতঃপর বলেন, হে মুহাম্মাদ মুমিনের সম্মান হচ্ছে রাতের সালাত, আর তার ইজ্জত হচ্ছে মানুষ থেকে অমুখাপেক্ষিতা”।[13]
১১. রাতে সালাত আদায়কারী ঈর্ষার পাত্র, কারণ এর সাওয়াব অধিক। এ সালাত দুনিয়া ও তার মধ্যে বিদ্যমান সবকিছু থেকে উত্তম। আব্দুল্লাহ ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«لا حسد إلا في اثنتين:رجل آتاه الله القرآن فهو يقوم به آناء الليل وآناء النهار، ورجل آتاه الله مالاً فهو ينفقه آناء الليل وآناء النهار»
“দু’জন ব্যতীত কোনো ঈর্ষা নেই: এক ব্যক্তি যাকে আল্লাহ কুরআন দান করেছেন, সে কুরআন নিয়ে রাত ও দিনের বিভিন্ন সময় কিয়াম করে। অপর ব্যক্তি যাকে আল্লাহ সম্পদ দান করেছেন, সে তা রাত ও দিনের বিভিন্ন সময় খরচ করে”।[14]
আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«لا حسد إلا في اثنتين: رجل آتاه الله مالاً فسلَّطه على هلكته في الحق، ورجل آتاه الله الحكمة فهو يقضي بها ويعلِّمها».
“দু’জন ব্যতীত কোনো ঈর্ষা নেই: এক ব্যক্তি যাকে আল্লাহ সম্পদ দিয়েছেন, সে তা সত্য পথে খুব খরচ করে। অপর ব্যক্তি যাকে আল্লাহ হিকমত দান করেছেন, সে তার মাধ্যমে ফয়সালা করে ও মানুষকে তা শিক্ষা দেয়”।[15]
১২. রাতের সালাতে কুরআন তিলাওয়াত করা বড় গণিমত ও সৌভাগ্যের বিষয় আব্দুল্লাহ ইবন আমর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«من قام بعشر آيات لم يكتب من الغافلين، ومن قام بمائة آية كتب من القانتين، ومن قام بألف آية كتب من المقنطرين».
“যে ব্যক্তি দশ আয়াত দ্বারা কিয়াম করল, তাকে গাফেলদের অন্তর্ভুক্ত গণ্য করা হবে না। আর যে একশত আয়াত দ্বারা কিয়াম করল, তাকে কানেতিনদের অন্তর্ভুক্ত গণ্য করা হবে। আর যে এক হাজার আয়াত দ্বারা কিয়াম করল, তাকে মুকানতিরিনদের[16] অন্তর্ভুক্ত গণ্য করা হবে”।[17]
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«أيحب أحدكم إذا رجع إلى أهله أن يجد فيه ثلاث خَلِفاتٍ عظام سمانٍ؟» قلنا: نعم، قال: «ثلاث آيات يقرأ بهن أحدكم في صلاته خير له من ثلاث خلفات عظام سمان».
“তোমাদের কেউ কি পছন্দ করে, যখন সে বাড়িতে যাবে সেখানে সে তিনটি মোটা তাজা গাভীন উট (তার মালিকানাধীন) দেখবে? আমরা বললাম: হ্যাঁ, তিনি বললেন: তোমাদের কারো নিজ সালাতে তিনটি আয়াত তিলাওয়াত করা তিনটি মোটা তাজা উট হতে উত্তম”।[18]
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরআন খতমের সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন সময় নির্ধারণ করে দিয়েছেন। আব্দুল্লাহ ইবন আমর রাদিয়াল্লাহু আনহুমা যখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে কুরআন খতম সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেন, তখন তিনি বলেন,
«في أربعين يوماً»،ثم قال: «في شهر»،ثم قال:«في خمس عشرة» ثم قال:«في عشر»،ثم قال:«في سبع». قال: إني أقوى من ذلك، قال: «لا يفقه من قرأه في أقل من ثلاث».
“চল্লিশ দিনে, অতঃপর বলেন, এক মাসে, অতঃপর বলেন, পনেরো দিনে, অতঃপর বলেন, দশ দিনে, অতঃপর বলেন, সাত দিনে[19] তিনি বলেন, আমি এর চেয়ে অধিকের সামর্থ্য রাখি। তিনি বললেন: তিন দিনের কমে যে খতম করবে, সে কুরআন বুঝবে না”।[20]
চতুর্থ: কিয়ামুল লাইলের সর্বোত্তম সময় রাতের শেষ তৃতীয়াংশ।
রাতের সালাত রাতের শুরু, শেষ ও মধ্যখানে আদায় করা বৈধ, তবে উত্তম হচ্ছে শেষ তৃতীয়াংশ। আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«كان رسول الله صلى الله عليه وسلم يفطر من الشهر حتى نظن أن لا يصوم منه، ويصوم حتى نظن أن لا يفطر، وكان لا تشاء أن تراه من الليل مصلياً إلا رأيته، ولا نائماً إلا رأيته».
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোনো মাসে পানাহার করতেন, এক সময় আমরা মনে করতাম তিনি এ মাসে সিয়াম পালন করবেন না। আবার কোনো মাসে সিয়াম পালন করতেন, এক সময় আমরা মনে করতাম এ মাসে তিনি পানাহার করবেন না। তিনি এমন ছিলেন, যদি তুমি তাকে রাতে সালাত আদায়কারী দেখতে চাও দেখতে পাবে, আর যদি তাকে ঘুমন্ত অবস্থায় দেখতে চাও, তাও দেখতে পাবে”।[21]
এ থেকে রাতের সালাতের সহজ নিয়ম বুঝে আসে, যার যখন সুবিধা উঠে সালাত আদায় করবে। হ্যাঁ রাতের শেষ অংশে সালাত আদায় করা উত্তম। আমর ইবন আবাসা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছেন:
«أقرب ما يكون الربُّ من العبد في جوف الليل الآخر، فإن استطعت أن تكون ممن يذكر الله في تلك الساعة فكن».
“রাতের শেষ ভাগে বান্দা তার রবের সবচেয়ে নিকটবর্তী হয়, যদি তুমি সে সময়ে আল্লাহর যিকিরকারীদের অন্তর্ভুক্ত হতে পার, তাহলে তাদের অন্তর্ভুক্ত হও”।[22] এ বিষয়টি আরো স্পষ্ট হয় আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হাদীস দ্বারা, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«ينزل ربنا تبارك وتعالى كل ليلة إلى السماء الدنيا حين يبقى ثلث الليل الآخر فيقول: من يدعوني فأستجيب له؟ من يسألني فأعطيه؟ من يستغفرني فأغفر له؟ [فلا يزال كذلك حتى يضيء الفجر]».
“আমাদের রব প্রতি রাতে দুনিয়ার আসমানে অবতরণ করেন, যখন রাতের শেষ তৃতীয়াংশ বাকি থাকে। অতঃপর তিনি বলেন, কে আমাকে আহ্বান করবে, আমি যার ডাকে সাড়া দেব? কে আমার নিকট প্রার্থনা করবে, আমি যাকে প্রদান করব? কে আমার নিকট ইস্তেগফার করবে, আমি যাকে ক্ষমা করব? ফজর উদিত হওয়া পর্যন্ত অনুরূপ বলতে থাকেন”।[23]
জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি:
«إن في الليل لساعةً لا يوافقها عبدٌ مسلم يسأل الله خيراً من أمر الدنيا والآخرة إلا أعطاه إياه، وذلك كل ليلة».
“নিশ্চয় রাতে এমন একটি সময় রয়েছে, সে সময় যদি বান্দা আল্লাহর নিকট দুনিয়া ও আখিরাতের কোনো কল্যাণ প্রার্থনা করে, তাকে অবশ্যই তা প্রদান করা হয়। আর এটা প্রত্যেক রাতে হয়”।[24]
আব্দুল্লাহ ইবন আমর ইবন ‘আস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বলেছেন:
«أحبُّ الصلاة إلى الله صلاةُ داود عليه السلام، وأحبُّ الصيام إلى الله صيامُ داود، وكان ينام نصفَ الليل، ويقوم ثلثَه، وينام سُدسَه، ويصوم يوماً ويُفطر يوماً، ولا يفرُّ إذا لاقى».
“আল্লাহর নিকট সবচেয়ে পছন্দনীয় সালাত হচ্ছে দাউদের সালাত, তিনি রাতের অর্ধেক সময় ঘুমাতেন, এক তৃতীয়াংশ কিয়াম করতেন ও এক ষষ্ঠাংশ ঘুমাতেন। তিনি এক দিন সিয়াম পালন করতেন ও একদিন পানাহার করতেন। তিনি শত্রুদের মুখোমুখি হলে কখনো পলায়ন করতেন না”।[25]
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে যখন জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, কোনো আমল রাসূলুল্লাহর নিকট সবচেয়ে বেশি প্রিয় ছিল? তিনি বলেন, নিয়মতান্ত্রিকতা। আমি বললাম: তিনি কখন দাঁড়াতেন? তিনি বললেন: যখন মুরগির ডাক শুনতেন, তিনি দাঁড়াতেন”।[26] তার থেকে অপর হাদীসে এসেছে: “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আল্লাহ রাতে জাগিয়ে দিতেন, তার অযীফা শেষ করার আগে সাহরীর সময় হত না” [27]
পঞ্চম: কিয়ামুল লাইলের রাকাত সংখ্যা।
কিয়ামুল লাইলের নির্দিষ্ট কোনো রাকাত সংখ্যা নেই। কারণ, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«صلاة الليل مثنى مثنى، فإذا خشي أحدكم الصبح صلى ركعة واحدة توتر له ما قد صلى».
“রাতের সালাত দু’রাকাত, দু’রাকাত, যখন তোমাদের কেউ ভোর হওয়ার আশংকা করবে, সে এক রাকাত সালাত আদায় করবে, যা তার পূর্বের সালাতগুলো বেজোড় করে দিবে”।[28] কিন্তু এগারো বা তেরো রাকাতে সীমাবদ্ধ থাকাই উত্তম, যেহেতু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রাকাত সংখ্যা ছিল অনুরূপ আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«كان رسول الله صلى الله عليه وسلم يصلي ما بين أن يفرغ من صلاة العشاء إلى الفجر إحدى عشرة ركعة يسلِّم بين كل ركعتين ويوتر بواحدة» ؛ ولحديثها الآخر: «ما كان رسول الله صلى الله عليه وسلم يزيد في رمضان ولا في غيره على إحدى عشرة ركعة».
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাতুল এশা শেষ করে ফজর পর্যন্ত এগারো রাকাত সালাত আদায় করতেন, প্রত্যেক দু’রাকাত পর সালাত ফিরাতেন এবং এক রাকাত দ্বারা বিতর আদায় করতেন”।[29] তার থেকে অপর হাদীসে এসেছে: “নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমযান ও গায়রে রমযানে এগারো রাকাতের অধিক পড়তেন না”।[30]
ষষ্ঠ: কিয়ামুল লাইলের আদব:
১. ঘুমের সময় কিয়ামুল লাইলের নিয়ত করা আর ঘুমের উদ্দেশ্য হওয়া উচিৎ ইবাদাতে শক্তি অর্জন করা, তাহলে ঘুমেও সাওয়াব হবে। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«ما من امرئ تكون له صلاة بليل فغلبه عليها نوم إلا كتب الله له أجر صلاته، وكان نومُه صدقةً عليه»
“এমন কোনো ব্যক্তি নেই, যার রাতে সালাত আদায়ের অভ্যাস ছিল, অতঃপর তার ওপর ঘুম প্রবল হল, আল্লাহ তার জন্য অবশ্যই সালাতের সাওয়াব লিখবেন, আর তার ঘুম হবে তার জন্য সদকা”।[31] আবু দারদা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«من أتى فراشه وهو ينوي أن يقوم يصلي من الليل فغلبتْهُ عيناه حتى أصبح، كُتبَ له ما نوى، وكان نومُهُ صدقةً عليه من ربه تعالى».
“যে ব্যক্তি তার বিছানায় আসল, যার নিয়ত ছিল রাতে উঠে সালাত আদায় করা, কিন্তু তার ওপর ঘুম প্রবল হল, অতঃপর ভোর করল, তার নিয়ত অনুযায়ী তার জন্য লেখা হবে। আর তার ঘুম হবে আল্লাহর পক্ষ থেকে তার জন্য সদকা স্বরূপ” [32]
২. জাগ্রত হয়ে হাত মলে চেহারা থেকে ঘুম দূর করা, আল্লাহর যিকির করা ও মিসওয়াক করা, এবং বলা:
«لا إله إلا الله وحده لا شريك له، له الملك وله الحمد، وهو على كل شيء قدير، سبحان الله، والحمد لله، ولا إله إلا الله، والله أكبر، ولا حول ولا قوة إلا بالله العلي العظيم، ربِّ اغفر لي»
কারণ উবাদা ইবন সামেত রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: যে ব্যক্তি রাতে ঘুম থেকে আড়মোড়া দিয়ে উঠে বলল:
«لا إله إلا الله وحده لا شريك له، له الملك وله الحمد، وهو على كل شيء قدير، الحمد لله، وسبحان الله، ولا إله إلا الله، والله أكبر، ولا حول ولا قوة إلا بالله، ثم قال: اللهم اغفر لي، أو دعا استجيب [له][33]».
অতঃপর সে বলল: হে আল্লাহ আমাকে মাফ কর, অথবা দো‘আ করল, তার দো‘আ কবুল করা হবে”।[34] ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন: “…রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জাগ্রত হয়ে হাত দ্বারা চেহারা থেকে ঘুম মুছতে ছিলেন, অতঃপর সূরা আল ইমরানের শেষ দশ আয়াত তিলাওয়াত করলেন…”।[35]
হুযায়ফা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«كان النبي صلى الله عليه وسلم إذا قام من الليل يشوص فاه بالسواك»،
“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতে যখন ঘুম থেকে উঠতেন, মিসওয়াক দ্বারা তার মুখ দাঁতন করতেন”।[36] অতঃপর জাগ্রত হওয়ার অন্যান্য যিকির পড়া[37] এবং আল্লাহর নির্দেশ মোতাবেক অযু করা।
৩. হালকা দু’রাকাত সালাত দ্বারা তাহাজ্জুদ আরম্ভ করা। কারণ, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কথা ও কর্ম দ্বারা অনুরূপ প্রমাণিত হয়। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন,
«كان رسول الله صلى الله عليه وسلم إذا قام من الليل ليصلي افتتح صلاته بركعتين خفيفتين»
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন রাতে সালাত আদায়ের জন্য উঠতেন, তিনি হালকা দু’রাকাত সালাত দ্বারা তার সালাত আরম্ভ করতেন”।[38]
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«إذا قام أحدكم من الليل فليفتتح صلاته بركعتين خفيفتين».
“যখন তোমাদের কেউ রাতে সালাতের জন্য উঠে, সে যেন তার সালাত হালকা দু’রাকাত দ্বারা আরম্ভ করে”।[39]
৪. ঘরে তাহাজ্জুদ আদায় করা মুস্তাহাব, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘরে তাহাজ্জুদ আদায় করতেন। যায়েদ ইবন সাবেত রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«…فعليكم بالصلاة في بيوتكم، فإن خير صلاة المرء في بيته إلا المكتوبة».
“… তোমরা ঘরে সালাত আদায় কর, কারণ ব্যক্তির উত্তম সালাত হচ্ছে তার ঘরে ফরয ব্যতীত”।[40]
৫. নিয়মিত কিয়ামুল লাইল আদায় করা, কখনো ত্যাগ না করা। নির্দিষ্ট সংখ্যক রাকাত নিয়মিত পড়া মুস্তাহাব যদি শরীর চাঙ্গা ও মন প্রফুল্ল থাকে, তাহলে দীর্ঘ কিরাত করবে, অন্যথায় হালকা কিরাতে সালাত আদায় করবে, আর কখনো ছুটে গেলে কাযা করবে। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«خذوا من الأعمال ما تطيقون فإن الله لا يملُّ حتى تملّوا»
“তোমরা সে পরিমাণ আমল কর, যার সাধ্য তোমাদের রয়েছে, কারণ আল্লাহ ক্লান্ত হন না, যতক্ষণ না তোমরা ক্লান্ত হও”। তিনি বলতেন:
«أحب العمل إلى الله ما داوم عليه صاحبه وإن قلّ»
“আল্লাহর নিকট সে আমলই অধিক পছন্দনীয়, বান্দা যার ওপর নিয়মতান্ত্রিকতা বজায় রাখে, যদিও তার পরিমাণ কম হয়” [41]
আব্দুল্লাহ ইবন আমর আস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বলেছেন:
«يا عبد الله لا تكن مثل فلان كان يقوم الليل فترك قيام الليل»
“হে আব্দুল্লাহ তুমি অমুকের মত হয়ো না, সে রাতে কিয়াম করত, কিন্তু সে তা ত্যাগ করেছে”।[42]
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেছেন:
«…وكان رسول الله صلى الله عليه وسلم إذا صلى صلاة أحبّ أن يداوم عليها، وكان إذا غلبه نوم أو وجع عن قيام الليل صلى من النهار ثنتي عشرة ركعة»
“…রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন কোনো সালাত আদায় করতেন, তা তিনি নিয়মিত আদায় করা পছন্দ করতেন। যদি তার ওপর ঘুম প্রবল হত অথবা দাঁড়াতে কষ্ট হত, তাহলে তিনি দিনে বারো রাকাত সালাত আদায় করতেন”।[43] উমার ইবন খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«من نام عن حزبه أو عن شيء منه فقرأه فيما بين صلاة الفجر وصلاة الظهر كُتِبَ له كأنما قرأه من الليل».
“যে ব্যক্তি তার অযীফা থেকে ঘুমিয়ে পড়ল অথবা তার কতক অবশিষ্ট রইল, সে যদি তা ফজর ও যোহর সালাতের মধ্যবর্তী সময়ে পড়ে নেয়, তাহলে তার জন্য লেখা হবে যেন সে তা রাতেই পড়েছে”।[44]
৬. যদি তন্দ্রা চলে আসে, তাহলে সালাত ত্যাগ করে ঘুমানো উত্তম, যেন ঘুম পূর্ণ হয়। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«إذا نعس أحدُكم في الصلاة فليرقدْ حتى يذهب عنه النوم؛فإن أحدَكم إذا صلى وهو ناعس لعله يذهب يستغفر فيسبّ نفسه»؛
“যখন তোমাদের কেউ সালাতে ঝিমায়, তার উচিৎ শুয়ে পড়া, যেন তার থেকে ঘুম চলে যায়। কারণ, ঘুমানো অবস্থায় যখন তোমাদের কেউ সালাত আদায় করে, তখন হয়তো সে নিজের জন্য ইস্তেগফার করতে গিয়ে নিজেকে গালি দেবে”।[45] আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু ‘মারফূ’ সনদে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন:
«إذا قام أحدكم من الليل فاستعجم القرآن على لسانه فلم يدرِ ما يقول فليضطجع».
“যখন তোমাদের কেউ রাতে দণ্ডায়মান হয়, অতঃপর তার জন্য যদি কুরআন পড়া কষ্টকর হয়, কী বলে বলতে পারে না, তাহলে সে যেন শুয়ে পড়ে”।[46]
৭. রাতের সালাতের জন্য স্ত্রীকে জাগ্রত করা মুস্তাহাব নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতে সালাত আদায় করতেন, যখন তিনি বিতর আদায় করতেন আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে বলতেন:
«قومي فأوتري يا عائشة»
“হে আয়েশা উঠ, বিতর আদায় কর” [47] আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«رحم الله رجلاً قام من الليل فصلى، ثم أيقظ امرأته فصلت، فإن أبت نضح في وجهها الماء، ورحم الله امرأة قامت من الليل فصلت، ثم أيقظت زوجها، فإن أبى نضحت في وجهه الماء».
“আল্লাহ সে ব্যক্তিকে রহম করুন, সে রাতে উঠে সালাত আদায় করল, অতঃপর তার স্ত্রীকে জাগ্রত করল। যদি সে উঠতে না চায় তার চেহারায় পানির ছিটা দিল। আল্লাহ সে নারীর ওপর রহম করুন যে রাতে উঠে সালাত আদায় করল, অতঃপর তার স্বামীকে জাগ্রত করল, যদি সে উঠতে না চায় তার চেহারায় পানির ছেটা দিল” [48]
আবু সাঈদ ও আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«إذا استيقظ الرجل من الليل وأيقظ امرأته فصليا ركعتين كُتبا من الذاكرين الله كثيراً والذاكرات».
“যখন ব্যক্তি ঘুম থেকে উঠে ও তার স্ত্রীকে জাগ্রত করে, অতঃপর উভয়ে সালাত আদায় করে, তাদেরকে অধিক যিকিরকারী নারী ও অধিক যিকিরকারী পুরুষদের অন্তর্ভুক্ত লেখা হয়” [49] আলী ইবন আবু তালিব বর্ণনা করেন, কোনো এক রাতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার ও ফাতিমার নিকট গমন করলেন, অতঃপর বললেন: “তোমরা কি সালাত আদায় করছ না?” আমি বললাম: হে আল্লাহর রাসূল, সন্দেহ নেই আমাদের অন্তর আল্লাহর হাতে, যখন তিনি আমাদেরকে উঠাতে চাইবেন আমরা উঠে যাব আমার এ কথা বলার পর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চলে গেলেন। আমাকে কোনো উত্তর করলেন না। অতঃপর তার প্রস্থানের সময় আমি তাকে শুনলাম, তিনি উরুতে হাত মেরে বলতে ছিলেন:
﴿وَكَانَ ٱلۡإِنسَٰنُ أَكۡثَرَ شَيۡءٖ جَدَلٗا ٥٤ ﴾ [الكهف: ٥٤]
“আর মানুষ সবচেয়ে বেশি তর্ককারী”। [সূরা আল-কাহাফ, আয়াত: ৫৪][50]
ইবন বাত্তাল রহ. বলেছেন: “এ থেকে রাতের সালাতের ফযীলত প্রমাণিত হয় এবং এ জন্য পরিবার ও ঘনিষ্ঠজনদের জাগ্রত করা উচিৎ”।[51] তাবারি রহ. বলেছেন: “নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যদি রাতের সালাতের অধিক ফযীলত জানা না থাকত, তাহলে তিনি কখনো নিজ মেয়ে ও চাচতো ভাইকে তার জন্য কষ্ট দিতেন না, তাও এমন সময় যা আল্লাহ তার মখলুকের আরামের জন্য নির্ধারণ করেছেন। কিন্তু তিনি চেয়েছেন আরাম ও বিশ্রাম ত্যাগ করে তারা সে ফযীলত অর্জন করুক। কারণ আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন[52]:
﴿وَأۡمُرۡ أَهۡلَكَ بِٱلصَّلَوٰةِ وَٱصۡطَبِرۡ عَلَيۡهَاۖ لَا نَسَۡٔلُكَ رِزۡقٗاۖ نَّحۡنُ نَرۡزُقُكَۗ وَٱلۡعَٰقِبَةُ لِلتَّقۡوَىٰ ١٣٢﴾ [طه: ١٣٢]
“আর তোমার পরিবার-পরিজনকে সালাত আদায়ের আদেশ দাও এবং নিজেও তার ওপর অবিচল থাক। আমি তোমার কাছে কোনো রিযিক চাই না। আমিই তোমাকে রিযিক দেই আর শুভ পরিণাম তো মুত্তাকীদের জন্য”। [সূরা ত্বহা, আয়াত: ১৩২]
আর আলি রাদিয়াল্লাহু আনহু যে বলেছেন: “হে আল্লাহর রাসূল, সন্দেহ নেই আমাদের অন্তর আল্লাহর হাতে, যখন তিনি আমাদেরকে উঠাতে চাইবেন আমরা উঠে যাব” এ কথার উৎস হচ্ছে আল্লাহ তা‘আলার বাণী:
﴿ٱللَّهُ يَتَوَفَّى ٱلۡأَنفُسَ حِينَ مَوۡتِهَا وَٱلَّتِي لَمۡ تَمُتۡ فِي مَنَامِهَاۖ فَيُمۡسِكُ ٱلَّتِي قَضَىٰ عَلَيۡهَا ٱلۡمَوۡتَ وَيُرۡسِلُ ٱلۡأُخۡرَىٰٓ إِلَىٰٓ أَجَلٖ مُّسَمًّىۚ إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَأٓيَٰتٖ لِّقَوۡمٖ يَتَفَكَّرُونَ ٤٢ ﴾ [الزمر: ٤١]
“আল্লাহ জীবসমূহের প্রাণ হরণ করেন তাদের মৃত্যুর সময় এবং যারা মরেনি তাদের নিদ্রার সময়। তারপর যার জন্য তিনি মৃত্যুর ফয়সালা করেন তার প্রাণ তিনি রেখে দেন এবং অন্যগুলো ফিরিয়ে দেন একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত। নিশ্চয় এতে চিন্তাশীল কওমের জন্য অনেক নিদর্শন রয়েছে” [সূরা আয-যুমার, আয়াত: ৪১]
আর তিনি যে বলেছেন: “আমরা উঠবো”[53] এর অর্থ আমরা জাগ্রত হব নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উরুতে হাত মারার উত্তম অর্থ হচ্ছে আলির দ্রুত উত্তর দেওয়া ও যথাযথ ওজর পেশ না করা। এ জন্য তিনি উরুতে হাত মেরেছেন। হাদীস থেকে বুঝে আসে: রাতের সালাতের জন্য উদ্বুদ্ধ করা, সাথীদের নির্দেশ দেওয়া এবং ইমাম ও বড়দের উচিৎ অধীনদের দীনি ও দুনিয়াবী উপকারের স্বার্থে তাদের রাতের সালাতের খোঁজ-খবর নেওয়া। উপদেশ প্রদানকারীর কর্তব্য যখন তার কথা গ্রহণ করা না হয় অথবা তার মনের বিরুদ্ধে প্রতি উত্তর শুনে, তাহলে বিরত থাকা ও রুষ্ঠ না হওয়া, যদি কোনো হিকমত না থাকে”।[54]
নবী পত্নী উম্মে সালামা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক রাতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘুম থেকে ঘাবড়ে উঠেন, অতঃপর তিনি বলেন,
«سبحان الله ماذا أنزل الله من الخزائن؟ وماذا أُنزِل من الفتن؟ أيقظوا صواحب يوسف )يريد أزواجه( لكي يصلين، رُبَّ كاسية في الدنيا عارية في الآخرة». وفي لفظ: «ماذا أنزل الليلة؟».
“সুবহানাল্লাহ, আল্লাহ কত খাজানা নাযিল করেছেন? কত ফিতনা নাযিল করা হয়েছে? হে ইউসুফের সাথীগণ (তার স্ত্রীগণ উদ্দেশ্য) তোমরা সালাত আদায়ের জন্য জাগ্রত হও। দুনিয়াতে অনেক পোশাক পরিহিতা আখিরাতে নগ্ন থাকবে”। অপর বর্ণনায় এসেছে: “আজ রাতে কী নাযিল করা হয়েছে?”।[55]
হাফেয ইবন হাজার রহ. বলেছেন: “…এ হাদীস থেকে রাতের সালাতের প্রতি উদ্বুদ্ধ করণ ও তা ওয়াজিব নয় বুঝে আসে। কারণ তিনি তাদের ওপর অবশ্য জরুরি করেন নি”।[56] এ হাদীস থেকে আরো প্রমাণিত হয় ঘুম থেকে জাগ্রত হয়ে আল্লাহর যিকির করা মুস্তাহাব, অনুরূপ ইবাদাতের জন্য নিজ পরিবারের লোকদের জাগ্রত করা, বিশেষ করে যখন কোনো কিছু ঘটে তখন মুস্তাহাব” [57]
ইবন আসির রহ. বলেছেন: “দুনিয়াতে অনেক পোশাক পরিহিতা আখিরাতে নগ্ন থাকবে” এ কথা দ্বারা মানুষের নেক আমলের দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে, যা সে পরকালের জন্য প্রেরণ করে। তিনি বলেন, “দুনিয়ার অনেক সম্পদশালী কোনো ভালো কাজ করে না, সে আখিরাতে ফকির। দুনিয়াতে অনেক পোশাক পরিহিতা, বিত্ত ও সচ্ছলতার মালিক আখিরাতে নগ্ন ও হতভাগা হবে”।[58]
আব্দুল্লাহ ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, তার পিতা উমার ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু আল্লাহর তাওফীক মোতাবেক রাতে সালাত আদায় করতেন, অতঃপর যখন শেষ রাত হত তার পরিবারকে সালাতের জন্য জাগিয়ে দিতেন। তিনি তাদেরকে বলতেন: সালাত, সালাত, অতঃপর নিম্নের আয়াত তিলাওয়াত করতেন:
﴿وَأۡمُرۡ أَهۡلَكَ بِٱلصَّلَوٰةِ وَٱصۡطَبِرۡ عَلَيۡهَاۖ لَا نَسَۡٔلُكَ رِزۡقٗاۖ نَّحۡنُ نَرۡزُقُكَۗ وَٱلۡعَٰقِبَةُ لِلتَّقۡوَىٰ ١٣٢﴾ [طه: ١٣٢]
“আর তোমার পরিবার-পরিজনকে সালাত আদায়ের আদেশ দাও এবং নিজেও তার ওপর অবিচল থাক। আমি তোমার কাছে কোনো রিযিক চাই না। আমিই তোমাকে রিযিক দেই আর শুভ পরিণাম তো মুত্তাকীদের জন্য” [সূরা ত্বহা, আয়াত: ১৩২][59]
৮. মনোযোগ ও বুঝে বুঝে যে পরিমাণ কুরআন তিলাওয়াত করা যায়, তাহাজ্জুদে সে পরিমাণ পাঠ করা: এক পারা বা তার চেয়ে অধিক বা তার চেয়ে কম উচ্চ-অনুচ্চ যেভাবে ইচ্ছা পড়ার অনুমতি রয়েছে। হ্যাঁ যদি উচ্চ স্বরে তিলাওয়াত করলে পড়াতে প্রাণ আসে অথবা উপস্থিত লোকেরা শ্রবণ করতে পারে, অথবা অন্য কোনো ফায়দা রয়েছে, তাহলে উচ্চ স্বরে পড়া উত্তম। আর যদি নিকটে কেউ তাহাজ্জুদ পড়ে, অথবা তার উচ্চ স্বরের কারণে কারো কষ্ট হয়, তাহলে আস্তে পড়া উত্তম। আর যদি অগ্রাধিকারের কোনো কারণ না থাকে, তাহলে যেভাবে ইচ্ছা পড়বে।[60]
উপরে বর্ণিত সব অবস্থা সম্পর্কে হাদীস রয়েছে। আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«صليت مع رسول الله صلى الله عليه وسلم ليلة فأطال حتى هممت بأمر سوءٍ، قيل: وما هممت به؟ قال: هممت أن أجلس وأدعه».
“আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে কোনো এক রাতে সালাত আদায় করেছি, তিনি এত লম্বা করলেন যে আমি খারাপ ইচ্ছা করে ছিলাম, বলা হল: কি ইচ্ছা করে ছিলেন? তিনি বললেন: আমি ইচ্ছা করে ছিলাম তাকে ত্যাগ করে আমি বসে যাব”।[61] হুযায়ফা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, “আমি কোনো এক রাতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে সালাত আদায় করেছি, তিনি বাকারা আরম্ভ করলেন, আমি বললাম: একশ’ আয়াত হলে হয়ত রুকু করবে। তিনি পড়তে থাকলেন আমি বললাম হয়ত এক রাকাতে এ সূরা শেষ করবেন, তিনি পড়তে থাকলেন আমি বললাম: এর দ্বারা হয়ত রুকু করবেন। অতঃপর তিনি সূরা আলে-ইমরান আরম্ভ করে তা শেষ করলেন। অতঃপর তিনি সূরা নিসা আরম্ভ করে শেষ করলেন তিনি ধীরে ধীরে স্পষ্ট করে পড়তে ছিলেন। যখন কোনো তাসবীহের আয়াত পাঠ করতেন, তাসবীহ পড়তেন, যখন কোনো প্রার্থনার আয়াত পড়তেন, প্রার্থনা করতেন। যখন কোনো আশ্রয় চাওয়ার আয়াত পড়তেন, আশ্রয় চাইতেন…।”[62] মালেক ইবন আশজায়ি থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি এক রাতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে সালাতে দাঁড়িয়েছি, তিনি সূরা বাকারা তিলাওয়াত করলেন, তিনি এমন কোনো রহমতের আয়াত তিলাওয়াত করেননি, যেখানে তিনি বিরতি দিয়ে প্রার্থনা করেন নি। তিনি আযাবের কোনো অতিক্রম করলে সেখানে বিরতি দিয়ে আশ্রয় চেয়েছেন। অতঃপর তিনি দাঁড়ানোর সমপরিমাণ রুকু করেন, রুকুতে তিনি বলতেন:
«سبحان ذي الجبروت، والملكوت، والكبرياء، والعظمة»
অতঃপর তিনি সাজদা করেন, রুকুর অনুরূপ তিনি সাজদাতে বলেন। অতঃপর দাঁড়িয়ে তিনি সূরা আল ইমরান তিলাওয়াত করেন, অতঃপর তিনি একেকটি সূরা তিলাওয়াত করেন”।[63] হুযায়ফা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি এক রাতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সালাত আদায় করতে দেখেছেন, তিনি চার রাকাত সালাত আদায় করেন, তাতে তিনি সূরা বাকারাহ, আলে ইমরান, আন-নিসা, আল-মায়েদাহ অথবা সূরা আল-‘আনআম তিলাওয়াত করেন”।[64]
আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহুমা জনৈক ব্যক্তিকে বলেন, যে এক রাকাতে মুফাস্সালের সকল সূরা তিলাওয়াত করেছে: “তুমি কি কবিতার মতো দ্রুত পড়েছ? আমি তো সামঞ্জস্যপূর্ণ[65] সে সব সূরা জানি, যেগুলো রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটির সাথে অপরটি মিলিয়ে পাঠ করতেন। অতঃপর তিনি মুফাস্সাল থেকে বিশটি সূরা উল্লেখ করেন, প্রতি রাকাতে দু’টি করে সূরা”।[66] অপর বাক্যে এসেছে: “নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রত্যেক রাকাতে এগুলো থেকে দু’টি সূরা তিলাওয়াত করতেন”। তিনি বলেন, ইবন মাসউদের ‘মাসহাফ’ মোতাবেক বিশটি সূরা মুফাস্সালের শুরু থেকে, যার সর্বশেষ সূরা দুখান ও সূরা নাবা”।[67] সহীহ মুসলিমের বর্ণিত শব্দ: “আব্দুল্লাহর রচনা মোতাবেক দশ রাকাতে মুফাস্সালের বিশটি সূরা”।[68] সহীহ মুসলিমের অপর বর্ণনায় এসেছে:
«…هذّاً كهذِّ الشعر، إن أقواماً يقرؤون القرآن لا يجاوز تراقيهم، ولكن إذا وقع في القلب فرسخ فيه نفع، وإن أفضل الصلاة الركوع والسجود، إني لأعلم النظائر التي كان رسول الله صلى الله عليه وسلم يقرن بينهن…».
“কবিতার মতো দ্রুত পড়েছ, নিশ্চয় এক জাতি রয়েছে যারা কুরআন তিলাওয়াত করে, তবে তাদের গর্দান অতিক্রম করে না; কিন্তু যখন অন্তরে স্থির হও ও তাতে প্রোথিত হয় উপকার করে। সর্বোত্তম সালাত হচ্ছে রুকু ও সাজদা। নিশ্চয় আমি সে সব সূরা জানি, যেগুলো রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিলিয়ে পাঠ করতেন…।”[69] আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরআনের এক আয়াত দ্বারা এক রাত শেষ করেছেন”।[70] আবু যর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, “নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক রাতে এক আয়াত পড়তে থাকেন, সকাল পর্যন্ত তিনি তা বারবার পড়তে ছিলেন। আর সে আয়াতটি হচ্ছে:
﴿إِن تُعَذِّبۡهُمۡ فَإِنَّهُمۡ عِبَادُكَۖ وَإِن تَغۡفِرۡ لَهُمۡ فَإِنَّكَ أَنتَ ٱلۡعَزِيزُ ٱلۡحَكِيمُ ١١٨﴾ [المائدة: ١١٨]
“যদি আপনি তাদেরকে শাস্তি প্রদান করেন তবে তারা আপনারই বান্দা, আর তাদেরকে যদি ক্ষমা করেন, তবে নিশ্চয় আপনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়” [সূরা আল-মায়েদাহ, আয়াত: ১১৮][71] এ থেকে বুঝা যায় সালাতুল লাইলে বান্দার তাওফিক, সুস্থতা ও ইমানী শক্তি মোতাবেক বিভিন্ন কিরাত পড়া শ্রেয়।
কিয়ামুল লাইলে কিরাত জোরে ও আস্তে পড়ার দলীল:
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তাকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতে কিরাত জোরে পড়তেন, না আস্তে পড়তেন? তিনি বললেন: তিনি সব করতেন, কখনো জোরে পড়তেন আবার কখনো আস্তে পড়তেন”।[72] আবু কাতাদা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবু বকরকে বলেন,
«يا أبا بكر، مررت بك وإنك تصلي تخفضُ صوتك» قال: قد أسمعتُ من ناجيتُ يا رسول الله، قال: «ارفع قليلاً»
“হে আবু বকর, আমি তোমার পাশ দিয়ে গিয়েছি, তুমি নিচু স্বরে সালাত আদায় করতে ছিলে” তিনি বলেন, হে আল্লাহর রাসূল, আমি যার সাথে নিভৃতে কথোপকথন করেছি তাকে শুনিয়েছি। তিনি বললেন: “তোমার আওয়াজ সামান্য উঁচু কর” আর উমারকে তিনি বলেন,
«مررت بك وأنت تصلي رافعاً صوتك» فقال: يا رسول الله! أوقظ الوسنان وأطرد الشيطان، قال: «اخفض قليلاً».
“আমি তোমার পাশ দিয়ে অতিক্রম করেছি, তুমি উঁচু আওয়াজে সালাত আদায় করছিলে”। তিনি বললেন: হে আল্লাহর রাসূল, আমি ঘুমন্তদের জাগ্রত ও শয়তান বিতাড়িত করছিলাম। তিনি বললেন: “তুমি সামান্য নিচু কর”।[73]
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোনো এক রাতে জনৈক ব্যক্তিকে কুরআন তিলাওয়াত করতে শুনেন, অতঃপর তিনি বলেন,
«يرحمه الله لقد أذكرني كذا وكذا، آية كنت أسقطتها من سورة كذا وكذا» وفي لفظ: «كان النبي صلى الله عليه وسلم يستمع قراءة رجل في المسجد فقال: «رحمه الله لقد أذكرني آية كنت أُنسيتها».
“আল্লাহ তাকে রহম করুন, সে আমাকে অমুক অমুক আয়াত স্মরণ করিয়ে দিয়েছে, যা আমি অমুক অমুক সূরা থেকে বাদ দিয়ে ছিলাম”। অপর শব্দে এভাবে এসেছে: “নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে এক ব্যক্তির কিরাত শুনতে ছিলেন, তিনি বললেন: “আল্লাহ তাকে রহম করুন, সে আমাকে অমুক আয়াত স্মরণ করিয়ে দিয়েছে, যা আমি ভুলে গিয়ে ছিলাম”।[74]
কুরআনের হাফেয যদি দিন-রাতের সালাতে কুরআন তিলাওয়াত করে, তাহলে কুরআন তার স্মরণ ও মুখস্থ থাকবে। আব্দুল্লাহ ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«إنما مثل صاحب القرآن كمثل صاحب الإبل المعقلة إن عاهد عليها أمسكها وإن أطلقها ذهبت».
“কুরআনের হাফেযের উদাহরণ হচ্ছে উটের মালিকের ন্যায়, যদি সে তা বারবার তিলাওয়াত করে রাখতে পারবে, আর যদি ছেড়ে দেয় চলে যাবে”।[75]
মুসলিমের বর্ণনায় এসেছে:
«وإذا قام صاحب القرآن فقرأه بالليل والنهار ذكره وإذا لم يقم به نسيه».
“কুরআনের হাফিয যদি রাতে ও দিনে সালাতে দণ্ডায়মান হয়ে তিলাওয়াত করে, স্মরণ রাখতে পারবে, আর যদি সে তা সালাতে না পড়ে ভুলে যাবে”।[76]
৯. কখনো কখনো জামা‘আতের সাথে রাতের নফল আদায় করা বৈধ। কারণ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জামা‘আতের সাথে ও একলা সালাত আদায় করেছেন, তবে তার অধিকাংশ নফল সালাত ছিল একলা। তিনি কখনো হুযায়ফার সাথে সালাত আদায় করেছেন।[77] কখনো ইবন আব্বাসের সাথে।[78] কখনো আনাস, তার মাতা ও ইয়াতিমের সাথে।[79] কখনো ইবন মাসউদের সাথে।[80] কখনো আউফ ইবন মালেকের সাথে।[81] কখনো আনাস ও তার মা এবং তার খালা উম্মে হারামের সাথে।[82] কখনো ইতবান ইবন মালেক ও আবু বাকরার সাথে।[83] একবার তাঁর সাহাবীগণ উসমানের বাড়িতে ইমামতি করেছে।[84] হ্যাঁ এটাকে নিয়মিত সুন্নাত হিসেবে গ্রহণ করবে না, যদি কখনো তা করে তাহলে সমস্যা নেই, তারাবীর সালাত ব্যতীত, কারণ তাতে জামা‘আত দায়েমি সুন্নাত”।[85]
১০. বিতর সালাত দ্বারা তাহাজ্জুদ শেষ। আব্দুল্লাহ ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«اجعلوا آخر صلاتكم بالليل وتراً». وفي لفظ لمسلم: «من صلى من الليل فليجعل آخر صلاته وتراً [قبل الصبح]، فإن رسول الله صلى الله عليه وسلم كان يأمر بذلك».
“বেতেরকে তোমাদের রাতের শেষ সালাত বানাও”। মুসলিমের বর্ণনায় এরূপ এসেছে, (আব্দুল্লাহ ইবন উমার বলেছেন): “যে রাতে সালাত আদায় করে, সে যেন তার শেষ সালাত করে বিতরকে ‘ফজরের পূর্বে’, কারণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অনুরূপ নির্দেশ করতেন”।[86]
১১. ঘুম যাওয়া ও দণ্ডায়মানকে সাওয়াব জ্ঞান করা, তাহলে ঘুম ও সজাগ সর্বাবস্থায় সাওয়াব হাসিল হবে। একবার মুয়ায ও আবু মুসা আশা’আরি রাদিয়াল্লাহু আনহুমা নেক আমলের আলোচনা করতে ছিলেন। মুয়ায বললেন: হে আব্দুল্লাহ[87] আপনি কীভাবে কুরআন তিলাওয়াত করেন? তিনি বললেন: আমি রাত-দিন সর্বদা বিরতি দিয়ে দিয়ে তিলাওয়াত করি। তিনি বললেন: আপনি কীভাবে তিলাওয়াত করেন হে মুয়ায? তিনি বললেন: আমি প্রথম রাতে ঘুমাই অতঃপর সালাতে দাঁড়াই, যখন আমার কিছু ঘুম হয়ে যায় এবং আল্লাহর তাওফীক মোতাবেক তিলাওয়াত করি। আমি ঘুমকে ইবাদাত মনে করি, যেমন দাঁড়ানোকে ইবাদাত মনে করি”। অপর বর্ণনায় এসেছে: “মুয়ায আবু মুসাকে বললেন: আপনি কিভাবে তিলাওয়াত করেন? তিনি বললেন: দাঁড়িয়ে, বসে ও আমার বাহনের ওপর, বিরতি দিয়ে দিয়ে তিলাওয়াত করি। তিনি বলেন, কিন্তু আমি দাঁড়াই ও ঘুমাই, আমি আমার ঘুমকে ইবাদাত মনে করি যেমন দাঁড়ানোকে ইবাদাত মনে করি”।[88]
হাফেয ইবন হাজার রহ. বলেছেন: “এর অর্থ হচ্ছে তিনি বিশ্রামে সাওয়াব অন্বেষণ করেন, যেমন তিনি কষ্ট করে সাওয়াব অন্বেষণ করেন কারণ বিশ্রাম দ্বারা যদি ইবাদাতের শক্তি অর্জন উদ্দেশ্য হয়, তাহলে সেখানেও সাওয়াব হয়” [89]
আমি আল্লামা আব্দুল আযীয ইবন আব্দুল্লাহ ইবন বায রহ.-কে বলতে শুনেছি: “এতে সাহাবীদের সুন্দর আখলাক, ইবাদাতের প্রতি তাদের ঈর্ষা ও পরস্পর ইবাদাতের আলোচনার প্রমাণ পাওয়া যায়। তারা ঘুম ও দাঁড়ানোকে পর্যন্ত ইবাদাত গণ্য করতেন। অতএব, মুসলিমের উচিৎ তার সময় ও কাজ বণ্টন করে নেওয়া: একটি সময় কুরআনের জন্য, একটি সময় অন্যান্য কাজের জন্য ও একটি সময় পরিবারের জন্য…”।[90]
১২. লম্বা কিরাতের সাথে অধিক রুকু সাজদা করা উত্তম রাতের সালাতে যদি কষ্ট অথবা বিরক্ত না লাগে। জাবের ইবন আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«أفضل الصلاة طول القنوت…»
“লম্বা কুনুত[91] বিশিষ্ট সালাত উত্তম”।[92] সাওবান রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, এক ব্যক্তি তাকে জান্নাতে প্রকাশকারী আমল অথবা আল্লাহর নিকট সবচেয়ে প্রিয় আমল সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছিল, তিনি বলেন, আমি এ সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করেছি, তিনি বলেছেন:
«عليك بكثرة السجود لله، فإنك لا تسجد لله سجدة إلا رفعك الله بها درجة وحطَّ عنك بها خطيئة»؛
“তুমি আল্লাহর জন্য অধিক সাজদা কর। কারণ, তুমি এমন কোনো সাজদা করবে না, যার বিনিময়ে আল্লাহ তোমার মর্তবা বৃদ্ধি করবেন না ও তোমার পাপ মোচন করবেন না”।[93] রাবিআ ইবন কাব আসলামি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে রাত্রি যাপন করতাম, তার অযুর পানি ও প্রয়োজনীয় জিনিস পেশ করতাম। তিনি আমাকে বলেন, “চাও”, আমি বললাম: আমি জান্নাতে আপনার সাথে থাকতে চাই। তিনি বললেন: “এ ছাড়া অন্য কিছু?” আমি বললাম: এটাই। তিনি বললেন:
«فأعنِّي على نفسك بكثرة السجود»
“অধিক সাজদা দ্বারা তুমি আমাকে সাহায্য কর, তোমার জন্যই” [94] আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«أقرب ما يكون العبد من ربه وهو ساجد، فأكثروا الدعاء»
“বান্দা তার রবের অধিক নিকটবর্তী হয় সাজদা অবস্থায়, অতএব তোমরা অধিক দো‘আ কর”।[95]
ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত একটি ‘মারফূ’ হাদীসে আছে:
«أما الركوع فعظموا فيه الرب، وأما السجود فاجتهدوا في الدعاء، فقمِنٌ أن يُستجاب لكم».
“আর রুকুতে তোমরা আল্লাহর বড়ত্ব বর্ণনা কর, সাজদাতে অধিকহারে দো‘আ কর, অধিক সম্ভাবনা রয়েছে যে তোমাদের ডাকে সাড়া দেওয়া হবে”।[96]
এসব হাদীসের কারণে আলিমগণ ইখতিলাফ করেছেন কোনোটি উত্তম: লম্বা কিয়াম করে কম সাজদা করা অথবা সংক্ষেপ কিয়াম করে অধিক সাজদা করা?
কেউ বলেছেন: লম্বা কিয়ামের তুলনায় অধিক রুকু সাজদা উত্তম। ইমাম আহমদের সাথীদের একটি জামা‘আত এ অভিমত গ্রহণ করেছেন, তাদের দলীল পূর্বে উল্লিখিত সাজদার ফযীলত সংক্রান্ত হাদীস।
কেউ বলেছেন: উভয় সমান।
কেউ বলেছেন: লম্বা কিয়াম করা অধিক রুকু সাজদা থেকে উত্তম। তাদের দলীল পূর্বে উল্লিখিত[97] জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হাদীস:
«أفضل الصلاة طول القنوت»،
“লম্বা কুনুত বিশিষ্ট সালাতই উত্তম”।[98] ইমাম তাবারি রহ. আল্লাহ তা‘আলার বাণী: ﴿أَمَّنۡ هُوَ قَٰنِتٌ ءَانَآءَ ٱلَّيۡلِ سَاجِدٗا وَقَآئِمٗا ٩ ﴾ [الزمر: ٩] “যে ব্যক্তি রাতের প্রহরে সাদজাবনত হয়ে ও দাঁড়িয়ে আনুগত্য প্রকাশ করে” [সূরা আয-যুমার, আয়াত: ৯] সম্পর্কে বলেন, এখানে কুনুতের অর্থ সালাতে দাঁড়িয়ে কিরাত পড়া। অন্যরা বলেছেন: কুনুত অর্থ ইবাদাত, আর ‘কানেত’ অর্থ আনুগত্যকারী।[99] ইবন কাসির রহ. বলেন, ﴿أَمَّنۡ هُوَ قَٰنِتٌ ءَانَآءَ ٱلَّيۡلِ سَاجِدٗا وَقَآئِمٗا ٩ ﴾ [الزمر: ٩] “যে ব্যক্তি রাতের প্রহরে সাদজাবনত হয়ে ও দাঁড়িয়ে আনুগত্য প্রকাশ করে” [সূরা যুমারআয়াত: ৯] অর্থাৎ সাজদা ও কিয়াম অবস্থায়। এ জন্য যারা কুনুতের অর্থ বলেছেন সালাতে খুশু বা একাগ্রতা, তারা দলীল হিসেবে এ আয়াত পেশ করেছেন, এখানে কুনুত অর্থ শুধু দাঁড়ানো নয় যেমন অনেকে বলেছেন। ইবন মাসউদ বলেছেন:قانت “কানেত” অর্থ আল্লাহ ও তার রাসূলের আনুগত্যকারী”।[100]
শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়া রহ. বলেছেন: “কিয়াম, রুকু ও সাজদা লম্বা করা অধিক কিয়াম, রুকু ও সাজদা থেকে উত্তম”।[101] আমি শাইখ আব্দুল আযীয ইবন বায রহ.-কে বলতে শুনেছি: “এ নিয়ে আলিমগণ মতবিরোধ করেছেন কোনোটি উত্তম: কম সাজদা করে দীর্ঘ কিয়াম করা, অথবা সংক্ষেপে কিয়াম করে অধিক সাজদা করা তাদের কেউ এটা, আর কেউ ওটা উত্তম বলেছেন। কিন্তু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সালাত ছিল মধ্যম পন্থার, তিনি যদি লম্বা কিয়াম করতেন, তাহলে রুকু-সেজদাও লম্বা করতেন। আর যদি সংক্ষেপে কিয়াম করতেন, তাহলে রুকু-সাজদাও সংক্ষেপ করতেন এটাই উত্তম”। তিনি আরো বলেছেন: উত্তম হচ্ছে মুসল্লি তার সাধ্যমত সালাত আদায় করবে যেন বিরক্তি না আসে। তার মন যদি লম্বা কিরাতের জন্য সায় দেয় তাহলে লম্বা করবে। আর যদি তার মন সংক্ষেপে আরাম বোধ করে, তাহলে সংক্ষেপ করবে, যখন দেখবে যে সংক্ষেপে অধিক খুশু/একাগ্রতা সৃষ্টি হয়, মনোযোগ তৈরি হয় ও ইবাদত করতে আনন্দ লাগে। সাজদা যত অধিক হবে, তত উত্তম, অতএব মুসলিম যদি এরূপ করতে পারে, তাহলে দীর্ঘ কিয়াম করা উত্তম অধিক রুকু-সাজদার সাথে, যেখানে উভয় পদ্ধতি বিদ্যমান, আর তা হচ্ছে মধ্যম পন্থার সালাত, যদি কিয়াম লম্বা করে রুকু-সাজদা লম্বা করবে, আর যদি কিয়াম সংক্ষেপ করে, রুকু-সাজদা সংক্ষেপ করবে।[102]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রচুর ইবাদাত করতেন ও তার থেকে তিনি আনন্দ পেতেন। অনেক সময় তিনি রাতের সালাতে দীর্ঘ কিরাত পড়তেন যে, তার দু’পা ফেটে যেত। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা তাকে বলেন; আপনি এরূপ করেন কেন, অথচ আল্লাহ আপনার পূর্বাপর সব গুনা মাফ করে দিয়েছেন? তিনি বলেন,
«أفلا أكون عبداً شكوراً».
“আমি কি আল্লাহর শোকর গুজার বান্দা হবো না?”[103] রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে প্রমাণিত, তিনি রাতের সালাতে এক রাকাতে সূরা বাকারাহ, নিসা ও আল ইমরান তিলাওয়াত করেছেন।[104] হুযায়ফা রাদিয়াল্লাহু আনহু রাতে তাকে চার রাকাত সালাত আদায় করতে দেখেছেন, সেখানে তিনি সূরা বাকারাহ, আল ইমরান, নিসা, মায়েদাহ অথবা আন‘আম তিলাওয়াত করেছেন”।[105] আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে বলেন,
«كان يصلي إحدى عشرة ركعة، كانت تلك صلاته – تعني بالليل – فيسجد السجدة من ذلك قدر ما يقرأُ أَحَدُكُم خمسين آية قبل أن يرفع رأسه».
“তিনি এগারো রাকাত সালাত আদায় করতেন, তার সালাত এমন ছিল যে, তিনি একটি সাজদা করতেন, তার মাথা উঠানোর আগে তোমাদের কেউ পঞ্চাশ আয়াত পড়তে পারত”।[106] তিনি এ কারণে আনন্দ বোধ করতেন, তার রবের ইবাদাতে তিনি বিরক্ত হতেন না, বরং সালাত ছিল তার চোখের শীতলতা। আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«حُبِّبَ إليّ النساء والطيب، وجُعِلت قُرَّةُ عيني في الصلاة».
“আমার নিকট নারী ও সুগন্ধি প্রিয় করে দেওয়া হয়েছে, আর আমার চোখের শীতলতা বানানো হয়েছে সালাতকে”।[107] সালাত ছিল তার আরামের বস্তু। সালেম ইবন আবুল জাদ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক ব্যক্তি বলল: আফসোস আমি যদি সালাত আদায় করে স্বস্তি হাসিল করতাম! ফলে তারা (উপস্থিত লোকেরা) তাকে তিরস্কার করল, সে বলল: আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি:
«يا بلال أقم الصلاة أرحنا بها».
“হে বেলাল সালাত কায়েম কর, আমাদেরকে তার দ্বারা স্বস্তি দাও”।[108] কিন্তু উম্মতের জন্য তিনি বলেছেন:
«خذوا من الأعمال ما تطيقون، فإن الله لا يملُّ حتى تملُّوا».
“তোমরা যা পার তাই আমল কর। কারণ আল্লাহ ক্লান্ত হন না, যতক্ষণ না তোমরা ক্লান্ত হও”।[109]
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«إن الدين يُسْرٌ ولن يُشادَّ الدينَ أحدٌ إلا غَلَبَهُ، فسدِّدوا وقاربوا، وأبشروا، واستعينوا بالغدوة والروحة، وشيء من الدُّلجة، والقصدَ القصدَ تبلغوا».
“দীন সহজ, তোমাদের যে কেউ দীনে কঠোরতা করবে, দীন তার ওপর গালেব হবে। অতএব, তোমরা মধ্যম পন্থা অবলম্বন কর, তার নিকটবর্তী থাক ও সুসংবাদ গ্রহণ কর, (কারণ নিয়মতান্ত্রিক আমল কম হলেও অধিক সাওয়াব), আর সকাল, সন্ধ্যা ও রাতের কিছু অংশে অর্থাৎ প্রাণবন্ত সময়ে নিয়মিত আমল করে সাহায্য চাও। আর মধ্যম পন্থা অবলম্বন কর, মধ্যম পন্থা অবলম্বন কর, তাহলে অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছতে পারবে”।[110]
আমি শাইখ আব্দুল আযীয ইবন বায রহ.-কে বলতে শুনেছি: “এ থেকে প্রমাণিত হয় আমাদের পক্ষে উত্তম হচ্ছে মধ্যম পন্থা অবলম্বন করা, অধিক লম্বা না করা যেন আমরা বিরক্ত না হই ও ইবাদাত ত্যাগ না করি। মুমিন নিজেকে কষ্ট না দিয়ে সালাত আদায় করবে, মুজাহাদা ও ইবাদাত করবে, বরং সব বিষয়ে মধ্যম পন্থা অবলম্বন করবে, যেন বিরক্তির ফলে ইবাদাতের প্রতি অনিহা সৃষ্টি না হয়” [111]
সপ্তম: কিয়ামুল লাইলের জন্য সহায়ক উপকরণ:
১. কিয়ামুল লাইলের ফযীলত, আল্লাহর নিকট রাতে সালাত আদায়কারীদের মর্তবা ও দুনিয়া ও আখিরাতে তাদের জন্য যে বিনিময় রয়েছে তা জানা। যেমন, আল্লাহ তাদের পূর্ণ ঈমানের সাক্ষ্য দিয়েছেন, তাদের জন্য রয়েছে জান্নাত। তারা ও মূর্খরা কখনো সমান নয়, কিয়ামুল লাইলের ফলে জান্নাত ও তার উঁচু প্রাসাদ লাভ হয়। কিয়ামুল লাইল আল্লাহর নেককার বান্দাদের সিফাত ও মুমিনদের সম্মানের ভূষণ। মুমিন ব্যক্তি রাতের সালাতের জন্য ঈর্ষা করে।[112]
২. শয়তানের ষড়যন্ত্র সম্পর্কে সজাগ থাকা। কারণ, শয়তান তাতে বাধার সৃষ্টি করে। রাতে না উঠার ক্ষতি জানা ইত্যাদি। আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহ আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দরবারে এক ব্যক্তির উল্লেখ করা হল, যে সকাল পর্যন্ত ঘুমিয়ে ছিল, তিনি বললেন:
«ذاك رجل بال الشيطان في أذنه»، أو قال: «في أذنيه»
“সে এমন লোক, যার কানে শয়তান পেশাব করেছে” অথবা বলেছেন: “তার দু’কানে”।[113] আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«يعقد الشيطان على قافية رأس أحدكم إذا هو نام ثلاث عُقدٍ، يضرب على مكان كل عقدة:عليك ليل طويل فارقُدْ،فإن استيقظ فذكر الله انحلَّت عقدة،فإن توضأ انحلَّت عقدة،فإن صلى انحلَّت عُقَدُهُ،فأصبح نشيطاً طيب النفس، وإلا أصبح خبيث النفس كسلان»
“তোমাদের প্রত্যেকের মাথার শেষাংশে শয়তান তিনটি ঘিরা দেয়, যখন সে ঘুমায়। প্রত্যেক ঘিরার স্থানে সে মোহর এঁটে দেয়: তোমার রাত এখনো অনেক বাকি। অতএব, ঘুমাও যদি সে জাগ্রত হয়ে আল্লাহর যিকর করে একটি ঘিরা খুলে যায়, যদি সে ওযু করে অপর ঘিরা খুলে যায়, যদি সে সালাত আদায় করে, তার সব ঘিরা খুলে যায়, ফলে সে প্রাণবন্ত ও প্রফুল্ল চিত্তে ভোর করে, অন্যথায় সে খারাপ মন ও অলসতাসহ ভোর করে”।[114] আব্দুল্লাহ ইবন আমর ইবন আস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«يا عبد الله لا تكن مثل فلان كان يقوم من الليل فترك قيام الليل»
“হে আব্দুল্লাহ তুমি অমুকের মত হয়ো না, সে রাতে কিয়াম করত, পরে সে তা ত্যাগ করেছে”।[115] আব্দুল্লাহ ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি একটি স্বপ্ন দেখেন, অতঃপর তা বোন উম্মুল মুমিনীন হাফসার নিকট বর্ণনা করেন, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট বলেন, তিনি বলেন, “আব্দুল্লাহ খুব ভালো ছেলে, যদি সে রাতে সালাত আদায় করত”। এরপর থেকে তিনি রাতে খুব কম ঘুমাতেন।[116] আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«إن الله يُبغض كل جعظريٍّ جوَّاظ، سخَّاب بالأسواق، جيفة بالليل، حمار بالنهار، عالمٍ جاهل بأمر الآخرة».
“নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা অপছন্দ করেন প্রত্যেক কঠোর মেজাজ পেটুক, বাজারে চিৎকারকারী, রাতে মৃত দেহ ও দিনে গাধা, জেনেও আখিরাতের বিষয়ে মূর্খদের” [117]
৩. আশা ছোট রাখা ও মৃত্যুকে স্মরণ করা। কারণ, তার ফলে আমলের প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি হয় ও অলসতা দূর হয় আব্দুল্লাহ ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার ঘাড় ধরে বলেন,
«كن في الدنيا كأنك غريب أو عابر سبيل».
“তুমি দুনিয়াতে বাস কর অপরিচিত অথবা পথিকের ন্যায়”। ইবন উমার বলতেন: “যখন তুমি সন্ধ্যা কর, সকালের অপেক্ষা কর না, আর যখন তুমি সকাল কর, সন্ধ্যার অপেক্ষা কর না। সুস্থ অবস্থায় অসুস্থতার সম্বল অর্জন কর, আর জীবিত অবস্থায় মৃত্যুর সম্বল অর্জন কর”।[118] ইমাম বুখারী রহ. বলেছেন:
اغتنم في الفراغ فضل ركوعٍ = فعسى أن يكون موتك بغتة
كم صحيح رأيت من غيرسقمٍ = ذهبت نفسه الصحيحة فلتة
“অবসরে তুমি রুকুর ফযীলত গণিমত জ্ঞান কর, কারণ তোমার মৃত্যু হঠাৎও হতে পারে। রোগহীন কত সুস্থ ব্যক্তিকে দেখেছি, তার সুস্থ দেহ হঠাৎ প্রস্থান করেছে”।[119]
ইমাম বুখারী রহ.-কে যখন হাফেযে হাদীস, আব্দুল্লাহ ইবন আব্দুর রহমান দারামি রহ.-এর মৃত্যু সংবাদ শুনানো হয়, তখন তিনি আবৃতি করেন:
إن عشت تفجع بالأحبة كلهم = وبقاء نفسك لا أبا لك أفجع
“যদি তুমি বেঁচে থাক, সকল প্রিয়দের দ্বারা তুমি আতঙ্কিত হবে, তোমার বেঁচে থাকাও আতঙ্কের বিষয়”।[120]
অপর কবি বলেছেন:
صلاتك نورٌ والعباد رقودٌ = ونومك ضد للصلاة عنيد
وعمرك غُنمٌ إن عقلت ومهلةٌ = يسيرُ ويفنى دائباً ويبيد
“তোমার সালাত নূর, বান্দারা যখন ঘুমিয়ে থাকে, তোমার ঘুম সালাতের বিপরীত-প্রতিপক্ষ, তোমার জীবন গণিমত যদি বুঝতে সক্ষম হও এবং সামান্য সুযোগ, যা অনবরত শেষ হচ্ছে ও নিঃশেষ হয়ে যাবে” [121] কতক নেককার লোক বলেছেন:
عجبتُ من جسمٍ ومن صحةٍ = ومن فتىً نام إلى الفجر
فالموتُ لا تؤمن خطفاتُـهُ = في ظلم الليل إذا يسرِي
من بين منقول إلى حفرةٍ = يفترش الأعمال في القبر
وبين مأخوذٍ على غِرَّةٍ = بات طويل الكبر والفخرِ
عاجله الموتُ على غفلةٍ = فمات محسوراً إلى خسر
“আমি সে শরীর, সুস্থতা ও যুবককে দেখে আশ্চর্য হই যে ফজর পর্যন্ত ঘুমিয়ে আছে, অথচ মৃত্যুর ছোবল থেকে তার কোনো নিরাপত্তা নেই, এমনকি রাতেও যখন অন্ধকার আচ্ছন্ন করে; গর্তে নিয়ে যাওয়ার দেরি, অতি শীঘ্র তার আমল বিছানো হবে কবরে; হঠাৎ পাকড়াও করার অপেক্ষা, দীর্ঘ অহংকার ও বড়ত্ব মাটি হয়ে যাবে; মৃত্যু তাকে অতর্কিত হানা দিল, সে হতাশার মৃত্যু নিয়ে হাশরের দিকে ধাবিত হল” [122]
৪. সুস্থতা ও অবসরকে গণিমত মনে করা, যেন অসুখ ও ব্যস্ততার সময় সুস্থতা ও অবসরের আমল লিখা হয়। আবু মুসা আশা’আরি রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«إذا مرض العبد أو سافر كُتب له مثلُ ما كان يعمل مقيماً صحيحاً».
“বান্দা যখন অসুস্থ হয় অথবা সফর করে, সে মুকিম ও সুস্থ অবস্থায় যে আমল করত, তাই তার জন্য লেখা হয়”।[123] অতএব, বুদ্ধিমানের কাজ নয় এ ফযীলত হাত ছাড়া করা, তার উচিৎ সুস্থতা, অবসর ও মুকিম অবস্থায় অধিক আমল করা, যেন এ পরিমাণ আমল তার অক্ষমতা অথবা ব্যস্ততার সময় লেখা হয়”। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«نعمتان مغبونٌ فيهما كثيرٌ من الناس: الصحة والفراغ».
“দু’টি নি‘আমত রয়েছে অধিকাংশ মানুষ যার ব্যাপারে ধোঁকায় আছে: তা হল সুস্থতা ও অবসর”।[124] ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যক্তিকে উপদেশ দিয়ে বলেন,
«اغتنم خمساً قبل خمس: شبابك قبل هرمك، وصحتك قبل سقمك، وغناك قبل فقرك، وفراغك قبل شغلك، وحياتك قبل موتك».
“তুমি পাঁচটি জিনিসকে পাঁচটি জিনিসের পূর্বে গণিমত মনে কর: বার্ধক্যের আগে যৌবনকে, অসুস্থতার আগে সুস্থতাকে, অভাবের আগে সচ্ছলতাকে, ব্যস্ততার আগে অবসরকে ও মৃত্যুর আগে জীবনকে”।[125]
৫. দ্রুত ঘুমানোর চেষ্টা করা। দ্রুত ঘুমালে কিয়ামুল লাইল ও ফজর সালাতের শক্তি সঞ্চয় হয়। আবু বারযাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এশার পূর্বে ঘুমানো ও তার পরে কথা বলা অপছন্দ করতেন।[126]
৬. ঘুমের আদব রক্ষা করা। যেমন ওযুসহ শয়ন করা, যদি ওযু না থাকে ওযু করে দু’রাকাত অযুর সালাত আদায় করা। অতঃপর ঘুমের আযকার ও দো‘আ পাঠ করা। দু’হাতের তালু জমা করে, তাতে সামান্য থু থু-র ছিটা দেওয়া ও তাতে সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক ও সূরা নাস পাঠ করা। অতঃপর এ দু’হাত দ্বারা শরীরের সম্ভাব্য স্থান মাসাহ করা, মাথা, চেহারা ও শরীরের সন্মুখভাগ থেকে আরম্ভ করা। এভাবে তিনবার করা। আয়াতুল কুরসি পাঠ করা, সূরা বাকারার শেষ দু’আয়াত তিলাওয়াত করা এবং ঘুমের দো‘আগুলো পূর্ণ করা।[127] এভাবে ঘুমালে ইনশাআল্লাহ রাতে জাগ্রত হওয়া সহজ হবে। এ ছাড়া অন্যান্য পদ্ধতি গ্রহণ করা যেমন মাথার নিকট এলার্ম ঘড়ি রাখা, অথবা পরিবারের কাউকে, অথবা কোনো আত্মীয়কে, অথবা প্রতিবেশীকে, অথবা কোনো বন্ধুকে জাগিয়ে দেওয়ার অনুরোধ করা।
৭. কিয়ামুল লাইলের জন্য সহায়ক অন্যান্য পদ্ধতি গ্রহণ করা। যেমন অধিক ভক্ষণ না করা, দিনে অযথা কঠিন কর্মে নিজেকে ক্লান্ত না করা, বরং উপকারী কর্মে নিজেকে ব্যাপৃত রাখা। কায়লুলা তথা দিবানিন্দ্রা ত্যাগ না করা, কারণ দিনে সামান্য ঘুমালে রাতে জাগ্রত হওয়া সহজ হয়। পাপ ও অপরাধ থেকে বিরত থাকা। ইমাম সাওরি রহ. থেকে বর্ণনা করা হয়েছে, তিনি বলেছেন: “আমি একটি পাপের কারণে পাঁচ মাস কিয়ামুল লাইল থেকে বঞ্চিত হয়েছি”। পাপের কারণে বান্দা অনেক সময় বঞ্চিত হয়, তার থেকে অনেক কল্যাণ ছুটে যায়: যেমন কিয়ামুল লাইল। কিয়ামুল লাইলের বড় একটি উপায় হচ্ছে মুসলিমদের ব্যাপারে অন্তর পরিষ্কার থাকা, বিদ‘আত থেকে মুক্ত থাকা ও অতিরিক্ত দুনিয়া পরিহার করা তম উপায় হচ্ছে: আল্লাহর মহব্বত ও ঈমানী শক্তি। যেমন, সে যখন সালাতে দাঁড়ায় আল্লাহর সাথে মোনাজাত করে, তার সম্মুখে উপস্থিত হয় ও তার সন্মুখে দণ্ডায়মান থাকে, এ অনুভূতি তাকে দীর্ঘ কিয়ামের জন্য অনুপ্রাণিত করবে [128] নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে একটি বিশুদ্ধ হাদীসে এসেছে, তিনি বলেছেন:
«إن في الليل لساعة لا يوافقها عبد مسلم يسأل الله خيراً من أمر الدنيا والآخرة إلا أعطاه إياه، وذلك كل ليلة».
“নিশ্চয় রাতে একটি মুহূর্ত রয়েছে, মুসলিম বান্দা সে সময় মোতাবেক আল্লাহর নিকট দুনিয়া ও আখিরাতের যে কোনো কল্যাণ প্রার্থনা করে, আল্লাহ অবশ্যই তাকে তা প্রদান করেন, আর এটা প্রতি রাতেই হয়”।[129]
অষ্টম. রাত ও দিনের স্বাভাবিক সালাত:
দিন-রাত যখন ইচ্ছা মুসলিম নফল ও সাধারণ সালাত আদায় করতে পারে নিষিদ্ধ সময় ব্যতীত, তার সালাত হবে দু’রাকাত দু’রাকাত। আব্দুল্লাহ ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«صلاة الليل والنهار، مثنى مثنى…»
“রাত ও দিনের সালাত দু’রাকাত দু’রাকাত…”[130] অতএব মুমিন যত ইচ্ছা সালাত আদায় করবে। আনাস ইবন মালেক রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে নিম্নের আয়াত সম্পর্কে বর্ণিত আছে:
﴿تَتَجَافَىٰ جُنُوبُهُمۡ عَنِ ٱلۡمَضَاجِعِ يَدۡعُونَ رَبَّهُمۡ خَوۡفٗا وَطَمَعٗا وَمِمَّا رَزَقۡنَٰهُمۡ يُنفِقُونَ ١٦ ﴾ [السجدة : ١٦]
“তাদের পার্শ্বদেশ বিছানা থেকে আলাদা হয়। তারা ভয় ও আশা নিয়ে তাদের রবকে ডাকে। আর আমি তাদেরকে যে রিযিক দান করেছি, তা থেকে তারা ব্যয় করে” [সূরা আস-সাজদাহ, আয়াত: ১৬] তিনি বলেন, “তারা মাগরিব ও এশার মধ্যবর্তী সময় সালাত অবস্থায় অতিবাহিত করতেন”। হাসান রহ. বলতেন: “এর অর্থ কিয়ামুল লাইল”।[131] আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি আল্লাহর নিম্নের বাণী সম্পর্কে বলেছেন:
﴿كَانُواْ قَلِيلٗا مِّنَ ٱلَّيۡلِ مَا يَهۡجَعُونَ ١٧ ﴾ [الذاريات: ١٧]
“রাতের সামান্য অংশই এরা ঘুমিয়ে কাটাত”। [সূরা আয-যারিয়াত, আয়াত: ১৭] “তারা মাগরিব ও এশার মধ্যবর্তী সময়ে সালাত আদায় করত, অনুরূপ অর্থে এসেছে আল্লাহর বাণী[132]:
﴿تَتَجَافَىٰ جُنُوبُهُمۡ ١٦ ﴾ [السجدة : ١٦]
“তাদের পার্শ্বদেশ বিছানা থেকে আলাদা হয়”। [সূরা আস-সাজদাহ, আয়াত: ১৬] হুযায়ফা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, “নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাগরিবের সালাত আদায় করলেন, অতঃপর তিনি মসজিদে সালাত আদায় করতে লাগলেন, অবশেষে এশার সালাত আদায় করেন”।[133] তার থেকে অপর বর্ণনায় রয়েছে, তিনি বলেন, আমার মা আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন: তুমি কবে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামে সাথে সাক্ষাত করেছ? আমি তাকে বললাম: অমুক অমুক দিন থেকে সাক্ষাত নেই, তিনি আমাকে বকুনি দিলেন। আমি তাকে বললাম: আমাকে সুযোগ দিন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট গমন করে তার সাথে সালাত আদায় করব, অতঃপর আমার ও আপনার জন্য ইস্তেগফারের প্রার্থনা জানাব আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট এসে তার সাথে মাগরিব সালাত আদায় করি। এরপর তিনি সালাত আদায় করতে লাগলেন, অতঃপর তিনি এশার সালাত আদায় করলেন। অতঃপর তিনি রওয়ানা দিলেন, আমি তার পিছু নিলাম। তিনি আমার শব্দ শুনে বললেন: কে হুযায়ফা? আমি বললাম: হ্যাঁ, তিনি বললেন: আল্লাহ তোমাকে ও তোমার মাকে ক্ষমা করুন, তোমার কোনো প্রয়োজন? তিনি বললেন:
«إن هذا ملك لم ينزل الأرض قطُّ قبل هذه الليلة استأذن ربَّه أن يسلم عليَّ ويبشرني بأن فاطمة سيدة نساء أهل الجنة، وأن الحسن والحسين سيِّدا شباب أهل الجنة».
“এ হচ্ছে ফিরিশতা, এ রাতের পূর্বে তিনি কখনো অবতীর্ণ হন নি, তিনি তার রব থেকে অনুমতি নিয়ে এসেছেন আমাকে সালাম ও সুসংবাদ দেওয়ার জন্য যে, ফাতেমা জান্নাতের নারীদের সরদার, আর হাসান ও হুসাইন জান্নাতের যুবকদের সরদার”।[134] অপর শব্দে এরূপ এসেছে: “আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট আগমন করে তার সাথে মাগরিব সালাত আদায় করি, তিনি এশা পর্যন্ত সালাত আদায় করলেন”।[135]
নবম: নফল সালাত বসে আদায় করা বৈধ।
দাঁড়ানোর শক্তি থাকা সত্ত্বেও নফল সালাত বসে আদায় করা বৈধ। ইমাম নববী রহ. বলেছেন: “এ ব্যাপারে আলেমদের ইজমা রয়েছে”।[136] অনুরূপ দরুস্ত আছে সালাতের কিছু অংশ দাঁড়িয়ে পড়া ও কিছু অংশ বসে পড়া।[137] হ্যাঁ ফরয সালাতের কিয়াম রোকন, সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও যে তা ত্যাগ করল, তার সালাত বাতিল।[138]
এ সম্পর্কে অনেক হাদীস রয়েছে। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রাতের সালাত সম্পর্কে বলেন,
«… كان يصلي من الليل تسع ركعات، فيهن الوتر، وكان يصلي ليلاً طويلاً قائماً، وليلاً طويلاً قاعداً، وكان إذا قرأ وهو قائم ركع وسجد وهو قائم، وإذا قرأ قاعداً ركع وسجد وهو قاعد …».
“… তিনি রাতে নয় রাকাত সালাত আদায় করতেন, তাতে বিতরও রয়েছে। তিনি দীর্ঘ রাত দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করতেন, আবার দীর্ঘ রাত বসে আদায় করতেন। তিনি যখন দাঁড়িয়ে পড়তেন, তখন রুকু-সেজদা দাঁড়িয়ে করতেন। আর যখন বসে পড়তেন, তখন রুকু-সেজদা বসে আদায় করতেন…”।[139] তার থেকে আরো বর্ণিত, তিনি বলেছেন:
«ما رأيت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقرأ في شيء من صلاة الليل جالساً حتى إذا كَبِر قرأ جالساً حتى إذا بقي عليه من السورة ثلاثون أو أربعون آية قام فقرأهن ثم ركع».
“আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে কখনো রাতের সালাতে বসে কুরআন পড়তে দেখিনি, যখন তিনি বার্ধক্যে উপনীত হয়েছেন বসে তিলাওয়াত করেছেন, যখন সূরার ত্রিশ অথবা চল্লিশ আয়াত অবশিষ্ট থাকত, তিনি দাঁড়াতেন অতঃপর তা তিলাওয়াত করতেন, অতঃপর রুকু করতেন”।[140] হাফসা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন: “আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নফল সালাত বসে পড়তে দেখি নি, মারা যাওয়ার এক বছর আগে শেষ বয়সে দেখেছি তিনি নফল সালাত বসে আদায় করতেন, তিনি সূরাগুলো তারতীলসহ পাঠ করতেন, ফলে দীর্ঘ সূরা আরো দীর্ঘ হয়ে যেত”।[141] সামর্থ্য থাকলে মুসলিমের দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করা উত্তম। আব্দুল্লাহ ইবন আমর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে ‘মারফূ’ সনদে বর্ণিত: “ব্যক্তির বসে সালাত অর্ধেক সালাত”।[142] ইমরান ইবন হাসিন রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ব্যক্তির বসাবস্থার সালাত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছি, তিনি বললেন:
«إن صلَّى قائماً فهو أفضل، ومن صلى قاعداً فله نصف أجر القائم…».
“যদি সে দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করে, তাহলে সেটাই উত্তম। আর যে বসে সালাত আদায় করল, তার জন্য দাঁড়ানো ব্যক্তির অর্ধেক সাওয়াব…”।[143]
বসে সালাত আদায়কারী ব্যক্তির জন্য মুস্তাহাব হচ্ছে এক পায়ের উপর আরেক পা আড়াআড়িভাবে রেখে বসা অর্থাৎ আসন করে বসা। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«رأيت النبي صلى الله عليه وسلم يصلي متربِّعاً».
“আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আসন করে বসে সালাত আদায় করতে দেখেছি”। ইমাম ইবনুল কাইয়্যেম রহ. বলেছেন: “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রাতের সালাত তিন প্রকার ছিল:
এক. দাঁড়িয়ে, এভাবেই তিনি অধিক সালাত আদায় করতেন।
দুই. বসা অবস্থায় সালাত আদায় ও রুকু করতেন।
তিন. তিনি বসা অবস্থায় তিলাওয়াত করতেন, যখন কিরাতের সামান্য বাকি থাকত দাঁড়িয়ে রুকু করতেন। এ তিন পদ্ধতি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বিশুদ্ধ সনদে বর্ণিত”।[144]
আমি শাইখ আব্দুল আযীয ইবন বায রহ.-কে বলতে শুনেছি: “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রাতের সালাত চার প্রকার ছিল, যেমন আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহার বর্ণনা সমষ্টি থেকে জানা যায়:
১. তিনি দাঁড়ানো অবস্থায় সালাত আদায় ও রুকু করতেন।
২. তিনি বসা অবস্থায় সালাত আদায় করতেন, অতঃপর যখন ত্রিশ অথবা চল্লিশ আয়াত পরিমাণ বাকি থাকত, তিনি দাঁড়াতেন ও তিলাওয়াত শেষ করে অতঃপর রুকু করতেন।
৩. তিনি বসা অবস্থায় সালাত আদায় করতেন, অতঃপর কিরাত শেষ করে দাঁড়িয়ে রুকু করতেন।
৪. তিনি বসা অবস্থায় সালাত ও রুকু উভয় সম্পন্ন করতেন”।[145]
দ্বিতীয় অধ্যায়: তারাবীর সালাত
১. তারাবীর অর্থ: তারাবীকে তারাবী বলার কারণ, তারা সালাতে তারাবীর প্রত্যেক চার রাকাত পর আরাম করত।[146] তারাবীর আভিধানিত অর্থ বিশ্রাম নেয়া ও আরাম করা।
তারাবি: অর্থাৎ রমযান মাসে প্রথম রাতে কিয়াম করা।[147] প্রবাদে বলা হয়আয়াত: الترويحة في شهر رمضان ‘রমযান মাসের বিশ্রাম’। কারণ, তারা প্রত্যেক দুই সালামের পর বিশ্রাম নিত। এর প্রমাণ আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহার হাদীস, তাকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল: রমযানে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সালাত কিরূপ ছিল? তিনি বললেন: রমযান ও রমযান ভিন্ন অন্য মাসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এগারো রাকাতের অধিক পড়তেন না: তিনি চার রাকাত সালাত আদায় করতেন, তার সৌন্দর্য ও দীর্ঘ সম্পর্কে কি বলব! অতঃপর তিনি চার রাকাত পড়তেন, তার সৌন্দর্য ও দীর্ঘ সম্পর্কে কি বলব! অতঃপর তিনি তিন রাকাত পড়তেন…”।[148] এখানে “তিনি চার রাকাত পড়তেন… অতঃপর চার রাকাত পড়তেন…”। তার কথা প্রমাণ করে: প্রথম চার রাকাত ও দ্বিতীয় চার রাকাত এবং শেষের তিন রাকাতের মধ্যবর্তী বিরতি ছিল। চার রাকাত সালাতে প্রত্যেক দু’রাকাত পর সালাম ফিরাতেন।[149] কারণ, আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকেই বর্ণিত, তিনি বলেছেন: “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতে এগারো রাকাত সালাত আদায় করতেন, এক রাকাত দ্বারা তিনি বিতর আদায় করতেন”। মুসলিমের বর্ণিত শব্দ হচ্ছে: “প্রত্যেক দু’রাকাত পর সালাম ফিরাতেন ও এক রাকাত দ্বারা বিতর আদায় করতেন” [150] এ হাদীস পূর্বের হাদীসের ব্যাখ্যা প্রদান করে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রত্যেক দু’রাকাত পর সালাম ফিরাতেন। অধিকন্তু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«صلاة الليل مثنى مثنى».
“রাতের সালাত দু’রাকাত দু’রাকাত”।[151]
২. সালাতে তারাবী সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের বাণী ও কর্ম দ্বারা এর অনুমোদন দিয়েছেন। আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রমযানে কিয়ামের জন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে উৎসাহ প্রদান করতেন, তাদের ওপর অবশ্য জরুরি করতেন না। তিনি বলতেন:
«من قام رمضان إيماناً واحتساباً غُفِر له ما تقدَّم من ذنبه»
“ইমান ও সাওয়াবের নিয়তে যে রমযানে কিয়াম করল, তার পূর্বের গুনা মাপ করে দেওয়া হবে”।[152] ইমাম নববী রহ. বলেছেন: “রমযানের কিয়াম মুস্তাহাব, এ ব্যাপারে সকল আলেম একমত”।[153] অতএব, তারাবীর সালাত সুন্নতে মুয়াক্কাদা এতে কারো দ্বিমত নেই। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কথা ও কাজের দ্বারা এর সূচনা করেছেন।[154]
৩. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী দ্বারা তারাবীর ফযীলত প্রমাণিত হয় আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«من قام رمضان إيماناً واحتساباً غُفر له ما تقدم من ذنبه».
“ইমান ও সাওয়াবের নিয়তে যে কিয়াম করল, তার পূর্বের পাপ ক্ষমা করে দেওয়া হবে”।[155] মুসলিম যদি এ বিশ্বাস নিয়ে তারাবীর সালাত আদায় করে যে, এটা আল্লাহর শরী‘আত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আনিত দ্বীন, যা তিনি বাণী ও আমলের দ্বারা বাস্তবায়ন করেছেন এবং তার উদ্দেশ্য হয় আল্লাহকে পাওয়া, তার সাওয়াব, মাগফেরাত ও সন্তুষ্টি অর্জন করা, তাহলে সে এ মর্যাদা লাভ করবে।[156]
৪. সালাতে তারাবী জামা‘আতের সাথে আদায় করা, রমযানে কিয়াম করা ও চলে যাওয়ার আগ পর্যন্ত ইমামের সাথে থাকার ফযীলত: আবু যর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে আমরা রমযানে সিয়াম পালন করেছি, তিনি আমাদের সাথে কিয়াম করেননি, যখন রমযানের মাত্র সাত দিন বাকি, তিনি আমাদের সাথে দীর্ঘ কিয়াম করলেন যে, রাতের এক তৃতীয়াংশ চলে গেল। ষষ্ঠ রাতে তিনি আমাদের সাথে কিয়াম করলেন না, পঞ্চম রাতে তিনি আমাদের সাথে এত দীর্ঘ কিয়াম করলেন যে, রাতের অর্ধেক চলে গেল, আমরা বললাম: হে আল্লাহর রাসূল, যদি এ রাতের বাকি অংশও আমাদের নিয়ে নফল আদায় করতেন? অতঃপর তিনি বললেন:
«إنه من قام مع الإمام حتى ينصرف، كتب الله له قيام ليلة»
“যে ইমামের সাথে কিয়াম করবে, তার চলে যাওয়ার আগ পর্যন্ত, আল্লাহ তার জন্য পুরো রাতের কিয়াম লিখবেন”। অপর শব্দে এসেছে: “তার জন্য পুরো রাতের কিয়াম লেখা হয়”। যখন চতুর্থ রাত অবশিষ্ট রইল তিনি আমাদের সাথে কিয়াম করলেন না, যখন তৃতীয় রাত উপস্থিত হল, তিনি তার পরিবার, নারী ও লোকদের জমা করলেন, অতঃপর তিনি আমাদের সাথে এত দীর্ঘ কিয়াম করলেন যে, আমরা আশঙ্কা করছিলাম আমাদের থেকে ফালাহ ছুটে যাবে। তিনি বলেন, আমি জিজ্ঞাসা করলাম: ফালাহ কী? তিনি বললেন: সাহরী অতঃপর মাসের অবশিষ্ট রাতগুলোতে আমাদের নিয়ে কিয়াম করেন নি”।[157]
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোনো এক রাতের মধ্যভাগে বের হন, অতঃপর মসজিদে সালাত আদায় করেন কতক লোক তার সাথে সালাত আদায় করল। মানুষেরা এ ঘটনা বলাবলি করতে লাগল, ফলে তার চেয়ে অধিক লোক জমা হল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দ্বিতীয় রাতে তাদের নিকট গেলেন, তারা তার সাথে সালাত আদায় করল। মানুষেরা এ ঘটনা বলাবলি করতে লাগল তৃতীয় রাতে আরো অধিক লোক মসজিদে জড়ো হল। তিনি তাদের নিকট বের হলেন, তারা তার সাথে সালাত আদায় করল। যখন চতুর্থ রাত হল, লোকের সমাগমে মসজিদ সংকীর্ণ হয়ে গেল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের নিকট বের হলেন না। উপস্থিত কেউ কেউ বলতে ছিল: আস-সালাত, রাসূলুল্লাহ তাদের নিকট বের হলেন না, একেবারে ফজর সালাতের জন্য বের হলেন। যখন ফজর শেষ করলেন মানুষের দিকে মুখ করলেন, অতঃপর খুৎবা পড়ে বললেন:
«أما بعد، فإنه لم يخف عليَّ شأنكم، ولكني خشيت أن تُفرض عليكم صلاة الليل فتعجزوا عنها»
“অতঃপর, তোমাদের অবস্থা আমার নিকট গোপন ছিল না, কিন্তু আমি আশঙ্কা করেছি তোমাদের ওপর রাতের সালাত ফরয করে দেওয়া হবে, তখন তোমরা তা আদায় করতে সক্ষম হবে না”। এটা ছিল রমযানের ঘটনা”।[158]
আব্দুর রহমান ইবন আউফ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন: আমি কোনো এক রাতে উমার ইবন খাত্তাবের সাথে মসজিদের উদ্দেশ্যে বের হই, তখন লোকেরা বিক্ষিপ্তভাবে নিজ নিজ সালাত আদায় করছিল। আবার কারো সাথে জমাতবদ্ধ কিছু লোক সালাত আদায় করছিল। উমার বললেন: “আমি ভাবছি, যদি তাদের সবাইকে এক তিলাওয়াতকারীর সাথে জমা করে দেই তাহলে খুব ভালো হবে”। অতঃপর তিনি সিদ্ধান্ত নিয়ে উবাই ইবন কা‘ব-এর পিছনে সবাইকে জমা করে দেন। অতঃপর তিনি তার সাথে অপর রাতে বের হন, তখন লোকেরা তাদের ইমামের সাথে সালাত আদায় করছিল। উমার বললেন: এটা কত সুন্দর বিদআত, যারা এর থেকে ঘুমাচ্ছে তারা দণ্ডায়মানদের থেকে উত্তম, (তার উদ্দেশ্য শেষ রাত) তখন লোকেরা প্রথম রাতে সালাত আদায় করল”।[159]
এসব হাদীস থেকে প্রমাণিত হয় মসজিদে জমাতের সাথে সালাতে তারাবী ও রমযানের কিয়াম বৈধ আর যে ইমামের সাথে থাকবে, যতক্ষণ না সে প্রস্থান করে, তার জন্য পূর্ণ রাতের কিয়াম লিখা হয়
উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুর বাণী: “এটা খুব সুন্দর বিদআত”, এখানে উদ্দেশ্য আভিধানিক অর্থ, অর্থাৎ এ কাজটি এর পূর্বে এভাবে ছিল না, তবে তার ভিত্তি বিদ্যমান ছিল, যা এ কাজের দলীল। যেমন,
ক. নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমযানে কিয়ামের জন্য উদ্বুদ্ধ করতেন, তাতে উৎসাহ প্রদান করতেন এবং তিনি একাধিক রাত তার সাথীদের নিয়ে সালাত আদায় করেছেন, অতঃপর তার থেকে বিরত থাকেন এ আশঙ্কায় যে, তাদের ওপর তা ফরয করে দেওয়া হতে পারে, আর তখন তারা আদায় করতে সক্ষম হবে না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মৃত্যুর পর সে আশঙ্কা নেই।
খ. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খোলাফায়ে রাশেদিনের আনুগত্য করার নির্দেশ দিয়েছেন, তারাবী খোলাফায়ে রাশেদিনের সুন্নাত।[160]
আমি শাইখ আব্দুল আযীয ইবন বায রহ.-কে উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুর বাণী “এটা খুব সুন্দর বিদআত” সম্পর্কে বলতে শুনেছি: বিদআত এখানে আভিধানিক অর্থে, অর্থাৎ ইতিপূর্বে পুরো রমযান এভাবে সালাত আদায়ের রেওয়াজ ছিল না, এটা তিনি আবিষ্কার করেছেন। এ হচ্ছে তার কথার কারণ, অন্যথায় এটা সুন্নাত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একাধিক রাত তা আদায় করেছেন”।[161]
৫. রমযান মাসের শেষ দশকে কিয়ামের প্রতি গুরুত্বারোপ করা। আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«من صام رمضان إيماناً واحتساباً، غُفِر له ما تقدم من ذنبه، ومن قام ليلة القدر إيماناً واحتساباً غُفرَ له ما تقدم من ذنبه».
“যে ব্যক্তি ইমান ও সওয়াবের আশায় রমযানে সিয়াম পালন করল, তার পূর্বের গুনা মাফ করে দেওয়া হবে। আর যে লাইলাতুল কদরে ইমান ও সাওয়াবের আশায় কিয়াম করবে, তার পূর্বের সকল পাপ ক্ষমা করা হবে”।[162] আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«كان النبي صلى الله عليه وسلم إذا دخل العشر أحيى الليل، وأيقظ أهله، وجدَّ، وشدَّ المئزر ».
“রমযানের শেষ দশক পদার্পণ করলে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাত জাগরণ করতেন, তার পরিবারকে জাগিয়ে দিতেন, খুব পরিশ্রম করতেন ও কোমর বেধে নিতেন।[163],[164] তার থেকে আরো বর্ণিত, তিনি বলেছেন:
«كان رسول الله صلى الله عليه وسلم يجتهد في العشر الأواخر ما لا يجتهد في غيره».
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমযানের শেষ দশকে খুব পরিশ্রম করতেন, যেরূপ তিনি অন্য সময় করতেন না”।[165]
নুমান ইবন বাশির রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«قمنا مع رسول الله صلى الله عليه وسلم ليلة ثلاث وعشرين إلى ثلث الليل الأول، ثم قمنا معه ليلة خمس وعشرين إلى نصف الليل، ثم قمنا معه ليلة سبع وعشرين حتى ظننا أن لا ندرك الفلاح. وكانوا يسمونه السحور».
“আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে তেইশ রমযানের রাতে প্রথম তৃতীয়াংশ কিয়াম করি। অতঃপর পঁচিশ রমযানে আমরা তার সাথে অর্ধেক রাত পর্যন্ত কিয়াম করি। অতঃপর সাতাইশ রমযানে আমরা তার সাথে এত দীর্ঘ কিয়াম করি যে, আমাদের আশঙ্কা হয়েছিল আমরা ফালাহ পাব না। তারা সাহরীকে ফালাহ বলত” [166] আবুযর থেকে বর্ণিত হাদীসে এসেছে: “যখন সাতাইশ তারিখের রাত হল, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার পরিবার, নারী ও লোকদের জমা করে তাদের সাথে কিয়াম করেন” [167]
৬. এশার সালাত ও তার সুন্নাত আদায়ের পর থেকে তারাবীর সময় আরম্ভ হয়। অতএব সে সময় থেকে তারাবী পড়।[168]
৭. সালাতে তারাবীর রাকাত সংখ্যা। তারাবীর এমন কোনো নির্দিষ্ট সংখ্যা নেই, যার বিপরীত করা যাবে না। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«صلاة الليل مثنى مثنى، فإذا خَشي أحدكم الصبح صلى ركعة واحدة تُوتِرُ له ما قد صلّى».
“রাতের সালাত দু’রাকাত, দু’রাকাত, যখন তোমাদের কেউ ভোর হওয়ার আশঙ্কা করে, সে যেন এক রাকাত পড়ে নেয়, যা তার পূর্বের সকল সালাত বেজোড় করে দিবে”।[169] যদি কেউ বিশ রাকাত তারাবী আদায় করে তিন রাকাত দ্বারা বিতর পড়ে অথবা ছত্রিশ রাকাত তারাবী আদায় করে তিন রাকাত দ্বারা বিতর পড়ে অথবা এক চল্লিশ রাকাত তারাবী আদায় করে, তাতে কোনো সমস্যা নেই”।[170] হ্যাঁ উত্তম হচ্ছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেরূপ পড়েছেন সেরূপ পড়া, অর্থাৎ তেরো রাকাত অথবা এগারো রাকাত পড়া। ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«كان رسول الله صلى الله عليه وسلم يصلي من الليل ثلاث عشرة ركعة»
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতে তেরো রাকাত সালাত আদায় করতেন”।[171]
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«ما كان رسول الله صلى الله عليه وسلم يزيد في رمضان ولا في غيره على إحدى عشرة ركعة»
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমযান ও গায়রে রমযানে এগারো রাকাতের চেয়ে বেশি পড়তেন না”।[172] এটাই উত্তম এবং এতে পরিপূর্ণ সাওয়াব রয়েছে।[173] যদি কেউ এর চেয়ে অধিক পড়ে কোনো সমস্যা নেই, কারণ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«صلاة الليل مثنى مثنى، فإذا خَشي أحدكم الصبح صلى ركعة واحدة تُوتِرُ له ما قد صلّى».
“রাতের সালাত দু’রাকাত দু’রাকাত, যখন তোমাদের কেউ ভোর হওয়ার আশঙ্কা করবে, এক রাকাত পড়ে নিবে, যা তার পূর্বের সকল সালাত বেজোড় করে দিবে”।[174] তারাবীর ব্যাপারে স্বাধীনতা রয়েছে, তবে উত্তম হচ্ছে এগারো রাকাত পড়া। আল্লাহ তাওফীক দাতা।[175]
তৃতীয় অধ্যায়: বিতর সালাত
১- বিতর সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ। আবু আইয়ূব আনসারী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«الوتر حقٌ على كل مسلم، فمن أحب أن يوتر بثلاث فليفعل، ومن أحب أن يوتر بواحدة فليفعل»
“বেতের প্রত্যেক মুসলিমের ওপর একটি হক, যে তিন রাকাত দ্বারা বিতর পড়তে পছন্দ করে, সে যেন তাই করে, আর যে এক রাকাত দ্বারা বিতর পড়তে পছন্দ করে, সে যেন তাই করে”।[176]
আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন:
«الوتر ليس بحَتْم كصلاتكم المكتوبة، ولكن سنةٌ سنها رسول الله صلى الله عليه وسلم».
“বেতের তোমাদের ফরয সালাতের ন্যায় জরুরি নয়, কিন্তু সুন্নাত যা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চালু করেছেন”।[177]
আরো কিছু দলীল, যার দ্বারা প্রমাণিত হয় যে বিতর ওয়াজিব নয়, বরং সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ। যেমন, তালহা ইবন উবাইদুল্লাহর হাদীস, তিনি বলেন, নজদ থেকে এক ব্যক্তি বিক্ষিপ্ত কেশে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দরবারে উপস্থিত হল, আমরা তার আওয়াজের গুঞ্জন শুনতে ছিলাম, কিন্তু সে কি বলছে বুঝতে ছিলাম না, অবশেষে নিকটে এসে ইসলাম সম্পর্কে প্রশ্ন করে, বলে: হে আল্লাহর রাসূল, আমাকে বলুন আল্লাহ আমার ওপর কোনো কোনো সালাত ফরয করেছেন? তিনি বললেন: “পাঁচ ওয়াক্ত সালাত, তবে তুমি যদি নফল পড়তে চাও”। সে বলল: আমাকে বলুন আমার ওপর আল্লাহ কোনো কোনো সিয়াম ফরয করেছেন? তিনি বললেন: রমযান মাসের সিয়াম, তবে তুমি যদি নফল পড়তে চাও”। সে বলল: আমাকে বলুন আমার ওপর আল্লাহ কি পরিমাণ যাকাত ফরয করেছেন? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে যাকাতের কথা বললেন। সে বলল: এ ছাড়া আর কিছু আছে? তিনি বললেন: না, তবে তুমি যদি নফল আদায় করতে চাও। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে শরীয়তের নিদর্শন ও মৌলিক বিধানগুলো বললেন। তালহা বলেন, লোকটি চলে গেল, যাওয়ার সময় বলতে ছিল: “তার কসম, যে আপনাকে সম্মানিত করেছে, আমি কোনো নফল আদায় করব না, আল্লাহ আমার ওপর যা ফরয করেছেন তার থেকে কমও করব না” রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: “লোকটি সফল হল, যদি সত্য বলে থাকে, অথবা জান্নাতে প্রবেশ করল, যদি সত্য বলে থাকে”।[178] ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুয়ায ইবন জাবাল রাদিয়াল্লাহু আনহুকে ইয়ামানে প্রেরণ করেন, তাকে উপদেশ দিয়ে তিনি বলেন, “… তুমি তাদের জানাবে যে, আল্লাহ তাদের ওপর দিন-রাতে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ফরয করেছেন…”।[179]
এ দু’টি হাদীস থেকে প্রমাণিত হয় বিতর ওয়াজিব নয়। এটা জমহুর আলেমদের মাযহাব।[180] বরং বিতর সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ। এ জন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুকিম ও মুসাফির কোনো অবস্থায় ফজরের সুন্নাত ও বিতর ত্যাগ করেন নি।[181]
২. বিতর সালাতের ফযীলত: খারেজা ইবন হুযাফাতুল আদাভি থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের নিকট উপস্থিত হয়ে বললেন:
«إن الله تعالى قد أمدكم بصلاة وهي خير لكم من حُمرِ النَّعم، وهي الوِتر، وجعلها لكم فيما بين العشاء إلى طلوع الفجر».
“নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা তোমাদেরকে একটি সালাত দ্বারা সাহায্য করেছেন, যা তোমাদের জন্য লাল উটের চেয়েও উত্তম, আর তা হচ্ছে বিতর, তিনি তা নির্ধারণ করেছেন এশা থেকে ফজর উদিত হওয়া পর্যন্ত”।[182]
বেতের সালাতের ফযীলত ও সুন্নতে মুয়াক্কাদা হওয়ার আরো দলীল: আলি ইবন আবু তালেব রাদিয়াল্লাহু আনহুর হাদীস, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিতর পড়েছেন, অতঃপর বলেছেন:
«يا أهل القرآن أوتروا فإن الله تعالى وتر يحب الوتر».
“হে আহলে কুরআন তোমরা বিতর পড়। কারণ, আল্লাহ বিতর (বেজোড়), তিনি বিতর পছন্দ করেন”।[183]
আমি শাইখ আব্দুল আযীয ইবন বায রহ.-কে এ হাদীসের ব্যাখ্যায় বলতে শুনেছি: “এ থেকে প্রমাণিত হয় যে, আলেমগণ অন্যদের তুলনায় বিতর সালাতের প্রতি অধিক গুরুত্ব প্রদান করবেন, যদিও বিতর সবার জন্য সুন্নাত, যেন তাদের অনুসারীরা তাদের অনুসরণ করে, যারা তাদের আমল ও অবস্থার খবর রাখে। বিতর এশা ও ফজরের মধ্যবর্তী সময়ে সর্বনিম্ন এক রাকাত আল্লাহ বিতর (বেজোড়), তিনি বিতর পছন্দ করেন। তার সিফাতের সাথে সামঞ্জস্য তিনি পছন্দ করেন , তাই ধৈর্যধারণকারীদের পছন্দ করেন, তবে ইজ্জত ও বড়ত্বের ক্ষেত্রে নয়। বান্দাগণ আল্লাহর সেসব সিফাত গ্রহণ করবে, যা তাদের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ যেমন ইহসান, অনুগ্রহ ও দয়া ইত্যাদি” [184]
৩. বিতর সালাতের সময়: এশার সালাতের পর থেকে পুরো রাত বিতর সালাতের সময়। যেমন,
ক. ব্যাপক ওয়াক্ত: এশার সালাতের পর থেকে দ্বিতীয় ফজর উদিত হওয়ার আগ পর্যন্ত। আব্দুল্লাহ ইবন আমর ইবন আস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি আবু বসরাহ গিফারি রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«إن الله تعالى زادكم صلاة وهي الوتر، فصلُّوها فيما بين صلاة العشاء إلى صلاة الفجر».
“নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদেরকে একটি সালাত বাড়িয়ে দিয়েছেন, আর তা হচ্ছে বিতর তোমরা তা এশার সালাতের পর থেকে ফজর সালাতের আগ পর্যন্ত পড়”।[185] এ হাদীস থেকে প্রমাণ করে যে, বিতর এর ওয়াক্ত এশা ও ফজরের মধ্যবর্তী সময়। এশা নির্দিষ্ট সময়ে আদায় করুক বা মাগরিবের সাথে একত্র আদায় করুক, এশা আদায়ের পর থেকে বিতর আরম্ভ হয়।[186]
বিশুদ্ধ সনদে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কথা ও কাজ বিতর প্রমাণ করে আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন: “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এশা থেকে ফারেগ হয়ে ফজর পর্যন্ত এগারো রাকাত পড়তেন। প্রত্যেক দু’রাকাত শেষে সালাম ফিরাতেন। এক রাকাত দ্বারা বিতর পড়তেন। যখন মুয়াজ্জিন ফজরের সালাত (তাহাজ্জুদ) থেকে ফারেগ হত এবং তার নিকট ফজর স্পষ্ট হত ও মুয়াজ্জিন আসত, তিনি দাঁড়িয়ে হালকা দু’রাকাত সালাত আদায় করতেন। অতঃপর ডান পাশে কাত হয়ে শুতেন যতক্ষণ না মুয়াজ্জিন ইকামতের জন্য আসত [187]
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিতর সালাতের সর্বশেষ সময় নির্ধারণ করে দিয়েছেন। আবু সাইদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«أوتروا قبل أن تُصبحوا». وفي رواية: «أوتروا قبل الصبح».
“তোমরা ভোর করার আগে বিতর পড়”। অপর বর্ণনায় রয়েছে: “সকালের পূর্বে তোমরা বিতর পড়”।[188] আব্দুল্লাহ ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “তোমরা বিতর নিয়ে সকালের সাথে প্রতিযোগিতা কর”।[189] এখানে বিতর নিয়ে ফজর উদিত হওয়ার সাথে প্রতিযোগিতা প্রমাণ করে, ফজরের আগে বিতর আদায় করা জরুরি ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুর হাদীস থেকে প্রমাণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«صلاة الليل مثنى مثنى فإذا خشي أحدكم الصبح صلى ركعة واحدة توتر له ما قد صلَّى».
“রাতের সালাত দু’রাকাত দু’রাকাত, যখন তোমাদের কেউ ভোর হওয়ার আশঙ্কা করে সে যেন এক রাকাত পড়ে নেয়, যা তার পঠিত সকল সালাত বিতর (বেজোড়) করে দিবে”।[190] আবু সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«من أدرك الصبح فلم يوتر فلا وتر له».
“যে সকাল পেল কিন্তু বিতর পড়ল না, তার বিতর নেই”।[191] এটা আরো প্রমাণ করে ইবন উমার রাদিয়াল্লোহু আনহুর হাদীস, যেখানে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«إذا طلع الفجر فقد ذهب كلُّ صلاة الليل والوتر، فأوتروا قبل طلوع الفجر».
“যখন ফজর উদিত হয়, তখন রাতের সকল সালাত ও বিতর সালাতের সময় শেষ হয়ে যায়। অতএব, তোমরা ফজর উদিত হওয়ার আগে বিতর পড়”।[192] ইমাম নববী রহ. বলেছেন: “এটাই একাধিক আলেমের অভিমত, ইমাম শাফি, আহমদ, ইসহাক প্রমুখগণ ফজর উদিত হওয়ার পর বিতর বৈধ মনে করতেন না”।[193] এ অভিমত আরো স্পষ্ট করে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আমল। কারণ, তার বিতর সালাতের শেষ সময় ছিল সাহরী। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন: “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতের সব অংশে বিতর আদায় করেছেন, প্রথম রাতে, মধ্য রাতে ও শেষ রাতে, সাহরী পর্যন্ত তার বিতর সালাতের সময় ছিল”।[194]
এসব হাদীস থেকে প্রমাণ হল যে, বিতর এশার পর থেকে আরম্ভ হয়, এবং দ্বিতীয় ফজর উদিত হওয়ার দ্বারা শেষ হয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাদীসের পর কারো কথা শ্রবণ যোগ্য নয়।[195]
খ. যার আশঙ্কা হয় শেষ রাতে উঠতে পারবে না, তার পক্ষে প্রথম রাতে বিতর পড়া মুস্তাহাব আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন: “আমার একান্ত বন্ধু আমাকে তিনটি বিষয়ে ওসিয়ত করেছেন, (আমি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তা কখনো ত্যাগ করব না), প্রত্যেক মাসে তিন দিন সিয়াম, চাশতের দু’রাকাত এবং ঘুমের আগে বিতর আদায় করা”।[196] আবু দারদা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন: “আমার বন্ধু আমাকে তিনটি বিষয়ে ওসিয়ত করেছেন, আমি যত দিন বেঁচে থাকব তা কখনো ত্যাগ করব না, প্রত্যেক মাসে তিন দিন সিয়াম পালন করা, চাশতের দু’রাকাত সালাত আদায় করা ও আমি যেন বিতর পড়া ব্যতীত না ঘুমাই”।[197] হাফেয ইবন হাজার রহ. বলেছেন: “এ থেকে প্রমাণ হয় ঘুমের আগে বিতর পড়া মুস্তাহাব এটা তার জন্য যে জাগ্রত হওয়ার ব্যাপারে নিশ্চিত নয়, আর যে ব্যক্তি দু‘ঘুমের মধ্যে সালাত আদায় করে, তাকেও এ হুকুম অন্তর্ভুক্ত করবে” [198]
মূলতঃ বিতর সালাতের ওয়াক্ত মানুষের অবস্থা ও তাদের সামর্থ্যের ওপর নির্ভরশীল। জাবের ইবন আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবু বকরকে বলেছেন: “কখন তুমি বিতর পড়?” তিনি বললেন: প্রথম রাতে এশার পর। তিনি বললেন: “হে উমার তুমি কখন পড়?” তিনি বললেন: শেষ রাতে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: “হে আবু বকর তুমি অধিক সতর্কতা গ্রহণ করেছ। আর হে উমার তুমি শক্তিশালী পন্থা অবলম্বন করেছ”।[199] আবু কাতাদা রহ. থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবু বকরকে বলেছেন: “তুমি কখন বিতর পড়?” তিনি বললেন: প্রথম রাতে। উমারকে বললেন: “তুমি কখন বিতর পড়?” তিনি বললেন: শেষ রাতে অতঃপর তিনি আবু বকরকে বলেন, “সে নিরাপত্তার পথ বেছে নিয়েছে” আর উমারকে বললেন: “সে শক্তিশালী পন্থা অবলম্বন করেছে”।[200]
গ. যে জাগ্রত হওয়ার ব্যাপারে নিশ্চিত তার জন্য শেষ রাতে বিতর পড়া উত্তম জাবের ইবন আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«من خاف أن لا يقوم من آخر الليل فليوتر أوله، ومن طمع أن يقوم آخره فليوتر آخر الليل؛ فإن صلاة آخر الليل مشهودة، وذلك أفضل».
“যে আশঙ্কা করে শেষ রাতে উঠতে পারবে না, সে যেন শুরুতে বিতর পড়ে নেয়। যে শেষ রাতে উঠার ব্যাপারে আশাবাদী, তার উচিৎ শেষ রাতে বিতর পড়া। কারণ, শেষ রাতের সালাত উপস্থিতির সালাত[201], আর তাই উত্তম”। অপর বর্ণনায় আছে:
«… ومن وثق بقيام من الليل فليوتر من آخره؛ فإن قراءة آخر الليل محضورة، وذلك أفضل».
“… যে কিয়ামুল লাইলের ব্যাপারে নিশ্চিত, সে যেন শেষ রাতে বিতর পড়ে। কারণ, শেষ রাতের কিরাত উপস্থিতির কিরাত, আর তাই উত্তম” [202] ইমাম নববী রহ. বলেছেন: “এ থেকে স্পষ্ট যে শেষ রাত পর্যন্ত বিতর বিলম্ব করা উত্তম, যে শেষ রাতে জাগ্রত হওয়ার ব্যাপারে নিশ্চিত তার জন্য। আর যে শেষ রাতে উঠার ব্যাপারে নিশ্চিত নয়, তার জন্য শুরুতে বিতর পড়া উত্তম এ হচ্ছে হাদীসের সঠিক অর্থ। অন্যান্য সাধারণ হাদীসকে এ ব্যাখ্যা মোতাবেক বুঝতে হবে। যেমন, হাদীসে এসেছে: “আমার বন্ধু আমাকে ওসিয়ত করেছেন, যেন আমি বিতর পড়া ব্যতীত না ঘুমাই”। এটা তার জন্য যে শেষ রাতে উঠার ব্যাপারে নিশ্চিত নয়”।[203]
আরো যেসব হাদীস প্রমাণ করে শেষ রাতে বিতর পড়া মুস্তাহাব, তন্মধ্যে যেমন, আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«ينزل ربنا تبارك وتعالى كلَّ ليلة إلى السماء الدنيا حين يبقى ثلث الليل الآخر فيقول: من يدعوني فأستجيب له؟ من يسألني فأُعطيَهُ؟ من يستغفرني فأغفرَ له؟».
“আমাদের রব প্রতি রাতে দুনিয়ার আসমানে অবতরণ করেন, যখন রাতের এক তৃতীয়াংশ বাকি থাকে। অতঃপর তিনি বলেন, কে আমাকে আহ্বান করবে, আমি তার ডাকে সাড়া দেব? কে আমার নিকট প্রার্থনা করবে, আমি প্রদান করব? কে আমার নিকট ক্ষমা চাইবে, আমি ক্ষমা করব?”[204] মুসলিমের এক বর্ণনায় আছে:
«فلا يزال كذلك حتى يضيء الفجر».
“তিনি এভাবেই অবস্থান করেন যতক্ষণ না ফজর স্পষ্ট হয়”।[205] মুসলিমের অপর বাক্য এরূপ এসেছে:
«…هل من سائلٍ يُعْطَى؟ هل من داعٍ يُستجابُ له؟ هل من مستغفرٍ يُغْفَرُ له؟ حتى ينفجرَ الفجر».
“…আছে কোনো প্রশ্নকারী যাকে দেওয়া হবে? আছে কোনো আহ্বানকারী যার ডাকে সাড়া দেওয়া হবে? আছে কেউ ক্ষমা প্রার্থনাকারী যাকে ক্ষমা করা হবে? যতক্ষণ না ফজর উদিত হয়”।[206]
৪. বিতর সালাতের বিভিন্ন পদ্ধতি ও তার রাকাত সংখ্যার বর্ণনা বিতর সালাত নিম্নের পদ্ধতি অনুসারে কয়েকভাবে আদায় করা যায়:
প্রথমত: এগারো রাকাত পড়া। প্রত্যেক দু’রাকাত পর সালাম ফিরানো ও এক রাকাত দ্বারা বিতর পড়া আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত:
«كان يصلي بالليل إحدى عشرة ركعة ويوتر منها بواحدة».
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতে এগারো রাকাত পড়তেন ও তন্মধ্যে এক রাকাত দ্বারা বিতর পড়তেন”। অপর বর্ণনায় আছে:
«كان رسول الله صلى الله عليه وسلم يصلي فيما بين أن يفرغ من صلاة العشاء- وهي التي تدعونها العتمة – إلى الفجر إحدى عشر ركعة يسلم بين كل ركعتين ويوتر بواحدة…».
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এশার সালাত থেকে ফারেগ হয়ে ফজর পর্যন্ত এগারো রাকাত সালাত আদায় করতেন, প্রত্যেক দু’রাকাত পর সালাম ফিরাতেন ও এক রাকাত দ্বারা বিতর পড়তেন…।”[207]
দুই. তিন রাকাত পড়া। দু’রাকাত পর সালাম ফিরানো ও এক রাকাত দ্বারা বিতর আদায় করা আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সালাতের পদ্ধতি বর্ণনা করেন:
«…فقمت إلى جنبه عن يساره فوضع يده اليمنى على رأسي وأخذ بأذني يفتلها، فحوَّلَني فجعلني عن يمينه ثم صلى ركعتين، ثم ركعتين، ثم ركعتين، ثم ركعتين، ثم ركعتين، ثم ركعتين، ثم أوتر، ثم اضطجع حتى جاءه المؤذن فقام فصلى ركعتين خفيفتين، ثم خرج فصلى الصبح».
“…আমি তার বাঁ পাশে দাঁড়িয়েছি, তিনি আমার মাথায় হাত রেখে আমার কান ধরে ঘুরিয়ে তার ডান পাশে নিয়ে আসলেন, অতঃপর দু’রাকাত সালাত আদায় করলেন। অতঃপর দু’রাকাত আদায় করলেন। অতঃপর দু’রাকাত আদায় করলেন অতঃপর দু’রাকাত আদায় করলেন। অতঃপর দু’রাকাত আদায় করলেন। অতঃপর দু’রাকাত আদায় করলেন। অতঃপর বিতর পড়লেন। অতঃপর তিনি শুইলেন, যখন মুয়াজ্জিন আসল তিনি দাঁড়িয়ে হালকা দু’রাকাত আদায় করলেন। অতঃপর বের হয়ে ফজরের সালাত আদায় করলেন”।[208] তার থেকে আরো বর্ণিত:
«كان رسول الله صلى الله عليه وسلم يصلي من الليل ثلاث عشرة ركعة».
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতে তেরো রাকাত সালাত আদায় করতেন”।[209]
যায়েদ ইবন খালেদ আল-জুহানি রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি একদা বলেছেন:
«لأرمقن صلاة رسول الله صلى الله عليه وسلم الليلة، فصلى ركعتين خفيفتين، ثم صلى ركعتين طويلتين، طويلتين، طويلتين، ثم صلى ركعتين، وهما دون اللتين قبلهما، ثم صلى ركعتين وهما دون اللتين قبلهما، ثم صلى ركعتين وهما دون اللتين قبلهما، ثم صلى ركعتين وهما دون اللتين قبلهما، ثم أوتر، فذلك ثلاث عشرة ركعة».
“আমি আজ অবশ্যই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সালাত দেখব তিনি হালকা দু’রাকাত আদায় করলেন। অতঃপর দীর্ঘ দীর্ঘ দীর্ঘ দু’রাকাত আদায় করলেন। অতঃপর দু’রাকাত আদায় করলেন, যা পূর্বের তুলনায় সংক্ষেপ ছিল। অতঃপর দু’রাকাত আদায় করলেন, যা তার পূর্বের দু’রাকাতের তুলনায় সংক্ষেপ ছিল। অতঃপর দু’রাকাত আদায় করলেন, যা তার পূর্বের দু’রাকাতের তুলনায় সংক্ষেপ ছিল। অতঃপর দু’রাকাত আদায় করলেন, যা তার পূর্বের দু’রাকাতের তুলনায় সংক্ষেপ ছিল। অতঃপর বিতর পড়লেন। এ হচ্ছে তেরো রাকাত সালাত”।[210]
তিন. তেরো রাকাত সালাত আদায় করা তন্মধ্যে মধ্যে এক বৈঠকে পাঁচ রাকাত আদায় করা। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«كان رسول الله صلى الله عليه وسلم يصلي من الليل ثلاث عشرة ركعة يوتر من ذلك بخمس لا يجلس في شيء إلا في آخرها».
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতে তেরো রাকাত সালাত আদায় করতেন, তার মধ্যে তিনি পাঁচ রাকাত দ্বারা বিতর পড়তেন, কোথাও তিনি বসতেন না শেষ রাকাত ব্যতীত”।[211]
চার. নয় রাকাত আদায় করতেন, আট নাম্বার রাকাত ব্যতীত কোথাও বসতেন না, অতঃপর নবম নাম্বার রাকাত পড়তেন। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তাতে রয়েছে:
«… كنا نُعدُّ له سواكه وطهوره فيبعثه الله ما شاء أن يبعثه من الليل فيتسوَّك ويتوضأ، ويصلي تسع ركعات لا يجلس فيها إلا في الثامنة، فيذكر الله ويحمده ويدعوه، ثم ينهض ولا يسلم، ثم يقوم فيصلي التاسعة، ثم يقعد فيذكر الله ويحمده ويدعوه، ثم يسلم تسليماً يسمعناه …».
“… আমরা তার জন্য মিসওয়াক ও পানি প্রস্তুত রাখতাম, আল্লাহ যখন তাকে উঠানোর ইচ্ছা করতেন, তাকে উঠাতেন অতঃপর তিনি মিসওয়াক করতেন ও অযু করতেন, অতঃপর নয় রাকাত সালাত আদায় করতেন আট নাম্বার রাকাত ব্যতীত কোথাও তিনি বসতেন না। অতঃপর তিনি আল্লাহর যিকির করতেন, হামদ্ ও সানা এবং দো‘আ করতেন, অতঃপর উঠতেন কিন্তু সালাম ফিরাতেন না, এবং নবম রাকাতের জন্য দণ্ডায়মান হতেন। অতঃপর বসে আল্লাহর যিকির করতেন, তার হামদ-সানা করতেন ও তার নিকট দো‘আ করতেন। অতঃপর তিনি আমাদের শুনিয়ে সালাম ফিরাতেন…”।[212]
পাঁচ. সাত রাকাত আদায় করা, শেষ রাকাত ব্যতীত কোথাও না বসা। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত হাদীসে রয়েছে:
«… فلما أسنَّ نبي الله صلى الله عليه وسلم وأخذه اللحم أوتر بسبع… ».
“… যখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বার্ধক্যে উপনীত হলেন ও মোটিয়ে গেলেন, তখন সাত রাকাত দ্বারা বিতর পড়েছেন…”।[213] অপর বর্ণনায় এসেছে:
«لا يقعد إلا في آخرهن».
“শেষ রাকাত ব্যতীত কোথাও বসতেন না”।[214]
ষষ্ঠ. সাত রাকাত পড়া, ষষ্ঠ রাকাত ব্যতীত কোথাও না বসা। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন: “আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মিসওয়াক ও পানি প্রস্তুত রাখতাম, আল্লাহ তাকে উঠিয়ে দিতেন, যখন তাকে উঠাতে চাইতেন, তিনি মিসওয়াক করতেন ও অযু করতেন অতঃপর সাত রাকাত আদায় করতেন, ষষ্ঠ রাকাত ব্যতীত কোথাও বসতেন না। অতঃপর বসে আল্লাহর যিকির ও দো‘আ করতেন”।[215]
সাত. পাঁচ রাকাত পড়া, শেষ রাকাত ব্যতীত কোথাও না বসা। আবু আইয়ূব আনসারি রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«الوتر حق على كل مسلم، فمن أحبَّ أن يُوترَ بخمسٍ فليفعلْ، ومن أحبَّ أن يوتر بثلاثٍ فليفعلْ، ومن أحبَّ أن يوتر بواحدةٍ فليفعلْ».
“বেতের প্রত্যেক মুসলিমের ওপর একটি হক, যে পাঁচ রাকাত দ্বারা বিতর আদায় করতে চায়, সে যেন তাই করে। যে তিন রাকাত দ্বারা বিতর আদায় করতে চায়, সে যেন তাই করে। আর যে এক রাকাত দ্বারা বিতর আদায় করতে চায়, সে যেন তাই করে”।[216] আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহার হাদীস থেকে প্রমাণিত নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ রাকাতগুলো বিনা বৈঠকে পড়তেন, পঞ্চম রাকাত ব্যতীত বসতেন না। তাতে আরো রয়েছে: “… পাঁচ রাকাত দ্বারা বিতর আদায় করতেন, শেষ রাকাত ব্যতীত কোথাও বসতেন না”।[217]
আট. তিন রাকাত পড়া, দু’রাকাত পর সালাত ফিরানো, অতঃপর এক রাকাত দ্বারা বিতর আদায় করা। আব্দুল্লাহ ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন: “নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের শুনিয়ে সালাম দ্বারা জোড় ও বেজোড় সালাতের মধ্যে বিচ্ছেদ সৃষ্টি করতেন”। [218] আব্দুল্লাহ ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে একটি ‘মওকুফ’ বর্ণনা রয়েছে, নাফে বলেছেন: “আব্দুল্লাহ ইবন উমার বিতর সালাতে এক রাকাত ও দু’রাকাতের মাঝে সালাম ফিরাতেন, কখনো কোনো প্রয়োজনের নির্দেশ করতেন”।[219] ‘মওকুফ’ দ্বারা ‘মরফূ’ হাদীস শক্তিশালী হয়। আমি শাইখ আব্দুল আযিয ইবন বায রহ.-কে বলতে শুনেছি, তিনি তিন রাকাত বিতর সম্পর্কে বলেছেন: “যে তিন রাকাত বিতর পড়তে চায় তার জন্য এটাই উত্তম। এটা পূর্ণতার নিকটবর্তী” [220]
নয়. এক সাথে তিন রাকাত পড়া, শেষ রাকাত ব্যতীত না বসা। আবু আইয়ূব রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হাদীসে রয়েছে:
«ومن أحبَّ أن يوتر بثلاثٍ فليفعلْ»
“যে তিন রাকাত দ্বারা বিতর পড়তে চায়, সে যেন তাই করে”।[221] উবাই ইবন কাব রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিতর সালাতে প্রথম রাকাতে সূরা আলা, দ্বিতীয় রাকাতে সূরা কাফিরূন ও তৃতীয় রাকাতে সূরা ইখলাস পড়তেন। শেষ রাকাত ব্যতীত কোথাও তিনি সালাম ফিরাতেন না। সালামের পর তিনি তিনবার বলতেন[222]:
«سبحان الملك القدوس»
তবে এ পদ্ধতিতে তিন রাকাত এক তাশাহুদ দ্বারা আদায় করা, শেষ রাকাত ব্যতীত না বসা। কারণ, দুই তাশাহুদ দ্বারা পড়লে মাগরিবের সালাতের সাথে সামঞ্জস্য হয়।[223] নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাগরিবের সাথে সামঞ্জস্য রেখে বিতর আদায় করতে নিষেধ করেছেন।[224] আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«لا توتروا بثلاث، أوتروا بخمس، أو بسبع، ولا تشبَّهوا بصلاة المغرب».
“তোমরা তিন রাকাত দ্বারা বিতর পড় না, বরং পাঁচ রাকাত অথবা সাত রাকাত দ্বারা বিতর পড়, আর মাগরিব সালাতের সাথে সামঞ্জস্য রেখ না”।[225]
হাফিয ইবন হাজার রহ. সেসব হাদীস ও মনীষীদের বাণী উল্লেখ করেছেন, যা থেকে প্রমাণ হয় যে, শেষ বৈঠকে এক তাশাহুদ দ্বারা বিতর জায়েয। তিনি সেসব হাদীসও একত্র করেছেন যা থেকে প্রমাণ হয় যে, দুই তাশাহুদ দ্বারা তিন রাকাত বিতর পড়া নিষেধ, মাগরিবের সাথে সামঞ্জস্যতার কারণে।[226] যে সব হাদীস তিন রাকাত বিতর প্রমাণ করে, তার মধ্যে কাসেম ইবন আব্দুল্লাহ ইবন উমার এর হাদীস একটি, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«صلاة الليل مثنى مثنى، فإذا أردت أن تنصرف فاركع ركعة واحدة توتر لك ما صليت».
“রাতের সালাত দু’রাকাত দু’রাকাত, যখন তুমি শেষ করার ইচ্ছা কর, এক রাকাত পড়ে নাও, যা তোমার পূর্বের সালাত বেজোড় করে দিবে”। কাসেম বলেছেন: “আমরা সাবালক হয়ে অনেক লোককে দেখেছি যারা তিন রাকাত দ্বারা বিতর পড়তেন। তবে সব পদ্ধতি বৈধ, আশা করি কোনোটিতে কোনো সমস্যা নেই”।[227]
দশ. এক রাকাত বিতর পড়া আব্দুল্লাহ ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«الوتر ركعة من آخر الليل»
“বেতের হচ্ছে এক রাকাত শেষ রাতে”।[228]
আবু মিজলায থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি ইবন আব্বাসকে বিতর সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছি? তিনি বললেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আমি বলতে শুনেছি:
«ركعة من آخر الليل»
“এক রাকাত শেষ রাতে”। আমি ইবন উমারকে জিজ্ঞাসা করেছি, তিনি বললেন: আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি:
«ركعة من آخر الليل».
“এক রাকাত শেষ রাতে”।[229] ইমাম নববী রহ. বলেছেন: “এ থেকে প্রমাণ হয় এক রাকাত বিতর পড়া বৈধ, এবং তা শেষ রাতে পড়া মুস্তাহাব” [230] আমি শাইখ আব্দুল আযিয ইবন বায রহ.-কে বলতে শুনেছি: “কিন্তু যত বেশি রাকাত পড়বে তত উত্তম, যদি কেউ এক রাকাতে সমাপ্ত করে, তাহলেও মকরুহ ব্যতীত বৈধ…”।[231]
এক রাকাত দ্বারা বিতর পড়ার আরো দলীল: আবু আইয়ূব আনসারি রাদিয়াল্লাহু আনহুর হাদীস, তাতে রয়েছে:
« … ومن أحب أن يوتر بواحدةٍ فليفعلْ…».
“… যে এক রাকাত দ্বারা বিতর পড়তে চায়, সে যেন তাই করে…”।[232]
৫. বিতর সালাতের কিরাত। প্রথম রাকাতে সূরা আলা, দ্বিতীয় রাকাতে সূরা কাফিরূন এবং তৃতীয় রাকাতে সূরা ইখলাস পড়া আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিতর সালাতে সূরা আলা, সূরা কাফিরূন ও সূরা ইখলাস পাঠ করতেন এক এক রাকাতে।[233] ইমাম তিরমিযি রহ. বলেন, প্রত্যেক রাকাতে এখন একটি করে সূরা পাঠ করবে।[234]
৬. বিতর সালাতে কুনুত পড়ার বিধান।[235] বিতর সালাতে কুনুত পড়া বৈধ হাসান ইবন আলি রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে কয়েকটি বাক্য শিক্ষা দিয়েছেন, যা আমি বিতর সালাতের কুনুতে পড়ি[236]:
«اللهم اهدني فيمن هديت، وعافني فيمن عافيت، وتولني فيمن توليت، وبارك لي فيما أعطيت،وقني شر ما قضيت؛ فإنك تقضي ولا يُقضى عليك، وإنه لا يذلّ من واليت [ولا يعز من عاديت][237] [سبحانك] [238]تباركت ربنا وتعاليت».
খ. আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার বিতর শেষে বলতেন:
«اللهم إني أعوذ برضاك من سخطك، وبمعافاتك من عقوبتك، وأعوذ بك منك، لا أُحصي ثناءً عليك، أنت كما أثنيت على نفسك» [239]. وصلى الله وسلم على نبينا محمد وآله وصحبه ومن تبعهم بإحسان إلى يوم الدين[240].
৭. কুনুতের দো‘আ রুকুর আগে ও পরে উভয় স্থানে পড়া যায়। কারণ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে প্রমাণিত তিনি রুকুর পূর্বে কুনুত পড়েছেন। রুকুর পরেও তার থেকে কুনুত পড়ার প্রমাণ রয়েছে অতএব উভয় পদ্ধতি বৈধ ও জায়েয, তবে উত্তম হচ্ছে রুকুর পরে কুনুত পড়া। কারণ এটা অধিক হাদীসে এসেছে।[241] বিতর সালাতে কুনুত পড়া সুন্নাত।[242]
কুনুতের স্থান নির্ণয় সম্পর্কে হাদীস: আনাস ইবন মালেক রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তাকে কুনুত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল রুকুর পূর্বে না পরে? তিনি বলেন, “রুকুর পূর্বে…” অতঃপর বলেন, “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক মাস রুকুর পর কুনুত পড়েন, যেখানে তিনি বনু সুলাইম জনপদের ওপর বদ-দো‘আ করতেন”।[243] আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত: “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন ফজরের কিরাত শেষ করে তাকবীর বলতেন ও রুকু থেকে মাথা উঠাতেন:
«سمع الله لمن حمده، ربنا ولك الحمد»
বলতেন, অতঃপর তিনি দাঁড়িয়ে বলতেন:
«اللهم أنج الوليد بن الوليد…».
“হে আল্লাহ তুমি ওলীদ ইবন ওলিদকে মুক্ত কর…”[244] আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত: “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যোহর, আসর, মাগরিব, এশা ও ফজরে সালাতে একমাস লাগাতার কুনুত পড়েছেন। প্রত্যেক সালাতের শেষে, অর্থাৎ শেষ রাকাতে سمع الله لمن حمده বলে কুনুত পড়তেন। তিনি বনু সুলাইম, রা’আল, যাকওয়ান, উসাইয়্যাহ জনপদের ওপর বদ দো‘আ করতেন। তার পিছনে যারা থাকত, তারা আমীন বলত”।[245] উবাই ইবন কাব রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত: “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিতর পড়তেন ও রুকুর পূর্বে কুনুত পড়তেন”।[246] আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহুকে ফজরের সালাতে কুনুত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, তিনি বলেন, “আমরা রুকুর পূর্বে ও পরে কুনুত পড়তাম”।[247]
৮. কুনুতে হাত উঠানো ও মুক্তাদিদের আমীন বলা। সালমান ফারসি রাদিয়াল্লাহু আনহুর হাদীসের ব্যাপকতা থেকে কুনুতে হাত উঠানো ও মুক্তাদিদের আমীন বলা প্রমাণ হয়, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«إن ربكم تبارك وتعالى حييٌّ كريم يستحي من عبده إذا رفع يديه أن يردَّهما صفراً»
“নিশ্চয় তোমাদের রব লজ্জাশীল ও দয়াবান, বান্দা যখন তার দু’হাত উঠায়, তিনি তা খালি ফিরিয়ে দিতে লজ্জা বোধ করেন”।[248] দ্বিতীয়ত উমার ইবন খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাফে ইবন খাদিজ বলেছেন: “আমি উমার ইবন খাত্তাবের পিছনে সালাত আদায় করেছি, তিনি রুকুর পর কুনুত পড়েছেন, দু’হাত উঠিয়েছেন ও জোড়ে দো‘আ পড়েছেন”।[249]
আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে কারীদের ঘটনায় বর্ণিত, যাদেরকে শহীদ করা হয়েছিল। তিনি বলেন, “আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দেখেছি, যখনি তিনি ফজরের সালাত আদায় করতেন, হাত উঠিয়ে তাদের জন্য বদ দো‘আ করতেন, অর্থাৎ যারা কারীদের হত্যা করেছে, তাদের জন্য বদ দো‘আ করতেন”।[250] ইমাম বায়হাকি রহ. উল্লেখ করেছেন: কতক সংখ্যক সাহাবী কুনুতে হাত উঠিয়েছেন।[251] আর ইমামের কুনুতে মুক্তাদিদের আমীন বলার দলীল হচ্ছে ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুর হাদীস। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন سمع الله لمن حمده শেষ রাকাতে বলতেন, তিনি বনু সুলাইম জনপদের রা‘আল, যাকওয়ান ও উসাইয়্যাহ বংশের লোকদের ওপর বদ-দো‘আ করতেন। তার পিছনে যারা থাকত, তারা আমীন বলত” [252]
৯. রাতের সর্ব শেষ সালাত বিতর আব্দুল্লাহ ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«اجعلوا آخر صلاتكم بالليل وتراً».
“রাতে তোমরা তোমাদের সর্বশেষ সালাত আদায় কর বিতর” [253] মুসলিমের অপর বর্ণনায় আছে: “যে রাতে সালাত আদায় করে, সে যেন তার সর্বশেষ সালাত আদায় করে বিতর ফজরের পূর্বে কারণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরূপ নির্দেশ দিতেন”।[254]
১০. বিতর সালাত শেষে সালামের পর দো‘আ করা। যেমন, সালামের পর বলা:
«سبحان الملك القدوس، سبحان الملك القدوس، سبحان الملك القدوس رب الملائكة والروح»
কারণ, উবাই ইবন কাব রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিন রাকাত দ্বারা বিতর পড়তেন। প্রথম রাকাতে সূরা আলা, দ্বিতীয় রাকাতে সুরা কাফিরুন ও তৃতীয় রাকাতে সূরা ইখলাস পড়তেন। তিনি রুকুর পূর্বে কুনুত পড়তেন। যখন তিনি সালাত শেষ করতেন, তখন বলতেন[255]:
«سبحان الملك القدوس»
তিনবার। অতঃপর উচ্চ আওয়াজে বলতেন:
«[رب الملائكة والروح]»
১১. এক রাতে দু’বার বিতর বৈধ নয়, সাবেক বিতর বাতিল করা যাবে না। তালক ইবন আলি রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আমি বলতে শুনেছি:
«لا وتران في ليلةٍ»
“এক রাতে দু’বার বিতর নেই”।[256] দ্বিতীয়তঃ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিতর পড়ে দু’রাকাত সালাত আদায় করতেন।[257] যদি কোনো মুসলিম প্রথম রাতে বিতর আদায় করে, অতঃপর ঘুমিয়ে যায়, অতঃপর আল্লাহ তাকে শেষ রাতে উঠার তাওফিক দান করেন, তখন সে দু’রাকাত দু’রাকাত সালাত আদায় করবে, পূর্বের বিতর ভঙ্গ করবে না, বরং তাতেই যথেষ্ট করবে।[258]
১২. বিতর সালাতের জন্য পরিবারের সদস্যদের জাগ্রত করা বৈধ। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত: “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতে সালাত আদায় করতেন, আমি তার বিছানায় শুয়ে থাকতাম। যখন তিনি বিতর পড়ার ইচ্ছা করতেন আমাকে জাগিয়ে দিতেন, আমি বিতর পড়তাম”। মুসলিমের এক বর্ণনা এভাবে এসেছে: “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতে তার সালাত আদায় করতেন, আর সে (আয়েশা) তার সামনে শুয়ে থাকত, যখন বিতর বাকি থাকত, তিনি তাকে জাগ্রত করতেন, সে বিতর পড়ত”। মুসলিমের অপর বর্ণনা এভাবে এসেছে: “যখন তিনি বিতর পড়তেন বলতেন, ‘হে আয়েশা ওঠ, বিতর পড়”।[259] ইমাম নববী রহ. বলেছেন: “এখান থেকে প্রমাণ হয় যে, শেষ রাতে বিতর পড়া মুস্তাহাব, ব্যক্তি তাহাজ্জুদ পড়ুক বা না পড়ুক, যদি শেষ রাতে উঠার ব্যাপারে নিশ্চিত হয় নিজে নিজে অথবা কারো জাগ্রত করার দ্বারা। ঘুমের পূর্বে বিতর পড়ার নির্দেশ তাকে দেওয়া হয়েছে, যে শেষ রাতে উঠার ব্যাপারে নিশ্চিত নয়”।[260]
১৩. যার বিতর ছুটে যায়, তার বিতর কাযা করা উচিৎ। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত: “… নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন কোনো সালাত আদায় করতেন, তা তিনি নিয়মিত আদায় করা পছন্দ করতেন। তার অভ্যাস ছিল, যদি তার ওপর ঘুম প্রবল হত অথবা রাতে সালাত আদায় করা কষ্টদায়ক হত, তাহলে তিনি দিনের বেলা বারো রাকাত সালাত আদায় করতেন। আমি জানি না আল্লাহর নবী কোনো রাতে পূর্ণ কুরআন খতম করেছেন, আর না সকাল পর্যন্ত কোনো রাত সালাত আদায় করেছেন, না পূর্ণ মাস সিয়াম পালন করেছেন রমযান ব্যতীত…”।[261] উমার ইবন খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«من نام عن حزبه أو عن شيء منه فقرأه فيما بين صلاة الفجر وصلاة الظهر كتب له كأنما قرأه من الليل».
“যে ব্যক্তি তার অযীফা না পড়ে ঘুমিয়ে যায়, অথবা আংশিক পড়ে ঘুমিয়ে যায়, অতঃপর সে তা ফজর ও যোহরের মধ্যবর্তী সময়ে পড়ে নেয়, তার জন্য লেখা হবে যেন সে তা রাতেই পড়েছে”।[262]
আবু সাঈদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«من نام عن الوتر أو نسيه فليصلِّ إذا أصبح أو ذكره».
“যে ব্যক্তি বিতর না পড়ে ঘুমিয়ে যায় অথবা তা ভুলে যায়, সে যেন তা পড়ে নেয় যখন ভোর করে অথবা যখন স্মরণ হয়”।[263]
অতএব, উত্তম হচ্ছে যদি বিতর আদায় না করে ঘুমায় অথবা ভুলে যায়, তাহলে তা দিনে সূর্য উঠার পর অভ্যাস অনুযায়ী জোড় সংখ্যায় কাযা করে নেওয়া। যদি রাতে এগারো রাকাত পড়ার অভ্যাস থাকে, তাহলে দিনে বারো রাকাত পড়া আর যদি রাতে নয় রাকাত পড়ার অভ্যাস থাকে, তাহলে দিনে দশ রাকাত পড়া, এভাবে।
সমাপ্ত
এ গ্রন্থটি রাতের সালাত সম্পর্কে সংক্ষিপ্তি একটি রচনা। এখানে তাহাজ্জুদের অর্থ, কিয়ামুল লাইলের ফযীলত, উত্তম সময়, রাকাত সংখ্যা, আদব ও কিয়ামুল লাইলের সহায়ক উপকরণ উল্লেখ করা হয়েছে। অনুরূপ তারাবীর সালাতের অর্থ, হুকুম, ফযীলত, সময়, রাকাত সংখ্যা ও তাতে জামা‘আতের বিধান উল্লেখ করা হয়েছে। আরো উল্লেখ করা হয়েছে বিতর সালাত, বিতর সালাতের হুকুম, ফযীলত, সময় ও বিভিন্ন প্রকার, রাকাত সংখ্যা ও তাতে কিরাতের বর্ণনা ইত্যাদি। প্রত্যেকটি মাসআলা দলীলসহ বর্ণনা করা হয়েছে।
[1] দেখুন: ‘লিসানুল আরব’, লি ইবন মানযুর, বাবুদ্দাল, ফাসলুল হা: (৩/৪৩২); ‘আল-কামুসুল মুহিত’ লিল ফিরুজ আবাদি, বাবুদ্দাল, ফাসলুল হা: (পৃ.৪১৮)।
[2] ‘মজমু ফাতওয়া ওয়াল মাকালাত মুতানাওয়েয়াহ’ লি ইবন বায রহ.: (১১/২৯৬)।
[3] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১৬৩, আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত।
[4] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৪৮৩৭; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৮২০)
[5] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৪৮৩৬; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৮১৯।
[6] বলা হয় এটা আব্দুল্লাহ ইবন রাওয়াহা রাদিয়াল্লাহু আনহুর কবিতা।
[7] ইবন মাজাহ, হাদীস নং ৩২৫১, ১৩৩৪; তিরমিযী, হাদীস নং ২৪৮৫, ১৯৮৪); হাকিম: (৩/১৩); আহমদ: (৫/৪৫১); ‘সিলসিলাতুল আহাদীসিস সাহীহা’: (৫৬৯) ও ‘ইরওয়াউল গালিল’: (৩/২৩৯) গ্রন্থে আলবানী রহ. হাদীসটি সহীহ বলেছেন।
[8] ‘কিয়ামুল লাইল’ লিল ইমাম মুহাম্মদ ইবন নাসর আল-মাওয়াযি: (পৃ. ৯০), ‘তাহাজ্জুদ ও কিয়ামুল লাইল’ লি ইবন আবিদ দুনিয়া: (পৃ. ৩১৭), কেউ বলেছেন: এ কবিতাগুলো মালেক ইবন দিনারের।
[9] সিয়ামের পর সিয়াম পালন করে অর্থাৎ ফরয সিয়ামের পর অধিক নফল সিয়াম পালন রাখে, একের পর এক রাখতে থাকে একেবারে ত্যাগ করে না। কেউ বলেছেন: এর সর্বনিন্ম সংখ্যা হচ্ছে প্রত্যেক মাসে কমপক্ষে তিনটি সিয়াম পালন করা। দেখুন: ‘তুহফাতুল আহওয়াযি’: (৬/১১৯)।
[10] আহমদ: (৫/৩৪৩); ইবন হিব্বান, হাদীস নং (৬৪১; তিরমিযী, হাদীস নং ২৫২৭, আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে; আহমদ: (২/১৭৩), আব্দুল্লাহ ইবন আমর থেকে। আলবানী সহীহ সুনান তিরমিযী: (২/৩১১) ও সহীহ আল-জামে: (২/২২০), হাদীস নং (২১১৯) গ্রন্থে হাসান বলেছেন।
[11] তিরমিযী, হাদীস নং ৩৫৪৯; হাকেম: (১/৩০৮); বায়হাকি: (২/৫০২), আলবানী ‘ইরওয়াউল গালিল’: (২/১৯৯), হাদীস নং (৪৫২) ও সহীহ তিরমিযী: (৩/১৭৮) গ্রন্থে হাদীসটি হাসান বলেছেন।
[12] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১৬৩।
[13] হাকেম: (৪/৩২৫), তিনি হাদীসটি সহীহ বলেছেন, ইমাম যাহাবী তার সমর্থন করেছেন। ইমাম মুনযিরি ‘তারগিব ও তারহিব’: (১/৬৪০) গ্রন্থে এ হাদীসের সনদ হাসান বলেছেন। তিনি তাবরানির ‘আল-আওসাত’ গ্রন্থের সূত্রে হাদীসটি উল্লেখ করেছেন। হায়সামি ‘মাজমাউয যাওয়ায়েদ’: (২/২৫৩) গ্রন্থে তার সূত্রের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। আলবানী ‘সিলসিলাতুল আহাদীসিস সাহীহা’ গ্রন্থে হাদীসটি হাসান বলেছেন, হাদীস নং (৮৩১)। তিনি এর তিনটি সনদ উল্লেখ করেছেন: আলী, সাহাল ও জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহুম থেকে।
[14] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৮১৫।
[15] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৭৩; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৮১৬।
[16] মুকানতিরিন: যাদের জন্য বে-হিসাব সওয়াব লেখা হয় তাদেরকে মুকানতিরিন বলা হয়। দেখুন: ‘তারগিব ও তারহিব’: (১/৪৯৫)।
[17] আবু দাউদ, হাদীস নং ১৩৯৮; সহীহ ইবন খুজাইমাহ: (২/১৮১), হাদীস নং (১১৪২), আলবানী সহীহ আবু দাউদ: (১/২৬৩) ও ‘সিলসিলাতুল আহাদীসিস সাহীহা’: (৬৪৩) গ্রন্থে হাদীসটি সহীহ বলেছেন।
[18] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৮০২।
[19] সুনান আবু দাউদ, হাদীস নং ৩৯৫, আলবানী হাদীসটি সহীহ বলেছেন। দেখুন: সহীহ সুনান আবু দাউদ: (১/২৬২)।
[20] আবু দাউদ, হাদীস নং ১৩৯০, আলবানী হাদীসটি সহীহ বলেছেন। দেখুন: সহীহ সুনান আবু দাউদ: (১/২৬১)।
[21] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১১৪১।
[22] তিরমিযী, হাদীস নং ৩৫৭৯; আবু দাউদ, হাদীস নং ১২৭৭; নাসাঈ, হাদীস নং ৫৭২, আলবানী হাদীসটি সহীহ বলেছেন। দেখুন: সুনান তিরমিযী: (৩/১৮৩)।
[23] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৪৫; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭৫৮।
[24] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭৫৭।
[25] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১১৩১, ১৯৭৯; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১৫৯।
[26] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১১৩২; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭৪১।
[27] আবু দাউদ, হাদীস নং ১৩১৬, আল-বাহিন হাদীসটি হাসান বলেছেন। দেখুন: সহীহ সুনান আবু দাউদ: (১/২৪৪)।
[28] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৯৯০; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭৪৯।
[29] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭৩৬।
[30] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১১৪৭; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭৩৮।
[31] নাসাঈ, হাদীস নং ১৭৮৪; আবু দাউদ, হাদীস নং ১৩১৪; মালেক ফিল ‘মুয়াত্তা’: (১/১১৭), আলবানী হাদীসটি সহীহ বলেছেন। দেখুন: সহীহ সুনান নাসাঈ: (১/৩৮৬) ও ‘ইরওয়াউল গালিল’: (২/২০৫)।
[32] নাসাঈ, হাদীস নং ৬৮৭, আলবানী হাদীসটি সহীহ বলেছেন। দেখুন: ‘ইরওয়াউল গালিল’: (৪৫৪) ও সহীহ সুনান নাসাঈ: (১/৩৮৬)।
[33] হাফিয ইবন হাজার রহ. বলেছেন: [له] শব্দটি ‘আসলি’ বাড়িয়েছেন। তিনি বলেছেন: অন্যান্য বর্ণনাতে এরূপ রয়েছে। আমি বলছি: এ শব্দ ইবন মাজাহ তার সুনান গ্রন্থে বাড়িয়েছেন, দেখুন হাদীস নং (৩৮৭৮), আলবানী হাদীসের এ বৃদ্ধিকে সুনান ইবন মাজাহ গ্রন্থে সহীহ বলেছেন। দেখুন: (২/৩৩৫)।
[34] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১১৫৪।
[35] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৮২-৭৬৩।
[36] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২৪৫; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৫৪।
[37] দেখুন: লেখকের হিসনুল মুসলিম, (পৃ. ১২-১৬)।
[38] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭৬৭।
[39] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭৬৮।
[40] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৭৩১; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭৮১।
[41] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৯৭০; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭৮২।
[42] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১১৫২; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১১৯।
[43] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭৪৬।
[44] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭৪৭।
[45] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২১২; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭৮৬।
[46] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭৮৭।
[47] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৯৯৭; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭৪৪।
[48] নাসাঈ, হাদীস নং ১৬১০; ইবন মাজাহ, হাদীস নং ১৩৩৬; আবু দাউদ, হাদীস নং ১৩০৮, আলবানী হাদীসটি সহীহ বলেছেন। দেখুন: সহীহ সুনান নাসাঈ: (১/৩৫৪)।
[49] ইবন মাজাহ, হাদীস নং ১৩৩৫; আবু দাউদ, হাদীস নং ১৩০৯, আলবানী হাদীসটি সহীহ বলেছেন। দেখুন: সহীহ সুনান আবু দাউদ: (১/২৪৩)।
[50] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১১২৭; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭৭৫।
[51] ‘ফাতহুল বারি’ থেকে সংগৃহীত: (৩/১১)।
[52] ফাতহুল বারি: (৩/১১)।
[53] ফাতহুল বারি: (৩/১১)।
[54] শারহুন নববী আলা সহীহি মুসলিম: (৬/৩১১); ‘ফাতহুল বারি’ লি ইবন হাজার: (৩/১১)।
[55] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১১৫, ১১২৬, ২৬১৮, ৭০৭৯।
[56] ‘ফাতহুল বারি’: (৩/১১)।
[57] ‘ফাতহুল বারি’: (৩/১১)।
[58] ‘জামেউর রাসূল ফি আহাদিসির রাসূল”: (৬/৬৮)।
[59] ‘জামেউল উসূল ফি আহাদিসির’ রাসূল: (৬/৬৮)।
[60] ‘আল-মুগনি’ লি ইবন কুদামাহ: (২/৫৬২)।
[61] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১১৩৫; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭৭৩।
[62] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭৭২।
[63] আবু দাউদ, হাদীস নং ৮৭৩; নাসাঈ, হাদীস নং ১০৪৯, আলবানী হাদীসটি সহীহ বলেছেন। দেখুন: সহীহ সুনান আবু দাউদ: (১/১৬৬)।
[64] আবু দাউদ, হাদীস নং ৭৭৪, আলবানী হাদীসটি সহীহ বলেছেন। দেখুন: সহীহ সুনান আবু দাউদ: (১/১৬৬)।
[65] এখানে সামঞ্জস্যশীল বলতে অর্থের সামঞ্জস্য, যেমন উপদেশ, হিকমত, ঘটনা ইত্যাদি, আয়াতের সংখ্যার সমতা উদ্দেশ্য নয়।
[66] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৭৭৫; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৭৫-৭২২।
[67] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৪৯৯৬, ৫০৪৩।
[68] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৭৬-৭২২।
[69] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৭৫-৭২২।
[70] তিরমিযী, হাদীস নং ৪৪৮, আলবানী এ হাদীসের সনদ সহীহ বলেছেন। দেখুন: সহীহ তিরমিযী: (১/১৪০)।
[71] ইবন মাজাহ, হাদীস নং ১৩৫০, আলবানী হাদীসটি হাসান বলেছেন। দেখুন: সহীহ সুনান ইবন মাজাহ: (১/২২৫), আরনাউত ‘জামেউল উসূল’: (৬/১০৫) গ্রন্থে তা সহীহ বলেছেন।
[72] আবু দাউদ, হাদীস নং ১৪৩৭; তিরমিযী, হাদীস নং ২৯২৪; নাসাঈ, হাদীস নং ১৬৬২; ইবন মাজাহ, হাদীস নং ১৩৫৪; আহমদ: (৬/১৪৯), আলবানী হাদীসটি সহীহ বলেছেন। দেখুন: সহীহ সুনান নাসাঈ: (১/৩৬৫)।
[73] আবু দাউদ, হাদীস নং ১৩২৯; তিরমিযী, হাদীস নং ৪৪৭, আলবানী হাদীসটি সহীহ বলেছেন। দেখুন: সহীহ সুনান আবু দাউদ: (১/২৪৭)।
[74] বুখারি: ফাদায়েলুল কুরআন ও সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭৮৮।
[75] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৫০৩১; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭৮৯।
[76] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২২৭-৭৮৯।
[77] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২২৭।
[78] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৯৯২; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৮২-৭৬৩।
[79] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৬৫৮।
[80] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৩৫; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭৭৩।
[81] আবু দাউদ, হাদীস নং ৮৭৩; নাসাঈ, হাদীস নং ১০৪৯।
[82] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৬৬০।
[83] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১১৮৬; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৩৩।
[84] ‘আল-মুগনি’ লি ইবন কুদামাহ: (২/৫৬৭)।
[85] ‘ইখতিয়ারাতুল ফিকহিয়্যাহ’ লি ইবন তাইমিয়াহ: (পৃ. ৯৮)।
[86] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৯৯৮; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭৫১।
[87] আবু মুসা আশ‘আরী রাদিয়াল্লাহু আনহুর নাম আব্দুল্লাহ ইবন কায়েস।
[88] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৪৩৪২, ৪৩৪২, ৪৩৪৪, ৪৩৪৫; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৭৩৩।
[89] ‘ফাতহুল বারি’: (৮/৬২)।
[90] আমি এ বাণী সহীহ বুখারীর তাকরিরের সময় শুনেছি হাদীস নং (৪৩৪১), সোমবার দিন, ফজরের সময়, রিয়াদে অবস্থিত জামে কাবির মসজিদে। তারিখ: ২২/৭/১৪১৬হি.।
[91] হাদীসে বর্ণিত “قنوت” (কুনুত) শব্দ বিভিন্ন অর্থ প্রদান করে। যেমন, আনুগত্য, খুশু বা একাগ্রতা, সালাত, দো‘আ, ইবাদত, কিয়াম, লম্বা কিয়াম, চুপ থাকা, স্থিরতা, আনুগত্য প্রতিষ্ঠা করা ও বিনয়বনতা। দেখুন: ‘নিহায়া ফি গারিবিল হাদীস’ লি ইবন আসির, বাবুল কাফ মাআন নুন: (৪/১১১); ‘মাশারিকুল আনওয়ার আলাস সিহাহ ওয়াল আসার’ লিল কাদি আয়াদ, হারফুল কাফ মাআ সায়েরিল হুরুফ: (২/১৮৬); ‘হাদইউস সারি মুকাদ্দামাহ ফাতহুল বারি’ লি ইবন হাজার: (পৃ. ১৭৬), হাফেয ইবন হাজার বলেছেন, ইবনুল আরাবি কুনুতের দশটি অর্থ উল্লেখ করেছেন, যা যয়নুদ্দিন আল-ইরাকি কবিতায় রূপান্তর করেছেন:
ولفظ القنوت اعدد معانيه تجد = مزيداً على عشرة معاني مرضية
دعاء، خشوع، والعبادة، طاعة = إقامتها، إفراده بالعبوديـة
سكوت، صلاة، والقيام، وطوله = كذا دوام الطاعة الرابح القنيه
“আমি কুনুত শব্দের অর্থ গণনা করেছি, তুমি তার সঠিক অর্থ দশটিরও অধিক পাবে: দোয়া, খুশু বা একাগ্রতা, ইবাদত, আনুগত্য কায়েম করা, একমাত্র আল্লাহকে ইবাদাত নিবেদন করা, চুপ থাকা, সালাত, কিয়াম, লম্বা কিয়াম, সর্বদা ইবাদতে মশগুল থাকা”। দেখুন: ‘ফাতহুল বারি’ মাকতাবাহ সালফিয়াহ: (২/৪৯১) ইবন আসির হাদীসে বর্ণিত কুনুতের অর্থ উল্লেখ করে বলেছেন: “হাদীসে বর্ণিত কুনুত উল্লিখিত যে শব্দের সম্ভাবনা রাখে, সে অর্থে তা ব্যবহার করতে হবে”। ‘আন-নিহায়া ফি গারিবিল হাদীস ওয়াল আসর’: (৪/১১১)।
[92] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭৫৬।
[93] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৪৮৮।
[94] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৪৮৯।
[95] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৪৮২।
[96] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৪৭৯।
[97] দেখুন: ‘আল-মুগনি’ লি ইবন কুদামাহ: (২/৫৬৪); ফাতওয়া শাইখুল ইসলাম লি ইবন তাইমিয়াহ: (২৩/৬৯); ‘নাইলুল আওতার’ লি শাওকানি: (২/২৭০)।
[98] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭৫৬।
[99] ‘জামেউল বায়ান আন তাবিলি আয়াল কুরআন’: (৪/৪৮)।
[100] ‘তাফসিরে ইবন কাসির’: (৪/৪৮)।
[101] ফতোয়া শাইখুল ইসলাম: (২৩/৭১), তিনি (২৩/৬৯-৮৩)নং পৃষ্ঠাসমূহে এর ব্যাখ্যা দিয়েছেন, সেখানে তিনি উল্লেখ করেছেন শুধু সাজদা বারোটি কারণে শুধু রুকু থেকে উত্তম অতঃপর তিনি তা দলীলসহ উল্লেখ করেছেন।
[102] ‘মুনতাকাল আখবার’ লি ইবন তাইমিয়াহ গ্রন্থের (১২৬১) নং হাদীসের তাকরিরের সময় শুনেছি।
[103] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৪৮৩৬, ৪৮৩৭; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৮১৯, ২৮২০, আয়েশা ও মুগিরা রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণনা করেন।
[104] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭৭২।
[105] আবু দাউদ, হাদীস নং ৮৭৩; নাসাঈ, হাদীস নং ১০৪৯।
[106] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৯৯৪।
[107] নাসাঈ, হাদীস নং ৩৯০৪; আহমদ: (৩/১২৮), আলবানী হাদীসটি সহীহ বলেছেন। দেখুন: সহীহ নাসাঈ: (৩/৮২৭)।
[108] আবু দাউদ, হাদীস নং ৪৯৮৫, ৪৯৮৬, আলবানী সহীহ সুনান নাসাঈতে হাদীসটি সহীহ বলেছেন: (৩/৯৪১)।
[109] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৯৭; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭৮২।
[110] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৩৯, ৬৪৬৩; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৮১৬।
[111] ‘মুনতাকাল আখবার’ এর (১২৫৭-১২৬২) নং হাদীসের ব্যাখ্যার সময় আমি তার এ বাণী শ্রবণ করেছি।
[112] এ অংশের প্রত্যেক বাক্যের দলিল সালাতুল লাইলের ফযীলত বর্ণনার সময় পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে।
[113] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১১৪৪, ৩২৭০; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭৭৪।
[114] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১১৪২; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭৭৬।
[115] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১১৫২) ও (১১৩১; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৮৫-১১৫৯।
[116] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১১২১, ১১২২; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৪৭৯।
[117] ইবন হিব্বান ফিল ইহসান: (৭২) ও (১/২৭৩), বায়হাকি ফিস সুনান, সহীহ ইবন হিব্বানের টিকায় শুআইব আরনাউত এ হাদীসের সনদ সহীহ মুসলিমের শর্ত মোতাবেক সহীহ বলেছেন। দেখুন: সহীহ ইবন হিব্বান ‘আল-ইহসান’ অধ্যায়: (১/২৭৪), আলবানী ‘সিলসিলা আহাদীসিস সহীহা’ গ্রন্থে এ হাদীসের সনদ সহীহ বলেছেন, হাদীস নং (১৯৫), সহীহ তারগিব গ্রন্থে তিনি এ হাদীসের সনদ হাসান বলেছেন, হাদীস নং (৬৪৫)।
[118] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬৪১৬।
[119] ‘হাদইউস সারি’ মুকাদ্দামাহ সহিহুল সহীহ বুখারী, হাদীস নং পৃ.৪৮১)
[120] ‘হাদইউস সারি’ মুকাদ্দামাহ সহিহুল সহীহ বুখারী, হাদীস নং পৃ.৪৮১
[121] ‘কিয়ামুল লাইল’ লি মুহাম্মদ ইবন নাসর: (পৃ.৪২), ‘তাহাজ্জুদ ও কিয়ামুল লাইল’ লি ইবন আবিদ দুনিয়া: (পৃ.৩২৯)
[122] ‘তাহাজ্জুদ ও কিয়ামুল লাইল’ লি ইবন আবিদ দুনিয়া: (পৃ. ৩৩); ‘কিয়ামুল লাইল’ লি মুহাম্মদ ইবন নাসার: (পৃ. ৯২)।
[123] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২৯৯৬।
[124] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬৪১২।
[125] আল-হাকেম: (৪/৩০৬), হাকিম হাদীসটি সহীহ বলেছেন, ইমাম যাহাবী তার সমর্থন করেছেন। ইবনুল মুবারক ফিয ‘যুহদ’: (১/১০৪), হাদীস নং (২), ইবন হাজার ‘ফাতহুল বারি’তে: (১১/২৩৫) বলেছেন: “… ইবন মুবারাক ‘যুহদ’ গ্রন্থে সহীহ সনদে এ হাদীসটি ইরসালকারী আমর ইবন মাইমুন থেকে বর্ণনা করেছেন”। আমর ইবন মাইমুনের মুরসাল হাদীস হাকেমের বর্ণনাকৃত হাদীসের শাহেদ। আলবানী এ হাদীসটি সহীহ বলেছেন। দেখুন: সহীহ জামে সাগির: (২/৩৫৫), হাদীস নং (১০৮৮)।
[126] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৫৬৮; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৪৬১।
[127] দেখুন: লেখকের হিসনুল সহীহ মুসলিম, হাদীস নং পৃ. (৬৮-৭৮)।
[128] দেখুন: ‘মুখতাসারু মিনহাজুল কাসেদিন’ লি ইবন কুদামাহ: (পৃ. ৬৭-৬৮)।
[129] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭৫৭, জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে।
[130] নাসাঈ, হাদীস নং ১১৬৬; আবু দাউদ, হাদীস নং ১২৯৫; ইবন মাজাহ, হাদীস নং ১৩২২, আলবানী হাদীসটি সহীহ বলেছেন। দেখুন: সহীহ নাসাঈ: (১/৩৬৬); সহীহ ইবন মাজাহ: (১/২২১), সহীহ ইবন আবু দাউদ: (১/২৪০)।
[131] আবু দাউদ, হাদীস নং ১৩২১; তিরমিযী, হাদীস নং ৩১৯৬, কিন্তু তিরমিযীর শব্দ হচ্ছে:
عن أنس بن مالك عن هذه الآية: ﴿ تَتَجَافَىٰ جُنُوبُهُمۡ عَنِ ٱلۡمَضَاجِعِ يَدۡعُونَ رَبَّهُمۡ خَوۡفٗا وَطَمَعٗا وَمِمَّا رَزَقۡنَٰهُمۡ يُنفِقُونَ ١٦ ﴾ [السجدة : ١٦] نزلت في انتظار (هذه) الصلاة التي تدعى “العتمة”
আনাস ইবন মালেক রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে এ আয়াত সম্পর্কে বর্ণিত: (আয়াতের অর্থ মূল লেখায় দেখুন) এ আয়াতটি সালাতের অপেক্ষার জন্য নাযিল হয়েছে, যাকে তোমরা “আতামাহ” বল অর্থাৎ এশা আলবানী হাদীসটি সহীহ বলেছেন। দেখুন: সহীহ তিরমিযী: (৩/৮৯) ও সহীহ আবু দাউদ: (১/২৪৫)।
[132] আবু দাউদ, হাদীস নং ১৩২২, আলবানী হাদীসটি সহীহ বলেছেন। দেখুন: সহীহ সুনান আবু দাউদ: (১/২৪৫)।
[133] তিরমিযী, হাদীস নং ৬০৪, তিরমিযি বলেছেন: এ হাদীসটি হুযায়ফা থেকেও বর্ণনা করা হয়েছে। দেখুন: সহীহ তিরমিযী লিল আলবানী: (১/১৮৭)।
[134] তিরমিযী, হাদীস নং ৩৭৮১; আহমদ: (৫/৪০৪), আলবানী হাদীসটি সহীহ বলেছেন, সহীহ সুনান তিরমিযী: (৩/২২৬), আল্লামা আহমদ মুহাম্মাদ শাকের তিরমিযীর টিকায় ইমাম আহমদের সনদ উল্লেখ করার পর বলেছেন: (২/৫০২) “এটা খুব সুন্দর সনদ হাসান অথবা সহীহ”।
[135] ইবন খুজাইমাহ: (১১৯৪), নাসাঈ ফিল সুনানিল কুবরা: (৩৮০), মুনযিরি ‘তারগিব ও তারহিব’: (১/৪৫৮) গ্রন্থে বলেছেন: “নাসায়ি জায়্যেদ সনদে এটা বর্ণনা করেছেন”। আলবানী সহীহ ‘তারগিব ও তারহিব’: (১/২৪১) গ্রন্থে হাদীসটি সহীহ বলেছেন তিনি ‘মিশকাতে’র টিকায় (৬১৬২) নং হাদীসে, তিরমিযীর সনদ সম্পর্কে বলেছেন: “তার সনদ জায়্যেদ”। তিরমিযীর মূল কিতাবে এ হাদীস নং (৩৭৮১)।
[136] শারহুন নববী আলা সাহিহে সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৬/২৫৫), দেখুন: ‘আল-মুগনি’ লি ইবন কুদামাহ: (২/৫৬৭)।
[137] দেখুন: শারহুন নববী: (৬/২৫৬)।
[138] শারহুন নববী: (৬/২৫৮)।
[139] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭৩০।
[140] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১১১৮, ১১১৯, ১১৪৮; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১২১১।
[141] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭৩৩।
[142] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭৩৫।
[143] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১১১৫। পূর্ণ হাদীস হচ্ছে: «ومن صلى نائماً فله نصف أجر القاعد “আর যে ঘুমিয়ে সালাত আদায় করল, তার জন্য বসা ব্যক্তির অর্ধেক সওয়াব” এখানে ঘুমিয়ে অর্থ শুয়ে। খাত্তাবি রহ. প্রাধান্য দিয়েছেন যে, নফল আদায়কারী শুয়ে সালাত আদায় করবে না, এ হুকুম হচ্ছে অসুস্থ ফরয আদায়কারী ব্যক্তির জন্য যে খুব কষ্ট করে দাঁড়াতে সক্ষম, এরূপ হালতে বসা ব্যক্তির সওয়াব দাঁড়ানো ব্যক্তির অর্ধেক নির্ধারণ করা হয়েছে, দাঁড়ানোর প্রতি উৎসাহ প্রদান করার জন্য, যদিও বসে পড়া জায়েয… দাঁড়াতে সক্ষম ব্যক্তির শুয়ে নফল পড়া সম্পর্কে তিনি বলেন: “কোন আলেম থেকে প্রমাণিত নেই, যিনি এর অনুমতি দিয়েছেন”। সামান্য পরিবর্তনসহ ‘ফাতহুল বারি’: (২/৫৮৫) লি ইবন হাজার থেকে উদ্ধৃত। আমি ইমাম ইবন বায রহ.-কে বলতে শুনেছি, তিনি এর সাথে সংযোজন করে বলেছেন: “এ প্রসঙ্গে যা বলা হয়েছে তার মধ্যে এটাই অধিক যথার্থ, তবে ফরয সালাতে যে দাঁড়াতে ও বসতে অক্ষম, তার জন্য পূর্ণ সাওয়াব হবে তবে নফল আদায়কারী কারণ ব্যতীত শুয়ে সালাত আদায় করবে না”
[144] ‘যাদুল মায়াদ’: (১/৩৩১)।
[145] আমি সহীহ বুখারির: (১১১৮ ও ১১১৯)নং হাদীসের ব্যাখ্যার সময় তার থেকে এ বাণী শ্রবণ করেছি।
[146] ‘আল-কামুসুল মুহিত’: বাবুল হা, ফাসলুর রা: (পৃ. ২৮২), ‘লিসানুল আরব’ লি ইবন মানযুর, বাবুল হা, ফাসলুর রা: (২/৪৬২)।
[147] দেখুন: মাজমু ফাতওয়াল ইমাম আব্দুল আযীয ইবন আব্দুল্লাহ ইবন বায রহ.।
[148] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১১৪৭; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭৩৮।
[149] দেখুন: শারহুল মুমতি লিল আল্লামা ইবন উসাইমীন: (৪/৬৬)।
[150] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭৩৬)
[151] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৯৯০; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭৪৯)
[152] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৩৭; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭৫৯)
[153] শারহুন নববী আলা সহিহে সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৬/২৮৬)
[154] দেখুন: ‘আল-মুগনি’ লি ইবন কুদামাহ: (২/৬০১)।
[155] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৩৭; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭৫৯।
[156] দেখুন: শারহুন নববী আলা সহীহে মুসলিম: (৬/২৮৬), ফাতহুল বারি লি ইবন হাজার: (১/৯২), নাইলুল আওতার লিশ শাওকানি: (২/২৩৩)।
[157] আহমদ: (৫/১৫৯); আবু দাউদ, হাদীস নং ১৩৭৫; নাসাঈ, হাদীস নং ১৬০৫; তিরমিযী, হাদীস নং ৮০৬; ইবন মাজাহ, হাদীস নং ১৩২৭, আলবানী সহীহ সুনান নাসাঈ: (১/৩৫৩) ও অন্যান্য গ্রন্থে হাদীসটি সহীহ বলেছেন।
[158] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৯২৪; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭৬১।
[159] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২০১০।
[160] দেখুন : জামেউল উলুম ওয়াল হিকাম, লি ইবন রজব: (২/১২৯)।
[161] সহীহ বুখারী (২০১০) নং হাদীসের ব্যাখ্যার সময় এ বাণী শ্রবণ করেছি।
[162] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২০১৪; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭৬০।
[163] ইবাদতের জন্য কাপড় গুটানো বা ওপরে তোলা। এখানে উদ্দেশ্য নারীদের সঙ্গ ত্যাগ করা।
[164] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২০২৩; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১৭৪।
[165] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১৭৫।
[166] নাসাঈ, হাদীস নং ১৬০৬, আলবানী হাদীসটি সহীহ বলেছেন। দেখুন: সহীহ সুনান নাসাঈ: (১/৩৫৪)।
[167] আহমদ: (৫/১৫৯), আবু দাউদ, হাদীস নং ১৩৭৫; নাসাঈ, হাদীস নং ১৬০৫; তিরমিযী, হাদীস নং ৮০৬; ইবন মাজাহ, হাদীস নং ১৩২৭।
[168] দেখুন: ‘আশ-শারহুল মুমতি’ লিল আল্লামা ইবন উসাইমিন: (৪/৮২)।
[169] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৯৯০; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭৪৯।
[170] দেখুন: তিরমিযী: (৩/১৬১); আল-মুগনি লি ইবন কুদামাহ: (২/৬০৪); ফাতওয়া ইবন তাইমিয়া: (২৩/১১২-১১৩) ও সুবুলুস সালাম লিস সান‘আনি: (৩/২০-২৩)।
[171] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭৬৪।
[172] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১১৪৭; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭৩৮।
[173] দেখুন: আশ-শারহুল মুমতি লি ইবন উসাইমিন: (৪/৭২)।
[174] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৯৯০; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭৪৯।
[175] দেখুন: ফতোয়াল ইমাম ইবন বায: (১১/৩২০-৩২৪)।
[176] আবু দাউদ, হাদীস নং ১৪২২; নাসাঈ, হাদীস নং ১৭১২; ইবন মাজাহ, হাদীস নং ১১৯০, আলবানী হাদীসটি সহীহ বলেছেন। দেখুন: সহীহ আবু দাউদ: (১/২৬৭)।
[177] তিরমিযী, হাদীস নং ৪৫৪; নাসাঈ, হাদীস নং ১৬৭৭), হাকেম: (১/৩০০; আহমদ: (১/১৪৮), আলবানী হাদীসটি সহীহ বলেছেন। দেখুন: সহীহ সুনান নাসাঈ: (১/৩৬৮)।
[178] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৪৬, ১৮১৯; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১।
[179] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৪৩৪৭; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৯।
[180] ইমাম আবু হানিফা রহ. হাদীসের বাহ্যিক অর্থ থেকে বিতর ওয়াজিব বলেছেন, কিন্তু অন্যান্য হাদীস থেকে বুঝা যায় বিতর ওয়াজিব নয়। দেখুন: নাইলুল আওতার লিশ শাওকানি: (২/২০৫-২০৬), শাইল ইসলাম ইবন তাইমিয়া রহ. গ্রহণ করেছেন যে, রাতে যে তাহাজ্জুদ পড়ে তার ওপর বিতর ওয়াজিব। “যারা বিতর ওয়াজিব বলেন, তাদের কেউ এ অভিমত পেশ করেছেন” দেখুন: ইখতিয়ারাতুল ফিকইয়াহ লি শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়াহ লিল বা’লি: (পৃ. ৯৬)।
[181] দেখুন: যাদুল মা‘দ লি ইবন কাইয়ূম: (১/৩১৫); আল-মুগনি লি ইবন কুদামাহ: (৩/১৯৬) ও (২/২৪০)।
[182] আবু দাউদ, হাদীস নং ১৪১৮; সুনান তিরমিযী, হাদীস নং ৪৫২; ইবন মাজাহ, হাদীস নং ১১৬৮; হাকেম: (১/৩০৬), হাকেম হাদীসটি সহীহ বলেছেন, ইমাম যাহাব তার সমর্থন করেছেন। ইমাম আহমদের মুসনাদে এ হাদীসের একটি শাহেদ রয়েছে: (১/১৪৮), আলবানী এ হাদীসটি সহীহ বলেছেন, তবে «هي خير لكم من حمر النعم» এ অংশটি তার নিকট সহীহ নয় দেখুন: ইরওয়াউল গালিল: (২/১৫৬)
[183] নাসাঈ, হাদীস নং ১৬৭৬; তিরমিযী, হাদীস নং ৪৫৩; আবু দাউদ, হাদীস নং ১৪১৬; ইবন মাজাহ, হাদীস নং ১১৬৯; আহমদ: (১/৮৬), আলবানী হাদীসটি সহীহ বলেছেন। দেখুন: সুনান ইবন মাজাহ: (১/১৯৩)।
[184] বুলুগুল মারামের: (৪০৫) নং হাদীসের ব্যাখ্যার সময় আমি তা শ্রবণ করেছি।
[185] আহমদ: (৬/৩৯৭), (২/১৮০, ২০৬, ২০৮), আলবানী হাদীসটি সহীহ বলেছেন দেখুন: ইরওয়াউল গালিল: (২/২৫৮), আমি বলছি: মুয়ায ইবন জাবাল রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে এ হাদীসের একটি শাহেদ রয়েছে মুসনাদে আহমদে: (৫/২০৮)।
[186] দেখুন: ‘আল-মুগনি’ লি ইবন কুদামাহ: (২/৫৯৫); ‘হাশিয়াতুর রওদুল মুরবি’ লি ইবন কাসেম: (২/১৮৪), আমি শাইখ আব্দুল আযিয ইবন বায রহ.-কে বলতে শুনেছি, তিনি ‘রওদুল মুরবি’: (২/১৮৪) গ্রন্থের ব্যাখ্যার সময় বলেছেন: “বিতরের সময় আরম্ভ হয় এশার সালাতের পর, যদিও মাগরিবের সাথে এশা আদায় করা হয়, ফজর উদিত পর্যন্ত বাকি থাকে” দেখুন: শারহুল মুমতি লি ইবন উসাইমিন: (৩/১৫)।
[187] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭৩৬।
[188] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭৫০।
[189] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭৫০।
[190] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৯৯০; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭৪৯।
[191] সহীহ ইবন হিব্বান: (৬/১৬৮), হাদীস নং (২৪০৮); সহীহ ইবন খুজাইমাহ: (২/১৪৮), হাদীস নং (১০৯২); হাকেম: (১/৩০১-৩০২), হাকেম হাদীসটি সহীহ বলেছেন, ইমাম যাহাবী তার সমর্থন করেছেন। বায়হাকি: (২/৪৭৮), আলবানী সহীহ ইবন খুজাইমার টিকায় এ হাদীসের সনদ সহীহ বলেছেন দেখুন: ইবন খুজাইমাহ: (২/১৪৮), এ হাদীসটি শুআইব আল-আরনাউত সহীহ বলেছেন দেখুন: তাখরিজ সহীহ ইবন হিব্বান: (৬/১৬৯)।
[192] তিরমিযী, হাদীস নং ৪৬৯, আলবানী হাদীসটি সহীহ বলেছেন দেখুন: সহীহ তিরমিযী: (১/১৪৬) ও ইরওয়াউল গালিল: (২/১৫৪)।
[193] সুনান তিরমিযী: (২/৩৩৩), অপর হাদীস নং (৪৬৯)।
[194] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৯৯৬; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭৪৫।
[195] এর দ্বারা তাদের প্রতিবাদ করা উদ্দেশ্য, যারা বলেছে ফজরের পর বেতর আদায় করা বৈধ, যেমন আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস, উবাদাহ ইবন সামেত, কাসেম ইবন মুহাম্মদ, আব্দুল্লাহ ইবন আমের ইবন রাবিআহ ও আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ প্রমুখ। তারা ফজরের পর বিতর আদায় করতেন, যদি ফজরের আগে তাদের বিতর ছুটে যেত। তারা বিতর পড়ে ফজর পড়তেন। দেখুন: মুয়াত্তা ইমাম মালেক: (২/১২৬)। আলী ও আবু দারদা প্রমুখদের থেকে অনুরূপ রয়েছে। দেখুন: মুসান্নাফ ইবন আবি শায়বাহ: (২/২৮৬); মুসনাদে আহমদ: (৬/২৪২-২২৩); ইরওয়াউল গালিল: (২/১৫৫); শারহুল মুমতি লি ইবন উসাইমিন: (৩/১৭); মজমু‘ ফাতওয়া ইবন বায: (১১/৩০৫-৩০৮)। ইমাম মালেক মুয়াত্তাতে বলেছেন তারা এ ক্ষেত্রে মাযূর ও ওজরগ্রস্ত: “বাদ ফজর সেই বিতর পড়বে, যে বিতর না পড়ে ঘুমিয়েছে, তবে ইচ্ছাকৃত কেউ ঘুমাবে না, যেন ফজরের পর বিতর পড়তে না হয়”। মুয়াত্তা: (২/১২৭); জামেউল উসূল: (৬/৫৯-৬১)। ইবন উসাইমীন বলেছেন: “যদি ফজর উদিত হয়, তাহলে কোনো বিতর নেই। আর কতক পূর্বসূরী থেকে যে রয়েছে, তারা ফজরের আযান ও ফজর সালাতের মধ্যবর্তী সময়ে বিতর পড়তেন, তা সুন্নাতের দাবির পরিন্থী, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণীর পর কারো কথা শ্রবণ যোগ্য নয়” আশ-শারহুল মুমতি: (৩/১৬)।
[196] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৯৮১। ব্রাকেটের মধ্যবর্তী অংশ ‘আতরাফ হাদীস’ থেকে সংগৃহীত, নং ১১৭৮; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭২১।
[197] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭২২।
[198] ফাতহুল বারি: (৩/৫৭)।
[199] ইবন মাজাহ, হাদীস নং ১২০২, আলবানী হাদীসটি সহীহ বলেছেন। দেখুন: সহীহ ইবন মাজাহ: (১/১৯৮)।
[200] আবু দাউদ, হাদীস নং ১৪৩৪, আলবানী হাদীসটি সহীহ বলেছেন। দেখুন: সহীহ সুনান আবু দাউদ: (১/২৬৮)।
[201] অর্থাৎ এ সময় রহমতের ফিরিশতা উপস্থিত হন এ থেকে শেষ রাতে বিতর ও অন্যান্য সালাত আদায়ের ফযীলত প্রমাণিত হয়। শারহুন নববী: (৬/২৮১)। কেউ বলেছেন: দিন-রাতের ফিরিশতাগণ উপস্থিত হন, এক দল আসে ও অপর দল প্রস্থান করে। ‘জামেউল উসূল’ লি ইবন আসির: (৬/৫৮)।
[202] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭৫।
[203] শারহুন নববী আলা সহিহে সহীহ মুসলিম: (৬/২৮১)।
[204] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১১৪৫, দেখুন তার আতরাফ: ৬৩২১ ও ৭৪৯৪ নং হাদীস। সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭৫৮।
[205] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৬৯-৭৫৮।
[206] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৭০-৭৫৮।
[207] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭৩৬।
[208] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৯৯২, ১১৭, ১৩৭, ৬৩১৬; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৮২-৭৬৩।
[209] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭৬৪।
[210] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭৬৫।
[211] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭৩৭।
[212] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭৪৬।
[213] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭৪৬।
[214] নাসাঈ, হাদীস নং ১৭১৮, আলবানী হাদীসটি সহীহ বলেছেন। দেখুন: সহীহ নাসাঈ: (১/৩৭৫)। ইমাম ইবন মাজাহ ও ইমাম আহমদ: (৬/২৯০) উম্মে সালামা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে নিম্নের শব্দে বর্ণনা করেছেন:
«كان رسول الله صلى الله عليه وسلم يوتر بسبع أو بخمس لا يفصل بينهن بسلام ولا كلام»
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাত অথবা পাঁচ রাকাত দ্বারা বেতর পড়তেন, সালাম ও কথার দ্বারা মাঝখানে বিচ্ছেদ করতেন না”। সুনান ইবন মাজাহ, হাদীস নং ১১৯২, আলবানী হাদীসটি সহীহ বলেছেন। দেখুন: সহীহ সুনান ইবন মাজাহ: (১/১৯৭)।
[215] ইবন হিব্বান: (২৪৪১), শুআইব আরনাউত ইবন হিব্বানের টিকায়: (৬/১৯৫) বলেছেন: “এ সনদটি বুখারি ও মুসলিমের শর্ত মোতাবেক। আহমদ অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন: (৬/৫৪)।
[216] আবু দাউদ, হাদীস নং ১৪২২; নাসাঈ, হাদীস নং ১৭১২; ইবন মাজাহ, হাদীস নং ১১৯২; ইবন হিব্বান, হাদীস নং ৬৭০; হাকেম: (১/৩০২-৩০৩)।
[217] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭৩৭।
[218] ইবন হিব্বান, হাদীস নং ২৪৩৩, ২৪৩৪, ২৪৩৫; আহমদ: (২/৭৬) ইতাব ইবন যিয়াদ থেকে বর্ণনা করেছেন। হাফিয ইবন হাজার বলেছেন: “এর সনদ শক্তিশালী”। ফাতহুল বারি: (২/৪৮২), আলবানী বলেছেন: আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে এর একটি ‘মরফূ’ ‘শাহেদ’ রয়েছে: “নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক রাকাত দ্বারা বিতর পড়তেন, তিনি দু’রাকাত ও এক রাকাতের মাঝে কথা বলতেন”। এ সনদটি সহীহ বুখারী ও মুসলিমের শর্ত মোতাবেক”। তিনি এর সূত্র হিসেবে ইবন শায়বাহ উল্লেখ করেছেন। দেখুন: ইরওয়াউল গালিল: (২/১৫০)।
[219] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৯৯১; মুয়াত্তা ইমাম মালেক: (১/১২৫)।
[220] ‘রওদুল মুরিব’: (২/১৮৭) গ্রন্থের ব্যাখ্যার সময় আমি তা শুনেছি, তারিখ: ১৫/১১/১৪২২হি.।
[221] আবু দাউদ, হাদীস নং ১৪২২; নাসাঈ, হাদীস নং ১৭১২; ইবন মাজাহ, হাদীস নং ১১৯২; ইবন হিব্বান, হাদীস নং ৬৭; হাকেম: (১/৩০২)।
[222] নাসাঈ, হাদীস নং ১৭০১, আলবানী হাদীসটি সহীহ বলেছেন। দেখুন: সহীহ সুনান নাসাঈ: (১/৩৭২)। আরো দেখুন: নাইলুল আওতার: (২/২১১), ফাতহুল বারি: (২/৪৮১), ফাতহুল বারিতে এর অনেক শাহেদ রয়েছে। নাইলুল আওতার: (২/২১২)।
[223] আমি শাইখ আব্দুল আযিয ইবন বায রহ. থেকে শুনেছি, তিনি ‘রওদুল মুরবি’: (২/১৮৮) গ্রন্থের ব্যাখ্যায় এক সালামে তিন রাকাত পড়ার আলোচনায় বলেছেন: “কিন্তু মাগরিবের সাথে মিল করবে না, বরং লাগাতার পড়বে”। অর্থাৎ বিনা বৈঠকে।
[224] দেখুন: শারহুল মুমতি লি ইবন উসাইমিন: (৪/২১)।
[225] ইবন হিব্বান, হাদীস নং ২৪২৯; দারাকুতনি: (২/২৪); বায়হাকি: (৩/৩১); হাকেম: (১/৩০৪), হাকেম হাদীসটি সহীহ বলেছেন, ইমাম যাহাবী তার সমর্থন করেছেন। হাফিয ইবন হাজার ফাতহুল বারি: (২/৪৮১) গ্রন্থে বলেছেন: “এর সনদ বুখারী ও মুসলিমের শর্ত মোতাবেক”। তালখিসুল হাবিরে বলেছেন: সবার সনদ নির্ভরযোগ্য, তাই কারো মওকুফ বর্ণনার ফলে সমস্যা নেই। তাখিসুল হাবির: (২/১৪), হাদীস নং (৫১১)।
[226] দেখুন: ফাতহুল বারী: (২/৪৮১); নাইলুল আওতার: (২/২১৪)।
[227] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৯৯৩; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭৪৯।
[228] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭৫২।
[229] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭৫৩।
[230] শারহুন নববী: (৬/২৭৭)।
[231] রওদুল মুরবি: (২/১৮৫) গ্রন্থের ব্যাখ্যার সময় শুনেছি।
[232] আবু দাউদ, হাদীস নং ১৪২২; নাসাঈ, হাদীস নং ১৭১২; ইবন মাজাহ, হাদীস নং ১১৯০।
[233] তিরমিযী, হাদীস নং ৪৬২; নাসাঈ, হাদীস নং ১৭০২; ইবন মাজাহ, হাদীস নং ১১৭২, আলবানী হাদীসটি সহীহ বলেছেন। দেখুন: সহীহ সুনান নাসাঈ: (১/৩৭২); সহীহ ইবন মাজাহ: (১/১৯৩); সহীহ সুনান তিরমিযী: (১/১৪৪)।
[234] সুনান তিরমিযী: (২/৩২৬), এ হাদীসটি আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণনা করেছেন। তিরমিযী, হাদীস নং ৪৬৩; আবু দাউদ, হাদীস নং ১৪২৪ ও ইবন মাজাহ, হাদীস নং ১১৭৩। “তাকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন সূরা দ্বারা বিতর আদায় করতেন? তিনি বলেন: প্রথম রাকাতে সূরা আলা, দ্বিতীয় রাকাতে সূরা কাফিরূন ও তৃতীয় রাকাতে সূরা ইখলাস এবং সূরা নাস ও ফালাক পাঠ করতেন। অনেকে এ হাদীসটি দুর্বল বলেছেন। দেখুন: নাইলুল আওতার: (২/২১১-২১২), আলবানী হাদীসটি সহীহ বলেছেন। দেখুন: সহীহ সুনান আবু দাউদ: (১/২৬৭); সহীহ সুনান তিরমিযী: (১/১৪৪), সহীহ ইবন মাজাহ: (১/১৯৩), তিরমিযি বলেছেন: “সাহাবী ও তাদের পরবর্তী অনেক আলিম যা গ্রহণ করেছেন তা হচ্ছে, সূরা আলা, সূরা কাফিরূন ও সূরা ইখলাস পাঠ করা, প্রত্যেক রাকাতে একটি করে সূরা পড়া তিরমিযী: (২/৩২৬), আমি শাইখ আব্দুল আযীয ইবন বায রহ.-কে ‘বুলুগুল মারামের’ (৪০৯) নং হাদীসের ব্যাখ্যায় বলতে শুনেছি: “সূরা ফালাক ও নাসের বৃদ্ধি দুর্বল। বিশুদ্ধ বর্ণনা হচ্ছে: সূরা ইখলাস পড়া। যদি আয়েশার হাদীস বিশুদ্ধ সনদে প্রমাণিত হয়, তাহলে কখনো এটা, কখনো ওটা পড়া” আমি বলছি: এ হাদীসটি হাকেম বর্ণনা করে সহীহ বলেছেন, আর ইমাম যাহাভি তার সমর্থন করেছেন। হাকেম: (১/৩০৫), শুআইব আরনউত রহ. জামেউল উসূলের টিকায় বলেছেন: “হাকেম ও যাহাবী যথার্থ বলেছেন”। ‘সুবুলুস সালামে’র গবেষক বলেছেন: হাফেয ইবন হাজার নাতায়েজুল আফকার’: (১/৫১৩-৫১৪) গ্রন্থে বলেছেন: “এ হাদীসটি হাসান”। সুবুলুস সালাম: (৩/৫৪)।
[235] কুনুতের একাধিক অর্থ রয়েছে: এখানে উদ্দেশ্য সালাতের বিশেষ স্থানে কিয়ামের সময় দো‘আ করা। দেখুন: ফাতহুল বারি: (২/৪৯০-৪৯১), শারহুল মুমতি: (৪/২৪)
[236] আহমদ: (১/১৯৯); আবু দাউদ, হাদীস নং ১৪২৫; নাসাঈ, হাদীস নং ১৭৪৫, ৭৪৬; তিরমিযী, হাদীস নং ৪৬৪; ইবন মাজাহ, হাদীস নং ১১৭৯, আলবানী হাদীসটি সহীহ বলেছেন। দেখুন: ইরওয়াউল গালিল: (২/১৭২), হাদীস নং (৪৪৯)।
[237] ব্রাকেটের শব্দ বাড়িয়েছেন তাবরানি রহ. দেখুন: তাবরানি ফিল মুজামিল কাবির: (৩/৭৩), হাদীস নং ১৭০১, ২৭০৩, ২৭০৪, ২৭০৫, ২৭০৭; বায়হাকি ফি সুনানিল কুবরা: (২/২০৯), হাফেয ইবন হাজার বলেছেন: “এ অতিরিক্ত হাদীস দ্বারা প্রমাণিত”। অতঃপর তিনি প্রমাণ করেছেন এটা মুত্তাসিল সনদ দ্বারা সাব্যস্ত। ইমাম নববী রহ. এ অতিরিক্তকে দুর্বল বলেছেন, তিনি তার প্রতিবাদ করেছেন। দেখুন: তালখিসুল হাবির: (১/২৪৯), হাদীস নং (৩৭১)। আরো দেখুন: নাইলুল আওতার লি শাওকানি: (২/২২৪), ‘ইরওয়াউল গালিল’ লিল আলবানী: (২/১৭২)।
[238] ব্রাকেটের অতিরিক্ত ইমাম তিরমিয বৃদ্ধি করেছেন, হাদীস নং ৪৬৪।
[239] আহমদ: (১/৯৬); নাসাঈ, হাদীস নং ১৭৪৭; আবু দাউদ, হাদীস নং ১৪২৭; তিরমিযী, হাদীস নং ৩৫৬৬; ইবন মাজাহ, হাদীস নং ১১৭৯, আলবানী হাদীসটি সহীহ বলেছেন। দেখুন: ইরওয়াউল গালিল: (২/১৭৫), হাদীস নং (৪৩০)।
[240] আল্লামা আলবানী রহ. বলেছেন: “দো‘আ কুনুতের পর সাহাবীদের আমল থেকে দুরূদ প্রমাণিত। দেখুন: ইরওয়াউল গালিল: (২/১৭৭)।
[241] শায়খুল ইসলাম ইবন তাইমিয়া রহ. বলেছেন: “কুনুতের ব্যাপারে মানুষ দু’ভাগে বিভক্ত, অপর ভাগ আছে মধ্যপন্থা অবলম্বনকারী: তাদের কেউ বলেন রুকুর পূর্ব ব্যতীত কুনুত বৈধ নয়। কেউ বলেন: রুকুর পর ব্যতীত কুনুত বৈধ নয়। আর ফিকাহবিদ আহলে হাদীসগণ, যেমন আহমদ প্রমুখ বলেন: উভয় বৈধ। কারণ, উভয় পক্ষে সহীহ হাদীস বিদ্যমান, যদিও তারা রুকুর পরে কুনুতকে বেশি প্রাধান্য দিয়েছেন। কারণ, এ ব্যাপারে হাদীস বেশি ও তা কিয়াস মোতাবেক”। ফাতওয়া ইবন তাইমিয়া: (২৩/১০০)।
আমি শাইখ আব্দুল আযিয ইবন বায রহ.-কে ‘রওদুল মুরবি’: (২/১৮৯) গ্রন্থের ব্যাখ্যার সময় বলতে শুনেছি: “শেষ রাকাতে রুকুর পর কুনুত পড়বে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে প্রমাণিত মুসিবতের সময় তিনি রুকুর পর কুনুত পড়েছেন। রুকুর পূর্বেও কুনুত পড়া প্রমাণিত। উভয় বৈধ, এ ব্যাপারে কোনো সংকীর্ণতা নেই; কিন্তু বিশুদ্ধ ও উত্তম হচ্ছে রুকুর পর কুনুত পড়া। কারণ, হাদীসে এর উল্লেখ বেশি”। ইবন কুদামাহ উল্লেখ করেছেন: “চার খলিফা থেকে অনুরূপ বর্ণনা করা হয়েছে। ইমাম আহমদ থেকে বর্ণনা করা হয়েছে: তার মতে রুকুর পর কুনুত পড়বে, তবে তার পূর্বে পড়লে কোনো সমস্যা নেই। আল-মুগনি: (২/৫৮১-৫৮২)। আরো দেখুন: যাদুল মায়াদ: (১/২৮২); ফাতহুল বারি: (২/৪৯১)।
[242] কেউ বলেছেন পুরো বছর কুনুত পড়া সুন্নাত। আর কেউ বলেছেন: শুধু রমযানের শেষ অর্ধেকে কুনুত পড়া সুন্নাত আর কেউ বলেছেন: কখনো কুনুত পড়া সুন্নাত নয়। ইমাম আহমদের অধিকাংশ সাথীগণ প্রথম মত গ্রহণ করেছেন। দেখুন: আল-মুগনি: (২/৫৮০-৫৮১); নাইলুল আওতার: (২/২২৬); শারহুন নববী আলা সহীহ মুসলিম: (৫/১৮৩), শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়াহ রহ. বলেছেন: “বিতর সালাতে কুনুত পড়া জায়েয, জরুরি নয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবিদের মধ্যে কেউ কুনুত পড়েননি, কেউ রমযানের শেষ অর্ধেকে কুনুত পড়েছেন, আবার কেউ পুরো বছর কুনুত পড়েছেন। আলিমদের মধ্যে কেউ প্রথম মত মুস্তাহাব বলেছেন, যেমন ইমাম মালেক। কেউ দ্বিতীয় মত মুস্তাহাব বলেছেন, যেমন ইমাম শাফি ও আহমদের এক বর্ণনা। কেউ তৃতীয় মত মুস্তাহাব বলেছেন, যেমন ইমাম আবু হানিফা ও ইমাম আহমদের এক বর্ণনা সব পদ্ধতি বৈধ, এর কোনো একটি গ্রহণকারী তিরষ্কারের উপযুক্ত হবে না”। ফাতওয়া: (২৩/৯৯)। আরো দেখুন: আল-মুগনি: (২/৫৮০); নাইলুল আওতার: (২/২২৬)।
[243] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১০০২; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৬৭৭।
[244] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৬৭৫।
[245] আবু দাউদ, হাদীস নং ১৪৪৩; হাকেম: (১/২২৫), বায়হাকি, আলবানী রহ. বায়হাকির সনদকে সহীহ সুনান আবু দাউদে: (১/২৭০) হাসান বলেছেন। তিনি উল্লেখ করেছেন: রুকুর পর কুনুত পড়া আবু বকর, উমার ও উসমান থেকে হাসান সনদে প্রমাণিত। দেখুন: ইরওয়াউল গালিল: (২/১৬৪)।
[246] আবু দাউদ, হাদীস নং ১৪২৭; ইবন মাজাহ, হাদীস নং ১১৮২, আলবানী তার সনদ হাসান বলেছেন। দেখুন: সহীহ ইবন মাজাহ: (১/১৯৫), ইরওয়াউল গালিল: (২/১৬৭), হাদীস নং (৪২৬); সহীহ সুনান আবু দাইদ: (১/২৬৮)।
[247] ইবন মাজাহ, হাদীস নং ১১৮৩, আলবানী হাদীসটি সহীহ বলেছেন। দেখুন: সহীহ ইবন মাজাহ১: (১/১৯৫); ইরওয়াউল গালিল: (২/১৬০)।
[248] আবু দাউদ, হাদীস নং ১৪৮৮; তিরমিযী, হাদীস নং ৩৫৫৬;ইবন মাজাহ, হাদীস নং ৩৮৬৫; বগভি ফি শারহুস সুন্নাহ: (৫/১৮৫, আলবানী হাদীসটি সহীহ বলেছেন। দেখুন: সহীহ সুনান তিরমিযী: (৩/১৬৯)।
[249] বায়হাকি: (২/২১২), তিনি বলেছেন: এ হাদীসটি উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে সহীহ।
[250] বায়হাকি: (২/২১১), আল-বান্না বলেছেন: “আল-বায়ান গ্রন্থের লেখক বলেছেন: “এটা আমাদের অধিকাংশ সাথীদের কথা। আমাদের সাথীদের মধ্যে ইমাম হাফিয আবু বকর বায়হাকি ফিকাহ ও হাদীসের মধ্যে সমন্বয় করার জন্য এটাকে গ্রহণ করেছেন। কারণ, তিনি এ হাদীসটি সহীহ অথবা হাসান সনদে আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেছেন”। অর্থৎ পূর্বের হাদীস। দেখুন: ‘ফাতহুর রাব্বানি মা‘আ বুলুগুল আমানি’।
[251] সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকি: (২/২১১)। দেখুন: আল-মুগনি: (২/৫৮৪),; আশ-শারহুল মুমতি: (৪/২৬); শারহুন নববী আলা সহীহ মুসলিম: (৫/৮৩)।
[252] আবু দাউদ, হাদীস নং ১৪৪৩।
[253] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৯৯৮; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭৫১।
[254] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৫২-৭৫১।
[255] নাসাঈ, হাদীস নং ১৬৯৯; আবু দাউদ, হাদীস নং ১৪৩০; দারাকুতনি: (২/৩১), ব্রাকেটের অংশ দারাকুতনি থেকে সংগৃহীত। আলবানী এ অংশ সহীহ বলেছেন। দেখুন: সহীহ সুনান নাসাঈ: (১/২৭২)।
[256] আবু দাউদ, হাদীস নং ১৪৩৯; তিরমিযী, হাদীস নং ৪৭০; নাসাঈ, হাদীস নং ১৬৭৯; আহমদ: (৪/২৩); ইবন হিব্বান: (৪/৭৪), হাদীস নং ২৪৪। আলবানী হাদীসটি সহীহ বলেছেন। দেখুন: সহীহ তিরমিযী: (১/১৪৬)।
[257] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭৩৮।
[258] দেখুন: আল-মুগনি: (২/৫৯৮), আমি শাইখ আব্দুল আযীয ইবন বায রহ.-কে ‘বুলুগুল মারামের’ (৪০৭) নং হাদীসের ব্যাখ্যার সময় বলতে শুনেছি: “শেষ রাতে বিতর পড়া সুন্নাত; কিন্তু কেউ যদি প্রথম রাতে বিতর পড়ে, তাহলে শেষ রাতে তা পড়বে না। কারণ, হাদীসে এসেছে: “এক রাতে দু’বার বিতর নেই”। আর যারা বিতর ভঙ্গ করার কথা বলেন, তাদের কথার অর্থ হচ্ছে তিনবার বিতর পড়া। তবে বিশুদ্ধ অভিমত হচ্ছে যখন কেউ প্রথম রাতে বিতর পড়ে, অতঃপর শেষ রাতেও সালাত আদায় করে, তাহলে সালাত আদায় করবে কিন্তু বিতর পড়বে না, বরং প্রথম রাতের বিতরকে যথেষ্ট করবে”। দেখুন: তার মজমু‘ ফাতওয়া: (১১/৩১০-৩১১)।
[259] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৯৯৭; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭৪৪।
[260] শারহুন নববী আলা সহীহ মুসলিম: (২/২৭০), দেখুন: ফাতহুল বারি: (২/৪৮৭)।
[261] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭৪৬।
[262] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭৪৭।
[263] আবু দাউদ, হাদীস নং ১৪৩১), ইবন মাজাহ, হাদীস নং ১১৮৮; তিরমিযী, হাদীস নং ৪৬৫), তিরমিযির বর্ণিত শব্দ: «فليصلِّ إذا ذكر وإذا استيقظ» “সে যেন পড়ে নেয় যখন স্মরণ করে ও যখন জাগ্রত হয়”। হাকেম: (১/৩০২), হাকেমের বর্ণিত শব্দ তিরমিযির শব্দের অনুরূপ। হাদীসটি হাকেম সহীহ বলেছেন, ইমাম যাহাভি তার সমর্থন করেছেন। আহমদ: (৩/৪৪), তার শব্দ: «إذا ذكرها أو إذا أصبح» “যখন তা স্মরণ করে অথবা যখন ভোর করে”। আলবানী আহমদের হাদীস সহীহ বলেছেন। দেখুন: ইরওয়াউল গালিল: (২/১৫৩), আমি শাইখ আব্দুল আযিয ইবন বায রহ.-কে বলতে শুনেছি: “এ শব্দে এ হাদীস দুর্বল, আবু দাউদ এ হাদীসটি জায়্যেদ সনদে বর্ণনা করেছেন, কিন্তু সেখানে إذا أصبح শব্দ নেই। আবু দাউদের বর্ণনা বিশুদ্ধ বলা যায়। তাই উত্তম হচ্ছে কাযা করবে ঠিক, কিন্তু জোড় রাকাত আদায় করবে। সহীহ হাদীসে আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন: “রাসূলুল্লাহ যদি ঘুম অথবা অসুস্থতার কারণে বিতর না পড়তেন, তাহলে দিনে বারো রাকাত সালাত আদায় করতেন”। বুলুগুল মারামের: (৪১২) নং হাদীসের ব্যাখ্যার সময় আমি তার এ বক্তব্য শ্রবণ করেছি।