তা’লীমুল ইসলাম- ইসলাম শিক্ষা – ২য় ভাগ

দারুস সাআদাত গ্রন্থ

গ্রন্থঃ তালীমুল ইসলাম

লেখক, মুফতী কিফায়াতুল্লাহ (রহ)

অনুবাদঃ দারুস সাআদাত কর্তৃক অনূদিত

স্বত্বঃ দারুস সাআদাত কর্তৃক সংরক্ষিত, বিনানুমতিতে কপি করা, মূদ্রণ করা এবং এপে ব্যবহার করা আইনত দণ্ডনীয়।

তা’লীমুল ইসলাম বা ইসলাম শিক্ষা

উর্দু ভাষায় রচিত এবং মাদরাসাসমূহের পাঠ্য। প্রাথমিক ইসলাম শিক্ষা বিষয়ক সহজ ও পূর্ণাঙ্গ গ্রন্থ

بِسْمِ اللهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ

نَحْمَدُه وَنُصَلِّ عَلٰى رَسُوْلِهِ الْكَرِيْمِ

তা’লীমুল ইসলাম

২য় ভাগ

প্রশ্নঃ ইসলামের ভিত্তি কয়টি বিষয়ের উপর?

উত্তরঃ ইসলামের ভিত্তি পাচটি বিষয়ের উপর।

প্রশ্নঃ যে কয়টি জিনিসের উপর ইসলামের ভিত্তি সেই পাচটি বিষয় কি কি?

উত্তরঃ সে পাচটি বিষয় হলো

        ১. কালিমা তাইয়্যিবা বা কালিমা শাহাদাত এর অর্থ মন থেকে মেনে নেয়া এবং মুখ দ্বারা স্বীকার করা।

        ২. নামায পড়া।

        ৩. যাকাত প্রদান করা।

        ৪. রোযা রাখা এবং

৫. হজ করা।

প্রশ্নঃ কালিমা তাইয়্যিবা কি ও এর অর্থ কি?

উত্তরঃ কালিমা তাইয়্যিবা হলো-

لَا إِلَه إِلَّا الله مُحَمَّد رَسُول الله

লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ।

আর এর অর্থ হলো- আল্লাহ ব্যতীত কোন ইবাদতের উপযুক্ত কেউ নেই এবং মুহাম্মদ (সা) আল্লাহর প্রেরিত রাসূল।

প্রশ্নঃ কালিমা শাহাদাত কি ও এর অর্থ কি?

উত্তরঃ কালিমা শাহাদাত এটি-

أشهد أَن لَا إِلَه إِلَّا الله وَأشْهد أَن مُحَمَّدًا عَبده وَرَسُوله

আশহাদু আল-লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসূলুহু।

আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ব্যতীত ইবাদতের উপযুক্ত কেউ নাই।  আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মদ (সা) আল্লাহর বান্দা ও রাসূল।

প্রশ্নঃ অর্থ বুঝা ছাড়া কেউ যদি শুধু মুখে কালিমা উচ্চারণ করে নেয় তবে সে কি মুসলমান হয়ে যায়?

উত্তরঃ না বরং অর্থ বুঝে মন থেকে দৃঢ় বিশ্বাস করা এবং মুখে স্বীকার করা জরুরী।

প্রশ্নঃ মন থেকে  বিশ্বাস করা এবং মুখে স্বীকার করাকে কি বলে?

উত্তরঃ ইমান আনা বলে।

প্রশ্নঃ বোবা ব্যক্তি মুখে স্বীকার করতে পারে না। তাহলে তার ইমান আনা কিভাবে জানা যাবে?

উত্তরঃ প্রকৃতিগত অক্ষমতার কারণে তার জন্য ইশারা করে দেয়াই যথেষ্ট মনে করা হবে। অর্থাৎ সে ইশারা দিয়ে এটা প্রকাশ করবে যে, আল্লাহ এক এবং মুহাম্মদ (সা) আল্লাহর রাসূল।

প্রশ্নঃ মুসলমানদের কতগুলো বিষয়ের উপর ইমান আনা জরুরী?

উত্তরঃ সাতটি বিষয়ের উপর, যার বর্ণনা ইমানে মুফাসসালে আছে-

امَنْتُ بِاللهِ وَمَلئِكَتِه وَكُتُبِه وَرَسُوْلِه وَالْيَوْمِ الْاخِرِ وَالْقَدْرِ خَيْرِه وَشَرِّه مِنَ اللهِ تَعَالى وَالْبَعْثِ بَعْدَالْمَوْتِ

অর্থ: আমি ইমান আনলাম আল্লাহর প্রতি, তার ফেরেশতাদের প্রতি, তার কিতাবসমূহের প্রতি, তার রাসূলদের প্রতি, আখিরাতের প্রতি, তাকদীর বা ভাগ্যের ভাল-মন্দের প্রতি এবং মৃত্যুর পর পূণরুত্থানের প্রতি।

আল্লাহর ব্যাপারে মুসলমানদের আকিদা বা বিশ্বাস

প্রশ্নঃ আল্লাহর ব্যাপারে মুসলমানদের কি আকিদা রাখতে হবে?

উত্তরঃ ১. আল্লাহ তাআলা এক।

২. আল্লাহ তাআলাই একমাত্র ইবাদতের উপযুক্ত আর তিনি ছাড়া আর কেউ ইবাদতের উপযুক্ত নয়।

৩. তার কোন শরীক বা অংশীদার-সমকক্ষ নাই।

৪. তিনি সবকিছু জানেন তার জানার বাইরে কিছুই নাই।

৫. তিনি খুব শক্তি ও ক্ষমতার অধিকারী।

৬. তিনিই যমীন আসমান, চন্দ্র সূর্য নক্ষত্র, ফেরেশতা মানুষ জিন, মোটকথা সমস্ত জগৎকে সৃষ্টি করেছেন এবং তিনিই সমস্ত জগতের মালিক।

৭. তিনিই মৃত্যু দেন আর তিনিই জীবিত রাখেন। অর্থাৎ সৃষ্টজীবের জীবন-মৃত্যু তার নির্দেশেই হয়ে থাকে।

৮. তিনিই সমস্ত সৃষ্টজীবকে জীবিকা প্রদান করেন।

৯. তিনি পানাহার করেন না আর ঘুমানও না।

১০. তিনি নিজে থেকেই চিরদিন ছিলেন আর চিরদিন থাকবেন।

১১. তাকে কেউ সৃষ্টি করেনি।

১২. তার কোন পিতা নেই, পুত্র নেই, স্ত্রী নেই, কন্যা নেই। আর কারো সাথে তার কোন আত্মীয়তার সম্বন্ধ নেই। তিনি এই রকম সম্পর্ক থেকে পবিত্র।

১৩. সবাই তার মুখাপেক্ষী, তিনি কারো মুখাপেক্ষী নন আর তার কোনকিছুর প্রয়োজন নাই।

১৪. তিনি তুলনাহীন তার মত কিছু নেই।

১৫. তিনি সকল দোষ-ত্রুটি থেকে পবিত্র।

১৬. তিনি সৃষ্টজীবের মত হাত পা, নাক কান, চেহারা সুরত থেকে পবিত্র।

১৭. তিনি ফেরেশতাদেরকে সৃষ্টি করে দুনিয়ার ব্যবস্থাপনা এবং বিশেষ বিশেষ কাজ নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন।

১৮. তিনি তার মাখলুক বা সৃষ্টজীবের হিদায়াতের জন্য নবীদেরকে প্রেরণ করেছেন, যেন তারা তাদেরকে সঠিক দীন শিক্ষা দেন, কল্যাণের কথা বলেন এবং খারাপ ও মন্দ বিষয়াবলী থেকে রক্ষা করেন।

মালায়িকাহ বা ফেরেশতা

প্রশ্নঃ ফেরশেতা কে?

উত্তরঃ ফেরশেতারা নূরের তৈরি আল্লাহর এক মাখলুক। আমাদের দৃষ্টি থেকে অদৃশ্য। না পুরুষ না নারী। তারা আল্লাহর নাফরমানী ও গুনাহ করেন না। যাকে যে কাজে আল্লাহ নিয়োজিত করেছেন তিনি সেই কাজেই নিয়োজিত থাকেন।

প্রশ্নঃ ফেরশেতা কতজন?

উত্তর: ফেরেশতার সংখ্যা আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না। আমরা এতটুকু জানি যে, ফেরেশতা অসংখ্য। তার মধ্যে চারজন (আল্লাহর) নিকটতম ও প্রসিদ্ধ।

প্রশ্নঃ নিকটতম ও প্রসিদ্ধ ফেরেশতা কে কে?

উত্তরঃ ১. হযরত জিবরাইল (আ) যিনি আল্লাহ তাআলার কিতাব ও নির্দেশ নবীদের নিকট পৌছে দিতেন।

২. হযরত ইসরাফিল (আ) যিনি কিয়ামতের সময় শিঙ্গায় ফুক দিবেন।

৩. হযরত মিকাইল (আ) যিনি বৃষ্টি বর্ষণ ও মাখলুকের জবিকা পৌছানোর দায়িত্বে নিয়োজিত আছেন।

৪. হযরত আযরাইল (আ) যিনি মাখলুকের জান কবয করার কাজে নিয়োজিত আছেন।

আল্লাহ তাআলার কিতাবসমূহ

প্রশ্নঃ আল্লাহ তাআলার কিতাব কতগুলো?

উত্তরঃ আল্লাহ তাআলার ছোট বড় অনেক কিতাব নবীদের প্রতি নাযিল হয়েছে। তবে বড় কিতাবকে কিতাব আর ছোট কিতাবকে সহিফাহ বলে। এগুলোর মধ্যে চারটি কিতাব প্রসিদ্ধ।

প্রশ্নঃ প্রসিদ্ধ চারটি আসমানী কিতাব কোনগুলো আর কোন কোন নবীর উপর তা নাযিল হয়েছে?

উত্তরঃ ১.তাওরাত– হযরত মূসা (আ) এর প্রতি।

২.যাবূর- হযরত দাউদ (আ) এর প্রতি।

৩.ইঞ্জিল- হযরত ইসা (আ) এর প্রতি এবং

৪.কুরআন- হযরত মুহাম্মদ (সা) এর প্রতি নাযিল হয়েছে।

প্রশ্নঃ সহিফাহ কতগুলো আর কোন কোন নবীর উপর তা নাযিল হয়েছে?

উত্তরঃ সহিফার সংখ্যা জানা নাই। তবে কিছু সহিফাহ হযরত আদম (আ) এর প্রতি, কিছু সহিফাহ হযরত শীছ (আ) এর প্রতি আর কিছু সহিফাহ হযরত ইবরাহিম (আ)-এর প্রতি নাযিল হয়েছে। এছাড়া আরো বিভিন্ন নবীদের প্রতিও সহিফাহ নাযিল হয়েছে।

আল্লাহর রাসূল

প্রশ্নঃ রাসূল কে হন?

উত্তরঃ রাসূল আল্লাহর বান্দা ও মানুষ হন। আল্লাহ তাআলা তাদেরকে তার বান্দাদের প্রতি তার হুকুম-আহকাম পৌছে দেয়ার জন্য নির্ধারিত করেন। তারা সত্য হন কখনো মিথ্যা বলেন না। গুনাহ করেন না। আল্লাহর নির্দেশে মুজিযা (অলৌকিক কিছু) প্রদর্শন করেন। আল্লাহ তাআলার হুকুম-আহকাম পুরোপুরি পৌছে দেন, কমবেশী করেন না আর কিছু গোপনও করেন না।

প্রশ্নঃ নবী ও রাসূলের মধ্যে কোন পার্থক্য আছে নাকি উভয়ের অর্থ এক?

উত্তরঃ নবী ও রাসূলের মধ্যে সামান্য কিছু পার্থক্য আছে। আর তা হলো, রাসূল বলা হয় ঐ নবীকে যাকে নতুন শরীঅত ও কিতাব দেয়া হয়েছে। আর প্রত্যেক নবীকেই নবী বলা হয় চাই তাকে নতুন শরীঅত ও কিতাব দেওয়া হোক বা না হোক বরং পূর্ববতী শরীঅতের অনুসারী হোক।

প্রশ্নঃ কোন ব্যক্তি কি নিজের চেষ্টা ও ইবাদত দ্বারা নবী হতে পারে?

উত্তরঃ না, বরং আল্লাহ যাকে নবী বানান, সেই নবী হয়। অর্থাৎ নবী ও রাসূল হওয়ার জন্য কোন ব্যক্তির ইচ্ছা ও চেষ্টার কোন দখল নাই বরং এই মর্যাদা আল্লাহ তাআলার পক্ষ থকে প্রদান করা হয়।

প্রশ্নঃ রাসূল আর নবী কতজন?

উত্তরঃ দুনিয়াতে অসংখ্য নবী ও রাসূল অগমন করেছেন তবে তার সঠিক সংখ্যা একমাত্র আল্লাহ তাআলাই জানেন। আমাদের তোমাদের এভাবে ইমান আনা চাই যে, আল্লাহ তাআলা যত নবী পাঠিয়েছেন আমরা তাদের সবাইকে সত্য এবং রাসূল বলে বিশ্বাস করি।

প্রশ্নঃ সর্বপ্রথম নবী কে?

উত্তরঃ সর্বপ্রথম নবী হযরত আদম (আ)।

প্রশ্নঃ সর্বশেষ নবী কে?

উত্তরঃ সর্বশেষ নবী হযরত মুহাম্মদ মুস্তফা সাল্লাহু আলাইহ ওয়া সাল্লাম।

প্রশ্নঃ হযরত মুহাম্মদ (সা)-এর পরে আর কোন নবী আসবেন কি?

উত্তরঃ না, কেননা তার নবী হওয়া হযরত মুহাম্মদ (সা) এর মাধ্যমে শেষ হয়ে গেছে। তারপরে কিয়ামত পর্যন্ত কোন নবী আসবে না। তারপরে যদি কেউ নবী হওয়ার দাবি করে তবে সে মিথ্যুক।

প্রশ্নঃ রাসূলদের মধ্যে সবচেয়ে উত্তম রাসূল কে?

উত্তরঃ আমাদের নবী হযরত মুহাম্মদ (সা) সকল নবী ও  রাসূলদের মধ্যে সর্বোত্তম ও সম্মানিত। তিনিও আল্লাহর বান্দা ও তার অনুগত। তবে আল্লাহর পর তার মর্যাদা সব থেকে বেশী।

কিয়ামতের বর্ণনা

প্রশ্নঃ কোন দিনকে কিয়ামতের দিন বলে?

উত্তরঃ কিয়ামতের দিন ঐ দিনকে বলে, যেদিন সমস্ত মানুষ এবং প্রাণী মরে যাবে এবং দুনিয়া ধ্বংস হয়ে যাবে। পাহাড় তুলার মত উড়তে থাকবে, তারকা খসে পড়বে। মোট কথা সবকিছু চূর্ণ বিচূর্ণ হয়ে ধ্বংস হয়ে যাবে।

প্রশ্নঃ সমস্ত মানুষ ও প্রাণী কিভাবে মারা যাবে?

উত্তর: হযরত ইসরাফিল (আ) যখন শিঙ্গায় ফুৎকার দিবেন তখন তার আওয়ায এমন বিকট ও ভীতিকর হবে যে, তার আঘাতে সব মরে যাবে এবং সবকিছু চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে বিলীন হয়ে যাবে।

প্রশ্নঃ কিয়ামত কবে আসবে?

উত্তরঃ কিয়ামত আসবে, তবে তার সঠিক সময় আল্লাহ ব্যতীত আর কেউ জানে না। তবে এতটুকু আমরা জানি যে, শুক্রবার দিন মহররম মাসের দশ তারিখে কিয়ামত হবে। আমাদের নবী (সা) কিয়ামতের কিছু আলামত বা নিদর্শন বলেছেন, সেগুলো দেখে কিয়ামতের নিকটবর্তীতা অনুমান করা যায়।

প্রশ্নঃ কিয়ামতের আলামতগুলো কি কি?

উত্তরঃ রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন- ১.যখন দুনিয়াতে গুনাহ বেশী হতে থাকবে ২.মানুষ তার পিতা-মাতার নাফরমানী ও তাদের সাথে কঠোরতা করতে থাকবে। ৩.আমানতের খিয়ানত করা হবে। ৪.গান-বাজনা ও রঙ্গ-নাচ বেশী হতে থাকেব। ৫.পরবর্তী লোকেরা পূর্ববর্তীদেরকে মন্দ বলতে থাকবে। ৬.জ্ঞানহীন মূর্খ লোকেরা নেতা হয়ে যাবে। ৭.রাখাল বা নিম্ন লোকেরা যখন উঁচু উঁচু দালান-কোঠা নির্মাণ করতে থাকবে। ৮.অনুপযুক্ত লোকেরা যখন কোন পদ পেতে থাকবে।  তখন বুঝবে যে, কিয়ামত নিকটে এসে গেছে।

তাকদীর বা ভাগ্য

প্রশ্নঃ তাকদীর বা ভাগ্য কাকে বলে?

উত্তরঃ প্রত্যেক বিষয় এবং ভাল মন্দ সব ব্যাপারে আল্লাহর জ্ঞানে একটি ধারণা নির্দিষ্ট আছে আর প্রত্যেকটি বিষয় সৃষ্টি করার পূর্বে আল্লাহ তাআলা তা জানেন। আল্লাহর ঐ জ্ঞান ও ধারণাকে তাকদীর বা ভাগ্য বলে। ভাল মন্দ কোন বিষয়ই আল্লাহর জ্ঞানের বাহিরে না।

মৃত্যুর পর জীবিত হওয়া

প্রশ্নঃ মৃত্যুর পর জীবিত হওয়া দ্বারা কি উদ্দেশ্য?

উত্তরঃ কিয়ামতের দিন সবকিছু ধ্বংস হয়ে যাবে। অতঃপর ইসরাফিল (আ) ২য় বার শিঙ্গায় ফুৎকার দিবেন। তখন সবকিছু অস্তিত্ববান হয়ে যাবে। মানুষও জীবিত হয়ে যাবে। হাশরের ময়দানে আল্লাহর সামনে দণ্ডায়মান হতে হবে। হিশাব নিকাশ হবে এবং ভাল মন্দ সব কাজের বিনিময় দেওয়া হবে। যেদিন এগুলো হবে ঐ দিনকে ইয়াওমুল হাশর- একত্রিত হওয়ার দিন, ইয়াওমুল জাযা, ইয়াওমুদ্দীন- বিনিময় প্রদান করার দিন এবং ইয়াওমুল হিসাব- হিসাবের দিন বলা হয়।

প্রশ্নঃ ইমানে মুফাসসলে যে সাতটি বিষয়ের আলোচনা আছে, তন্মধ্যে যদি কেউ দুই একটি বিষয় না মানে, তবে সে কি মুসলমান হতে পারে?

উত্তরঃ কখনো নয়। যে পর্যন্ত আল্লাহ তাআলার তাওহীদ বা একত্ববাদ, নবীদের নুবুওয়াত, আল্লাহ তাআলার কিতাবসমূহ, তার ফেরেশতাসমূহ, কিয়ামতের দিন, তাকদীর এবং মৃত্যুর পর পূণরায় জীবিত হওয়াকে না মানবে, কখনো মুসলমান হতে পারবে না।

প্রশ্নঃ রাসূলুল্লাহ (সা) পাঁচটি বিষয়ের উপর ইসলামের ভিত্তি সাব্যস্ত করেছেন। আর তার মধ্যে ফেরেশতা, আল্লাহর কিতাবসমূহ, কিয়ামত, তাকদীর ইত্যাদির কোন কথা উল্লেখ নাই।

উত্তরঃ ঐ পাঁচটি বিষয়ের উপর হযরত মুহাম্মদ (সা) এর উপর ইমান আনার কথা আছে। আর যখন কোন ব্যক্তি হযরত মুহাম্মদ (সা) এর প্রতি ইমান আনবে তখন তার বলে দেয়া প্রতিটি কথা মান্য করা জরুরী হবে। আর আল্লাহ তাআলার কিতাব যা মুহাম্মদ (সা) এর প্রতি নাযিল হয়েছে তার প্রতি ইমান আনাও জরুরী হবে। এই সব কথা যা ইমানে মুফাসসালে আছে তা কুরআন মজীদ এবং নবী (সা) এর বাণী বা হাদীস দ্বারা প্রমাণিত।

প্রশ্নঃ ঐ সব বিষয় মন থেকে বিশ্বাস করে কিন্তু যদি নামায না পড়ে অথবা যাকাত না দেয় অথবা রোযা না রাখে অথবা হজ না করে, তবে সে মুসলমান কি না?

উত্তরঃ হ্যা, মুসলমান তো অবশ্যই তবে কঠিন গুনাহগার এবং আল্লাহর নাফরমান। এমন ব্যক্তিকে ফাসিক (পাপাসক্ত) বলে। এইসব লোক নিজেদের গুনাহর শাস্তি ভোগ করে পরে (পরকালে) মুক্তি পেয়ে যাবে।

তালীমুল ইসলাম

২য় খণ্ডের ২য় অংশ

তালীমুল আরকান বা ইসলামের আমলসমূহ

 

বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম

প্রশ্নঃ ইসলামী আমল দ্বারা কি উদ্দেশ্য?

উত্তরঃ যেই পাঁচটি বিষয়ের উপর ইসলামের ভিত্তি, সেগুলোর প্রথমটি হলো ইমান। যা তোমরা প্রথম অংশে ইসলামী আকায়েদ নামে পাঠ করেছ। বাকী চারটা বিষয় অর্থাৎ নামায, যাকাত, রোযা এবং বায়তুল্লাহর হজ করা- এগুলোকে ইসলামের আমল বলে। এই ২য় অংশে নামাযের আলোচনা করা হয়েছে।

 

নামায

প্রশ্নঃ নামায কাকে বলে?

উত্তরঃ নামায আল্লাহ তাআলার ইবাদত ও বন্দেগী করার এক বিশেষ পদ্ধতি যা আল্লাহ তাআলা ও তার রাসূল বান্দাদেরকে শিক্ষা দিয়েছেন।

প্রশ্নঃ নামায পড়ার পূর্বে কিসের প্রয়োজন হয়?

উত্তরঃ নামাযের পূর্বে সাতটি বিষয়ের প্রয়োজন হয়, যেগুলো ছাড়া নামায হয় না। এগুলোকে নামাযের শর্ত এবং ফরয বলে।

প্রশ্নঃ ঐ সাতটি বিষয় কি যা নামাযের পূর্বে প্রয়োজন হয়।

উত্তরঃ ১. শরীর পবিত্র হওয়া। ২. কাপড় পবিত্র হওয়া। ৩. জায়গা পবিত্র হওয়া। ৪. সতর (লজ্জাস্থান) ঢাকা । ৫. নামাযের সময় হওয়া। ৬. কিবলামুখী হওয়া। ৭. নিয়ত করা।

নামাযের প্রথম শর্তের আলোচনা

প্রশ্নঃ দেহ বা শরীর পবিত্র হওয়া দ্বারা কি উদ্দেশ্য ?

উত্তরঃ শরীর পবিত্র হওয়ার দ্বারা উদ্দেশ্য শরীরে কোন নাজাসাত অর্থাৎ মল মূত্র ও অপবত্রিতা না থাকা।

প্রশ্নঃ নাজাসাত বা অপবিত্রতা কত প্রকার?

উত্তরঃ নাজাত বা অপবিত্রতা দুই প্রকার। একটি হলো হাকীকি বা বস্তুগত আরেকটা হলো হুকমী বা নির্দেশগত নাজাসাত।

প্রশ্নঃ হাকীকি বা বস্তুগত নাজাসাত কাকে বলে?

উত্তরঃ প্রকাশ্য নাপাকী যা দেখা যায়, তাকে হাকীকি নাজাসাত বলে। যেমন প্রস্রাব, পায়খানা, মদ।

প্রশ্নঃ হুকমী বা নির্দেশগত নাজাসাত কাকে বলে?

উত্তরঃ এটা হলো ঐ নাপাকী যা শরীঅতের নির্দেশ দ্বারা বুঝা যায়, কিন্তু দেখা যায় না, তাকে নাজাসাতে হুকমী বলে। যেমন ওযুহীন অবস্থা বা গোসলের প্রয়োজন হওয়া।

প্রশ্নঃ নামাযের জন্য কি শরীর নাজাসাত বা অপবিত্রতা থেকে পবিত্র হওয়া শর্ত?

উত্তরঃ উভয় ধরণের নাজাসাত বা অপবিত্রতা থেকে শরীর পবিত্র হওয়া আবশ্যক।

প্রশ্নঃ নাজাসাতে হুকমী (নির্দেশগত নাপাকী) কত প্রকার?

উত্তরঃ দুই প্রকার।

১. নির্দেশগত ছোট নাপাকী- এটাকে হাদাসে আসগর বলে।

২. নির্দেশগত বড় নাপাকী। এটাকে হাদাসে আকবর এবং জানাবাত বলে।

প্রশ্নঃ নির্দেশগত ছোট নাপাকী থেকে শরীর পবিত্র করার পদ্ধতী কি?

উত্তরঃ ওযু করলে নির্দেশগত ছোট নাপাকী থেকে দেহ পবিত্র হয়।

ওযুর বর্ণনা

প্রশ্নঃ ওযু কাকে বলে?

উত্তরঃ ওযু হলো এটা যে, কোন মানুষ যখন নামায পড়ার ইচ্ছা করবে, তখন পবিত্র পাত্রে পবিত্র পানি নিয়ে প্রথমে হাতের কব্জি পর্যন্ত ধৌত করবে। অতঃপর তিনবার কুলি করবে। মিসওয়াক করবে (দাঁত ও মুখ পরিষ্কার করবে)। অতঃপর তিনবার নাকে পানি দিয়ে নাক পরিষ্কার করবে। অতঃপর তিনবার মুখ ধৌত করবে। অতঃপর কনুই পর্যন্ত তিনবার হাত ধৌত করবে। অতঃপর মাথা ও কান মাসেহ করবে (ভিজা হাত দ্বারা মুছবে)। অতঃপর উভয় পা টাখনু পর্যন্ত ধৌত করবে। ওযুর পদ্ধতি তোমরা তালীমুল ইসলাম প্রথম খণ্ডে পাঠ করেছ।

প্রশ্নঃ ওযুর মধ্যে এসব বিষয় কি জরুরী?

উত্তরঃ ওযুর মধ্যে কতক বিষয় আছে জরুরী যেগুলো ছুটে গেলে ওযু হয় না, ওগুলোকে ফরয বলে। আবার কতক বিষয় এমন আছে যেগুলো বাদ গেলে ওযু হয়ে যায় তবে ওযু পরিপূর্ণ হয় না, সেগুলোকে সুন্নত বলে। আবার কতক বিষয় এমন আছে যেগুলো করলে সওয়াব বেশী হয় আর ছুটে গেলে কোন অসুবিধা হয় না, ওগুলোকে মুস্তাহাব বলে।

প্রশ্নঃ ওযুতে ফরয কতগুলো?

উত্তরঃ ওযুতে ফরয চারটি।

১.কপালের চুল থেকে থুতনির নিচ পর্যন্ত এবং এক কাণের লতি হতে অপর কানের লতি পর্যন্ত সম্পূর্ণ মুখ ধৌতকরা।

২.উভয় হাত কনুই পর্যন্ত ধৌত করা।

৩.মাথার এক তৃতীয়াংশ মাসেহ করা।

৪.উভয় পা টাখনু পর্যন্ত ধৌত করা।

প্রশ্নঃ ওযুতে সুন্নত কতগুলো?

উত্তরঃ ওযুতে সুন্নত তেরটি।

১. নিয়ত করা। ২.বিসমিল্লাহ বলা। ৩.প্রথমে তিনবার কব্জি পর্যন্ত হাত ধৌত করা। ৪.মিসওয়াক করা. ৫.তিনবার কুলি করা। ৬.তিনবার নাকে পানি দেয়া। ৭.দাড়ি খেলাল করা। ৮.হাত পায়ের আঙ্গুলি খিলাল করা। ৯.প্রত্যেক অঙ্গ তিনবার ধৌত করা। ১০.একবার সম্পূর্ণ মাথা মাসেহ করা। অর্থাৎ ভিজা হাত মাথায় ফিরানো। ১১.উভয় কান মাসেহ করা। ১২.ধারাবাহিকভাবে ওযু করা। ১৩. বিরামহীনভাবে ওযু করা যাতে একটি অঙ্গ শুকানোর পূর্বেই আরেকটি অঙ্গ ধৌত করা হয়।

প্রশ্নঃ ওযুর মুস্তাহাব কয়টি?

উত্তরঃ ওযুর মুস্তাহাব পাঁচটি।

১.ডান দিক থেকে শুরু করা, কতক আলিম এটাকে সুন্নত বলেছেন আর এটিই দৃঢ় অভিমত। ২.গর্দান মাসেহ করা। ৩.নিজেই ওযু করা, অন্য কেউ ওযু করিয়ে না দেয়া। ৪.কিবলার দিকে মুখ করে বসা। ৫. উঁচু ও পবিত্র স্থানে বসে ওযু করা।

প্রশ্নঃ ওযুতে মাকরুহ বা অপছন্দনীয় বিষয় কি কি?

উত্তরঃ ওযুতে চারটি বিষয় মাকরুহ ।

১.অপবিত্র স্থানে ওযু করা। ২.ডান হাত দ্বারা নাক পরিষ্কার করা। ৩.ওযু করার সময় পার্থিব কথাবার্তা বলা। ৪.সুন্নতের বিপরীত ওযু করা।

প্রশ্নঃ কয়টি বিষয় দ্বারা ওযু ভেঙ্গে যায়?

উত্তরঃ আটটি কারণে ওযু ভঙ্গ হয়। এগুলোকে ওযু ভঙ্গের কারণ বলে।

১.পায়খানা, প্রস্রাব করা বা পায়খানা প্রস্রাবের পথ দিয়ে কিছু বের হওয়া।

২. বায়ু নির্গত হওয়া পিছনের পথ দিয়ে।

৩. শরীরের কোন স্থান হতে রক্ত বা পুঁজ বের হয়ে গড়িয়ে পড়া।

৪.মুখ ভরে বমি হওয়া।

৫. শুয়ে বা কোন কিছুর সাথে হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে যাওয়া।

৬.অসুস্থতা বা অন্য কোন কারণে বেহুশ হয়ে যাওয়া।

৭.পাগল হয়ে যাওয়া।

৮.নামাযেরর মধ্যে উচ্চ স্বরে হাসি দেয়া।

গোসলের বর্ণনা

প্রশ্নঃ বড় নাজাসাতে হুকমী অর্থাৎ হাদাসে আকবর এবং জানাবাত থেকে শরীর পবিত্র করার পদ্ধতি কি?

উত্তরঃ হাদাসে আকবার অথবা জানাবাত থেকে শরীর গোসল করার দ্বারা পবিত্র হয়ে যায়।

প্রশ্নঃ গোসল কাকে বলে?

উত্তরঃ গোসল মানে হলো পুরো শরীর ধৌত করা। তবে শরীঅতে শরীর ধৌত করার একটা বিশেষ পদ্ধতি আছে।

প্রশ্নঃ গোসলের পদ্ধতি কি?

উত্তরঃ গোসলের পদ্ধতি হলো প্রথমে দুই হাত কব্জি পর্যন্ত ধুয়ে নেবে। অতঃপর ইস্তিনজা (শৌচকর্ম) সেরে নিবে। অতঃপর শরীর থেকে বস্তুগত নাপাকী ধুয়ে ফেলবে। অতঃপর ওযু করে পুরো শরীরে অল্প পানি ঢেলে হাত দ্বারা শরীর মলবে। অতঃপর পুরো শরীরে তিনবার পানি ঢালবে। (সেই সাথে) কুলি করবে নাকে পানি দিবে।

প্রশ্নঃ গোসলের ফরয কয়টি?

উত্তরঃ গোসলের ফরয তিনটি-

১.কুলি করা।

২.নাকে পানি দেয়া এবং

৩.সমস্ত শরীরে পানি ঢালা।

প্রশ্নঃ গোসলের সুন্নত কয়টি?

উত্তরঃ গোসলের সুন্নত পাঁচটি-

১.কব্জি পর্যন্ত হাত ধৌত করা।

২.ইস্তিনজা করা এবং শরীরের যেখানে নাপাকী লেগে থাকে তা পরিষ্কার করা।

৩.নাপাকি দূর করার নিয়ত করা।

৪.প্রথমে ওযু করে নেয়া এবং

৫.সমস্ত শরীরে তিনবার পানি ঢালা।

মোজার উপর মাসেহ করা

প্রশ্নঃ কি ধরণের মোজার উপর মাসেহ করা বৈধ?

উত্তরঃ তিন ধরণের মোজার উপর মাসেহ করা বৈধ-

১.চামড়ার মোজা যার দ্বারা পা টাখনু পর্যন্ত ঢাকা থাকে।

২.সুতী পশমী এমন মোজা যার নীচে চামড়া লাগানো।

৩. মোটা সুতী পশমী মোজা যা এই পরিমাণ হয় যে. শুধু মোজা পরিধান করে যার দ্বারা তিন চার মাইল হাটলেও তা না ফেটে যায়।

প্রশ্নঃ মোজার উপর কখন মাসেহ করা বৈধ?

উত্তরঃ যখন ওযু করে অথবা পা ধুয়ে মোজা পরিধান করে অতঃপর ওযু ভাঙ্গা অবস্থায় মোজা পরিধান করা থাকে।

প্রশ্নঃ একবার পরিধান করা মোজার উপর কতদিন মাসেহ করা বৈধ?

উত্তরঃ যদি ব্যক্তি তার ঘরে বা থাকার স্থানে থাকে তবে একদিন এক রাত। আর যদি সফরে বা ভ্রমণে থাকে তাহলে তিন দিন তিন রাত মাসেহ করা বৈধ।

প্রশ্নঃ মোজার উপর কিভাবে মাসেহ করবে?

উত্তরঃ উপরের দিকে করতে হবে। নিচে বা গোঁড়ার দিকে মাসেহ করলে মাসেহ হবে না।

প্রশ্নঃ ওযু এবং গোসল উভয় অবস্থাতেই মাসেহ বৈধ কি না?

উত্তরঃ ওযুতে মাসেহ বৈধ, গোসলে নয়।

প্রশ্নঃ মাসেহ কিভাবে করে?

উত্তরঃ হাতের আঙ্গুল পানিতে ভিজিয়ে নিয়ে তিন আঙ্গুল নিচের দিকে রেখে উপরের দিকে টেনে আনবে। আঙ্গুল পুরো রাখবে শুধু তার মাথা রাখা যথেষ্ট নয়।

প্রশ্নঃ ফাটা মোজার উপর মাসেহ বৈধ কি না?

উত্তরঃ যদি মোজা এতটা পরিমাণ ফেটে যায় যে, ছোট তিন আঙ্গুল পরিমাণ পা বেরিয়ে যায় অথবা চলতে গেলে বেরিয়ে যায় তখন তার উপর মাসেহ বৈধ নয়। আর যদি তার কম ফাটা হয় তবে মাসেহ বৈধ।

প্লাস্টারের উপর মাসেহ করার বর্ণনা

প্রশ্নঃ প্লাস্টার কাকে বলে?

উত্তরঃ প্লাস্টার হলো ঐ কাঠ বা বাশের টুকরা যা ভাঙ্গা হাড় জোড়া লাগানোর জন্য বাঁধা হয়। তবে এখানে প্লাস্টার বলতে কাঠ বা বাশের ফাঁলি বা পট্টি বা ব্যাণ্ডেজ সবই উদ্দেশ্য।

প্রশ্নঃ এই কাঠরে টুকরা বা ব্যান্ডেজেরে উপর মাসেহ করার নিয়ম কি?

উত্তরঃ যদি এই কাঠের চুকরা বা ব্যান্ডেজ খোলা ক্ষতিকারক বা কষ্টদায়ক হয়, তাহলে এই কাঠের টুকরা বা ব্যান্ডেজের উপর মাসেহ করা বৈধ।

প্রশ্নঃ কতটি ব্যান্ডেজ বা ব্যান্ডেজের কতটুক অংশ মাসেহ করবে।

উত্তরঃ সমস্ত ব্যান্ডেজে মাসেহ করতে হবে চাই তার নিচে যখম থাকুক বা না থাকুক।

প্রশ্নঃ যদি ব্যান্ডেজ খুললে কোন ক্ষতি বা কষ্ট না হয় তবে তার কি হুকুম?

উত্তরঃ যদি যখমে পানি দিলে কোন ক্ষতি না হয় তাহলে ধুয়ে নেয়া জরুরী। আর যদি পানি দিলে ক্ষতি হয় কিন্তু মাসেহ করলে ক্ষতি না হয় তাহলে মাসেহ করা ওয়াজিব। আর যখন যখমে মাসেহ করলে ক্ষতি হয় তখন তাতে মাসেহ করা বৈধ (জরুরী নয়)।

নাজাসাতে হাকিকী বা বস্তুগত নাপাকী

প্রশ্নঃ নাজাসাতে হাকীকি কত প্রকার?

উত্তরঃ নাজাসাতে হাকীকি দুই প্রকার। এক নাজাসাতে গলিযা বা গাঢ় নাপাকী। দুই নাজাসাতে খফীফা বা হালকা নাপাকী।

প্রশ্নঃ নাজাসাতে গলীযা আর নাজাসাতে খফীফা কাকে বলে?

উত্তরঃ যে নাপাকী কঠিন ও গাঢ় তাকে নাজাসাতে গলীযা বলে আর যে নাপাকী হাল্কা তাকে নাজাসাতে খফীফাহ বলে।

প্রশ্নঃ নাজাসাতে গলীযা বা কঠিন ও গাঢ় নাপাকী কি কি?

উত্তরঃ মানুষের পেশাব পায়খানা, প্রাণীদের পায়খানা, হারাম প্রাণীদের পেশাব, মানুষ এবং প্রাণীর প্রবহমান রক্ত, মদ এবং হাস মুরগীর বিষ্ঠা নাজাসাতে গলীযা।

প্রশ্নঃ নাজাসাতে খফীফা কি কি?

উত্তরঃ হালাল প্রাণীদের পেশাব এবং হারাম পাখিদের বিষ্ঠা নাজাসাতে খফীফাহ।

প্রশ্নঃ নাজাসাতে গলীযা কতটুকু মাফ?

উত্তরঃ নাজাসাতে গলীযাহ যদি কঠিন ধরণের হয় যেমন পায়খানা তাহলে সাড়ে তিন মাষা পরিমাণ মাফ। আর যদি পাতলা হয় যেমন পেশাব তাহলে তা ইংরেজদের এক টাকার কয়েন এর আয়তন পরিমাণ [আমাদের দেশীয় পাঁচ টাকার কয়েন পরিমাণ] মাফ। মাফ হওয়ার অর্থ হলো যদি এতটুকু পরিমাণ নাজাসাত শরীর অথবা কাপড়ে লাগে আর নামায পড়ে তবে নামায হয়ে যাবে, তবে মাকরুহ হবে। আর ইচ্ছাকৃতভাবে এতটুকু নাজাসাত লাগিয়ে রাখাও বৈধ নয়।

প্রশ্নঃ নাজাসাতে খফীফাহ কতটুকু মাফ?

উত্তরঃ কাপড়ের এক চতুর্থাংশ বা শরীরে এক চতুর্থাংশের কম হলে মাফ।

প্রশ্নঃ নাজাসাতে হাকীকি থেকে কাপড় অথবা শরীর কিভাবে পাক করতে হবে?

উত্তরঃ নাজাসাতে হাকীকি চাই গলীযাহ হোক অথবা খাফিফাহ, কাপড়ে হোক চাই শরীরে- তিনবার পানি দ্বারা ধোয়ার দ্বারা পাক হয়ে যায়। তবে কাপড়কে তিনবারই নিংড়ানো জরুরী।

প্রশ্নঃ পানি ব্যতীত আর কিছু দ্বারা কি পবিত্র হয়?

উত্তরঃ হ্যাঁ, যে জিনিস পাতলা এবং বহমান যেমন সিরকা, তরমুজের পানি দ্বারা ধৌত করলেও নাজাসাতে হাকীকী পবিত্র হয়ে যায়।

ইস্তিনজার বর্ণনা

প্রশ্নঃ ইস্তিনজা কাকে বলে?

উত্তরঃ পায়খানা ও পেশাব করার পর যে নাপাকী অঙ্গের মধ্যে লেগে থাকে তা পবিত্র করাকে ইস্তিনজা বলে।

প্রশ্নঃ পেশাব করার পর ইস্তিনজা করার পদ্ধতী কি?

উত্তরঃ পেশাব করার পর পবিত্র মাটির ঢেলা দ্বারা পেশাব শুকিয়ে ফেলা অতঃপর পানি দিয়ে তা ধৌত করে ফেলা।

প্রশ্নঃ পায়খানা করার পর কিভাবে ইস্তিনজা করবে?

উত্তরঃ পায়খানা করার পর পবিত্র মাটি তিনটি অথবা পাঁচটি ঢেলা দ্বারা মলদ্বার মুছে ফেলবে অতঃপর পানি দ্বারা তা ধুয়ে নিবে।

প্রশ্নঃ ইস্তিনজা করা কেমন (ওয়াজিব না মুস্তাহাব)?

উত্তরঃ যদি পায়খানা ও প্রস্রাব নিজের স্থান (মলদ্বার) হতে এদিক ওদিক না গড়ায় তবে ইস্তিনজা করা মুস্তাহাব। আর যদি এদিক ওদিক লেগে যায় তবে এক দিরহাম (পয়সা বরাবর) বা তার কম হয় তবে ইস্তিনজা করা সুন্নত। আর যদি এক দিরহাম থেকে বেশী পরিমাণ লাগে তবে ইস্তিনজা করা ফরয।

প্রশ্নঃ ইস্তিনজা কিসের দ্বারা করতে হয়?

উত্তরঃ মাটির পবিত্র ঢেলা অথবা পাথর দ্বারা [বর্তমান সময়ের টিস্যু পেপার এর উত্তম বিকল্প]।

প্রশ্নঃ কোন জিনিস দ্বারা ইস্তিনজা করা মাকরুহ?

উত্তরঃ হাড়, গোবর, খাদ্যদ্রব্য, কয়লা, কাপড় ও কাগজ দ্বারা ইস্তিনজা করা মাকরুহ।

প্রশ্নঃ ইস্তিনজা কোন হাত দিয়ে করতে হবে?

উত্তরঃ বাম হাত দিয়ে করতে হবে। ডান হাত দিয়ে ইস্তিনজা করা মাকরুহ।

পানির বর্ণনা

প্রশ্নঃ কোন পানি দ্বারা ওযু করা বৈধ?

উত্তরঃ খাবার পানি, ঝর্ণা অথবা কুয়ার পানি, নদী অথবা সাগরের পানি, বরফ গলা পানি অথবা শিলার পানি, বড় পুকুর অথবা হাউজের পানি- এই সব পানি দ্বারা ওযু ও গোসল করা বৈধ।

প্রশ্নঃ কোন পানি দ্বারা ওযু অথবা গোসল করা বৈধ নয়?

উত্তরঃ ফুল অথবা গাছের নিংড়ানো পানি। ঝোল অথবা ঐ পানি যার রং ও গন্ধ কোন পবিত্র বস্তু মিশার দ্বারা পরিবর্তন হয়ে গেছে এবং গাঢ় হয়ে গেছে। এমন পানি যা অল্প আর তাতে কোন নাপাক কিছু পড়ে গেছে অথবা কোন জন্তু পড়ে মারা গেছে। যে পানির দ্বারা ওযু ও গোসল করা হয়েছে। এমন পানি যার মধ্যে নাপাকির প্রভাব বেশী। হারাম জন্তুর ঝুটা পানি। মৌড়ি, গোলাপ অথবা অপর কোন ভেষজের নিংড়ানো নির্যাস।

প্রশ্নঃ যে পানির দ্বারা ওযু ও গোসল করা হয়েছে তাকে কি পানি বলে?

উত্তরঃ এমন পানিকে ব্যবহৃত পানি বলে, যে নিজে পবিত্র কিন্তু তার দ্বারা ওযু ও গোসল বৈধ নয়। 

প্রশ্নঃ কোন জন্তুর ঝুটা পানি নাপাক?

উত্তরঃ কুকুর, শুকর এবং শিকারী চতুষ্পদ জন্তুর ঝুটা পানি নাপাক। এমনিভাবে বিড়াল যা ইঁদুড় অথবা অন্য কোন জন্তু খেয়ে দ্রুত পানি পান করে, তার ঝুটাও নাপাক। যে ব্যক্তি মদ পান করেই পানি পান করে নেয়, সেই ঝুটা পানিও নাপাক।

প্রশ্নঃ কোন জন্তুর ঝুটা পানি মাকরুহ?

উত্তরঃ বিড়াল (তৎক্ষনাৎ ইঁদুড় না খেয়ে থাকলে), ইঁদুড়, টিকিটিকি, ঘুড়ে বেড়ানো মুরগী, নাপাক বস্তু আহারকারী গরু বা গাভী, মহিষ, কাক, চীল, বাজ। এধরণের সব প্রানীর ঝুটা মাকরুহ।

প্রশ্নঃ কোন জন্তুর ঝুটা পানি পবিত্র?

উত্তরঃ মানুষ এবং হালাল প্রাণির ঝুটা পানি পবিত্র। যেমন গাভী, বকরী, কবুতর, ঘুঘু, ঘোড়া প্রভৃতি।

প্রশ্নঃ কোন পানিতে নাজাসাত পতিত হলে পানি নাপাক হয়ে যায়?

উত্তরঃ দুই ধরণের পানি ব্যতীত সব ধরণের পানিতে নাজাসাত পতিত হলে পানি নাপাক হয়ে যায়। ১.নদী বা সমুদ্রের প্রবাহিত পানি। ২.আবদ্ধ অনেক পানি যেমন বড় পুকুর বা হাউজের পানি।

প্রশ্নঃ আবদ্ধ অনেক পানির পরিমাণ কতটুকু?

উত্তরঃ যে আবদ্ধ পানি মাপের হিসাব অনুযায়ী সাড়ে পাঁচ গজ লম্বা এবং সাড়ে পাঁচ গজ চওড়া তা অধিক পানি। যে পুকুর অথবা হাউজ (অন্তত) এতটুকু বড় হয় ওটাকে বড় পুকুর বা বড় হাউজ বলা হবে।

প্রশ্নঃ নাজাসাত পতিত হওয়া ব্যতীত আর কি পতিত হলে অল্প পানি নাপাক হয়ে যাবে।

উত্তরঃ যদি পানিতে এমন কোন জন্তু পতিত হয়ে মারা যায় যার মধ্যে প্রবাহিত রক্ত থাকে, তখন পানি নাপাক হয়ে যায়। যেমন পাখি, মুরগী, কবুতর, বিড়াল, ইঁদুড়।

প্রশ্নঃ বড় পুকুর অথবা হাউজের পানি কখন নাপাক হয়?

উত্তরঃ যখন তাতে নাপাকীর স্বাদ, রঙ এবং ঘ্রাণ প্রকাশ পায়।

প্রশ্নঃ কোন ধরণের প্রাণী পানিতে মরার দ্বারা পানি নাপাক হয় না?

উত্তরঃ যেই প্রাণী পানিতে জন্ম নেয় এবং পানিতেই থাকে যেমন মাছ, ব্যাঙ এবং ঐ প্রাণী যার মধ্যে প্রবাহিত রক্ত নেই যেমন মাছি, মশা, ভীমরুল বা বোলতা, টিকটিকি, পিঁপড়া ইত্যাদি এগুলো মরার দ্বারা পানি নাপাক হয় না।

কুয়ার বর্ণনা

প্রশ্নঃ কুয়া কিসের দ্বারা নাপাক হয়?

উত্তরঃ যদি নাজাসাতে গলীযা বা খফীফাহ কুয়ার মধ্যে পড়ে যায় অথবা কুয়াতে প্রবাহিত রক্তসম্পন্ন কোন প্রাণী পতিত হয়ে মরে যায় তবে কুয়া নাপাক হয়ে যায়।

প্রশ্নঃ যদি কুয়ার মধ্যে কোন প্রাণী পতিত হয়ে জীবিত উঠে আসে তবে কি তা পাক থাকবে, নাকি নাপাক হয়ে যাবে?

উত্তরঃ যদি এমন কোন প্রাণী পড়ে যার ঝুটা নাপাক অথবা ঐ প্রাণী পড়ে যার শরীরে নাজাসাত লেগে ছিল তবে কুয়া নাপাক হয়ে যাবে। আর ঐ হালাল অথবা হারাম প্রাণী যাদের ঝুটা নাপাক নয় এবং যাদের শরীরে নাজাসাতও ছিল না, যদি পতিত হয় আর জীবিত উঠে আসে, তবে যে পর্যন্ত তাদের পেশাব পায়খানা করে দেওয়ার ব্যাপারে নিশ্চিত না হবে, সে পর্যন্ত কুয়া নাপাক হবে না।

প্রশ্নঃ কুয়া নাপাক হয়ে গেলে তা পাক করার পদ্ধত কি?

উত্তরঃ কুয়া পবিত্র করার পাঁচটি পদ্ধতী-

১.যখন কুয়াতে নাপাক পতিত হয় তখন কুয়ার পানি সম্পূর্ণ উঠিয়ে ফেলার দ্বারা কুয়া পবিত্র হয়ে যায়।

২.যখন মানুষ, শুকর, কুকুর, বকরী, বিড়াল অথবা এদের সমান অথবা এদরে চাইতে বড় কোন প্রাণী পতিত হয়ে মরে যায় তবে কুয়ার সব পানি তুলে ফেলতে হবে।

৩.যখন কোন প্রবাহিত রক্তসম্পন্ন প্রাণী কুয়াতে পড়ে ফুলে ফেটে যায়, চাই তা বড় হোক অথবা ছোট তখন সমস্ত পানি তুলে ফেলতে হবে।

৪.যখন কবুতর, মুরগী, বিড়াল অথবা এই সমান কোন প্রাণী পতিত হয়ে মরে যায় কিন্তু ফুলে ফেটে যায় নি, তখন ৪০ বালতি পানি উঠিয়ে ফেলতে হবে।

৫.যদি ইঁদুড় অথবা এই সমান অপর কোন প্রাণী পতিত হয়ে মরে যায় তবে বিশ বালতি পানি উঠিয়ে ফেলতে হবে। বিশ এর স্থলে ত্রিশ আর চল্লিশ এর স্থলে ৬০ বালতি উঠানো মুস্তাহাব।

প্রশ্নঃ যদি মৃত জন্তু কুয়ায় পড়ে যায় তবে তার কি হুকুম?

উত্তরঃ মৃত জন্তুর ব্যাপারে ঐ একই বিধান, কুয়ায় পড়ে মৃত্যু বরণ করলে যে হুকুম। যেমন বকরী মৃত পতিত হলে সমস্ত পানি উঠিয়ে ফেলতে হবে। আর যদি মৃত বিড়াল পতিত হয় তাহলে চল্লিশ অথবা ষাট বালতি, আর মৃত ইঁদুড় পতিত হলে বিশ অথবা ত্রিশ বালতি পানি উঠিয়ে ফেলতে হবে।

প্রশ্নঃ যদি ফুলা ফাটা জন্তু পতিত হয় তবে তার কি হুকুম?

উত্তরঃ সমস্ত পানি উঠিয়ে ফেলতে হবে, যেভাবে কুয়ায় পড়ে মরে ফুলে ফেটে গেলে করতে হয়।

প্রশ্নঃ যদি ‍কুয়া থেকে মৃত জন্তু বের হয় আর জানা নাই যে, কবে মরেছে- তবে তার কি হুকুম?

উত্তরঃ যখন থেকে দেখা যাবে তখন থেকেই কুয়া নাপাক ধরা হবে।

প্রশ্নঃ বালতি দ্বারা কত বড় বালতি উদ্দেশ্য?

উত্তরঃ যে কুয়ায় যে বালতি লাগানো থাকবে সেটিই ধর্তব্য।

প্রশ্নঃ যে কয় বালতি পানি উঠাতে হবে তা কি একবারেই উঠাবে নাকি কয়েকবারে উঠানো বৈধ?

উত্তরঃ কয়েকবারে উঠানোও জায়েয। যেমন ষাট বালতি উঠাতে হলে- সকালে বিশ বালতি, দুপুরে বিশ বালতি এবং সন্ধ্যায় বিশ বালতি- এভাবে উঠানো বৈধ।

প্রশ্নঃ যেই বালতি ও রশি দ্বারা কুয়ার পানি উঠাবে তা কি পাক না নাপাক?

উত্তরঃ যখন এতটুকু পানি উঠিয়ে ফেলবে যতটুকু উঠানো প্রয়োজন তখন কুয়া, বালতি ও রশি সব পাক হয়ে যাবে।

 

□       □       □       □       □

তা’লীমুল ইসলাম ২য় ভাগ সমাপ্ত

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to top button
error: Content is protected !!