তালীমুল ইসলাম- ইসলাম শিক্ষা ১ম ভাগ

দারুস সাআদাত গ্রন্থ

গ্রন্থঃ তালীমুল ইসলাম

লেখক, মুফতী কিফায়াতুল্লাহ (রহ)

অনুবাদঃ দারুস সাআদাত কর্তৃক সংকলিত ও অনূদিত

স্বত্বঃ দারুস সাআদাত কর্তৃক সংরক্ষিত, বিনানুমতিতে কপি করা, মূদ্রণ করা এবং এপে ব্যবহার করা আইনত দণ্ডনীয়।

তা’লীমুল ইসলাম

মুফতী কিফায়াতুল্লাহ (রহ)

দারুস সাআদাত অনূদিত

ম ভাগ

প্রশ্ন: তুমি কে?

উত্তর: মুসলমান।

প্রশ্ন: মুসলমানদের ধর্মের নাম কি?

উত্তর: ইসলাম।

প্রশ্ন: ইসলাম কি শিক্ষা দেয়?

উত্তর: ইসলাম এই শিক্ষা দেয় যে, আল্লাহ এক ও অদ্বিতীয়, ইবাদত ও উপাসনার উপযুক্ত একমাত্র তিনিই এবং হযরত মুহাম্মদ (সা) আল্লাহর বান্দা এবং রাসূল। আল কুরআন আল্লাহর কিতাব এবং ইসলাম সত্য ধর্ম। আর দুনিয়ার সব কল্যাণকর ও ভাল বিষয় ইসলাম শিক্ষা দেয়।

প্রশ্ন: ইসলামের কালিমা কি?

উত্তর: ইসলামের কালিমা হলো-

لَا إِلَه إِلَّا الله مُحَمَّد رَسُول الله

লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ।

আল্লাহ ব্যতীত কোন মাবুদ নাই এবং মুহাম্মদ (সা) আল্লাহর রাসূল।

এই কালিমাকে কালিমায়ে তাইয়্যিবাহ (পবিত্র বাক্য) বলে।

প্রশ্ন: কালিমা শাহাদাত কি?

উত্তর: কালিমা শাহাদাত হলো-

أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ. وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ

আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আশহাদু আননা মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসূলুহ।

আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ব্যতীত কোন মাবুদ নাই এবং আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মদ (সা) আল্লাহর বান্দা এবং রাসূল।

 

প্রশ্ন: ইমানে মুজমাল কি?

উত্তর: ইমানে মুজমাল হলো-

امَنْتُ بِاللهِ كَمَا هُوَ بِاَسْمَائِه وَصِفَاتِه وَقَبِلْتُ جَمِيْعَ اَحْكَامِه وَاَرْكَانِه

আমানতু বিল্লাহি কামা হুয়া বি-আসমিয়িহী ওয়া সিফাতিহী ওয়াকাবিলতু জামিয়া আহকামিহী ওয়া আরকানিহী।

আমি ইমান আনলাম আল্লাহর প্রতি তার সমস্ত নাম ও গুণাবলীর সাথে। আর আমি তার সমস্ত আহকাম-নির্দেশাবলী মেনে নিলাম।

প্রশ্ন: ইমানে মুফাসসাল কি?

উত্তর: ইমানে মুফাসসাল হলো-

امَنْتُ بِاللهِ وَمَلئِكَتِه وَكُتُبِه وَرَسُوْلِه وَالْيَوْمِ الْاخِرِ وَالْقَدْرِ خَيْرِه وَشَرِّه مِنَ اللهِ تَعَالى وَالْبَعْثِ بَعْدَالْمَوْتِ

আমানতু বিল্লাহি, ওয়া মালায়িকাতিহী, ওয়া কুতুবিহী, ওয়া রাসূলিহী, ওয়াল ইয়াওমাল আখিরী, ওয়াল কাদরি খাইরিহী ওয়া শাররিহী মিনাল্লাহি তাআলা, ওয়াল বা’সি বা’দাল মাউত।

আমি ইমান আনলাম আল্লাহর প্রতি, তার কিতাব সমূহের প্রতি, তার রাসূলদের প্রতি, আখিরাতের প্রতি, ভাগ্যের ভাল-মন্দ যা হয় তা শুধু আল্লাহর পক্ষ থেকে এবং মৃত্যুর পর পূণরুত্থানের প্রতি।

প্রশ্ন: তোমাকে কে সৃষ্টি করেছেন?

উত্তর: আমাকে এবং আমার পিতা-মাতা, আসমান যমীন এবং সমস্ত মাখলুক বা সৃষ্টিকুলকে আল্লাহ তাআলা সৃষ্টি করেছেন।

প্রশ্ন: আল্লাহ তাআলা দুনিয়াকে কি দ্বারা সৃষ্টি করেছেন?

উত্তর: আল্লাহ তাআলা দুনিয়াকে নিজের কুদরত (শক্তি-ক্ষমতা) ও নির্দেশ দ্বারা সৃষ্টি করেছেন।

প্রশ্ন: যারা আল্লাহ তাআলাকে মানে না তাদেরকে কি বলে?

উত্তর: তাদেরকে কাফির (অবিশ্বাসী, অস্বীকারকারী) বলে।

প্রশ্ন: যারা আল্লাহ ব্যতীত অপর কারো পূজা-উপাসনা করে, যেমন হিন্দুরা- তারা মূর্তিপূজা করে, তাদেরকে কি বলে?

উত্তর: এমন লোকদেরকে কাফির ও মুশরিক (অংশিবাদী) বলে।

প্রশ্ন: যারা দুই তিন খোদা মানে যেমন ঈসায়ী বা খৃষ্টানরা, তাদেরকে কি বলে?

উত্তর: তাদেরকেও কাফির ও মুশরিক বলে।

প্রশ্ন: মুশরিকদেরকে ক্ষমা করা হবে কি না?

উত্তর: মুশরিকেদেরকে ক্ষমা করা হবে না। তারা (পরকালে) চিরজীবন কষ্ট ও আযাবের মধ্যে থাকবে।

প্রশ্ন: হযরত মুহাম্মদ (সা) কে ছিলেন?

উত্তর: হযরত মুহাম্মদ (সা) আল্লাহর বান্দা এবং তার রাসূল ও নবী ছিলেন। আমরা তার উম্মত।

প্রশ্ন: আমাদের নবী হযরত মুহাম্মদ (সা) কোথায় জন্ম গ্রহণ করেছেন?

উত্তর: আরব দেশে মক্কা মুয়াযযামা নামে এক শহর আছে। সেখানে তিনি জন্মগ্রহণ করেছেন।

প্রশ্ন: নবী (সা) এর পিতা ও দাদার নাম কি ছিল?

উত্তর: নবী (সা) এর পিতার নাম ছিল আব্দুল্লাহ এবং দাদার নাম ছিল আব্দুল মুত্তালিব।

প্রশ্ন: আমাদের নবী (সা) অন্য নবীদের তুলনায় মর্যাদার দিক দিয়ে বড় ছিলেন, না ছোট?

উত্তর: আমাদের নবী (সা) অন্য নবীদের তুলনায় মর্যাদার দিক দিয়ে এবং আল্লাহর সমস্ত মাখলুক থেকে বেশী সম্মানিত।

প্রশ্ন: হযরত মুহাম্মদ (সা) তার জীবনকাল কোথায় অতিবাহিত করেছেন?

উত্তর: তিনি ৫৩ বছর বয়স পর্যন্ত মক্কা মুআযযামায় ছিলেন। এরপর আল্লাহ তাআলার নির্দেশে মদীনা মুনাওয়ারায় চলে যান এবং সেখানে ১০ বৎসর অতিবাহিত করেন। অতঃপর ৬৩ বছর বয়সে ইন্তিকাল করেন।

প্রশ্ন: যদি কোন ব্যক্তি হযরত মুহাম্মদ (সা)-কে না মানে, তবে সে কেমন?

উত্তর: যে ব্যক্তি হযরত (সা) আল্লাহর রাসূল হিসাবে না মানে সে-ও কাফির।

প্রশ্ন: হযরত মুহাম্মদ (সা)-কে মানার অর্থ কি?

উত্তর: হযরত মুহাম্মদ (সা) কে মানার অর্থ হলো তাকে আল্লাহর প্রেরিত পয়গম্বর হিসাবে বিশ্বাস করা। আর আল্লাহর পরে তাকে সকল সৃষ্টিকুল থেকে মর্যাদাসম্পন্ন মনে  করা, তার প্রতি মহব্বত পোষণ করা এবং তার নির্দেশ মান্য করা।

প্রশ্ন: এটা কিভাবে বুঝা যাবে যে, হযরত মুহাম্মদ (সা) আল্লাহর নবী?

উত্তর: তিনি (সা) এমনসব ভাল কাজ করেছেন এবং এমনসব বিষয় দেখিয়েছেন যা নবীগণ ব্যতীত আর কেউ দেখাতে বা বলতে পারে না।

প্রশ্ন: এটা কিভাবে বুঝা যাবে যে, কুরআন শরীফ আল্লাহর কিতাব?

উত্তর: হযরত মুহাম্মদ (সা) বলেছেন- এই কুরআন মাজীদ আল্লাহর কিতাব। আল্লাহ তাআলা আমার প্রতি নাযিল করেছেন।

প্রশ্ন: কুরআন শরীফ কি নবী (সা) এর প্রতি একসাথে সম্পূর্ণ নাযিল হয়েছে, না কি অল্প অল্প করে?

উত্তর: অল্প অল্প করে নাযিল হয়েছে। কখনো এক আয়াত। কখনো দুই চার আয়াত। কখনো এক সূরা। যখন যেমন প্রয়োজন হয়েছে নাযিল হয়েছে।

প্রশ্ন: কতদিনে পুরা কুরআন শরীফ নাযিল হয়েছে?

উত্তর: তেইশ বৎসরে।

প্রশ্ন: কুরআন শরীফ কিভাবে নাযিল হত?

উত্তর: হযরত জিবরাইল (আ) এসে নবী (সা) কে আয়াত অথবা সূরা শুনিয়ে দিতেন। তিনি (সা) তা শুনে মুখস্থ করে নিতেন। আর (তখনই বা পরে) কোন লেখককে ডেকে লিখিয়ে নিতেন ।

প্রশ্ন: নবী (সা) নিজে কেন লিখতেন না?

উত্তর: এজন্য যে তিনি উম্মী (নিরক্ষর) ছিলেন।

প্রশ্ন: উম্মী কাকে বলে?

উত্তর: যে কারো কাছ থেকে লেখা পড়া শিখেননি তাকে উম্মী বলে। যদিও নবী (সা) দুনিয়াতে কারো নিকট থেকে পড়ালেখা শিখেননি, কিন্তু আল্লাহ তাআলা তাকে সকল মাখলুক থেকে বেশী ইলম ও জ্ঞান দান করেছিলেন।

প্রশ্ন: হযরত জিবরাইল (আ) কে?

উত্তর: ফেরেশতা। তিনি আল্লাহর হুকুম বা নির্দেশ নবীদের নিকট নিয়ে আসতেন।

প্রশ্ন: মুসলমান আল্লাহ তাআলার ইবাদত কিভাবে করে?

উত্তর: নামায পড়ে। রোযা রোখে। সম্পদের যাকাত প্রদান করে। হজ করে।

প্রশ্ন: নামায কাকে বলে?

উত্তর: নামায আল্লাহ তাআলার ইবাদত করার এক বিশেষ পদ্ধতি। যা আল্লাহ তাআলা কুরআনে এবং রাসূলুল্লাহ (সা) এর হাদীসে মুসলমানদেরকে শিক্ষা দিয়েছেন।

প্রশ্ন: ইবাদতের ঐ পদ্ধতি যাকে নামায বলে তা কি?

উত্তর: ঘরে অথবা মসজিদে আল্লাহর সামনে হাত বেঁধে দাড়ান এবং কুরআন পাঠ করা। আল্লাহর প্রশংসা করা। তার মহত্ব বর্ণনা ও সম্মান করা। তার সামনে ঝুঁকে গিয়ে যমীনে মাথা রেখে তার বড়ত্ব এবং নিজের হীনতা ও দুর্বলতা প্রকাশ করা।

প্রশ্ন: মানুষ মসজিদে নামায পড়ার দ্বারা আল্লাহর সামনে হয়, না কি ঘরে নামায পড়ার দ্বারা।

উত্তর: আল্লাহ তাআলা সর্বত্রই সামনে থাকেন। চাই মসজিদে নামায পড়া হোক অথবা ঘরে। তবে মসজিদে নামায পড়ার সওয়াব বহুগুণ বেশী।

প্রশ্ন: নামায পড়ার পূর্বে হাত মুখ এবং পা ধোয়া হয়- তাকে কি বলে?

উত্তর: তাকে ওযু বলা হয়। ওযু ব্যতীত নামায হয় না।

প্রশ্ন: নামাযে কোন দিকে মুখ করে দাড়াতে হবে?

উত্তর: পশ্চিম দিকে (যেই দিকে সন্ধ্যার সময় সূর্য অস্ত যায়) ।

প্রশ্ন: পশ্চিম দিকে মুখ করে দাড়ানোর হুকুম কেন দেওয়া হয়েছে?

উত্তর: মক্কা মুয়াযযামায় আল্লাহর একটি ঘর আছে যাকে খানায়ে কাবা বলা হয় । নামাযের সময় সেই দিকে মুখ করে দাড়ানো আবশ্যক। আর তা আমাদের দেশ থকে পশ্চিম দিকে অবস্থিত। এজন্য পশ্চিম দিকে মুখ করে নামায পড়তে হয়।

প্রশ্ন: যেই দিকে মুখ করে নামায পড়া হয় তাকে কি বলা হয়?

উত্তর: তাকে কিবলা বলা হয়।

প্রশ্ন: দিনে রাতে নামায কয়বার পড়তে হয়?

উত্তর: রাত ও দিনে পাঁচবার নামায ফরয।

প্রশ্ন: এই পাঁচটি নামাযের নাম কি?

উত্তর:  (১) ফজরের নামায- ভোরে সূর্য উঠার পূর্বে পড়তে হয়।

(২) যোহরের নামায- যা দ্বি-প্রহরে সূর্য ঢলে যাওয়ার পর পড়তে হয়।

(৩) আসরের নামায- যা সূর্য অস্ত যাওয়ার দেড়-দুই ঘন্টা পূর্বে পড়তে হয়।

(৪) মাগরিবের নামায- যা সন্ধ্যায় সূর্য অস্ত যাওয়ার পর পড়তে হয়।

(৫) ইশার নামায- যা রাতের দেড়-দুই ঘন্টা অতিবাহিত হওয়ার পর পড়তে হয়।

প্রশ্ন: আযান কাকে বলে?

উত্তর: যখন নামাযের সময় হয়। তখন নামাযের কিছু সময় পূর্বে এক ব্যক্তি দাড়িয়ে উচ্চৈস্বরে এই শব্দাবলী উচ্চারণ করে-

আযান

اللَّهُ أَكْبَرُ اللَّهُ أَكْبَرُ، اللَّهُ أَكْبَرُ اللَّهُ أَكْبَرُ

আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার। আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার

আল্লাহ মহান আল্লাহ মহান। আল্লাহ মহান আল্লাহ মহান।

أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ، أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ

আশহাদু আল লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, আশহাদু আল লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ

আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি আল্লাহ ছাড়া কোন মাবুদ নাই, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি আল্লাহ ছাড়া কোন মাবুদ নাই।

أَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ، أَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ

আশহাদু আননা মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ, আশহাদু আননা মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ

আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি মুহাম্মদ (সা) আল্লাহর রাসূল, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি মুহাম্মদ (সা) আল্লাহর রাসূল।

حَيَّ عَلَى الصَّلَاةِ، حَيَّ عَلَى الصَّلَاةِ

হাইয়া আলাস সালাহ, হাইয়া আলাস সালাহ

এসো সালাতের দিকে, এসো সালাতের দিকে।

حَيَّ عَلَى الْفَلَاحِ، حَيَّ عَلَى الْفَلَاحِ

হাইয়া আলাল ফালাহ, হাইয়া আলাল ফালাহ

এসো কল্যাণ ও সফলতার দিকে, এসো কল্যাণ ও সফলতার দিকে।

اللَّهُ أَكْبَرُ اللَّهُ أَكْبَرُ

আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার।

আল্লাহ মহান আল্লাহ মহান।

لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ

লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ।

আল্লাহ ব্যতীত কোন মাবুদ নাই।

এই শব্দগুলোকে আযান বলে। ফজরের নামাযে হাইয়া আলাল ফালাহ এর পরে নিম্নের বাক্য দুইবার বলতে হয়-

الصَّلاَةُ خَيْرٌ مِنَ النَّوْمِ الصَّلاَةُ خَيْرٌ مِنَ النَّوْمِ

আসসালাতু খাইরুম মিনান নাউম, আসসালাতু খাইরুম মিনান নাউম

ঘুমের চেয়ে নামায উত্তম। ঘুমের চেয়ে নামায উত্তম।

প্রশ্ন: তাকবীর কাকে বলে?

উত্তর: যখন নামাযের জন্য দাড়াতে থাকে এবং নামায শুরু করার পূর্বে এক ব্যক্তি ঐ কালিমাগুলোই বলে, যেগুলো আযানের মধ্যে বলা হয়। এটাকে ইকামত ও তাকবীর বলে। তবে তাকবীরের মধ্যে ‘হাইয়া আলাল ফালাহ’ এর পর

قَدْ قَامَتِ الصَّلَاةُ قَدْ قَامَتِ الصَّلَاةُ

ক্বাদক্বামিতসসালাহ, ক্বাদক্বামিতসসালাহ

অর্থাৎ নামায দাড়ানোর সময় হয়েছে, নামায দাড়ানোর সময় হয়েছে।

কালিমাটি দুইবার আযানের কালিমাগুলো থেকে বৃদ্ধি করে বলতে হয়।

প্রশ্ন: যে ব্যক্তি আযান ও তাকবীর বলে তাকে কি বলে?

উত্তর: যে ব্যক্তি আযান দেয় তাকে ‘মুয়াযযিন’ এবং যে তাকবীর বলে তাকে ‘মুকাব্বির’ বলে।

প্রশ্ন: অনেক লোক একসাথে মিলে যে নামায পড়ে তার মধ্যে ঐ নামাযকে এবং যে নামায পড়ায় তাকে আর যারা নামায পড়ে তাদেরকে কি বলে?

উত্তর: অনেক লোক একসাথে মিলে যে নামায পড়ে তাকে ‘জামাতে নামায’ বলে। যে নামায পড়ায় তাকে ‘ইমাম’ বলে। আর তার পিছনে যারা নামায পড়ে তাদেরকে ‘মুক্তাদী’ বলে।

প্রশ্ন: একাকী নামায আদায়কারীকে কি বলে?

উত্তর: একাকী নামায আদায়কারীকে ‘মুনফারিদ’ বলে।

প্রশ্ন: যেই ঘর বিশেষভাবে নামাযের জন্য বানানো হয় এবং তার মধ্যে জামাতের সাথে নামায হয়ে থাকে, তাকে কি বলে?

উত্তর: তাকে মসজিদ বলে।

প্রশ্ন: মসজিদে গিয়ে কি করা উচিত?

উত্তর: মসজিদে নামায পড়া, কুরআন শরীফ পড়া অথবা অপর কোন ওযীফা (যিকির-আযকার) পড়া, অথবা চুপ করে বসে থাকা উচিত। মসজিদে খেলাধুলা করা, চিৎকার চেঁচামেচি করা গর্হিত কাজ।

প্রশ্ন: নামায পড়ার দ্বারা কি ফায়দা বা লাভ হয়?

উত্তর: নামায পড়ার দ্বারা অনেক লাভ ও উপকার হয়ে থাকে। কিছু তোমাকে বলছি-

১. নামাযী ব্যক্তির শরীর ও কাপড় পাক-পবিত্র ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকে।

২. নামাযী ব্যক্তির প্রতি আল্লাহ তাআলা রাযী খুশি হন।

৩. হযরত মুহাম্মদ (সা) নামাযীর প্রতি রাযী খুশি হন।

৪. নামাযী ব্যক্তি আল্লাহ তাআলার নিকট ভাল হয়।

৫. দুনিয়াতে ভাল লোকেরা নামাযীকে সম্মান করে।

৬. নামাযী ব্যক্তি অনেক গুনাহ থেকে নিরাপদ থাকে।

৭. মৃত্যুর পর নামাযীকে আল্লাহ তাআলা সুখে-শান্তিতে রাখেন।

প্রশ্ন: নামায যা কিছু পাঠ করা হয় তার নাম ও ইবারতগুলো কি?

উত্তর: নামাযের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত যা কিছু পাঠ করা হয় তার নাম ও শব্দাবলী এগুলো-

তাকবীর

اللَّهُ أَكْبَرُ

আল্লাহু আকবার

আল্লাহ মহান।

সানা

سُبْحَانَكَ اللَّهُمَّ وَبِحَمْدِكَ وَتَبَارَكَ اسْمُكَ وَتَعَالَى جَدُّكَ وَلَا إِلَهَ غَيْرُكَ

সুবহানাকাল্লাহুম্মা। ওয়া বিহামদিকা। ওয়া তাবারাকাসমুকা। ওয়া তাআলা যাদ্দুকা। ওয়া লা ইলাহা গায়রুক।

হে আল্লাহ! তুমি পূত পবিত্র। তোমার জন্যই সব প্রশংসা। তোমার নাম বরকতপূর্ণ। তোমার উচ্চতা অনেক উর্ধ্বে। তুমি ব্যতীত কোন মাবুদ নাই।

তাআউউয

أَعُوذُ بِاللَّهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيمِ

আউযু বিল্লাহি মিনাশ শাইতানির রাজীম।

আমি বিতাড়িত শয়তান থেকে আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করছি।

তাসমিয়াহ

بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম।

দয়াময় অতি দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি।

আলহামদু বা সূরা ফাতিহা

بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ (1) الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ (2) الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ (3) مَالِكِ يَوْمِ الدِّينِ (4) إِيَّاكَ نَعْبُدُ وَإِيَّاكَ نَسْتَعِينُ (5) اهْدِنَا الصِّرَاطَ الْمُسْتَقِيمَ (6) صِرَاطَ الَّذِينَ أَنْعَمْتَ عَلَيْهِمْ غَيْرِ الْمَغْضُوبِ عَلَيْهِمْ وَلَا الضَّالِّينَ (7)

১.বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম। ২.আলহামদু লিল্লাহি রাব্বিল আলামিন। ৩.আররাহমানির রাহিম। ৪.মালিকি ইয়াওমিদদীন। ৫.ইয়্যাকানা’বুদু ওয়া ইয়্যা কানাস্তায়ীন। ৬.ইহদিনাস সিরাতাল মুস্তাকীম। ৭.সিরাতাল্লাযীনা আনআমতা আলাইহিম। গাইরিল মাগদূবি আলাইহিম ওয়ালাদ দাল্লীন।– [আমিন]।

১.দয়াময় পরম দয়ালু আল্লাহর নামে। ২.প্রশংসা  একমাত্র আল্লাহর জন্য  যিনি বিশ্ব জগতের প্রতিপালক। ৩.যিনি পরম দয়ালু ও করুণাময়। ৪.বিচার দিবসের মালিক৷ ৫.আমরা একমাত্র তোমারই ইবাদাত করি এবং  একমাত্র তোমারই কাছে সাহায্য চাই। ৬. তুমি আমাদেরকে সরল পথ প্রদর্শন কর। ৭.তাদের পথ যাদের প্রতি তুমি অনুগ্রহ করেছ। তাদের পথ নয় যারা ক্রোধে নিপতিত ও পথভ্রষ্ট।– সূরা আল ফাতিহা

সূনা কাউসার

إِنَّا أَعْطَيْنَاكَ الْكَوْثَرَ (1) فَصَلِّ لِرَبِّكَ وَانْحَرْ (2) إِنَّ شَانِئَكَ هُوَ الْأَبْتَرُ (3)

১.ইন্না আ’তাইনা কাল কাউসার। ২.ফাসল্লি লিরাব্বিকা ওয়ানহার। ৩.ইন্না শানিআকা হুআল আবতার।

১.নিশ্চয় আমি আপনাকে কাওসার দান করেছি। ২.অতএব আপনার পালনকর্তার উদ্দেশ্যে নামায পড়ুন এবং কোরবানী করুন। ৩.যে আপনার শত্রু, সেই তো লেজকাটা, নির্বংশ।

সূরা ইখলাস

قُلْ هُوَ اللَّهُ أَحَدٌ (1) اللَّهُ الصَّمَدُ (2) لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُولَدْ (3) وَلَمْ يَكُنْ لَهُ كُفُوًا أَحَدٌ (4)

১.কুলহু আল্লাহু আহাদ। ২.আল্লাহুস সামাদ। ৩.লাম ইয়ালিদ ওয়ালাম ইয়ূলাদ। ৪.ওয়ালাম ইয়াকুল্লাহু কুফুওয়ান আহাদ।

১.বলুন, তিনি আল্লাহ এক। ২.আল্লাহ অমুখাপেক্ষী। ৩.তিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং কেউ তাকে জন্ম দেয়নি। ৪.আর তার সমতুল্য কেউ নেই।

সূরা ফালাক

قُلْ أَعُوذُ بِرَبِّ الْفَلَقِ (1) مِنْ شَرِّ مَا خَلَقَ (2) وَمِنْ شَرِّ غَاسِقٍ إِذَا وَقَبَ (3) وَمِنْ شَرِّ النَّفَّاثَاتِ فِي الْعُقَدِ (4) وَمِنْ شَرِّ حَاسِدٍ إِذَا حَسَدَ (5)

১.কুল আউযু বিরাব্বিল ফালাক। ২.মিন শাররি মা খালাক। ৩.ওয়া মিন শাররি গাসিকিন ইযা ওয়াকাব। ৪.ওয়ামিন শাররিন নাফফাসাতি ফিল উকাদ। ৫.ওয়া মিন শাররি হাসিদিন ইযা হাসাদ।

১.বলুন, আমি আশ্রয় গ্রহণ করছি প্রভাতের পালনকর্তার। ২.তিনি যা সৃষ্টি করেছেন তার অনিষ্ট থেকে। ৩.অন্ধকার রাত্রির অনিষ্ট থেকে যখন তা সমাগত হয়। ৪.গ্রন্থিতে ফুঁৎকার দিয়ে জাদুকারিনীদের অনিষ্ট থেকে। ৫.আর হিংসুকের অনিষ্ট থেকে যখন সে হিংসা করে।

সূরা নাস

قُلْ أَعُوذُ بِرَبِّ النَّاسِ (1) مَلِكِ النَّاسِ (2) إِلَهِ النَّاسِ (3) مِنْ شَرِّ الْوَسْوَاسِ الْخَنَّاسِ (4) الَّذِي يُوَسْوِسُ فِي صُدُورِ النَّاسِ (5) مِنَ الْجِنَّةِ وَالنَّاسِ (6)

১.কুল আউযু বিরাব্বিন নাস। ২.মালিকিন নাস। ৩.ইলাহিন নাস। ৪.মিন শাররিল ওয়াসওয়াসিল খান্নাস। ৫.আল্লাযী ইয়ূওয়াস উয়িসু ফি সুদূরিন নাস। ৬.মিনাল জিন্নাতি ওয়ান নাস।

১.বলুন, আমি আশ্রয় গ্রহণ করছি মানুষের পালনকর্তার। ২.মানুষের অধিপতির। ৩.মানুষের মা’বুদের। ৪.তার অনিষ্ট থেকে যে কুমন্ত্রণা দেয় ও আত্নগোপন করে। ৫.যে কুমন্ত্রণা দেয় মানুষের অন্তরে। ৬.জ্বিনের মধ্য থেকে অথবা মানুষের মধ্য থেকে।

 

রুকু

অর্থাৎ অবনত অবস্থায় যে তাসবীহ পড়বে

سُبْحَانَ رَبِّيَ الْعَظِيمِ

সুবহানা রাব্বিয়াল আযীম

আমি আমার মহান প্রতিপালকের পবিত্রতা বর্ণনা করছি।

কাওমা

রুকু থেকে দাড়ানোর সময় যা পড়তে হয়

سَمِعَ اللَّهُ لِمَنْ حَمِدَهُ

সামিআল্লাহু লিমান হামিদাহ

আল্লাহ তাআলা শুনতে পান, যে তার প্রশংসা করে।

তামহীদ

রুকু থেকে দাড়ানোর পর যা পড়তে হয়

رَبَّنَا لَكَ الْحَمْدُ

রাব্বানা লাকাল হামদ

হে আমার প্রতিপালক! তোমার জন্যই সকল প্রশংসা।

সাজদা

অর্থাৎ মাটিতে মাথা রেখে যে তাসবীহ পড়বে

سُبْحَانَ رَبِّيَ الْأَعْلَى

সুবহানা রাব্বিয়াল আলা

আমি আমার সমুচ্চ প্রতিপালকের পবিত্রতা বর্ণনা করছি।

তাশাহুদ বা আত্তাহিয়্যাতু

التَّحِيَّاتُ لِلَّهِ وَالصَّلَوَاتُ وَالطَّيِّبَاتُ السَّلَامُ عَلَيْكَ أَيُّهَا النَّبِيُّ وَرَحْمَةُ اللَّهِ وَبَرَكَاتُهُ السَّلَامُ عَلَيْنَا وَعَلَى عِبَادِ اللَّهِ الصَّالِحِينَ أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ

আত্তাহিয়্যাতু লিল্লাহি,  ওয়াস সালাওয়াতু, ওয়াত তাইয়্যিবাতু। আসসালামু আলাইকা, আইয়্যুহান নাবিয়্যু, ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ। আসসালামু আলাইনা, ওয়া আলা ইবাদিল্লাহিস  সালিহীন। আশহাদু আল- লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু, ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসুলুহু।

সব সম্মান ও  শ্রদ্ধা, সব নামাজ ও ইবাদত এবং সকল প্রকার পবিত্রতা একমাত্র আল্লাহর উদ্দেশ্যে। হে নবী, আপনার প্রতি সালাম, আল্লাহর রহমত এবং বরকত বর্ষিত হউক। আমাদের ও আল্লাহর নেক বান্দাদের উপরও আল্লাহর শান্তি বর্ষিত হউক। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া আর কোন মাবুদ নেই। আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে হযরত মুহাম্মদ (সা) আল্লাহর বান্দা এবং রাসুল ।

দরূদ শরীফ

اللَّهُمَّ صل عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ إِنَّكَ حُمَيْدٌ مجيد اللَّهُمَّ بَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا بَارَكْتَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ إِنَّك حميد مجيد

আল্লহুম্মা সাল্লি আ’লা মুহাম্মাদিউ ওয়া আ’লা আলি মুহাম্মাদিন, কামা সাল্লাইতা আ’লা ইবরাহীমা ওয়া আ’লা আলি ইবরাহীম, ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ। আল্লাহুম্মা বারিক আ’লা মুহাম্মাদিউ ওয়া আ’লা আলি মুহাম্মাদিন,  কামা বারাকতা আ’লা ইবরাহীমা ওয়া আ’লা আলি ইবরাহীমা ইন্নাকা হামিদুম মাজীদ ।

হে আল্লাহ, রহমত প্রেরণ কর হযরত মুহাম্মাদ (সা) এর প্রতি এবং তার বংশধরদের প্রতি, যেমন রহমত করেছ হযরত ইব্রাহীম (আ) ও তার বংশধরদের উপর। নিশ্চয়ই তুমি প্রশংসিত ও সম্মানিত। হে আল্লাহ, বরকত নাযিল কর হযরত মুহাম্মাদ (সা) এর প্রতি এবং তার বংশধরদের প্রতি, যেমন করেছ হযরত ইবরাহীম (আ) ও তার বংশধরদের উপর। নিশ্চয়ই তুমি প্রশংসিত ও সম্মানিত।

দুআ মাসূরা

اللَّهُمَّ إِنِّي ظَلَمْتُ نَفْسِي ظُلْمًا كَثِيرًا وَلَا يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلَّا أَنْتَ فَاغْفِرْ لِي مَغْفِرَةً مِنْ عنْدك وارحمني إِنَّك أَنْت الغفور الرَّحِيم

আল্লাহুম্মা ইন্নী যালামতু নাফসী যুলমান কাসীরান ওয়া লা-ইয়াগফিরুয যুনূবা ইল্লা আনতা ফাগফিরলী মাগফিরাতাম মিন ইনদিকা ওয়ার হামনী ইন্নাকা আনতাল গাফুরুর রাহীম।

হে আল্লাহ! আমি আমার নিজের উপর অনেক যুলুম করেছি। আর তুমি ব্যতীত অন্য কেউ গুনাহ মাফ করতে পারে না। অতএব অমাকে তোমার পক্ষ থেকে মাফ করে দাও এবং আমার প্রতি রহম কর। নিশ্চই তুমি ক্ষমাশীল ও দয়ালু।

সালাম

 السَّلَامُ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَةُ اللَّهِ

আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাল্লাহ

তোমাদের প্রতি আল্লাহর শান্তি ও নিরাপত্তা এবং রহমত বর্ষিত হোক।

নামাযের পরের দুআ

اللَّهُمَّ أَنْتَ السَّلَامُ وَمِنْكَ السَّلَامُ تَبَارَكْتَ يَا ذَا الْجلَال وَالْإِكْرَام

আল্লাহুম্মা আনতাস সালাম। ওয়া মিনকাস সালাম। তাবারাকতা ইয়া যালযালালি ওয়াল ইকরাম।

হে আল্লাহ! তুমিই শান্তি (দাতা) এবং শান্তি তোমার থেকেই আসে। তুমি বরকতময়। হে মহত্ব ও বড়ত্বের অধিকারী।

দুআ কুনুত

اللَّهُمَّ إِنَّا نَسْتَعِينُكَ، وَنَسْتَغْفِرُكَ، وَنُؤْمِنُ بِكَ، وَنَتَوَكَّلُ عَلَيْكَ، وَنُثْنِي عَلَيْكَ الْخَيْرَ ،وَنَشْكُرُكَ وَلَا نَكْفُرُكَ ، وَنَخْلَعُ وَنَتْرُكُ مَنْ يَفْجُرُكُ، اللَّهُمَّ إِيَّاكَ نَعْبُدُ، وَلَكَ نُصَلِّي وَنَسْجُدُ، وَإِلَيْكً نَسْعَى وَنَحْفِدُ، وَنَرْجُو رَحْمَتَكَ، وَنَخْشَى عَذَابَكَ،إِنَّ عَذَابَكَ بِالْكُفَّارِ مُلْحَقٌ

আল্লাহুম্মা ইন্না নাসতা-ঈনুকা ওয়া নাসতাগফিরুকা, ওয়া নু’মিনু বিকা, ওয়া নাতাওয়াক্কালু আলাইকা, ওয়া নুছনি আলাইকাল খাইর। ওয়া নাশকুরুকা, ওয়ালা নাকফুরুকা। ওয়া নাখ লা’উ, ওয়া নাতরুকু, মাঁইয়্যাফ জুরুকা। আল্লাহুম্মা ইয়্যাকা না’বুদু ওয়ালাকা নুছাল্লি, ওয়া নাসজুদু ওয়া ইলাইকা নাস’আ, ওয়া নাহফিদু ওয়া নারজু রাহমাতাকা, ওয়া নাখ’শা আযাবাকা ইন্না আযা-বাকা বিল কুফফারি মুলহিক্ব।

হে আল্লাহ! আমরা তোমার কাছেই সাহায্য চাই। তোমার  কাছেই গুনাহর ক্ষমা প্রার্থনা করি। তোমার প্রতিই ঈমান রাখি। তোমার উপরই ভরসা করি। তোমার উত্তম প্রশংসা করি। আমরা তোমার শোকর আদায় করি, নাশোকরী করি না। যারা তোমার  অবাধ্য হয় তাকে আমরা পৃথক ও পরিত্যাগ করি। হে আল্লাহ, আমরা তোমারই ইবাদত করি, তোমার  জন্যই নামায পড়ি এবং তোমাকেই সিজদা করি। আমরা তোমার দরবারে দৌড়ে আসি এবং তোমার দিকেই ধাবিত হই। আমরা তোমার রহমতের আশা করি এবং তোমার শাস্তিকে ভয় করি। নিশ্চই তোমার  আযাব কাফিরদেরকে বেষ্টন করবে।

ওযু করার নিয়ম

প্রশ্ন: ওযু কিভাবে করা উচিত।

উত্তর: পবিত্র পাত্রে পানি নিয়ে উঁচু স্থানে বসবে। কিবলার দিকে মুখ করে নিলে ভাল হয়, তবে এই সুযোগ না থাকলে সমস্যা নেই। আস্তিন কনুই এর উপর পর্যন্ত গুটিয়ে নাও। অতঃপর বিসমিল্লাহ পাঠ করে তিনবার কব্জি পর্যন্ত উভয় হাত ধৌত কর। এরপর তিনবার কুলি কর। যদি মিসওয়াক না থাকে তবে আঙ্গুল দ্বারা (দাঁত) মেজে নাও। অতঃপর তিনবার নাকে পানি দিয়ে বাম হাতের ছোট আঙ্গুল দিয়ে (ভালভাবে) পরিষ্কার করে নাও। এরপর তিনবার মুখ ধৌত কর। মুখের মধ্যে পানি জোরে মেরো না, বরং আস্তে আস্তে কপালের দিকে পানি দিয়ে ধৌত কর। কপালের চুল থেকে নিয়ে থুতনির নিচ পর্যন্ত এবং উভয় পাশের কানের লতি পর্যন্ত থৌত করতে হবে। অতঃপর কনুই পর্যন্ত তিনবার উভয় হাত ধৌত কর। প্রথমে ডান হাত তিনবার, তারপর বাম হাত তিনবার ধৌত করতে হবে। অতঃপর হাত পানিতে ভিজিয়ে মাথা মাসেহ করবে, এরপর কান, এরপর গর্দান মাসেহ করবে। মাসেহ শুধু একবার করে করবে। অতঃপর উভয় পা টাখনু পর্যন্ত তিনবার করে ধৌত করবে। প্রথমে ডান পা এরপর বাম পা ধৌত করবে।

নামায পড়ার নিয়ম

প্রশ্ন: নামায পড়ার নিয়ম কি?

উত্তর: নামায পড়ার নিয়ম হলো- ওযু করে পবিত্র কাপড় পরিধান কর। পবিত্র স্থানে কিবলার দিকে মুখ করে দাড়াও। নামাযের নিয়ত করে উভয় হাত কান পর্যন্ত উঠাও এবং ‘আল্লাহু আকবার’ বলে হাত নাভির নিচে বাঁধ। ডান হাত উপরে এবং বাম হাত তার নিচে থাকবে। নামাযের মধ্যে এদিক সেদিক তাকাবে না। আদবের সাথে দাড়িয়ে থাকবে। আল্লাহর দিকে ধ্যান রাখবে। হাত বেঁধে সানা পাঠ কর। অতঃপর তাআউউয- ‘আউযু বিল্লাহি মিনাশ শাইতানির রাজীম’ এবং তাসমিয়াহ- ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’ পড়ে আলহামদু সূরা পাঠ কর। আলহামদু সূরা শেষ করে আস্তে আমিন বল। এরপর সূরা কুলহুআল্লাহ অথবা যেই সূরা মুখস্থ আছে তা পাঠ কর।

অতঃপর আল্লাহুআকবার বলে রুকুর জন্য ঝুঁকে যাও। রুকুতে উভয় হাত দ্বারা হাঁটু ধর। রুকুর তাসবীহ তিন, পাঁচ অথবা সাতবার পাঠ কর। অতঃপর তাসমী’ অর্থাৎ ‘সামিআল্লাহু লিমান হামিদাহ’ বলে সোজা দাড়িয়ে যাও। তাহমীদ অর্থাৎ ‘রাব্বানা লাকাল হামদও’ পড়ে নাও।

অতঃপর তাকবীর বলতে বলতে এমনভাবে সিজদায় যাও যে, প্রথমে দুই হাটু মাটিতে রাখ। এরপর দুই হাত রাখ। তারপর দুই হাতের মাঝখানে প্রথমে নাক তারপর কপাল মাটিতে রাখ। সিজদার তাসবীহ অর্থাৎ সুবহানা রাব্বিআল আলা তিনবার, পাঁচবার অথবা সাতবার পাঠ কর। অতঃপর তাকবীর বলতে বলতে উঠ এবং সোজা হয়ে বসে যাও। অতঃপর তাকবীর বলে অনুরুপভাবে দ্বিতীয় সিজদা কর। এরপর তাকবীর বলতে বলতে উঠে দাড়াও। উঠার সময় মাটিতে হাত ভর দিও না। সিজদা পর্যন্ত এক রাকাত পুরা হয়ে গেল।

এখন দ্বিতীয় রাকাত শুরু হলো। তাসমিয়া পাঠ করে আলহামদু সূরা পড় আর তার সাথে কোন সূরা মিলাও। অতঃপর রুকু কওমা এবং দুই সিজদা করে বসে যাও। বসে প্রথমে তাশাহুদ পড়। অতঃপর দরূদ শরীফ অতঃপর দুআ পড়। অতঃপর সালাম ফিরাও। প্রথমে ডান দিকে পরে বাম দিকে। সালাম ফিরানোর সময় ডান ও বাম দিকে মুখ ফিরিয়ে নাও। এই দুই রাকাত নামায পুরা হয়ে গেল। সালাম ফিরিয়ে পাঠ কর-

اللَّهُمَّ أَنْتَ السَّلَامُ وَمِنْكَ السَّلَامُ تَبَارَكْتَ يَا ذَا الْجَلَالِ وَالْإِكْرَامِ

আল্লাহুম্মা আনতাস সালাম। ওয়া মিনকাস সালাম। তাবারাকতা ইয়া যালযালালি ওয়াল ইকরাম।

অতঃপর হাত উঠিয়ে আল্লাহর কাছে দুআ কর। হাত খুব বেশী উপরে উঠিও না। অর্থাৎ মাথার উপরে উঠিও না। দুআ শেষ করে উভয় হাত মুখে ফিরিয়ে নাও।

প্রশ্ন: দুই সিজদার মাঝে এবং তাশাহুদ পাঠ করার সময় কিভাবে বসা উচিৎ।

উত্তর: ডান পা খাড়া রাখ- তার আঙ্গুলগুলো কিবলার দিকে থাকবে। আর বাম পা বিছিয়ে তার উপর বসে যাও। বসা অবস্থায় হাত হাটুর উপর রাখা চাই।

প্রশ্ন: ইমাম, মুনফারিদ এবং মুক্তাদির নামাযে কোন পার্থক্য আছে কি

উত্তর: হ্যাঁ, ইমাম, মুনফারিদ এবং মুক্তাদির নামাযে কিছু পার্থক্য আছে। আর তা হলো, ইমাম ও মুনফারিদ প্রথম রাকাতে সানার পর আউযুবিল্লাহ, বিসমিল্লাহ পাঠ করে আলহামদু শরীফ ও সূরা পাঠ করে।  কিন্তু মুক্তাদির শুধু প্রথম রাকাতে সানা পাঠ করে উভয় রাকাতে চুপ করে দাড়িয়ে থাকতে হয়। দ্বিতীয় পার্থক্য এই যে, রুকু থেকে উঠার সময় ইমাম এবং মুনফারিদ ‘সামিআল্লাহু ‍লিমান হামিদাহ’ বলে আর মুনফারিদ তাসমির সাথে তাহমীদও পাঠ করতে পারে। কিন্তু মুক্তদীকে শুধু ‘রাব্বানা লাকাল হামদ’ বলতে হয়।

প্রশ্ন: নামায যদি তিন অথবা চার রাকাত পড়তে হয় তবে কিভাবে পড়বে।

উত্তর: দুই রাকাত তো ঐভাবেই পড়বে যেভাবে পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে (প্রথম) বৈঠকে আত্তাহিয়্যাতু ও তাশাহুদ এর পর দরুদ শরীফ পড়বে না বরং ‘আল্লাহু আকবার’ বলে দাড়িয়ে যাবে। আর যদি নামায ওয়াজিব অথবা সুন্নত অথবা নফল হয়, তবে দুই রাকাত প্রথম দুই রাকাতের মতই পড়বে। আর যদি ফরয হয় তবে তৃতীয় ও চতুর্থ রাকাতে সুরা ফাতিহার পর কোন সূরা পড়বে না। বাকী আর সব ঐভাবেই পড়বে যেভাবে প্রথম দুই রাকাতে পড়েছে।

প্রশ্ন: সুন্নত অথবা নফল নামায কি তিন রাকাত পড়া যায় কি?

উত্তর: সুন্নত অথবা নফল নামায তিন রাকাত হয় না, দুই অথবা চার রাকাত হয়ে থাকে।

প্রশ্ন: রুকু করার সঠিক পদ্ধতি কি?

উত্তর: রুকু এভাবে করবে যে, কোমর ও মাথা সমান থাকবে। অর্থাৎ মাথা কোমর থেকে না উঁচু থাকবে আর না নিচু থাকবে। আর উভয় হাত পাঁজর থেকে আলাদা থাকবে। আর হাঁটুকে উভয় হাত দ্বারা মজবুতভবে ধরে নেবে।

প্রশ্ন: সিজদা করার সঠিক পদ্ধতি কি?

উত্তর: সিজদা এভাবে করবে যে, হাতের পাঞ্জা মাটিতে থাকবে। কব্জি ও কনুই মাটি থেকে উঁচুতে থাকবে। আর পেট রান থেকে পৃথক থাকবে। আর উভয় হাত পাঁজর থেকে আলাদা থাকবে।

প্রশ্ন: নামাযের পর আঙ্গুলে গণনা করে কি পাঠ করা হয়?

উত্তর: সুবহানাল্লাহ ৩৩ বার, আলহামদুলিল্লাহ ৩৩ বার এবং আল্লাহু আকবার ৩৪ বার করে পাঠ করে। এর অনেক সওয়াব (ও ফযীলত) রয়েছে।

 

□       □       □       □       □

 

তা’লীমুল ইসলাম ১ম ভাগ সমাপ্ত

 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to top button
error: Content is protected !!