আত তারগীব ওয়াত তারহীব- আল মুনযিরী (রহ)- কিতাবুল ইখলাস
দারুস সাআদাত গ্রন্থ
গ্রন্থঃ মুখতাসার আত তারগীব ওয়াত তারহীব
লেখক, আল মুনযিরী (রহ)
অনুবাদঃ দারুস সাআদাত কর্তৃক সংকলিত ও অনূদিত
স্বত্বঃ দারুস সাআদাত কর্তৃক সংরক্ষিত, বিনানুমতিতে কপি করা, মূদ্রণ করা এবং এপে ব্যবহার করলে আইনত দণ্ডনীয়।
বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম
আত তারগীব ওয়াত তারহীব
التَّرْغِيب فِي الْإِخْلَاص والصدق وَالنِّيَّة الصَّالِحَة
১.ইখলাস, সততা ও নেক নিয়তের প্রতি উৎসাহ প্রদান
হাদীস ১ (৩)
وَعَن أبي فراس رجل من أسلم قَالَ نَادَى رجل فَقَالَ يَا رَسُول الله مَا الْإِيمَان قَالَ الْإِخْلَاص. رَوَاهُ الْبَيْهَقِيّ
আবু ফিরাস (রা) বর্ণনা করেন। এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (সা)-কে জিজ্ঞাসা করল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! ইমান কি? তিনি (সা) বললেন, ইখলাস (কথায় ও কাজে নিষ্ঠা)।-সহিহ
বায়হাকী হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
হাদীস ২ (৪)
وَعَن معَاذ بن جبل أَنه قَالَ حِين بعث إِلَى الْيمن يَا رَسُول الله أوصني قَالَ أخْلص دينك يكفك الْعَمَل الْقَلِيل. رَوَاهُ الْحَاكِم
হযরত মুআয ইবনে জাবাল (রা) বর্ণনা করেন। যখন তাকে ইয়ামানের দিকে পাঠানো হয় তখন তিনি আরয করেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমাকে উপদেশ দিন। তখন রাসূলুল্লাহ (সা) বললেন, তোমার দীনের ব্যাপারে ইখলাস অবলম্বন কর অল্প আমলই তোমার জন্য যথেষ্ট হবে।–যয়ীফ
হাকীম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
হাদীস ৩ (৭)
وَعَن مُصعب بن سعد عَن أَبِيه رَضِي الله عَنهُ أَنه ظن أَن لَهُ فضلا على من دونه من أَصْحَاب رَسُول الله صلى الله عَلَيْهِ وَسلم فَقَالَ النَّبِي صلى الله عَلَيْهِ وَسلم إِنَّمَا ينصر الله هَذِه الْأمة بضعيفها بدعوتهم وصلاتهم وإخلاصهم.
رَوَاهُ النَّسَائِيّ وَغَيره وَهُوَ فِي البُخَارِيّ وَغَيره دون ذكر الْإِخْلَاص
হযরত মুসআব ইবনে সাদ (রা) তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন। একবার তার এই খেয়াল হলো যে, অন্যদের তুলনায় তার বিশেষ মর্যাদা রয়েছে। তখন রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন- আল্লাহ তাআলা এই উম্মতকে সাহায্য করেন তাদের দুর্লদের দুআ, নামায ও ইখলাসের কারণে।-সহিহ
হাদীসটি নাসাঈ ও অন্যান্যরা বর্ণনা করেছেন। এটি ইমাম বুখারীও বর্ণনা করেছেন, তবে তার রিওয়ায়াতে ইখলাস শব্দটি নেই।
হাদীস ৪ (৯)
وَعَن أبي أُمَامَة قَالَ جَاءَ رجل إِلَى رَسُول الله صلى الله عَلَيْهِ وَسلم فَقَالَ أَرَأَيْت رجلا غزا يلْتَمس الْأجر وَالذكر مَا لَهُ فَقَالَ رَسُول الله صلى الله عَلَيْهِ وَسلم لَا شَيْء لَهُ فَأَعَادَهَا ثَلَاث مرار وَيَقُول رَسُول الله صلى الله عَلَيْهِ وَسلم لَا شَيْء لَهُ ثمَّ قَالَ إِن الله عز وَجل لَا يقبل من الْعَمَل إِلَّا مَا كَانَ لَهُ خَالِصا وابتغي وَجهه.
رَوَاهُ أَبُو دَاوُد وَالنَّسَائِيّ بِإِسْنَاد جيد
হযরত আবু উমামা (রা) থেকে বর্ণিত। এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (সা) এর নিকট হাজির হয়ে আরয করলো, ইয়া রাসূলাল্লাহ! এমন ব্যক্তির ব্যাপারে আপনার কি অভিমত যে জিহাদের জন্য বের হলো আর তার উদ্দেশ্য হলো সওয়াব ও খ্যাতিলাভ- উভয়টিই লাভ করা। তবে কি সে কোন সওযাব পাবে? রাসূলুল্লাহ (সা) বললেন, সে কোন প্রতিদান পাবে না। প্রশ্নকারী ব্যক্তি তিনবারই এই কথা জিজ্ঞাসা করলে রাসূলুল্লাহ (সা) তিনবারই বললেন, সে কোন প্রতিদান পাবে না। তারপর রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন- আল্লাহ তাআলা খালিসভাবে তার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্য ছাড়া কোন আমল কবুল করেন না।-হাসান
আবু দাউদ ও নাসাঈ উত্তম সনদে হাদীসটি বর্ননা করেছেন।
হাদীস ৫ (১০)
وَعَن أبي الدَّرْدَاء عَن النَّبِي صلى الله عَلَيْهِ وَسلم قَالَ الدُّنْيَا ملعونة مَلْعُون مَا فِيهَا إِلَّا مَا ابْتغِي بِهِ وَجه الله تَعَالَى.
رَوَاهُ الطَّبَرَانِيّ بِإِسْنَاد لَا بَأْس بِهِ
হযরত আবু দারদা (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন- দুনিয়া এবং দুনিয়ার মধ্যে যা আছে সব অভিভশপ্ত, শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে যা করা হয় তা ব্যতীত।–হাসান লিগায়রিহী
তাবরানী হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
হাদীস ৬ (১১)
وَعَن عبَادَة بن الصَّامِت رَضِي الله عَنهُ قَالَ يجاء بالدنيا يَوْم الْقِيَامَة فَيُقَال ميزوا مَا كَانَ مِنْهَا لله عز وَجل فيماز ويرمى سائره فِي النَّار. رَوَاهُ الْبَيْهَقِيّ عَن شهر بن حَوْشَب عَنهُ مَوْقُوفا
হযরত উবাদা ইবনুস সামিত (রা) বলেন, কিয়ামতের দিন দুনিয়াকে আনা হবে এবং বলা হবে এখানে যা কিছু আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য রয়েছে তা পৃথক কর। তখন সেসব পৃথক করা হবে আর বাকী সব কিছু আগুনে জ্বালিয়ে দেয়া হবে।–যয়ীফ মাওকুফ
ইমাম বায়হাকী শহর বিন হাউশাব থেকে মাওকুফ সূত্রে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন
হাদীস ৭ (১৩)
وَرُوِيَ عَن ابْن عَبَّاس رَضِي الله عَنْهُمَا أَن رَسُول الله صلى الله عَلَيْهِ وَسلم قَالَ من أخْلص لله أَرْبَعِينَ يَوْمًا ظَهرت ينابيع الْحِكْمَة من قلبه على لِسَانه. ذكره رزين الْعَبدَرِي فِي كِتَابه
হযরত ইবনে আব্বাস (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন- যে ব্যক্তি ইখলাসের সাথে চল্লিশটি দিন অতিবাহিত করে, তখন তার অন্তর হতে যবানের দিকে হিকমত ও প্রজ্ঞার ঝর্ণাধারা প্রবাহিত হয়।-যয়ীফ
রাযীন আবদারী তার কিতাবে এটি বর্ণনা করেছেন।
অনুচ্ছেদ
হাদীস ৮ (১৫)
عَن عمر بن الْخطاب رَضِي الله عَنهُ قَالَ سَمِعت رَسُول الله صلى الله عَلَيْهِ وَسلم يَقُول إِنَّمَا الْأَعْمَال بِالنِّيَّةِ وَفِي رِوَايَة بِالنِّيَّاتِ وَإِنَّمَا لكل امرىء مَا نوى.
رَوَاهُ البُخَارِيّ وَمُسلم وَأَبُو دَاوُد وَالتِّرْمِذِيّ وَالنَّسَائِيّ
হযরত উমর (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন- আমলের প্রতিদান তার নিয়ত অনুযায়ী হয়। আর মানুষ যেমন নিয়ত করে তেমন প্রতিদানই সে পায়।-সহিহ
হাদীসটি বুখারী, মুসলিম, তিরমিযী, আবু দাউদ ও নাসাঈ বর্ণনা করেছেন।
হাদীস ৯ (১৭)
وَعَن أبي هُرَيْرَة قَالَ قَالَ رَسُول الله صلى الله عَلَيْهِ وَسلم إِنَّمَا يبْعَث النَّاس على نياتهم. رَوَاهُ ابْن مَاجَه بِإِسْنَاد حسن
হযরত আবু হুরায়রা (রা) বর্ণনা করেন। রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন- মানুষ তার নিয়ত অনুযায়ী পূণরুত্থতি হবে।–সহিহ লিগায়রিহী
ইবনে মাজাহ হাদীসটি হাসান সনদে বর্ণনা করেছেন
হাদীস ১০ (১৯)
وَعَن أبي هُرَيْرَة قَالَ قَالَ رَسُول الله صلى الله عَلَيْهِ وَسلم إِن الله لَا ينظر إِلَى أجسامكم وَلَا إِلَى صوركُمْ وَلَكِن ينظر إِلَى قُلُوبكُمْ. رَوَاهُ مُسلم
হযরত আবু হুরায়রা (রা) বর্ণনা করেন। রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন- আল্লাহ তাআলা তোমাদের দেহ ও আকৃতির প্রতি দৃষ্টিপাত করেন না বরং তিনি তোমাদের অন্তরের প্রতি লক্ষ্য করেন।-সহিহ
মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
হাদীস ১১ (২৩)
وَعَن أبي هُرَيْرَة أَن رَسُول الله صلى الله عَلَيْهِ وَسلم من هم بحسنة فَلم يعملها كتبت لَهُ حَسَنَة وَمن هم بحسنة فعملها كتبت لَهُ عشر حَسَنَات إِلَى سَبْعمِائة ضعف وَمن هم بسيئة فَلم يعملها لم تكْتب عَلَيْهِ وَإِن عَملهَا كتبت. رَوَاهُ مُسلم
হযরত আবু হুরায়রা (রা) বর্ণনা করেন। রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন- যে ব্যক্তি নেককাজের ইচ্ছা করে তা করতে পারল না তার জন্য এক নেকী লিখে দেয়া হয়। আর যে ব্যক্তি নেক কাজের ইচ্ছা করে তা বাস্তবায়ন করল তার জন্য দশ গুণ থেকে সাতশত গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি করে দেয়া হয়। অপর দিকে যে ব্যক্তি গুনাহর ইচ্ছা করে তা করতে পারে না, তার জন্য কোন গুনাহ লেখা হয় না। আর যদি সে তা করে ফেলে তবে তার জন্য একটি গুনাহই লিখা হয়।-সহিহ
মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
হাদীস ১২ (২৫)
وَعَن معن بن يزِيد رَضِي الله عَنْهُمَا قَالَ كَانَ أبي يزِيد أخرج دَنَانِير يتَصَدَّق بهَا فوضعها عِنْد رجل فِي الْمَسْجِد فَجئْت فأخذتها فَأَتَيْته بهَا فَقَالَ وَالله مَا إياك أردْت فَخَاصَمته إِلَى رَسُول الله صلى الله عَلَيْهِ وَسلم فَقَالَ لَك مَا نَوَيْت يَا يزِيد وَلَك مَا أخذت يَا معن. رَوَاهُ البُخَارِيّ
হযরত মান বিন ইয়াযিদ বর্ণনা করেন। একবার আমার পিতা সাদকা করার জন্য কিছু দীনার বের করেন এবং মসজিদে এসে এক ব্যক্তির নিকট রেখে দেন। আমি মসজিদ-এ এসে সেই দীনার গ্রহণ করলাম আর তা নিয়ে পিতার নিকট (ঘরে) গেলাম। তখন তিনি বললেন, আল্লাহর শপথ! এটা আমি তোমাকে দেয়ার ইচ্ছা করিনি। আমি বিষয়টি নবী (সা) এর নিকট উত্থাপন করব। (ঘটনা শুনে) নবী (সা) বললেন- হে ইয়াযিদ! তোমার ঐ প্রতিদান লাভ হয়ে যাবে তুমি যার নিয়ত করেছ আর হে মান! তুমি যা লাভ করেছ তা তোমার।-সহিহ
হাদীসটি বুখারী বর্ণনা করেছেন।
হাদীস ১৩ (২৭)
وَعَن أبي الدَّرْدَاء يبلغ بِهِ النَّبِي صلى الله عَلَيْهِ وَسلم قَالَ من أَتَى فرَاشه وَهُوَ يَنْوِي أَن يقوم يُصَلِّي من اللَّيْل فغلبته عَيناهُ حَتَّى أصبح كتب لَهُ مَا نوى وَكَانَ نَومه صَدَقَة عَلَيْهِ من ربه.
رَوَاهُ النَّسَائِيّ وَابْن مَاجَه بِإِسْنَاد جيد
হযরত আবু দারদা (রা) থেকে বর্ণিত। তার নিকট রাসূলুল্রাহ (সা) এর এই বর্ণনা পৌঁছেছে যে, নবী কারীম (সা) ইরশাদ করেন- যে ব্যক্তি ঘুমানোর জন্য বিছানায় আসল আর তার এই নিয়ত রয়েছে যে, রাতে উঠে তাহাজ্জুদ পড়বে। অতঃপর ঘুম তার উপর প্রবল হলো আর ভোর হয়ে গেল, তাহলে তার জন্য তার নিয়ত অনুযায়ী প্রতিদান লাভ হবে আর তার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে তার ঘুম হবে তার জন্য সাদকা।–হাসান সহিহ
ইমাম নাসাঈ ও ইবনে মাজাহ হাদীসটি উত্তম সনদে বর্ণনা করেছেন।
2 – التَّرْهِيب من الرِّيَاء وَمَا يَقُوله من خَافَ شَيْئا مِنْهُ
২.রিয়া সম্পর্কে ভীতি প্রদর্শন আর যে ব্যক্তি রিয়ার ভয় করবে সে কি পাঠ করবে?
হাদীস ১৪ (৩১)
وَعَن أبي بن كَعْب قَالَ قَالَ رَسُول الله صلى الله عَلَيْهِ وَسلم بشر هَذِه الْأمة بالسناء والرفعة وَالدّين والتمكين فِي الأَرْض فَمن عمل مِنْهُم عمل الْآخِرَة للدنيا لم يكن لَهُ فِي الْآخِرَة من نصيب. رَوَاهُ أَحْمد وَابْن حبَان فِي صَحِيحه وَالْحَاكِم وَالْبَيْهَقِيّ وَقَالَ الْحَاكِم صَحِيح
হযরত উবাই ইবনে কাব (রা) বর্ণনা করেন। রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন- এই উম্মতকে সম্মান, উচ্চ মর্যাদা, দীন ও ভূ-পৃষ্ঠে রাজত্বের সুসংবাদ প্রদান কর। তাদের মধ্যে যে ব্যক্তি আখিরাতের আমল দ্বারা দুনিয়া অর্জন করবে তার জন্য আখিরাতে কোন অংশ নাই।-সহিহ
হাদীসটি আহমদ, ইবনে হিব্বান, হাকীম ও বায়হাকী (রহ) বর্ণনা করেছেন আর হাকীম হাদীসটিকে সহিহ বলেছেন।
হাদীস ১৫ (৩৩)
وَعَن أبي هِنْد الدَّارِيّ أَنه سمع النَّبِي صلى الله عَلَيْهِ وَسلم يَقُول من قَامَ مقَام رِيَاء وَسُمْعَة رايا الله بِهِ يَوْم الْقِيَامَة وَسمع. رَوَاهُ أَحْمد بِإِسْنَاد جيد وَالْبَيْهَقِيّ
হযরত আবু হিন্দ আদ দারী (রা) বর্ণনা করেন। রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন- যে ব্যক্তি রিয়াকারী করবে তথা লোককে দেখানো বা শোনানের উদ্দেশ্যে কোন কাজ করবে, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাকে রিয়াকার হিসাবেই উত্থিত করবেন।-সহিহ
আহমদ উত্তম সনদে এবং বায়হাকী হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
হাদীস ১৬ (৩৪)
وَعَن عبد الله بن عَمْرو رَضِي الله عَنْهُمَا قَالَ سَمِعت رَسُول الله صلى الله عَلَيْهِ وَسلم يَقُول من سمع النَّاس بِعَمَلِهِ سمع الله بِهِ سامع خلقه وصغره وحقره. رَوَاهُ الطَّبَرَانِيّ فِي الْكَبِير
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রা) বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা)-কে বলতে শুনেছি-যে ব্যক্তি কাউকে শোনানের উদ্দেশ্যে কোন আমল করবে আল্লাহ তা মানুষেকে শুনিয়ে দিবেন, তবে তাকে হীন ও অপদস্থ করে দিবেন।-সহিহ
তাবরানী কাবীরে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন
হাদীস ১৭ (৩৫)
وَعَن جُنْدُب بن عبد الله رَضِي الله عَنهُ قَالَ قَالَ النَّبِي صلى الله عَلَيْهِ وَسلم من سمع سمع الله بِهِ وَمن يراء يراء الله بِهِ. رَوَاهُ البُخَارِيّ وَمُسلم
হযরত জুনদুব ইবনে আব্দুল্লাহ (রা) বর্ণনা করেন। রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন- যে ব্যক্তি শোনানের উদ্দেশ্যে কোন আমল করবে আল্লাহ তা শুনিয়ে দিবেন, আর যে দেখানোর উদ্দশ্যে আমল করবে আল্লাহ তা দেখিয়ে দিবেন।-সহিহ
বুখারী ও মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন
হাদীস ১৮ (৩৬)
وَعَن عَوْف بن مَالك الْأَشْجَعِيّ رَضِي الله عَنهُ قَالَ سَمِعت رَسُول الله صلى الله عَلَيْهِ وَسلم يَقُول من قَامَ مقَام رِيَاء رايا الله بِهِ وَمن قَامَ مقَام سمعة سمع الله بِهِ. رَوَاهُ الطَّبَرَانِيّ بِإِسْنَاد حسن
হযরত আউফ ইবনে মালিক আশজায়ী (রা) বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা)-কে বলতে শুনেছি- যে ব্যক্তি রিয়াকারী- লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে আমল করবে, আল্লাহ তাআলা তার রিয়াকারী প্রকাশ করে দিবেন। আর যে খ্যাতির উদ্দেশ্যে আমল করবে আল্লাহ তাআলা তার খ্যাতি (লাভের উদ্দেশ্য) প্রকাশ করে দিবেন।–সহিহ লিগায়রিহী
হাদীসটি তাবরানী উত্তম সনদে বর্ণনা করেছেন
হাদীস ১৯ (৪৫)
وَعَن ابْن مَسْعُود رَضِي الله عَنهُ قَالَ قَالَ رَسُول الله صلى الله عَلَيْهِ وَسلم من أحسن الصَّلَاة حَيْثُ يرَاهُ النَّاس وأساءها حَيْثُ يَخْلُو فَتلك استهانة استهان بهَا ربه تبَارك وَتَعَالَى. رَوَاهُ عبد الرَّزَّاق فِي كِتَابه
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা) বর্ণনা করেন। রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন- যে ব্যক্তি লোকদের সামনে উত্তমভাবে নামায আদায় করে আর গোপনে ভালভাবে নামায আদায় করে না, তাহলে এটা হলো অবজ্ঞা যার দ্বারা সে তার প্রতিপালকের অবজ্ঞা করে।-যয়ীফ
আব্দুর রাযযাক তার গ্রন্থে এটি বর্ণনা করেছেন।
হাদীস ২০ (৪৭)
وَعَن ربيح بن عبد الرَّحْمَن بن أبي سعيد الْخُدْرِيّ عَن أَبِيه عَن جده قَالَ خرج علينا رَسُول الله صلى الله عَلَيْهِ وَسلم وَنحن نتذاكر الْمَسِيح الدَّجَّال فَقَالَ أَلا أخْبركُم بِمَا هُوَ أخوف عَلَيْكُم عِنْدِي من الْمَسِيح الدَّجَّال فَقُلْنَا بلَى يَا رَسُول الله فَقَالَ الشّرك الْخَفي أَن يقوم الرجل فَيصَلي فيزين صلَاته لما يرى من نظر رجل.
رَوَاهُ ابْن مَاجَه وَالْبَيْهَقِيّ
হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রা) বর্ণনা করেন। একবার আমরা দাজ্জাল সম্পর্কে আলোচনা করছিলাম। নবী (সা) আমাদের নিকট তাশরীফ আনলেন এবং বললেন, আমি কি তোমাদেরকে দাজ্জাল থেকেও বেশী ভয়ংকর একটি বিষয়ের কথা বলব না? আমরা আরয করলাম, বলুন ইয়া রাসূলাল্লাহ! তখন রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করলেন- তা হলো গোপন শিরক। আর তা এমন যে, কোন ব্যক্তি নামাযে দাড়াল এবং সুন্দর করে নামায আদায় করলো আর সে তার দ্বারা মানুষের মনোযোগ আকর্ষণ করলো।-হাসান
ইবনে মাজাহ ও বায়হাকী হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
হাদীস ২১ (৪৮)
وَعَن مَحْمُود بن لبيد قَالَ خرج النَّبِي صلى الله عَلَيْهِ وَسلم فَقَالَ يَا أَيهَا النَّاس إيَّاكُمْ وشرك السرائر قَالُوا يَا رَسُول الله وَمَا شرك السرائر قَالَ يقوم الرجل فَيصَلي فيزين صلَاته جاهدا لما يرى من نظر النَّاس إِلَيْهِ فَذَلِك شرك السرائر. رَوَاهُ ابْن خُزَيْمَة فِي صَحِيحه
হযরত মাহমুদ ইবনে লাবীদ (রা) বর্ণনা করেন। একদিন নবী (সা) তাশরীফ আনেন এবং ইরশাদ করেন- হে লোক সকল! গোপন শিরক থেকে বেঁচে থাক! লোকেরা বলল! ইয়া রাসূলাল্লাহ! গোপন শিরক কি? রাসূলুল্লাহ (সা) বললেন, কোন ব্যক্তি নামাযে দাড়ায় অতঃপর তা সুন্দর করার চেষ্টা করে যেন লোকেরা তাকে দেখে, এটাই গোপন শিরক।-হাসান
ইবনে খুযায়মাহ তার সহিহ গ্রন্থে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন
হাদীস ২২ (৫০)
وَعَن مَحْمُود بن لبيد أَن رَسُول الله صلى الله عَلَيْهِ وَسلم قَالَ إِن أخوف مَا أَخَاف عَلَيْكُم الشّرك الْأَصْغَر
قَالُوا وَمَا الشّرك الْأَصْغَر يَا رَسُول الله قَالَ الرِّيَاء يَقُول الله عز وَجل إِذا جزى النَّاس بأعمالهم اذْهَبُوا إِلَى الَّذين كُنْتُم تراؤون فِي الدُّنْيَا فانظروا هَل تَجِدُونَ عِنْدهم جَزَاء.
وَرَوَاهُ أَحْمد بِإِسْنَاد جيد وَابْن أبي الدُّنْيَا وَالْبَيْهَقِيّ فِي الزّهْد وَغَيره
মাহমুদ ইবনে লাবীদ (রা) বর্ণনা করেন। নবী (সা) ইরশাদ করেন- আমি তোমাদের ব্যাপারে সবচেয়ে বেশী যা ভয় করি তা হলো ছোট শিরক। লোকেরা জিজ্ঞাসা করলো ইয়া রাসূলাল্লাহ! ছোট শিরক কি? রাসূলুল্লাহ (সা) বললেন, রিয়াকারী- লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে আমল করা। যখন কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলা মানুষেকে আমলের বদলা দিবেন, তখন তাদেরকে বলবেন যে, তোমরা তাদের কাছ থেকে নিজেদের আমলের বদলা নাও, যাদেরকে দেখানোর উদ্দেশ্যে তোমরা আমল করতে। দেখ! তাদের থেকে কিছু পাও কি না?-সহিহ
আহমদ হাদীসটি উত্তম সনদে বর্ণনা করেছেন।
হাদীস ২৩ (৫২)
وَعَن أبي هُرَيْرَة أَن رَسُول الله صلى الله عَلَيْهِ وَسلم قَالَ قَالَ الله عز وَجل أَنا أغْنى الشُّرَكَاء عَن الشّرك فَمن عمل لي عملا أشرك فِيهِ غَيْرِي فَأَنا مِنْهُ بَرِيء وَهُوَ للَّذي أشرك. رَوَاهُ ابْن مَاجَه وَاللَّفْظ لَهُ وَابْن خُزَيْمَة فِي صَحِيحه وَالْبَيْهَقِيّ
হযরত আবু হুরায়রা (রা) বর্ণনা করেন। রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন, আল্লাহ তাআলা বলেন-আমি শিরক থেকে পবিত্র। যে ব্যক্তি আমার জন্য কোন অমল করে আর তাতে অন্য কাউকে শরীক করে, তাহলে আমি তার দায়িত্বমুক্ত। আর তার আমল শুধু তার জন্য যাকে সে শরীক করেছে।-সহিহ
ইমাম ইবনে মাজাহ হাদীসটি নিজ শব্দে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন, ইমাম ইবনে খুযায়মাহ এবং ইমা বায়হাকীও হাদীসটি বণনা করেছেন।
হাদীস ২৪ (৫৩)
عَن شَدَّاد قَالَ قَالَ رَسُول الله صلى الله عَلَيْهِ وَسلم إِن أخوف مَا أَخَاف على أمتِي الْإِشْرَاك بِاللَّه أما إِنِّي لست أَقُول يعْبدُونَ شمسا وَلَا قمرا وَلَا وثنا وَلَكِن أعمالا لغير الله وشهوة خُفْيَة. رَوَاهُ ابْن مَاجَه
হযরত শাদ্দাদ বিন আউস (রা) বর্ণনা করেন। রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন- আমি আমার উম্মতের ব্যাপারে সবচেয়ে বেশী ভয় করি শিরকের। আমি বলি না যে তারা চন্দ্র সূর্য বা র্মূর্তিপূজা করবে, বরং তারা আল্লাহ ব্যতীত অন্যদেরকে দেখানোর উদ্দেশ্যে কাজ করবে আর নিজেদের গোপন প্রবৃত্তির অনুসরণ করবে।-যয়ীফ
ইবনে মাজাহ হাদীসটি বর্ননা করেছেন।
হাদীস ২৫ (৫৪)
وَعَن الْقَاسِم بن مخيمرة أَن النَّبِي صلى الله عَلَيْهِ وَسلم قَالَ لَا يقبل الله عملا فِيهِ مِثْقَال حَبَّة من خَرْدَل من رِيَاء
رَوَاهُ ابْن جرير الطَّبَرِيّ مُرْسلا
আবুল কাসিম বিন মুখায়মিরাহ (রা) বর্ণনা করেন। রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন- আল্লাহ তাআলা ঐ অমল কবুল করেন না, যার মধ্যে সরিষা দানা পরিমাণ রিয়া আছে।–যয়ীফ মুরসাল
ইবনে জারির মুরসালরুপে
হাদীস ২৬ (৫৮)
وَعَن أنس بن مَالك رَضِي الله عَنهُ قَالَ قَالَ رَسُول الله صلى الله عَلَيْهِ وَسلم يُؤْتى يَوْم الْقِيَامَة بصحف مختمة فتنصب بَين يَدي الله تَعَالَى فَيَقُول تبَارك وَتَعَالَى ألقوا هَذِه واقبلوا هَذِه فَتَقول الْمَلَائِكَة وَعزَّتك وجلالك مَا رَأينَا إِلَّا خيرا فَيَقُول الله عز وَجل إِن هَذَا كَانَ لغير وَجْهي وَإِنِّي لَا أقبل إِلَّا مَا ابْتغِي بِهِ وَجْه.
رَوَاهُ الْبَزَّار وَالطَّبَرَانِيّ بِإِسْنَادَيْنِ رُوَاة أَحدهمَا رُوَاة الصَّحِيح وَالْبَيْهَقِ
হযরত আনাস (রা) বর্ণনা করেন। রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন- কিয়ামতের দিন আল্লাহর সামনে মোহরকৃত আমলের সহিফা নিয়ে আসা হবে। আল্লাহ তাআলা বলবেন, এগুলো এক পাশে রাখ আর এগুলো গ্রহণ কর। ফেরেশতারা বলবে, আপনার ইযযতের কসম! আমরা তো এর মধ্যে শুধু নেক আমলই দেখি। আল্লাহ তাআলা বলবেন, এটা ঐ আমল যা অমার সন্তুষ্টির জন্য করা হয়নি। আর আমি শুধু তাই কবুল করি যা শুধু আমার সন্তুষ্টির জন্যই করা হয়।-যয়ীফ
বাযার ও তাবরানী দুটি সনদে- তার মধ্যে একটি সহিহ আর বায়হাকী হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
فصل অনুচ্ছেদ
হাদীস ২৭ (৬০)
عَن أبي عَليّ رجل من بني كَاهِل… قَالَ أَبُو مُوسَى الْأَشْعَرِيّ خَطَبنَا رَسُول الله صلى الله عَلَيْهِ وَسلم ذَات يَوْم فَقَالَ يَا أَيهَا النَّاس اتَّقوا هَذَا الشّرك فَإِنَّهُ أخْفى من دَبِيب النَّمْل فَقَالَ لَهُ من شَاءَ الله أَن يَقُول وَكَيف نتقيه وَهُوَ أخْفى من دَبِيب النَّمْل يَا رَسُول الله قَالَ قُولُوا اللَّهُمَّ إِنَّا نَعُوذ بك من أَن نشْرك بك شَيْئا نعلمهُ ونستغفرك لما لَا نعلمهُ.
رَوَاهُ أَحْمد وَالطَّبَرَانِيّ
হযরত আবু মূসা আল আশআরী (রা) বলেন- একবার রাসূলুল্লাহ (সা) আমাদের উদ্দশ্যে ভাষণ দেন। তিনি বলেন- তোমরা রিয়াকারী থেকে বাঁচ! কেননা তা পিপীলিকার পদধ্বনি থেকেও সুক্ষ্য। তখন যার ব্যাপারে আল্লাহর ইচ্ছা ছিল সে জিজ্ঞাসা করলো, ইয়া রাসূলাল্লাহ! যখন এটা পিপীলিকার পদধ্বনি থেকেও সুক্ষ্য তাহলে আমরা এর থেকে কিভাবে বাঁচব?
তিনি বললেন, তোমরা এই দুআ করবে
اللَّهُمَّ إِنَّا نَعُوذ بك من أَن نشْرك بك شَيْئا نعلمهُ ونستغفرك لما لَا نعلمهُ
হে আল্লাহ! যে শিরক সম্বন্ধে আমরা জানি তা করা থেকে আমরা আপনার অশ্রয় চাই আর যা আমরা জানি না তার জন্য আপনি আমাদেরকে ক্ষমা করুন।–হাসান লিগায়রিহী
আহমদ ও তাবরানী হাদীসটি বর্ণনা করেছেন