আদাবুল মুফরাদ-ইমাম বুখারী (রহ) ১.পিতা মাতা হাদীস ১-৪৬

দারুস সাআদাত গ্রন্থ

গ্রন্থঃ অদাবুল মুফরদ

লেখক, ইমাম বুখারী (রহ)

অনুবাদঃ দারুস সাআদাত কর্তৃক অনূদিত

স্বত্বঃ দারুস সাআদাত কর্তৃক সংরক্ষিত, বিনানুমতিতে কপি করা, মূদ্রণ করা এবং এপে ব্যবহার করলে আইনত দণ্ডনীয়।

১.পিতা মাতা

হাদীসঃ১-৪৬

1 – بَابُ قَوْلِهِ تَعَالَى (وَوَصَّيْنَا الْأِنْسَانَ بِوَالِدَيْهِ حُسْناً) [العنكبوت: 8]

অনুচ্ছেদঃ১ আল্লাহ তাআলার বাণী- আমি মানুষকে নির্দেশ দিয়েছি পিতা মাতার সাথে সদ্ব্যবহার করতে

1 – عَنْ عَبْدِ اللَّهِ قَالَ: سَأَلْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: أَيُّ الْعَمَلِ أَحَبُّ إِلَى اللَّهِ عَزَّ وَجَلَّ؟ قَالَ: «الصَّلَاةُ عَلَى وَقْتِهَا» ، قُلْتُ: ثُمَّ أَيٌّ؟ قَالَ: «ثُمَّ بِرُّ الْوَالِدَيْنِ» ، قُلْتُ: ثُمَّ أَيٌّ؟ قَالَ: «ثُمَّ الْجِهَادُ فِي سَبِيلِ اللَّهِ» قَالَ: حَدَّثَنِي بِهِنَّ، وَلَوِ اسْتَزَدْتُهُ لَزَادَنِي

হাদীসঃ১.আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা)-কে জিজ্ঞাসা করলাম, মহিমান্বিত আল্লাহর নিকট সব চাইতে প্রিয় আমল কি? তিনি বললেন, যথাসময়ে নামায আদায় করা। আমি বললাম, তারপর কোনটি? তিনি বললেন,  বাবা মার সাথে সদ্ব্যবহার করা। আমি বললাম, তারপর কোনটি? তিনি বললেন, এরপর আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করা। রাবী বলেন, তিনি (সা)  আমাকে এগুলো বললেন, যদি আমি আরো অধিক প্রশ্ন করতাম, তবে তিনি অবশ্যই আরও অধিক বলতেন।

2 – عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ قَالَ: رِضَا الرَّبِّ فِي رِضَا الْوَالِدِ، وَسَخَطُ الرَّبِّ فِي سَخَطِ الْوَالِدِ

হাদীসঃ২.আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, প্রতিপালকের সন্তুষ্টি পিতার সন্তুষ্টির মধ্যে এবং প্রতিপালকের অসন্তুষ্টি পিতার অসন্তুষ্টির মধ্যে নিহিত।

2 – بَابُ بِرِّ الْأُمِّ

অনুচ্ছেদঃ২ মায়ের সাথে সদ্ব্যবহার

3 – عَنْ بَهْزِ بْنِ حَكِيمٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ جَدِّهِ، قُلْتُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، مَنْ أَبَرُّ؟ قَالَ: «أُمَّكَ» ، قُلْتُ: مَنْ أَبَرُّ؟ قَالَ: «أُمَّكَ» ، قُلْتُ: مَنْ أَبَرُّ؟ قَالَ: «أُمَّكَ» ، قُلْتُ: مَنْ أَبَرُّ؟ قَالَ: «أَبَاكَ، ثُمَّ الْأَقْرَبَ فَالْأَقْرَبَ»

হাদীসঃ৩.বহয বিন হাকীম তার পিতা থেকে, তিনি তার দাদা থেকে বর্ণনা করেন, আমি জিজ্ঞাসা করলাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমি কার সাথে উত্তম ব্যবহার করব? তিনি বললেন, তোমার মায়ের সাথে। আমি (দ্বিতীয়বার ) জিজ্ঞাসা করলাম, (এরপর) আমি কার সাথে উত্তম ব্যবহার করব? তিনি বললেন, তোমার মায়ের সাথে। আমি (তৃতীয়বার ) জিজ্ঞাসা করলাম, (এরপর) আমি কার সাথে উত্তম ব্যবহার করব? তিনি বললেন, তোমার মায়ের সাথে। আমি (চতুর্থবার ) জিজ্ঞাসা করলাম, (এরপর) আমি কার সাথে উত্তম ব্যবহার করব? তিনি বললেন, তোমার বাবার সাথে। এরপর যে অধিক নিকটবর্তী।

4 – عن عطاء عن ابن عباس رضي الله عنهما أَنَّهُ أَتَاهُ رَجُلٌ فَقَالَ إِنِّي خَطَبْتُ امْرَأَةً فَأَبَتْ أَنْ تَنْكِحَنِي وَخَطَبَهَا غَيْرِي فَأَحَبَّتْ أَنْ تَنْكِحَهُ فَغِرْتُ عَلَيْهَا فَقَتَلْتُهَا فَهَلْ لِي مِنْ تَوْبَةٍ؟ قَالَ أُمُّكَ حَيَّةٌ؟ قَالَ لَا، قَالَ تُبْ إِلَى اللَّهِ عَزَّ وَجَلَّ وَتَقَرَّبْ إِلَيْهِ مَا اسْتَطَعْتَ، فَذَهَبْتُ فَسَأَلْتُ ابْنَ عَبَّاسٍ لِمَ سَأَلْتَهُ عَنْ حَيَاةِ أُمِّهِ؟ فَقَالَ: (إِنِّي لَا أَعْلَمُ عَمَلًا أَقْرَبَ إِلَى الله عز وجل من بر الوالدة)

হাদীসঃ৪.আতা [ইবনে ইয়াসার (রা)] ইবনে আব্বাস (রা) থেকে বর্ণনা করেন। এক ব্যক্তি ইবনে আব্বাস (রা)-এর খিদমতে হাযির হয়ে আরয করল, আমি একটি মেয়েকে বিবাহের প্রস্তাব দিলে সে আমার সাথে বিবাহ করতে অস্বীকার করল। অতঃপর এক ব্যক্তি তাকে বিবাহের প্রস্তাব দিল এবং সে ঐ প্রস্তাবে রাযি হয়ে গেল। এতে আমার আত্মমর্যাদায় আঘাত লাগল আর আমি তাকে হত্যা করে ফেললাম। এখন আমার তওবা কবুল হবে কি? তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, তোমার মা কি জীবিত আছে? সে বলল, না। তিনি বললেন, তুমি আল্লাহর নিকট তওবা কর এবং সাধ্যনুযায়ী নেক কাজ করে আল্লাহর  নৈকট্য লাভে সচেষ্ট হও!

বর্ণনাকারী বলেন, তখন আমি ইবনে আব্বাস (রা) এর নিকট গেলাম এবং জিজ্ঞাসা করলাম, আপনি তার মায়ের জীবিত থাকার বিষয়টি কেন জিজ্ঞাসা করলেন? তিনি বললেন, আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য মায়ের সাথে ভাল ব্যবহারের চাইতে উত্তম কোন আমল আমি আর দেখি না।

3- بَابُ بِرِّ الْأَبِ

অনুচ্ছেদঃ৩ পিতার সাথে সদ্ব্যবহার

5 – عن أبى هريرة – رضي الله عنه – قال: قيل يَا رَسُولَ اللَّهِ مَنْ أَبَرُّ؟ قَالَ: (أُمَّكَ) قَالَ ثُمَّ مَنْ؟ قَالَ (أُمَّكَ) قَالَ ثُمَّ مَنْ؟ قَالَ (أُمَّكَ) قَالَ ثُمَّ مَنْ؟ قَالَ (أباك)

হাদীসঃ৫.আবু হুরায়রা (রা) বর্ণনা করেন। একবার রাসূলুল্লাহ (সা)-কে জিজ্ঞাসা করা হলো, হে আল্লাহর রাসূল! উত্তম আচরণের সবচেয়ে বেশী হকদার কে? তিনি বললেন,  তোমার মা। অতঃপর জিজ্ঞাসা করলেন, তারপর কে? তিনি বললেন, তোমার মা। পুণরায় জিজ্ঞাসা করলেন, তারপর কে? তিনি বললেন,  তোমার মা। সে ব্যক্তি পুনরায় প্রশ্ন করলেন, তারপর কে? তিনি বললেন, তোমার বাবা।

6 – عن أبى هريرة – رضي الله عنه – قال أَتَى رَجُلٌ نَبِيَّ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وسلم فقال: ما تأمرنى؟ قال (بِرَّ أُمَّكَ) ثُمَّ عَادَ فَقَالَ (بِرَّ أُمَّكَ) ثُمَّ عَادَ فَقَالَ (بِرَّ أُمَّكَ) ثُمَّ عَادَ الرابعه فقال (بر أمك) ثم عاد الخامسة فقال (بر أباك)

হাদীসঃ৬.আবূ হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত। এক ব্যক্তি নবী করীম (সা)-এর খিদমতে উপস্থিত হয়ে আরয করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি আমাকে কি করতে আদেশ করেন? তিনি বললেন, তোমার মায়ের সাথে সদ্ব্যবহার করবে। সে আবার এসে প্রশ্ন করল। তিনি বললেন, তোমার মায়ের সাথে সদ্ব্যবহার করবে। সে আবার ফিরে এসে একই প্রশ্ন করল। তিনি বললেন, তোমার মায়ের সাথে সদ্ব্যবহার করবে। অতঃপর সে ব্যক্তি চতুর্থবার ফিরে এসে প্রশ্ন করল, তিনি বলিলেন, তোমার বাবার সাথে সদ্ব্যবহার করবে।

4- بَابُ بِرِّ وَالِدَيْهِ وَإِنْ ظَلَمَا

অনুচ্ছেদঃ৪ পিতা মতার সাথে সদ্ব্যবহার করা যদিও তারা যুলুম করে

7 –  عن ابن عباس – رضي الله عنهم – قَالَ: مَا مِنْ مُسْلِمٍ لَهُ وَالِدان مُسلمان يُصْبِحُ إِلَيْهِمَا مُحْتَسِبًا إِلَّا فَتْحَ لَهُ اللَّهُ بابين -يعنى من الجنة – وإن كان واحد فَوَاحِدٌ وَإِنْ أَغْضَبَ أَحَدَهُمَا لَمْ يرضَ اللَّهُ عَنْهُ حَتَّى يَرْضَى عَنْهُ قِيلَ: وَإِنْ ظَلَمَاهُ؟ قال وإن ظلماه.

হাদীসঃ৭.ইবনে আব্বাস (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যে মুসলমানের বাবা মা মুসলিম এবং সে ভোরে তাদের খোঁজ খবর নেয়। তবে আল্লাহ তার জন্য দুটি দরজা খুলে দেন। অর্থাৎ জান্নাতের দরজা। যদি (তাদের মধ্যে) একজন থাকে তবে একটি। আর যদি সে তাদের মধ্যে কোন একজনকে অসন্তুষ্ট করে, তবে ততক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহ সন্তুষ্ট হন না যে পর্যন্ত তারা তার প্রতি সন্তুষ্ট না হন।

জিজ্ঞাসা করা হলো, যদি তারা তার উপর যুলুম করে তাহলেও? তিনি বললেন, হাঁ, যদি তারা তার উপর যুলুমও করে।

5- بَابُ لِينِ الْكَلَامِ لِوَالِدَيْهِ

অনুচ্ছেদঃ৫ পিতা মাতার সাথে নরম ভাষায় কথা বলা

8 –  عن طَيْسَلة (واسمه علي) بْنُ مَيّاس قَالَ: كُنْتُ مَعَ النَّجَدَاتِ فَأَصَبْتُ ذُنُوبًا لَا أَرَاهَا إِلَّا مِنَ الْكَبَائِرِ فَذَكَرْتُ ذَلِكَ لِابْنِ عُمَرَ قَالَ مَا هِيَ؟ قُلْتُ كَذَا وَكَذَا قَالَ لَيْسَتْ هَذِهِ مِنَ الْكَبَائِرِ هُنَّ تِسْعٌ: الْإِشْرَاكُ بِاللَّهِ وَقَتْلُ نَسَمَةٍ وَالْفِرَارُ مِنَ الزَّحْفِ وَقَذْفُ الْمُحْصَنَةِ وَأَكْلُ الرِّبَا وَأَكْلُ مَالِ الْيَتِيمِ وَإِلْحَادٌ فِي الْمَسْجِدِ وَالَّذِي يَسْتَسْخِرُ وَبُكَاءُ الْوَالِدَيْنِ مِنَ العقوق.

قال لي بن عمر أتفرق من النَّارَ وَتُحِبُّ أَنْ تَدْخُلَ الْجَنَّةَ؟ قُلْتُ: إِي وَاللَّهِ قَالَ: أَحَيٌّ وَالِدُكَ؟

قُلْتُ: عِنْدِي أُمِّي قَالَ: فَوَاللَّهِ لَوْ أَلَنْتَ لَهَا الْكَلَامَ وَأَطْعَمْتَهَا الطعام لتدخلن الجنة ما اجتنبت الكبائر.

হাদীসঃ৮.তাইসালা ইবনে মাইয়াস বলেন, আমি নজদীদের সাথে ছিলাম। তখন আমি একটি গুনাহ করে ফেলি যেটাকে আমি কবীরা গুনাহ মনে করতাম। তখন আমি ইবনে উমর (রা)-এর নিকট তা বললে, তিনি জিজ্ঞাসা করেন,  তা কি? আমি বললাম, এই এই। তিনি বললেন, এগুলো কবীরা গুনাহর মধ্যে নয়। কবীরা গুনাহ হলো নয়টি- ১.আল্লাহর সাথে শিরক করা। ২.কাউকে হত্যা করা। ৩.(জিহাদের সময়) সৈন্যদের থেকে পলায়ন করা। ৪.সতীসাধ্বী নারীকে অপবাদ দেওয়া। ৫.সুদ খাওয়া। ৬.ইয়াতীমের মাল (অবৈধভাবে) ভক্ষণ করা। ৭.মসজিদে বদ-দীনি ছড়ানো। ৮.উপহাস করা এবং ৯.(সন্তানের) অবাধ্যতার জন্য বাবা মার ক্রন্দন করা।

ইবনে উমর (রা) জিজ্ঞাসা করিলন, তুমি কি জাহান্নাম থেকে দূরে থাকতে এবং জান্নাতে প্রবেশ করতে চাও? আমি বললাম, আল্লাহর কসম, আমি তা চাই। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, তোমার বাবা মা কি জীবিত আছে? আমি বললাম, আমার নিকট শুধু আমার মা আছেন। তিনি বললেন, আল্লাহর কসম, তুমি যদি তার সাথে নম্রভাষায় কথা বল এবং তাকে আহার করাও তবে তুমি অবশ্যই জান্নাতে যাবে। যে পর্যন্ত তুমি কবীরা গুনাহসমূহ থেকে বেঁচে থাকবে।

9 – عن عروة بن الزبير في قوله تعالى: (وَاخْفِضْ لَهُمَا جَنَاحَ الذُّلِّ مِنَ الرَّحْمَةِ) قال: لا تمتنع من شيء أحباه

হাদীসঃ৯ উরওয়া ইবনে যুবায়র (রা) আল্লাহ তাআলার বাণী-”দয়ার্দ্রতার সাথে বিনয় ও নম্রতার ডানা তাদের জন্য সম্প্রসারিত করে দাও।” [সূরা ইসরা:২৪] প্রসঙ্গে বলেন- তারা যে জিনিসই পছন্দ করে, তাতে আপত্তি করো না।

6- بَابُ جَزَاءِ الْوَالِدَيْنِ

অনুচ্ছেদঃ৬ পিতা মাতার প্রতিদান

10 – عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ – رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ – عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: (لَا يَجْزِى وَلَدُ وَالِدَهُ إِلَّا أَنْ يَجِدَهُ مَمْلُوكًا فيشتَريَه فيعتقه) .

হাদীসঃ১০.আবূ হুরায়রা (রা) বর্ণনা করেন। নবী করীম (সা) ইরশাদ করেন- সন্তান তার বাবার প্রতিদান দিতে পারবে না- তবে এটা ব্যতীত যে, সে যদি তাকে গুলাম অবস্থায় পায় এবং সে তাকে ক্রয় করে আযাদ করে দেয় (তবে কিছুটা)।

11 – عن أبى بردة قال سمعت أبي يحدث (بن أبي موسى الأشعري، اسمه الحارث وقيل عامر) أنه شهدابن عُمَرَ ورجلُ يَمَانِيٌّ يَطُوفُ بِالْبَيْتِ – حَمَلَ أُمَّهُ وراء ظهره – يقول: إِنِّي لَهَا بَعِيرُهَا الْمُذَلَّلُ إِنْ أُذْعِرَتْ رِكَابُهَا لَمْ أُذْعَرِ ثُمَّ قَالَ: يَا ابْنَ عُمَرَ أَتُرَانِي جَزَيْتُهَا؟ قَالَ: لَا وَلَا بِزَفْرَةٍ وَاحِدَةٍ، ثُمَّ طَافَ ابْنُ عُمَرَ فَأَتَى الْمَقَامَ فَصَلَّى ركعتين ثم قال: يا بن أَبِي مُوسَى إِنَّ كُلَّ رَكْعَتَيْنِ تُكّفِران مَا أمامهما.

হাদীসঃ১১.আবূ বুরদা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আমার পিতাকে বলতে শুনেছি যে, তিনি ইবনে উমর (রা) এবং জনৈক ইয়েমেনী যুবককে বায়তুল্লাহর তাওয়াফ করতে দেখলেন। আরো দেখলেন যে, ঐ যুবক তার মাকে পিঠে নিয়ে তাওয়াফ করছে আর এই কবিতা পাঠ করছে-

إِنِّي لَهَا بَعِيرُهَا الْمُذَلَّلُ إِنْ أُذْعِرَتْ رِكَابُهَا لَمْ أُذْعَرِ.

নিঃসন্দেহে আমি তার অনুগত উটের মত। যদি তার সওয়ারীকে ভয় দেখানো হয় তবে সে ভীত হওয়ার নয়।

অতঃপর সে বলল, হে ইবনে উমর! আমার ব্যাপারে আপনার কি ধারণা? আমি কি আমার মায়ের অনুগ্রহের প্রতিদান দিতে পেরেছি? এর উত্ত তিনি বললেন, না। বরং এক মাসেরও প্রতিদানও নয়। অতঃপর ইবনে উমর (রা) তাওয়াফ করলেন এবং মাকামে ইবরাহিমের নিকট এসে দুই রাকাত নামায আদায় করলেন। আর বললেন, হে আবু মূসার পুত্র! দুই রাকাত নামায তার পূর্ববর্তী গুনাহর কাফফারা স্বরুপ।

12 –  عَنْ أَبِي مُرَّةَ مَوْلَى عَقِيلٍ أَنَّ أَبَا هريرة – رضي الله عنه – كَانَ يَسْتَخْلِفُهُ مَرْوَانُ وَكَانَ يَكُونُ بِذِي الْحُلَيْفَةِ فَكَانَتْ أُمُّهُ فِي بَيْتٍ وَهُوَ فِي آخَرَ قَالَ فَإِذَا أَرَادَ أَنْ يَخْرُجَ وَقَفَ عَلَى بَابِهَا فَقَالَ السَّلَامُ عَلَيْكِ يَا أُمَّتَاهُ وَرَحْمَةُ الله وبركاته فتقول وعليك يَا بُنَيَّ وَرَحْمَةُ اللَّهِ وَبَرَكَاتُهُ فَيَقُولُ رَحِمَكِ اللَّهُ كَمَا رَبَّيْتِنِي صَغِيرًا فَتَقُولُ رَحِمَكَ اللَّهُ كَمَا بَرَرْتَنِي كَبِيرًا ثُمَّ إِذَا أَرَادَ أَنْ يدخل صنع مثله.

হাদীসঃ১২.আবু মুররা মাওলা আকীল থেকে বর্ণিত। আবূ হুরায়রা (রা)-কে মারওয়ান তার স্থলাভিষিক্ত করেছিল এবং তিনি যুলহুলায়ফায় থাকতেন। সেখানে তার মা থাকতেন একটি ঘরে আর তিনি থাকতেন আরেকটি ঘরে।

যখন তিনি ঘর থেকে বের হওয়ার ইচ্ছা করতেন, তখন তিনি তার মায়ের ঘরের দরজার পাশে দাড়িয়ে বলতেন-আপনার প্রতি সালাম হে আমার আম্মা! আর অপনার প্রতি আল্লাহর রহমত ও বরকত বর্ষিত হোক।

তখন তার মা এর উত্তরে বলতেন- হে আমার বৎস! তোমার প্রতিও।  আর তোমার উপরও আল্লাহর রহমত ও বরকত বর্ষিত হোক।

আবু হুরায়রা (রা) বলেন- আল্লাহ আপনার প্রতি রহম করুন যেমনিভাবে শৈশবে আপনি আমাকে লালন পালন করেছেন।

তার মা বলেন- আল্লাহ তোমার প্রতিও রহম করুন যেভাবে তুমি আমার বৃদ্ধাবস্থায় আমার দেখভাল করেছ।

এমনিভাবে যখনই তিনি ঘর থেকে বের হওয়ার (আসা যাওয়ার) ইচ্ছা করতেন এমন করতেন।

13 – عن عبد الله بن عمرو رضي الله عنهما قَالَ: جَاءَ رَجُلٌ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُبَايِعُهُ عَلَى الْهِجْرَةِ وَتَرَكَ أَبَوَيْهِ يَبْكِيَانِ فَقَالَ: (ارْجِعْ إِلَيْهِمَا وأضْحِكْهُما كَمَا أبْكَيْتَهُما)

হাদীসঃ১৩.আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা) থেকে বর্ণিত। এক ব্যক্তি নবী (সা) এর নিকট হিজরতের উদ্দেশ্যে বায়’আত হওয়ার জন্য আগমন করেন। আর সে তার বাবা-মাকে ক্রন্দনরত অবস্থায রেখে এসেছিলেন। তখন রাসূলুল্লাহ (সা) বললেন, তাদের নিকট ফিরে যাও। আর তাদের মুখে সেভাবে হাসি ফোটাও যেভাবে তাদেরকে কাঁদিয়েছ।

14 –  عَنْ أَبِي حَازِمٍ أَنَّ أَبَا مُرَّةَ مَوْلَى أم هانئ بنت أَبِي طَالِبٍ أَخْبَرَهُ أَنَّهُ رَكِبَ مَعَ أَبِي هريرة – رضي الله عنه – إِلَى أَرْضِهِ بِالْعَقِيقِ فَإِذَا دَخَلَ أَرْضَهُ صَاحَ بِأَعْلَى صَوْتِهِ عَلَيْكِ السَّلَامُ وَرَحْمَةُ اللَّهِ وَبَرَكَاتُهُ يَا أُمَّتَاهُ، تَقُولُ وَعَلَيْكَ السَّلَامُ وَرَحْمَةُ اللَّهِ وَبَرَكَاتُهُ، يَقُولُ رَحِمَكِ اللَّهُ رَبَّيْتِنِي صَغِيرًا، فَتَقُولُ يَا بُنَيَّ وَأَنْتَ فَجَزَاكَ اللَّهُ خَيْرًا وَرَضِيَ عَنْكَ كَمَا بَرَرْتَنِي كَبِيرًا، قَالَ مُوسَى كَانَ اسْمُ أَبِي هُرَيْرَةَ عَبْدَ اللَّهِ بْنَ عَمْرٍو

হাদীসঃ১৪.আবু হাযিম থেকে বর্ণিত। উম্মে হানী বিনতে আবু তালিব (রা) এর গুলাম আবু মুররা তাকে বলেছেন- আবূ হুরায়রা (রা) কে মারওয়ান তার স্থলাভিষিক্ত করেছিল এবং তিনি যুলহুলায়ফায় থাকতেন। সেখানে তার মা থাকতেন একটি ঘরে আর তিনি থাকতেন আরেকটি ঘরে।

যখন তিনি ঘর থেকে বের হওয়ার ইচ্ছা করতেন, তখন তিনি তার মায়ের ঘরের দরজার পাশে দাড়িয়ে বলতেন- আপনার প্রতি সালাম এবং আল্লাহর রহমত ও বরকত বর্ষিত হোক- হে আমার আম্মা!

তখন তার মা এর উত্তরে বলতেন- তোমার প্রতিও সালাম এবং  আল্লাহর রহমত ও বরকত বর্ষিত হোক।

আবু হুরায়রা (রা) বলেন- আল্লাহ আপনার প্রতি রহম করুন যেমনিভাবে আপনি আমাকে শৈশবে লালন পালন করেছেন।

তার মা বলেন- হে আমার বৎস! আল্লাহ তো্মাক উত্তম প্রতিদান দান করুন এবং তোমার প্রতি সন্তুষ্ট হোন যেভাবে তুমি আমার বৃদ্ধাবস্থায় আমার সেবাযত্ন করেছ।

বর্ণনাকারী মূসা বলেন- আবু হুরায়রা (রা) এর (আসল) নাম ছিল আব্দুল্লাহ ইবনে আমর।

7- بَابُ عُقُوقِ الْوَالِدَيْنِ

অনুচ্ছেদঃ৭ পিতা মাতার অবাধ্যতা

15 – عن أبي بكرة – رضي الله عنه – قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَلَا أُنَبِّئُكُمْ بِأَكْبَرِ الْكَبَائِرِ؟) ثَلَاثًا قَالُوا: بَلَى يَا رَسُولَ اللَّهِ قَالَ: (الْإِشْرَاكُ بِاللَّهِ وَعُقُوقُ الْوَالِدَيْنِ) وَجَلَسَ وَكَانَ مُتَّكِئًا (أَلَا وَقَوْلُ الزُّورِ) مَا زَالَ يُكَرِّرُهَا حَتَّى قُلْتُ لَيْتَهُ سكت

হাদীসঃ১৫.আবু বাকরাহ (রা) বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন- আমি কি তোমাদেরকে কবীরা গুনাহ সম্পর্কে বলব না? এ কথাটি তিনি তিনবার বললেন। সাহাবীগণ আরয করলেন, হ্যাঁ, ইয়া রাসূলুল্লাহ! তিনি বললেন, আল্লাহর সাথে শরীক করা। মা-বাবার অবাধ্যতা করা। রাসূলুল্লাহ (সা) হেলান দিয়ে বসা ছিলেন, তখন উঠে বসলেন (এবং বললেন)- আর মিথ্যা কথা বলা। রাসূলূল্লাহ (সা) এই কথাটি এতবার বলতে লাগলেন যে, এমনকি আমি (নিজে নিজে) বললাম যে, যদি তিনি নীরব হয়ে যেতেন।

16 – عن المغيرة بن شعبة – رضي الله عنه – قَالَ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وسلم: «يَنْهَى عَنْ كَثْرَةِ السُّؤَالِ وَإِضَاعَةِ الْمَالِ وَعَنْ قيل وقال»

হাদীসঃ১৬.মুগীরা ইবনে শু’বা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা)-কে বলতে শুনেছি, তিনি নিষেধ করেছেন অধীক সাওয়াল করতে (মানুষের নিকট বেশী চাইতে অথবা অধীক প্রশ্ন করতে), সম্পদের অপচয় করতে এবং অনর্থক কথাবার্তায় লিপ্ত হতে।

8- بَابُ لَعَنَ اللَّهُ مَنْ لَعَنَ وَالِدَيْهِ

অনুচ্ছেদঃ৮ ঐ ব্যক্তির প্রতি অভিসম্পাত যে তার পিতা মাতাকে অভিশাপ প্রদান করে

17 – عن عن علي – رضي الله عنه – قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وسلم: (لَعَنَ اللَّهُ مَنْ ذَبَحَ لِغَيْرِ اللَّهِ لَعَنَ اللَّهُ مَنْ سَرَقَ مَنَارَ الْأَرْضِ لَعَنَ اللَّهُ مَنْ لَعَنَ وَالِدَيْهِ لَعَنَ اللَّهُ مَنْ آوَى محدثا)

হাদীসঃ১৭.আলী (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন- ঐ ব্যক্তির প্রতি আল্লাহর অভিশাপ- যে আল্লাহ ব্যতীত অপর কারো নামে যবেহ করে। যে ব্যক্তি যমীনের সীমানা চুরি করে তার প্রতি আল্লাহর অভিশাপ। যে ব্যক্তি বাবা মাকে অভিশাপ দেয় তার প্রতিও আল্লাহর অভিশাপ। আর ঐ ব্যক্তির প্রতিও আল্লাহর অভিশাপ যে বিদআতকে প্রশ্রয় দেয়।

9- بَابُ يَبَرُّ وَالِدَيْهِ مَا لَمْ يَكُنْ مَعْصِيَةً

অনুচ্ছেদঃ৯ পিতা মাতার সাথে সদাচরণ করা যে পর্যন্ত তা গুনাহর বিষয় না হয়

18 – عن أبى الدرداء – رضي الله عنه – قَالَ أَوْصَانِي رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِتِسْعٍ: (لَا تُشْرِكْ بِاللَّهِ شَيْئًا وَإِنْ قُطِّعْت أَوْ حُرِّقت وَلَا تَتْرُكَنَّ الصَّلَاةَ الْمَكْتُوبَةَ مُتَعَمِّدًا وَمَنْ تَرَكَهَا مُتَعَمِّدًا بَرِئَتْ مِنْهُ الذِّمَّةُ وَلَا تشربنَّ الْخَمْرَ فإنَّها مِفْتَاحُ كُلِّ شَرٍّ، وأطعْ وَالِدَيْكَ وَإِنْ أَمَرَاكَ أَنْ تَخْرُجَ مِنْ دُنْيَاكَ فَاخْرُجْ لَهُمَا، وَلَا تنازعنَّ وُلَاةَ الْأَمْرِ وَإِنْ رَأَيْتَ أَنَّكَ أَنْتَ وَلَا تَفْرُرْ مِنَ الزَّحْفِ وَإِنْ هَلَكْتَ وَفَرَّ أَصْحَابُكَ وَأَنْفِقْ مِنْ طولك على أهلك ولا ترفع عصاك على أهلك وأخفهم في الله عز وجل

হাদীসঃ১৮.আবু দারদা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) আমাকে নয়টি বিষয়ের ওসিয়ত করেছেন। তা হলো-

১. আল্লাহর সাথে কারো শরীক করো না- যদিও তোমাকে টুকরা টুকরা করে ফেলা হয় অথবা জ্বালিয়ে দেয়া হয়।

২. জেনে-বুঝে ফরয নামায ছেড়ে দিবে না। যে ব্যক্তি তা জেনে-বুঝে ছেড়ে দিবে, তার উপর থেকে (আল্লাহর) দায়িত্ব উঠিয়ে নেওয়া হবে।

৩. মদ পান করবে না। কেননা, তা হলো সকল অনিষ্টের মূল।

৪. বাবা-মার আনুগত্য করবে। তারা যদি তোমাকে দুনিয়া (নিজের সবকিছু) ছেড়ে দিতে বলে, তবে তাও করবে।

৫ কারো সাথে ঝগড়া-বিবাদ করবে না। যদিও তুমি মনে কর যে, তমি হকের উপর আছ, তথাপি।

৬. যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পালাবে না। যদিও তুমি নিহত হয়ে যাও এবং তোমার সাথীরা পালিয়ে যায়।

৭. সামর্থ্য অনুযায়ী তোমার পরিবারের জন্য ব্যয় করবে।

৮. তোমার লাঠি (শাসন) তোমার পরিবার থেকে উঠিয়ে নিও না এবং

৯. তোমার পরিবারকে আল্লাহর ভয় প্রদর্শন করবে।

19 – عن عبد الله بن عمرو رضي الله عنهما قَالَ جَاءَ رَجُلٌ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ جِئْتُ أُبَايِعُكَ عَلَى الْهِجْرَةِ وَتَرَكْتُ أَبَوَيَّ يَبْكِيَانِ قَالَ: (ارجع إليهما فأضحكهما كما أبكيتهما)

হাদীসঃ১৯.আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (সা) এর নিকট উপস্থিত হয়ে আরয করল- (ইয়া রাসূলাল্লাহ!) আমি অপনার নিকট হিজরতের উপর বায়আত হতে এসেছি এবং আমার মা বাবাকে ক্রন্দনরত রেখে এসেছি। রাসূলুল্লাহ (সা) তাকে বললেন, ফিরে যাও। আর তাদের মুখে হাসি ফোটাও যেভাবে তাদেরকে কাঁদিয়েছ।

20 – عن عبد الله بن عمرو رضي الله عنهما قَالَ جَاءَ رَجُلٌ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عليه وسلم يريد الجهاد فقال «أحى والدك» قال نعم فقال «ففيهما فجاهد»

হাদীসঃ২০.আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি জিহাদে যাওয়ার উদ্দেশ্যে নিয়ে রাসূলুল্লাহ (সা) এর নিকট উপস্থিত হয়। তিনি তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, তোমার বাবা-মা জীবিত আছে? সে বলল, হ্যাঁ। তিনি (সা) বললেন, তবে তুমি তাদের জিহাদে (সেবা-যত্নে) শরীক হও।

10- بَابُ مَنْ أَدْرَكَ وَالِدَيْهِ فَلَمْ يَدْخُلِ الْجَنَّةَ

অনুচ্ছেদঃ১০ যে ব্যক্তি তার পিতা মাতাকে পেল কিন্তু জান্নাতে যেতে পারল না

21 – عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ – رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ – عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: (رَغِمَ أنْفُه رَغِمَ أنْفُه رَغِمَ أنْفُه قَالُوا يَا رَسُولَ اللَّهِ مَنْ؟ قَالَ: (مَنْ أَدْرَكَ وَالِدَيْهِ عنده الكبر أو أحدهما فدخل النار)

হাদীসঃ২১.আবূ হুরায়রা (রা) নবী (সা) থেকে বর্ণনা করেন। রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন- ঐ ব্যক্তির নাক ধূলিমলীন হোক। ঐ ব্যক্তির নাক ধূলিমলীন হোক। সাহাবীগণ আরয করলেন, কার ইয়া রাসূলাল্লাহ! তিনি (সা) বললেন, যে তার তার বাবা মা দুজনকে বৃদ্ধাবস্থায় পেল বা একজনকে পেল, অথচ সে (তাদের সেবাযত্নে অবহেলা করে) জাহান্নামে গেল।

11- بَابُ مَنْ بَرَّ وَالِدَيْهِ زَادَ اللَّهُ فِي عُمْرِهِ

অনুচ্ছেদঃ১১ যে ব্যক্তি পিতা মাতার সাথে সদাচরণ করে আল্লাহ তার আয়ু বাড়িয়ে দেন

22 – عن معاذ الجهني – رضي الله عنه – قَالَ: قَالَ: النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: (مَنْ بَرَّ وَالِدَيْهِ طُوبَى لَهُ زَادَ اللَّهُ عز وجل في عمره)

হাদীসঃ২২.মু’আয আল জুহনী (রা) বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন- যে ব্যক্তি নিজের বাবা মার সাথে সদ্ব্যবহার করে, তার জন্য সুসংবাদ। মহান আল্লাহ তার আয়ু বাড়িয়ে দেন।

12- بَابُ لَا يَسْتَغْفِرُ لِأَبِيهِ الْمُشْرِكِ

অনুচ্ছেদঃ১২ মুশরিক পিতার জন্য মাগফিরাত কামনা করার প্রতি নিষেধাজ্ঞা

23 – عن ابن عباس رضي الله عنهما فِي قَوْلِهِ عَزَّ وَجَلَّ: (إِمَّا يَبْلُغَنَّ عِنْدَكَ الْكِبَرَ أَحَدُهُمَا أَوْ كِلاهُمَا فَلا تَقُلْ لَهُمَا أُفٍّ وَلا تَنْهَرْهُمَا وَقُلْ لَهُمَا قَوْلاً كَرِيماً) إِلَى قَوْلِهِ (كَمَا رَبَّيَانِي صَغِيراً) (الإسراء: 23- 24) فَنَسَخَتْهَا الْآيَةُ فِي بَرَاءَةَ (مَا كَانَ لِلنَّبِيِّ وَالَّذِينَ آمَنُوا أَنْ يَسْتَغْفِرُوا لِلْمُشْرِكِينَ وَلَوْ كَانُوا أُولِي قُرْبَى مِنْ بَعْدِ مَا تَبَيَّنَ لَهُمْ أَنَّهُمْ أَصْحَابُ الْجَحِيمِ) (التوبة: 113)

হাদীসঃ২৩.ইবনে আব্বাস (রা) বলেন, আল্লাহ তা’আলার বাণী- যদি তোমার পিতা মাতা দুজন অথবা কোন একজন তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হয়, তবে তাদেরকে ‘উহ’ শব্দটিও বলো না এবং তাদেরকে ধমক দিও না এবং তাদের সাথে নম্রভাবে কথা বল। তাদের সামনে ভালবাসার সাথে, নম্রভাবে মাথা নত করে দাও এবং বল, হে আমার প্রতিপালক! তাদের উভয়ের প্রতি রহম কর, যেভাবে তারা আমাকে শৈশবকালে লালন-পালন করেছেন।– সূরা ইসরা ২৩-২৪

এটি সূরা বারা’আতের এই আয়াত দ্বারা রহিত হয়ে গেছে- নবী ও মুমিনদের জন্য উচিত নয় মুশরিকদের জন্য মাগফিরাত কামনা করে দুআ করা, যদিও তারা নিকটাত্মীয় হোক- একথা সুস্পষ্ট হওয়ার পর যে তারা জাহান্নামী।-সূরা তাওবা:১১৩

13- بَابُ بِرِّ الْوَالِدِ الْمُشْرِكِ  

অনুচ্ছেদঃ১৩ মুশরিক (বা বিধর্মী) পিতার সাথে সদাচরণ করা

24 –  عن سَعْدِ بْنِ أَبِي وَقَّاصٍ قَالَ: نَزَلَتْ فِيَّ أَرْبَعُ آيَاتٍ مِنْ كِتَابِ اللَّهِ تَعَالَى، كَانَتْ أُمِّي حَلَفَتْ أَنْ لَا تَأْكُلَ وَلَا تَشْرَبَ حَتَّى أُفَارِقَ مُحَمَّدًا صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَأَنْزَلَ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ: (وَإِنْ جَاهَدَاكَ عَلَى أَنْ تُشْرِكَ بِي مَا لَيْسَ لَكَ بِهِ عِلْمٌ فَلا تُطِعْهُمَا وَصَاحِبْهُمَا فِي الدُّنْيَا مَعْرُوفاً) . وَالثَّانِيَةُ: أَنِّي كُنْتُ أَخَذْتُ سَيْفًا أَعْجَبَنِي فَقُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ هَبْ لِي هَذَا فَنَزَلَتْ: (يَسْأَلونَكَ عَنِ الْأَنْفَالِ) وَالثَّالِثَةُ: أَنِّي مَرِضْتُ فَأَتَانِي رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنِّي أُرِيدُ أَنْ أَقْسِمَ مَالِي أَفَأُوصِي بِالنِّصْفِ فَقَالَ لَا فَقُلْتُ الثُّلُثُ فَسَكَتَ فَكَانَ الثُّلُثُ بَعْدَهُ جَائِزًا.

وَالرَّابِعَةُ إِنِّي شَرِبْتُ الْخَمْرَ مَعَ قَوْمٍ مِنَ الْأَنْصَارِ فَضَرَبَ رَجُلٌ مِنْهُمْ أنفى بلحيى جَمَلٍ فَأَتَيْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فأنزل عز وجل تحريم الخمر.

হাদীসঃ২৪.সা’দ ইবনে আবূ ওয়াক্কাস (রা) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আল্লাহ তাআলা তার কিতাবে আমার ব্যাপারে চারটি বিষয় নাযিল করেছেন।

(১).আমার মা কসম খেয়েছিলেন যে- সে না কিছু খাবে আর না কিছু পান করবে, যে পর্যন্ত না আমি আমি মুহাম্মাদ (সা) কে পরিত্যাগ না করব। তখন আল্লাহ তা’আলা এই আয়াত নাযিল করলেন- “পিতা-মাতা যদি তোমাকে আমার সাথে এমন কিছু শরীক করতে চাপ দেয়, যার জ্ঞান তোমার নেই, তবে তুমি তাদের কথা মানবে না। এবং দুনিয়াতে তাদের সাথে সদ্ভাবে বসবাস করবে।”– সূরা লুকমান:১৫

(২).দ্বিতীয়ত একবার আমি একটি তলোয়ার নেই যা আমার পছন্দ হয়। আমি আরয করলাম ইয়া রাসূলাল্লাহ! এটা আমাকে হেবা (উপহার) করুন। তখন এই আয়াত নাযিল হয়-”লোকেরা আপনাকে যুদ্ধলব্ধ সম্পদের ব্যাপারে প্রশ্ন করে।”– সূরা আনফাল:১

(৩).তৃতীয়ত একবার আমি রোগাক্রান্ত হই। তখন রাসূলুল্লাহ (সা) আমার নিকট তাশরীফ আনেন। আমি আরয করলাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি আমার সম্পদ বন্টন করে দিতে চাই।  আমি কি আমার অর্ধেক সম্পত্তি বন্টন করে দিব? রাসূলুলল্লাহ (সা) বললেন, না। আমি আরয করলাম এক তৃতীয়াংশ? তিনি নীরব রইলেন। অতঃপর এক তৃতীয়াংশ ওসীয়ত করা  বৈধ করা হয়।

(৪).চতুর্থত একবার আমি আনসারীদের সাথে মদ পান করি। তখন তাদের মধ্যে এক ব্যক্তি (নেশাবস্থায়) উটের নীচের চোয়ালের হাড় আমার নাকের উপর মারে। তখন আমি নবী (সা) এর নিকট (অভিযোগ নিয়ে) আগমন করি, তো আল্লাহ তাআলা মদ হারাম করে আয়াত নাযিল করেন।

25 – عن أسماء بنت أبى بكر رضي الله عنها قَالَتْ: أَتَتْنِي أُمِّي رَاغِبَةً فِي عَهْدِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَسَأَلْتُ النَّبِيَّ صَلَّى الله عليه وسلم أفأصلها؟ قَالَ: (نَعَمْ) .

قَالَ ابْنُ عُيَيْنَةَ فَأَنْزَلَ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ فِيهَا: (لَا يَنْهَاكُمُ اللَّهُ عَنِ الَّذِينَ لَمْ يُقَاتِلُوكُمْ فِي الدِّينِ)

হাদীসঃ২৫.আসমা বিনতে আবূ বকর (রা) বলেন, আমার আম্মা নবী করীম (সা)-এর যুগে আগ্রহী হয়ে আমার কাছে আসলে আমি নবী করীম (সা)-কে জিজ্ঞাসা করলাম, আমি কি তার সাথে আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখব? তিনি (সা) বললেন, হ্যাঁ।

ইবনে উয়য়াইনাহ (রহ) বলেন, আল্লাহ তাআলা এই ব্যাপারে আয়াত নাযিল করেন-”আল্লাহ তাআলা তোমাদেরকে তাদের সাথে সদ্ব্যবহার করতে নিষেধ করেন না, যারা তোমাদের সাথে তোমাদের দীনের ব্যাপারে লড়াই করে না” (সূরা মুমতাহিনা:৮)।

26 – عن ابن عمر رضي الله عنهما قال: رَأَى عُمَرُ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ حُلَّةً سِيَراءَ  تُبَاعُ،

فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ ابْتَعْ هَذِهِ فَالْبَسْهَا يَوْمَ الْجُمُعَةِ وَإِذَا جَاءَكَ الْوُفُودُ، قَالَ: (إِنَّمَا يَلْبَسُ هَذِهِ مَنْ لَا خَلَاقَ لَهُ) فَأُتِيَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِنْهَا بِحُلَلٍ فَأَرْسَلَ إِلَى عُمَرَ بِحُلَّةٍ فَقَالَ كَيْفَ أَلْبَسُهَا وَقَدْ قُلْتَ فِيهَا مَا قُلْتَ؟ قَالَ: (إِنِّي لَمْ أُعْطِكَهَا لِتَلْبَسَهَا وَلَكِنْ تَبِيعَهَا أَوْ تكسوها) فَأَرْسَلَ بِهَا عُمَرُ إِلَى أَخٍ لَهُ مِنْ أهل مكة قبل أن يسلم.

হাদীসঃ২৬.আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রা) বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, একবার উমর (রা) একটি রেশমী পোষাক বিক্রি হতে দেখলেন। তখন তিনি আরয করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি তা কিনে নেন। আপনি তা জুমার দিন এবং কোন প্রতিনিধি দলের আগমন হলে তা পড়বেন। তিনি (সা) বললেন, এটা সেই পড়বে যার (আখিরাতে) কোন অংশ নাই। এরপর নবী (সা) এর নিকট কিছু রেশমী পোষাক আসলে তিনি তার থেকে একটি উমর (রা) এর জন্য পাঠিয়ে দিলেন।

উমর (রা) আরয করলেন, আমি তা কিভাবে পড়তে পারি, যখন আপনি এর ব্যপারে যা বলার তা বলেছেন। তখন নবী (সা) বললেন, আমি তা তোমাকে পরিধান করার জন্য পাঠাইনি। বরং এজন্য পাঠয়েছি, যেন তুমি তা বিক্রি কর অথবা অপর কাউকে পরিধান করার জন্য দিয়ে দাও। তখন উমর (রা) তা তার এক মুশরিক ভাইয়ের জন্য পাঠিয়ে দেন, যে মক্কায় থাকত আর যিনি তখনও ইসলাম গ্রহণ করেন নি।

14- بَابُ لَا يَسُبُّ وَالِدَيْهِ

অনুচ্ছেদঃ১৪ নিজের পিতা মাতাকে গালি না দেওয়া

27 – عن عبد الله بن عمرو رضي الله عنهما قَالَ: قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: (مِنَ الْكَبَائِرِ أَنْ يَشْتِمَ الرَّجُلُ وَالِدَيْهِ) فَقَالُوا كَيْفَ يَشْتِمُ؟ قَالَ: (يَشْتِمُ الرجلَ فيشتمُ أَبَاهُ وأمَه)

হাদীসঃ২৭.আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন- কবীরা গুনাহ হলো কোন ব্যক্তির নিজের বাবা-মাকে গালি দেয়া। তখন লোকেরা আরয করলো, কিভাবে কেউ তাদেরকে গালি দিতে পারে? নবী (সা) বললেন, কোন ব্যক্তি কাউকে গালি দেয় আর সে ব্যক্তি তার বাবা-মাকে গালি দেয়।[1]

28 – عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرِو بْنِ الْعَاصِ رضي الله عنهما قال: (مِنَ الْكَبَائِرِ عِنْدَ اللَّهِ تَعَالَى أَنْ يستَسبَّ الرجلُ لوالده)

হাদীসঃ২৮.আমর ইবনুল আস (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর নিকট এটা কবীরা গুনাহর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত যে, ব্যক্তি তার পিতাকে গালি দেয়ার জন্য পেশ করে (অপরকে গালি দেয়ার সুযোগ দেয়)।

15- بَابُ عُقُوبَةِ عُقُوقِ الْوَالِدَيْنِ

অনুচ্ছেদঃ১৫ পিতা মাতার অবাধ্যতার শাস্তি

29 – عن أبى بكرة – رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ – عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: (مَا مِنْ ذَنْبٍ أَجْدَرُ أَنْ يُعَجَّلَ لِصَاحِبِهِ الْعُقُوبَةُ مَعَ مَا يُدَّخَرُ له من البغى وقطيعة الرحم) صحيح

হাদীসঃ২৯.আবু বাকরাহ (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী (সা) ইরশাদ করেছেন- যুলুম এবং আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করা ব্যতীত কোন গুনাহ এমন নাই যার সম্পাদনকারীর আখিরাতের নির্ধারিত শাস্তির পাশাপাশি দুনিয়াতেও দ্রুত শাস্তি ভোগ করতে হয়।

30 – عن عمران بن حصين – رضي الله عنه – قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: (مَا تَقُولُونَ فِي الزِّنَا وَشُرْبِ الْخَمْرِ وَالسَّرِقَةِ؟) قُلْنَا اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَعْلَمُ قَالَ: (هُنَّ الْفَوَاحِشُ وَفِيهِنَّ الْعُقُوبَةُ أَلَا أُنَبِّئُكُمْ بِأَكْبَرِ الْكَبَائِرِ الشِّرْكُ بِاللَّهِ عَزَّ وَجَلَّ وَعُقُوقُ الْوَالِدَيْنِ) وَكَانَ متكئا فاحتفز قال: (والزور)

হাদীসঃ৩০.ইমরান ইবনে হুসায়ন (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন- তোমরা যিনা, মদ্যপান ও চুরির অপরাধ সম্পর্কে কি বল? আমরা আরয করলাম, আল্লাহ ও তার রাসূলই ভাল জানেন। তিনি (সা) বললেন, এগুলো নিকৃষ্ট গুনাহ আর এগুলোর জন্য শাস্তি নির্ধারিত আছে। আমি কি তোমাদেরকে কবীরা গুনাহর ব্যাপারে বলব না? (কবীরা গুনাহ হলো) আল্লাহর সাথে শরীক করা এবং বাবা-মার অবাধ্য হওয়া। নবী (সা) হেলান দিয়ে বসা ছিলেন। এরপর উঠে বসে বললেন, আর হলো মিথ্যা।

16- بَابُ بُكَاءِ الْوَالِدَيْنِ

অনুচ্ছেদঃ১৬ পিতা মাতার কান্না

31 –  عن ابن عمر رضي الله عنهما قال: (بكاء الوالدين من العقوق والكبائر)

হাদীসঃ৩১.ইবনে উমর (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন- বাবা মাকে কাঁদানো অবাধ্যতা ও কবীরা গুনাহর অন্তর্ভুক্ত।

17- بَابُ دَعْوَةِ الْوَالِدَيْنِ

অনুচ্ছেদঃ১৭ পিতা মাতার দুআ

32 – عن أبي هريرة – رضي الله عنه – قَالَ: قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: (ثَلَاثُ دَعَوَاتٍ مستجاباتٌ لَهُنَّ لَا شَكَّ فيهنَّ: دعوة المظلوم ودعوة المسافر ودعوة الوَالِدَين على وَلَدِهِمَا)

হাদীসঃ৩২.আবূ হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন- তিনটি দু’আ এমন যা অবশ্যই কবুল হয়। মযলুমের দুআ, মুসাফিরের দুআ এবং সন্তানের জন্য বাবা মার দুআ।

33 – عن أبى هريرة – رضي الله عنه – قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: (مَا تَكَلَّمَ مَوْلُودٌ مِنَ النَّاسِ في مهد الا عيسى بن مَرْيَمَ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَصَاحِبُ جُرَيْجٍ) قِيلَ يَا نَبِيَّ اللَّهِ وَمَا صَاحِبُ جُرَيْجٍ؟ قَالَ: (فَإِنَّ جُرَيْجًا كَانَ رَجُلًا رَاهِبًا فِي صَوْمَعَةٍ لَهُ وَكَانَ رَاعِيَ بَقَرٍ يَأْوِي إِلَى أَسْفَلِ صَوْمَعَتِهِ وَكَانَتِ امْرَأَةٌ مِنْ أَهْلِ الْقَرْيَةِ تَخْتَلِفُ إِلَى الرَّاعِي فَأَتَتْ أُمُّهُ يَوْمًا فَقَالَتْ: يَا جُرَيْجُ، وَهُوَ يُصَلِّي فَقَالَ فِي نَفْسِهِ: وَهُوَ يُصَلِّي: أُمِّي وَصَلَاتِي؟ فَرَأَى أَنْ يُؤْثِرَ صَلَاتَهُ ثُمَّ صَرَخَتْ بِهِ الثَّانِيَةَ فَقَالَ فِي نَفْسِهِ: أُمِّي وَصَلَاتِي؟ فَرَأَى أَنْ يُؤْثِرَ صَلَاتَهُ ثُمَّ صَرَخَتْ بِهِ الثَّالِثَةَ فَقَالَ: أُمِّي وَصَلَاتِي؟ فَرَأَى أَنْ يُؤْثِرَ صَلَاتَهُ فَلَمَّا لَمْ يُجِبْهَا قَالَتْ: لَا أَمَاتَكَ اللَّهُ يَا جُرَيْجُ حَتَّى تَنْظُرَ فِي وَجْهِ الْمُومِسَاتِ ثُمَّ انْصَرَفَتْ فأُتِىَ المَلِكُ بِتِلْكَ الْمَرْأَةِ وَلَدتفَقَالَ: مِمَّنْ؟ قَالَتْ: مِنْ جُرَيْجٍ، قَالَ: أَصَاحِبُ الصَّوْمَعَةِ؟ قَالَتْ: نَعَمْ، قَالَ: اهْدِمُوا صَوْمَعَتَهُ وَأْتُونِي بِهِ فَضَرَبُوا صَوْمَعَتَهُ بِالْفُئُوسِ حَتَّى وَقَعَتْ فَجَعَلُوا يَدَهُ إِلَى عُنُقِهِ بِحَبْلٍ ثُمَّ انْطُلِقَ بِهِ فَمُرَّ بِهِ عَلَى الْمُومِسَاتِ فَرَآهُنَّ فَتَبَسَّمَ وَهُنَّ يَنْظُرْنَ إِلَيْهِ فِي النَّاسِ، فَقَالَ الْمَلِكُ مَا تَزْعُمُ هَذِهِ؟ قَالَ: مَا تَزْعُمُ؟ قَالَ: تَزْعُمُ أَنَّ وَلَدَهَا مِنْكَ، قَالَ أَنْتِ تَزْعُمِينَ؟ قَالَتْ: نعم قال أين هذا الصغير؟ قالوا هو ذا فِي حِجْرِها فَأَقْبَلَ عَلَيْهِ فَقَالَ: مَنْ أَبُوكَ؟ قَالَ: رَاعِي الْبَقَرِ،

قَالَ: الْمَلِكُ أَنَجْعَلُ صَوْمَعَتَكَ مِنْ ذَهَبٍ؟ قَالَ: لَا، قَالَ: مِنْ فِضَّةٍ؟ قَالَ: لَا: قَالَ: فَمَا نَجْعَلُهَا؟ قَالَ: رُدُّوهَا كَمَا كَانَتْ، قَالَ: فَمَا الَّذِي تَبَسَّمْت؟ قَالَ: أَمْرًا عرفتُه، أَدْرَكَتْنِي دَعْوَةُ أُمِّي ثُمَّ أخْبَرَهُم)

হাদীসঃ৩৩.আবূ হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা)-কে বলতে শুনেছি- ঈসা ইবনে মারইয়াম (আ) এবং জুরায়জের সঙ্গী ছাড়া আর কেউ মায়ের কোলে কথা বলে নি। জিজ্ঞাসা করা হলো, ইয়া রাসূলুল্লাহ! জুরায়জের সঙ্গী কে? তিনি ইরশাদ করলেন,  জুরায়জ ছিলেনে একজন সন্ন্যাসী আর সে তার গির্জায় থাকত। তার গির্জার নিচেই এক রাখাল থাকত এবং গ্রামের এক মহিলা সেই রাখালের কাছে আসা যাওয়া করত।

এক দিন জুরায়জের মা তার নিকট আসল। এসে ডাকল, হে জুরায়জ! তখন সে নামায বা উপাসনারত ছিলেন। সে তখন নিজে নিজে ভাবলেন, এক দিকে মা অপর দিকে উপাসনা! তখন তিনি উপাসনাকে অগ্রাধিকার দিলেন। অতঃপর তার মা দ্বিতীয়বার ডাক দিলেন। তিনি আবার নিজে নিজে ভাবলেন, এক দিকে মা অপর দিকে উপাসনা! তখন তিনি (আবার) উপাসনাকে অগ্রাধিকার দিলেন। অতঃপর তৃতীয়বার তার মা তাকে ডাক দিলেন। তিনি আবার নিজে নিজে ভাবলেন, এক দিকে মা অপর দিকে উপাসনা! তখন তিনি (আবার) উপসনাকে অগ্রাধিকার দিলেন। যখন জুরায়জ তার মায়ের ডাকের কোন উত্তর দিলেন না, তখন তার মা তাকে বললেন, হে জুরায়য! যে পর্যন্ত তুই বদকার মেয়েলোকের মুখ না দেখবি, সে পর্যন্ত যেন তোর মৃত্যু না হয়। অতঃপর তিনি চলে গেলেন।

অতএব (ঘটনাক্রমে) ঐ মহিলার যখন বাচ্চা হয় (যে রাখালের নিকট আসা যাওয়া করত)। তখন মহিলাকে বাদশাহর নিকট নিয়ে যাওয়া হয়। বাদশাহ মহিলাকে জিজ্ঞাসা করল, এই বাচ্চা কার? সে বলল, জুরায়জের। বাদশাহ বললেন, গির্জার অধিবাসী (জুরায়জ)?  সে বলল, হ্যাঁ। বাদশাহ নির্দেশ দিলেন, তার গির্জা ভেঙ্গে দাও এবং তাকে আমার নিকট নিয়ে আস। অতএব লোকেরা কুঠার দ্বারা তার গির্জা ভেঙ্গে চুড়মার করে দিল এবং রশি দিয়ে তার হাত গর্দানের সাথে বেঁধে ঐ মহিলার সামনে দিয়ে তাকে নিয়ে যাওয়া হলো। যাওয়ার সময় তিনি ঐ মহীলাকে দেখে মৃদু হাসি দিলেন। আর ঐ মহীলাও লোক পরিবেষ্টিত অবস্থায় তাকে দেখছিলেন।

বাদশাহ জুরায়জকে জিজ্ঞাসা করলেন, এই মহিলা কি বলছে? জুরায়জ বললেন, সে কি বলছে? বাদশাহ বললেন, সে বলছে- এই বাচ্চা তোমার থেকে হয়েছে। তিনি (মহিলাকে) বললেন, তুমি কি এই কথা বলেছ? সে বলল, হ্যাঁ। তিনি বললেন, বাচ্চা কোথায়? লোকেরা বলল, এই যে, মহিলার কোলে। তখন জুরায়য বাচ্চার দিকে মনোযোগ দিয়ে বললেন, তোমার বাবা কে? বাচ্চাটি বলল, গ্রামের ঐ রাখাল।

(এই ঘটনা দেখে) বাদশাহ বললো, আমরা আপনার গির্জা স্বর্ণ দ্বারা নির্মাণ করে দিব। তিনি বললেন, না। বাদশাহ বললেন, তবে রৌপ্য দ্বারা। তিনি বললেন, না। বাদশাহ বলল, তবে আমরা তার কি করব? তিনি বললেন, ওটাকে যেমন ছিল তেমনই বানিয়ে দেয়া হোক। বাদশাহ বললেন, আপনি হেসেছিলেন কেন?  তিনি বললেন, একটি কারণে। আর তা হলো আমার উপর আমার মায়ের বদ দুআ লেগেছিল। এরপর তিনি বাদশাকে পুরো ঘটনা বললেন।

18- بَابُ عَرْضِ الْإِسْلَامِ عَلَى الْأُمِّ النَّصْرَانِيَّةِ

অনুচ্ছেদঃ১৮ খৃষ্টান [বা বিধর্মী] মায়ের [বা বাবার] নিকট ইসলামের দাওয়াত প্রদান

34 – عن أبي هريرة – رضي الله عنه – قال مَا سَمِعَ بِي أحدٌ يَهُودِيٌّ وَلَا نَصْرَانِيٌّ إِلَّا أَحَبَّنِي، إِنَّ أُمِّي كُنْت أُرِيدُها عَلَى الْإِسْلَامِ فَتَأْبَى فَقُلْتُ لَهَا فَأَبَتْ فأتيتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقُلْتُ: ادْعُ اللَّهَ لَهَا فَدَعَا فَأَتَيْتُهَا وَقَدْ أجُافُتْ  عَلَيْهَا الْبَابَ فَقَالَتْ: يَا أَبَا هُرَيْرَةَ إِنِّي أَسْلَمْتُ، فَأَخْبَرْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقُلْتُ ادْعُ اللَّهَ لِي وَلِأُمِّي فَقَالَ: (اللَّهُمَّ عَبْدُك أبو هريرة وأُمُّهُ أَحِبَّهُما إلى الناس)

হাদীসঃ৩৪.আবু হুরায়রা (রা) বলেন- [সকল মুসলমানসহ] যে ইয়াহূদী বা খৃস্টানও আমার ব্যাপারে শুনেছে  সে-ই আমার সাথে মহব্বত পোষণ করেছে। কেননা (ব্যাপার হলো) আমি আমার মাকে ইসলামের দিকে আকৃষ্ট করতাম। আর সে তা অস্বীকার করত। অনুরুপ আমি তাকে (ইসলামের) কথা বলতাম আর সে তা অস্বীকার করত। অতএব আমি রাসূলুল্লাহ (সা) এর নিকট এসে বললাম, আপনি আমার মায়ের জন্য দুআ করুন। তখন নবী (সা) তার জন্য দুআ করলেন। যখন আমি ঘরে আসলাম, তখন সে দরজা বন্ধ করা অবস্থায় ছিল। তিনি বললেন, হে আবু ‍হুরায়রা! আমি মুসলমান হয়ে গেছি। তখন আমি রাসূলুল্লাহ (সা) এর নিকট গেলাম এবং তাকে তার মুসলমান হওয়ার সংবাদ দিলাম। আর আরয করলাম, আমার জন্য এবং আমার মায়ের জন্য দুআ করুন। তখন নবী (সা) দুআ করলেন- হে আল্লাহ! তোমার বান্দা আবু হুরায়রা ও তার মাকে সকলের নিকট প্রিয় করে দাও।

19- بَابُ بِرِّ الْوَالِدَيْنِ بَعْدَ مَوْتِهِمَا

অনুচ্ছেদঃ১৯ পিতা মাতার মৃত্যুর পর তাদের সাথে সদাচরণ করা

35 – عن أبي أسيد – مالك بن ربيعة الساعدي – رضي الله عنه – قَالَ: كُنَّا عِنْدَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ رَجُلٌ: يَا رَسُولَ اللَّهِ هَلْ بَقِيَ مِنْ بِرِّ أَبَوَيَّ شَيْءٌ بَعْدَ مَوْتِهِمَا أَبَرُّهُمَا؟ قَالَ: (نَعَمْ، خصالٌ أَرْبَعٌ: الدُّعَاءُ لَهُمَا، والاستغفار لهما، وإنفاذ عهدها، وَإِكْرَامُ صَدِيقِهِمَا، وصِلةُ الرَّحم الَّتِي لَا رحمَ لك إلا من قِبَلِهما)

হাদীসঃ৩৫.আবূ উসায়দ (রা) থেকে বর্ণিত। মালিক বিন রবীয়া আস সায়িদী (রা) বলেন,  আমরা নবী করীম (সা)-এর পাশে উপস্থিত ছিলাম। এক ব্যক্তি আরয করল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমার বাবা-মার মৃত্যুর পরও কি তাদের সাথে কোন নেক আচরণের সুযোগ আছে? তিনি (সা) বললেন, হ্যাঁ চারটি স্বভাব রয়েছে।

১.তাদের জন্য দুআ এবং ক্ষমা প্রার্থনা করা।

২.তাদের অঙ্গীকার পুরা করা।

৩.তাদের বন্ধু-বান্ধবদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা এবং

৪.যাদের সাথে তাদের নিকটাত্মীয়তা ছিল তাদের সাথে আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখা।

36 –  عن أبى هريرة – رضي الله عنه – قال: تُرْفَعُ لِلْمَيِّتِ بَعْدَ مَوْتِهِ درجَتُه فَيَقُولُ: أَيْ رَبِّ أَيُّ شَيْءٍ هَذِهِ؟ فَيُقال: ولدُك استغفَرَ لك)

হাদীসঃ৩৬.আবূ হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, মৃত ব্যক্তির জন্য মৃত্যুর পরও তার মর্যাদা বৃদ্ধি করা হয়ে থাকে। তখন সে আরয করে, হে আমার রব! এটা কি ব্যাপার? তখন তাকে বলা হয়, তোমার সন্তান তোমার জন্য ক্ষমা চেয়েছে।

37 –  عن محمد بن سيرين قال: كنا عند أبى هريرة – رضي الله عنه – لَيْلَةً، فَقَالَ: (اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِأَبِي هُرَيْرَةَ وَلِأُمِّي ولمن استغفر لهما) قال مُحَمَّدٌ: فَنَحْنُ نَسْتَغْفِرُ لَهُمَا حَتَّى نَدْخُلَ فِي دعوة أبى هريرة. صحيح الإسناد.

হাদীসঃ৩৭.মুহাম্মাদ ইবনে সীরীন (রহ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক রাতে আমি আবূ হুরায়রা (রা) এর নিকট উপস্থিত ছিলাম। তখন তিনি দুআ করলেন- হে আল্লাহ! আবূ হুরায়রা এবং আমার মাকে আর যারা এই দুইজনের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে- সবাইকে তুমি ক্ষমা কর। মুহাম্মাদ ইবনে সীরীন (রহ) আমাকে বলেন- অতএব আমরা তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করি যাতে আমরাও তার দু’আর অন্তর্ভুক্ত হতে পারি।

38 – عن أبى هريرة – رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ – أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى الله عليه وسلم قَالَ: (إِذَا مَاتَ العبدُ انْقَطَعَ عَنْهُ عَمَلُه إِلَّا مِنْ ثَلَاثٍ: صَدَقَةٍ جَارِيَةٍ، أَوْ عِلْمٍ يُنْتَفَعُ بِهِ، أَوْ وَلَدٍ صَالِحٍ يَدْعُو لَهُ)

হাদীসঃ৩৮.আবূ হুরায়রা (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন- বান্দা যখন মৃত্যুবরণ করে, তখন তার সব আমল বন্ধ হয়ে যায় তিনটি আমল ব্যতীত- সাদকায়ে জারিয়া, এমন ইলম যার দ্বারা উপকৃত হওয়া যায় এবং নেক সন্তান যে তার জন্য দুআ করে।

39 – عن ابن عباس رضي الله عنهما أَنَّ رَجُلًا قَالَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنَّ أُمِّي تُوِفِيَت وَلَمْ توصِ أَفَيَنْفَعُهَا أَنْ أَتَصَدَّقَ عَنْهَا؟ قَالَ: (نَعَمْ) .

হাদীসঃ৩৯.ইবনে আব্বাস (রা) থেকে বর্ণিত। এক ব্যক্তি আরয করল, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমার মা মৃত্যুবরণ করেছেন আর তিনি আমাকে কোন অসিয়ত করেন নাই। যদি আমি তার পক্ষে সাদকা করি তবে তার দ্বারা সে কি উপকৃত হবে? রাসূলুল্লাহ (সা) বললেলেন, হ্যাঁ।

20- بَابُ بِرِّ مِنْ كَانَ يَصِلُهُ أَبُوهُ

অনুচ্ছেদঃ২০ নিজের পিতার সাথে দেখা-সাক্ষাতকারীদেরকে সম্মান করা

40 – عن ابن عمر رضي الله عنهما قال: مَرَّ أَعْرَابِيٌّ فِي سَفَرٍ فَكَانَ أَبُو الْأَعْرَابِيِّ صديقا لعمر رضي الله عنه، فقال الأعرابي: أَلَسْتَ ابْنَ فُلَانٍ؟ قَالَ: بَلَى، فَأَمَرَ لَهُ ابْنُ عُمَرَ بِحِمَارٍ كَانَ يَسْتَعْقِبُ (2) وَنَزَعَ عِمَامَتَهُ عَنْ رَأْسِهِ فَأَعْطَاهُ فَقَالَ: بَعْضُ مَنْ مَعَهُ أَمَا يَكْفِيهِ دِرْهَمَانِ؟

فَقَالَ: قَالَ: النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: (احْفَظ وِدَّ أبِيْك لَا تقطعُْه فيُطفىء الله نُورَكَ)

হাদীসঃ৪০.ইবনে উমর (রা) থেকে বর্ণিত। এক সফরে তিনি এক বেদুইনকে দেখলেন যার পিতার সাথে তার পিতার বন্ধুত্ব ছিল। তিনি তাকে বললেন, তুমি কি অমুকের পুত্র নও? সে বলল, হ্যাঁ। তখন তিনি তাকে (বাহন হিসাবে) একটি গাধা দেওয়ার নির্দেশ দিলেন, যা বাহন হিসাবে তিনি তার সাথে রাখতেন এবং নিজের মাথার পাগড়ী খুলে তাকে দিয়ে দিলেন। তখন তার সাথে যারা ছিল তাদের কেউ বলল, তার জন্য কি দুটি দিরহামই যথেষ্ট ছিল না? তখন তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেছেন- তোমার বাবার (বন্ধুত্ব ও আত্মীয়তার) সম্পর্কের হিফাযত কর, তাকে ছিন্ন করো না। অন্যথায় আল্লাহ তোমার নূর (ইমানের আলো বা জীবন সৌন্দর্য) নিভিয়ে দিবেন।

41 – عن ابن عمر رضي الله عنهما عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: (إِنَّ أَبَّر البِّر أَنْ يصِلَ الرجلُ أهل وِدِّ أبيه)

হাদীসঃ৪১.ইবনে উমর (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন- কোন ব্যক্তির নিজের পিতার (অপরাপর) সম্পর্ককে বজায় রাখা উত্তম আমলের অন্তর্ভুক্ত।

21- بَابُ لَا تَقْطَعْ مَنْ كَانَ يَصِلُ أَبَاكَ فَيُطْفَأَ نُورُكَ

অনুচ্ছেঃ২১ নিজের পিতার (অপরাপর) সম্পর্ককে ছিন্ন না করা অন্যথায় তোমার নূর নিভিয়ে দেওয়া হবে

42 –  عن عبد الله بن لا حق قَالَ: كُنْتُ جَالِسًا فِي مَسْجِدِ الْمَدِينَةِ مَعَ عمرو بن عثمان فَمَرَّ بنا عبد الله بن سلام متكئا على بن أَخِيهِ فَنَفَذَ عَنِ الْمَجْلِسِ ثُمَّ عَطَفَ عَلَيْهِ فَرَجَعَ عَلَيْهِمْ فَقَالَ: مَا شِئْتَ عَمْرَو بْنَ عُثْمَانَ مَرَّتَيْنِ أَوْ ثَلَاثًا فَوَالَّذِي بَعَثَ مُحَمَّدًا صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِالْحَقِّ إِنَّهُ لَفِي كتاب عَزَّ وَجَلَّ مَرَّتَيْنِ (لَا تَقْطَعْ مَنْ كَانَ يصل أباك فيطفأ بذلك نورك) .

হাদীসঃ৪২.আব্দুল্লাহ ইবনে লাহিক (রহ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা আমর বিন উসমানের সাথে মদীনার মসজিদে বসা ছিলাম। আমাদের পাশ দিয়ে আবদুল্লাহ ইবনে সালাম (রা) তার ভাতিজার সাহায্য নিয়ে অতিক্রম করছিলেন এবং মসজিদ অতিক্রম করে গেলেন। অতঃপর তিনি পিছনে ফিরে আসলেন এবং বললেন, হে আমর ইবনে উসমান! এখন তোমার যা ইচ্ছা কর। এটা তিনি দুই অথবা তিনবার বললেন। কসম সেই সত্তার! যিনি মুহাম্মদ (সা)-কে সত্যসহ প্রেরণ করেছেন। নিশ্চয়ই আল্লাহর (নাযিলকৃত পূর্ববর্তী তাওরাত) কিতাবে দুইবার লিখা আছে- যার সাথে তোমার বাবার (আত্মীয়তা ও বন্ধুত্বের) সম্পর্ক ছিল তার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করো না। অন্যথায় এর জন্য তোমার নূর (ইমানের আলো বা জীবন সৌন্দর্য) নিভিয়ে দেওয়া হবে।

22- بَابُ الْوُدُّ يُتَوَارَثُ

অনুচ্ছেদঃ২২ মহব্বত ও ভালাবাসাও উত্তরাধীকার সৃষ্টি করে

43 – عَنْ أَبِي بَكْرِ بْنِ حَزْمٍ عَنْ رَجُلٍ مِنْ أَصْحَابِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: كَفَيْتُكَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عليه وسلم قال: (إن الوِّدَ يَتَوَارَث) ضعبف

হাদীসঃ৪৩.আবু বকর ইবনে হাযম যিনি নবী করীম (সা)-এর সাহাবীদের মধ্যে ছিলেন। তার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন- তোমার জন্য আমার এটা বলাই যথেষ্ট যে, রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেছেন- নিঃসন্দেহে মহব্বত ও ভালবাসাও উত্তরাধীকার সৃষ্টি করে।

23- بَابُ لَا يُسَمِّي الرَّجُلُ أَبَاهُ، وَلَا يَجْلِسُ قَبْلَهُ، وَلَا يَمْشِي أَمَامَهُ

অনুচ্ছেদঃ২৩ কোন ব্যক্তির তার পিতাকে নাম ধরে না ডাকা তার অগে না বসা ও না চলা

44 – عن أبي هريرة – رضي الله عنه – أنه أَبْصَرَ رَجُلَيْنِ فَقَالَ: لِأَحَدِهِمَا مَا هَذَا مِنْكَ؟ فَقَالَ أَبِي فَقَالَ: (لَا تُسَمِّهِ بِاسْمِهِ وَلَا تمش أمامه ولا تجلس قبله) صحيح

৪৪.আবূ হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি একবার দুই ব্যক্তিকে দেখলেন। তাদের একজনকে বললেন,  ইনি তোমার কি হয়? সে বলল, আমার বাবা। তখন তিনি বললেন- তাকে (কখনও) নাম ধরে ডাকবে না, তার আগে চলবে না আর তার আগে বসবে না।

24- بَابُ: هَلْ يُكَنِّي أَبَاهُ؟

অনুচ্ছেদ:২৪ পিতাকে কি তার উপনামে নামে ডাকা যায়?

45 –  عَنْ شَهْرِ بْنِ حَوْشَبٍ قَالَ خَرَجْنَا مَعَ ابْنِ عُمَرَ فَقَالَ لَهُ سَالِمٌ: (الصَّلَاةَ يَا أبا عبد الرحمن)

হাদীসঃ৪৫.শাহ্‌র বিন হাওশাব থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার আমরা আবদুল্লাহ ইবনে উমরের সাথে সফরে বের হলাম। তখন (তার ছেলে) সালিম এভাবে বলল, হে আব্দুর রহমানের বাব! সালাত! (নামাযের সময় হয়েছে)।

46 –  عن ابن عمر رضي الله عنهما قال: (لكن أبو حفص عُمرُ قضى)

হাদীসঃ৪৬.আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রা) বর্ণনা করেন। তিনি (তার বাবার উপনাম ধরে) বলেন- তবে হাফসের বাবা উমর বিচার-মীমাংসা করেছেন।

 

[1] . সহিহ- বুখারী ৫৯৮৩। মুসলিম ১৩০। তিরমিযী ১৯০৩। আবু দাউদ ৫১৪১। তায়ালসী ২২৬৯। আব্দ ইবনে হুমাযদ ৩২৫। ইবনে হিব্বান ৪১১। তাফসীর ইবনে আবী হাতিম ৫১৯৬।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to top button
error: Content is protected !!