কিতাবুল ফারয- দুখের পর সুখ- ইমাম ইবনে আবিদ দুনইয়া (রহ)- pdf

দারুস সাআদাত গ্রন্থ

গ্রন্থঃ কিতাবুল ফারয, কষ্টের পর সুখ

লেখক, ইমাম ইবনে আবিদ দুনইয়া (রহ)

অনুবাদঃ দারুস সাআদাত কর্তৃক অনূদিত

স্বত্বঃ দারুস সাআদাত কর্তৃক সংরক্ষিত, বিনানুমতিতে কপি করা, মূদ্রণ করা এবং এপে ব্যবহার করলে আইনত দণ্ডনীয়।

বিপদাপদ দুঃখ-কষ্ট মানুষের জীবনের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। আর এ থেকে নিষ্কৃতি লাভের চেষ্টাও মানুষের সহজাত বিষয়। এ বিষয়ের উপর চমৎকার রিসালা প্রণয়ণ করেছেন প্রাচীন মুহাদ্দিস ইমাম ইবনে আবিদ দুনইয়া (রহ)। গ্রন্থটি থেকে বাছাইকৃত অংশ পেশ করা হলো যা পুরো গ্রন্থের সার নির্যাস।

بِسْمِ اللهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ

نَحْمَدُه وَنُصَلِّ عَلٰى رَسُوْلِهِ الْكَرِيْمِ

কিতাবুল ফারয

সুসময়ের অপেক্ষা করা ইবাদত

[১] হযরত আলী (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন-

انْتِظَارُ الْفَرَجِ مِنَ اللَّهِ عَزَّ وَجَلَّ عِبَادَةٌ، وَمَنْ رَضِيَ بِالْقَلِيلِ مِنَ الرِّزْقِ رَضِيَ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ مِنْهُ بِالْقَلِيلِ مِنَ الْعَمَلِ

মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে সুসময়ের অপেক্ষা করা ইবাদত। আর যে ব্যক্তি অল্প রিযিকে তুষ্ট থাকে, আল্লাহ তাআলা তার অল্প আমলেই সন্তুষ্ট হয়ে যান।– [রিওয়ায়ায়াতঃ১][1]

[২] যরত ইবনে মাসউদ (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন-

سَلُوا اللَّهَ عَزَّ وَجَلَّ مِنْ فَضْلِهِ، فَإِنَّ اللَّهَ عَزَّ وَجَلَّ يُحِبُّ أَنْ يُسْأَلَ مِنْ فَضْلِهِ، وَأَفْضَلُ الْعِبَادَةِ انْتِظَارُ الْفَرَجِ

তোমরা আল্লাহর নিকট তার অনুগ্রহ প্রার্থনা কর। কেননা তার নিকট প্রার্থনা করাকে তিনি পছন্দ করেন। আর সর্বোত্তম ইবাদত হলো স্বাচ্ছন্দ্যের প্রতিক্ষা করা।– [রিওয়ায়ায়াতঃ২][2]

সবর ও ধৈর্য উত্তম নিয়ামত

[৩] হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন-

لَمْ تُعْطَوْا عَطَاءً خَيْرًا وَلَا أَوْسَعَ مِنَ الصَّبْرِ

সবর বা ধৈর্যের চেয়ে উত্তম ও প্রশস্ত কোন নিয়ামত কাউকে কখনো দেয়া হয়নি।–

[রিওয়ায়ায়াতঃ৩][3]

সকল ধরণের সংকট থেকে মুক্তির উপায়

       [৪] হযরত র’বী ইবনে খুসাইম (রহ) আল্লাহর বাণী-

وَمَنْ يَتَّقِ اللَّهَ يَجْعَلْ لَهُ مَخْرَجًا

আর যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় করে আল্লাহ তার জন্য নিষ্কৃতির পথ করে দিবেন।–

সূরা তালাক:২

প্রসঙ্গে বলেন-

الْمَخْرَجُ مِنْ كُلِّ مَا ضَاقَ عَلَى النَّاسِ

অর্থাৎ মানুষের উপর আপতিত সকল ধরণের সংকট থেকে উত্তরণের পথ করে দেবন (তা যা-ই হোক না কেন)।– [রিওয়ায়ায়াতঃ৪]

আল্লাহর শান

[৫] হযরত আবু দারদা (রা) কে নিম্নের আয়াত প্রসঙ্গে জিজ্ঞাসা করা হলো-

كُلَّ يَوْمٍ هُوَ فِي شَأْنٍ

তিনি (আল্লাহ) প্রতিদিন তার শান অনুযায়ী থাকেন।– সূরা আর রহমান:২৯

তিনি বলেন-

مِنْ شَأْنِهِ أَنْ يَغْفِرَ ذَنْبًا، وَيَكْشِفَ كَرْبًا، وَيَرْفَعَ قَوْمًا، وَيَضَعَ آخَرِينَ

তার শান হলো তিনি গুনাহ ক্ষমা করেন, মুসিবত দূর করেন, একদলকে মর্যাদা দান করেন, অপর দলকে অপদস্থ করেন।– [রিওয়ায়ায়াতঃ৫][4]

ব্যাপক উপদেশ

[৬] হযরত ইবন আববাস (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন আমি নবী (সা) এর পিছনে আরোহী ছিলাম। তিনি বললেন-

احْفَظْ يَا غُلَامُ، احْفَظِ اللَّهَ يَحْفَظْكَ، احْفَظْهُ تَجِدْهُ تِجَاهَكَ، إِذَا سَأَلْتَ فَسَلِ اللَّهَ، وَإِذَا اسْتَعَنْتَ فَاسْتَعِنْ بِاللَّهِ، جَفَّتِ الْأَقْلَامُ، وَرُفِعَتِ الصُّحُفُ، وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ، لَوْ جَهِدَتِ الْأُمَّةُ لِتَنْفَعَكَ بِغَيْرِ مَا كَتَبَ اللَّهُ لَكَ مَا اسْتَطَاعَتْ ذَلِكَ، وَلَوْ أَرَادَتْ أَنْ تَضُرَّكَ بِغَيْرِ مَا قَدَّرَ لَكَ مَا اسْتَطَاعُوا

বৎস! সংরক্ষণ কর (এই কথাগুলো- এর দ্বারা আল্লাহ তোমার উপকার করবেন)। আল্লাহর (বিধানসমূহের) হিফাযত করবে, তাহলে তিনি তোমার হিফাযত করবেন। আল্লাহর বিধান মেনে চলবে তাহলে তাকে তোমার সামনে সদয় পাবে। যখন কিছু চাইবে তখন আল্লাহর কাছেই চাইবে। যখন সাহায্য চাইবে তখন আল্লাহর কাছেই সাহায্য চাইবে। কলম উঠিয়ে নেওয়া হয়েছে এবং কাগজসমূহ শুকিয়ে গেছে।

কসম সেই সত্তার যার হাতে আমার প্রাণ! জেনে রাখ, সমস্ত উম্মতও যদি তোমার উপকার করতে একত্রিত হয়ে যায় তবে আল্লাহ যা তোমার তাকদীরে লিখে রেখেছেন তা ছাড়া কোন উপকার তারা তোমার করতে পারবে না। অপরদিকে তারা যদি তোমার কোন ক্ষতি সাধন করার উদ্দেশ্যে একত্রিত হয়ে যায়, তবু তারা আল্লাহ তোমার তাকদীরে যা লিখে রেখছেন তার বাইরে কোন ক্ষতি করতে পারবে না।– [রিওয়ায়ায়াতঃ৬][5]

[৭] হযরত সাহল ইবনে আস সায়িদী (রা) বর্ণনা করেন- রাসূলুল্লাহ (সা) হযরত ইবনে আব্বাস (রা) কে বলেন-

يَا غُلَامُ، أَلَا أُعَلِّمُكَ كَلِمَاتٍ تَنْتَفِعُ بِهِنَّ؟» قَالَ: بَلِيٍّ يَا رَسُولَ اللَّهِ، قَالَ: «احْفَظِ اللَّهَ يَحْفَظْكَ، احْفَظِ اللَّهَ تَجِدْهُ أَمَامَكَ، تَعَرَّفْ إِلَى اللَّهِ فِي الرَّخَاءِ يَعْرِفْكَ فِي الشِّدَّةِ، إِذَا سَأَلْتَ فَسَلِ اللَّهَ، وَإِذَا اسْتَعَنْتَ فَاسْتَعِنْ بِاللَّهِ، جَفَّ الْقَلَمُ بِمَا هُوَ كَائِنٌ، فَلَوْ جَهَدَ الْعِبَادُ أَنْ يَنْفَعُوكَ بِشَيْءٍ لَمْ يَكْتُبْهُ اللَّهُ لَكَ لَمْ يَقْدِرُوا عَلَيْهِ، وَلَوْ جَهَدَ الْعِبَادُ عَلَى أَنْ يَضُرُّوكَ بِشَيْءٍ لَمْ يَكْتُبْهُ اللَّهُ عَلَيْكَ لَمْ يَقْدِرُوا عَلَيْهِ، فَإِنِ اسْتَطَعْتَ أَنْ تَعْمَلَ لِلَّهِ بِالصِّدْقِ فِي الْيَقِينِ فَافْعَلْ، وَإِنْ لَمْ تَسْتَطِعْ فَإِنَّ فِي الصَّبْرِ عَلَى مَا تَكْرَهُ خَيْرًا كَثِيرًا، وَاعْلَمْ أَنَّ النَّصْرَ مَعَ الصَّبْرِ، وَأَنَّ الْفَرَجَ مَعَ الْكَرْبِ، وَأَنَّ مَعَ الْعُسْرِ يُسْرًا

হে বৎস! আমি কি তোমাকে কিছু কথা বলব না, যার দ্বারা আল্লাহ তোমার উপকার করবেন। তিনি বললেন, হ্যাঁ ইয়া রাসূলাল্লাহ! রাসূলুল্লাহ (সা) বললেন- তুমি আল্লাহর বিধান মেনে চলবে, তাহলে তিনি তোমার হিফাযত করবেন। আল্লাহর বিধান মেনে চলবে তাহলে তাকে তোমার সামনে সদয় পাবে। সুখের সময় তুমি আল্লাহকে চিনবে, তাহলে কষ্টের সময় তিনি তোমাকে চিনবেন। যখন কিছু চাইবে তখন আল্লাহর কাছেই চাইবে। যখন সাহায্য চাইবে তখন আল্লাহর কাছেই সাহায্য চাইবে। জীবনে যা ঘটবে তা লিখা হয়ে গেছে।

জেনে রাখ! সমস্ত মানুষ যদি তোমার উপকার করতে একত্রিত হয়ে যায়, তবু আল্লাহ যা তোমার তাকদীরে লিখে রেখেছেন তা ছাড়া আর কোন উপকার তারা তোমার করতে পারবে না। অপরদিকে তারা সকলে মিলে যদি তোমার কোন ক্ষতি করার ইচ্ছা করে, তবু আল্লাহ তোমার জন্য যা লিখে রেখেছেন তার বাইরে তারা তোমার কোন ক্ষতি করতে পারবে না।

অতএব ইখলাস ও একনিষ্ঠতা এবং ইয়াকীন ও দৃঢ় বিশ্বাসের সাথে আমল করে যাও। জেনে রাখ! অপছন্দনীয় বিষয়ে ধৈর্যধারণ করার মাঝে অনেক কল্যাণ রয়েছে। ধৈর্যের সাথেই রয়েছে আল্লাহর সাহায্য। বিপদের পরেই রয়েছে মুক্তি। আর কষ্টের পরই সুখ।– [রিওয়ায়ায়াতঃ৭][6]

ইস্তিগফার বা ক্ষমা প্রার্থনার সুফল

[৮] হযরত ইবনে আব্বাস (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন-

مَنْ أَكْثَرَ مِنَ الِاسْتِغْفَارِ جَعَلَ اللَّهُ لَهُ مِنْ كُلِّ هَمٍّ فَرَجًا، وَمِنْ كُلِّ ضِيقٍ مَخْرَجًا، وَرَزَقَهُ مِنْ حَيْثُ لَا يَحْتَسِبُ

যে ব্যক্তি অধিক পরিমাণে ইস্তিগফার করে (আল্লাহর কাছে মাফ চায়)। আল্লাহ তাকে প্রতিটি দুশ্চিন্তা হতে মুক্তি দান করেন। প্রত্যেক জটিলতা ও সংকীর্ণতা থেকে উত্তরণের পথ বের করে দেন। আর এমন স্থান হতে তাকে রিযিক দান করেন যার কল্পনাও সে করে না।– [রিওয়ায়ায়াতঃ৮][7]

যা মানুষের জন্য যথেষ্ট

[৯] হযরত আবু যর (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন- একবার রাসূলুল্লাহ (সা) এই আয়াত তিলাওয়াত করেন-

وَمَنْ يَتَّقِ اللَّهَ يَجْعَلْ لَهُ مَخْرَجًا، وَيَرْزُقْهُ مِنْ حَيْثُ لَا يَحْتَسِبُ وَمَنْ يَتَوَكَّلْ عَلَى اللَّهِ فَهُوَ حَسْبُهُ

আর যে আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ তার জন্য (সব সংকট থেকে ‍নিষ্কৃতির) পথ করে দেবেন এবং তার ধারণাতীত স্থান থেকে তাকে রিযিক দান করবেন। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর নির্ভর করে, তার জন্য তিনিই যথেষ্ট।– সূরা তালাক:২-৩

তারপর বলেন-

يَا أَبَا ذَرٍّ، لَوْ أَنَّ النَّاسَ كُلَّهُمْ أَخَذُوا بِهَا لَكَفَتْهُمْ

হে আবু যর! সকল মানুষ যদি এই আয়াতের উপর আমল করত, তবে সবার জন্য তা যথেষ্ট হত।– [রিওয়ায়ায়াতঃ৯][8]

সব সমস্যা ও সংকট আল্লাহর নিকট পেশ করা

[১০] হযরত আবু উবাইদাহ (রা) থেকে বর্ণিত। এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (সা) এর নিকট এসে বলল, অমুক গোত্র হানা দিয়ে আমার উট ও সন্তান নিয়ে গেছে। রাসূলুল্লাহ (সা) বললেন, এই মুহুর্তে মুহাম্মদের পরিবারে এক মুদ খাবার বা এক সা খাবারও নেই। তুমি আল্লাহর কাছে প্রয়োজন পেশ কর।

সাহাবী ফিরে আসলে তার স্ত্রী জিজ্ঞাসা করলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) তোমাকে কি বললেন? সে সব খুলে বলল। তার স্ত্রী বলল, হয়তো এটাই তোমর জন্য উত্তম। (তারা নবী (সা) এর কথামত কাজ করলেন।) অতঃপর শীঘ্রই আল্লাহ তাআলা হামলাকারীদের থেকে তাদের উট ও সন্তান ফিরিয়ে দিলেন। এরপর তিনি নবী (সা) এর নিকট গেলেন ঘটনা জানাতে। অতঃপর নবী (সা) মিম্বরে উঠে আল্লাহর হামদ ও সানা পাঠ করে বলেন-

وَأَمَرَ النَّاسَ بِمَسْأَلَةِ اللَّهِ عَزَّ وَجَلَّ وَالرَّغْبَةِ إِلَيْهِ

মানুষের কর্তব্য হলো সব প্রয়োজন আল্লাহর নিকট পেশ করা এবং তার অভিমুখী হওয়া।

অতঃপর তিনি তিলাওয়াত করেন-

وَمَنْ يَتَّقِ اللَّهَ يَجْعَلْ لَهُ مَخْرَجًا، وَيَرْزُقْهُ مِنْ حَيْثُ لَا يَحْتَسِبُ

আর যে আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ তার জন্য (সংকট থেকে ‍নিষ্কৃতির) পথ করে দেবেন এবং তার ধারণাতীত স্থান থেকে তাকে রিযিক দান করবেন।– সূরা তালাক:২-৩– [রিওয়ায়ায়াতঃ১০][9]

সকল রোগ ব্যাধি ও চিন্তার নিশ্চিত ওষুধ

[১১] হযরত আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন-

لَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللَّهِ دَوَاءٌ مِنْ تِسْعَةٍ وَتِسْعِينَ دَاءً، أَيْسَرُهَا الْهَمُّ

লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা ‍বিল্লাহ ৯৯ টি রোগের ওষুধ। যার মধ্যে সবচাইতে সহজটি হলো ‍চিন্তা।– [রিওয়ায়ায়াতঃ১১][10]

কষ্ট ও মুসিবত গুনাহর কাফফারা

[১২] হযরত হাসান থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন-

سَاعَاتُ الْأَذَى يُذْهِبْنَ سَاعَاتِ الْخَطَايَا

কষ্টের সময়গুওলা গুনাহর সময়ের কাফফারা স্বরুপ।– [রিওয়ায়ায়াতঃ১২][11]

অপছন্দনীয় বিষয়েও কল্যাণ থাকে

[১৩] হযরত আবী মাজলায (রহ) থেকে বর্ণিত। হযরত উমর (রা) বলেছেন-

مَا أُبَالِي عَلَى أَيِّ حَالٍ أَصْبَحْتُ، عَلَى مَا أُحِبُّ أَوْ عَلَى مَا أَكْرَهُ، وَذَلِكَ لِأَنِّي لَا أَدْرِي الْخَيْرَ فِيمَا أُحِبُّ أَوْ فِيمَا أَكْرَهُ

আমার সকাল ভাল হলো, না মন্দ হলো তা আমি জানি না। কারণ আমি জানি না, যা আমার পছন্দ তা আমার জন্য কল্যাণকর, না যা আমার অপছন্দ তা আমার জন্য কল্যাণকর।– [রিওয়ায়ায়াতঃ১৩][12]

[১৪] হযরত ইবরাহিম তাইমী (রহ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন-

إِنْ لَمْ يَكُنْ لَنَا خَيْرٌ فِيمَا نَكْرَهُ، لَمْ يَكُنْ لَنَا خَيْرٌ فِيمَا نُحِبُّ

আমাদের অপছন্দনীয় বিষয়গুলোতে যদি আমাদের জন্য কল্যাণ না থাকে, তবে আমাদের পছন্দনীয় বিষয়গুলোতেও কল্যাণ থাকতে পারে না।– [রিওয়ায়ায়াতঃ১৪]

বিপদ মুসিবত জীবনের নিয়তি

[১৫] হযরত মানসূর বিন আব্দুর রহমান থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন- একবার আমরা হযরত হাসান এর মজলিসে বসা ছিলাম। এক ব্যক্তি আমাকে বলল- তাকে আল্লাহর নিম্নের বাণীর তাফসীর জিজ্ঞাসা করুন-

مَا أَصَابَ مِنْ مُصِيبَةٍ فِي الْأَرْضِ وَلَا فِي أَنْفُسِكُمْ إِلَّا فِي كِتَابٍ مِنْ قَبْلِ أَنْ نَبْرَأَهَا

পৃথিবীতে এবং ব্যক্তিগতভাবে তোমাদের যে বিপদ আসে, আমি তা সংঘটিত করার পূর্বেই তা লিপিবদ্ধ থাকে।– সূরা হাদীদ:২২

আমি জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললেন, সুবহানাল্লাহ! এতেও কি কারো সন্দেহ আছে যে, আসমান যমীনে মানুষের উপর যেসব মুসিবত আসে তা তার সৃষ্টির পূর্বেই লিখা রয়েছে।– [রিওয়ায়ায়াতঃ১৫]

সবর ও ধৈর্যের মাধ্যমে মুক্তির পথ তালাশ কর

[১৬] হযরত হাসান থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন-

أَدْخِلْ نَفْسَكَ فِي هُمُومِ الدُّنْيَا، وَاخْرُجْ مِنْهَا بِالصَّبِرِ، وَلْيَرُدَّكَ عَنِ النَّاسِ مَا تَعْلَمُ مِنْ نَفْسِكَ

তুমি নিজেকে দুনিয়ার চিন্তা-ভাবনায় জড়িত কর। আর সবরের মাধ্যমে তা থেকে উত্তীর্ণ হয়ে যাও। আর তুমি নিজের ব্যাপারে যা জান, তা যেন তোমাকে অন্যদের (দোষ বের করা বা অনিষ্ট করা) থেকে বিরত রাখে।– [রিওয়ায়ায়াতঃ১৬][13]

বিজয় ও শত্রুর প্রতিরোধের জন্য লা হাউলা…

[১৭] আবি খায়র ইসহাক আল আযাউয়ী বর্ণনা করেন। কারখ শহরের নিকট (পারস্যের সেনাবাহিনীর প্রধাণ) আযদমহর ও তার চল্লিশটি হাতিসহ আমাদের মুকাবিলা হয়। যুদ্ধে আমাদের পদাতিক ও অশ্ববাহিনী বিপরীত অবস্থার সম্মুখীন হয়ে পড়ল। মুসলিম সেনাপ্রধান মুহাম্ম বিন কাসিম চিন্তিত হয়ে পড়েন। তিনি ভিন্নভাবে কিছু করার চেষ্টা করেন, কিন্ত ব্যর্থ হলেন। পরিশেষে তিনি পড়লেন-

لَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللَّهِ

লা হাউলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ।

তিনি কয়েকবার এটি উচ্চস্বরে পাঠ করলেন। আল্লাহ তাআলা এটিকে মুসলমানদের জন্য দূর্গস্বরুপ করে দিলেন। যে হাতিগুলো মুসলিমদের দিকে আক্রমণের জন্য সামনে অগ্রসর হচ্ছিল, হঠাৎ সেগুলোর বহর থেমে গেল।  আল্লাহ তাআলা হাতিদের মধ্যে গরম ও প্রচন্ড পিপাসা সৃষ্টি করে দিলেন ফলে তারা অস্থির হয়ে পানির দিকে ধাবিত হলো। হাতির মাহুতরা যথাসাধ্য চেষ্টা করেও হাতিদেরকে ফিরাতে ব্যর্থ হলো। এর মধ্যে মুসলিম সেনাদল সামনে অগ্রসর হয়ে গেল এবং আল্লাহর হুকুমে বিজয়ের পথ খুলে গেল। – [রিওয়ায়ায়াতঃ১৭]

[১৮] হযরত সাফওয়ান ইবনে আমর থেকে বর্ণিত। হযরত হাবিব বিন মাসলামাহ (রা) যখন যুদ্ধে শত্রুর মুখোমুখি হতেন অথবা কোন দূর্গ অবরোধ করতেন তখন লা হাউলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ পাঠ করতে পছন্দ করতেন। একবার এক দূর্গ অবরোধকালে তিনি এবং মুসলমানরা এই কালিমা পাঠ করেন, ফলে রোমানরা দূর্গ ছেড়ে পলায়ন করে এবং দূর্গের দেয়াল ভেঙ্গে যায়।– [রিওয়ায়ায়াতঃ১৮][14]

ঋণ পরিশোধ এবং সবকিছুর জন্য দুআ করা

       [১৯] হযরত সুফিয়ান বিন উয়াইনাহ (রহ) বলেন- একবার মুহাম্মদ বিন আলী (রহ) এর সাথে মুহাম্মদ বিন মুনকাদির (রহ) এর সাক্ষাত হলো। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, কি ব্যাপার আপনাকে চিন্তিত দেখাচ্ছে? আবু হাযেম (তার উপনাম) বললেন, ঋণের চাপের জন্য উদ্বিগ্ন। মুহাম্মদ বিন আলী (রহ) বললেন, এর জন্য দুআ করেন কি? তিনি বললেন, হ্যাঁ। মুহাম্মদ বিন আলী (রহ) বললেন- বান্দার সেসব প্রয়োজনে বরকত হয় যার জন্য সে আল্লাহর নিকট দুআ করে থাকে, তা যে প্রয়োজনই হোক না কেন।– [রিওয়ায়ায়াতঃ১৯]

বেশী চিন্তা-ভাবনা না করা

       [২০] হযরত খালেদ বিন রাফে (রহ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা) হযরত ইবনে মাসউদ (রা) কে বলেন-

لَا تُكْثِرْ هَمَّكَ، مَا يُقَدَّرْ يَكُنْ، وَمَا تُرْزَقْ يَأْتِكَ

তুমি বেশি চিন্তা-ভাবনা করো না। তোমার তাকদীরে যা আছে তা-ই হবে। আর তোমার রিযিক তোমার কাছে পৌছবেই।– [রিওয়ায়ায়াতঃ২০][15]

 

□       □       □       □       □

তথ্যসূত্র

[1] . শুআবুল ইমান, হাদীস:৯৫৩১।

[2] . জামে তিরমিযী, দুআ অধ্যায়, হাদীস:৩৫৭১।

[3] . সহিহ বুখারী, কিতাবুর রিকাক, হাদীস:৬৪৭০।

[4] . সুনানে ইবনে মাজাহ,কিত্বুল মুকাদ্দিমাহ, হাদীস:২০২।

[5] . জামে তিরমিযী, হাদীস:২৫১৬।

[6] . মুসনাদে আহমদ, হাদীস:২৮০৩।

[7] . মুসনাদে আহমদ, হাদীস:২২৩৪।

[8] . মুসনাদে আহমদ, হাদীস:২১৫৫১।

[9] . আল মুস্তাদরাক হাকীম, দুআ অধ্যায়, হাদীস:১৯৯৩।

[10] . আল মুস্তাদরাক হাকীম, দুআ অধ্যায়, হাদীস:১৯৯০।

[11] . কানযুল উম্মাল, হাদীস:৬৬৭২।

[12] . ইবনে মোবারক (রহ), কিতাবুয যুহুদ, রিওয়ায়াত:৪২৫।

[13] . কানযুল উম্মাল, হাদীস:৪৩১৮৩।

[14] . বায়হাকী- দালায়িলুন নুবুওয়াত।

[15] . শুআবুল ইমান, হাদীস:১১৪৪।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to top button
error: Content is protected !!