মান আ’শা বা’দাল মাউত-মৃত্যুর পর জীবন- ইমাম ইবনে আবিদ দুনইয়া (রহ)

দারুস সাআদাত গ্রন্থ

গ্রন্থঃ মান আশা বাদাল মাউত -মৃত্যুর পর জীবন

লেখকঃ ইমাম ইবনে আবিদ দুনইয়া  (রহ)

অনুবাদঃ দারুস সাআদাত কর্তৃক অনূদিত

স্বত্বঃ দারুস সাআদাত কর্তৃক সংরক্ষিত, বিনানুমতিতে কপি করা, মূদ্রণ করা বা এপে ব্যবহার করা আইনত দণ্ডনীয়। কেউ করলে আইনগত পদক্ষেপ নেয়া হবে।

 

বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম

এক মায়ের দুআয় মৃত সন্তান জীবিত হওয়া

১. আনাস (রা) বলেন। একবার এক সফরে আমার সাথে একজন আনসারী যুবক ছিল। হঠাৎ সে মারা গেল। আমরা তার চোখ বন্ধ করে দিলাম আর তাকে কাফনের কাপড় পড়িয়ে দিলাম। আমাদের এক সাথি তার মাকে সংবাদ দিল যে, তোমার ছেলে এই দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়ে গেছে। তার মা বলল, সে মরে গেছে? আমরা বললাম হ্যাঁ। তার মা বলল, তোমরা যা বলছ তা কি সত্যি? আমরা বললাম হ্যাঁ। তখন সে আসমানের দিকে হাত উঠিয়ে দুআ করল,

اللَّهُمَّ إِنِّي آمَنْتُ بِكَ، وَهَاجَرْتُ إِلَى رَسُولِكَ، فَإِذَا أَنْزَلْتَ بِي شِدَّةً شَدِيدَةً دَعَوْتُكَ، فَفَرَّجْتَهَا، فَأَسْأَلُكَ اللَّهُمَّ لَا تَحْمِلْ عَلَيَّ هَذِهِ الْمُصِيبَةَ الْيَوْمَ

হে আল্লাহ! আমি তোমার প্রতি ইমান এনেছি আর তোমার রাসূলের সাথে হিজরত করেছি। আমার উপর বিপদ এসেছে। তুমি আমার বিপদ হটিয়ে দাও। আল্লাহ! আমি তোমার কাছে প্রার্থনা করি যে, আজ তুমি আমাকে বিপদে ফেলো না।

বর্ণনাকারী বলেন, তখনই হঠাৎ তার চেহারার উপর থেকে কাপড় সরে গেল (আর সে নড়েচেড়ে বসল)। এতে আমরা অবাক হয়ে গেলাম। এমনকি আমরা এক সাথে খাবার খেলাম।

এক অসহায় মায়ের দুআয় মৃত সন্তানের জীবন লাভ

২. সালেহ বলেন, উক্ত ঘটনা আমরা হাফস বিন নযর কে শুনালাম। এতে তিনি অনেক আশ্চর্যান্বিত হলেন। অতঃপর ২য় জুমআয় তার সাথে সাক্ষাত হলে বললেন, তোমাদের ঘটনা শুনে আমি অনেক অবাক হয়েছিলাম। রবি বিন কুলসুমের সাথে সাক্ষাত হলে তাকে আমি ঘটনাটি বললাম। তখন সে বলল, আমাকে এক ব্যক্তি বলেছে যে, তার একজন দুর্বল, অন্ধ, বধির  ও বিকলাঙ্গ কন্যা ছিল। তার দেখাশোনার জন্য তার একজন ছেলে ছাড়া আর কেউ ছিল না। একদিন হঠাৎ ছেলেটি মারা গেল। তখন আমি তার নিকট গিয়ে বললাম, আল্লাহ তোমাকে বিপদে পতিত করেছেন। সে বলল, কি হয়েছে? আমার ছেলে তো মরে যায়নি? (এরপর সে দুআর জন্য হাত তুলল)

مَوْلَايَ أَرْحَمُ بِي، لَا يَأْخُذُ مِنِّي ابْنِي، وَأَنَا صَمَّاءُ عَمْيَاءُ مُقْعَدَةٌ، لَيْسَ لِي أَحَدٌ، مَوْلَايَ أَرْحَمُ بِي مِنْ ذَاكَ

হে আল্লাহ! আমার প্রতি দয়া কর। আমার কেউ নেই। (আমি) অন্ধ বধির ও বিকলাঙ্গ। তুমি আমার ছেলেকে আমার থেকে পৃথক করো না। হে আল্লাহ! তার জন্য আমার প্রতি দয়া কর।

বর্ণনাকারী বলেন, আমি বললাম, এই মেয়ে পাগল হয়ে গেছে। অতঃপর আমি বাজারে গেলাম কাফনের কাপড় কেনার জন্য। ফিরে এসে দেখলাম ছেলে উঠে বসে আছে।

মৃত্যুর পর যায়েদ বিন খারিজার কথা বলা

৩.আবু খালেদ বর্ণনা করেন। আমি ইয়াজিদ বিন নুমান ইবনে বশীর, কাসিম বিন আব্দুর রহমান এর মজলিসে আমার পিতা নুমান ইবনে বশীরের চিঠি নিয়ে আসলাম। (তাতে লিখা ছিল-)

বিসমিল্লহির রহমানির রহীম। নুমান ইবনে বশীরের পত্র উম্মে আব্দুল্লাহ ইবনে আবু হাশিম এর প্রতি। তোমার প্রতি সালাম। আমি আল্লাহ তাআলার প্রশংসা জ্ঞাপন করি যিনি ব্যতীত কোন মাবুদ নাই। তুমি আমাকে পত্র লিখেছিলে যে, আমি যেন তোমাকে যায়দ বিন খারেজার মৃত্যুর অবস্থা প্রসঙ্গে কিছু বলি। তার ঘটনা হলো এই যে, হঠাৎ তার গলায় কষ্ট আরম্ভ হলো যদিও সেদিন মদীনার মধ্যে সে-ই সবেচেয়ে সুস্থ ও  প্রাণবন্ত ছিল। যোহর ও আসরের নামাযের মধ্যবর্তী সময়ে তার মৃত্যু হয়ে যায়। আমরা তাকে চিৎ করে শায়িত করে দুইটি চাদর ও একটি কম্বল দ্বারা ঢেকে দিলাম। আমি মাগরিবের নামাযের পর তাসবীহ পাঠ করছিলাম। (এমন সময় তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়লাম) আর স্বপ্নে আমাকে কেউ বলল, যায়দ মৃত্যুর পর কথা বলেছে। তখন আমি দ্রুত তার নিকট আসলাম। উপস্থিত আনসারীদের মধ্যে সে বলছে, কওমের মধ্যে মাঝে অবস্থানকারী ব্যক্তি কঠিন ছিলেন, যে আল্লাহর  ব্যাপারে  কোন নিন্দুকের নিন্দার পরোয়া করতেন না। সে লোকদেরকে এই সুযোগ দিতেন না যে, কওমের সবল লোকেরা দুর্বল লোকদের সম্পদ আত্মসাৎ করবে। আমীরুল মুমিনীন উমর (রা) সত্য বান্দা ছিলেন। আর এটা পূর্ববর্তী কিতাবে লিপিবদ্ধ আছে।

অতঃপর সে বললো, আমীরুল মুমিনীন উসমান (রা) মানুষের অধিকাংশ ভুল-ত্রুটি মাফ করে দেন। দুই রাত অতিবাহিত হয়ে গেছে আর চার রাত বাকী আছে। অতঃপর লোকদের মধ্যে মতভেদ শুরু হবে এবং তারা একে অপরের মাল সম্পদ (অন্যায়ভাবে) ভোগ করবে। কোন শৃঙ্খলা থাকবে না এবং খুন খারাবী বৈধ হয়ে যাবে। অতঃপর ইমানদারগণ অলসতা থেকে ফিরে আসবে আর বলবে, হে লোক সকল! আল্লাহর কিতাবকে মজবুতভাবে ধারণ কর, আমীরের দিকে মনোনিবেশ কর এবং তার কথা মান্য কর ও তার আনুগত্য কর। যে তার থেকে ফিরে যাবে তার প্রাণের কোন নিরাপত্তা থাকবে না। আল্লাহর নির্দেশ (তাকদীরের লিখন) আসবেই। আল্লাহ সবার বড়। এটা জান্নাত আর এটা দোযখ। নবীগগণ ও সিদ্দীকগণ সত্য বলেছেন। তোমাদের উপর শান্তি বর্ষিত হোক। হে আব্দুল্লাহ বিন রাওয়াহা! আমি কি আমার পিতা খারেজাহ এবং সা’দ এর ব্যাপারে বলবো, যারা উহুদের দিন শহীদ হয়েছেন। (আল কুরআনে ইরশাদ হয়েছে-)

كَلَّا إِنَّهَا لَظَى نَزَّاعَةً لِلشَّوَى تَدْعُو مَنْ أَدْبَرَ وَتَوَلَّى وَجَمَعَ فَأَوْعَى

না, কখনো নয়। এটাতো লেলিহান অগ্নিশিখা। যা মাথা হতে চামড়া খসিয়ে দিবে। জাহান্নাম ঐ ব্যক্তিকে ডাকবে যে (সত্যের প্রতি) পৃষ্ঠ প্রদর্শন করেছিল ও মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল। সে সম্পদ জমা করে ও সংরক্ষণ করে রেখেছিল।– সূরা মাআরিজ ১৫-১৮

অতঃপর তার আওয়ায নিচু হয়ে গেল। যে আমার পূর্বে তার কথা শুনছিল আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলে সে বললো, আমি তাকে এটা বলতে শুনলাম যে, চুপ হয়ে যাও। চুপ হয়ে যাও।

আমরা একে অপরে দিকে দেখছিলাম যেখানে আওয়ায আসছিল কাপড়ের নিচ থেকে। আমরা তার চেহারা থেকে কাপড় সরিয়ে দিলে সে বললো, ইনি রাসূল (সা) (আমার পাশে উপস্থিত)। হে আল্লাহর রাসূল! আপনার প্রতি সালাম, রহমত ও বরকত বর্ষিত হোক। অতঃপর বললেন, আল্লাহর রাসূলের খলীফা আবু বকর (রা) আমানতদার ছিলেন। দৈহিক দিক থেকে দুর্বল দেখাত কিন্তু আল্লাহর হুকুম বাস্তবায়নে ছিলেন অনেক শক্তিধর। তিনি যা বলেছেন সত্য বলেছেন।

৪. ইবনে উমায়র বলেন, আমি হাবিব বিন সালিম এর নিকট ঐ পত্র পাঠ করলাম যা নুমান ইবনে বশীর উম্মে খালিদকে লিখেছিলেন।

অতঃপর তুমি যায়দ বিন খারিজার মৃত্যুর পর তার কথা বলার ঘটনার ব্যাপারে জানতে চেয়ে আমার নিকট পত্র লিখেছ। অতঃপর যথারীতি পূর্ববর্তী ঘটনা।

৫. সাঈদ ইবনুল মুসায়িব (রহ) বলেন। এক আনসারীর মৃত্যুর সময় উপস্থিত হলো, যখন সে মারা গেল তখন তাকে কাপড় দিয়ে ঢেকে দেয়া হলো। অতঃপর সে বলতে লাগল, আবু বকর (রা) আমানতদার ছিলেন। দৈহিক দিক থেকে দুর্বল দেখাত কিন্তু আল্লাহর হুকুম বাস্তবায়নে ছিলেন অনেক শক্তিধর। উমর (রা) আমানতদার ছিলেন। উসমান (রা) তার পথেই ছিলেন। এখন ইনসাফ শেষ হয়ে গিয়েছে। সবল দুর্বলকে ভক্ষণ করছে।

৬.আনাস বিন মালিক (রা) বলেন, যখন যায়দ বিন খারিজার মৃত্যু হয় তখন তাকে গোসল দেওয়ার জন্য আনসারদের মধ্যে প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে যায়। এমনকি ঝগড়া বাঁধার উপক্রম হয়ে যায়। অতঃপর এই সিদ্ধান্তের উপর তারা একমত হয় যে তাকে দুইবার গোসল দেওয়া হবে। আর প্রত্যেক সরদার তার রান (শরীর) ধরবে আর তৃতীয় ব্যক্তি পানি ঢালবে। আমিও তাদের মধ্যে ছিলাম। যখন আমি পানি ঢালতে লাগলাম তখন সে কথা বলা শুরু করে দিল।

সে বললো, দুই রাত অতিক্রম হয়ে গেছে আর চার রাত বাকী আছে। কওমের ধনবান ব্যক্তিরা গরীবেদের মাল আত্মসাৎ করা শুরু করে দিয়েছে। লোকদের মধ্যে মতভেদ শুরু হয়ে গিয়েছে আর কোন নিয়ম-শৃঙ্খলা অবশিষ্ট নেই। আবু বকর সিদ্দীক (রা) খুব নরম মনের মানুষ ছিলেন- মুমিনদের প্রতি ছিলেন দয়ার্দ্র আর কাফিরদের প্রতি ছিলেন কঠোর। আল্লাহর ব্যাপারে কোন নিন্দুকের নিন্দার পরোয়া করতেন না। উমর (রা) খুব নরম মনের মানুষ ছিলেন- মুমনিদের প্রতি ছিলেন দয়ার্দ্র আর কাফিরদের প্রতি ছিলেন কঠোর। আর তোমরা (এখন) উসমান (রা) এর নীতির উপর আছ। শুন ও মান্য কর। অতঃপর তার আওয়ায নিচু হয়ে গেল । তার যবান নড়াচরা করতে লাগল কিন্তু দেহ নিথর হয়ে গেল।

৭.নুমান ইবনে বাশীর (রা) বলেন, যায়দ বিন খারেজাহ আনসারদের সরদারদের মধ্য হতে ছিলেন। তার পিতা ছিলেন খারেজাহ বিন সা’দ। আবু বকর (রা) যখন হিজরত করেন তখন তিনি তার ঘরেই অবস্থান করেন। আর নিজের কন্যার বিবাহ খারেজার ছেলের সাথে দেন যার নাম ছিল সা’দ। যায়দ বিন খারেজার পিতা এবং সাদ বিন খারেজাহ উহুদের দিন শহীদ হয়েছিলেন। যায়দ বিন খারিজাহ নবী (সা) এর যুগ, আবু বকর সিদ্দীক (রা) এর খিলাফত, উমর (রা) এর খিলাফত এবং উসমান (রা) এর খিলাফতের দুই বৎসরকাল পর্যন্ত জীবিত থাকেন। তিনি (মৃত্যুর দিন) যোহর ও আসরের মধ্যবর্তী সময়ে মদীনার এক গলি দিয়ে চলছিলেন। এমন সময় হঠাৎ পড়ে গিয়ে মৃত্যুবরণ করেন। যখন আনসাররা জানতে পারনে তখন তাকে উঠিয়ে ঘরে নিয়ে গেলেন। তারা তাকে দুটি চাদর ও একটি কম্বল দ্বারা ঢেকে দিলেন। আর ঘরের মধ্যে আনসার পুরুষ ও মহীলারা কাঁদতে লাগলেন। এই অবস্থায়ই সে ছিল।

 মাগরিব ও এশার মধ্যবর্তী সময়ে তারা এক আওয়ায শুনতে পায় যে, কেউ বলছে, চুপ হয়ে যাও। লোকেরা দেখল যে, এই আওয়ায কাপড়ের নিচ থেকে আসছে। তারা যখন তার চেহারা ও বুক থেকে কাপড় সরালেন তখন যে কথা বলছিল সে তার মুখ দিয় বলছিল [মুহাম্মদ (সা)] শেষ নবী। তারপর আর কোন নবী আসবে না। অতঃপর যে কথা বলছিল তার মুখ দিয়ে বললো, সত্য বলেছে, সত্য বলেছে। অতঃপর যে কথা বলার সে তার মুখ দিয়ে বললো, আবু বকর (রা) রাসূলের খলীফা। সিদ্দীক ও আমীন। যে দৈহিক দিক থেকে দুর্বল ছিল কিন্তু আল্লাহর হুকুমের ব্যাপারে ছিল শক্তিধর। অতঃপর যে কথা বলছিল তার মুখ দিয়ে বললো, সত্য বলেছে, সত্য বলেছে। অতঃপর বললো, মাঝে অবস্থানকারী ব্যক্তি কঠিন ছিলেন, যে আল্লাহর  ব্যাপারে কোন নিন্দুকের নিন্দার পরোয়া করতেন না। যে লোকদেরকে নিষেধ করতেন সবলদেরকে দুর্বলদের মাল আত্মসাৎ করতে। আমীরুল মুমিনীন উমর (রা) আল্লাহর বান্দা ছিলেন। অতঃপর যে কথা বলছিল সে বললো, সত্য বলেছে, সত্য বলেছে। অতঃপর বললো, আমীরুল মুমিনীন উসমান (রা) মুমিনদের প্রতি দয়ার্দ্র এবং তাদের ভুল-ত্রুটি মাফ করে দেন।

দুই রাত অতিবাহিত হয়ে গেছে আর দুই বছর দুই রাত এর সমান হয়ে গছে। আর চার বৎসর বাকী রয়ে গেছ। যার জন্য কোন নিয়ম শৃঙ্খলা বাকী রয়নি। খুন খারাবী বৈধ হয়ে গেছে এবং কিয়ামত নিকটবর্তী হয়ে গেছে। লোকেরা একে অপরের মাল আত্মসাৎ করছে। (এক সময়) লোকেরা নিজেদের অলসতা থেকে বিরত হবে। তারা বলবে, হে লোকসকল! আল্লাহর কিতাব মজবুতভাবে ধারণ কর। নিজের আমীরের দিকে মনোবিশ কর এবং তার কথা শুন ও তার আনুগত্য কর। তারা তোমাদের (পূর্ববর্তীদের) নীতির উপর আছেন। যে তাদের থেকে মুখ ফিরাবে তার প্রাণের কোন নিরাপত্তা থাকবে না। আল্লাহর নির্দেশ আসবেই। এটা দুইবার বললেন। এটা জান্নাত আর এটা দোযখ। এ হলো নবীগন আর এ শহীদগণ। হে আব্দুল্লাহ বিন রাওয়াহা! আমি আমার পিতা খারেজাহ এবং ভাই  সা’দ এর ব্যাপারে জেনে নিয়েছি যারা উহুদের দিন শহীদ হয়েছেন। (আল কুরআনে ইরশাদ হয়েছে-)

كَلَّا إِنَّهَا لَظَى نَزَّاعَةً لِلشَّوَى تَدْعُو مَنْ أَدْبَرَ وَتَوَلَّى وَجَمَعَ فَأَوْعَى

না, কখনো নয়। এটাতো লেলিহান অগ্নিশিখা। যা মাথা হতে চামড়া খসিয়ে দিবে। জাহান্নাম ঐ ব্যক্তিকে ডাকবে যে (সত্যের প্রতি) পৃষ্ঠ প্রদর্শন করেছিল ও মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল। সে সম্পদ জমা করে ও সংরক্ষণ করে রেখেছিল।– সূরা মাআরিজ ১৫-১৮

অতঃপর বললেন, ইনি রাসূলুল্লাহ (সা), ইনি রাসূলুল্লাহ (সা)। আপনার প্রতি সালাম, রহমত ও বরকত বর্ষিত হোক।

নুমান ইবনে বাশীর (রা) বলেন, আমাকে বলা হয়েছে যে, যায়দ বিন খারেজাহ মৃত্যুর পর কথা বলেছেন। আমি লোকদেরকে ডিঙিয়ে তার মাথার কাছে গিয়ে বসলাম। আমি তার কথার কিছু অংশ শুনলাম। সে বলছিল মাঝের ব্যক্তি খুব কঠিন। এমনকি কথা শেষ হয়ে গেল। আমি লোকেদরেকে জিজ্ঞাসা করলাম যে, সে আমার পূর্বে আর কি বলছিল? তখন তারা আমাকে বিস্তারিত বললো।

মুসায়লামার হাতে শহীদ হওয়া এক ব্যক্তি মৃত্যুর পর কথা বলেছে

৮.আব্দুল্লাহ বিন উবায়দুল্লাহ আনসারী বলেন, মুসায়লামাতুল কাজ্জাবের হাতে শাহাদত বরণকারী একজন কথা বলেছেন, সে বলেছে মুহাম্মদ (সা) আল্লাহর রাসূল। আবু বকর সিদ্দীক ও উসমান (রা) খুব নরম মনের মানুষ এবং দয়ালু।

একজন ইবাদতগুযার ব্যক্তির ঘটনা

৯. মুহাম্মদ বিন বাকার (রহ) বলেন, আমরা তিন ভাই ছিলাম। আমাদের মধ্যে ২য় জন ছিল খুব ইবাদগুযার। অনেক বেশী সিয়াম পালনকারী এবং আমাদের মধ্যে সবচেয়ে মর্যাসম্পন্ন ব্যক্তি। আমি কোন সৈন্যবাহীনির সাথে যুদ্ধে ছিলাম। যখন ফিরে আসলাম তখন ঘরের লোকেরা বললো, নিজের ভাইয়ের খবর নাও, সে মৃত্যুর দ্বারপ্রান্তে উপস্থিত। যখন আমি তার নিকট গেলাম, আমার যাওয়ার পূর্বেই তার প্রাণ বেরিয়ে গেল। আমি তার উপর কাপড় দিয়ে দিলাম এবং তার পাশে বসে কাঁদতে লাগলাম।

মুহাম্মদ ইবেন বাকার (রহ) বলেন, (এমন সময়) আমার ভাই হাত উঁচু করে নিজের চেহারা থেকে কাপড় সরিয়ে বললেন, আসসালামুআলাইকুম। আমি বললাম, হে আমার ভাই! তুমি কি মৃত্যুর পর জীবিত হলে? সে বললো, হ্যাঁ। আমি আমার রবের সাথে সীমাহীন আনন্দ নিয়ে সাক্ষাত করেছি আর আমার প্রতিপালক আমার প্রতি তার অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেন নি। আমাকে জান্নাতী পোষাক পড়িয়েছেন। যেই বিষয়ে তোমরা ভয় কর আমি তা সহজ পেয়েছি। এই কথা তিনি তিনবার বললেন। আর তিনবার বললেন, আমল কর, অলসতা করো না।

আমি রাসূলুল্লাহ (সা) এর সাথে সাক্ষাত করেছি। আমি কসম করেছি যে, তার উঠার  পূর্বেই আমি ফিরে আসব। অতএব তুমি আমার কাফন দাফনে দ্রুততা কর। অতঃপর সে পূণরায় মৃত্যুবরণ করল। এত দ্রুত সে ফিরে গেল, যেভাবে একটি কঙ্কর পানিতে নিক্ষেপ করা হয়।

মুহাম্মদ বিন বাকার (রহ) বলেন (অতঃপর আমি লোকদেরকে) বললাম, আমার ভাইরে দাফন কাফনে জলদি কর।

১০.রিব’ঈ বিন হিরাশ (রহ) বলেন, আমার ভাই মৃত্যুবরণ করেন, যে গরমের দিনে অনেক রোযা রাখত আর শীতের রাতে কিয়াম (দীর্ঘ সময় দাড়িয়ে নামায আদায়) করত। অতঃপর পূর্ববর্তী ঘটনা বর্ণনা করেন। এর মধ্যে এতটুকু বেশী আছে যে,

এই ঘটনা হযরত আয়িশাহ (রা) এর নিকট পৌঁছলে তিনি এর সত্যায়ন করে বলেন, আমরা শুনতাম যে, এই উম্মতের এক ব্যক্তি মৃত্যুর পর কথা বলবে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to top button
error: Content is protected !!